#মেঘ_বসন্তের_মায়া💛,পর্বঃ১৬,১৭
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💛
— পর্বঃ১৬
সূর্যের ফুড়ফুড়ে আলোতে ঘুম ভাঙলো তিথির। চোখ খুলতেই নিজেকে আকাশের খুব কাছাকাছি দেখে চমকে উঠলো সে সাথে সাথে ছিটকে দু’কদম পিছনে চলে গেল তিথি। তার বিশ্বাস হচ্ছে না সে আকাশের পাশেই ঘুমিয়ে ছিল কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে কাল রাতের কথা ভাবতে লাগলো তিথি কাল রাতে,,
আকাশ তিথি দুজনেই নানা কথা বার্তা বলতে বলতে গল্প করছিল আকাশও কথা বলছিল আকাশের কথার মাঝখানেই তিথি আকাশের পাশ দিয়েই কখন ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পারে নি। কিছুক্ষন অভাবে যাওয়ার পর আকাশ তিথির দিকে তাকাতেই সে বুঝলো তিথি ঘুমিয়ে পড়েছে। আকাশ কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো তিথির মুখের দিকে। টিস্যু দিয়ে অনেক আগেই মুখের কেক মুছে ফেলেছে আকাশ তিথি তারপরও গালের পাশ দিয়ে হাল্কা সামান্য কেক লেগেছিল তিথির। আকাশ তিথির দিকে ঘুরে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন তারপর মুচকি হেঁসে হাত দিয়ে তিথির গালের কেক মুছে দিলো। কেন যেন তিথিকে ভীষণ ভালো লাগে তাঁর। আকাশের হাতের স্পর্শ পেতেই হাল্কা নড়েচড়ে উঠলো তিথি। তিথিকে নড়তে দেখে আকাশ নিশ্চুপে তাকিয়ে রইলো তিথির মুখের দিকে। আর তিথি ঘুমের ঘোরে আকাশকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো। আকাশ ভেবেছিল তিথি এমন কিছুই করবে। আকাশের ইচ্ছে করছে তিথির কপালে ছোট্ট একটা চুমু দিতে পরক্ষণেই কিসব আবোল তাবোল ভাবছে সে ভেবেই সোজা হয়ে আকাশের দিকে তাকালো সে। আর ভাবলো,
‘ এসব কি ভাবছি আমি,তুই কি ভুলে গেলি আকাশ তুই মেয়েদের পছন্দ করিস না।’
কিছুক্ষন ওভাবে কাটিয়ে আকাশ আস্তে আস্তে শোয়া থেকে উঠে বসলো তারপর তিথিকে কোলে তুলে নিলো। তারপর কোলে করেই তিথিকে নিজের রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুয়িয়ে দেয় আকাশেরও চোখে খুব ঘুম থাকায় সেও বেশি কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়লো তিথির পাশ দিয়ে।
কাল রাতের কথাগুলো ভেবেই নড়েচড়ে উঠলো তিথি। তারপর বেশি কিছু না ভেবে এক প্রকার দৌড়েই ওয়াশরুমে চলে যায় সে।’
_____
সকাল_১০ঃ০০টা….
হসপিটালে নিজেদের সব জিনিসপত্র গুছাতে ব্যস্ত সাথী। প্রায় সবকিছুই গোছানো শেষ আর কিছুক্ষনের মধ্যেই বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়াবে তাঁরা। সাথীর মা তো চরম খুশি আজ প্রায় ১০ দিন পর বাড়ি ফিরবে সে। এমন সময় ওদের রুমে ঢুকলো তিথি, আকাশ আর গ্র্যান্ডমা। ওদের দেখেই চরম খুশি হয় সাথীর মা। সাথীর মা কিছু বলার আগেই গ্র্যান্ডমা এগিয়ে এসে মুচকি হেঁসে বললো,
‘ কেমন আছো তুমি?’
‘ জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?’
‘ হুম ভালো আরো আগেই তোমাকে দেখতে আসার ইচ্ছে ছিল কিন্তু হুট করে করে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কারনে আর আসতে পারি নি।’
‘ হুম জানি আমি সাথী বলেছিল আপনি অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন তা এখন কেমন আছেন?’
‘ হুম ভালো।’
এমন সময় ওদের রুমে ঢুকলো হৃদ। সবাইকে একসাথে দেখে বললো হৃদ,
‘ তোমরাও চলে এসেছো?’
‘ হুম তা আজ পেসেন্টকে ছেড়ে দিবে তো হৃদ?’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে হৃদও বলে উঠল,
‘ হুম।’
উওরে মুচকি হাসলো সবাই। তারপর হৃদ এগিয়ে যায় সাথীর মায়ের দিকে তারপর তাকে কিছুক্ষন দেখে পেসার মেপে সেপে বললো,
‘ এখন সবকিছুই নরমাল আছে ভালো মতো খাওয়া দাওয়া করবেন সাথে যে ঔষধগুলো লিখে দিয়েছি ওগুলোও সময় মতো খাবেন।’
উওরে মুচকি হেঁসে বললো সাথীর মা,
‘ ঠিক আছে বাবা।’
অবশেষে হসপিটালকে বিদায় জানিয়ে চললো সাথী, সাথীর মা সাথে আকাশ, তিথি, গ্র্যান্ডমাও। গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ তিথি গ্র্যান্ডমা সাথে হৃদ। পাশেই অন্য আরেকটা গাড়িতে বসে আছে সাথী আর সাথীর মা। ওদের বাড়িতেই আছে সাথীর মামা মামি। তিথিও যেতো সাথীদের সাথে কিন্তু এখন অন্য আরেকটা জায়গায় যাবে তাঁরা এই কারনে যাওয়া হবে না তিথির। তিথি তার মাকে একবার জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ মা সাবধানে থেকো। আমার কিছু কাজ আছে তাই তোমাদের সাথে যেতে পারলাম না তবে চিন্তা করো না কিছুদিন পর আমি যাবো।’
উওরে হাল্কা হেঁসে বললো তিথির মা,
‘ ঠিক আছে মা, তোর গ্র্যান্ডমার খেয়াল রাখিস।’
‘ হুম মা।’
অন্যদিকে সাথী তাকিয়ে আছে হৃদের দিকে। আকাশের সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে হৃদ হয়তো গ্র্যান্ডমাকে নিয়ে। সাথী জানে আকাশের গ্র্যান্ডমার কি হয়েছে? এটাও তিথি তাকে বলেছিল বিয়ের দিন। ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেললো সাথী।
কিছুক্ষন যাওয়ার পর হৃদকে বিদায় জানিয়ে দুই গাড়ি দু’দিকে চলে গেল। আর হৃদও বেশি কিছু না ভেবে ছোট্ট শ্বাস ফেলে চললো হসপিটালের ভিতর।’
____
আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে এগিয়ে চলছে আকাশ তিথি আর গ্র্যান্ডমা। হঠাৎই গ্র্যান্ডমা বলে উঠল,
‘ আমরা কোথায় যাচ্ছি আকাশ?’
‘ হুম গেলেই দেখতে পাবে গ্র্যান্ডমা।’
‘ আবার কোনো সারপ্রাইজ দিবে আমায় তাই না।’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে আকাশ কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
‘ ধরো তেমন কিছুই।’
উওরে গ্র্যান্ডমা আর কিছু বললো না। জানালার বাহিরে তাকালো সে। অন্যদিকে তিথিও বসে আছে গ্র্যান্ডমার পাশ দিয়ে। বাহির থেকে জানালা বেয়ে বয়ে আসছে বাতাস। তিথি আনমনেই তাকিয়ে আছে বাহিরে। সময়টা যেন খুব দ্রুতই চলছে তাদের। দেখতে দেখতে ওদের বিয়ের প্রায় পনেরা দিন হয়ে গেছে এভাবেই তো করতে করতে একদিন একবছর পূর্ণ হয়ে যাবে তাদের, সাথে তিথিকে চলে যেতে হবে আকাশকে। অল্প কয়েকদিনেই তিথির মায়া পড়ে গেছে এই এগ্রিমেন্টের সম্পর্কের ওপর। দীর্ঘ শ্বাস ফেললো তিথি সে ভেবে পায় না তার সাথে আকাশের ডির্ভোস হয়ে গেলে মাকে কি বলবে সে। আর বেশি ভাবলো না তিথি। নিমিষেই চোখ বন্ধ করে নিলো সে।’
____
গাড়িতে চড়ে বাড়ি যাচ্ছে সাথী কিছুটা ভালো লাগা সাথে অনেকটা খারাপ লাগা নিয়েই এগোচ্ছে সে। কিছু একটার শুন্যতা ফিল হচ্ছে সাথীর কিন্তু সে বুঝতে পারছে না কিসের শুন্যতা হচ্ছে তাঁর। শুধু কাল রাতে হৃদের সাথে কাটানোর মুহূর্তের কথাই মনে পড়ছে সাথীর। নিমিষেই চোখ বন্ধ করে ফেললো সাথী কিছুটা অস্থিরতা ফিল হচ্ছে তাঁর। চোখ বন্ধ করলেও হৃদের ফেসটা ভেসে আসছে সাথীর সাথে সাথে চোখ খুলে ফেললো সাথী। কিছুটা বিষন্নতা নিয়েই আনমনে বলে উঠল সে,
‘ এসব কি হচ্ছে আমার সাথে।’
হুট করে সাথীর মুখে কিছু অস্পষ্ট শব্দ কানে আসতেই বলে উঠল সাথীর মা,
‘ কি হয়েছে?’
মাকে কথা শুনে কিছুটা আমতা আমতা করে বললো সাথী,
‘ হুম হ্যাঁ কিছু না মা।’
‘ ওহ।’
‘ হুম।’
বলেই মেবাইলটা হাতে নিলো সাথী। এমন সময় হঠাৎই মেবাইলের টুং করে একটা মেসেজ আসলো সাথীর। মেসেজটা দেখেই ঠোঁটে আপনাআপনি হাসি ফুটে উঠলো সাথীর। সাথে এক অদ্ভুত ভালো লাগার শিহরণ বয়ে গেল সাথীর মাঝদিয়ে আর সেই ভালো লাগা নিয়েই এগিয়ে চলছে সাথী নিজের গন্তব্যের দিকে।’
____
শহরের রাস্তা ছেড়ে গ্রামীন পথ পেরিয়ে এগিয়ে চলছে আকাশ তিথি আর গ্র্যান্ডমা। হঠাৎই একটা ভ্যানের ওপর ডাব দেখে গাড়ি থামিয়ে দিলো আকাশ। তারপর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই গাড়ির সিট বেল খুলে এগিয়ে গেল সে ডাব বিক্রেতার দিকে।’
হুট করে আকাশের এমন কাজে গ্র্যান্ডমা তিথি দুজনেই বেশ চমকে উঠলো। তারপর আকাশের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে তাদের আর বুঝতে বাকি রইলো না আকাশ আসলে কি করতে চাইছে?’
কিছুক্ষনের মধ্যেই আকাশ হাতে দু’টো ডাব নিয়ে এগিয়ে এলো গাড়ির কাছে। তারপর একটা গ্র্যান্ডমার দিকে আর একটা তিথির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ খাও?’
উওরে দু’জনেই মুচকি হাসলো। কারন গ্র্যান্ডমা তিথি দুজনেই ডাব ভিষন ফেবারিট। তিথি ডাবের ভিতর পাইপ লাগিয়ে এক চুমুক ডাবের পানি খেয়ে বলল,
‘ তুমি খাবে না?’
আকাশ ড্রাইভিং সিটে বসে সিটবেল লাগাতে লাগাতে বললো,
‘ না।’
উওরে আর কিছু বললো না তিথি। আবারো ড্রাইভিং করতে শুরু করলো আকাশ।…
বেশকিছুক্ষন পর আকাশদের গাড়ি এসে থামলো একটা বড় গ্রামীন আলিশান বাড়ির সামনে। গ্র্যান্ডমা তো চরম অবাক হয়েছে এই বাড়িটার কাছে এসে। এই বাড়িটা হলো আকাশের ছোট বেলা কাটানোর একটা স্মৃতির বাড়ি। আকাশের তখন বয়স ছিল আট কি নয় যখন তাঁরা এই বাড়িটা ছেড়ে শহরে পা রেখেছিল আজ প্রায় ষোলো সতেরো বছর পর আবার এই বাড়িটার কাছে আসলো আকাশ আর তার গ্র্যান্ডমা। এই বাড়িটা জুড়ে জড়িয়ে আছে আকাশের গ্র্যান্ডমার অনেক স্মৃতি। এখান থেকেই শুরু হয়েছিল তার সংসার জীবন সাথে তার ছেলে বউমা নাতির সাথে কাটানোর স্মৃতি। সেইসব মুহূর্তগুলোর কথা ভেবেই চোখে পানি চলে আসলো আকাশের গ্র্যান্ডমার। সে ভাবতেই পারে নি আকাশ তাকে এখানে নিয়ে আসবে। গ্র্যান্ডমাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠল আকাশ,
‘ কি হলো গ্র্যান্ডমা এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি ভিতরে যাবে না?’
উওরে ছলছল চোখে তাকালো আকাশের গ্র্যান্ডমা আকাশের দিকে। আকাশ তার গ্র্যান্ডমার হাত ধরে বললো,
‘ চলো যাই গ্র্যান্ডমা।’
এতটুকু বলে একপলক তাকালো আকাশ তিথির দিকে। তিথিও বেশি কিছু না ভেবে ধরলো গ্র্যান্ডমার হাত তারপর বললো,
‘ চল গ্র্যান্ডমা।’
দুজনের কান্ডেই মুচকি হাসলো গ্র্যান্ডমা। তারপর তিনজন একসাথেই তাকিয়ে রইলো বাড়িটার দিকে এরই মধ্যে আকাশ আবার বলে উঠল,
‘ চল গ্র্যান্ডমা আবার নতুন কিছু স্মৃতি জমাই।’….
!
!
!
#চলবে…..
#মেঘ_বসন্তের_মায়া💛
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💛
— পর্বঃ১৭ #স্পেশাল_পর্ব
দেয়াল জুড়ে থাকা কিছু ফটোফ্রেমের দিকে তাকিয়ে আছে আকাশ,তিথি আর গ্র্যান্ডমা। তিথির কাছে ছবিগুলো একদম নতুন লাগলেও আকাশ আর তার গ্র্যান্ডমার কাছে এক একটা ছবি যেন স্মৃতির পাতা। ছবিগুলো হলো আকাশ আর তার গ্র্যান্ডমার, আকাশের সাথে কাটানোর সেই ছোট বেলার ছবি। যেখানে আছে গ্র্যান্ডমা তার নাতিকে খাইয়ে দিচ্ছে, কোনোটায় আছে গোসল করিয়ে দিচ্ছি, কোনোটায় ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে,কোনোটায় গ্র্যান্ডমা রান্না করছে আর তাকিয়ে তাকিয়ে সেটা দেখছে আকাশ এইরকম নানা ধরনের ছোট বেলার স্মৃতি জড়িয়ে আছে ছবিগুলোতে।’
গ্র্যান্ডমা আর আকাশ এগিয়ে গেল সেই ছবিগুলোর দিকে। আকাশ আর গ্র্যান্ডমাকে এগোতে দেখে তিথিও আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল তাদের সাথে। সব ছবিগুলোর দিকে তাকাতেই যেন সব স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে আসলো আকাশ আর তার গ্র্যান্ডমার। গ্র্যান্ডমার তো চোখে পানি চলে এসেছে আপনাআপনি। গ্র্যান্ডমা ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বললো,
‘ এই ছবিগুলোর কথা মনে আছে আকাশ যখন তুমি খুব ছোট ছিলে তখনকার তোলা।’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে আকাশও বলে উঠল,
‘ হুম গ্র্যান্ডমা মনে থাকবে না কেন বলো সেইসময়গুলো সত্যি খুব সুন্দর ছিল।’
আকাশের কথা শুনে গ্র্যান্ডমা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললোঃ
‘ হুম।’
হঠাৎই গ্র্যান্ডমার চোখ যায় সেই পুরনো রান্নাঘরের দিকে। গ্র্যান্ডমা বেশি কিছু না ভেবে এগিয়ে গেল রান্না ঘরের দিকে। একদমই গ্রামীন ঘরের রান্নাঘর। এই বাড়িটা ছিল গ্র্যান্ডমার শশুরের অনেক পুরনো একটা বাড়ি। মানুষগুলো সবাই চলে গেছে দুনিয়া ছেড়ে কিন্তু এই বাড়িটা যেমন ছিল তেমনই আছে এই বাড়ির উঠোন,ওপরে ওঠার সিঁড়ি, বারান্দা, ছাঁদ নেই এই বাড়িটায় যেটা আছে সেটা হলো টিনের তৈরি চাল সবকিছুই যেন স্মৃতিতে বোঝাই করা। বাড়িটা রিপেয়ার করা হয়েছিল অনেকবার কিন্তু কিছুই পাল্টানো হইনি যেমন ড্রয়িং রুমের চেহারা,বাড়ির রং,টিনের তৈরি চালের রং কিছুই না। শুধু বাড়িটার ছোট ছোট ক্ষতগুলো রিপেয়ার করে ঠিক করা হতো।
পুরো বাড়িটায় একবার চোখ বুলালো গ্র্যান্ডমা তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল সে তার নিজের রুমের দিকে। এবার আর গ্র্যান্ডমার পিছন পিছন যায় নি আকাশ তিথি। তিথি পুরো বাড়িটা দেখতে এগিয়ে গেল সামনে আর আকাশ চলে গেল তার রুমের দিকে আর গ্র্যান্ডমা তার রুমে।’
আস্তে আস্তে নিজের রুমের কাঁঠের দরজাটা ঠেলে খুললো গ্র্যান্ডমা। সাথে সাথে এক চিরচেনা গন্ধ ভেসে আসলো নাকে। গ্র্যান্ডমা চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে আস্তে আস্তে পা রাখলো ভিতরে। তাঁর রুমটা বিভিন্ন আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো সাথে বিভিন্ন রকমারি মাটির তৈরি সাজানো সরঞ্জাম। এগুলোর কোনোটাতেই শহরের গন্ধ নেই কারন এই সরঞ্জামগুলোর বেশির ভাগই গ্রামীন মাটি দিয়ে তৈরি। এগুলো সবই গ্র্যান্ডমার স্বামী আশরাফুলের নিজ হাতের তৈরি। গ্র্যান্ডমার স্বামীর একটা শখ বা প্রতিভা বলা যায় উনি বিভিন্ন ধরনের ভেঙে যাওয়া জিনিসপত্রকে রং করে সেটাকে সুন্দর বর্নে সাজাতে পারতেন। গ্র্যান্ডমার পুরো রুম জুড়েই তার স্বামীর সেই তৈরি করা সরঞ্জামে ঘেরা। গ্র্যান্ডমা আস্তে আস্তে তার বিছানার পাশ দিয়ে থাকা কাঁঠের জানালাটা খুলে ফেললেন সাথে সাথে সেই জানালার পাশেই থাকা বড় শিমুল ফুলের পাপড়িরা এসে পড়লো তার রুমে। এই গাছটার জন্য কতবার যে গ্র্যান্ডমা তার স্বামীর সাথে ঝগড়া করেছে তার হিসাব নেই। এমনিতে গাছটা খুব সুন্দর কিন্তু এটার জন্য গ্র্যান্ডমার কাজ বাড়তো তখন কারন একটু বাতাস আসলেই গ্র্যান্ডমার পুরো রুমে ফুলের পাপড়িতে ভরে যেত।এর জন্য মাঝে মাঝে কিছুটা বিরক্তিতা ফিল করতো এই কারণে মাঝে মাঝে টুকিটাকি ঝগড়াও হতো গ্র্যান্ডমার সাথে তার স্বামীর। তবে ঝগড়া করলেও কখনো এই গাছটাকে কাটার কথা ভাবে নি গ্র্যান্ডমা কারন গাছটাকে ভালোও খুব বাসতেন উনি হয়তো এখনও বাসেন। এই গাছটাও তার স্বামী যত্ন করে বড় করেছিল গ্র্যান্ডমা ভাবে নি এত এতবছর পরও এটা অক্ষত থাকবে। পুরো বাড়িটা ঘিরেই রয়েছে এই বিশাল বড় শিমুল ফুলের গাছ। পুুরো বাড়ির টিন বোঝাই করা এর ফুলের পাপড়ি দিয়ে। আগে তো এই শিমুল ফুলের ঘ্রাণ ছাড়া কিছু ভালোই লাগতো না গ্র্যান্ডমার। পুরো রুম জুড়েই জর্জিত থাকতো এই শিমুল ফুলের ঘ্রাণে। গ্র্যান্ডমা জোরে এক নিয়ে নিশ্বাস ফেললেন যেন উনি হারিয়ে গেছেন তার সেই যৌবনকালের সময়ে।
গ্র্যান্ডমা কিছু একটা ভেবে তার বিছানার পাশে থাকা আলমারিটা খুললেন। সেখানে ছিল তার স্বামীর একটা ছবি। গ্র্যান্ডমা বেশি কিছু না ভেবে সেটাকে হাতে নিয়ে আস্তে বসে পরলেন বিছানায় তারপর ছবিটা বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ আজ অনেকদিন পর যেন তোমায় অনুভব করছি আমি,সেই সময় সেই স্মৃতি সবই যেন চোখের সামনে ভাসছে আজ।’
এমন সময় জোরে এক দমকা হাওয়ার আসলো গ্র্যান্ডমার রুমে সাথে এক মন মাতাল করা শিমুল ফুলের সুবাস। আজ বহুদিন পর সব পুরনো স্মৃতিগুলো অনুভব করতে পেরে এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে গ্র্যান্ডমার ভিতর।’
____
বাড়ির পিছনে থাকা একটা সরু রাস্তায় হাঁটছে তিথি। তিথির পরনে পেস্ট কালার জর্জেট থ্রি-পিচ,খোলা চুল, হাতে চুঁড়ি। বিয়ের পর আজ প্রথমই থ্রি-পিচ পড়ে হসপিটালে গিয়েছিল তিথি আর সেখান থেকে এখানে এসেছে। তিথি ভাবে নি আকাশদের এই পুরনো বাড়িটা এত সুন্দর। তিথি আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল সরুর রাস্তার পথ পেরিয়ে, রাস্তাটার দু’দিকেই রয়েছে বিশাল বিশাল গাছপালা। গাছের পাতাগুলো বাতাসে নড়ছে খুব প্রকৃতির এমন সুন্দর রূপ দেখে আনন্দে মনটা ভরে উঠলো তিথির। হঠাৎই কিছুদূর এগোতেই এক বিশাল পুকুরের দিকে চোখ যায় তিথির। তিথি বেশি কিছু না ভেবেই এগিয়ে যায় সেই পুকুরটার দিকে। পুকুরের সৌন্দর্য দেখে অটোমেটিক মুখ থেকে বেরিয়ে আসে তিথির,
‘ ওয়াও।’
_____
নিজের রুমের বিছানায় পা ঝুলিয়ে শুয়ে আছে আকাশ কিছুটা ক্লান্ত লাগছিল নিজেকে কিন্তু এখন এই মুক্ত প্রকৃতির বাতাস আর শিমুল ফুলের ঘ্রাণ পেয়ে সবই যেন দূরে সরে গেছে তাঁর। আজ বহুদিন পর যেন আকাশ নিজেও সেই ছোট বেলার স্মৃতিতে আঁটকে গেছে। আকাশ শুয়ে থেকেই তার রুমের চারদিকে চোখ বুলালো পুরো রুমটার দেয়াল জুড়েই পেন্সিল দিয়ে এঁকে প্রায় ভুত বানানো। এগুলো সবই আকাশ নিজে করেছে এখন সেই সময়ের কথাগুলোর কথা ভেবে ভীষণ হাসি পাচ্ছে আকাশের। হঠাৎই তার চোখ গেল দুইটা রং পেন্সিল দিয়ে আঁকা ছবির দিকে আকাশ ছবিটা দেখেই শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো তারপর এগিয়ে গেল ছবিটার কাছে এই ছবি দুইটাও আকাশ নিজে একে দেয়ালে টানিয়ে রেখেছিল। এই দু’টো ছবির মধ্যে একটায় রয়েছে আকাশ আর তার বাবা মা আর অন্যটায় রয়েছে সে, তার গ্র্যান্ডমা আর গ্র্যান্ডফাদার। আনমনেই মুচকি হাসলো আকাশ। আজ বহুদিন যেন সে পুরনো সেই সব স্মৃতি অনুভব করছে যেসব স্মৃতিতে শুধু তার ছোটবেলা আছে।’
এমন সময় হঠাৎই আকাশের ফোনটা বেজে উঠল আকাশও বেশি কিছু না ফোনটা তুললো উপরে তার অফিস এসিস্ট্যান্ট এর ফোন দেখে চটজলদি ফোনটা তুললো আকাশ। তারপর বললো,
‘ হ্যালো।’
কিন্তু উওরে ওপর পাশের ব্যক্তি কিছু বলার আগেই ফোনটা কেটে গেল। সাথে সাথে কিছুটা বিরক্তিতা ফিল করলো আকাশ। এই হলো গ্রামের একটা সমস্যা এখানে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। আকাশ বেশি কিছু না ভেবে এসিস্ট্যান্টের নাম্বারে কল করতে করতে বাহিরে বেরিয়ে গেল।’
___
পুকুর পাঁড়ের সিঁড়িতে বসে আছে তিথি। প্রকৃতির রূপ দেখে মুগ্ধ সে কারন তার সামনেই পুরো পুকুরের অর্ধেক জুড়ে রয়েছে শাপলা ফুল। তার সাথে রয়েছে অনেকগুলো সাদা রঙের হাঁস। হয়তো আশেপাশে কারো বাড়ির কাছ থেকেই এসেছে এঁরা। পুকুরের মধ্যে গোল হয়ে খেলা করছে হাঁসগুলো তিথি জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলো ওগুলোর দিকে। খোলা ধবধবে সাদা আকাশ,তার সাথে পুকুরের চারদিকে ঘিরে থাকা বড় বড় গাছপালা,পুকুরের চারিদিকে শাপলাফুল, তাদের ঘিরে থাকা হাঁস সাথে মন মাতাল করা প্রকৃতির এই মুক্ত বাতাস। প্রকৃতির প্রেমে পড়তে যেন বাধ্য আজ তিথি। তিথি কিছু একটা ভেবে আস্তে তাঁর চোখ দুটো বুঁজিয়ে নিলো। সাথে সাথে তার কানে আসতে লাগলো অনাকাঙ্ক্ষিত পাখির সুর। উফ! যেন এক অন্যরকম ভালো লাগা।’
এরই মধ্যে সেই সময়ই সেখানে ফোনে কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছিল আকাশ। হঠাৎই তার চোখ যায় তিথির দিকে তিথি চোখ বন্ধ করে কিছু একটা করছে কিন্তু কি করছে সেটাই যেন বুঝতে পারছে না আকাশ। আকাশকে চুপ হয়ে যেতে দেখে অপরপাশে মোবাইলের ভিতর বলে উঠল আকাশের এসিস্ট্যান্ট,
‘ হ্যালো স্যার।’
ফোনে কারো কন্ঠ কানে আসতেই চমকে উঠলো আকাশ তারপর চটজলদি বললো সে,
‘ হুম হ্যালো শরীফ তোমায় যেভাবে বললাম সেভাবে করো।’
‘ ঠিক আছে স্যার, আপনি কবে ফিরবেন?’
‘ দেখি কবে ফেরা যায় যখন ফিরবো তোমায় কল করে বলে দিবো আমি।’
‘ ওকে স্যার।’
‘ ওকে শরীফ বাই।’
‘ ওকে স্যার বাই।’
উওরে আকাশ আর কিছু না বলে ফোনটা কেটে সেটাকে পকেটে রাখতে রাখতে এগিয়ে গেল সে তিথির দিকে। সে সত্যি বুঝতে পারছে না তিথি ওখানে বসে কি করছে?’
____
‘ তুমি ওখানে বসে কি করছো তিথি?’
আচমকা আকাশের কন্ঠ কানে আসতেই তিথি তার চোখ খুলে ফেললো। তারপর পিছন ফিরে তাকাতেই আকাশকে দেখে বললো সে,
‘ না তেমন কিছু নয় এমনি বসেছিলাম।’
তিথির কথা শুনে আকাশও গিয়ে বসলো তিথির পাশ দিয়ে তার বললো,
‘ এমনি এমনি কেউ চোখ বন্ধ করে বসে থাকে নাকি।’
‘ হুম এমনি বসেছিলাম।’
‘ কোনো কারন ছাড়া?’
‘ হুম।’
‘ আমার বিশ্বাস হচ্ছে না বলো আমায় কি কারনে তুমি চোখ বন্ধ করে ছিলে?’
‘ আরে সত্যি বলছি তেমন বিশেষ কোনো কারন নেই, আমি তো জাস্ট কিছু ফিল করার চেষ্টা করছিলাম।’
তিথির এবারের কথা শুনে আকাশ অবাক হয়ে বললো,
‘ কি ফিল করার চেষ্টা করছিলে?’
‘ এই যেমন ধরুন পানির শব্দ, বাতাসের প্রবনতা, পাখির কিচিরমিচির শব্দ সাথে ওই দেখুন শাপলা ফুলের সুবাস।’
তিথির কথাগুলো শুনে আকাশ বেশ আগ্রহের স্বরে বললো,
‘ এগুলো ফিল করা যায় নাকি?’
‘ হুম যায় তো আপনি কখনো করেন নি?’
উওরে ‘না’ নামক মাথা নাড়ায় আকাশ। আকাশের কথা শুনে তিথি বলে উঠল,
‘ কোনো ব্যাপার না কখনো করেন নি কিন্তু আজ করবেন।’
তিথির কথা শুনে আকাশ বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ কিভাবে?’
!
!
!
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!’আর গল্প কেমন লাগছে সবাই কমেন্ট করে জানাবে]
#TanjiL_Mim♥️