মেঘের_অন্তরালে
পর্বঃ ১৯
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
নিহান কর্কশ গলায় বললো, জীবনটা কী ছেলেখেলা মনে হয় আপনাদের কাছে ?
নীলার বাবা মাথা নিচু করে বললো, এভাবে বলো না বাবা। আমার মেয়েটা খুব কষ্ট পাচ্ছে।
নিহান কঠিন গলায় বললো, আপনার এতবড় মেয়ে কষ্ট পাচ্ছে বলে আপনার কষ্ট হচ্ছে। আমার দুধের বাচ্চা মেয়েটা যখন তার মায়ের জন্য কান্না করতে করতে অসুস্থ হয়ে যেতো, আমার কষ্ট হতো না তখন ? মা ডাক শেখার পর থেকে যতবার মা ডাকতো আমার কষ্ট হতো না, আমার মেয়ের জন্য ? অসুস্থ হয়ে যখন একটু মায়ের স্পর্শ খাঁজতো আমার কষ্ট হতো না তখন ?
নীলা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।
নিহান কঠিন গলায় বললো, আমিও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি মিস্টার মির্জা।
ফিরিয়ে নাও আমার মেয়েটাকে।
নিবিড় তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, ফেলে দেওয়া থুতু কাউকে মুখে নিতে দেখেছেন কখনো ?
নীলার বাবা চমকে তাকালো নিহানের দিকে। তার বুঝা হয়ে গেছে নিহান আর কখনো নীলাকে মেনে নিবে না।
তখন বললো, নিশিতার কথা ভেবে হলেও।
নিহান ডাইনিং টেবিলে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো, নিশিতা মাকে ছাড়া বাঁচতে শিখে নিয়েছে।
নিহান নিশিতাকে ডেকে বললো, নিশিমা এদিকে এসো একবার।
নিশিতা আসছি পাপা বলে দৌড়ে নিহানের কাছে চলে এলো। নিহান নিচু হয়ে মেয়ের কপালে চুমু একে দিলো।
এই ভদ্রলোককে একটু বলো তো তোমার পাপা কে ?
নিশিতা নীলার বাবার দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিহানের দিকে তাকালো। খিলখিলিয়ে হেসে বললো, তুমি।
নিহান সিরিয়াস হয়ে বললো, এবার বলো তোমার মাম্মাম কে ?
নিশিতা এবার নিহানকে জড়িয়ে ধরে বললো, আমার পাপাও তুমি আর আমার মাম্মামও তুমি।
নিহান নিশিতাকে জড়িয়ে ধরেই তাকালো নীলার বাবার দিকে। তারপর নিশিতাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে হাত দিয়ে চুল ঠিক করে দিয়ে বললো, এবার তুমি তোমার দাদীর কাছে যাও।
নিশিতা ছুটে চলে গেলো ডাইনিং টেবিলে নিহানের মায়ের কাছে।
নিহান উঠে দাঁড়িয়ে বললো, পেয়ে গেছেন উত্তর ? আর যে মা জন্মের আগেই নিজের গর্ভের ছোট প্রাণটা মেরে ফেলতে চায়। সে কেমন মা হবে কারো বুঝার বাকি থাকে না। আমার মেয়ের এমন মায়ের কোনো প্রয়োজন নেই।
নীলার বাবা মাথা নিচু করে ফেললো নিহানের কথায়।
নিহান কঠিন গলায় বললো, আর কখনো আমার বা আমার মেয়ের জীবনে যেনো আপনাদের ছায়াও না পরে।
নীলার বাবা মাথা নিচু করে বের হতে গেলে নিহান বললো, দাঁড়ান।
নীলার বাবা ভাবলো হয়তো একটু আশার আলো এটা কিন্তু তার ধারণা ভুল।
নিহান গম্ভীর গলায় বললো, আমি জানি না ইসরার বাবার সাথে আপনি অফিসে সেদিন কী করেছিলেন। যার জন্য তিনি হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে। ইসরার পরিবার সেদিনের জন্য আমাকেই দোষী মনে করছে। নিজের পাপ কিছুটা কমানোর ইচ্ছে থাকলে তাদের কাছে সত্যিটা বলে দিবেন। এবার আপনি আসতে পারেন।
নীলার বাবা চলে গেলে নিহান মনে মনে বলে উঠলো, একটা নিষ্পাপ বাচ্চার কান্না কখনো বৃথা যেতে পারো না। তার প্রতিটা চোখের পানির মূল্য তোমাকে দিতে হবে নীলা, অবশ্যই দিতে হবে।
পাপা আমাদের লেট হচ্ছে তো।
হ্যাঁ আসছি মা।
৩২.
সকালে ঘুম থেকে উঠে কেবল ড্রয়িংরুমে বসেছে ইসরা তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো, ইসরা ভাবলো পত্রিকা এসেছে। সারারাত আয়মানের কথা মাথায় ঘুরঘুর করেছে, ঘুম ভালো হয়নি। মাকে কড়া একটা চা দিতে বলে মেইন ডোর খুললো পত্রিকার আশায়।
চোখে ঘুম ঘুম যা ভাব ছিলো এক মুহুর্তে কেটে গেলো দরজা খুলে। হ্যাঁ পত্রিকা এসেছে তবে সাথে বড় একটা গোলাপের তোড়া। হাতে নিয়ে দেখলো একটা চিরকুট আছে সাথে।
আজ তোমার পনেরো দিনের প্রথম দিন। একটা সুন্দর দিনের শুভকামনা।
ইসরার বুঝতে বাকি রইলো না এটা আয়মানের কাজ। ইসরা হাসবে, কাঁদবে নাকি রাগ করবে বুঝতে পারছে না। এমনই ঐ আয়মান তার মাথা চড়ে লাফাচ্ছে আবার আরো ভালো করে মনে করিয়ে দিলো। ইসরা দরজা বন্ধ করে ঘুরতেই ইমনের সামনে পরলো।
ইমন ছুঁ মেরে ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে বললো, তোকে এটা কে দিলো আপু ?
ইসরা নিতে চাইলে ইমন ঘুরে দাঁড়িয়ে চিরকুট পরে ফেলে আবার বললো, কিসের পনেরো দিন আপু ?
ইসরা জোর করে ইমনের হাতে থেকে ফুলের তোড়াটা নিয়ে বললো, তোর এসবে কী কাজ ? নিজের কাজে মন দে।
ইমন চেঁচিয়ে বললো, মা দেখে যাও কে যেনো তোমার মেয়েকে ফুল পাঠিয়েছে।
পারভীন বেগম ইমনের কথা বুঝতে না পেরে বললো, আগে হাত মুখ ধুয়ে আয় তারপর ব্রেকফাস্ট দিচ্ছি।
ইমন আবারও বলতে যাবে তার আগেই ইসরা বললো, পরিক্ষার পর নাকি তুই কোথায় যাবি বন্ধুদের সাথে। মাকে বলে দিলে আমি একটা টাকাও দিবো না তোকে।
ইমন ব্যস্ত হয়ে বললো, এই না না, আমি তো মজা করছিলাম। মাকে কিছু বলবো না কিন্তু তুই এমন করিস না।
কথাটা যেনো মনে থাকে।
ইসরা চলে গেলো নিজের রুমে আর ইমন পেছন থেকে বিড়বিড় করে বললো, একেই বলে ফাটা বাঁশে পা আটকে যাওয়া।
ইসরা রুমে গিয়ে ফুলের উপর আলতো করে হাত বুলালো। জীবনের প্রথম তাকে কেউ ফুল দিলো। অজানা কারণে ভালো লাগছে ইসরার। ফুলের তোড়া টেবিলে রেখে চিরকুট ডাইরির ভেতরে রাখলো যত্ন করে। যদিও ডাইরিতে কিছু লেখা নেই। ডাইরিটা ইমন ইসরাকে উপহার দিয়েছিলো জন্মদিনে। এটা ইমনের নিজের টাকায় কেনা। টিউশন পড়িয়েছিলো ইসরার জন্মদিনে উপহার দিতে। একটা ডাইরি, একটা কলম আর একটা কালো রঙের শাড়ি। ইসরা সেদিন খুশিতে কান্না করে দিয়েছিলো। যত্ন করে রেখে দিয়েছে তিনটা জিনিসই। ইসরা বলেছে ইমনের বিয়েতে শাড়িটা পড়বে।
ইসরা একদম রেডি হয়ে বের হলো রুম থেকে। ব্রেকফাস্ট করে ইমনকে সাথে নিয়েই বের হলো। ইমন কলেজের সামনে নেমে গেলে ইসরা এগিয়ে যেতে বললো রিকশাওয়ালাকে। হসপিটালের সামনে এসে না চাইতেও চোখ এদিক ওদিক যাচ্ছে। অবচেতন মন আয়মানকে খোঁজে বেড়াচ্ছে কিন্তু কোথাও তার দেখা নেই।
হঠাৎ ইসরার ফোন কেঁপে উঠলো, একটা ম্যাসেজ এসেছে। ম্যাসেজ দেখে ইসরার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো।
এদিকে ওদিক তাকিয়ে আমাকে খোঁজে লাভ হবে না। আমি ঠিক পনেরো দিন পরেই তোমার সামনে দাঁড়াবো।
ইসরা থতমত খেয়ে আর কোনো দিকে না তাকিয়ে হসপিটালের ভেতরে চলে গেলো। নিজের চেম্বারে গিয়ে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো। গ্লাসের সবটা পানি ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। ইসরা এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলো এটা আয়মান দেখেছে মানে সে আশেপাশেই ছিলো তার।
হাতে গোনা দিনগুলো এভাবেই কাটতে লাগলো। প্রতিদিন সকালে নতুন কোনো ফুলের সাথে একটা করে চিরকুট আর তাতে লেখা আর কতদিন বাকি আছে, সাথে সুন্দর দিনের শুভকামনা। রাস্তায় ইসরা এদিক ওদিক তাকালেই ফোনে ম্যাসেজ। কখনো বেখেয়ালি হয়ে কোনো কাজ করলে এক গাদা ঝাড়ি আর জ্ঞান বিতরণ। ইসরাকে এক মুহূর্ত সময় দেওয়া হয় না নিজের চিন্তা থেকে আয়মানকে সরানোর। ইসরা যেনো প্রতিটা নিশ্বাসের সাথেই ভাবে আয়মানের কথা। তবে এবার সে বিরক্ত হয়ে গেছে আয়মানের এই লুকোচুরি খেলায়। পনেরো দিন যেতে আর মাত্র দুদিন বাকি আছে। সময় যতো এগিয়ে আসছে ইসরা দোটানায় ভুগছে। রিকশা না পেয়ে হাঁটতে লাগলো সামনের দিকে কিন্তু চিন্তায় তখনো আয়মান। সকালে যাওয়ার সময় রিকশা পেতে একটু কষ্টই হয়। আনমনে হাঁটতে হাঁটতে কখন ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় চলে এসেছে খেয়াল নেই ইসরার। একটা প্রাইভেট কার তার দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে সেদিকে খেয়াল নেই। গাড়িটা যখন একদম কাছাকাছি চলে এসেছে তখন হুঁশ ফিরলো ইসরার। কিন্তু তখন আর কিছু করার নেই। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো ইসরা কিন্তু চোখ বন্ধ করতেই হাতে টান অনুভব করলো। সব এতোটা তাড়াতাড়ি হয়েছে ইসরা বুঝে উঠতে পারিনি। চোখ বন্ধ করে কারো হার্টবিটের প্রচন্ড শব্দ শুনতে পেলো। এতো দ্রুত হার্ট বিট হচ্ছে যেনো হার্ট বেরিয়ে আসবে। ইসরা ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকালো। কেউ তাকে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। মনে হচ্ছে বুকের ভেতরে ঢুকিয়ে ফেলবে। ইসরা চোখ তুলে তাকাতেই আয়মানকে দেখে চমকে উঠলো।
ইসরা ভেঙে ভেঙে বললো, আপনি ?
আয়মান কিছু না বলে রাগী চোখে তাকালো ইসরার দিকে। রাগে থরথর করে কাঁপছে আয়মান। ইসরার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে গাড়িটার দিকে তাকালো। সামনে ল্যাম্পপোস্ট আঘাত করেছে সেটা আর সেখানে মোটামুটি মানুষের ভীড় হয়ে গেছে। আয়মান ইসরাকে ছেড়ে দিয়ে গাড়িটার কাছে গেলো মানুষের ভীড় ঠেলে। ইসরা আটকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। গাড়ির ভেতর থেকে টেনে বের করতেই বুঝতে পারলো পুরো নেশায় বুদ হয়ে আছে লোকটা। আরো রাগ বেড়ে গেলো আয়মানের। লোকটাকে কয়েকটা চড় থাপ্পড় মারতেই আশেপাশের মানুষ থামালো আয়মানকে। ইসরা রাস্তায় নামলেও মাঝের দিকে যায়নি বরং ফুটপাতের কাছ ঘেঁষে হাটছিলো তাই দোষটা ড্রাইভারের। একজন পুলিশকে খবর দিয়ে দিলো। আয়মান আবার ইসরার কাছে এসে দাঁড়ালো। রাগে মুখটা লাল হয়ে গেছে। ইসরা আয়মানকে শান্তশিষ্ট হিসাবেই জানে তবে আজ বুঝলো রেগে গেলে ভয়ংকর হয়ে যায়।
আয়মান ইসরার কোথায় লেগেছে কিনা দেখতে গেলে ইসরা বললো, আমি ঠিক আছি।
আয়মান আর কিছু না বলে ইসরার হাত ধরে টেনে নিজের গাড়িতে বসিয়ে দিলো। ইসরার পিছনে গাড়ি নিয়ে ধীর গতিতে চলছিলো আয়মান। ইসরা ফুটপাত রেখে রাস্তায় নেমে যেতেই আয়মানও নেমে যায় গাড়ি থেকে। উদ্দেশ্য কোনো উপায়ে ইসরার ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটানো আর আবার ফুটপাত ধরে হাটাতে বুঝানো। কিন্তু তার আগেই গাড়িটা চোখে পড়ে যায় আয়মানের। একটু যদি লেট হতো কিংবা সে তখন গাড়ি থেকে না নামতো তাহলে কী হতো ভাবতেই ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে আয়মান। ইসরা ভয়ে কিছু বলার সাহস পেলো না চুপচাপ বসে রইলো। গাড়ি হসপিটাল বা বাসা কোনো রাস্তায় যাচ্ছে না। এটা ঢাকার বাইরে যাওয়ার রাস্তা।
এবার ইসরা মুখ খুললো, এদিকে কোথায় যাচ্ছেন ? আমার ডিউটি আছে একটু পর থেকেই।
আয়মান লাল চোখে তাকাতেই ইসরা চুপ করে গেলো। আজ আয়মানকে দেখে ভয় করছে ইসরার।
বিড়বিড় করে বললো, মানুষ সামান্য একটা বিষয়ে এতটা রাগতে পারে কী করে ?
কথাটা শেষ করতেই ব্রেক কষলো আয়মান। ইসরা অনেকটা সামনে ঝুঁকে পড়ে আবার নিজেকে সামলে আয়মানের দিকে তাকালো বকা দেওয়ার জন্য কিন্তু আয়মানকে দেখে মুখ বন্ধ হয় গেলো। অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
ইসরা ভয়ে ভয়ে বললো, কী হলো ?
আয়মান রেগে ইসরার দুবাহু চেপে ধরে বললো, এটা তোমার কাছে সামান্য বিষয় মনে হচ্ছে ? আমি ঠিক সময়ে না এলে, ঐ গাড়ির যে গতি ছিলো তাতে তোমার হাড়গোড় খোঁজে পাওয়া যেতো না।
ইসরা মুচকি হেসে বললো, জন্ম মৃত্যু বিয়ে তিন বিধাতা নিয়ে। যার ভাগ্যে যা আছে সেটা হবেই।
আয়মান ইসরাকে এক ঝটকায় ছেড়ে দিয়ে বললো, তাই বলে কেউ বলেনি নিজের জীবন নিয়ে হেলাফেলা করতে। কেউ বলেনি খামখেয়ালি মতো রাস্তায় চলতে। যদি দেখেশুনে রাস্তা চলতে না পরো তাহলে রাস্তায় বের হবে না তুমি। একবার ভেবে দেখেছো এখন তোমার কিছু হয়ে গেলে কি হতো ? আমার কথা না-হয় নাই ভাবলে, নিজের মা আর ভাইয়ের কথা তো ভাববে।
রাগী চোখ দুটো এবার পানিতে টলমল করছে। চোখেমুখে প্রিয় মানুষটাকে হারানোর ভয় স্পষ্ট। ইসরার বুঝতে দেরি হলো না আয়মান তাকে কতটা ভালোবাসে। আয়মান নিজের চোখের পানি লুকানোর জন্য অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। কিন্তু ইসরার চোখ ফাঁকি দিতে পারলো না। ইসরা আলতোভাবে আয়মানের হাতটা ধরতেই আয়মান চমকে তাকালো ইসরার দিকে। আয়মানের চোখে তখনো পানি। ইসরা নিজের হাতে মুছে দিলো সেই পানি।
আবেগময় গলায় বললো, এতোটা ভালোবাসেন ?
আয়মান অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো, আমার ভালোবাসার মূল্য আছে কারো কাছে ?
ইসরা কিছু না বলে আয়মানের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলো। পৃথিবীতে সবাই ভালোবাসার কাঙাল। কে না চায় তার জন্য কেউ ভাবুক, তার একটু কষ্টেও কেউ ব্যাথিত হোক, কেউ তাকে ভালোবেসে পাগলামি করুক। রক্তে মাংসে গড়া প্রতিটা মানুষ ভালোবাসা চায়। ইসরা তো তাদের থেকে ব্যতিক্রম নয়। তাই আয়মানের ভালোবাসা তার পাথরের মতো মনও গলিয়ে ফেলেছে। অতীতটা বিষাক্ত তাই বলে কী ভবিষ্যতটাও বিষাক্ত হবে ? ইসরা একবার সুযোগ দিতে চায় আয়মানকে, নিজের মনকে আর নিজেকে। আর আয়মানের শর্ত অনুযায়ী আরমানকে রিজেক্ট করার সঠিক কোনো উপায় খোঁজে পায়নি ইসরা। কী বলে আয়মানকে রিজেক্ট করবে সে ?
আয়মান ইসরার চোখে পানি দেখে ব্যস্ত হয়ে বললো, আরে আরে তুমি কাঁদছো কেনো ? আমি তো মজা করেছি একটু। প্লিজ যদি কষ্ট পেয়ে থাকো মাফ করে দাও। তবু কান্না করো না দয়া করে। তোমার চোখের পানি আমার সহ্য হচ্ছে না।
ইসরা হুট করে জড়িয়ে ধরলো আয়মানকে। এক সেকেন্ডে চুপ করে গেলো আয়মান। কী হচ্ছে বুঝতে একটু সময় লাগলো। কিন্তু যখন বুঝতে পারলো বিষ্ময়ে চোখ বড় বড় হয়ে গেলো
কাঁপা গলায় বললো, তুমি আমাকে।
ইসরা আয়মানকে ছেড়ে দিয়ে বললো, দুদিন আগেই আপনার উত্তর দিয়ে দিচ্ছি। আপনাকে রিজেক্ট করার মতো কোনো কারণ আমার কাছে নেই। একটা আছে আর সেটা হচ্ছে আমিই আপনার যোগ্য নই। কিন্তু এটা আপনার কাছে উপযুক্ত কারণ নয় সেটা আমি জানি।
আয়মান ভাবুক হয়ে বললো, তাহলে ?
ইসরা মলিন হেসে বললো, আমি এখন আমার পরিবারের একমাত্র ভরসা। নিজের সুখের কথা ভেবে মা আর ভাইকে ফেলে চলে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
আয়মান সিরিয়াস হয়ে বললো, ভালোবাসো ?
ইসরা উত্তরে মলিন হাসলো আয়মানের দিকে তাকিয়ে। গাড়ি থেকে নেমে একটা ট্যাক্সি থামিয়ে তাতে উঠে গেলো। ট্যাক্সি চলতে শুরু করলে একবার পেছনে ফিরে তাকিয়ে আয়মানকে রহস্যময় হাসতে দেখলো। যে হাসির মানে বুঝতে পারলো না ইসরা।
চলবে,,,,