#মেঘ_বসন্তের_মায়া💛,পর্বঃ১৪,১৫
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💛
— পর্বঃ১৪
চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আকাশ তিথি একে অপরের দিকে। কি করবে কিছুই যেন বুঝছে না তাঁরা। ওদের এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে উঠল গ্র্যান্ডমা,
‘ কি হলো আকাশ তিথিকে খাইয়ে দেও?’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে আকাশ কিছুটা বিস্মিত কন্ঠে বললো,
‘ হুম এই তো দিচ্ছি গ্র্যান্ডমা।’
এই বলে চামচে কিছু খাবার তুলে নিলো আকাশ তারপর তাকালো সে তিথির দিকে। অন্যদিকে তিথিরও সেইম ফিলিংস হচ্ছে সে ভাবতে পারে নি গ্র্যান্ডমা এমন কিছু বলবে তাদের। ওদের আবারো চুপ করে বসে থাকতে দেখে বলে উঠল গ্র্যান্ডমা,
‘ কি হলো আকাশ কি ভাবছো?’
‘ হুম না কিছু না।’
এই বলে আকাশ বিস্ময় ভরা চেহারা নিয়েই চামচ হাতে খাবার এগিয়ে দিল তিথির দিকে। তিথিও বেশি কিছু না ভেবে আস্তে আস্তে খেয়ে নিলো আকাশের হাতের খাবার। খাবার খাওয়ানো শেষ হতেই যেন সস্থির নিশ্বাস ফেললো আকাশ। অন্যদিকে তিথি এখন পড়েছে বিপদে এখন কি করবে সে। তিথিকে খাওয়ানো শেষ হতেই বলে উঠল গ্র্যান্ডমা,
‘ তিথি,এখন তুমি খাইয়ে দেও আকাশকে?’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে তিথিও চমকে উঠে বললো,
‘ হুম এই তো দিচ্ছি গ্র্যান্ডমা।’
বলেই এক চামচ খাবার এগিয়ে দিল সে আকাশের দিকে আকাশও বেশি কিছু না ভেবে খেয়ে নিলো। চোখে মুখে দুজনেরই বিস্ময়ের ছাপ।’
আর অন্যদিকে ওদের কাজ দেখে মুচকি হাসলেন গ্র্যান্ডমা।’
______
রাত_৯ঃ০০টা…
বিছানায় শুয়ে আছেন গ্র্যান্ডমা। এমন সময় তার রুমে ঢুকলো তিথি গ্র্যান্ডমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো সে,
‘ গ্র্যান্ডমা।’
আচমকা তিথির কন্ঠ কানে আসতেই তিথির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে শোয়া থেকে উঠে বসলেন গ্র্যান্ডমা। তারপর বললেন,
‘ হুম বলো।’
‘ কি একা একা শুয়ে আছো বলো তো চলো আমার সাথে?’
তিথির কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে বললো গ্র্যান্ডমা,
‘ কোথায় যাবো?’
‘ ছাঁদে।’
বলেই গ্র্যান্ডমার হাত ধরে গ্র্যান্ডমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না চললো সে ছাঁদে।
সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই আলোকিত রাতের লাইটিং করা ছাঁদ থেকে আরো অবাক হয় গ্র্যান্ডমা। অবাক হয়েই বললেন উনি,
‘ এগুলো কি তিথি?’
এমন সময় হাতে একটা কেক নিয়ে গ্র্যান্ডমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো আকাশ,
‘ হেপি বার্থডে গ্র্যান্ডমা।’
আকাশের কথা শুনে যেন অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে গ্র্যান্ডমা। প্রচন্ড খুশি হয়ে বললেন উনি,
‘ তোমরা।’
উওরে মুচকি হাসলো আকাশ তিথি। তিথি এগিয়ে এসে বললো গ্র্যান্ডমাকে,
‘ হেপি বার্থডে গ্র্যান্ডমা।’
‘ থ্যাংক ইউ।’
প্রচন্ড খুশি হয়ে গেছে গ্র্যান্ডমা। খুশিতে তার চোখ যেন পানিতে ভরে আসছে। এমনটা নয় আকাশ এর আগে তার বার্থডে সেলিব্রিট করে নি কিন্তু এবারেরটা যেন একটু স্পেশাল। গ্র্যান্ডমাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে থেকে বললো আকাশ,
‘ কি হলো গ্র্যান্ডমা তুমি কিছু বলছো না কেন?’ তোমার ভালো লাগে নি?’
আকাশের কথা শুনে গ্র্যান্ডমা আকাশের দু’গাল চেপে ধরে বললো,
‘ খুব ভালো লেগেছে থ্যাংক ইউ মাই গ্র্যান্ডসন।’
উওরে মুচকি হাসলো গ্র্যান্ডমা। গ্র্যান্ডমাকে হাসতে দেখে বললো তিথি,
‘ এবার তবে কেক কাটা যাক গ্র্যান্ডমা?’
তিথির কথা শুনে গ্র্যান্ডমা তিথির হাত ধরে বললো,
‘ হুম।’
পুরো ছাঁদের চারিদিকে ঘিরে আছে আলোকিত লাইটিং সাথে সাদা পর্দার চাদরে মুড়ানো। ছাঁদের মাঝখানেই রয়েছে একটা বড় টেবিল সাথে তিনটে চেয়ার। টেবিলের চারিদিকেও লাইটিং করা টেবিলের উপরেই আলোকিত সাদা ক্যান্ডেল দিয়ে ঘেরা। তার মাঝখানেই বিভিন্ন পদের খাবার সাথে বড় কেকটা এই মাত্র রাখলো আকাশ।
আকাশ তিথি গ্র্যান্ডমার হাত ধরে দাঁড়ালো কেকের কাছ দিয়ে তারপর তিনজনেই একসাথে গ্র্যান্ডমার হাত ধরে কেক কাটতে শুরু করলো । গ্র্যান্ডমার কেক কাটা শেষ হতেই আকাশ তিথি একসাথে বলে উঠল,
‘ Happy birthday to you,happy birthday to you, Happy birthday to you Grandma,Happy birthday to you!’
ওদের কথা শুনে হাসলেন গ্র্যান্ডমা সাথে আকাশ তিথিকে কেক খাইয়ে দিলেন সাথে আকাশ তিথিও খাইয়ে দিলো গ্র্যান্ডমাকে। এরপর শুরু হলো আরেক মজা। কারন গান নাচ করবে আকাশ তিথি। পুরো লাউডে মিউজিক বাজিয়ে হাসি ঠাট্টা আর অনেক মজা করতে লাগলো আকাশ তিথি। হাতে মাইক নিয়ে আবোল তাবোল গান গাইছে তিথি। আর তিথির গান শুনে আকাশ বলে উঠল,
‘ তোমার মতো বেসুরো আমি দু’টো দেখি নি।’
বলেই আরেকটা মাইক নিয়ে গান গাইতে লাগলো আকাশ। আকাশের কাজ দেখে তিথিও রাগ নিয়ে হাতে মাইক নিয়ে বললো,
‘ কি বললে আমি বেসুরো।’
বলে সেও চেঁচিয়ে গান গাইতে লাগলো। এরপর শুরু হলো দুজনের মধ্যে গানের যুদ্ধ সাথে অনেক হাসাহাসি।’
আর ওদের কাছ থেকে কিছুটা দূরে চেয়ারে বসে সবকিছু দেখতে লাগলেন গ্র্যান্ডমা। প্রচন্ড খুশি সে আকাশ তিথির পাগলামি দেখে। অনেকদিন পর যেন আকাশকে অনেক খুশি দেখছেন গ্র্যান্ডমা আর আকাশকে খুশি দেখলে গ্র্যান্ডমাও খুব খুশি হোন। তিথি মেয়েটা আসলেই খুব ভালো। আনমনেই মুচকি হাসলো গ্র্যান্ডমা।
রাতের জোৎসা ভরা আলোরা যেন আজ সব আকাশদের বাড়ির ছাঁদেই উঁকি মারছে। মুক্ত আকাশের নিচে বসেই হাসাহাসি করছে আকাশ তিথি। পুরো আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অগণিত তাঁরারা। সবাই যেন ওদের খুশিতে ভাগ দিচ্ছে আনমনে। যেন এক অন্যরকম মায়ায় ঘেরা রাত।’
____
হসপিটালের বেডে ঘুমিয়ে সাথীর মা। আর ওনার কেভিনের বাইরেই করিডোরে পায়চারি করছে সাথী। ঘুম আসছে না তাঁর। আজ সারাদিনে তিথি হসপিটালের আসে নি তবে ফোন অনেকবারই করেছে সাথীকে। আপাতত তিথির ব্যাপার নিয়ে ভাবছে না সে, সে তো ভাবছে অন্য কিছু কাল সকালেই হসপিটাল থেকে মাকে নিয়ে চলে যাবে সাথী আর এখান থেকে বেরিয়েই তাকে কাজ খুজতে হবে অবশ্য খোঁজার খুব একটা দরকার নেই। তিথি যেখানে কাজ করতো তাদের সাথে যোগাযোগ করেছিল সাথী আর তাঁরা বলেছে তিথির পোস্টেই তাকে কাজ দিবে। কাল না হলেও পরশু থেকে কাজে যাবে সাথী। এইরকম হাজারো চিন্তা ভাবনা নিয়ে পায়চারি করছে সাথী। এমন সময় সেখান থেকে যাচ্ছিল হৃদ সাথীকে এইভাবে পায়চারি করতে দেখে বলে উঠল হৃদ,
‘ কি হলো সাথী এইভাবে পায়চারি করছো কেন, এভরিথিং ইস অলরাইট?’
হঠাৎই হৃদের কন্ঠ কানে আসতেই পিছন ঘুরে তাকালো সাথী তারপর বললো সে,
‘ হুম সব ঠিক আছে।’
সাথীর কথা শুনে হৃদ আসলো সাথীর দিকে তারপর বললো,
‘ তাহলে এইভাবে পায়চারি করছো কেন?’
‘ ওহ কিছু নয় ডক্টর। আসলে ঘুম আসছিল না তাই আর কি।
‘ ওহ।’
‘ হুম তা আপনি এখানে?’
‘ আমি তো একটু রাউন্ডে বেরিয়ে ছিলাম।’
‘ ওহ।’
‘ হুম।’
উওরে সাথী আর কিছু না বলে আবারো নিজের মতো পায়চারি করতে লাগলো। হৃদ কিছুক্ষন সাথীর দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের হাতের ঘড়ির দিকে তাকালো রাত প্রায় এগারোটার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। হৃদ কিছু একটা ভেবে বলে উঠল সাথীকে,
‘ কফি খাবে সাথী?’
_____
গ্র্যান্ডমাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে গায়ে কাঁথা জড়িয়ে দিল তিথি। কিছুক্ষন আগেই তাঁরা একসাথে ডিনার সেরে নিয়েছে। হঠাৎই গ্র্যান্ডমা বলে উঠল তিথিকে,
‘ সব সময় আমার নাতির সাথে এইভাবেই সুখী থেকো তিথি।’
গ্র্যান্ডমা কথা শুনে অনেকটাই খারাপ লাগলো তিথির পরক্ষনেই দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাথা নাড়ায় সে। তারপর বলে,
‘ এখন তবে তুমি ঘুমাও গ্র্যান্ডমা।’
‘ হুম গুড নাইট।’
‘ গুড নাইট গ্র্যান্ডমা।’
বলেই রুমে লাইট অফ করে বেরিয়ে যায় তিথি। গ্র্যান্ডমার কথাটা যেন বার বার তার কানে বাজছে কিন্তু গ্র্যান্ডমাকে আর কে বুঝাবে তার নাতির সাথে তিথি শুধু একবছরের জন্যই আছে। আবারো দীর্ঘ শ্বাস ফেললো তিথি। তারপর এগিয়ে গেল সে ছাঁদের উদ্দেশ্যে কারন আকাশ এখনো আছে উপরে।’
চেয়ারে বসে আলোকিত ক্যান্ডেলের দিকে তাকিয়ে আছে আকাশ। যতই সে গ্র্যান্ডমার সামনে খুশি থাকার চেষ্টা করুক না কেন ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে তাঁর। শুধু এতটুকুই বেশি ভাবে আকাশ গ্র্যান্ডমা চলে গেলে কে থাকবে তার সাথে। বড্ড যে একা হয়ে যাবে। সেই ছোট্ট বেলা থেকেই বাবা মাকে ছাড়া বড় হয়েছে সে। মা বাবার আদর কেমন হয় এটাও জানা নেই আকাশের। গ্র্যান্ডমাই ছিল যে তাকে ছোট বেলা থেকে প্রচন্ড ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছে আজ সেই গ্র্যান্ডমাই ভাবতেই প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে আকাশের। চোখে পানি টলমল করছে আকাশের। এমন সময় আকাশের কাঁধে হাত রাখলো তিথি। তিথির উপস্থিতি বুঝতে পেরেই চোখ মুখ ঠিক করে নিলো আকাশ। তিথি বেশি কিছু না ভেবে বসলো আকাশের পাশে থাকা চেয়ারটায়। তারপর বললো,
‘ মন খারাপ হচ্ছে স্যার?’
‘ না তেমন কিছু নয়।’
‘ একটা কথা বলবো স্যার কখনো নিজের কষ্টকে নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখবেন না। আপনার কষ্ট হলে বা কান্না পেলে সেটাকে নিজের ভিতরে লুকিয়ে না রেখে বাহিরে বের করে দিবেন। এতে কষ্ট একটু কম হবে স্যার।’
তিথির কথা শুনে বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়েই বললো আকাশ,
‘ মানে?’
‘ মানে আমরা আমাদের আনন্দকে যেমন হাসির মাধ্যমে বাহিরে বের করি তেমন কান্নার মাধ্যমে কষ্টকে বাহিরে বের করতে হয় স্যার। আপনার কষ্ট হচ্ছে সেটা বাহিরে বের করুন দেখবেন নিজেকে হাল্কা লাগবে?’
তিথির কথা শুনে ছলছল চোখে তাকায় আকাশ তিথির দিকে। তিথির আকাশের চাহনি দেখে আকাশের হাত ধরে বললো,
‘ বেশি কিছু ভাববেন না স্যার। যা হওয়ার সেটা হবেই তাই মন খারাপ করবেন না বেশি।’
তিথির কথা শুনে আকাশ বলে উঠল,
‘ আজ রাতে ঘুমাবে না তিথি।’
আকাশের কথা শুনে তিথি বুঝতে পেরেছে এই টপিকটা এড়িয়ে যেতে চাইছে আকাশ। তিথিও কথা না বারিয়ে বললো,
‘ হুম ঘুমাবো তো এইসব গুছিয়ে আপনি নিচে যান আমি আসছি।’
আকাশ কিছু একটা ভেবে বললো,
‘ আমিও হেল্প করি তোমায়?’
আকাশের কথা শুনে তিথিও বেশি কিছু না ভেবে বললো,
‘ ওকে।’
____
কিছুটা অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো সাথী হৃদের দিকে। সাথীকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো হৃদ,
‘ আমি এমন কিছু বলে নি যার কারনে তুমি এইভাবে তাকিয়ে থাকবে আমার দিকে।’
‘ না মানে..
‘ ইট’স ওকে তোমায় যেতে হবে না।’
বলেই চলে যেতে নেয় হৃদ। হৃদকে চলে যেতে দেখে বলে উঠল সাথী,
‘ আমি কি বলেছি কফি খেতে যাবো না।’
সাথীর কথা শুনে উল্টো দিক ফিরে হাল্কা হাসলো হৃদ তারপর বললো,
‘ তুমি যাবে এটাও তো বলো নি।’
‘ না মানে ভিতরে মা একা আছে তো।’
!
!
#চলবে…..
#মেঘ_বসন্তের_মায়া💛
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💛
— পর্বঃ১৫
একটা সুন্দর কফি হাউজে বসে আছে হৃদ আর সাথী। দুজনের চোখই দুজনের দিকে কিছুক্ষন আগেই তারা এসেছে এখানে। সাথী তার চোখ সরিয়ে চারদিকে একবার চোখ বুলালো তারপর বললো,
‘ অনেক সুন্দর তো।’
সাথীর কথা শুনে হৃদ মুচকি হেঁসে বললো,
‘ হুম,আচ্ছা তুমি কি করো আইমিন চাকরি নাকি পড়াশোনা?’
‘ হুম পড়াশোনা করি তবে আপাতত পার্ট টাইম একটা জব করার ইচ্ছে আছে।’
‘ ওহ।’
‘ হুম।’
‘ তা কাল তো তোমার মাকে নিয়ে চলে যাবে তাই না?’
‘ হুম।’
এরই মধ্যে দু’কাপ কফি হাতে ওদের সামনে চলে আসলো ওয়েটার। ওয়েটারকে দেখে দুজনেই কথা বলা বন্ধ করে দেয়। ওয়েটার কফি সার্ভ করে যেতেই বলে উঠল হৃদ,
‘ তারপর তোমার বয়ফ্রেন্ড কেমন আছে?’
সবেমাত্র মুখে কফিটা খেতে নিয়েছিল সাথী পরক্ষণেই হৃদের কথা শুনে সেটাকে নিচে সরিয়ে রেখে বললো সে,
‘ কি?’
‘ তোমায় বয়ফ্রেন্ড কেমন আছে?’
‘ আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই ডক্টর।’
‘ হুম মিথ্যে বলছো তাই না। ইট’স ওকে না বলতে চাইলে আমি জোর করবো না।’
‘ আরে সত্যি বলছি আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।’
‘ রিয়েলি?’
‘ হুম।’
‘ ওহ,,
‘ তা আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?’
‘ হুম আছে তো যেমন ধরো তুমি।’
হৃদের কথা শুনে অবাক হয়ে বললো সাথী,
‘ কি?’
বলেই বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে নিলো সাথী। সাথীকে উঠতে দেখে বললো হৃদ,
‘ কোথায় যাচ্ছো?’
‘ না মানে?
‘ বুঝতে পেরেছি আরে তুমি আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা করো গার্ল অর্থ কি?’
‘ মেয়ে
‘ আর ফ্রেন্ড?’
‘ বন্ধু
‘ তাহলে আমার মেয়েবন্ধু আছে তো এখন আবার এটা বলো না তুমি আমার ফ্রেন্ড না এমনিতেও এই কয়দিনে আমরা বন্ধু হয়েছি কিন্তু?’
‘ ওহ এমন কিছু..
বলেই আবার নিজের জায়গায় বসে পড়লো সাথী। সাথী বসতেই হৃদ বলে উঠল,
‘ হুম এমন কিছুই এখন তাড়াতাড়ি কফিটা শেষ করো।’
বলেই নিজের কফির কাপে চুমুক দিলো হৃদ। আর সাথীও বেশি কিছু না ভেবে নিজের কফিতে চুমুক দিলো সাথে চোখ নিক্ষেপ করলো হৃদের মুখের দিকে এমনটা নয় সাথী হৃদকে পছন্দ করে না। ছোট বেলা থেকেই ডাক্তার ছেলেদের খুব ভালো লাগে সাথীর আর হৃদকে তো একটু বেশি ভালো লাগে কিন্তু হুট করে হৃদের কথা শুনে কেমন একটু লাগলো সাথীর।
‘ আচ্ছা সত্যি সত্যি যদি আমি ওনার গার্লফ্রেন্ড হতাম?’
ভেবেই আনমনেই মুচকি হাসলো সাথী।’
রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে। এত রাতে কোনো ছেলের সাথে এই ভাবে কফি হাউজে কফি খাবে এটা কোনোদিন ভাবে নি সাথী। এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে সাথীর ভিতর। সাথীকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে উঠল হৃদ,
‘ কি ভাবছো বলো তো?’
হৃদের কথা শুনে চমকে উঠলো সাথী তাড়াতাড়ি নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে বললো সে,
‘ না তেমন কিছু নয়।’
‘ ওহ।’
উওরে কিছু বললো না সাথী হাল্কা মুচকি হাসলো সে।’
____
একে একে পুরো ছাঁদে এলোমেলো ভাবে থাকা জিনিসপত্রগুলো গুছাতে ব্যস্ত আকাশ আর তিথি। তিথি তো কিছুক্ষন পর পর শুধু তাকাচ্ছে আকাশের দিকে কারন আকাশ কিছুটা মন মরা হয়েই কাজ করছে। হঠাৎই তিথির চোখ যায় টেবিলের উপর থাকা কেকের দিকে প্রায় চার পাউন্ডের চকলেট কেক এনেছিল আকাশ ধরতে গেলে পুরো কেকটাই রয়েছে। তেমন একটা খাইনি কেউ তিথি কিছু একটা তার আঙুলে কিছুটা কেক লাগিয়ে নিলো তারপর শয়তানি মার্কা হাসি দিয়ে এগিয়ে গেল সে আকাশের দিকে তারপর কিছু না ভেবেই আকাশের দু গালে কেক লাগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ সারপ্রাইজ জামাই।’
বলেই দু’কদম পিছনে চলে গেল তিথি। হুট করে তিথির এমন কাজে পুরোই চমকে উঠলো আকাশ পুরো জিনিসটা বুঝতে তার দু সেকেন্ড সময় লাগলো আকাশ গালে হাত দিলো তৎক্ষনাৎ পরক্ষণেই কেক দেখে কিছুটা রাগী লুক নিয়ে বললো সে,
‘ এটা কি ধরনের ফাজলামি তিথি?’
আকাশের কথা শুনে তিথি দাঁত কেলিয়ে বললো,
‘ কিছুই না জামাই।’
তিথির কথা শুনে আকাশ রাগী কন্ঠে বলে উঠল,
‘ আমি এগুলো একদম পছন্দ করি না তিথি।’
আকাশের কথা বলার ধরন শুনে ঘাবড়ে গেল তিথি। সে ভাবে নি তার কাজে আকাশ রেগে যাবে কিছুটা মিন মিন কন্ঠ নিয়ে বললো সে,
‘ আই এম সরি।’
‘ সব কিছুতে শুধু সরি বলতে শিখেছো তাই না।’
‘ না মানে।’
‘ রাখো তোমার না মানে।’
বলেই রাগে হনহন করে এগিয়ে গেল আকাশ তিথির দিকে। আকাশের কাজে আরো ভয় পায় তিথি হয়তো একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে সে। আকাশকে এগোতে দেখে কয়েক কদম পিছনে চলে যায় তিথি। তিথিকে পিছনে যেতে দেখে রাগী কন্ঠে বললো আকাশ,
‘ একদম পিছনে এগোবে না তিথি আমি কিন্তু চরম ভাবে রেগে গেছি।’
আকাশের কথা শোনার সাথে সাথে দাঁড়িয়ে পড়লো তিথি। তারপর মাথা নিচু করে বললো সে,
‘ আমি সত্যি বুঝতে পারি নি আপনি এতটা রেগে যাবেন আমি সত্যি সরি স্যার।’
‘ কোনো সরিতে কাজ হবে আর কতক্ষণ জামাই কতক্ষণ স্যার এটা কোনো ধরনের কথা বলার ধরন যা বলবে যেকোনো একটা বলবে।’
উওরে মাথা নাড়িয়ে বললো তিথি,
‘ ওকে স্যার।’
তিথিকে অনেকটাই মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আকাশ পিছন থেকে টেবিলের উপরে থাকা কেক নিয়ে তিথির দু’গালে লাগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ সারপ্রাইজ বউ।’
হুট করে আকাশের এমন কান্ড আর কথা শুনে চরম অবাক তিথি। পরক্ষণেই পুরোটা বুঝতে পেরে বললো সে,
‘ তোমায় তো আমি..
বলেই তেরে আসতে নিলো তিথি। তিথিকে এগোতে দেখে দৌড় লাগালো আকাশ তারপর বললো,
‘ কেমন দিলাম?’
‘ হুম আমিও দেখাচ্ছি কেমন দিলাম ।’
বলে দু’ হাত ভর্তি কেক নিয়ে তেরে আসলো তিথি আকাশের দিকে। তিথির কান্ড দেখে আকাশ বলে উঠল,
‘ এই এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।’
‘ আমি দেখাচ্ছে জামাই কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল..
‘ তিথি এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে।’
উওরে কিছু না বলে তেড়ে আসছে নিলো সে আকাশের দিকে। আর তিথিকে নিজের দিকে আসতে দেখে আকাশও ছুটতে লাগলো পিছনে।
পুরো ছাঁদ জুড়ে ছোটাছুটি করছে আকাশ আর তিথি। আকাশ দৌড়াচ্ছে আর তার পিছনে তিথি। হঠাৎই দৌড়াতে দৌড়াতে আকাশ তিথির দু’ হাত ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো তারপর বললো,
‘ এবার কিন্তু বাড়াবাড়ির হচ্ছে তিথি।’
‘ কিসের বাড়াবাড়ি শুনি তোমায় আমি একটু খানি কেক লাগিয়ে দিয়ে ছিলাম আর তুমি আমায় পুরো ভুত বানিয়ে দিয়েছো।’
‘ বেশ করেছি।’
‘ বেশ করেছো তাই না,,
বলেই নিজের হাত ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো তিথি। তিথিকে নড়াচড়া করতে দেখে আকাশ আর একটু শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
‘ তুমি কিন্তু ভুলে যাচ্ছো আমি তোমার স্বামী আর আমার ওপর এইভাবে টর্চার করতে পারো না তুমি?’
‘ আমি টর্চার করছি…
হঠাৎই কি হলে আকাশের সে তাকিয়ে রইলো তিথির মুখের দিকে আকাশকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হুস আসলো তিথির আসলে তারা ঠিক কিভাবে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকটাই কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে আকাশ তিথি। খোলা আকাশের আলোকিত ছাঁদের দেয়াল ঘেঁসে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ তিথি। দুজনেরই চোখ দুজনের চোখের দিকে। যেন দুজনেই এক অন্যরকম মায়ায় আঁটকে পড়েছে খুব। হঠাৎই আকাশের বিদ্যুৎ চমকে উঠলো সাথে সাথে আকাশ তিথি দুজনেরই হুস আসলো। আকাশ চটজলদি ছেড়ে দিলো তিথিকে। চলে আসলো দুজনের মধ্যে কিছুক্ষনের নীরবতা। আকাশ বুঝতে পারে নি হুট করে এমন কিছু হবে তার সাথে। আর তিথি সেও ভাবে নি হুট এত কাছাকাছি চলে যাবে তারা। এই মুহূর্ত টাকেই কাজে লাগিয়ে তিথি আকাশের কাছে গিয়ে ওর দু’ গালে লাগিয়ে দিলো কেক। পুরো কেক দিয়ে ভূত বানিয়ে ফেলেছে সে আকাশকে। তিথির কান্ডে অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে আকাশ পরক্ষণেই সব ভুলে এগিয়ে গেল তিথির দিকে আর বললো,
‘ তোমায় তো আমি,
আবারো শুরু হয়ে যায় দুজনের মধ্যে ছোটাছুটি। আকাশে মেঘ ডাকছে খুব হয়তো বৃষ্টি হবে। তবে সেসব দিকে আপাতত নজর নেই আকাশ তিথির তারা তো ব্যস্ত তাদের ছোটাছুটিতে।’
___
‘ রাত বারোটা বেজে দু’মিনিট।’
হসপিটালের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে সাথী আর হৃদ কিছুক্ষন আগেই তারা কফি হাউজ থেকে বেরিয়ে চলে এসেছে হসপিটালে। হঠাৎই সাথী বলে উঠল,
‘ থ্যাংক ইউ সো মাচ।’
উওরে মুচকি হাসলো হৃদ। তারপর বললো,
‘ বাই আবার কাল দেখা হবে।’
‘ ওকে বাই।’
বলেই ঢুকে যায় সে হসপিটালের ভিতর। আর হৃদ কিছুক্ষন সাথীর যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে সেও চলে গেল তাঁর বাড়ির উদ্দেশ্যে…
___
ছাঁদের নিচে পাশাপাশি শুয়ে আছে আকাশ তিথি। দুজনের চোখে মুখেই ক্লান্তির ছাপ কিছুক্ষন আগেই নিজেদের ছোটাছুটি বন্ধ করে নিচে শুয়ে পড়ে আকাশ – তিথি। এখান থেকে উপরের আকাশটাকে পুরোই পরিষ্কার আর সুন্দর লাগছে আকাশ তিথির কাছে। দুজনেরই চোখ ওই উপরে থাকা আকাশটার দিকে পুরো আকাশ জুড়েই তাড়াতাড়ি ঝলঝল করছে। এই মুহূর্তটা দেখে কেউ বলবে না কিছুক্ষন আগেও এই আকাশে মেঘেরা ভড় করেছিল। ওঁরা তো ভেবেই নিয়েছিল আজ রাতে বৃষ্টি হবে কিন্তু হলো না বসন্তের এই দিনে যেন অন্যরকমভাবে মায়ায় আটকাচ্ছে আকাশ তিথি। এক অন্যরকম রাত…
খোলা আকাশের নিচে পাশাপাশি শুয়ে মস্ত বড় আকাশের এই ছলমল করা তাঁরারা, সাথে প্রকৃতি জুড়ে ঘিরে থাকা ঠান্ডা বাতাস যেন মন মাতাল করা এক অন্যরকম সুবাস।’
এই সব মুহূর্ত একদমই নতুন আকাশ তিথি কাছে। দুজনের মধ্যেই রয়েছে এক অজানা ভালো লাগা সাথে মায়ায় জড়ানোর এক অদ্ভুত অনুভূতি। আজ রাতটাই যেন মায়ায় জড়ানো…
!
!
!
#চলবে…..