মেঘসন্ধি,পর্ব-০৪
লেখনীতে:সারা মেহেক
মৌ আজ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছে৷ গতকালই তার জ্বর নেমে গিয়েছিলো। এজন্য আজ পরীক্ষা দিতে আসবে বলে রাতেই পড়া শেষ করে সে।
আজকে ভার্সিটিতে পরীক্ষা থাকায় সে আর অহনা সকাল সকাল বেরিয়ে পরে। মাহতাব অফিসে যাওয়ার পথে তাদের দুজনকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দেয়। ক্লাসে ঢোকার আগে মৌ অহনাকে বললো,
” অহো….আমি ভাবছি, আজকে আয়ান ভাইয়াকে সবটা বলে দিবো।”
মৌ এর কথায় অহনা উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো,
” উফ, আমার মৌটুসী পাখি! অবশেষে তুই ভাইয়াকে তোর মনের কথা বলবি৷ আমি তো গত পরশু ভেবে রেখেছিলাম যে, তোকে প্রপোজ করতে বলবো। বাট, তুই তো অসুস্থ হয়ে পরলি, এজন্য আর সম্ভব হলো না। কিন্তু আজকে তা সম্ভব হবে। ”
মৌ মুচকি হেসে বললো,
” আমি আজকে মনের দিক থেকে ফুল প্রিপারেশন নিয়ে এসেছি। যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে ক্লিয়ার হওয়া ভালো। কারণ, আয়ান ভাইয়ার জন্য গত দুইরাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিলো আমার, অসুস্থ থাকার পরও। তাহলে ভাব, কতোটা চিন্তায় আছি এ নিয়ে। ”
মৌ এর কথা শুনে অহনা টিপ্পনী কেটে বললো,
” ওহ-হো…… আমার ভাই তাহলে তোর রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। ”
অহনার কথার প্রত্যুত্তরে মৌ কিছু বললো না৷ শুধু লাজুক এক হাসি দিলো। অহনা আবারো বললো,
” ভাইয়াকে তাহলে ভার্সিটিতে আসতে বলি। এখানকার একটা খালি জায়গায় বসেই কথাবার্তা বলিস নাহয়। বাসায় তো এসব সম্ভব না। আর রেস্টুরেন্টে অনেক মানুষজন থাকবে, তো সেখানে তো আরোই সম্ভব না। এর চেয়ে ভালো ভার্সিটিতেই কথা হোক।”
অহনার প্রস্তাবে প্রথম প্রথম মৌ রাজি না হলেও পরে ঠিকই রাজি হয়ে গেলো। সবকিছু সম্পূর্ণ ভেবেচিন্তে তারা দুজন ক্লাস চলে গেলো।
.
আজকে বসের কাছে বেশ কয়েকটা খোঁটা শুনেছে আয়ান৷ এজন্য প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হয়ে আছে তার। ডেস্কে বসার সাথে সাথেই সে ভেবেছিলো যাওয়ার আগে বসের হাতে রেজিগনেশন লেটার ধরিয়ে দিয়ে আসবে। রাগের মাথায় পুরো লেটার লেখাও শেষ হয়েছিলো তার। এমনকি লেটার হাতে নিয়ে সে বসের কাছে যেতেও বসেছিলো কিন্তু পথিমধ্যে অহনার ফোনকল আসায় সে বসের রুমে যেতে পারেনি।
অহনা তাকে জরুরী ভিত্তিতে দুপুর দুটার দিকে ভার্সিটি আসতে বলেছে। প্রথম প্রথম সে অহনাকে কয়েকটা ধমক দিলেও অহনা সেসবে পাত্তা দিলো না৷ বরং সে, আফসার খান অর্থাৎ নিজেদের বাবার ভয় দেখিয়ে আয়ানকে আটকে ফেলে। ফলে উপায় না থাকায় দাঁতে দাঁত চেপে অহনার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় সে।
আয়ান ডেস্কে ফিরে এসে রেসিগনেশন লেটারটা ড্রয়ারে ঢুকিয়ে লক করে রাখে। আপাতত রেসিগনেশন লেটার দেওয়ার চিন্তা মাথা হতে নেমে গিয়েছে তার। কিন্তু তার ক্রোধ নামেনি। বরং সে অফিসের বসকে মনে মনে ইচ্ছামতো বেশ কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিচ্ছে।
বসের উপর আয়ানের এ রাগ সময় সুযোগ বুঝে মাঝেমধ্যে হানা দেয়। তাছাড়া সাধারণত সে বসের উপর রেগে থাকে না বা তার বস তার উপর রেগে থাকে না। অবশ্য তাদের মধ্যে নতুন কোনো ডিল বা প্রমোশন নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। আপাতত আয়ান বেশ কিছুদিন ধরে তার বসের উপর রেগে আছে। কারণ সে প্রমোশন প্রার্থী, তবে তার বস হাতে আসা নতুন প্রজেক্টের জন্য সকলের নিকট দোয়া প্রার্থী। আয়ান অবশ্য ইনিয়েবিনিয়ে বেশ ক’বার প্রমোশনের কথা বলেছে। তবে তার বস সম্পূর্ণ কথা বোঝার পরও না বোঝার ভান করে বসে থাকে। এজন্যই তার উপর আয়ানের রাগটা বেশি।
কোনোরকমে আজকের কাজ শেষ করে আয়ান দুপুর একটার দিকে অফিস থেকে বেরিয়ে পরলো। আজ আপাতত কাজ একটু কম থাকায় সে দ্রুত বেড়িয়ে পরতে পেরেছে। তবে রাতে ল্যাপটপে বাকি কাজটুকু শেষ করতে হবে৷ এই লক্ষ্য নিয়েই সে বাইকে চড়ে বসলো।
কিছুটা ঠাণ্ডা মাথায় আয়ান বাইক চালাচ্ছে। তবে তার এ ঠাণ্ডা মস্তিষ্কের স্থায়িত্ব খুব বেশি হলো না৷ ভার্সিটির কাছাকাছি এসে ইউ টার্ন নিতে গিয়ে তার বাইক এবং একটি রিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হলো। যদিও তা ছোট পর্যায়ের তবে আয়ানের রাগের উপর এ ছোট্ট ঘটনা ঘি এর কাজ করলো। কিছুক্ষণের জন্য আটকে থাকা তার সুপ্ত রাগ এখন রিকশাওয়ালা এবং রিকশার সেই যাত্রীর উপর আগ্নেয়গিরির মতো বর্ষিত হওয়া শুরু হলো। অবশ্য রিকশাওয়ালা এবং তার যাত্রীও কোনো অংশে কম নয়। তারাও আয়ানের উপর রাহ দেখাতে শুরু করলো।
তিনজন একদম সমানতালে একে অপরের সাথে ঝগড়া করে চলছে। কারোরই থামার নাম নেই। বরং তিনজনই একে অপরের উপর দোষ চাপিয়ে দিতে ব্যস্ত। এক্ষেত্রে অবশ্য দোষ দুপক্ষেরই আছে৷ তবে তারা সেটা মানতে নারাজ। মিনিট পাঁচেকের ঝগড়া বিবাদের পর চতুর্থ পক্ষের হস্তক্ষেপে সেই ঝগড়ার সমাপ্তি ঘটে। অবশেষে আরেক দফা রাগের আগ্নেয়গিরি নিজের মধ্যে সমাহিত করে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো আয়ান।
এদিকে আজ আয়ানকে প্রপোজ করবে বলে মৌ এর মধ্যে ভয় এবং উৎকণ্ঠার সীমা নেই৷ অবশ্য এর পাশাপাশি সে খানিকটা খুশিও বটে। কারণ, এতোদিন পর সে সরাসরি আয়ানকে নিজের মনের কথা বলবে। পাশাপাশি সে অবশ্য এটাও ভাবছে যে আয়ানও তাকে ভালোবাসে। তার প্রতি আয়ানের যত্নশীল নজর, বিপদ আপাদ থেকে রক্ষা করার প্রতিটা মূহুর্তেই সে ভেবেছে আয়ানের মনে সুপ্ত কিছু অনুভূতি রয়েছে। যদিও এ বিষয়ে সে কখনই নিশ্চিত হয়নি৷ অনেকটাই আন্দাজের উপর ভিত্তি করে সে মনে মনে এসব সাজিয়েছে সে। এতোদিনের অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটিয়ে অবশেষে সে আজ আয়ানের মনের কথা জানতে চলেছে। আজ সে জানতে পারবে, আয়ান আদৌ তাকে ভালোবাসে কি না।
আয়ান, অহনার নির্ধারিত করা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। মৌ এবং অহনা এখনও সেখানে পৌঁছায়নি। গাছের নিচে বসেও প্রচণ্ড গরমে তড়তড় করে ঘামছে আয়ান। চারপাশে বাতাসের আনাগোনা তেমন নেই বললেই চলে। এজন্য প্রচণ্ড গরমে আয়ানের মেজাজ ধীরেধীরে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে।
শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ভাজ করে হাত ঘড়ির দিকে এক নজর বুলালো সে। দুইটা বেজে দশ মিনিট হয়েছে। যেখানে অহনা বরাবর দুইটার সময় আয়ানকে ভার্সিটিতে এসে পৌঁছাতে বলেছে, সেখানে অহনা নিজেই পৌঁছায়নি। ব্যাপারটা মেজাজকে গরম বানিয়ে দিতে যথেষ্ট।
অবশেষে আরো পাঁচ মিনিট পর অহনা এবং মৌ হাসিমুখে আয়ানের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। এই দুজনের ঠোঁটের কোনে এঁটে থাকা হাসিটা মোটেও সহ্য হচ্ছে না আয়ানের। গুনে গুনে পনেরো মিনিট তাকে অপেক্ষা করিয়েও কিভাবে দুজনের মেজাজ এতো ফুরফুরে থাকে ! কিভাবেই বা তাদের চোখেমুখে এতো খুশির ছটা থাকে! কিছুক্ষণ ভাবাভাবির পরও সে এর যথার্থ কারণ খুঁজে পেলো না। উপরন্তু তার রাগ আরো মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।
নিজের এ অবাধ্য রাগের উপর প্রচণ্ড বিরক্ত আয়ান। এজন্য মাঝেমাঝে সামনের মানুষটির উপর অহেতুক মেজাজ দেখিয়ে বসে সে। পরে অবশ্য এ নিয়ে আফসোসও প্রকাশ করে সে। নিজের রাগের এ অনুভূতিগুলোকে সে পুরোপুরি শেষ করে দিতে চায়। তবে সে বরাবরই এতে ব্যর্থ হয়।
অহনা এবং মৌ আয়ানের সামনে আসতেই আয়ান ঠাণ্ডা স্বরে জিজ্ঞাস করলো,
” একজন মানুষকে এই গরমে এতোক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে রাখার অর্থ কি?”
অহনা এবং মৌ কোনো জবাব দিলো না৷ বরঞ্চ মৌ ভয়ে চুপসে গেলো। এতোক্ষণ ভিতরে ভিতরে জমিয়ে রাখা আত্মবিশ্বাসটা এবার পিছনের গেট দিয়ে পালিয়ে গেলো। শুকনো একটা ঢোক গিলে সে অহনার দিকে তাকালো। অহনা চোখের ইশারায় মৌ কে ভরসা দিলো। যার অর্থ, ‘কিছুই হবে না। তুই ভাইয়াকে মনের কথা বলে দে। ‘
অহনার চোখের ইশারায় মৌ কিছুটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলো। লম্বা একটা শ্বাস টেনে নিয়ে আয়ানের দিকে তাকালো সে। তার কিছু বলে উঠার আগেই আয়ান চোখ গরম করে বললো,
” কি হলো? চুপ করে আছিস কেনো দুইজন?” এই বলে কয়েক সেকেন্ড থামবার পর সে আবারো টেনে টেনে বললো,
” যে কাজে ডেকেছেন সে কাজটা কি, তা দয়া করে বলবেন আপনারা?”
আয়ানের প্রশ্ন শোনার সাথে সাথেই অহনা মৌ এর বাহুতে হালকা ধাক্কা দিয়ে নিজের কথা বলতে বললো। অহনার ইশারায় মৌ তৎক্ষনাৎ মাথা নিচু করে চোখজোড়া খিঁচে বন্ধ করে ফেললো। মুখস্থ বিদ্যার মতো হড়বড় করে বলতে লাগলো,
” আয়ান ভাইয়া, আমি আপনাকে ভালোবাসি। এটা ডেয়ার না। একদম সত্য কথা। আমি মন থেকে এটা বলছি। আমি আপনাকে অনেক দিন যাবত ভালোবাসি। অনেক ভাবনা চিন্তা করে আজ আপনাকে কথাগুলো বললাম। এবার আপনার যা সিদ্ধান্ত হবে তাই মাথা পেতে মেনে নিবো।” এই বলে দ্রুততার সহিত ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেললো মৌ। তার হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি স্বাভাবিকের চেয়ে প্রচণ্ড তেজি গতিতে চলছে। যেনো এখনই তা বুকের খাঁচা হতে বেড়িয়ে যাবে।
এদিকে আয়ান স্তব্ধ হয়ে মৌ এর কথাগুলো শুনলো। নিজের কানকে সে কিছুতেই বিশ্বাস করাতে পারছে না যে, মৌ এসব কথা বলছে তাকে। আয়ান পুরোপুরি নিশ্চিত হতে কিছুটা অবিশ্বাসের সুরে জিজ্ঞাস করলো,
” এ মূহুর্তে আমাকে কি বললি মৌ? আরেকবার বল তো।”
মৌ আগের মতোই হড়বড় করে বলে দিলো,
” আমি আপনাকে ভালোবাসি এবং এটা কোনো নাটক নয়। সম্পূর্ণ সত্য।”
মৌ এর কথা শেষ হতেই আয়ান দু হাত উঁচিয়ে সজোরে হাতে তালি দিতে লাগলো। গলার আওয়াজ উঁচিয়ে রাগত স্বরে বললো,
” বাহ বাহ….তো এই ছিলো তোদের সো কল্ড অতি জরুরি কাজ! আই এম শকড! কি চিন্তাভাবনা করে এসব বললি আমাকে মৌ? আগেপিছে কি কিছুই ভাবিস নি ? তুই কি ভেবেছিস, তুই আমাকে প্রপোজ করলে আমিও প্রত্যুত্তরে বলবো, আমি তোকে ভালোবাসি?”
আয়ানের এহেন কথাবার্তায় মৌ মাথা তুলে অবিশ্বাসের চোখে তাকালো তার দিকে। আয়ানের এই কয়েক লাইনের কথাবার্তাই প্রমাণ করে দিলো, আয়ানের মনে তার জন্য কোনো ধরণের অনুভূতি নেই। এ ব্যাপারে আগেই সে কিছুটা অনুমান করেছিলো। তবে পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলো না সে। বরং এ কয়দিনে সে নিজের মনকে বুঝিয়েছে, আয়ানও তাকে ভালোবাসে। আগেকার সেই না বোধক ধারণাকে ইচ্ছা করেই পাশ কাটিয়ে হ্যাঁ বোধক সকল ধারণাকে নিজের মনে পুষে রেখেছিলো সে। কিন্তু তার এ সিদ্ধান্ত যে তাকে এভাবে ধাক্কা দিবে তা সে ভেবে উঠতে পারেনি।
মৌ কিছু না বলে স্থির দৃষ্টিতে আয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। আয়ান কিছুটা ধমকের সুরে বললো,
” তোর মাথা কি ঠিক আছে মৌ? তুই কি ভেবে আমাকে প্রপোজ করলি? আমি কি তোকে কখনও এমনটা ইশারা করেছি? বল আমাকে?”
মৌ কোনো জবাব দিলো না। বরং চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। এদিকে মৌ এর এই নির্বিকার ভঙ্গি দেখে আয়ানের ক্রোধ ধীরেধীরে আকাশচুম্বী হচ্ছে। সে প্রচণ্ড আক্রোশে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
” তুই এতোটা বেহায়া সেটা জানতাম না আমি। এভাবে আমাকে প্রপোজ করতে চলে এলি! আমি কি কখনো তোকে আমার কাজের মাধ্যমে বলে বুঝিয়েছি যে আমি তোকে ভালোবাসি? আমার তো এমন কিছু মনে পড়ে না৷ তারপরও তুই আমাকে প্রপোজ করলি! তুই কি ভেবেছিলি আমিও তোকে নাচতে নাচতে বলবো, ‘মৌ, আমিও তোকে ভালোবাসি? ‘ নেভার এভার। কখনোই এমনটা বলবো না আমি৷ কজ আই যাস্ট ডোন্ট লাইক ইউ৷ সবসময় মুসিবতের গোডাউন নিয়ে আমার ঘাড়ে চেপে বসিস তুই। আমার হাজার রাগ, হাজার বিরক্তির কারন তুই। আর সেই তোকেই কি না আমি ভালোবাসবো! হাসিয়ে ছাড়লি আমাকে। নিজেকে কি ভাবিস তুই হ্যাঁ? বিশ্ব সুন্দরী? এতো বছরেও যখন আমি তোকে ভালোবাসতে পারিনি, সেখানে এখন ভালোবাসা তো দূরের কথা, তোকে আমার চোখের সামনেই সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে। আর তুই কি না ভাবনাচিন্তা ছাড়াই আমাকে প্রপোজ করে বসলি!” এই বলে সে কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইলো। এরপর দু হাত মাথায় চেপে ধরে বললো,
“এ মূহুর্তে আমার মেজাজ প্রচণ্ড খারাপ হয়ে আছে। মন চাইছে, এই এতোগুলো মানুষের সামনেই তোর দু গালে দুটো চড় বসিয়ে দেই। সকাল থেকেই বসের প্যানপ্যানানি, আবার রিকশাওয়ালার অশ্রাব্য ভাষার গালাগালি আর এখন তোর এই প্রপোজাল….. সব মিলিয়ে আমার রাগটা যে এখন কোন পর্যায়ে আছে তা আন্দাজও করতে পারবি না তুই। আর বেছে বেছে আজকের দিনেই তোর প্রপোজ করতে হলো। আমার রাগটাকে বাড়ানোর কি দরকার ছিলো? ফালতু একটা মেয়ে কোথাকার।” এই বলে আর এক মূহুর্তের জন্যও আয়ান সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো না। বরং বড় বড় পা ফেলে ভার্সিটির গেট থেকে বেড়িয়ে বাইক নিয়ে চলে গেলো সে।
আশেপাশে থাকা ভার্সিটির কয়েকজন ছেলেমেয়ে আয়ানের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে সেই গাছের তলার চারপাশে ছোটখাটো একটা ভিড় জমালো। প্রথম প্রথম দু একজন ছেলেমেয়ে থাকলেও তাদেরকে এদিকে এগিয়ে আসতে দেখে তামাশা দেখার টানে অদূর হতেও কয়েকজন ছেলেমেয়ে চলে আসে। মৌ এর প্রপোজাল দেওয়া, আয়ানের রিজেকশন দিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করা, সবকিছু নিয়েই প্রত্যেকের মধ্যে কানাঘুষা চলছে। অহনা এবং মৌ প্রতিটা কথা মুখ বুজে সহ্য করে নিচ্ছে। অহনা প্রথমে কিছুতেই আয়ানের এমন ব্যবহার মেনে নিতে পারেনি। পুরোটা সময় সে হতভম্ব হয়ে আয়ানের কথাবার্তা শুনেছে। সে আয়ানের এ অতিরিক্ত রাগ সম্পর্কে জানে। তবে সেই রাগ যে আজকে এভাবে ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে সেটা তার জানা ছিলো না।
অহনা এ মূহুর্তে মৌ কে নিয়ে চিন্তিত আছে। মৌ প্রতিটা কথা কিভাবে সহ্য করেছে তারই হিসাব কষছে সে মনে মনে। সে যতদূর জানে, এতগুলো মানুষের সামনে এভাবে অপমানিত হওয়ার পর মৌ কখনোই আয়ানের সাথে কথা বলবে না৷ অবশ্য কথা বলার চিন্তাভাবনা করা হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো অর্থাৎ অসম্ভব কিছু। মৌ যে ভুলেও আয়ানের সামনে যাবে না, অহনা তা স্পষ্টভাবেই জানে। কারণ মৌ প্রচণ্ড আত্মসম্মানবোধ মেয়ে। এর আগে আয়ানের বকাঝকা তার উপর খুব একটা প্রভাব না ফেললেও, আজকে এতোগুলো মানুষের সামনে অপমানিত হওয়ার প্রভাব সামনের দিনগুলোতে খুব ভালোভাবেই পড়তে চলেছে। তবে এ মূহুর্ত মৌ এর মনে কি চলছে তা অহনা জানে না।
এদিকে মৌ নিরবে চোখের জল ফেলে মনে মনে কঠোর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো।
চলবে