মেঘ_বসন্তের_মায়া💛পর্বঃ২০ (শেষ)

#মেঘ_বসন্তের_মায়া💛পর্বঃ২০ (শেষ)
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💛

বিছানায় শুয়ে আছে তিথি পাশেই আকাশ ঘুমিয়ে আছে কিছুক্ষন আগেই ঘুমিয়েছে সে। আর তিথি চুপচাপ মাথার নিচে হাত দিয়ে শুয়ে আছে মনটা ভিষণ খারাপ তার। বিকেলে গ্র্যান্ডমার বলা কথাগুলো বার বার মনে পড়ছে তার সাথে গ্র্যান্ডমাকে দেওয়া কথা ‘ আকাশকে ছেড়ে কখনো যাবে সে’ বিষয়টা খুবই কষ্ট দিচ্ছে তিথিকে। কিন্তু সেই মুহূর্তে কি বা করতো তিথি। ভেবেই পাশ ফিরে তাকালো সে আকাশের ঘুমন্ত মুখের দিকে। ক্লান্ত ভরা মুখ নিয়েই ঘুমিয়ে আছে আকাশ,দু’দিন আগেই বিছানায় ঘুমানোর পারমিশন দিয়েছে আকাশ তিথিকে। তবে এর পিছনেও কারন আছে সেদিন ঘুমের মধ্যেই সোফার ওপর থেকে পড়ে যায় তিথি আর এর জন্যই আকাশ তিথি পাশাপাশি ঘুমায় কিন্তু তাদের মাঝখানে ইন্ডিয়া বাংলাদেশের বর্ডার দেওয়া। আর বর্ডার হিসেবে রয়েছে ইয়া লম্বা কোলবালিশ। তবে এই মুহূর্তে তিথির যেমন মনখারাপ হচ্ছে তেমনি আবার আকাশ মুখের দিকে তাকালেই এক অদ্ভুত মায়া এসে গ্রাস করেছে তাকে। আকাশকে তিথির প্রথম দিন থেকেই ভালো লাগতো যেদিন আকাশের সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল কিন্তু আকাশের রাগ সাথে বড় লোক হওয়ায় সেটাকে ভালো লাগা পর্যন্তই রেখে দিয়েছিল তিথি। কিন্তু এখন ভাবতেই ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেললো তিথি। তারপর আকাশের দিক থেকে চোখ সরিয়ে সোজা হয়ে শুলো সে কিছুই যেন ভালো লাগছে না তিথির।’

.

মাঝরাতে হঠাৎই কাশতে কাশতে ঘুম ভেঙে যায় গ্র্যান্ডমার। চটজলদি বসা থেকে উঠে বসলেন উনি,কাশের মাত্রাটা এতই বেড়ে গেছে যে কিছুতেই কমছে না সেটা। মাথায় উপাত্ত সাথে শরীর কাঁপছে গ্র্যান্ডমার। গ্র্যান্ডমা কাশতে কাশতে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন কিন্তু হেঁটে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ক্ষমতা যেন হচ্ছে না তার। পাশেই তিন চার পা ফেললেই টেবিলের উপর রাখা পানির জগ আর গ্লাস। গ্র্যান্ডমা কাশতে কাশতে একপা একপা করে এগিয়ে গেলেন গ্লাসটার দিকে। কাশির চাপটা পুরোই বেড়ে গেছে তারপরও বহুত কষ্টে টেবিল পর্যন্ত গেলেন উনি বুকের ভিতরও যন্ত্রণা হচ্ছে প্রচুর সাথে হাতও কাঁপছে। বহুত কষ্টে গ্র্যান্ডমা তার হাত দিয়ে পানির গ্লাসটা ধরলেন কিন্তু হঠাৎই কাশতে কাশতে মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসলো তাঁর সাথে হাত থেকে পানির গ্লাসটা পড়ে গেল নিচে। বুকের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে হঠাৎই রুমের মধ্যে বিকটও এক শব্দ হলো।’

হঠাৎই ঘুমের মধ্যে আচমকা শোয়া থেকে উঠে বসলো আকাশ। আকাশকে উঠতে দেখে চমকে উঠলো তিথি তারপর সেও শোয়া থেকে উঠে বসে কিছুটা হতভম্ব কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ কি হলো?’

‘ তিথি গ্র্যান্ডমা।’

বলেই একপ্রকার দৌড়ে রুম থেকে বের হলো আকাশ। আকাশকে এইভাবে দৌড়াতে দেখে তিথিও আর বসে না থেকে চললো আকাশের পিছন পিছন।’

___

স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ তিথি গ্র্যান্ডমার রুমের সামনে। কারন অচেতন অবস্থায় নিচে অজ্ঞান হয়ে আছে গ্র্যান্ডমা পাশেই কাঁচের টুকরো সাথে রক্তের ছাপ। তিথি তো গ্র্যান্ডমার এমন অবস্থা দেখে দৌড়ে গেল তৎক্ষনাৎ আর আকাশকে ঘিরে ধরলো একরাশ ভয় আর অস্থিরতায়। আকাশকে ভীতু হয়ে যেতে দেখে তিথি দৌড়ে গেল আকাশের কাছে তারপর বললো,

‘ তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করুন, স্যার?’

তিথির কথা শুনে চমকে উঠলো আকাশ সাথে সাথে হতভম্ব হয়ে বললো সে,

‘ হুম হ্যাঁ।’

হসপিটালের এমারজেন্সি ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ তিথি। আকাশের তো ভয়ে আর গ্র্যান্ডমার অবস্থা দেখে অস্থিরতা ফিল হচ্ছে। কিছুক্ষন আগেই তাঁরা এসেছে হসপিটালে আর হসপিটালে ঢুকেই সোজা এমারজেন্সি ওয়ার্ডের নেওয়া হয়েছে গ্র্যান্ডমাকে। আকাশের যেন পুরোই পাগল পাগল লাগছে নিজেকে।’

এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো সাথী আর সাথীর মা। তিথি তার মাকে দেখে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। তিথিকে কাঁদতে দেখে ওর মাও তিথির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠল,

‘ কাঁদিস না দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।’

এরই মধ্যে ইমারজেন্সি ওয়ার্ড থেকে বের হলো হৃদ সহ দুজন ডাক্তার। তিনজনের চোখে মুখেই বিষন্নতার ছাপ। ডাক্তারদের বের হতে দেখেই আকাশ তিথি ওরা এগিয়ে গেল ডাক্তারের কাছে। কিন্তু ওনারা কিছু না বলেই এগিয়ে গেল সামনে। ওনাদের যেতে দেখে আরো হতাশ আকাশ। এবার আকাশ গিয়ে তাকালো হৃদের চোখের দিকে। চোখ ভাসছে হৃদের। হৃদের অবস্থাটা আন্দাজ করতে পেরে আকাশ শুধু ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো হৃদের মুখের দিকে। আর হৃদ মাথা নিচু করে বলে উঠল,

‘ গ্র্যান্ডমা আর নেই আকাশ।’

কথাটা শুনতেই যেন দু’কদম পিছনে চলে গেল আকাশ। যেটার ভয় পেয়েছিল সেটাই হলো। পুরো বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো আকাশ আর পাশেই তিথি গ্র্যান্ডমার অবস্থার কথা শুনে চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো তারও বিশ্বাস হচ্ছে না গ্র্যান্ডমা আর নেই। মাত্র কয়েকদিনেই অনেকটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল গ্র্যান্ডমার সাথে তিথির। সেই হাসি মাখা মুখটার কথা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে তিথির। সাথে চোখ বেয়ে পড়ছে পানি। আর আকাশ সে তো পুরোই পাথর হয়ে গেছে এমন সময় ইমারজেন্সি ওয়ার্ড থেকে সাদা কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে আনা হলো গ্র্যান্ডমাকে। গ্র্যান্ডমাকে আনতে দেখে সবাই এগিয়ে গেলেও গেলো না আকাশ হাত পা কাঁপছে তাঁর। আকাশ ছিঁটকে কয়েক কদম পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো।

আর তিথি গ্র্যান্ডমাকে দেখেই দৌড়ে গিয়ে গ্র্যান্ডমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো অসম্ভব কষ্ট হচ্ছে তাঁর। হঠাৎই কাঁদতে কাঁদতে তিথির হাত আলগা হয়ে গেল সেও লুটিয়ে পড়লো গ্র্যান্ডমার পাশ দিয়ে হুট করে এমন কিছু হওয়াতে হৃদসহ আশপাশে সবাই এগিয়ে আসলো তিথির দিকে আকাশও স্তব্ধ হয়ে এগিয়ে আসলো পরক্ষণেই হৃদ তিথির হাতের পার্লস চেপ করে না বোদক মাথা নাড়ালো সাথে সাথে আকাশের বুকের পাশটা ছিন্নবিছিন্ন হয়ে গেল। একসাথে দুজন প্রিয় মানুষকে এভাবে হারাতে হবে ভাবতেই আকাশের শরীর, বুক কেঁপে উঠল সাথে অসম্ভব ভাবে শরীর কেঁপে উঠলো আকাশের।’

.
.

ঘুমের মধ্যে আকাশকে কাঁপতে দেখে চমকে উঠলো তিথি। তক্ষৎনাত শোয়া থেকে উঠে বসলো সে তারপর আকাশ দিকে তাকিয়ে ডাকলো আকাশকে প্রথম ডাকে না উঠলেও পরের হতভম্ব হয়ে চোখ খুলে তাকালো আকাশ। কিছুক্ষন আগে কিসব স্বপ্ন দেখলো ভেবেই শোয়া থেকে সোজা হয়ে উঠে বসলো আকাশ। আকাশকে এইরকম ঘেমে একাকার হয়ে যেতে বললো তিথি,

‘ কি হয়েছে স্যা…

তিথি আর কিছু বলার আগেই আকাশ হতভম্ব হয়ে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো তিথিকে তারপর হতভম্ব গলায় বললো,

‘ প্লিজ তিথি আমায় ছেড়ে কখনো কোথায় যেও না,তাহলে আমি সত্যি বাঁচতে পারবো না।’

হুট করে আকাশের এমন কাজ আর কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায় তিথি। হতভম্ব হয়েই বললো সে,

‘ কি হয়েছে স্যার আপনি কি কোনো স্বপ্ন দেখেছেন নাকি?’

উওরে আকাশ তিথিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘ তুমি আমায় বলো তিথি কখনো আমায় ছেড়ে যাবে না?’

আকাশের কথা শুনে তিথি নির্বিকার হয়ে বললো,

‘ সেটা কি করে সম্ভব স্যার একবছর পর তো আমায় যেতে হবে এগ্রিমেন্টে তাই তো লেখা।’

‘ ওসব এগ্রিমেন্টের কথা ভুলে যাও তিথি বিয়ে যখন হয়েছে তখন কোনো ছাড়াছাড়ি নেই তুমি চাইলেও আমার কাছে থাকবে আর না চাইলেও।’

‘ আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে সব বুঝলাম না কিন্তু হুট করে আপনার কি হলো কোনো স্বপ্ন দেখেছিলেন নাকি?’

‘স্বপ্ন’ কথাটা শুনতেই গ্র্যান্ডমার কথা ভেবেই আকাশ তিথিকে ছেড়ে দেয় তারপর তিথির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চটজলদি বিছানা থেকে নেমে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় আকাশ। আকাশের এমন কাজে আরো অবাক তিথি তারপর সেও বেশি কিছু না ভেবে এগিয়ে গেল আকাশের পিছন পিছন।’

____

গ্র্যান্ডমার রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ আর তিথি। সামনেই গ্র্যান্ডমা ঘুমিয়ে আছেন গ্র্যান্ডমাকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে আর রুমের অবস্থাও ঠিকঠাক দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো আকাশ। কিছুক্ষন আগে কি স্বপ্ন দেখলো ভাবলেই শরীর বুক দুটোই কাঁপছে তাঁর। কিন্তু কিছুদিন পর তো এমনটা ঘটতে পারে ভাবতে আরো কষ্ট হচ্ছে আকাশের কিন্তু তিথির স্বপ্নের কথা ভাবতেই কলিজা কেঁপে উঠছে আকাশের। আকাশ বেশি কিছু না ভেবেই তিথির হাত জড়িয়ে ধরল তারপর শুঁকনো চুমু একে বললো সে,

‘ তোমায় আর ছাড়ছি না তিথি।’

বলেই তিথির হাত ধরে হাঁটতে লাগলো আকাশ। আর আকাশের এমন কান্ডে চোখ বড় বড় হয়ে যায় তিথির। সে সত্যি বুঝতে পারছে না হুট করে কি এমন হলো আকাশের।’

কিছুদূর হাঁটতেই তিথিকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে হাঁটতে লাগলো আকাশ। আকাশের একের পর একেক কাজে চরম অবাক তিথি।

🍁🍁🍁

সময় চলছিল সময়ের গতিতে!’ মেঘেরা আসতো আকাশ বয়ে আবার চলে যেতে বসন্তের মায়া দিয়ে। এই ‘মেঘ বসন্তের মায়া’ নিয়েই কেটে গেল ৭ দিন ২০ ঘন্টা ৬০ মিনিট ৩৫৬ সেকেন্ড’!

এই সাত’দিনেই আকাশের পাগলামিতে আর অজানা ভালোবাসায় পড়তে বাধ্য হলো তিথি। এমনিতেও ভালোবাসতো আর এখন তো ভাবতেই বড্ড খুশি তিথি। আকাশ তো তাদের এগ্রিমেন্টের কাগজ ছিঁড়ে ফিলেছিল পরেরদিনই। আকাশও ভাবতেই পারে নি সে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলবে তিথিকে। আর রইলো হৃদ সাথী ওদের ভালোবাসাও প্রকাশ পেয়েছে একে অপরের কাছে। সেদিন বিকেলে হুট করেই সাথীকে বাড়িতে ডেকে প্রপোজ করে বসে হৃদ। সাথীর তো বিশ্বাসই হয়নি তার মতো হৃদও তাকে ভালোবাসবে। অতঃপর হৃদ সাথীর ভালোবাসাও চলছে মেঘেরদের ভিঁড়ে বসন্তের মায়ার টানে। বসন্তেই প্রথম দেখা ‘আকাশ-তিথি আর সাথী-হৃদের’। আবার এই বসন্তই স্বীকৃতি পেল দু’জুটির ভালোবাসা।’

অবশেষে, এই বসন্তের মাঝেই মেঘেদের ভিঁড়ে অটুট থাকুক আকাশ তিথি আর হৃদ সাথীর ভালোবাসার বন্ধন। হয়তো সামনে পরিস্থিতি খারাপ হবে একটু কে জানে হয়তো বসন্তের মায়াই তাদের ভুলিয়ে দিবে সব খারাপ পরিস্থিতি আর ঘুরিয়ে আনবে সুখের প্রতিচ্ছবি!’ 💛

~ সমাপ্ত…🌹🌹

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here