শুভ্র_রঙের_প্রেম
পর্বঃ১০
#রুবাইদা_হৃদি
প্রাণপণে ভয় থেকে ছুটে পালানোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি আমি৷ হালকা শীতেও ভয় আর দৌড়ানোর জন্য হাপিয়ে উঠেছি৷ অন্ধকারে শুধু দৌড়ে বেড়াচ্ছি এইভাবে দৌড়ালে আদেও কোথায় যাবো সেটা বুঝতে পারছি না ৷
জায়গা গুলো ঝোপঝাড়ে ভরা ৷ আমি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম তার কিছুটা দূরেই তিন চারটা ছেলে নেশা করছিলো৷ মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালাতেই ওরা ঘুরে তাকায় আমার দিকে ৷ তাদের হাতে এই নির্জন জায়গায় পরলে আমাকে ছেড়ে দিবে না ৷ কিছু না ভেবেই উলটো দিকে দৌড় দিয়েছিলাম ৷
নিজেকে সবচেয়ে অসহায় মনে হচ্ছে! আজ পরপর দুটো ভুল করেছি এমন ভুল হয়তো সবাই করে না! কিন্তু অনেকে করে আর সেই অনেকের কাতারে পরেছি আমি ৷ কান্না পাচ্ছে! যদি লোকালয় দেখতে পাই এই আশায় পা টেনে জোরে দৌড়ে সামনে যাচ্ছি৷ মোবাইলের অবশিষ্ট চার্জ ফুরিয়ে গিয়েছে ৷
চাঁদের দেখা নেই আকাশে৷ গুমোট মেরে কালো মেঘের গহ্বরে লুকিয়ে আছে ৷ মনে হচ্ছে,আর ফিরে যেতে পারবো না ৷ কি জন্য ঘুমিয়ে পরেছিলাম আর কি জন্যই বা বাস থেকে নামলাম?? উক্ত কথা দুটো ছেলেমানুষী হলেও বড্ড বোকামি৷
–‘ ওই ছেড়ি খারা কইতাছি৷ ‘ পা থেমে গেলো পেছন থেকে কারো শব্দে৷ আমি পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলাম ওই ছেলে গুলো ৷ তারমানে আমার পেছনেই আসছিলো?? ওদের দেখে আবারো প্রাণপণে সামনে ছুটলাম ৷
–‘ যতই দৌড়াও রাত বিরেতে ঘুরেফিরে আমগোর কাছেই ফেরত আসা লাগবো৷ ‘ শিস বাজিয়ে পেছন থেকে হেসে বলে উঠলো আবারো ৷ আল্লাহ বাঁচাও! কি হবে আমার??
আমি কাঁদছি! মনে হচ্ছে শরীরের সমস্ত শক্তি হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যাচ্ছে৷ হাসির আর পায়ের শব্দ আমার একদম কাছে ৷
অন্যের বোকামি গুলো দেখলে হাসি পায় বা আমরা ভাবি এইটা কি ভাবে করতে পারলো সে?? আমরা আদেও কি ভেবে দেখি? উক্ত বোকামি গুলো অজান্তেই হয় আর যখন হয় কাল হয়ে দাঁড়ায়৷
___________________________
আকাশে হঠাৎ করেই মেঘ ডেকে উঠলো৷ ফেব্রুয়ারিতেও যে বৃষ্টি হবে ভাবতে পারে নি স্নিগ্ধ ৷ গরম ভাবটা কেটে গিয়ে আবারো কাঁপানো শীত নিয়ে আকাশ ভেদ করে নেমে আসলো বৃষ্টির পসরা৷
চট্টগ্রাম থেকে ফিরতে মাঝের কিছুটা রাস্তা একদম শুনশান নীরব৷ বৃষ্টি আর মেঘের আনাগোনায় উক্ত জায়গা আরো ভয়ানক হয়ে উঠলো ৷ স্নিগ্ধ স্লো ড্রাইভ করছে৷ উদাস চোখে সামনে তাকিয়ে আছে৷ বৃষ্টির ফোঁটা গুলো গাড়ির জানালায় পরতেই লাইটের আলোয় মুক্তোর মতো ঝলমল করে উঠছে৷
জলদি ফেরার জন্যই রিস্ক নিয়ে রাতে বের হয়েছে৷ গত দুটো দিন হয়ে গেলো হাসফাস অবস্থা তার৷ সে মানুষটা কেমন আছে?? তাকে খুজেছে?? নানা চিন্তা আর অস্থিরতায় ঝিমিয়ে থাকা মাথা ব্যাথাটা হঠাৎ করেই বেড়ে উঠলো৷
গাড়ি থামিয়ে মোবাইল বের করে একটা ছবি বের করে কাঁপা স্বরে বলল, ‘ দূরে থাকতে চেয়েও পারি নি! মনের কোণে বড্ড জ্বালায়৷ শুভ্র রাঙা প্রেমে পরেছিলাম আর সেইটা এখন অতিরিক্ত পাগলামি তে রুপ নিয়েছে! আচ্ছা শুভ্র রাঙা পরী,তুমি বলো তো আমার কি পাগলামি করা ঠিক?? হ্যাঁ,অবশ্যই ঠিক, ভালোবাসায় পাগলামি না থাকলে ভালোবাসার মর্মার্থ গাঢ় হয় না যে! ‘
বৃষ্টির শব্দ বাড়ছে সেই সাথে বাড়ছে মনের কোণায় জমে থাকা সৃতি গুলোর বিচরণ৷ ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসির আভাসে স্নিগ্ধ অতীতে ফিরে গেলো৷
সদ্য মাস্টার্স ডিগ্রী হাতে পেয়েই উৎফুল্ল অবস্থা সবার৷ সেই সাথে জমানো হাসি-ঠাট্টায় মজে থাকা বন্ধুদের ছেড়ে যাওয়ায় ক্যাম্পাস জুড়ে হাহাকার৷ কি করুন দৃশ্য!
চাকরি খুজতে হবে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে হবে সেই সব এক মূহুর্তের জন্য ভুলে গিয়ে সবাই যেন নতুন করে বুঝতে পারলো বন্ধুদের সাথে আরো কিছুটা সময় কাটানো দরকার যা হবে চিরস্মরণীয়৷
ক্যাম্পাসের মাঝে বসে আছে দুটি ছেলে৷ দলের মূখ্য আকর্ষণ এখনো আসে নি৷ বিরক্তি ভঙিতে আদি বলে উঠলো, ‘ শালা কই গেছে ?? ডিগ্রি ফিগ্রি পাইয়া এক দৌড়েই কি চাকরির উদ্দেশ্যে রওনা হইছে নাকি?? ‘
নোমান হতাশ চোখে আদির দিকে তাকাতেই স্নিগ্ধ এসেই ধপ করে সবার মাঝে বসে পরে৷ তীব্র গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা৷ উপরের শার্টের বোতাম গুলো খুলে হাত দিয়ে বাতাস করে বলল,
–‘ কোথায় যাবি সবাই ঠিক করলি?? ‘
আদির মত সিলেট কিন্তু বাকি সবাই ঠিক করলো কক্সবাজার টু সেন্টমার্টিন৷ সবাই ঠিক করলো কালকে ভোরেই রওনা হবে ৷
উজ্জ্বল ঝলমলে সকাল৷ ভ্যাপসা গরমের মাঝেও স্টুডেন্ট লাইফের শেষ টুর টা মন্দ হবে না ৷ গাদাগাদি করে থাকা মেস ছেড়ে আজকেই চলে যাওয়ার দিনটা বিষাদময় হলেও তিনজন ব্যাগ গুছিয়ে ছুটলো প্রাণ ভরে আর কিছুটা দিন শ্বাস নেওয়ার জন্য৷ বাসায় ফেরার জন্য হাজার বাহানা থাকলেও সবাই সব বাহানা ভুলে ছুটে যাচ্ছে কৈশোরে৷ বারেবারে মনে হচ্ছে, এইটাই তো শেষ এর পরে ঘাড়ে দায়িত্ব আছে যেটা চাইলেও এড়ানো সম্ভব নয়! একদম নয়৷
কক্সবাজার পৌছেই নোমান বললো আজ রাতেই নাকি সেন্টমার্টিন যাবে৷ স্নিগ্ধ অলস ভাবে বলল,
–‘ আজ আর না! তোরা তিনজন চলে যা আমি কাল আসবো৷ বড্ড ক্লান্ত লাগছে৷ ‘
আদি জোর দেখালেও স্নিগ্ধের গরম চোখে তাকানোতে ভড়কে গিয়ে দমে যায়৷ হুট হাট মাথা ব্যথা তো আর এড়িয়ে যাওয়া যায় না ৷ সেটা আদি নোমান জানে ৷ গত চার বছর ধরে দেখে আসছে ওকে৷ স্নিগ্ধের একজন আন্টিকে চেনে ওরা সে এসেই বলতেন, তোর যাওয়ার জন্য সব ব্যবস্থা করা হয়েছে! তুই রাজি হয়ে যা বাবা৷ ‘
প্রতিনিয়ত স্নিগ্ধ গরম মেজাজে ধমকে উঠতো৷ ছেলেটা শান্ত কিন্তু রেগে গেলে ওর চেয়ে ভয়ংকর আর কাওকে মনে হয় না৷
প্রত্যেকবার কোথায় যাওয়ার কথা সেই আন্টি বলেন জিজ্ঞেস করলেই, সময় হলে জানতে পারবি! ‘
যতবার ছুটির পর ওরা বাসায় গেছে স্নিগ্ধ সেই মেসেই পরে থেকেছে৷ কিছু বললে, ম্লান হেসে বলতো, ‘ পড়া বাকি অনেক! এই সময়টা কাজে লাগাতে হবে বুঝলি৷ ‘
টপ লিস্টে থাকা স্টুডেন্টদের বাসায় ফিরতে নেই এই ধারণা নিয়েই ওরা ভাবতো হয়তো এমনটা ৷
বিকেল হতেই বিতৃষ্ণা নিয়ে আদি আর নোমান বেরিয়ে যায়৷ যাওয়ার আগে দাঁতে দাঁত চেপে আদি বলে যায়, ‘ কাল সকালেই যেন দেখা পায়৷ না পেলে সমুদ্রের নীল পানিতে চুবিয়ে মারবে৷ ‘ আদির কথায় হেসে উঠেছিলো দুইজনে ৷ মুচকি হেসে সম্মতি দিতেই ওরা দুইজন বেরিয়ে যায়৷
সমুদ্রের একদম পাশেই কটেজ নিয়েছে স্নিগ্ধ! বন্ধুদের ছেড়ে খারাপ লাগলেও শরীরের অবস্থা বিবেচনা করে উশখুশ মনটাকে দমন করে ৷ বিকেল হতেই বিদঘুটে মাথা ব্যথা বেড়ে যায় বহুগুণ৷
রুম থেকে বেরিয়ে যায় সামনে নির্জন জায়গায়৷ খোলা প্রকৃতির হাওয়া মাথা ব্যথা দমনের উপযুক্ত মেডিসিন ৷ সমুদ্রের ঝিরিঝিরি উত্তাপ বাতাসে হঠাৎ করেই স্নিগ্ধ আবিষ্কার করে তার মাথা ব্যথা নেই৷
সামনে সারি সারি নারিকেল গাছ! সেই গুলোর আশেপাশে বহু মানুষের আনাগোনা৷ বিরক্ত চোখে চারদিকে তাকিয়ে নারিকেল গাছের মাঝ দিয়ে সামনে এগুতে থাকে সে৷ নারকেলের পাতা ভেদ করে মিইয়ে যাওয়া সূর্যের আলো ঠিকরে পরছে বালুর উপর৷ আবছা আলো আবছা ছায়া মিলে অপূর্ব দৃশ্য তৈরি হচ্ছে৷ সমুদ্রের গর্জন হালকা শোনা যাচ্ছে৷ কিছুদূর যেতেই নির্জন জায়গা দেখতে পেলো ৷ আশেপাশে চোখ বুলিয়ে আবিষ্কার করলো সে ছাড়া এখানে কেও নেই৷ স্বস্তির শ্বাস ফেলে দাঁড়িয়ে আছে সে ৷ গোধূলি বিকেল৷ সূর্যের কমলা রঙটা একদম পাকা৷ সমুদ্রের গর্জন জানান দিচ্ছে তার দাম্ভিকতা! ঢেউয়ে ভেসে আসা ফেনা গুলোর উপর তীর্যক রশ্মি পরতেই সেইগুলোকে ভাসমান হলদেটে ফুল মনে হচ্ছে৷
জোরে জোরে শ্বাস টেনে ভেতরকার দূষণ কে মুক্ত করার মাঝে প্রশান্তি আর কোথাও নেই৷ একা নির্জন দ্বীপে নিজের অস্তিত্ব হঠাৎ করেই বিলীন করে দেওয়ার ইচ্ছা হচ্ছিলো স্নিগ্ধের ৷
দূরে সমুদ্রের মাঝে বিলীন হওয়া সূর্যটার মতো তারও ইচ্ছে হচ্ছিলো ডুবে যেতে ৷
নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতেই এগিয়ে যায় নীলাভ পানির বিশাল জলরাশির দিকে ৷
_________________
সূর্য ডুবে গেলেও অন্ধকার হয় নি৷ সন্ধ্যের নিজস্ব আলো আছে আর সেই আলোরে বসে উদাস চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে স্নিগ্ধ ৷ নিজের করতে যাওয়া বোকামির কথা ভাবতেই হাসি পেলো৷ সমুদ্রের কাছে নিজেকে বিলীন করলে কেও তো জানবে না! নিজেকে বিলীন করার আগে তার জন্য কারো চোখে তীব্র বেদনা দেখতে চায়৷ আর সেই বিলীনের মাঝে ব্যার্থতা থাকলেও সুখের ফোয়ারা থাকবে৷
ব্যাস্ত পায়ে উঠে দাঁড়িয়ে সাথে আনা ক্যামেরা দিয়ে চারপাশের কিছুটা সৌন্দর্য ধারণের চেষ্টায় সামনে এগিয়ে যায়৷
সাদা আর্কটিক উড়ছে৷ শীতের মৌসুমের কিছুদিন আগেই এরা উড়ে আসে ৷ সন্ধ্যার হালকা কালো আকাশে সাদা আর্কটিক গুলোকে শুভ্র বাতাসে দোল খাওয়া চাঁদর মনে হচ্ছে স্নিগ্ধের কাছে৷
ক্যামেরার লেন্স ফোকাস করে এক নাগাড়ে ছবি তুলছে ৷
ক্লান্ত হয়ে কটেজে ফিরে গিয়ে ছবি গুলো চেক করতেই বুকে ধরাস করে উঠে৷ সাদা শাড়ি পরিহিতা একটা মেয়ে সামনের দিকে ঘুরে আছে৷ কোমর পর্যন্ত কোঁকড়াচুল গুলো স্থির৷
হয়তো হাওয়ার তালে দুলছিলো তখন৷ নারকেল গাছের পাশ ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে তাই হয়তো স্নিগ্ধ তখন খেয়াল করে নি ৷ সাদা শাড়ি৷ মনের মাঝে সুপ্ত অনুভূতি দোলা দিলো ৷
একছুটে আবারো বিচে গেলো সে ৷ ওই জায়গাটায় গিয়ে থমকে দাঁড়ালো ৷
আশেপাশে কেও নেই ৷ মনের মধ্যে হঠাৎ করে জানান দিলো,হারিয়ে ফেলেছো৷ কিছুদূর এগিয়ে যেতেই ছোট একটা কাগজ বালুর মধ্যে বাতাসের তালে উড়তে থাকতে দেখে উঠিয়ে নেয় স্নিগ্ধ ৷ খুলে দেখে,
” প্রশান্তের বুকে উড়িয়ে দিলাম নাম খানি..! ‘
দমকা হাওয়ার মতো ফিরে এসো শুভ্র প্রেমিকের হাতখানি ধরে ! ‘
—‘ হৃদি! ‘
লেখাটুকু পড়েই মনের মধ্যে দোলা দেয়৷ কার জন্য লেখা সেই চিরকুট?? যার জন্যই হোক চিরকুটের মালিক যে সেই সাদা শাড়ি সেটা বুঝতে বাকি নেই৷
তারপরের দিন আদি আর নোমানকে ফিরে আসতে বলেই রওনা দেয় ঢাকার উদ্দেশ্যে ৷এই নিয়ে আদি আর নোমানের কি রাগারাগি ভেবেই হেসে উঠলো স্নিগ্ধ!
ঢাকা এসে প্রত্যেকটা জায়গায় খুজেছে ৷ সাদা শাড়ি পরা কাওকে দেখলেই ভেবেছে, শুভ্র রাঙা পরী৷
অসুস্থতা বেড়ে চলে! সেই সাথে দেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রেশার ৷ সব মিলিয়ে নিজের মনের সেই অনুভূতি চাপা দিয়েই চলে গিয়েছিলো ৷ ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে স্নিগ্ধ ৷ কত কিছুর পরিবর্তন হয়েছে৷ বাকি কথা গুলো নাহয় সেই মানুষটার সামনেই প্রকাশ করবে ৷ আর সেটা হবে ভালোবাসার প্রকাশ৷ শুভ্র প্রেমের প্রকাশ!
____________________
–‘ ভালো কইরা খুজ ছেড়ি এইহানেই লুকায় আছে৷ যাইবো আর কই৷ ‘
–‘ মোখলেইচ্ছা তুই ডানে খুজ শালা ৷ ‘
আমি ভয়ে আরো কুঁকড়ে গেলাম৷ বৃষ্টির ঝুনঝুন শব্দ কানে ভেসে আসছে৷ হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না আটকানোর বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছি৷ আমার আশেপাশেই পায়ের শব্দ আর কথা ভেসে আসছে৷ নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করছি৷
গমগম করে মেঘ ডাকছে৷ সেই সাথে আমার মনের কোণায় অসহায়ত্ব কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে৷ কিছু একটা হোক আর আমি বাসায় পৌছাতে পারি৷ মনে মনে এই দোয়া আওড়াচ্ছি ৷
আবারও দূরে কোথাও বাজ পরতেই ছেলে গুলোর গলার শব্দও মিলিয়ে যায় ৷
ঠান্ডা শীতল হাওয়া আর কাদা মাটিতে প্রচুর ঠান্ডা লাগছে ৷ শাড়ির আঁচল লেপ্টে আছে কাঁদা আর পানিতে ৷ বৃষ্টির ফোঁটা গুড়ি গুড়ি করে ঝড়ছে! বিদ্যুৎ -এর আলোতে চারপাশে আলোকিত হতেই এক নজরে বুঝতে পারলাম ছেলে গুলো চলে গেছে৷
তবে এইটা কি মেইন রাস্তা না কাঁচা রাস্তা বোঝার উপায় নেই৷ ভয়ের সাথে ঠান্ডা সেই সাথে বাঁচাতে চাওয়ার আকুলতায় মিইয়ে গেলাম আমি৷
কে জানে কয়টা বাজে আর কখন ভোর হবে ৷ সেই আলোতে ভরসা পাবো৷
কিন্তু এখানে ঝোপের মধ্যে বসে থাকা একদম ঠিক হবে না ছেলে গুলো আসতে পারে ৷
আমি হাতে ভর দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়ালাম ৷
চারদিকে অন্ধকার চোখের আলোয় যতটুকু অন্ধকার কাটছে সেই ভরসায় সামনে এগিয়ে যাচ্ছি৷ কেও আসুক আমাকে বাঁচাক! আমি যে পথ হারিয়ে ফেলেছি ৷
জোরে পা ফেলছি ৷ ঝাপসা আলোতে সামনে কি আছে একদম বুঝতে পারছি না৷ বৃষ্টির পানিতে জ্বর বেড়েছে ৷
পায়ে কিছু একটা বেজে হোঁচট খেয়ে পরতেই মাথায় কিছুর সাথে লাগে৷ ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলাম আমি ৷
মাথায় হাত দিয়ে চোখ খুলে তাকালাম দূর থেকে লাইটের আলো দেখা যাচ্ছে ৷ হঠাৎ করেই মনে হচ্ছে মারা যাচ্ছি৷ তীব্র ব্যাথায় অনুভূতি শূন্য হয়ে পরেছি৷ চোখের সামনে বাবা-মা আর দাদুনের মুখ ভেসে উঠলো৷ সেই সাথে আমার ছোট ভাই রাফিনের ৷ ওদের কথা বড্ড মনে পরছে৷ মৃত্যুর আগে আপনজনদের মুখ ভেসে উঠে দাদুনের মুখে শুনেছিলাম৷
নীতি আর রাহাতের সাথে কাটানো মূহুর্ত গুলোও ভেসে উঠছে৷ সেই সাথে আরো একটা মানুষ ৷
সেই মানুষটা গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে আসছে আমার দিকে ৷ আমি কি ভুল দেখছি?? না সেও আমার অজান্তেই হয়ে যাওয়া আপন মানুষ বলে চোখের সামনে দেখছি ৷ সে আসছে… তবে আমার যাওয়ার সময় বোধহয় এসেছে..! অস্ফুটস্বরে শুধু বললাম,
–‘ স..স..স্নি…… ‘ ঠোঁট ভেদ করে সম্পূর্ণ শব্দটা বের হওয়ার আগেই শেষ নিশ্বাসের প্রহর এসে পড়েছে ৷ অজানা অনেক কিছুই জানা হলো না সেই সাথে অজানা সেই মানুষটাকে চেনা হলো না৷
চলবে…..
~” কাল্পনিক আর বাস্তবতা দুটো আলাদা ৷ ভেবে লেখা কাল্পনিক চিত্রটি তুলে ধরছি৷ মন্তব্য করবেন অবশ্যই৷ আর ভুল ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ~♥