#মেঘের_অন্তরালে,পর্বঃ ১২
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
ইশু কী করছিস একা একা ?
হুরের কথায় পাশ ফিরলো ইসরা। মেয়েটা তাকে অনেক সাপোর্ট করেছে এতোদিন। এক মুহুর্তের জন্য একা ছাড়েনি ইসরাকে। সেই ঘটনার পর পুরো এক মাস সে ইসরার সাথেই ছিলো এই বাড়িতে। ইসরা অনেকটা সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরই হুর নিজের বাসায় ফিরে যায়।
কী হলো কী করছিলি বললি না তো ?
ইসরা কিছু না বলে হুরের দিকে নিজের ফোনটা এগিয়ে দিলো। হুর ফোনের স্কিনে তাকিয়ে কিছু সময়ের জন্য থমকে গেলো।
বিস্মিত কণ্ঠে বললো, নিহান বিয়ে করে ফেলেছে ?
ইসরার ফোনের স্কিনে জ্বলজ্বল করছে নিহান আর নীলার বিয়ের ছবি। দু’জনকে দেখলে যে কেউ বলতে বাঁধ্য হবে পারফেক্ট জুটি। হুর ইসরার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
তুই কোথায় পেলি এই ছবি ?
আমিরা পাঠিয়েছে আর বলেছে, দেখে নাও কেমন মেয়ে আমার ভাবি হওয়ার যোগ্যতা রাখে।
হুর একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। নিহান বিয়ে করবে সেটা জানাই ছিলো কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি করে ফেলবে হুর ভাবতেও পারেনি।
হুর ইসরার দিকে তাকিয়ে মলিন গলায় বললো, কষ্ট হচ্ছে তোর ?
হুরের কথায় ইসরা অবাক হয়ে তাকালো, আমার কেনো কষ্ট হবে বলতো ? নিহান আমার সাথে এমন কোনো আচরণ করেনি, যার জন্য তার প্রতি আমি সামান্যতম দূর্বল হতে পারি। যে মানুষটা আমাকে অপমান করার একটা ক্ষুদ্রতম সুযোগ ছাড়েনি তার জন্য কষ্ট হবে ? আর যা আমার ছিলোই না তা হারানোর জন্য কষ্ট পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। নিহান আমার জীবনের এমন একটা অধ্যায় যা আমি চাইলেও কখনো ভুলতে পারবো না। নিহান আমার জীবনের চরম একটা শিক্ষা, হয়তো ভবিষ্যতে সামনে আগাতে নিহান আর তার পরিবারের করা প্রত্যেকটা আঘাত আমাকে সাহায্য করবে। আমি থেমে যেতে চাইলে সেই আঘাত গুলো আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
বেশ অনেকটা সময় নিরবতা বিরাজ করলো। দু’জনেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে নীল আকাশে উড়া মুক্ত পাখি দেখতে লাগলো।
হোস্টেলে যেতে চাইছিস কেনো ?
ইসরা মুচকি হেঁসে বললো, সমাজের তিক্ত কথা থেকে পালাতে। সমাজের সাথে লড়াই করার যোগ্যতা অর্জন করে তবেই সমাজের মানুষের সামনে দাঁড়াবো। সেদিন প্রত্যেকের বলা প্রত্যেকটা কথার উত্তর দিবো।
তুই এখানে থেকেই সব করতে পারিস। তোর পরিবার তোর সাথে আছে, আমি তোর সাথে আছি।
আমার জীবনের দুর্গম পথটা আমি একাই চলতে চাই।
তার মানে তুই হোস্টেলে যাচ্ছিস ?
হুম, আর সেটা খুব তাড়াতাড়ি।
২০.
তুই এই ঘাসফুলের মধ্যে কী খুঁজে পাইছিস বল তো আয়মান। সেই কখন থেকে একটা ঘাসফুলের ছবি তুলে যাচ্ছিস। আরে ভাই এর থেকে আমার ছবি তোল সেটা বেশি ভালো হবে।
আয়মান চোখের সামনে থেকে ক্যামেরা সরিয়ে তৌফিকের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকালো। কাজের সময় বিরক্ত করা একদম পছন্দ না আয়মানের আর তৌফিকের কাজই হলো তাকে কাজের সময় বিরক্ত করা।
তৌফিক আমতা আমতা করে বললো, ভাই তুই অনেক দেশে ঘুরছিস, অনেক ভালো ভালো ফটোগ্রাফি করেছিস। শেষমেশ এই ভাঙাচুরা বাংলাদেশে কেনো আসতে গেলি বলতো ?
তৌফিকের কথায় রাগী চোখে তাকালো আয়মান আর বললো, নিজের দেশ নিয়ে এমন কথা বলতে লজ্জা করলো না তোর ? বাংলাদেশের সৌন্দর্য সম্পর্কে তোর কোনো ধারণাই নেই। সারাদেশ ঘুরে দেখার পর তুই বাংলাদেশের কথা কখনো ভুলতে পারবি না।
তৌফিক ভ্রু কুঁচকে বললো, আমি যতদূর জানি তুই বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার সময় খুব একটা বড় ছিলি না তাহলে এতকিছু জানলি কী করে ?
সেটা তোর জেনে কাজ নেই, তুই নিজের কাজ কর যা।
আয়মান আবার ঘাঁসফুলটির দিকে তাকিয়ে দেখলো আবছা কুয়াশায় ঘেরা ভেজা ঘাঁস ফুলটাতে একটা রঙিন প্রজাপতি বসে আছে। সেই অপরুপ দৃশ্য নিজের ক্যামেরায় বন্দী করে নিলো। মানুষ যেটাকে খুব সামান্য বা তুচ্ছ কিছু ভেবে অবহেলা করে আয়মান সেই জিনিসের মধ্যেই অতুলনীয় কিছু খোঁজে পায়। আর দশটা মানুষের কাছে যা অতি সাধারণ আয়মানের কাছে তা অতুলনীয়। আবার সবার কাছে যা অতুলনীয় মনে হয় আয়মানের কাছে তা খুবই সাধারণ জিনিস। আয়মান একজন ইন্টারন্যাশনাল ফটোগ্রাফার। বেশ কয়েকবার ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট ফটোগ্রাফারের এওয়ার্ডও পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্জন বনজঙ্গল ঘুরে অনেক দুর্লভ ছবিও তুলেছে। যা অন্য কোনো ফটোগ্রাফারের পক্ষে করা সম্ভব হয়নি। আয়মান এবার এসেছে বাংলাদেশে। আয়মান এদেশ ছেড়ে গেছে প্রায় যুগ পেরিয়ে গেছে। তবু নিজের জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা কমেনি এক বিন্দু। আয়মান এবার ঠিক করেছে বাংলাদেশের সব মনোরম আর অপরুপ চিত্র নিজের ক্যামেরায় বন্দী করবে আর তুলে ধরবে সারা বিশ্বের সামনে। রাঙামাটির দুর্গম এক গ্রামে এসেছে আয়মান আর তার সাথে তৌফিক, রুবেল, জ্যাক আর এথেন্স। তারা মুলত একটা গ্রুপ। আয়মান, রুবেল আর তৌফিক জন্মগত বাংলাদেশি হলেও এখন ইউএসের নাগরিক আর জ্যাক এথেন্স দুজনেই জন্মগতভাবেই আমেরিকান। তাদের একটা যৌথ ইউটিউব চ্যানেল আছে। তাতে সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা কোনো হলিউড সুপারস্টারের থেকে কম নয়। এই পাঁচজনের ফ্যানের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। বিভিন্ন দেশের দুর্গম সব জায়গায় ভ্রমণ করে সেসব ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করে তারা। আয়মানের ফ্যানের সংখ্যা বাকিদের তুলনায় অনেকটা বেশি তার কারণ আয়মানের ফটোগ্রাফার পেশা।
তৌফিক আবার আয়মানের সামনে গিয়ে বললো, এবার চল ওরা সবাই জিপে ওয়েট করছে। যে বাজে রাস্তা পৌছাতে অনেক সময় লাগবে।
আয়মান মুখে কিছু না বলে শেষ ছবিটা তুলে জিপের দিকে যেতে লাগলো। জিপে উঠতেই জ্যাক আয়মানের হাতের ক্যামেরা প্রায় কেঁড়ে নিয়ে ছবিগুলো দেখতে লাগলো। তৌফিক ছবি দেখে হা করে আছে। আয়মানকে ঘাঁসফুলের ছবি তুলতে দেখে সে বিরক্ত হয়েছিলো, যদিও সেটা নতুন কিছু ছিলো না। তবে এখন ছবিগুলো দেখে তৌফিক অবাক না হয়ে পারছে না। এতো সুন্দর লাগছে ঘাঁসফুল আর প্রজাপ্রতিটা।
তৌফিক মুচকি হেঁসে বললো, ভাই তোর হাতে জাদু আছে। তুই হাত দিয়ে যা ছুঁয়ে দিস তাই অতুলনীয় হয়ে যায়।
আয়মান কড়া চোখে তাকালো, তাতে তৌফিক ক্যাবলা মার্কা একটা হাসি দিয়ে সামনে তাকালো। কুয়াশার জন্য গাড়ি চালাতে বেশ কষ্ট করতে হচ্ছে এথেন্সকে। এসব রাস্তায় গাড়ি চালানোয় পটু এথেন্স, তাই আজও দ্বায়িত্বটা তার কাঁধেই পড়েছে। সবাই আড্ডায় ব্যস্ত হয়ে গেলো শুধু এথেন্স আর আয়মান ছাড়া। এথেন্স বেশ মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করছে আর আয়মান গভীর চোখে আশপাশে পর্যবেক্ষণ করছে।
২১.
রাঙামাটির অত্যন্ত দুর্গম এক গ্রামে মেডিকেল ক্যাম্পে এসেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস কোর্স শেষে সদ্য ইন্টার্নি কমপ্লিট করা একদল চিকিৎসক। এই গ্রাম দেখতে যতটা মনোরম, ঠিক ততটাই দুর্গম, যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই খারাপ। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক পাওয়া দুষ্কর। এখানকার মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকেও অনেকটা বঞ্চিত। সরকারি ভাবেই এই ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোট ১০ জন চিকিৎসক পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে পাঁচজন সদ্য ইন্টার্নি শেষ করে এসেছে আর পাঁচজন সিনিয়র। সব গুছিয়ে নিতেই দুদিন চলে গেছে। এখানে পনেরো দিন থাকবে মেডিকেল ক্যাম্প আর আশেপাশে সকল গ্রামের মানুষকে ফ্রী চিকিৎসা সেবা ও মেডিসিন দেওয়া হবে। চিকিৎসকদের থাকার ব্যবস্থা ক্যাম্পেই করা হয়েছে আর খাবার ব্যবস্থাও।
জানুয়ারির শেষ আর ফেব্রুয়ারির শুরুর সময় এটা। মোটামুটি শীতটা ভালোই পড়ে এখনো। আশপাশের পাহাড়গুলো যেনো লজ্জায় কুয়াশার আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে। খোলা মাঠের মতো একটা জায়গায় ক্যাম্প করা হয়েছে। সামনে বড় একটা লেক আর লেকের ওপাশে বড় বড় পাহাড়। জায়গাটা এতোটাই সুন্দর, বর্ণনা করাও কষ্টকর। একটা শাল গায়ের জড়িয়ে মাঠের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে এক পঁচিশ বছর বয়সী রমণী। গায়ে কালো রঙের শাড়ীটা শীতে কালো হয়ে যাওয়া হাতটার সাথে যেনো মিলে গেছে। চোখে একটা মোটা ফ্রেমের চশমা। খুব সাদামাটা একজন মানুষ। তাকে দেখে বুঝার উপায় নেই আজ এখানে পৌঁছাতে এই গ্রামের চাইতেও দুর্গম একটা পথ সে পাড়ি দিয়ে এসেছে।
ইসরা,,,,
ডক্টর মিষ্টির ডাকে পাশ ফিরে তাকালো ইসরা। ফজরের নামাজটা পড়েই এখানে চলে এসেছে। আশেপাশে কিছু দেখা যাচ্ছে না কুয়াশায়। তবু ভালো লাগছে ইসরার কাছে।
মিষ্টি হাতে হাত ঘঁষে পাশে দাঁড়িয়ে বললো, এতো সকালে এখানে কী করছো ? কুয়াশায় ঠান্ডা লেগে যাবে তো ?
লাগবে না।
ভেতরে চলো কিছু কাজ আছে গুছিয়ে নিতে হবে। একটু পর থেকেই পেশেন্ট আসা শুরু হয়ে যাবে।
ইসরা সামনে তাকিয়ে বললো, তুমি যাও আমি আসছি।
মিষ্টি চলে যাওয়ার একটু পরই হাজির হলো ইমন। ইমন এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র এখন। কলেজ বন্ধ থাকায় বায়না ধরে ইসরার সাথে এসেছে। ইসরার সব খরচ সরকার বহন করলেও ইমনের খরচ ইসরাকেই বহন করতে হবে। ইমন খুব ভ্রমন পিয়াসু ছেলে, তার ভ্রমণ করতে ভালো লাগে। তাই ভ্রমণ করার মতো কোনো সুযোগ সে হাতছাড়া করতে রাজি নয়।
আপু এখানে তো একটুও নেটওয়ার্ক নেই।
আফসোসের স্বরে ইমনের কথা শুনে ইসরা ঘুরে ইমনের কান টেনে ধরলো, তোকে আমি বারবার বলেছিলাম সেখানে একটুও নেটওয়ার্ক পাবি না। তবু জেদ ধরে আমার সাথে চলে এলি, ওদিকে মা বাড়িতে একা। এখন যদি নেটওয়ার্ক নেই নেটওয়ার্ক নেই বলে আমার মাথা নষ্ট করিস তাহলে আবার বাসায় পাঠিয়ে দিবো।
ওফ আপু কানটা ছাড়, ছিঁড়ে যাবে তো। নেটওয়ার্ক লাগবে না তবু আমি বাসায় যাচ্ছি না। তুই যতদিন এখানে থাকবি আমিও এখানেই থাকবো।
তাহলে আমার মাথা নষ্ট না করে যা এখান থেকে।
ইমন একবার সরু চোখে তাকিয়ে আবার নিজের তাবুতে চলে গেলো। ইসরা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে নিজেও তাবুর দিকে গেলো। মিষ্টি ডেকে গেছে বেশ কিছু সময় হলো, এখন যাওয়া উচিত।
গ্রামের মাইকেল নামক এক চাকমা ছেলের সাথে বেশ ভাব হয়ে গেছে ইমনের। ছেলেটার ভাঙা ভাঙা বাংলা খুব ভালো লাগে ইমনের কাছে। ব্রেকফাস্ট করে সেই ছেলের সাথে গ্রাম দেখতে বেড়িয়েছে ইমন। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতে চললো তবু ইমনের কোনো খোঁজ নেই। ভয়ে কাঁপছে ইসরা, ইমনের কিছু হলে সে বা তার মা কেউ বাঁচবে না৷
ইসরা বিকেল থেকেই কান্না করছে আর সবাইকে বলছে যাতে ইমনকে খোঁজে বার করে। গ্রামের মানুষ খুঁজতে চলেও গেছে অনেকে।
আপু,,,,
ইমনের গলা কানে যেতেই ইসরা চমকে উঠে সামনে তাকালো। দৌড়ে ইমনের কাছে গিয়ে ঠাস করে গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
কোথায় গিয়েছিলি তুই, তোকে সাথে আনাই ভুল হয়েছে আমার। আগামীকাল সকালেই তুই ঢাকায় ফিরে যাবি। তোর কিছু হয়ে গেলে আমি মায়ের সামনে দাঁড়াতাম কীভাবে ?
আপু আমার কথা তো শোন আগে।
আমি তোর কোনো কথা শুনতে চাই না তুই কাল,,,
ইসরা কথা শেষ করার আগেই গ্রামের লোকজন এক লোককে ধরাধরি করে ক্যাম্পে নিয়ে এলো। তাকে দেখে মনে হচ্ছে এক্সিডেন্ট করছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত লেগে আছে।
ইসরা ব্যস্ত গলায় বললো, উনি কে আর এমন অবস্থা হলো কী করে ?
ইমন লোকটার দিকে তাকিয়ে বললো, উনি ইন্টারন্যাশনাল ফটোগ্রাফার মিস্টার আয়মান র,,,
ইসরা তাড়াতাড়ি উনার ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করতে হবে, তুমিও এসো প্লিজ।
মিষ্টির ডাকে ইমনের পুরো কথা শোনা হলো না ইসরার, সেও ছুটলো মিষ্টির সাথে। শরীরের কাটা জায়গাগুলো ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগলো। ডান পায়ের অবস্থা ভালো নয়, হাঁটুর উপরে ক্ষতটা বেশ গভীর।
তুমি একটু পাশে বসো আমি দেখি মুরাদ কোথায় গেলো, সবাই তো ইমনকে খোঁজতে এদিক ওদিক চলে গেছে। তাদের খবর পাঠাতে হবে ইমন চলে এসেছে।
ইসরাকে কিছু বলতে না দিয়ে মিষ্টি বের হয়ে গেলো। তাবুতে রয়ে গেলো আয়মান আর ইসরা একা। আয়মানের অবশ্য এখনো সেন্স ফেরেনি। ইসরা আয়মানের জন্য মেডিসিন খুঁজতে লাগলো মেডিসিন বক্সে।
আপু,,
ইসরা পাশ ফিরে দেখলো ইমন দাঁড়িয়ে আছে।
ইসরা আবার মেডিসিন খুঁজতে লাগলো আর বললো, হুম বল কী বলবি।
আপু আমি জাস্ট বিশ্বাস করতে পারছি না, আমার আইডল আমার সামনে।
ইসরা ভ্রু কুঁচকে বললো, এ আবার কোনো দেশের প্রসিডেন্ট যে তোর আইডল হলো ?
ফেমাল ফটোগ্রাফার আর ইউটিউবার। আমি উনার কতবড় ফ্যান তুই জানিস ?
তা তোর এই আইডলের এমন হাল হলো কী করে ?
জানি না, আসলে সারাদিন মাইকেল এতো সুন্দর সুন্দর জায়গায় নিয়ে গেছে ফেরার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।বিকেলের ফেরার সময় রাস্তার থেকে অনেকটা দূরে এই অবস্থায় পেয়েছি। উনার সাথে আরো চারজন থাকে সবসময় তাদের দেখিনি কোথাও। প্রথমে চিনতে না পারলেও পরে চিনতে পেরেছি আর সাথে নিয়ে এলাম।
দেখে তো মনে হচ্ছে এক্সিডেন্ট করেছে।
হতে পারে, জানি না।
ইসরা আর ইমনের কথার মাঝেই সেন্স ফিরে এলো আয়মানের, পিটপিট চোখে তাকালো। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে গেলে ব্যাথায় আহ্ করে উঠলো। সেই আওয়াজে ইমন আর ইসরা দুজনেই কাছে এসে দাঁড়ালো।
ইমন পাশে বসে বললো, এখন কেমন লাগছে স্যার ?
আয়মান ইমনকে দেখে চিনতে না পেরে বললো, আমি কোথায় আছি ? আমার সাথে যারা ছিলো তারা কোথায় ?
ইমন মুখ কালো করে বললো, আর তো কাউকে পাইনি শুধু আপনাকেই পেলাম।
আয়মান মনে করার চেষ্টা করলো কী হয়েছিলো, মাথাটা ব্যাথায় টনটন করছে তার। আয়মান অন্যমনস্ক হয়ে ফোনে গেইম খেলছিলো জিপে বসে। হঠাৎ সামনে কিছু এসে পড়ায় এথেন্স মোড় নিয়ে নেয় কিন্তু পাহাড়ি রাস্তা হওয়ায় গাড়ি সামলে উঠতে পারেনি সামনের বড় গাছে ধাক্কা খায়। আয়মান ড্রাইভিং সীটের পাশের সীটে বসেছিলো আর সীট বেল বাঁধেনি। সবাই জীপ থেকে এদিক ওদিকে পড়ে যায় আর আয়মান ছিটকে রাস্তা থেকে অনেকটা দূরে গিয়ে পড়ে। আয়মানের খুব চিন্তা হচ্ছে ওরা সবাই কেমন আছে সেটা ভেবে।
আয়মান উঠে বসার চেষ্টা করতেই ইসরা উত্তেজিত কণ্ঠে বললো, উঠবেন না আপনি অসুস্থ।
ছোট একটা কথা আয়মানের কানে বারবার প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো। আওয়াজটা আয়মানের কানে নয় বরং হৃদপিণ্ডে গিয়ে আঘাত করেছে। নিভু নিভু চোখে তাকালো ইসরার দিকে। স্পষ্ট দেখতে পেলো না তার আগেই চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো আবার সেন্সলেস হয়ে গেলো।
ইমন ব্যস্ত হয়ে বললো, আবার কী হলো আপু ?
এতো হাইপার হওয়ার মতো কিছু হয়নি একটু পরই আবার জ্ঞান ফিরে আসবে। তুই এখানে থাক আমি স্যারের সাথে কথা বলে আসছি।
ইমনকে আয়মানের কাছে রেখে ইসরা বের হয়ে গেলো। ইমন আবার আয়মানের দিকে তাকালো। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের মুখটায় চাপদাড়ি সৌন্দর্যটা বৃদ্ধি করেছে। ইমনের খুব ইচ্ছে ছিলো জীবনে একবার হলেও আয়মানের সাথে দেখা করবে। আজ আয়মান তার সামনে, ছেলেটার যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না। ইমন ভ্রমণ পিয়াসু হওয়ায় আয়মানকে তার এতো পছন্দ। এছাড়া আয়মানের স্টাইলও ফলো করার মতো। ইমন পকেট থেকে ফোন বের করে সেন্সলেস আয়মানের সাথে কয়েকটা সেলফি তুলে নিলো।
ইসরা তাবুতে এসে ইমনের কান্ডকারখানা দেখে বললো, আগে ফ্রেশ হয়ে নে, সারাদিন কোথায় কোথায় ঘুরেছিস কে জানে ?
ইসরার কথা শুনে ইমনও বাধ্য ছেলের মতো ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ইসরা আয়মানের পাশে বসে হাতটা ধরে পালস চেক করতে লাগলো। ইসরা হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ছিলো, বুঝতে পারলো পালস একটু কম। আয়মানের হাত ছেড়ে দিয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো ইসরা। কারণ আয়মান তার দিকেই তাকিয়ে আছে নিভু নিভু চোখে।
চলবে,,,,