#মেঘ_বসন্তের_মায়া💛,পর্বঃ০৬,৭
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💛
পর্বঃ০৬
আজ আকাশ তিথির বিয়ে। পুরো বাড়ি জুড়েই বিয়ে নামক উৎসবে মাতোয়ারা চারপাশ। যদিও তিথির মার খুব বেশি ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য নেই তারপরও যথাসম্ভব নিজেদের সামর্থ্য দিয়ে ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন করেছেন। সাথে আকাশের গ্র্যান্ডমারও কিছু সহযোগিতা আছে। আকাশের গ্র্যান্ডমা খুবই ভালো একজন মানুষ তিথিরা তাদের তুলনায় কম সামর্থ্যবান হওয়ার পরও আকাশ তিথির বিয়েতে তার কোনো আপত্তি ছিল না। তিথি বা ওর পরিবার কেউই ভাবে নি এত ইজিলি সবটা হয়ে যাবে।
চারদিকে বিয়ের গন্ধের মাঝে কনে বেসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আছে তিথি। কিছুটা অস্থিরতা, সাথে অনেকটা ঘাবড়ানো মাখা মুখ নিয়ে বসে আছে সে। সে ভাবতেই পারে নি তার লাইফে বিয়ে নিয়ে এমন কিছু ঘটবে। সব মেয়েরই বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে তেমনি তিথিরও ছিল কিন্তু পরিস্থিতি তাকে এমন এক জায়গায় দাঁড় করিয়েছে যে তিথি চাইলেও সেটা পাল্টাতে পারবে না ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললো তিথি। এরই মাঝে ব্লাক লেহেঙ্গা পড়ে তিথির কাছে দৌড়ে আসলো সাথী কিছুটা খুশি মাখা মুখ নিয়ে বললো সে,
‘ আপি আকাশ দুলাভাই তো চলে এসেছে।’
সাথীর কথা শুনে বুকের ভিতর দক করে উঠলো তিথির তবে কিছু বললো না হাল্কা নরম কন্ঠে বললো সে,
‘ও।’
তিথির কথা শুনে সাথী চিন্তিতমাখা মুখ নিয়ে বলে উঠল,
‘ আপু তোর কি মন খারাপ?’
তিথির কথা শুনে শুকনো হাসলো তিথি তারপর বললো,
‘ না তেমন কিছু নয় তোদের ছেড়ে চলে যাবো তো তাই আর কি।’
তিথির কথা শুনে সাথী কিছু না বলেই কিছুক্ষন তিথির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো সে তিথিকে তারপর কান্না ভেঁজা কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ তোকে খুব মিস করবো রে আপু।’
উওরে কিছু না বলে তিথিও জড়িয়ে ধরলো সাথীকে তারপর কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
‘ তোকে কিছু কথা বলবো কাউকে বলবি না তো?’
‘ না তুই বল কি বলবি?’
এদিকে,,
জামাই চলে আসায় সবাই মিলে গেটের সামনে দাঁড়ালো আকাশের। তিথির কাকিমা আকাশকে শরবত আর মিষ্টি খাইয়ে দিলো। সাথে যা হয় আর কি বুঝে নিও সবাই 😬
___
অবশেষে সব রিচুয়াল মেনেই ওদের সামনে সাদা পর্দা দিয়ে কাজী ডেকে খুব সুন্দরভাবেই বিয়েটা হয়ে গেল আকাশ তিথির। আকাশের বেশ বিরক্ত লেগেছে সবটায় কিন্তু তারপরও গ্র্যান্ডমার কথা মেনে মুখ বুঝে সবটা সহ্য করেছে সে।’
অতঃপর সবশেষে চলে আসলো বিদায়ের সময়। সবার চোখেই কান্নার আভাস। তিথিও তার মা বোন এছাড়াও কিছু আত্মীয় স্বজনকে জড়িয়ে কেঁদে উঠে বসলো গাড়িতে। আকাশও গিয়ে বসলো গাড়িতে। আকাশ তিথি বসতেই ড্রাইভারও আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি গাড়ি চালাতে শুরু করলো। তারপর আর কি একে একে সবাইকে দূরে রেখে চলতে লাগলো এক অজানা গন্তব্যের দিকে আকাশ তিথি।’
জানালার দিকে মুখ করে নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে তিথি। প্রচন্ড খারাপ লাগছে তাঁর। আর অন্যদিকে আকাশ সে বুঝতে পেরেছে তিথি কাঁদছে কিন্তু এই মুহূর্তে তার কিছু বলার নেই। সময়টা একবছরের হলেও এই মুহূর্তের অনুভূতিটা হয়তো এক।’
___
রাত_৮ঃ০০টা…
শরীর আর মনটা কিছুটা খারাপ লাগায় সাথে মাথায় হাল্কা যন্ত্রণা করায় চুপচাপ বিছানায় শুয়ে আছে তিথির মা। মেয়ের জন্য প্রচন্ড খারাপ লাগছে তাঁর যদিও আকাশ আর গ্র্যান্ডমা খুব ভালো হওয়াও একটু চিন্তা মুক্ত সে তারপরও সেই ছোট্ট তিথি মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে তিথির মার। এমন সময় হাতে কিছু খাবার নিয়ে ওনার রুমে ঢুকলো সাথী। মাকে অসময়ে শুঁয়ে থাকতে দেখে চলে যায় সে মোর্শেদা বেগমের কাছে। তিথির মায়ের নাম,
‘ কি হলো মা শুয়ে আছো যে শরীর ভালো লাগছে না?’
আচমকা সাথীর কন্ঠ কানে আসতেই চোখ তুলে তাকালো মোর্শেদা বেগম। সামনেই সাথী আর ওর হাতের খাবার দেখে বলে উঠল,
‘ তুই আর এত খাবার কেন?’
‘ বারে তুমি সেই দুপুর থেকে কিছু খাওনি মা এখনও খাবে না কিছু?’
‘ আমার খিদে নেই সাথী।’
‘ খিদে নেই বললেই হলো নাকি উঠো বলছি আপু কিন্তু আমায় বার বার বলে গেছে আমি যেন তোমার খেয়াল ভালো মতো রাখি তাই কোনো বাহানা চলবে না তাড়াতাড়ি খাবারগুলো খাও মা আর ঔষধগুলো তো খেতে হবে।’
‘ এখন একদমই খেতে ইচ্ছে করছে না সাথী?’
মায়ের কথা শুনে খাবারগুলো বিছানার ওপর রেখে মায়ের পাশে বসে বললো সাথী,
‘ মা তুমি কি চাও আমি আপুর কাছে বকা খাই এমনিতেও তোমার দু’দিন পর অ..আর কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় সাথী। কারন সে জেনে গেছে তাঁর মায়ের কি রোগ হয়েছে আর তিথিও হুট করে কেন এত বড়লোক বাড়ির ছেলেকে বিয়ে করলো শুধু এতটুকু জানে না যে বিয়েটা এগ্রিমেন্টের। সাথীকে থেমে যেতে দেখে বলে উঠল মোর্শেদা বেগম,
‘ কি হলো থেমে গেলি কেন দু’দিন পর কি?’
মোর্শেদা বেগমের কথা শুনে হাল্কা রেগেই বলে উঠল সাথী,
‘ কিছু না তুমি তাড়াতাড়ি এগুলো খাও তো মা।’
‘ আরে বাবা খাচ্ছি তো রেগে যাচ্ছিস কেন?’
‘ তুমি না বড্ড কথা বলো আপুর মতো?’
এতটুকু বলে নিজ হাতে মাকে খাইয়ে দিতে থাকে সাথী। সাথীর মাও কিছু না বলে খেতে শুরু করলো। কারন সে বুঝে গেছে তার মেয়ে রেগে গেছে,,অন্যদিকে সাথী মায়ের কথা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে তার। তবে এই মুহূর্তে তা প্রকাশ করলো না সে। হঠাৎই খাওয়ার মাঝখানে বলে উঠল সাথী,
‘ একটা কথা বলবো মা?’
‘ হুম বল।’
‘ আপুর তো বিয়ে হয়ে গেছে আমার মনে হয় না আকাশ দুলাভাই আপুকে আর কাজ করতে দিবে আর তাছাড়া আপুর কাজ করাটাও ভালো দেখায় না তাই আমি ভাবছি আমি যদি জব করি তাহলে কেমন হবে এমনিতেও সংসারটাকেও তো চালাতে হবে আপু আর কত করবে। এখন আপুর নিজেরও সংসার হয়েছে তাই এখন নিজের সংসার দেখবে নাকি আমাদের সংসার দেখবে তাই ভাবছি পার্ট টাইম জব করলে কেমন হবে। সংসারকে তো চালাবে হবে মা। তাই ভাবছিলাম তুমি কি বলো মা,
সাথীর কথা শুনে মোর্শেদা বেগম অবাক হয়ে বললো,
‘ আমার এই মেয়েটাও দেখি খুব বড় হয়ে গেছে।’
উওরে হাল্কা হাসলো সাথী।’
___
ঘড়িতে রাত বারোটার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। গভীর রাত প্রায় সেই সময়ই নিশ্চুপে কনে বেসে ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় বসে আছে তিথি। যদিও সে জানে এসবের কোনো মানে নেই তারপরও একপ্রকার বাধ্য হয়েই বসে আছে সে। কিন্তু আকাশের আসার কোনো নাম গন্ধ নেই আঁধো আসবে কি না এটাও বুঝতে পারছে না তিথি। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে তার কিন্তু সে ঘুমাতে পারছে না এমন সময় হঠাৎই দরজা খোলার শব্দ কানে আসতেই হাল্কা নড়ে চড়ে বসলো তিথি বুকের ভিতর এক অজানা ভয় এসে গ্রাস করলো তাঁকে।
অন্যদিকে,,
দরজা খুলে সামনেই তিথিকে বসে থাকতে দেখে আকাশ তিথির সামনে এগিয়ে এসে বললো,
‘ এখনও বসে আছো কেন? ঘুমাও নি?’
উওরে তিথি কিছু বললো না তিথিকে চুপ থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল আকাশ,
‘ তবে একদিক থেকে ভালো করেছো জেগে আছো তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে,,
বলেই বিছানায় তিথির সামনে বসে পড়ে আকাশ তারপর তিথির দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলে,
‘ এটায় সাইন করে নিও?’ আমি অলরেডি করে দিয়েছি তুমিও করে রেখো?’
আকাশের কথা শুনে তিথি তার মাথার ঘোমটা সরিয়ে আকাশের হাত থেকে কাগজটা নিয়ে বললো,
‘ এটা কিসের কাগজ?’
‘ এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে এটা এগ্রিমেন্টের কাগজ এই কয়েকদিনের ঝামেলায় এটার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম প্রায় এখানে লেখা আছে আগামী এক বছরের জন্য তোমার এবং তোমার পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব আমার আর এক বছর পরও তোমার আর তোমার পরিবারের কোনো সমস্যা হতে দিবো না আমি সাথে এক বছর পর আমরা আমাদের নিজের ইচ্ছেই ডিভোর্স করে নিবো কোনো বাঁধা ছাড়াই।’
‘ডিভোর্সের’ কথা শুনতেই বুকটা কেঁপে উঠলো তিথির তবে কিছু বললো না সে। তিথি পুরো কাগজটায় একবার চোখ বুলিয়ে ছোট্ট একটা দীর্ঘ শ্বাস বললো,
‘ পেন।’
পেনের কথা শুনে আকাশ আশেপাশে তাকিয়ে টেবিলের উপর থেকে পেনটা নিয়ে তিথির হাতে দিয়ে বললো,
‘ এই নেও।’
উওরে তিথিও কিছু না বলে পেনটা হাতে নিয়ে নিজের সাইন দিতে যাবে কিন্তু কলমে কালি না থাকায় অবাক হয়ে বললো সে,
‘ কলমে কালি নেই তো বস?’
‘ কি?’
আকাশের ‘কি’ শুনে তিথি আরেকবার পেপারের নিজের লিখতে লিখতে বললো,
‘ এই দেখুন বস কলমে কালি নেই।’
তিথির কথা শুনে আকাশও তাকায় তিথির হাতের দিকে সত্যি সত্যি কলমে কালি না থাকায় আশেপাশে আর একবার চোখ বুলালো সে কিন্তু কোনো কলম দেখতে না পেয়ে বললো,
‘ আচ্ছা কোনো ব্যাপার না কাগজটা তোমার কাছে রেখে দেও কাল নতুন কলম কিনে সাইন করে নিও।’
‘ ওকে।’
উওরে আকাশ আর কিছু না বলে চলে যায় ওয়াশরুমের দিকে। আকাশ যেতেই তিথি একবার এগ্রিমেন্টের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
‘ কি ভাগ্যরে তোর তিথি সব মেয়েরা এই বাসর ঘরে স্বামীর সাথে শপথ করে সারাজীবন একসাথে থাকার আর তুই ভাবতে কেমন একটু লাগলো তিথির। হাল্কা মন খারাপ তারও হচ্ছে পরক্ষণেই মায়ের আর গ্র্যান্ডমার কথা চিন্তা করে কিছু ভাবলো না সে।’
বেশ কিছুক্ষন পর ওয়াশরুম থেকে বের হলো আকাশ কিন্তু তখনও তিথিকে বসে থাকতে দেখে বললো সে,
‘ এখনও ঘুমাও নি নাকি আজ রাতে জেগে কাটানোর ইচ্ছে আছে?’
আকাশের কথা শুনে তিথি কিছুটা প্রশ্নসূচক কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ আমি কোথায় ঘুমাবো বস?’
!
!
!
#চলবে…..
#মেঘ_বসন্তের_মায়া💛
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💛
— পর্বঃ০৭
সকালের সূর্য্যিমামার হাল্কা উষ্ণ তাপে ঘুম ভাঙলো তিথির। আস্তে আস্তে সোফার উপর থেকে শোয়া থেকে উঠে বসলো সে গা হাত পা হাল্কা ব্যাথা করছে তাঁর। তিথি তার মাথা,ঘাড়, হাত,পা একবার নাড়িয়ে চারপাশে চোখ বুলালো সামনেই আকাশকে বিছানায় বেঘোরে ঘুমাতে দেখে বেশি কিছু ভাবলো না সে। কাল রাতেই আকাশের সাথে কথা বলে সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছিল তিথি যদিও আকাশ তাকে বলেছিল বিছানায় ঘুমাতে কিন্তু তিথি নিজেই রাজি হয় নি।
তিথি কিছুক্ষন এদিক সেদিক তাকিয়ে ভাড়ি লেহেঙ্গা ধরে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। কালকের সাজে এখনও সজ্জিত সে। তিথি তাঁর ভাড়ি লেহেঙ্গা ধরে আস্তে আস্তে হেঁটে চলে যায় ড্রেসিং টেবিলের দিকে তারপর আয়নায় নিজেকে একবার দেখে হাল্কা হাসলো সে। গায়ে ভাড়ি গহনা এখনও আছে তার কাল শেষ রাতে ঘুমের চাপটা বেশি থাকায় এগুলো আর খোলা হয় নি তাঁর। তিথি একে একে তার হাতে গলায় কানে থাকা সব গহনা খুলে রাখলো টেবিলের উপর এগুলোর জন্যই শরীর ব্যাথা হয়ে গেছে তাঁর। একে একে সব গহনাগাঁটি খুলে নিজের ব্যাগ থেকে একটা লাল টুকটুকে শাড়ি বের করে সেটা হাতে নিয়ে চলে যায় সে ওয়াশরুমে।’
বেশ কিছুক্ষন পর গোসল সেরে বের হয় তিথি। এখন একটু ফ্রেশ লাগছে নিজেকে। আকাশের রুমটা তেমন ভাবে দেখা হয়নি তিথির কাল রাতে যখন তাকে এই রুমে বসিয়ে রাখা হয়েছিল তখন আর তেমনভাবে চারপাশে তাকায় নি তিথি নিরবেই চুপচাপ এটা ওটার ভাবনা নিয়ে বসে ছিল সে। তিথি বেশি কিছু না ভেবে আবারো চলে যায় আয়নার সামনে তারপর মাথায় থাকা সাদা টাওয়ালটা খুলে চুল ছাড়তে থাকে।’
হঠাৎই ঘুমে ঘোরে চোখে মুখে পানির ছিঁটে আসতেই হাল্কা চমকে উঠলো আকাশ। প্রথমবার পড়ায় বেশি কিছু না ভেবে উল্টো দিক মুখ করে শুয়ে পড়ে আকাশ সেদিনকেও পানি লাগলেই কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বললো সে,
‘ উফ্ ঘুমের মধ্যে পানি দিচ্ছো কেন?’
আচমকায় আকাশের কন্ঠ শুনে হাল্কা কেঁপে উঠল তিথি সে তো ভুলেই গিয়েছিল এখানে আকাশ ঘুমিয়ে আছে তিথি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ সরি বস।’
এতটুকু বলে সরে আসে তিথি। আস্তে নিজের চুল মোছা বন্ধ করে দিয়ে আয়নার সামনে বসে পড়ে সে। তারপর সুন্দর মতো চুলগুলো আঁচড়ে, মুখে হাল্কা একটু মেকাপ আর হাল্কা করে লাল লিপস্টিক দেয় তিথি তারপর গলায় আর কানে হাল্কামাপের গহনা পড়ে হাতে লাল চুড়ি পড়ে নিজেকে আয়নায় দেখে মুচকি হাসে তিথি।
এদিকে টুকটাক শব্দ কানে আসতেই আকাশ বিরক্ত নিয়ে চোখ খুললো তারপর সামনে তাকিয়ে বিরক্ত নিয়ে বলে উঠল,
‘ সকাল সকাল কিসের শব্দ করছো তিথি?’
বলেই তাকায় আকাশ তিথির দিকে। আর তিথি আকাশের কথা শুনে মুখ ঘুরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে মাথা নিচু করে বললো,
‘ ইয়ে না মানে আই এক্সট্রিমলি সরি বস আমি আসলে নিচে যাওয়ার জন্য একটু তৈরি হচ্ছিলাম তাই আর কি।’
সকাল সকাল তিথির এমন সাজ দেখে চোখ আঁটকে যায় আকাশের এক অন্যরকম ঘোরে আঁটকে যায় সে। আকাশকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল তিথি,
‘ সরি বস।’
তিথির কথা শুনে আকাশ তার ঘোর লাগানো মুহূর্ত থেকে বেরিয়ে আসলো তারপর বললো,
‘ হুম হ্যাঁ কি বলছিলে?’
‘ না মানে সরি বস।’
‘ ইট’স ওকে বাট ফারদার যেন এমন না হয়।’
‘ ওকে।’
‘ হুম ঠিক ঠিক আছে।’
বলেই উল্টো দিক মাথা ঘুরিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে আকাশ। কিছুক্ষন আগে তার কি হয়েছিল ভাবতেই কেমন লাগছে আকাশের।’ নিমিষেই চোখ খুলে আবার বন্ধ করে ফেলে আকাশ। আর তিথি কিছুক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে যায় নিচে।’
____
ঘড়ির কাঁটায় তখন আটটা বাজে,,
তিথি নিচে নেমে চলে যায় রান্নাঘরের দিকে। তখন সবার জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরি করা শুরু করছিল শায়েলা আর জসিম। তিথি বেশি কিছু না ভেবে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে মুুচকি হেঁসে বললো,
‘ শুভ সকাল শায়েলাদি আর জসিম ভাই।’
আচমকা তিথির কন্ঠ শুনে শায়েলা আর জসিম দুজনেই চমকে উঠে তাকায় তিথির দিকে।’ সকাল সকাল তিথিকে দেখে মুচকি হেঁসে বললো শায়েলা,
‘ তিথি ম্যাডাম যে,,
‘ কি ম্যাডাম বলছো বলো তো এমনিতেও তোমাদের থেকে আমি বয়সে অনেক ছোট তাই ম্যাডাম বলার দরকার নেই আমার নাম ধরে ডাকলেই হবে।’
‘ সেটা কি করে হয় আমনে আকাশ দাদাবাবুর বউ আমনেরে নাম ধরে কেমনে ডাকি তার চেয়ে আমরা ভাবি বলে ডাকমু কি কও জসিম?’
‘ হুম তিথি ভাবি বলে ডাকলেই হবে।’
ওদের দুজনের কথা শুনে তিথি হাল্কা হেঁসে বললো,
‘ ঠিক আছে ভাবি বলো কিন্তু তুমি করে বলবে ঠিক আছে।’
তিথির কথা শুনে শায়েলা আর জসিম দু’জনেই হেঁসে বলে উঠল,
‘ আচ্ছা তিথি ভাবি।’
‘ হুম ঠিক আছে এখন বলো আমি কি করবো?’
তিথির কথা শুনে শায়েলা আর জসিম দুজনেই অবাক হয়ে বললো,
‘ আমনে আবার কি করবে?
‘ আবার আমনে তুমি করে বলো আমিও তো তোমাদের তুমি করে বলি তাই না।’
তিথির কথা শুনে জসিম বলে উঠল,
‘ ঠিক আছে কিন্তু তুমি আবার কি করবে তিথি ভাবি আমরা দুজনেই সবটা করে নিবো।’
‘ সেটা বললে কি করে হয় তাঁর চেয়ে তোমরা বসো আজকের ব্রেকফাস্ট আমিই তৈরি করবো তোমরা শুধু আমায় একটু হেল্প করো আর বলো গ্র্যান্ডমা কি কি খেতে পছন্দ করে?’
‘ কিন্তু ভাবি?’
‘ কোনো কিন্তু নেই শায়েলাদি।’
বলেই একে একে ব্রেকফাস্ট তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তিথি আর শায়েলা জসিম ওকে হেল্প করতে থাকে।’
____
সকাল_৯ঃ০০টা…
ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে আছে গ্র্যান্ডমা আর আকাশ। কিছুক্ষন আগেই এসেছে তাঁরা আর ওদের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে শায়েলা জসিম আর তিথি। তিথিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠল গ্র্যান্ডমা,
‘ কি হলো তিথি তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন বসো এখানে ব্রেকফাস্ট করবে না?’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে তিথি হাল্কা হেঁসে বলে উঠল,
‘ হুম বসবো তো গ্র্যান্ডমা, তোমরা আগে শুরু করো তারপর।’
তিথির কথা শুনে আকাশ কিছুটা নীরব কন্ঠে তিথির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ তা কেন?’
আকাশের কথা শুনে তিথি কিছু বলবে তার আগেই শায়েলা বলে উঠল,
‘ আসলে দাদাবাবু তিথি ভাবি খাবার কেমন হইছে হেইডা জানার জন্যেই দাঁড়াইয়া আছে।’
শায়েলার কথা শুনে গ্র্যান্ডমা আকাশ দুজনেই অবাক চোখে তাকালো তিথির দিকে তারপর ওদের মধ্যে আকাশ বলে উঠল,
‘ ঠিক বুঝলাম না?’
আকাশের কথার উওরে জসিম বলে উঠল,
‘ হইছে কি দাদাবাবু আজকে ব্রেকফাস্ট তিথি ভাবিই সবটা তৈরি করেছে।’
জসিমের কথা শুনে গ্র্যান্ডমা তিথির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ এগুলো সব তুমি তৈরি করেছো তিথি?’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে তিথি মাথা নিচু করেই মাথা নাড়ালো। তিথির কাজে খুশি হয়ে গ্র্যান্ডমা তিথির হাত ধরে টেনে নিজের পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে খুশি মনে বললো,
‘ তুমি রান্নাবান্না জানো তিথি?’
‘ ওই একটু আকটু মার কাছ থেকে শিখেছিলাম।’
‘ খুব ভালো।’
‘ হুম এখন আর কথা না বারিয়ে তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু করো গ্র্যান্ডমা আমার খুব টেনশন হচ্ছে না জানি খাবার কেমন হয়?’
‘ তুমি যখন ভালোবেসে বানিয়েছো তখন ভালোই হবে তিথি।’
উওরে হাল্কা হেঁসে তিথি সবাইকে খাবার বেরে দিতে লাগলো। আর অন্যদিকে আকাশ তাকিয়ে আছে তিথির দিকে আজ কেন যেন একটু অন্যরকম লাগছে তিথিকে তার কাছে। আনমনেই হাল্কা হাসলো সে।’
‘ হুম তিথি খাবার তো খুব ভালো হয়েছে।’
হঠাৎই গ্র্যান্ডমার মুখে এমন কথা শুনে আকাশ তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে তাকালো গ্র্যান্ডমার মুখের দিকে। আর তিথি গ্র্যান্ডমার কথা শুনে মুচকি হেঁসে বললো,
‘ সত্যি গ্র্যান্ডমা?’
‘ হুম।’
খুশি হয়ে যায় তিথি। নিমিষেই তার টেনশন মাখা মুখটা চলে যায়। ফুটে উঠলো সাফল্যের এক চিলতে হাসি। তিথির হাসিতেই চোখ আঁটকে যায় আকাশের কিছুক্ষন তাকিয়েই তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে দিলো আজ নিজেকে একদম অগোছালো লাগলে আকাশের কাছে।’
_____
বাহিরে দুপুরের কড়া রোদ্দুরে বইছে সময়টা খুব জোর ১১ঃ০০ টা কি ১১ঃ৩০ টা বাজে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে কয়েকজন পার্লারের মেয়ের সামনে বসে আছে তিথি। আর পার্লারের মেয়েরা তাকে সাজাতে ব্যস্ত। কারন আজ তার আর আকাশের বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানে। খুব বড় করেই অনুষ্ঠানে ব্যবস্থা করা হয়েছে ওদের জন্য একটা বড় ক্লাব বুক করে সেখানেই অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে তিথি আর আকাশের জন্য। আর সেখানে যাওয়ার জন্যই তিথিকে সাজানো হচ্ছে। কিছুটা ভালো লাগা আর সামান্য অস্থিরতা নিয়ে বসে আছে তিথি।’
!
!
!
#চলবে…..