মেঘের অন্তরালে,পর্বঃ ০৩,০৪

মেঘের অন্তরালে,পর্বঃ ০৩,০৪
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ০৩

হুর অনেকটা সময় ইসরার দিকে তাকিয়ে থেকে নিঃশব্দে পাশে বসে পড়লো। বেলকনির বেলি ফুলের গাছটা সাদা ফুলে ভড়ে উঠেছে৷ ফুলের মিষ্টি গন্ধ মন জুড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে। হুর আর ইসরা পাশাপাশি বসে আছে।

ছোটবেলা থেকে বাবার কাছে একটা গল্প শুনে এসেছি। আমার বাবার দাদাকে বিয়ের জন্য ছোট মেয়েকে দেখিয়ে বড় মেয়ে বিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। যখন সব জানাজানি হলো তখন অনেক ঝামেলা হয়েছিলো কিন্তু একটা সময় গিয়ে সব ঠিক হয়ে যায়। বাকি জীবনটা নাকি তারা সুখী দম্পতি হিসেবে কাটিয়ে গেছে।

ইসরার হঠাৎ বলা কথায় হুর খানিকটা চমকে তাকায় ইসরার দিকে। এই গল্পটা হুর অনেকবার শুনেছে ইসরার কাছে। প্রত্যেকবার বলা শেষে ইসরা আর হুর হাসতে হাসতে লুটোপুটি খেতো আর বলতো কী সাংঘাতিক ব্যাপার ভাবতে পারিস ? কিন্তু আজ কেউ হাসতে পারলো না বরং হুরের ভেতরটা ধক করে উঠলো।

ইসরা আবার বললো, আমি কখনো ভাবতে পারিনি যে গল্পটা নিয়ে সবসময় মজা করতাম সেটা একদিন আমার জীবনের গল্প হয়ে দাঁড়াবে।

হুর ইসরার কথার উত্তরে কিছু বলতে পারলো না মাথা নিচু করে বসে রইলো। ইসরার কোনো রাগ নেই হুরের উপর, কারণ মেয়েটা দেখতে যেমন সুন্দরী মনের দিকে থেকে ঠিক ততটাই নরম। একটু ইমোশনাল কথা বলে যে কেউ হুরকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারবে। হুরকে নিয়ে ইসরার মাঝে মাঝে খুব ভয় হয়। পৃথিবীটা যে বড্ড কঠিন এখানে এতো সহজ সরল মানুষকে সবাই ব্যবহার করে শুধু, তাদের সরলতার সুযোগ নেয়।

ইসরা হুরের দিকে তাকিয়ে বললো, এতটা সহজ সরল হয়ে যাস না, যাতে নিজের ক্ষতি হয়। পৃথিবীটা চেনার চেষ্টা কর হুর, নাহলে জীবনে অনেক হোটচ খেতে হবে।

হুর মাথা নিচু করে বললো, তুই প্লিজ মাফ করে দে আমাকে।

ইসরা আর কিছু বললো না, আবার বেলকনির বাইরে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। হুরও কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলো ইসরার পাশে।

৫.
ডিভোর্সের তাড়া নিহানের পরিবারের, ইসরার বাবার নয়। মেয়েকে ও-বাড়ি পাঠানোর কোনো লক্ষণ দেখা গেলো না তার মধ্যে। মেয়ের সাথে চোখ মেলানোর সাহস পায় না ইখতিয়ার আহমেদ। সবসময় মেয়ের থেকে মুখ লুকিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে। নিজের জীবনের সব সিদ্ধান্ত ঝুঁকে পড়ে নিয়েছেন তিনি। মেয়ের জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটাও কোনোরকম চিন্তা ভাবনা ছাড়াই নিয়ে ফেলেছেন। নিজের হাতে সযত্নে মেয়ের জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছেন সেটা বুঝতে অনেক দেরি করে ফেলেছেন। গতরাতে নিহানের বাবা ফোনে জানিয়েছেন সকালে গাড়ি পাঠাবেন ইসরাকে নিতে। সেই থেকে ইসরার বাসায় অনেকটা গুমোট পরিবেশ বিরাজ করছে। যে বাড়ি থেকে এতো অপমানে বের করে দেওয়া হয়েছে সেই বাড়িতে মেয়েকে আবার কীভাবে পাঠাবে ভেবে পাচ্ছে না। আবার পরক্ষণে ভাবছে সেই অপমান সে নিজের ডেকে এনেছে, দোষটা তাদের নয়। ইসরা সকালে নিজের রুম থেকে এখনো বের হয়নি। নিচে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে বেশ অনেকটা সময় হলো কিন্তু ইসরাকে কেউ কিছু বলার সাহস পেলো না। পারভীন বেগম চার পাঁচবার মেয়ের রুমের সামনে গিয়ে আবার ফেরত এসেছে। ইখতিয়ার আহমেদ আজ অফিস না গিয়ে ড্রয়িংরুমে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে কপালে হাত রেখে। পারভীন বেগম বিনা প্রয়োজনে কিচেনে দাড়িয়ে আছে দেয়ালে হেলান দিয়ে আর ইমন খেয়েদেয়ে স্কুলে চলে গেছে অনেকক্ষণ আগে। মেয়ের রুমের দরজা খোলার শব্দে পারভীন বেগম আর ইখতিয়ার আহমেদ দু’জনেই সেদিকে তাকালো। রেডি হয়ে লাগেজ নিয়ে বের হয়েছে ইসরা। মেয়েকে এগিয়ে আসতে দেখে উঠে দাড়ালেন ইখতিয়ার আহমেদ। ইসরা বাবা-মা কারো দিকে না তাকিয়ে মেইন ডোর খোলে বের হয়ে গেলো। পারভীন বেগম মেয়ের পেছনে যেতে লাগলো। ইখতিয়ার আহমেদ যাবে কী যাবে না চিন্তা করতে করতে দু’জনেই চলে গেলো আর সে আবার নিজের জায়গায় বসে পরলো।
গেইটের বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইসরা সেদিকে এগিয়ে গেলো।

পারভীন বেগম ধরা গলায় বললো, ইসরা।

ইসরা দাঁড়িয়ে গেলো কিন্তু পেছনে ফিরে তাকালো না। পারভীন বেগম নিজেই এগিয়ে এসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন কিন্তু ইসরার মধ্যে কোনো হেলদোল দেখা গেলো না। সযত্নে মায়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। ইসরা বসতেই গাড়ি স্টার্ট দিলো ড্রাইভার। পারভীন বেগম চাতক পাখির মতো তাকিয়ে রইলেন চলে যাওয়া গাড়ির দিকে। চোখের আড়াল হয়ে গেলেই বুক ফেটে কান্না আসতে লাগলো তার। নিজেকে কোন রকম সামলে নিয়ে বাসার দিকে পা বাড়ালেন।

ইসরা জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে, চোখ দুটোয় শ্রাবণ ধারা বয়ে চলেছে। অজানা এক পথে হাঁটতে চলেছে সে। এই পথের শেষ কোথায় তার অজানা। চলার পথটা যে সহজ হবে না সেটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না তার। গাড়ি থেমে গেলে হুঁশ ফিরলো ইসরার। সামনে তাকিয়ে সাদা রঙের দুতলা ডুপ্লেক্স বাড়ি দেখতে পেলো। মোটামুটি বেশ বড় বাড়িটা আর সুন্দর। হ্যাঁ এটাই নিহানদের বাড়ি, যেখানে আরো বিশ দিন আগে এসেছিলো বধূ সেজে। ইসরা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে গাড়ি থেমে নেমে নিজের লাগেজ নিয়ে সামনে আগাতে লাগলো। কলিং বেল বাজালে একটু পর দরজা খোলে গেলো। সামনে তাকিয়ে নিজের মায়ের বয়সী ভদ্র মহিলাকে দেখতে পেলো। পোশাক আশাকে বুঝা যাচ্ছে বাড়ির কাজের লোক। ইসরা ভেবেছিলো উনিও ইসরাকে দেখে বিরক্তি নিয়ে তাকাবে। কিন্তু ইসরার ধারণা ভুল প্রমাণিত করে মিষ্টি হাসলেন ইসরার দিকে তাকিয়ে।

ভেতরে আহেন।

ইসরা লাগেজ টেনে ভেতরে গেলে আশেপাশে কাউকে দেখতে পেলো না।

আমি এই বাড়ির কাজের লোক মনিরা। আপনে আমার সাথে আহেন আপনার রুম দেখাই দেই।

ইসরা কিছু না বলে মনিরার পেছনে হাঁটতে লাগলো। নিচতলার একদম কর্ণারের একটা রুমে ইসরাকে নিয়ে গেলো মনিরা।

আপনে এই রুমেই থাকবেন গতরাতে বড় সাহেব বলে দিছে।

ইসরার বুঝতে সময় লাগলো না এটা বাড়ির গেস্টদের জন্য বরাদ্দকৃত রুম। সেও তো এই বাড়ি গেস্ট মাত্র কয়েক মাসের, তাই তার জায়গা এখানেই হওয়ার কথা।

আপনে কিছু খাইবেন ?

ইসরা মলিন হেঁসে বললো, না।

কিছু লাগলে আমারে বইলেন আমি এহন যাই।

ইসরা সম্মতি দিলে মনিরা বের হয়ে গেলো রুম থেকে। ইসরা রুমটা ভালো করে দেখতে লাগলো। খুব বেশি কিছু নেই রুমে, একটা বেড, ড্রেসিং টেবিল, সোফা আর কাবার্ড। পাশে বেলকনি দেখে ইসরা সেদিকে এগিয়ে গেলো। কয়েকটা এরিকা পাম গাছ ছাড়া বেলকনিতে আর কিছু নেই। ইসরা কিছুটা সময় সেখানে থেকে রুমে এসে নিজের জিনিসপত্র গুছাতে লাগলো। কাজ শেষ করে শাওয়ার নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে পড়লো। এখন বেলা বারোটা বাজে ইসরার পেটে কিছুই পরেনি। ক্ষুধা লাগেনি এমন নয় তবে খাওয়ার ইচ্ছেও নেই। চুল আঁচড়ে বেডে গিয়ে শুয়ে পড়লো।

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে নিহান। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ ছিলো নিহানের। বাড়তি কিছু ভাবার সময় পায়নি কখনো। সবসময় বইয়ে মুখ গুঁজে থাকতো। যার ফলস্বরূপ আজ একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ সে, সমাজে নিজের ভালো একটা অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে। ক্যারিয়ার আর পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় প্রেম ভালোবাসা নিয়ে ভাবার সময় হয়নি তার৷ সুদর্শন হওয়ায় কলেজ আর ভার্সিটি লাইফে অনেক মেয়ের ক্রাশ ছিলো নিহান কিন্তু পাত্তা দেয়নি কখনো। ইসরা মানে হুরকে দেখে তার ভালো লেগেছিলো। ভালো লেগেছিলো বলতে মনে হয়েছিলো মেয়েটা তার পাশে দাড়ানোর যোগ্যতা রাখে। সে একটা শার্ট কিনতে গেলেও কয়েকবার দেখেশুনে কিনে আর জীবনের সবচেয়ে বড় বিষয়ে এভাবে ঠকে গেলো। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার, ইচ্ছে করছে গেস্ট রুমে থাকা মেয়েটাকে খুন করে নিজের রাগ মেটাতে। ভাগ্য ভালো মেয়েটা তার সামনে নেই তাহলে হয়তো সত্যি সত্যি খুন করে দিতো।

৬.
ফজরের নামাজ পড়ে ধীরপায়ে ছাঁদে চলে গেলো ইসরা। দুদিন হলো এই বাড়িতে এসেছে কিন্তু কারো সামনে যায়নি। নিহানের আর তার ছোট চাচার পরিবার একসাথেই এই বাড়িতে থাকে। নিহানের মা ছাড়া বাকি সবাই চাকরিজীবী এই বাড়ির। ইসরাকে আলকাতরার কৌটা উপাধি দেওয়া নিহানের চাচাতো বোন আমিরা এইচএসসি পরীক্ষার্থী, তার সাথেও ইসরার দেখা হয়নি। রুমে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো তাই ছাঁদে চলে গেলো। বাড়িটা মনিখালার সাহায্যে অনেকটা চিনে নিয়েছে ইসরা আর এই বাড়ির একমাত্র তার সাথেই কথা বলে ইসরা। তাকে মনিখালা বলেই ডাকে। ছাঁদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে নিচে তাকাতেই গেইট দিয়ে নিহানকে ঢুকতে দেখলো সাদা পাঞ্জাবি পড়া আর টুপি মাথায়। নিহান বাসার ভেতরে ঢুকে গেলো আর ইসরা আকাশের দিকে তাকালো। এভাবে কারো জীবন চলতে পারে কিনা ইসরার জানা নেই। এই বাড়িতে নিজেকে অন্য কোনো গ্রহের প্রাণী মনে হচ্ছে ইসরার কাছে। মা অনেকবার কল দিয়েছে কিন্তু ইসরা রিসিভ করেনি, কেনো যেনো কারো সাথেই কথা বলতে ইচ্ছে করে না তার।

আপনি এখানে কী করছেন ?

ছাঁদে এসে ইসরাকে দেখে নিহানের কপাল কুঁচকে গেলো। প্রতিদিন এই সময়টা ছাঁদে কাটাতে ভালো লাগে নিহানের তাই চলে এসেছে কিন্তু ইসরাকে এখানে একদমই আশা করেনি সে। নিহানের আওয়াজে চমকে পেছনে ফিরে তাকালো ইসরা। নিহানের মতো ইসরাও নিহানকে একদমই প্রত্যাশা করেনি।

রুমে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো তাই এখানে এসেছি।

এটা আপনার নিজের বাড়ি নয় যখন যেখানে ইচ্ছে চলে যাবেন। এই সময়টা আমি ছাঁদে কাটাই, আর কেউ থাকুক সেটা আমি পছন্দ করি না।

নিহানের কথায় ইসরার মধ্যে কোনো হেলদোল দেখা গেলো না। সে নিজের মতো দাঁড়িয়ে আছে।

নিহান বিরক্ত হয়ে নিজেই চলে যেতে গেলে ইসরা বলে উঠলো, আপনার জন্য একটা খারাপ খবর আছে আমার কাছে।

নিহান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, আপনার মতো মানুষের থেকে কেউ ভালো কিছু আশাও করতে পারে না। আপনার গায়ের রং যতটা কালো আপনার মনটা তার থেকেও বেশি কালো।

ইসরা মুচকি হাঁসলো নিহানের কথায় আর বললো, আমার মন কতটা কালো আর সাদা সেটা আমি ভালো জানি। তবে আপনার মন কতটা সাদা সেটা আপনি ভালো জানেন। আর হ্যাঁ নিশ্চিত থাকুন আপনার বাসায় পারমানেন্ট থেকে যাওয়ার কোনো চেষ্টা আমি করবো না, আর না আপনার মন জয় করার চেষ্টা করবো।

চেষ্টা করে লাভ আছে বলে আপনার মনে হয় ?

ইসরা নিহানের কথা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বললো, আপনি হুরকে পছন্দ করেন সেটা আমি জানি। তবে যদি ভেবে থাকেন ডিভোর্সের পর হুরকে বিয়ে করবেন তার জন্য বলে রাখি হুরের বয়ফ্রেন্ড আছে। সেটা আমার মামাও জানে এবং বিয়েটা মোটামুটি ঠিক করা। আরাফ ভাইয়ার পড়াশোনা শেষ হলেই বিয়ের কাজ কমপ্লিট করা হবে।

নিহান চোখ মুখ শক্ত করে বললো, ঐ মেয়ে তো আপনার থেকে এক ধাপ এগিয়ে। কীভাবে ভাবলেন এমন প্রতারক কাউকে আমি আমার জীবনে জায়গা দিবো।

কথাটা শেষ করে বড় কদমে ছাঁদের গেইটের দিকে এগিয়ে গেলো নিহান। হঠাৎ থেমে গিয়ে বললো, আপনাকে যেনো আমার চোখের সামনে আর না দেখি। আপনার যা প্রয়োজন নিজের রুমে পেয়ে যাবেন। এই বাড়ির মানুষদের থেকে যত দুরত্ব বজায় রাখবেন সেটাই ভালো আপনার জন্য।

নিহান চলে যেতেই ইসরা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। ইসরার মনে একবিন্দু ইচ্ছে নেই এই সম্পর্কটাকে সুযোগ দেওয়ার। মনে মনে সেও চায় এই মিথ্যে সম্পর্ক থেকে মুক্তি পেতে। তার মধ্যে কোনো ইচ্ছে নেই এই পরিবারের কারো মন জয় করার। এই পরিবারের প্রথম দিনের ব্যবহারে ইসরা বুঝে গেছে তাদের যতটা না সমস্যা বউ পাল্টে যাওয়ায় তার থেকে হাজার গুন সমস্যা একটা কালো মেয়ে তাদের পরিবারের বউ হয়েছে বলে।

চলে যাওয়ার সময় পেছনে থেকে কারো আওয়াজে শুনতে পেয়েছিলো, আর একটু ফর্সা হলে তাও ভেবে দেখা যেতো।

আর নিহান সে তো কালো মানুষদের এক প্রকার ঘৃণা করে বলা চলে। মনিখালার থেকে ইসরা শুনেছে ছোটবেলায় কোনো কালো বাচ্চার সাথে নিহান খেলতো না পর্যন্ত। নিহানের ছোট চাচার ছেলের গায়ের রং নিহানের থেকে চাপা তাই তাকেও নাকি খুব একটা পছন্দ নয় নিহানের। মনিখালার ভাষ্যমতে সে কালো নয় উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, নিহান তাকেই পছন্দ করে না আর ইসরা তো সেখানে একদমই কালো।

ইসরা বিড়বিড় করে বললো, মিস্টার নিহান আমার গায়ের রং যতটা কালো তার থেকে আপনার মনটা আরো বেশি কালো। এমন কারো মনে জায়গা করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই যে মানুষকে সম্মানই করতে জানে না। আপনার মতো আমিও সময়ের অপেক্ষায় আছি। তবে তার আগে আমার বাবাকে বুঝাতে চাই সে কতবড় অন্যায় করেছে।

চলবে,,,,,,,

অনেকে গল্প নিজের মতো সাজিয়ে নিচ্ছেন। গল্প শুরু করার আগেই শেষ পর্যন্ত চলে গেছেন। নিহান ইসরার জীবনের একটা মোড় মাত্র, গল্পের অনেকটা পথ এখনো বাকি তাই নিজেদের মতো সাজিয়ে নিয়ে লাভ নেই। আর ইসরা কতটা দোষী সেটা সময়ের সাথে সাথে জানতে পারবেন। আমি বরাবরই ভিন্নতা পছন্দ করি তাই এই গল্পটাও কিছু ভিন্নতা দিয়ে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি। নিজেদের মতো না সাজিয়ে পাশে থাকার জন্য অনুরোধ করছি সবাইকে, হ্যাপি রিডিং,, আল্লাহ হাফেজ।

#মেঘের_অন্তরালে
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্বঃ ০৪

ইসরা কিছুটা সময় ছাঁদে থেকে নিচে চলে গেলো। তবে ইসরার ভাগ্যটা আজ হয়তো একটু বেশিই খারাপ। দুতলায় আসতেই আমিরার সামনে পরে গেলো। ইসরাকে দেখে বিরক্তি নিয়ে তাকালো আমিরা। নিহানের কোনো ভাইবোন নেই, আমিরা এই বাড়ির একমাত্র মেয়ে তাই সবাই তাকে অত্যন্ত ভালোবাসে। সবার আদরে একটা বাঁদর তৈরি হয়েছে বলা চলে।

ইসরা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে যাবে তার আগেই আমিরা বলে উঠলো, এই আলকাতরার কৌটা।

ইসরা থেমে গেলো আমিরার ডাকে তবে কিছু বললো না। আমিরা ইসরার সামনে এসে পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো।

তোমার ভাগ্যটা বড্ড খারাপ আর একটু ফর্সা হলে ভালোই লাগতো তোমাকে, কিন্তু আমার দেওয়া উপাধিটা তোমার জন্য একদম পার্ফেক্ট। তোমার ভাগ্য খারাপ বললাম আরো একটা কারণে, সেটা কী জানো ?
না বললে জানবো কী করে ?

নিহান ভাইয়া ছোটবেলা থেকে কালো মানুষদের দেখতে পারে না। ভাইয়া মনে করে কালো মানুষের মন তাদের গায়ের রঙের থেকেও কালো হয়। আর তুমি তারই বউ হয়ে গেছো। আচ্ছা একটা কথা বলো, তোমার লজ্জা করে না এতো বড় একটা ধোঁকাবাজি করলে ?

লজ্জা করতো যদি এতে আমার কোনো দোষ থাকতো।

তুমি চাইলেই বিয়েটা ভাঙতে পারতে কিন্তু তুমি তোমার ঐ ঠকবাজ বাবার সাথে মিলে আমাদের ঠকালে।

ইসরা আমিরার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো আর বললো, আমি কী করেছি আর কী করিনি সেটা আমি ভালো করে জানি। আমার ভাগ্য কতটা খারাপ সেটাও আমি আগে থেকেই জানি। তবে তোমার ভাইয়ার ভাগ্যটা যে খারাপ সেটা বুঝে গেছি। সে নিজের ভাগ্য দোষে ঠঁকে গেছে।

একেই হয়তো বলে চোরের মায়ের বড় গলা। এতোবড় একটা অপরাধ করে তোমার মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই বরং নিজেকে নির্দোষ মনে করো। তুমি আসলেই একটা অভদ্র মেয়ে।

আমিরা তুমি কিন্তু দিনদিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছো। কার সাথে কীভাবে কথা বলছো সেটা তোমার মাথায় থাকে না।

ইসরা কিছু বলবে তার আগেই পেছন থেকে কারো আওয়াজে দুজনেই ঘুরে তাকালো। নিহানের মা দাঁড়িয়ে আছে তাদের পেছনে।

বড় মা তুমি এই ঠকবাজ মেয়েটার জন্য আমাকে এসব বলছো ?

কফির জন্য কিচেনে যাচ্ছিলে তাই যাও, আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না।

আমিরা ইসরার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে চলে গেলো। ইসরা নিহানের মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতেই নিহানের মায়ের গম্ভীর আওয়াজে থেমে গেলো।

কোথায় গিয়েছিলে ?

ইসরা মাথা নিচু করে বললো, ছাঁদে।

সকালে নিহান ছাঁদে যায় তাই আর কখনো সকালে ছাঁদে যাবে না।

ইসরা নিচু গলায় উত্তর, ঠিক আছে।

নিজের রুমে যাও আমি মনিরাকে দিয়ে তোমার খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।

ইসরা নিজের রুমে গিয়ে দেয়াল ঘেঁষে বসে পড়লো। এই দুনিয়া শক্তের ভক্ত নরমের জম। এখানে নিজেকে নরম প্রমাণ করলে হয়তো আরো অনেক কিছু সহ্য করতে হবে। কিন্তু নিজেকে সবার সামনে যতো কঠিন প্রমাণ করতে চাইছে ভেতর থেকে ঠিক ততটাই দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। নিহানের প্রতিটা কথা যেখানে তাকে ধাঁরালো অস্ত্রের মতো আঘাত করছিলো সেখানে সে ঠোঁটের কোণে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে পুরোটা সময়। সে তো নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করেছিলো বিয়েটা আটকানো। তাহলে তাকে কেনো বার-বার শুনতে হচ্ছে ধোকাবাজ, প্রতারণ, ঠকবাজ ?

কেনো করলে বাবা, কেনো ? যেখানে তুমি নিজেই নিজের কালো মেয়েকে মেনে নিতে পারোনি সেখানে অন্য একটা পরিবার কীভাবে মেনে নিবে ? আজ যদি কালো হয়ে জন্ম না নিতাম, তাহলে তো তুমি এমন জঘন্য একটা পথ বেছে নেওয়ার চিন্তাও করতে না।

ইসরা কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে শুয়ে পড়লো। উপরে সে যতটা শক্ত ভেতরে তার থেকে কয়েক হাজার গুণ বিধ্বস্ত।

পুরো পৃথিবী যেখানে সৌন্দর্যের পূজারী সেখানে নিহানের কী দোষ ? সে ভালো কাউকে পাওয়ার সম্পূর্ণ যোগ্যতা রাখে। কোনো সুন্দরী রমণী তার স্ত্রী হোক এটা চাওয়া তো কোনো অন্যায় নয় তার,সেটা সে চাইতেই পারে। তার জন্য কোনো অভিযোগ নেই আমার মনে। কিন্তু আমার সহ্যের সীমা কতটা হওয়া প্রয়োজন। এসব যে আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। মুক্তি চাই আমি এই অভিশপ্ত জীবন থেকে।

৭.
কীরে নিহান মন খারাপ করে বসে আছিস কেনো ?

হাতের কলম ঘুরানো বন্ধ করে দিলো নিহান। কম্পিউটারের স্কিনের দিকে তাকিয়ে হাতে কলম ঘুরিয়ে যাচ্ছিলো। পাশ থেকে রুপমের আওয়াজ শুনে বিরক্তি নিয়ে তাকালো।

নতুন বিয়ে করেছিস এখন তো ফুরফুরে মেজাজে থাকবি সবসময়। তা না করে পেঁচার মতো মুখ করে বসে আছিস কেনো তখন থেকে ?

চরম বিরক্তি নিয়ে নিহান বললো, সবটা জানার পরও ইচ্ছে করে এমন মজা করছিস ?

রুপম হেঁসে বললো, সত্যি ভাই এই যুগে এমন ঘটনা ভাবা যায় না। তোর শশুর মনে হয় আদি যুগ থেকে টাইম মেশিন দিয়ে এই যুগে চলে এসেছে।

সব বিষয়ে মজা আমার একদম পছন্দ না রুপম।

আচ্ছা ভাই, সিরিয়াস একটা কথা বলছি। তোর বউ, মানে ঐ মেয়েটা তোকে কিছু জানানোর চেষ্টা করেনি ?

ঐ মেয়ে তো বাপের মতোই ধোঁকাবাজ। আমার মতো ছেলে হাতছাড়া করা যায় নাকি ?

তবু একবার জানতে চাইতি কেনো কিছু জানায়নি তোকে।

এই মেয়ের আচরণ দেখে তোর মনে হবে না কোনো অনুশোচনা আছে। ঐ মেয়ে আরো একবার প্রমাণ করে দিয়েছে কালো মানুষের মনটাও তাদের মতো কালো হয়।

এটা কিন্তু তোর ভুল ধারণা। সবাই যে করিম চাচার মতো হবে এমনটা কিন্তু নয়, আর সেও কিন্তু খারাপ মানুষ ছিলেন না। ছোটবেলার একটা সামান্য বিষয় নিয়ে তোর মনে এমন ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে। এটা থেকে বেরুতে না পারলে তোর আফসোস করতে হবে পরে।

এতো জ্ঞান না দিয়ে নিজের কাজ কর আর আমাকেও কাজ করতে দে। ঐ মেয়ের কথা মনে করিয়ে মেজাজ খারাপ করিস না।

স্যার আপনার সাথে একটা মেয়ে দেখা করতে এসেছে।

পিয়নের কথা শুনে নিহান আর রুপম দুজনেই সামনে তাকালো।

নিহান অবাক হয়ে বললো, আমার সাথে আবার কে দেখা করতে আসবে, তাও আবার অফিসে ?

রুপম দুষ্টুমি করে বললো, হয়তো তোর বউ এসেছে।

নিহান রেগে চোখ মুখ শক্ত করে বললো, ঐ মেয়ে এখানে এলে খুন করে ফেলবো একদম।

নিহান উঠে বড় বড় কদমে ওয়েটিং রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। রাগে হাত পা কাঁপছে নিহানের। কিন্তু ওয়েটিং রুমে গিয়ে যাকে দেখতে পেলো, তাতে নিহান অবাক হয়ে গেলো, সাথে রাগটাও এক ধাপ বাড়লো।

আপনি এখানে ?

নিহানের কথায় হুর দ্রুত উঠে দাঁড়ালো। অনেকটা সাহস নিয়ে এখানে এসেছিলো কিন্তু নিহানের রাগী চেহারা দেখে সব সাহস ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেলো।

আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো ?

নিহান দাঁতে দাঁত চেপে বললো, কিন্তু আমার কোনো কথা নেই আপনার সাথে।

হুর জিহ্বা দিয়ে নিজের ঠোঁট ভিজিয়ে বললো, ইসরার ব্যাপারে কিছু বলার ছিলো।

ওয়াও কি সুন্দর ব্যাপার। এক প্রতারক এসেছে আরেক প্রতারকের হয়ে সাফাই গাইতে। প্রশংসা করা উচিত আপনাদের সবার।

আপনি আমাকে প্রতারক বলতে পারেন কিন্তু ইসরা একদমই নির্দোষ।

আমি আর একটা কথাও শুনতে চাই না আপনার থেকে। এই মুহূর্তে এখান থেকে বের হয়ে না গেলে সিকিউরিটি ডেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে বাধ্য হবো। আপনাদের আচরণে নিজের ভদ্রতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পরছে আমার পক্ষে।

হুরের কোনো কথা না শুনে নিহান রেগে বের হয়ে গেলো ওয়েটিং রুম থেকে। হুর হতাশ হয়ে সোফায় বসে পড়লো। কতটা ঝুঁকি নিয়ে সে এখানে এসেছে সেটা একমাত্র সেই জানে। ইসরা যদি কোনোভাবে জানতে পারে তাহলে হুরকে কী করবে সেই ভালো জানে।

৮.
দুপুরে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে নিহান বাড়ি ফিরলো। বাড়িতে নিহানের মা, ইসরা আর মনিরা ছাড়া কেউ থাকে না এই সময়। আজও তিনজনই বাসায় আছে। ইসরা নিজের রুমে বেডে বসে কিছু চিন্তা করছিলো। বাইরে মনিরার গলা শুনে একটু নড়েচড়ে বসলো।

বাবা তুমি এই সময়ে বাসায় ?

ঐ মেয়েটা কোথায় আন্টি ?

কেডা, তোমার বউ ?

মনিরার কথায় রাগী চোখে তাকালো নিহান। নিহানের চোখ দেখে মনিরা ভয়ে ঢোক গিলে বললো, নিজের রুমেই আছে।

নিহান ইসরার রুমের দিকে এগিয়ে গেলে আর মনিরা গেলো নিহানের মাকে ডেকে আনতে। নিহান যেভাবে রেগে গেছে তাকে কোনো অঘটন না ঘটে যায়। নিহান কিছু না বলে ইসরার রুমের দরজায় সজোরে আঘাত করতে লাগলো। শব্দটা বেশি হওয়ায় ইসরা প্রথমে ভয় পেয়ে যায়। পরপর আঘাত করলে ইসরা উঠে গিয়ে দরজা খোলে দেয়৷ দরজা খুলতেই নিহানকে দেখে চমকে উঠলো। নিহান কিছু না বলে পরপর সজোরে দু’টো থাপ্পড় বসিয়ে দিলো ইসরার গালে। ইসরা কিছু বুঝে উঠার আগেই স্তব্ধ হয়ে গেলো নিহানের কাজে। আরো একটা থাপ্পড় দিতে যাবে তার আগেই কেউ হাত ধরে ফেললো।

কী করছিস নিহান, মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর ?

হ্যাঁ মা, মাথা খারাপ হয়ে গেছে আমার। এই মেয়ের জন্য আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। নরক করে দিয়েছে আমার জীবন। সবার সামনে হাসির খোরাক হতে হচ্ছে আমাকে।

কী হয়েছে সেটা বলবি তো ?

এই মেয়ে নিজের বোনকে আমার অফিসে পাঠিয়েছিলো নিজের সাফাই গাইতে। সেটা নিয়ে পুরো অফিস হাসাহাসি করছে আমার উপর। এই মেয়ের জন্য আমার বাইরে যাওয়া মুশকিল হয়ে গেছে মা। আমি আর এসব নিতে পারছি না।

তুই আগে শান্ত হ। মাথা গরম করে কোনো সমস্যার সমাধান হয় না নিহান। তুই চল আমার সাথে।

নিহানের মা নিহানকে জোর করে সাথে নিয়ে গেলে আর ইসরা দরজা ঘেঁষে ফ্লোরে বসে পড়লো। চিৎকার করে কাঁদছে ইসরা। মনিরা ইসরাকে কী বলে সান্ত্বনা দিবে বুঝতে পারছে না। মেয়েটার জন্য খারাপ লাগছে তার। মেয়েটার জীবনটাও তো নষ্ট হয়ে গেছে। নিহান ছেলে মানুষ, একটা কেনো দশটা ডিভোর্স হলেও দিব্বি বিয়ে করতে পারবে আবার। কিন্তু একটা মেয়ের জীবনে এটা যে কতবড় দাগ সেটা কেউ বুঝতে পারবে না ভুক্তভোগী ছাড়া।

মনিরা ইসরার পিঠে হাত রেখে বললো, এটা একদম ঠিক করোনি মেয়ে। কী দরকার ছিলো তোমার বোনকে নিহান বাবার কাজের জায়গায় পাঠানের।

মনিরা চলে যেতেই ইসরা উঠে দরজা বন্ধ করে দিলো। সেখানেই বসে আবার কাঁদতে লাগলো। কেনো তার ভালো করতে গিয়ে বারবার তার ক্ষতিই করে। হুর কেনো গিয়েছিলো নিহানের অফিসে ?

ইসরা কাঁদতে কাঁদতে বললো, এবার তোমার শান্তি হয়েছে তো বাবা। এতো সুখের একটা জীবন তুমি আমাকে উপহার দিয়েছো, শান্তি হয়েছে তোমার ? না না দোষ তোমার একার নয়। আমার সব দরজা তুমি বন্ধ করলেও একটা দরজা তো খোলা ছিলো। সুইসাইড করে নিলে তো তুমি আর কিছুই করতে পারতে না। এই অভিশপ্ত জীবন থেকে আমিও মুক্তি পেতাম আর তোমরাও মুক্তি পেতে তোমাদের দায় থেকে।

নিহানের মা নিহানকে বুঝিয়ে একটু শান্ত করে।

দেখ নিহান তুই যদি মানুষের কথায় মাথা গরম করিস তাহলে মানুষ তোকে আরো পেয়ে বসবে। বাঙালি জাতির কাজই হলো অন্যের বিষয় নিয়ে সমালোচনা করা। এদের ফালতু কথায় যত রিয়াক্ট করবি এরা তত তোর পেছনে লাগবে। তুই যদি পাত্তা না দিস দেখবি একা একাই থেমে গেছে।

আমি কেনো এসব সহ্য করবো তুমি বলতে পারো ? আমি কী অন্যায় করেছি যে আমাকে এসব সহ্য করতে হবে ?

সত্যি কী কিছুই করিসনি কখনো ?

নিহান অবাক হয়ে বললো, মানে ?

নিহানের মা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, নিজের অতীত হাতড়ে দেখ, ঠিক খুঁজে পাবি। হয়তো এর থেকেও কয়েকগুণ বেশি কেউ সাফার করেছে, সেটাও শুধুমাত্র তোর জন্য। মানুষ ছেড়ে দিলেও সময় ঠিক বিচার করে।

নিহানের মা আর কিছু না বলে বের হয়ে গেলো নিহানের রুম থেকে। কিন্তু নিহানকে দিয়ে গেলো একটা গাদা চিন্তা। সে ব্যস্ত ভঙ্গিতে অতীত হাঁতড়ে নিজের দোষ খুঁজতে লাগলো। কিন্তু মানুষের চোখে নিজের দোষ বড্ড কম ধরা পড়ে। তাহলে নিহান কী করে এতো সহজে নিজের করা অন্যায় খুঁজে পাবে।

রাতে সবার খাওয়া শেষে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসলো নিহানের পুরো পরিবার । বাড়ির কর্তা নিহানের বাবা সেই নির্দেশই দিয়েছেন।

আশেপাশে তাকিয়ে নিহানের বাবা বললো, মেয়েটা কোথায় ?

আমিরা বলে উঠলো, আমাদের পারিবারিক বিষয়ে তুমি ঐ মেয়েকে টানছো কেনো বড় আব্বু ?

আমিরার বাবা মেয়েকে ধমক দিয়ে বললো, আমিরা তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছো আজকাল। বড়দের মাঝে কথা বলা কোথা থেকে শিখছো ?

নিহানের বাবা বললো,থাক ওকে বকিস না, ও ছোট মানুষ। মেয়েটার বিষয়েই কিছু কথা ছিলো তাই তাকে খুঁজছি। আমি আজ এডভোকেটের সাথে কথা বলেছি। মেয়েটা এখানে তিন মাস থাকলেই হবে তার মধ্যে প্রায় একমাস চলেই গেছে। মানে আর দুমাস থেকে নিজের বাড়ি চলে যাবে। বাকিটা এডভোকেট দেখে নিবে বলেছে।

আপদ যত তাড়াতাড়ি বিদায় নেয় ততই ভালো।

আমিরার মায়ের কথা শুনে আমিরার বাবা তার দিকে কড়া চোখে তাকালেন। আমিরার মায়ের আচরণে মনে হয় ইসরা তার বড় জা এর ছেলে নয় বরং তার নিজের ছেলেকে ঠকিয়েছে। এদিকে নিজের ছেলের কোনো খবর নেই তার কাছে। পুরোটা সময় নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে নিহান।

নিহানের বাবা গম্ভীর গলায় বললো, মেয়েটাকে ডেকে নিয়ে এসো নিহানের মা।

নিহানের মা মনিরাকে ইশারা করতেই মনিরা চলে গেলো ইসরার রুমের দিকে। কিন্তু অনেক ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়াশব্দ পেলো না। তখন ভয় পেয়ে ড্রয়িংরুমে এসে বললো ইসরা দরজা খোলছে না। সবাই কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তাকালো মনিরার দিকে। নিহানের মা চরম বিরক্ত হয়ে নিজেই গেলেন ইসরার রুমের সামনে।

কিন্তু সেও যখন ব্যর্থ নিহান গিয়ে বললো, এই মেয়ে তুমি দরজা খুলবে নাকি আমি দরজা ভেঙে ফেলবো। আমাকে যদি দরজা ভাঙতে হয় তোমার কপালে দুঃখ আছে বলে দিলাম।

নিহানের এসব কথায় কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলো না। এবার সবাই একটু ভয় পেয়ে গেলো। এই মেয়ে কিছু করে বসলো না তো আবার ?

নিহান ব্যস্ত গলায় বললো, মা রুমের চাবিটা নিয়ে এসো তাড়াতাড়ি।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here