#মেঘ_বসন্তের_মায়া💛
#পর্ব:০১
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💛
-”১ বছরের জন্য আপনাকে আমায় বিয়ে করতে হবে মিস তিথি!’তবে চিন্তা করবেন না এর বিনিময়ে আমি আপনাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিবো!’
“পায়ের উপর পা তুলে একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কথা বলে উঠল আকাশ তিথিকে!’আর আকাশের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বলে উঠল তিথিঃ
—“কি…
“তিথির কথা শুনে আকাশ এক পলক তিথির দিকে তাকিয়ে ভ্রু-কুচকে বলে উঠলঃ
—“আমি এক কথা বার বার বলা পছন্দ করি না,আর আমি এমন কিছু বলি নি যে আপনি বুঝতে পারেন নি!’…
—“আপনার কি মাথা ঠিক আছে বস,,আমি একজন সামান্য ফুড ডেলিভারি গার্ল আর আপনি কিনা আমায়..
—“আপনার প্রফেশনাল লাইফের ওপর আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই,আর না আপনার ওপর আছে!’আমি জানি আপনার মায়ের অপারেশনের জন্য এখন আপনার অনেক টাকার প্রয়োজন,আর আমার আপনার মতো একজন মেয়ে!’…
“আকাশের কথার অর্থ বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেসাসূচক ভাবে বলে উঠল তিথিঃ
—“মানে…
—“অতিরিক্ত মানে খুঁজতে যাবেন না,,আপনি যদি রাজি থাকেন তবে বলুন!’বাকিটা পড়ে বুঝিয়ে বলবো…
“তিথি কিছুক্ষন ভেবে হতভম্ব কন্ঠে বলে উঠলঃ
—“আমাকে বিয়ে করার পিছনে আপনার জটিল কোনো কারন নেই তো…
—“কারন তো অবশ্যই একটা আছে!’
“আকাশ আর কিছু বলার আগেই তিথি ফট করে বলে উঠলঃ
—“বুঝতে পেরেছি সেদিন রাস্তায় ঝগড়া করার জন্য আমায় বিয়ে করে টর্চার করতে চাচ্ছেন তাই না!’
“তিথির এবারের কথা শুনে আকাশ অবাক হয়ে ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে বললোঃ
—“আর ইউ ক্রেজি,সেদিনের সামান্য ঝগড়ার জন্য আপনায় আমি বিয়ে করে টর্চার করবো!’একটা জিনিস মাথায় রাখবেন বিয়ে আর মেয়ে এই দুটোর ওপর আকাশ চৌধুরীর বিন্দুমাত্র ইন্টারেস্ট নেই,,নেহাত গ্রেনির জন্য…
“এতটুকু বলে থেমে যায় আকাশ!’আকাশের ক্ষিপ্ত মেজাজ দেখে ঘাবড়ে যায় তিথি!’হয়তো সে একটু বেশি বেশি ভেবে ফেলেছে!’কিন্তু এটা তো ঠিক তার এই মুহূর্তে অনেক টাকার প্রয়োজন!’কিন্তু তাই বলে ভাবতেই কেমন একটু লাগলো তিথির!’তিথিকে চুপ থাকতে দেখে আকাশ আবারো বলে উঠলঃ
—“আপনার হাতে ভাবার জন্য কাল দুপুর পর্যন্ত সময় আছে মিস তিথি,এর মধ্যে আপনার সিদ্ধান্ত জানাবেন আমায়!’কারন আমার হাতে বেশি সময় নেই,তবে একটা জিনিস মাথায় রাখবেন বিয়েটা হলে আপনারও লাভ আর আমারও!’বাকিটা আপনার ইচ্ছে…
“উওরে কিছু বললো না তিথি!’চুপচাপ নীরবে আকাশের অফিসের কক্ষ ত্যাগ করলো সে!’আর আকাশ কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো তিথির যাওয়ার পানে…
_____
“ব্যস্তহীন রাস্তা দিয়ে স্কুটি চালিয়ে নিজের গন্তব্যে এগোচ্ছে তিথি!’মাথার মধ্যে হাজারটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তাঁর!’সে সত্যি বুঝতে পারছে না এমন কি কারন থাকতে পারে যার কারনে এত বড় বিজনেস ম্যান তাকে বিয়ে করতে চাইছে!’এমন তো নয় তাদের মধ্যে খুব একটা পরিচিত ভাব আছে!’এই নিয়ে জাস্ট তিন বার দেখা হলো আকাশের সাথে তিথির!’এর মধ্যে প্রথম দিনই ঝগড়া দিয়ে শুরু….
|| ফ্লাসবেক ||
“অন্যমনস্ক হয়ে গাড়িতে গিয়ে আচমকা গাড়ির সামনে একটা স্কুটি চলে আসায় জোরে ব্রেক কষলো আকাশ!’কিন্তু জোরে ব্রেক কষলেও সেই সামনের স্কুটির সাথে ধাক্কা লেগেই যায় আকাশের!’যার পরিনতি হিসেবে সামনের স্কুটি নিয়ে পড়ে যায় তিথি!’সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে বলে উঠল সেঃ
—“ও মা গো গেল রে গেল আমার কোমড় ভেঙে গুঁড়োগুড়ো হয়ে গেল!’
“কারো চেঁচানো শুনে আকাশ বেশি কিছু না ভেবে চটজলদি গাড়ি থেকে বের হয়!’সামনেই একটা মেয়েকে দেখে বলে উঠল সেঃ
—“আর ইউ অলরাইট মিস,
“আকাশের কথা শুনে তিথি তার মাথার হেলমেট খুলে রাগী কন্ঠে বলে উঠলঃ
—“কিসের অলরাইট চোখে দেখেন না আমি পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছি…
—“আই এক্সট্রিমলি সরি মিস,,
—“রাখুন আপনার সরি চার-চাকার গাড়ি চালিয়ে দু-চাকার গাড়ি চোখে পড়ে না তাই না!’এই হলো আপনাদের বড়-লোকদের দোষ রাস্তা ঘাটে বের হলেই নিজেকে রাস্তার মালিক ভেবে ফেলেন!
“তিথির কথা শুনে রেগে যায় আকাশ!’তারপরও নিজেকে রাগটাকে দমিয়ে রেখে বললো সেঃ
—“এইবার কিন্তু আপনি বেশি বেশি করছেন…
—“কি বেশি বেশি করেছি এই আপনার মতো লোকেদের জন্য আমরা রাস্তাঘাটে ঠিকভাবে চলাচল করতে পারি না,আপনার মতো লোকেদের ধরে পুলিশে দেওয়া উচিত!’
“তিথির কথা শুনে আকাশ চরম ভাবে রেগে যায়!’মানছে তার দ্রুত এগোনোর ফলে সাথে অন্যমনস্ক থাকার কারনে এমনটা হয়েছে কিন্তু তাই বলে মেয়েটা এইভাবে বলবে তাকে!’মুহূর্তের মধ্যে মেজাজ বিগড়ে যায় আকাশের, আকাশ রাগী কন্ঠে বলে উঠলঃ
—“স্টপ ইউর মাউথ,,
“আকাশের ধমক শোনার সাথে সাথে তিথি ঘাবড়ে গিয়ে চুপ হয়ে যায়!’তিথিকে চুপ হতে দেখে আকাশ কিছু কড়া কথা বলবে এর আগেই আকাশের ফোনটা বেজে উঠল!’উপরে ডক্টরের নাম্বার দেখে নিজের রাগটাকে হাল্কা দমিয়ে রেখে তিথির মুখোমুখি হয়ে বললোঃ
—“এটা পাবলিক প্লেস তাই বেশি কিছু বললাম না,,সাথে আমার একটু তাড়াও আছে তা না হলে এই আকাশ চৌধুরীর সাথে উঁচু গলায় কথা বলার ফল কি হয় বুঝিয়ে দিতাম!’ভেবেছিলাম আমার জন্য যা ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দিবো কিন্তু ইউর বিহেভিয়ার জন্য দিলাম না,,
“এতটুকু বলে আকাশ ফোনটা তুলে ‘আসছি বলে’ বলে তাড়াতাড়ি গাড়ি চালিয়ে চলে যায়!’আর তিথি জাস্ট হাবলার মতো তাকিয়ে থাকে আকাশের যাওয়ার!’সেদিনের জন্য রেস্টুরেন্টের মালিকের কাছে অনেক বকা শোনে তিথি!’কারন তার জন্য অনেক খাবার নষ্ট হয়ে যায়!’সেদিন তো তিথির ইচ্ছে করছিল আকাশকে ধরে এনে প্রচুর মারতে!’এরপরের দিনই আবার দেখা হয় তিথির সাথে আকাশের!’সেটাও আকাশের অফিসের বসে,,খাবার ডেলিভারি করতে এসেছিল তিথি!
“তিথিকে দেখে আকাশ শুরুতে একটু রেগে গেলেও পরক্ষণেই আবার কিছু একটা ভেবে কিছুই বলে নি!’এরপর আর আজ দেখা হলো তিথির সাথে আকাশের,আজও খাবার ডেলিভারি করতে এসেছিল সে আর তখনই আকাশ তাকে ওই কথাগুলো বলে!
“পুরনো কথাগুলো ভাবতে ভাবতে স্কুটি চালিয়ে যাচ্ছে তিথি!’আকাশ তাকে বিয়ে করে টর্চার করবে এমনটাই ভাবতেই কেমন যেন লাগছে তিথির না জানি মনে মনে কি ভাবছে আকাশ!’আর তার চেয়েও বড় কথা টাকার জন্য সে কাউকে কেন বিয়ে করবে,,না এটা সম্ভব নয় হুম তার টাকার প্রয়োজন কিন্তু এর মানে এই নয় যে টাকার জন্য এগ্রিমেন্টের বিয়ে করবে!’এরকম হাজারো কথা ভাবতে ভাবতে এগোচ্ছে তিথি!’এমন সময় হঠাৎই তিথির ফোনটা বেজে উঠল ফোনের শব্দ কানে আসতেই তিথি তার স্কুটিটা রাস্তার এক সাইডে থামিয়ে ফোনটা তুললো উপরে ছোট বোনের নাম্বার দেখে কিছুটা হতভম্ব কন্ঠে বলে উঠলঃ
—“কি হয়েছে মা ঠিক আছে তো..
—“হুম মা ঠিক আছে আপু কিন্তু আজ যে মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা ভুলে গেলে নাকি…
—“ওহ তুই মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যা আমি আসছি…
—“ওকে আপু!’
“উওরে তিথি আর কিছু না বলে স্কুটিটা স্টার্ট দেয় আর দুই জায়গায় খাবার ডেলিভারি করার আছে তার সেই কাজটা শেষ করেই যাবে সে ডাক্তারের কাছে!’….
____
“হসপিটালের বেডের পাশে একজন বয়স্ক মহিলার হাত ধরে বসে আছে আকাশ!’চোখে মুখে বিষন্ন ভাব তার!’আকাশের বাবা- মা নেই,আকাশ যখন খুব ছোট তখন একটা এক্সিডেন্টে মারা যায় তার বাবা-মা!’এরপর থেকেই আকাশকে বড় করেছে তাঁর গ্রেন্ডমা!’আজ সেই গ্রেন্ডমাই খুব কঠিন রোগে আক্রান্ত!’হঠাৎই আকাশের গ্রেন্ডমার ঘুম ভেঙে যায় চোখ খুলে আকাশকে অন্ন মনস্ক হয়ে বসে থাকতে দেখে খুশি মনে বললেন উনিঃ
—“আকাশ….
“আচমকা গ্রেনির ভয়েস শুনতেই আকাশ তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে হতভম্ব কন্ঠে বলে উঠলঃ
—“গ্রেন্ডমা…
“উওরে হাসলেন রাশেদা বেগম!’তারপর বললোঃ
—“মন খারাপ করে বসে আছো কেন?’
—“কই মন খারাপ নেই তো!’…
“এবারও হাসলেন রাশেদা বেগম!’তার নাতিটা ঠিকভাবে মিথ্যে কথাও বলতে পারে না!’
.
.
“মাথায় ক্যাপ পড়েই দ্রুত গতিতে ছুটে হসপিটালে ঢুকলো তিথি!’খাবার পৌঁছাতে পৌঁছাতে তার একটু লেট হয়ে গেছে!’হঠাৎই তিথির চোখ যায় একটা কেভিনের দিকে….
!
!
#চলবে…..