শুভ্র_রঙের_প্রেম পর্বঃ৩০
#রুবাইদা_হৃদি
চোখের কার্ণিশ বেয়ে টুপটুপ করে নোনা পানি বেয়ে পরছে৷ চোখ উঁপচে আসছে কান্না৷ আমি ঝাপসা চোখে তাকিয়ে আছি চিরকুটের দিকে৷ সেখানে ছোট ছোট অক্ষরে পরিপূর্ণ ভাবে ভালোবাসা ময় বাক্য লেখা৷ আমি ঝাপসা চোখে আবারো পড়লাম,
এই মেয়ে,
তোমার কাঁদুনে স্বভাব হলো কি করে বলো তো??
আজও কাঁদছো?
ব্যাগে থাকা শুভ্র রঙ পরে শুভ্র পরী সেজে একছুটে চলে আসো তো৷
আমি কান্না চোখেই হাসলাম৷ চিরকুটাতে ঠোঁট দিয়ে স্পর্শ করতে গেলেও দেখি নীতি গালে হাত দিয়ে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে৷ আমি চোখের পানি মুছে মুখে থমথমে ভাব আনার চেষ্টা করে ওর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়লাম,
–‘ আমার পেছনে এতো ষড়যন্ত্র কখন হলো? ‘
নীতি ভাবেলাসশীন ভাবে উত্তর দিলো,
–‘ আমি জানি না৷ ‘
–‘ তাহলে কে জানে? ‘
–‘ রাহাত আর রাফিন৷ ‘ আমি আড়চোখে তাকিয়ে শাসিয়ে বললাম,
–‘ তুই এইসবে নেই আমি একদম বিশ্বাস করি না।’
নীতি আমার কথা শুনে হাসছে।ওর হাসি দেখে শরীর জ্বলছে আমার। গত নয়টা দিন আমি কীভাবে কাটিয়েছি সেটা আমিই জানি।আমি বিরক্তি নিয়ে আবার বললাম,
–‘ এইসব কবে আর কখন হলো নীতি? ‘
–‘ জলদি লেহেঙ্গা পরে আয় দোস্ত। হাতে সময় নেই। ‘
–‘ সময় নেই কেন।আর উনার ফোন বন্ধ কেন? এমন সারপ্রাইজ আমার দরকার নেই যেখানে প্রতিটা মূহুর্ত আমার দম বন্ধকর অনুভূতি হয়। ‘
আমার কন্ঠে অভিমান মিশ্রিত।ফোনের ভাইব্রেশনের শব্দে নীতির দিকে থেকে চোখ সরিয়ে তাকিয়ে দেখি রাহাত ফোন দিচ্ছে। ওর নাম দেখে আগুনে ঘি ঢালার মতো জ্বলে উঠলাম আমি। ফোন রিসিভ করতেই ও হাসি কন্ঠে বলে উঠলো,
–‘ বিয়ার রঙ লাগছে দোস্ত। এই তোর বিয়ার রঙ লাল ? ধূর তোদের তো ইন্টারন্যাশনাল রঙ সাদা।সা….’
–‘ তোর মুখ ভাঙার ব্যবস্থা আমি করছি হারামি। সাহস কি করে হয় আমাকে না জানিয়ে উনার দলে যাওয়ার। উনি কে তোর ? আমি আগে না সে আগে ? তুই আমার সামনে আয় মেরে ফেলবো একদম। ‘
–‘ আমার গুরু,প্রমের প্রশিক্ষক,আমার সাদা রঙের দুলাভাই,তোর সিল লাগাইনা জামাই,আমার ভবিষ্যৎ ভাগ্নে-ভাগ্নির একমাত্র বাপ।’
ফোনের লাউড স্পিকারের জন্য নীতির কানে কথা গুলো যেতেই ও হো হো করে হেসে উঠে। আমার কান ঝিমঝিম করছে এতো বিশ্লেষণ শুনে। আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম ,
–‘ তোর আর তোর প্রেমের প্রশিক্ষক এর দুনিয়া হারাম করে দিবো।’
জোরে শ্বাস টেনে নিজেকে স্বাভাবিক করে মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বললাম,
–‘ উনি কি তোর পাশে আছে ?’
–‘ তোর উনার হাতেই মোবাইল।’
রাহাতের কথা শুনে ফোন কেটে দিলাম আমি। ফোন কাটতেই আবারো সশব্দে বেজে উঠলো। অনেক দিন অনেকটা সময় পর আজ ‘ তোমার একান্ত আপনজন ‘ নামটা জ্বল জ্বল করছে। টানা নয় বার ফোন বেজেই চলেছে আর আমি তৃপ্তির হাসি নিয়ে দেখে চলেছি। আজ থেকে শুরু আপনাকে ইগ্নর করা। আমিও বুঝাবো দূরে থাকার কষ্ট।
.
স্টোনের আর গোল্ডেন সুতার কাজ করা সাদা মেরুন কম্বিনেশনের ভারী লেহেঙ্গা পরে রাফিনের আর জান্নাতের সামনে দাঁড়িয়ে আছি রাগী চেহারা নিয়ে। ওদের চোখে-মুখে পালাই পালাই ভাব। মনে হচ্ছে, চোর চুরি করেছে নিজের বাড়িতে। আমি আয়নায় আবার নিজেকে দেখে নীতির দিকে তাকিয়ে বললাম,
–‘ নেক্সট টাইম তোর মেয়ের বিয়েতে এই পার্লারেই সাজার ব্যবস্থা করবো।’
নীতি উত্তর না দিয়ে দু দিকে মাথা হেলিয়ে হ্যাঁ বলতেই আমি হাতে বেলী ফুলের মালা টা জড়িয়ে রাফিন আর জান্নাতকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
–‘ শুরু থেকে এক এক করে সবটা বল। ‘
–‘ সকালের চড়ের দাগ না শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত একটা কথাও বলবো না। ‘
রাফিন গালে হাত দিয়ে বলল। আমি মুচকি হাসলাম।চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
–‘ ফাহিম দের সাথে গলায় গলায় ভাব হয়েছে তাই , না ? ‘
রাফিন ঢোক গিললো। ও অসহায় চোখে নীতির দিকে তাকালো। ও ইশারায় কিছু বলার আগে আমি ঘুরে রাগী স্বরে বললাম,
–‘ একদম টু শব্দ করবি না।’
–‘ আপু আমার কথা শোনো ।’ জান্নাত ভয়ে ভয়ে বললো। আমি তীক্ষ্ণ চোখে তাকাতেই ও চুপসে গেলো। রাফিন আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
–‘ বলতেছি তো। তোর চোখ নামা। কেমন ভয় ভয় লাগে। ‘
আমি হেসে উঠলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বসে পরলাম সাইডে রাখা চেয়ারে। রাফিন বলল,
সেদিন ভোর তোকে কোলে করে নীতি আপুদের বাসায় দিয়ে আমাকে আর রাহাত ভাইয়াকে নিয়ে চলে আসেন মিরপুর। সেদিন ভাইয়ার সিলেট যাওয়ার ডেট বিকেলে ছিলো।আমাকে আর রাহাত ভাইয়াকে সব বলেছিলেন সন্ধ্যা সময়। তারপরে দশটার দিকে পরশ স্যার আর ফুঁপিকে নিয়ে হাজির হয় আমাদের বাসায়। আম্মু ,দাদুন আর আব্বু সবাই বাসায় ছিলো। আমি ভাইয়াদের নিয়ে আসতেই সবাই অবাক হয়েছিলো অনেক। পরে পরশ স্যার তোর আর ভাইয়ার বিয়ের কথা তুলেন।
আম্মু-আব্বু নীরব বসে ছিলো অনেকক্ষণ।ভাইয়া নির্লিপ্ত ভাবে হাসি মুখ নিয়ে বলে,
‘ জানি না আপনারা মানবেন কি না ? তবে আপনাদের সম্মতিতেই আমি হৃদিকে চাই।আমি সবটুকু দিয়ে আগলে রাখবো। শেষ সময়টুকু অবধি।আপনারা আমাকে বিশ্বাস করবেন একজন মানুষ হিসেবে। যে আপনার সম্পদ নিতে চায় নিজের ব্যক্তিগত ভালোবাসা হিসেবে।তাকে আমি ভালোবাসি। আমার সৃষ্টিকর্তার পর আমি দুটো মানুষকে আমি ভালোবাসি নিজের থেকে বেশি।আমি আপনাদের বিশ্বাস করতে বলছি না শুধু বলছি সুযোগ দিতে বলছি। ‘
ভাইয়ার সহজ স্বীকারোক্তিতে আম্মু পারে কান্না করে দিতে।আব্বু থম মেরে বসেছিলো। আর দাদুন তো ভাইয়াকে দেখে বলেছিলো,
‘ বিয়ে হলে তোমার সাথেই হবে আমার বোনুর। আর কেউ না মানলে বিয়া দিমুই না কারো সাথে। এইটা আমার আদেশ রেজাউল। ‘
আব্বু মুখ কাঁচুমাচু করলেও আম্মুর রাজি হওয়াতে সব ঠিক হয়েছে।
আমি আর রাহাত ভাইয়া একপ্রকার নেচেছিলাম। ভাইয়া বলেন, তার সিলেট যাওয়া লাগবে আর কাজের বর্ণনা দেন।ব্যাস সব ঠিক হলো। আর তোকে না জানানোর আইডিয়া ভাইয়ার। এই সম্পর্কে আমি আর কিছু জানি না।
–‘ বাকি কথা বাসর ঘরে হবে। ‘ রাফিনের কথার মাঝে নীতি দাঁত বের করে হেসে বলে উঠলো।
___________________
বুকের মাঝে হাতুড়ি পিটা শব্দ হচ্ছে। কিছু মূহুর্তেই বাসার ছাদে জমজমাট পরিবেশ। লাইটিং এর আলোয় ভরে উঠেছে সব। হাতে গোণা কয়েক জন চেনা আর অচেনা মুখের ভেতর আমি খুজে চলেছি আমার তাকে। যার অপেক্ষায় আমি মরছি প্রত্যেকটা মূহুর্ত। চাঁপা কথা আর হাসা-হাসির শব্দ গুলো কেমন ভালোলাগার ছোঁয়া আছে। আমার মনে হচ্ছে,আমি সুখের স্বপ্ন দেখছি যা অনন্ত কাল ধরে চলবে।
আমার অবাধ্য মনে হাজারো প্রশ্ন নিয়ে বসে আছি। জান্নাত আর নীতি পাশে বসে কথা বলছে উনাত ব্যাপারে।
আমি বারেবারে মিইয়ে যাচ্ছি। প্রত্যেকটা মূহুর্ত যার আশায় ছিলাম আজ সেই দিন আমার হাতের কাছে বহু কাছে। আমি শ্বাস বন্ধ করে বসে আছি।
প্রায় অনেকটা সময় পর বাতাসে সেই চির পরিচিত সুবাস ভেসে বেড়াচ্ছে। আমি প্রাণ ভরে শ্বাস নিলাম। আবারও সেই দম বন্ধ করা পরিবেশ। আমার পাশে সে এসে দাঁড়ালো আমি মাথা তুলে তাকানোর সাহস পেলাম না।
সে অতি সপ্তপর্ণে আমার হাত মুঠোয় নিয়ে নিলো।হৃৎপিন্ডের গতি হু হু করে বেড়ে উঠছে। সে আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন,
‘ আমি এসেছি
তোমার কাছে
হাজারো ভালোবাসা গুলো বলতে
আর যত্ন করে রাখা হাজারো
শুভ্র রঙের প্রেম নিয়ে। ‘
চলবে…
~’ কাল এক্সাম ছিলো সেই জন্য দিই নি। ঠান্ডা লেগে বেহাল অবস্থা আবার। চোখ ব্যথা ,গলা ব্যথা। অসহ্য লাগছে সব। লেখায় আজ প্রাণ নেই। আমি নিজের মতো গুছিয়ে রাখা শব্দ অগোছালো হচ্ছে।আজ দুই পার্ট দেওয়ার কথা থাকলেও আমি সময় করে কথাটা রাখবো। তবে আজ না।ছোট হয়েছে জানি তবে আমার হাত চলছে না সেই সাথে চোখ ব্যথা অসহ্য করে তুলছে।~