সভ্যতার_সভ্য,পঞ্চমাংশ

সভ্যতার_সভ্য,পঞ্চমাংশ
NishchupSpriha

সভ্যর জন্মদিন উপলক্ষে আমি গিফট হিসেবে সভ্য আর আমার জন্য সাড়ে চৌদ্দ হাজার টাকা দিয়ে TITAN Couple Watch অনলাইনে অর্ডার করেছিলাম। কাপল ওয়াচ কি আর সবার সামনে সভ্যকে দেওয়া যায়?

দুইদিন আগে আমার ফ্রেন্ড অর্পার ঠিকানায় পার্সেল এসেছে। কারণ আমাদের বাসায় আমি না থাকা অবস্থায় পার্সেল এলে এবং সেটা অন্য কারো হাতে পরলে অনেক সমস্যা হবে। এইজন্য অর্পার এড্রেস দিয়েছিলাম।

ঘড়ির বক্সটা নিয়ে আমি বারান্দায় গেলাম। যেয়ে দেখি সভ্য দোলনায় বসে আছে। ওর পড়নে বাদামি রংয়ের ট্রাই-কোয়ার্টার প্যান্ট আর সাদা টিশার্ট। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে, কিছু চুল কপালে এসে পড়েছে..

ক্যাডেটে যাওয়ার পর থেকে ওর চুল সব সময় ছোট করেই কাটা থাকে। বাসায় এসে মাত্র আড়াই মাসে চুল গুলো এত বড় হয়ে গেছে? বাহ্!

সভ্যর দৃষ্টি বাহিরের অন্ধকারে স্থির। বড় বড় চোখে ঘন আখিঁ পল্লব! ইশ্! কি সুন্দর! ছেলেদের চোখ এত সুন্দর হবে কেন?

আমি সভ্যর কাছে যেতেই ও আমাকে টেনে নিয়ে ওর কোলে বসিয়ে দিলো।

আমার হাতে বক্স দেখে ওই-ই প্রথমে বললো,
— ‘এটা আমার গিফট?’

— ‘হুঁ!’

— ‘দাও দেখি।’

— ‘উঁহু! ক্লোজ ইয়োর আইস।’

— ‘আবার চোখ বন্ধ করতে হবে কেনো? প্লিজ জান দেখি না!’

— ‘না হবে না। আগে চোখ বন্ধ করো। না হয় আমি দিবো না।’

— ‘পারো তো শুধু আমাকে ব্লাকমেল করতে।’

— ‘ও আচ্ছা! আমি ব্লাকমেল করি? ঠিক আছে তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।’

— ‘এই না না! এই দেখো আমি চোখ বন্ধ করছি।’

সভ্য সত্যি সত্যি ওর চোখ বন্ধ করে আছে।

আমি ওকে বললাম,
— ‘নো চিটিং।’

ও মুখ ভ্যেংচিয়ে বললো,
— ‘ইশ্! চিটিংবাজ আবার বলে নো চিটিং!’

— ‘সওওভভভ্য!!’

— ‘ওকে ওকে আ’ম স্যরি জান। আমি আর কিছু বলবো না। দাও আমার গিফট দাও।’

আমি আর কিছু না বলে প্রথমে আমার হাতে আমার ঘড়িটা পড়লাম। তারপর ওর হাতে ওর ঘড়িটা পড়িয়ে দিলাম।

প্রায় একই রকম দেখতে ঘড়ি জোড়া। ঘড়ি দুটোই মেটালের, দুটো ঘড়িই সিলভার কালারের রাউন্ড শেপের আর ডায়াল কালার ব্লু। সভ্যর হাতেরটা বড় আর নকশায় কিছুটা পুরুষালি। আর আমারটা আকারে একটু ছোট আর স্ত্রীসুলভ। ঘড়িদুটো যে একই জোড়ার তা স্পষ্ট বোঝা যায়।

সভ্যকে ঘড়ি পড়ানোর পর ওকে চোখ খোলার জন্য বললাম। ও চোখ খোলার পর ওর সামনে আমার আর ওর হাত এক সঙ্গে রাখলাম।

হাত রেখেই বললাম,
— ‘কেমন হয়েছে?’

সভ্য প্রথমেই ওর হাত দেখে বললো,
— ‘বাহ্! জোশ তো ঘড়িটা! বাট জান আই’ভ অ্যা লট অফ ওয়াচেস…! ইভেন কিছু ঘড়ি তো আমি পড়ারই সময় পাইনি। তুমিও আবার ঘড়ি দিলা….!! আমি ভাবছি অন্য কিছু দিবা…. লাইক অ্যা আমেজিং কিস! ওকে ফরগেট দ্যাট! বাট জান আমি এখনো আমার তিনটা ব্রান্ড নিউ ঘড়ি ব্যবহার করিনি। সময়ই পাইনি ব্যবহার করার। বাট তোমার ঘড়িটা আমি অবশ্যই ইউজ করবো।’

যাস্ট থিঙ্ক ভালোবাসার মানুষকে কিছু দেওয়ার পর তার কমপ্লিমেন্ট যদি এমন হয় তাহলে কেমন লাগে?

ইভেন আমার হাতের ঘড়িটা অবধি ও দেখেনি! আমার রাগ, কষ্ট, অপমান মিলে একটা মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে। আমার ঘড়ি আমার বাম হাতে ছিল। আমি আমার বাম হাতটা আমার পিছনে আড়াল করে ডান হাত দিয়ে ওর হাতের ঘড়ি খুলে ফেললাম।

আমাকে ওর হাতের ঘড়ি খুলতে দেখে ও বললো,
— ‘আহ্ জান! খুলছো কেনো? কি হয়েছে?’

আমি নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বললাম,
— ‘কিছু হয়নি। এমনি।’

— ‘তাহলে যে ঘড়িটা খুলে ফেলছো?’

— ‘ভালো লাগছে না এইজন্য।’

— ‘কে বললো তোমাকে?’

— ‘কেউ না। আমার নিজেরই মনে হচ্ছে ভালো হয়নি ঘড়িটা।’

সভ্য আমার হাত থেকে ঘড়িটা নিয়ে ওর ডান হাতে পড়ে ফেললো।

তারপর আমার বাম হাত ওর ডান হাতে নিয়ে ছোট একটা চুমু খেয়ে মুচকি হেসে বললো,
— ‘আ’ম যাস্ট কিডিং সুইটহার্ট। আমি দেখতে চাচ্ছিলাম তুমি কি বলো।’

এই ছেলেটা আমার কাছে আসলে নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগে। তার উপর ওর ঠোঁটের ছোঁয়ায় আমার বুকের ভিতরটা কেমন কেঁপে উঠলো! মুহূর্তেই আমি কিছুক্ষণ আগের রাগ, কষ্ট, অপমাণ সব কিছু ভুলে গেলাম।

তবুও আমি নিজেকে সামলে স্বাভাবিকভাবে বললাম,
— ‘ইট’স ওকে সভ্য। সবার সব কিছু পছন্দ নাও হতে পারে। মিথ্যা বলতে হবে না। আমি কিছুই মনে করিনি।’

সভ্য ওর দুই হাত দিয়ে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে বললো,
— ‘লুক এট মি সুইটহার্ট। সিরিয়াসলি আ’ম যাস্ট কিডিং। প্লিজ জান মন খারাপ করো না। সত্যি জান আমি মজা করছিলাম তোমার সাথে।’

— ‘ইট’স ওকে সভ্য। আমি মন খারাপ করিনি। আমি ঘড়ি দুটো ফেরত দিয়ে তোমার পছন্দের কিছু নিয়ে নিবো।’

— ‘আমি দিবো না আমার ঘড়ি।’

— ‘সভ্য এটা কাপল ওয়াচ। একটা ছাড়া অন্যটা ফেরত দেয়া যাবে না। দু’টোয় একসাথে দিতে হবে।’

— ‘আমরা কেউ ঘড়ি ফেরত দিচ্ছি না।’

— ‘কিন্তু কে—-‘

আমাকে শেষ করতে না দিয়ে ও বললো,

— ‘কোন কিন্তু নয়, জান। আ’ম স্যরি মাই জান তোমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য।’
বলেই আমার কপালে গভীর এক উষ্ণ ছোঁয়া এঁকে দিলো।

এতদিনের ঝগড়া আমাদের এক নিমিষেই মিটমাট হয়ে গেলো। দু’জনে গল্প করতে করতে রাত কোন দিক দিয়ে শেষ হয়ে গেলো বুঝতেই পারিনি। ভোরের আলো ফোটার পরে আমরা যে যার যার ঘরে ঘুমোনোর জন্য চলে যাই।

অসভ্যটার সঙ্গে থাকলে সময় কোন দিক দিয়ে যায় আমি বুঝতেই পারি না। ওর সাথে থাকলে আমি যেন একটা ঘোরের মধ্যে থাকি সব সময়।

সব ভালোর মধ্যে বেশি ভালো যেটা হয়েছে তা হলো সভ্য আর চুমু নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি বা জেদ কিছুই করেনি।
===============
আমার পরিক্ষা শেষে মেডিকেল কোচিং এর জন্য ঢাকায় চলে আসি। আর সভ্য ওর ক্যাডেট কলেজে। আমাদের দেখা সাক্ষাৎ বলতে গেলে একদম বন্ধ। বেচারা এমনিতেই তিন মাস ছুটি পায়.. বাকি নয়টা মাস আমাদের কিভাবে কাঁটে সেটা শুধুমাত্র আমরা এবং আমাদের সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ জানে না।

আর এখন তো সেটারও কোন উপায় নেই। আমাদের লাস্ট দেখা হয়েছিল ওর জন্মদিনে। তার ঠিক পাঁচ দিন পরেই আমি ঢাকায় চলে আসি।

এভাবে আমাদের সময় যাচ্ছিলো… আমি ঢাকায় আর ও রংপুরে। আমি চাচ্ছিলাম আমার যাতে রংপুর মেডিকেলে হয়ে যায়। ঢাকায় থাকার আমার কোন ইচ্ছা নেই। অদ্ভুতভাবে ঢাকায় আসার পরই আমার অনিকের সাথে দেখা হয়। আমি ওকে চিনলেও, ও আমাকে চিনেনি। ওর সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই আমার আর ঢাকায় থাকার কোন রুচি নেই।

মেডিকেল, জাবি, ঢাবি আর জবিতে পরিক্ষা দিলাম। মেডিকেলের রেজাল্টের পর দেখা গেলো আমার চান্স হয়নি। রেজাল্ট শুনে আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেংগে পড়লো। এটা কি হলো আমার সাথে? আমার স্বপ্ন আমার সব কিছু ছিল মেডিকেল। আর আমি সেখানেই চান্স পেলাম না? কিভাবে সম্ভব?

রেজাল্টের পর আমি সম্পূর্ণ ডিপ্রেশনে চলে গেলাম। রেজাল্টের পর আমি আমার অনেক ফ্রেন্ডের আসল চেহারা দেখলাম। যার কারণে আরো বেশি ডিপ্রেশনে চলে গেলাম। এই সময়টা আমার পরিবার আর সভ্য আমার পাশে ছায়ার মতো ছিল। ওরা না থাকলে আমি হয়তো আজকে বেঁচেই থাকতাম না।

রেজাল্টের পর অনেকে বললো, ‘সেকেন্ড টাইমের জন্য প্রিপারেশন এখন থেকেই নিয়ে নাও।’

বাসার সবার জানা ছিল মেডিকেল আমার জন্য কি। এজন্য বাসা থেকে বলা হলো, ‘কোন সমস্যা নেই। তুমি সরকারিতে পাওনি তো কি হয়েছে? তোমাকে আমরা বেসরকারিতে পড়াবো। বেসরকারিতে পড়ে কেউ কি ডাক্তার হয় না? কোন চিন্তা করবে না তুমি। আমরা সবাই তোমার পাশে আছি।’

কিন্তু আমি না করে দিলাম। না আমি সেকেন্ড টাইম দিবো আর নাই বা বেসরকারিতে পড়বো। হওয়ার হলে প্রথমেই হয়ে যেত আর সরকারি মানে সরকারি। যার তুলোনা কোন কিছুর সাথেই হয় না…

এরপর ভার্সিটি এডমিশনের রেজাল্ট হলো ঢাবিতে মেধা তালিকায় চুয়াত্তর, জাবিতে মেধা তালিকায় অষ্টম আর জবিতে তৃতীয়।

আমার জানামতে জাবি হচ্ছে বাংলাদেশের সব থেকে সুন্দর ভার্সিটি গুলোর মধ্যে অন্যতম। আমি ঢাকা থেকে দূরে থাকতে চাচ্ছিলাম। এর জন্য জাবি হচ্ছে বেস্ট চয়েস।

জাবির জীববিজ্ঞান অনুষদে মাইক্রোবায়োলজিতে এডমিশন হয়ে গেলো। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে সেমিস্টার শুরু হবে। তাই এই কয়েক দিনের জন্য বাসায় থাকা শুরু করলাম। সভ্যও তখন ছুটিতে বাসায় আছে।

আমাদের দিন গুলো অসম্ভব সুন্দর কাটলো। দিনে ঘুরাঘুরি, আড্ডা, রিকশা ভ্রমণ আর রাতে বারান্দায় প্রেম! এভাবেই আমাদের দিন গুলো কিভাবে যে কেটে গেলো বুঝতেই পারলাম না!

আসার আগে আমার মনে হল ইশ্! কেনো আমি শুধু ঢাকায় পরিক্ষা দিলাম? ঢাকার বাহিরে কেনো দিলাম না? রোকেয়াতে তো অবশ্যই দেওয়া উচিত ছিল। বাই এনি চান্স এডমিশন হয়েও যেতে পারতো! আমিও তাহলে সভ্যর সঙ্গে রংপুরেই থাকতাম।

ইশ্! ভুল হয়ে গেছে..!

কয়েক মাস পরেই আমি হলে সিট পেয়ে গেলাম। সভ্যও এখন ব্যস্ত। কারণ ওর এইচএসসি। একমাত্র ঈদ ছাড়া আমাদের আর দেখা হয় না। আমি আমার সেমিস্টার ব্রেকে যখন বাসায় যাই সভ্য তখন ওর ক্যাডেট কলেজে থাকে। আবার ও যখন ছুটিতে বাসায় আসে তখন আমি ভার্সিটিতে থাকি।

এই নিয়েও সভ্যর সাথে আমার ঝগড়া লেগে গেলো। তার কথা হচ্ছে আমি নাকি ইচ্ছা করে ওর সাথে এমন করি। এটা কোন কথা হলো? তার উপর আমি ওর আঠারোতম জন্মদিনেও ছিলাম না। তখন আমার সেমিস্টার ফাইনাল ছিল। ও নিজেও অবশ্য ক্যাডেটে ছিল। কিন্তু এটা এই ছেলেকে কে বুঝাবে? মাঝে মাঝে সভ্য ছোট বাচ্চার থেকেও বেশি জেদ করে!

ওর এই জেদ আর ঝগড়ার কারণে ওর প্রিটেস্টের আগে থেকে আমাদের কথা বন্ধ। ওর পরিক্ষা শেষে ও যে বাসায় আছে সেটা আমি জানি। ও নিজে থেকে এখন অবধি আমাকে ফোন করেনি। তাই আমিও চুপচাপ আছি।

কিন্তু মাম্মাম আর ছোটমা সব সময় ওর আপডেট আমাকে দেয়। আমি জানতে না চাইলেও ওরা নিজে থেকে আমাকে সভ্যর সব খবর দিবে। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় মাম্মাম আর ছোটমা বুঝি আমাদের বিষয়ে সব কিছু জানে!

ছোটমা ফোন করে বললো বাসায় যাওয়ার জন্য। আমি না করে দিলাম। কারণ হল সভ্য। ও কেনো নিজে থেকে আমাকে একটা ফোন কল করলো না? আমি জানি ও-ই ছোটমাকে বলছে আমাকে বাসায় যাওয়ার কথা বলতে। অবশ্য আমার পরিক্ষা আছে। আর কয়েকটা ফাংশনও অ্যাটেন্ট করতে হবে।

ইউনিভার্সিটিতে উঠে আমি বিভিন্ন ক্লাব জয়েন করেছি। গান, কবিতা, মঞ্চ, বিতর্ক বিভিন্ন ক্লাব। আজকে একটা গানের ফাংশন ছিল। যার ফলে আমার হলে আসতে দেড়ি হয়ে যায়।

ফ্রেশ হয়ে ঘুমোতে রাত প্রায় একটা বেজে গেলো। শোয়ার কিছুক্ষণ পরেই আমার ফোনের ম্যাসেজ টিউন বেজে উঠলো।

দেখি সভ্য ম্যাসেজ করেছে,
— ‘Problem ki tomar?👿’

আমি রিপ্লাই দিলাম,
— ‘mane? ki hoiche?😦’

সাথে সাথে রিপ্লাই এলো,
— ‘Jano na tumi?😡’

— ‘na bolle janbo kivabe?😳’

— ‘Basay aso..😒’

ওহ্! আমি যে যাবো না এখন তার টনক নড়েছে! আর জ্বালানোর সময় কিছুই না??

আমি রিপ্লাই দিলাম,
— ‘huh parbo na. i’m busy😏’

রিপ্লাই এলো,
— ‘Ami aste bolchi kintu..😠’

আমি রিপ্লাই দিলাম,
— ‘ei soptahe ami besto achi.😎 i’ll try to come home next week.😌’

এটা একদম মিথ্যা কথা। কালকে পরিক্ষা হয়েই আমি একদম ফ্রি পুরো সপ্তাহের জন্য। আর সভ্য এই সপ্তাহে বাসায় থেকেই ক্যাডেট কলেজে চলে যাবে। আমি ইচ্ছা করেই মিথ্যা বললাম।

রিপ্লাই এলো,
— ‘Baler bestotar jnno asba na toh? Thik ache.. Asteo hobe nah.. Tomar baler bestota diye kon bal chiro ami setay dekhobo..😠😠 Just ekbar pai tomake than i’ll finish you sweetheart..😠😠’

ইশ্! কি মিষ্টি থ্রেট!

— ‘huh😏 i don’t care babe😏 i also want to see what you do😌’

এরপর সভ্য ম্যাসেজের আর কোন রিপ্লাই দেয়নি। তবে আমি মনে মনে ঠিক করলাম পরিক্ষা শেষে কাল বাড়ি যাবো। যেয়ে সভ্যকে সারপ্রাইজ দিবো। তাছাড়াও আমাকে বাসায় যেতেই হত। সাথে সাথে অনলাইনে বাসের টিকিট বুক করে ফেললাম। আমি ঢাকায় যাবো না। গেটের কাছে দাঁড়ালেই হবে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি সভ্যর রিপ্লাই এসেছে।
— ‘Amake believe korcho na toh?😒 Okay sweetheart..😘 All right.. 😘 I swear on you jan if you don’t come this week, then when we meet i’ll finish you sweetheart 😘 Amke just tomake paite dao jan tarpor bujhbe ami ki..😉’

সভ্যর এমন ম্যাসেজ দেখেই আমার হাসি পেল।

আমিও রিপ্লাই দিলাম,
— ‘ja iccha koro. ba korio. i don’t care babe. i’m not going. huh…😏😏’

সভ্য আর রিপ্লাই করেনি। পরিক্ষা শেষেও ফোন চেক করে কোন ম্যাসেজ পাইনি। হলে এসে আমি আমার প্রয়োজনীয় সব কিছু গোছানো শুরু করলাম। কি একটা কারণে এই সপ্তাহে আমাদের ডিপার্টমেন্টের ক্লাস বন্ধ থাকবে। আমার বাসায় যাওয়ার আরেকটা উদ্দেশ্যে হল বাপি-মাম্মামের পঁচিশতম ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি।

আমার রুমমেট যে সিনিয়র আপু আছে তাদের একজন আজকে বাসায় যাচ্ছে। কাকতালীয় ভাবে আমরা একই বাসে যাচ্ছি। এছাড়াও ভার্সিটির আরো কয়েকজন সিনিয়র ভাইয়া আপু একই বাসে যাবো। কাকতালীয় ব্যাপার গুলো সত্যি অসাধারণ!

জ্যামের কারণে বাস আসতে দেড়ি করে ফেললো। গেটে ভার্সিটির অনেক স্টুডেন্ট দাঁড়িয়ে আছে। আজ শুধু আমাদের ডিপার্টমেন্ট না আরো কয়েকটা ডিপার্টমেন্টের আজকে পরিক্ষা শেষ হলো। তাই এখন সবাই বাড়ি যাচ্ছে।
===============
ভোর সাড়ে পাঁচটার একটু পরেই বাস থেকে নামলাম। তাই বাপিকে আর ফোন করলাম না। রিকশা নিয়েই বাসায় চলে এলাম। বাসায় আসতে প্রায় বিশ মিনিটের মতো লেগে গেলো। দারোয়ান আংকেল আমাকে দেখে অবাক। উনি নিজেই রিকশা থেকে আমার ব্যাগ, জিনিসপত্র সব নামালো।

আমি হেসে বললাম,
— ‘থাক আংকেল। আমি নিতে পারবো। কেমন আছো তুমি?’

উনিও চমৎকার একটা হাসি দিয়ে বললো,
— ‘আল্লা’য় রাখছে ভালো আম্মা। আপনে এত্ত সকালে আইলেন তাও আবার রিকশা মদ্দে (মধ্যে)। বড় ছ্যারে গাড়ি পাডা নাইকা (পাঠায়নি)?’

— ‘বাপি জানে না আংকেল। জানলে অবশ্যই পাঠাতো। বাসার কেউই জানে না যে আমি আজকে আসবো। আমি সবাকে সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছিলাম।’

— ‘ও আইচ্চা, আহেন (আসেন)। আমি ব্যাগ নিয়া দিতাছি (নিয়ে দিচ্ছি)।’

— ‘থাক থাক আংকেল লাগবে না। আমি নিজেই নিতে পারবো।’

— ‘না গো আম্মা আপনে আহেন। আমি নিতাছি (আমি নিচ্ছি)।’

আমাদের কথার মাঝেই ছুফি আন্টি চলে এলো। উনিও আমাকে দেখে অবাক।

উচ্ছসিত গলায় বললো,
— ‘আল্লা গো আম্মো! আফনে কুনসুম (কখন) আইলেন (আসলেন)? হবায় নাহি (এখনি নাকি)?’

আমি হেসে বললাম,
— ‘কেমন আছো, আন্টি?’

— ‘ভালাই। আফনে কিমুন আছেন?’

— ‘আমিও ভালো আছি। তুমি এত সকালে যে?’

— ‘আইজকা (আজকে) বড় ভাবি সক্কাল সক্কালই আবার (আসতে) কইছে (বলেছে)। কাইল (কালকে) সুন্দায় (সন্ধ্যায়) বাইত্তে (বাসায়) অনুসটান আছে। কেন্তু (কিন্তু) আম্মো কাইল (কালকে) যে বড়ভাবি কইল (বললো) আফনে আবেন (আসবেন) না? ভাবি আমারে মিছা (মিথ্যা) কতা (কথা) কইলো (বললো)?’

ছুফি আন্টির কথা শুনে আমি হেসে ফেললাম। বললাম,
— ‘না, আন্টি। মাম্মাম মিথ্যা বলেনি। আমিই বলেছিলাম যে আমি আসবো না। তাই বাসার কেউ জানে না যে আমি আসবো। আমি বাসার সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছিলাম।’

ছুফি আন্টি আর কিছু বলার আগেই আংকেল ছুফি আন্টিকে ধমকে বললো,
— ‘হরছিনি (সর তো)। আম্মায় হবায় (এখনি) আইলো আর তুই কতার (কথার) টুপলা (থলে) খুইলা নিছা (খুলে নিছিস)। আম্মারে বাইত্তে ঢুকবার দে (বাসায় যেতে দে)।’

— ‘ওহ্! আম্মো আহেন আফনে (আসেন আপনি)।’

ছোট থেকে দারোয়ান আংকেল আর ছুফি আন্টিকে দেখে আসছি। এরা এত ভালো কেন? রক্তের কেউ না হয়েও এরা দু’জন বিনা দ্বিধায় আমাদের পরিবারের জন্য প্রাণটাও দিয়ে দিবে।

বাসার গেট মাম্মাম খুলে দিলো। আমাকে দেখে মাম্মাম হতভম্ব! মাম্মাম তার রিয়াকশন দেয়াই ভুলে গেলো।

আমি মাম্মামকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
— ‘হ্যাপি টুয়েন্টি ফাইভ ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি, মা সোনা।’

মাম্মামও আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
— ‘থ্যাঙ্ক ইউ, সোনা। মিথ্যা বললি কেনো তুই?’

মাম্মামকে ছেড়ে দিয়ে তার গালে টুপ করে চুমু খেয়ে বললাম,
— ‘সারপ্রাইজ!!’

— ‘এত দুষ্ট কিভাবে হলি বলতো?’

আমি মনে মনে বললাম, ‘সজ্ঞ দোষে লোহা ভাসে মাম্মাম। কোন চিজের সাথে আমাকে মানায় চলতে হয় সেটা তো জানো না তুমি।’

মাম্মাম আমার কপালে চুমু খেয়ে আবার বললো,
— ‘যা ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নে। আমি নাস্তা রেডি করছি।’

আমি বললাম,
— ‘অকে মাহ্! কিন্তু তুমি তাড়াহুড়ো করো না। আমি এখন কিছুই খাবো না। আর বাসার সবাই কই?’

— ‘ছয়টার মতো বাজে কেবল। এত সকালে কেউ উঠে? ছুফি আসবে জন্য আমি উঠলাম। তার উপর আজকে ছুটির দিন। ন’টার আগে কাউকে টেবিলে পাবি না।’

— ‘ওহ্! আচ্ছা তাহলে আমি যেয়ে ফ্রেশ হয়ে একটা লম্বা ঘুম দেই।’

— ‘হুম যা। আমি তোর বাপিকে যেয়ে বলি যে তুই এসেছিস। তুই আসবি না শুনে মন খারাপ করেছিল। কালকে রাতে ঘুমোনোর আগে বললো আজকে গাড়ি পাঠায় দিবে তোকে আনার জন্য।’

আমি মাম্মামকে মানা করে বললাম,
— ‘থাক মাম্মাম তুমি বাপিকে আগেই কিছু বলো না। টেবিলে আমি নিজে বাপিকে মর্নিং উইশ করবো।’

মাম্মাম হেসে বললো,
— ‘আচ্ছা ঠিক আছে। এখন যা ফ্রেশ হয়ে নে। কিছু খাবি? আমি ছুফিকে দিয়ে তোর রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছি তাহলে।’

আমি মানা করে বললাম,
— ‘না, মাম্মাম। এখন আর কিছু খাবো না।’

— ‘আচ্ছা তাহলে যা তুই। ফ্রেশ হয়ে নে।’

আমি আসতেই মাম্মাম পিছু ডাকলো আমি ঘুরতেই বললো,
— ‘আজকে না এলে কালকে কিন্তু সত্যিই আমার ছেলেটা চলে যেত।’

আমি হতভম্ব হয়ে মাম্মামের মুখের দিকে তাকালাম।

মাম্মাম আবার বললো,
— ‘কেনো আমার ছেলেটাকে এভাবে কষ্ট দিস বলতো। সারা রাত বারান্দায় বসে ছিল। ভোরে আমি যেয়ে জোর করে ঘুমানোর জন্য রুমে পাঠালাম। যা উপরে যা।’

মাম্মামের কথা শুনে আমি নির্বাক! হতভম্ব! স্তব্ধ! মনে হচ্ছিলো এখনি আমি সেন্সলেস হয়ে যাবো। কি বলে গেলো মাম্মাম! মন চাচ্ছে লজ্জায় মরে যাই। প্রচুর লজ্জা লাগছিল। মনে হচ্ছে মাটির নিচে ঢুকে যাই। ছিহ্! তারমানে মাম্মাম সব জানে! জীবনে এতটা লজ্জায় কখনো পড়েছি কিনা আমি মনে করতে পারছি না। শেষে কি না মাম্মাম এই কথা বললো?? তারমানে আমার ধারণাই ঠিক? তাহলে ছোটমাও জানে সব কিছু? ওহ্! গড!

আমি আর কিছু না বলে রুমে চলে এলাম।

রুমে ঢুকেই আগে বারান্দার পাশে পর্দা টেনে দিলাম। কারণ সম্পূর্ণ ওয়াল গ্লাসের তৈরি। তারপর ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। আচ্ছা আমার কি সভ্যর সাথে দেখা করা উচিত? ওর কাছে যাবো নাকি যাবো না??? মন চাচ্ছে ওর কাছে যেয়ে শুয়ে পড়ি। ওর বুকে মাথা রেখে একটা লম্বা ঘুম দেই। অসভ্যটার বুকে মাথা রাখলেই কেমন যেন শান্তি শান্তি লাগে!

ছিহ্! কি সব ভাবছি আমি? এতটা বেহায়া কিভাবে হলাম আমি?? ছিহ্!! এমনটা করলে তো ও আরো বেশি পার পেয়ে যাবে! ভুলেও কখনো এই কাজ করা যাবে নাহ!

এসব চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারিনি। মাম্মাম এসে ডাকার পর ঘড়িতে দেখি নয়টা পার হয়েছে। ফ্রেশ হয়ে নিচে যেয়ে দেখি সবাই টেবিলে।

আমি পিছন থেকে যেয়ে বাপিকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
— ‘হ্যাপি টুয়েন্টি ফিফথ ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি, বাপি। উইশিং অ্যা পারফেক্ট পেয়ার অ্যা পারফেক্টলি হ্যাপি ডে। হেয়ার’স টু অ্যানাদার ইয়ার অফ বিইং গ্রেট টুগেদার। লাভ ইউ বোথ সো মাচ বাপি-মাম্মাম। অ্যাগেইন উইশিং ইউ হ্যাপি ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি।’

শুধু মাম্মাম বাদে সবাই বিস্মিত দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মাম্মাম মিটিমিটি হাসছে। ছোটমা, ছোটবাবা সবাই অবাক!

আর সভ্য? ও হা করে তাকায় আছে। ও মুখে খাবার দিচ্ছিলো এইজন্য মুখটা হা হয়ে আছে আর হাতে পরোটার সাথে আলু ভাজি। ওর এই অবস্থা দেখে আমার পেট ফেটে হাসি পেলো। অনেক কষ্টে হাসি কন্ট্রোল করলাম।

আর বাপি?? বাপি হতভম্ব!

বাপির পাশের চেয়ারে বসে বললাম,
— ‘কেমন লাগলো?’

ছোটমা বললো,
— ‘এই তুই কোথা থেকে এলি?’

আমি হাসতে হাসতে বললাম,
— ‘আমার রুম থেকে।’

আমার কথা শুনে মাম্মাম বলল,
— ‘আহ্ সভ্যতা! নো মোর দুষ্টমি।’

আমি এবার জোড়ে হেসে ফেললাম।

মাম্মাম আবার বললো,
— ‘আজকে সকালে ছয়টা নাগাত এসেছে। ছুফি আসবে জন্য আমি দরজা খুলতে যেয়ে দেখি ছুফির পাশে ও দাঁড়িয়ে আছে।’

বাপি আমার মাথায় চুমু খেয়ে বললো,
— ‘থ্যাংক ইউ সো মাচ মাই ডিয়ারেস্ট ডটার। কেমন আছো মামণি?’

— ‘আ’ম গুড, বাপি। তুমি কেমন আছো?’

— ‘আ’ম অলসো গুড, মামণি। তোমাকে দেখার পর আরো ভালো হয়ে গেছি।’

এবার আমি ছোটমা আর ছোটবাবাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
— ‘তোমরা কেমন আছো মা বাবা?’

দুজনেই হেসে বললো,
— ‘ভালো। তোর কি খবর?’

— ‘এই তো দেখছোই আমি বিন্দাস…’

ছোটমা ছোটবাবা হেসে দিলো।

আমি এবার সভ্যকে বললাম,
— ‘কিরে? তোর কি অবস্থা?’

— ‘মাচ বেটার। হোয়াট অ্যাবাউট ইউ?’

— ‘অ্যাজ লাইক অ্যাজ ইউ…’

সভ্য আর কিছু বললো না।

আমিই আবার প্রশ্ন করলাম,
— ‘পরিক্ষা কেমন দিলি?’

— ‘গুড। তোমার পরিক্ষা কেমন হল?’

— ‘সেম। প্রিপারেশন কেমন?’

— ‘ভালো।’

এরপর আর কারো সাথে কথা হয়নি। খাওয়া শেষে আমি রুমে এসে আবার শুয়ে পড়ি। অনেক ক্লান্ত লাগছিল। এরপর আমি যখন ঘুম থেকে উঠি তখন সাড়ে বারোটা পার হয়ে গেছে। গোসল সেরে একদম ফ্রেশ হয়ে বের হলাম।

শুক্রবার হওয়ায় বাপি,ছোটবাবা, সভ্য জুম্মার নামাজের জন্য মসজিদে গেছে। ওরা আসার পর সবাই একসাথে দুপুরে খেলাম। এখন অবধি সভ্যর সাথে আমার আলাদাভাবে কথা হয়নি।

আজকে আমি আড়চোখে যে কতবার সভ্যকে দেখেছি তার কোন হিসেব নেই। অসম্ভব সুদর্শন লাগছে অসভ্যটাকে! খয়েড়ি রংয়ের একটা পাঞ্জাবি পড়েছে। চুলগুলো ছোট করে ছাটা। দু’হাতেই পাঞ্জাবির হাতা কুনই পর্যন্ত গোটানো। ডান হাতে কালো বেল্টের ঘড়ি। ইশ্! এই অসম্ভব সুদর্শন ছেলেটা আমার বয়ফ্রেন্ড!! নিজের কেমন যেন প্রাউড ফিল হচ্ছে।

মজার বিষয় হচ্ছে অসভ্যটা একবারো আমার দিকে তাকায়নি। এমনকি কথাও বলেনি।

বিকালে আমিও কালো পাড়ের খয়েড়ি একটা শাড়ি পড়ে হালকা সাজুগুজু করে রেডি হলাম। আমার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাবো। তখন সভ্যও একদম টিপটপ হয়ে বের হচ্ছে। পড়নে ওই পাঞ্জাবিটা।

বাপি আর ছোটবাবা, দু’জনেই ড্রয়িংরুমে বসে কিছু নিয়ে কথা বলছে।

আমাদের দেখে বললো,
— ‘কোথায় যাচ্ছো তোমরা?’

আমি বললাম,
— ‘পুষ্পিতাদের বাসায় যাচ্ছি বাপি। আজকে আমার সব ফ্রেন্ডরা মিলে ওদের বাসায় আড্ডা দিবো।’

ছোটবাবা সভ্যকে বললো,
— ‘তুমিও কি ওর সঙ্গে যাচ্ছো?’

সভ্য বললো,
— ‘না পাপা। আমি রওশনদের বাসায় যাচ্ছি। ওখান থেকে আমরা সবাই বাইকে ঘুরতে বের হব।’

এবার বাপি সভ্যকে জিজ্ঞেস করলো,
— ‘তোমার বাইক নিচ্ছো?’

— ‘না বড়বাবা। আমি সিজাতের বাইকে যাবো।’

— ‘ও আচ্ছা। দু’জনেই সন্ধ্যার আগে ফিরবে।’

আমরা একসাথে বললাম,
— ‘জ্বী, আচ্ছা।’

এবার ছোটবাবা বললো,
— ‘সভ্য তুমি সভ্যতাকে নামিয়ে দিয়ে যাও।’

আমি সাথে সাথে মানা করে বললাম,
— ‘না না ছোটবাবা লাগবে না। আমি একাই যেতে পারবো।’

বাপি বললো,
— ‘জানি একা একা যেতে পারবে তবুও এখন তোমাকে সভ্য নামিয়ে দিয়ে যাবে। সেদিন মোড়ের দোকানে কয়েকটা ছেলে দেখলাম। সবগুলো বড়লোক বাবার বখে যাওয়া বখাটে ছেলে।’

এবার আমি কিছু বলার আগেই সভ্য বললো,
— ‘আমি নামিয়ে দিবো বড়বাবা। তুমি চিন্তা করো না। আর আসার সময় ফোন করে দিবে। তুমি গাড়ি পাঠিয়ে দিয়ো।’

রিকশায় কিন্তু আমরা কেউ কারো সঙ্গে কথা বললাম না। মজার বিষয় হচ্ছে সে কিন্তু ঠিকই হুড তুলে আমার কটিদেশ চেপে ধরলো। আমি ওর হাত সরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ! তার ভাবটা এমন ছিল যেন আমি তার সম্পদ!

আমি রিকশা থেকে নামার পর ও আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে নিচুস্বরে বললো,
— ‘মানুষকে কোমর দেখানোর খুব শখ তাই না? দেখবো কত কোমর দেখাতে পারো।’

আমি কিছু বলার আগেই ও রিকশাওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— ‘জলদি চলো মামা। দেড়ি হচ্ছে আমার।’

আমি নির্বাক হয়ে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম জানি না। কোথায় কোমর দেখা যাচ্ছে??? কই?? আমি তো খুঁজেই পেলাম না!!

রাতে বাসায় ফিরে শুনলাম সভ্য এখনো ফিরেনি, ও আজকে ওর ফ্রেন্ডের বাসায় থাকবে। শুনেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। আমি এসেছি আর ও কিনা ফ্রেন্ডের বাসায় থাকবে? ফালতু একটা ছেলে। এটারও শোধ আমি নিবো। হুহ্! কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমি তো ওকে কিছুই করতে পারি না!
………………………..
(চলব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here