মুগ্ধতায় মুগ্ধ❤️,Part_21+22

মুগ্ধতায় মুগ্ধ❤️,Part_21+22
Labiba_Islam_Roja
Part_21
.
🍁
পনেরো দিন হলো এক্সাম শুরু হয়েছে মুগ্ধর।এক্সাম কে এখন শত্রু মনে হচ্ছে মুগ্ধতার।কারণ এই এক্সামের ঠ্যালায় মুগ্ধতার সাথে কথা বলা বন্ধ হয়েছে মুগ্ধর।পুরোদিন গেস্ট রুমে থাকে।রাতের বেলায় কখন রুমে আসে সেটাও জানেনা মুগ্ধতা।মাঝেমধ্যে শেষ রাতে ঘুম ভাঙ্গলে মুগ্ধ কে ওর কাছে শুয়ে থাকতে দেখে এই যা।কোনোকথা বলারও স্কোপ নেই।কিছু বলতে গেলেই বলে……

~~~মুগ্ধতা এখন আমাকে প্রচুর পড়তে হবে।তোমার সাথে পরে কথা বলছি।

এই পনেরো দিনে পরে সময়টা আর আসে নি।যার কারণে খুব রাগ হয়েছে ওর।লেখাপড়া উনি একাই করছেন নাকি।যে দিন দুনিয়া ভুলে যেতে হবে।নাকি ইচ্ছে করে আমাকে এড়িয়ে চলার জন্য এসব করছেন উনি।বেশিরভাগই মনে হয় মুগ্ধতা কে এড়িয়ে চলার জন্য এই ব্যস্ততা ওর।নইলে যেকোনো ফাঁক ফোকড়েও ওর সাথে কথা বলতে পারতো।কিন্তু সেটাও করছে না।তার মানে মুগ্ধই চায় না ওর সাথে কথা বলতে।ইগনোর করে প্রচন্ড রকমের ইগনোর।যা সহ্য করতে পারছে না মুগ্ধতা।ওর এই এড়িয়ে চলা,দূরে দূরে থাকা মারাত্মক কষ্ট দেয় ওকে।তবুও মুখ ফোঁটে মুগ্ধ কে কিছু বলে না।
.
প্রায় সন্ধ্যা!সূর্য ডুবে যাচ্ছে।চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে পড়ন্ত বিকালের সোনালী সূর্যের আলো।দেখতে বেশ লাগছে।মুগ্ধ এখনও বাসায় ফিরেনি।ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা নেমে পরবে।আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা।তিথির ডাক শুনে পেছন ফিরে তাকালো। তিথি বেশ কয়েকদিন ধরে এই বাড়িতেই থাকছে।মূলত মুগ্ধতার জন্যইই এই বাড়িতে থাকছে।

~~~কি রে এখানে এভাবে জিম মেরে বসে আছিস কেন….?মন খারাপ বুঝি….?

তিথির দিকে ঘুরে দুহাত ভাঁজ করে মৃদু হেঁসে বললো মুগ্ধতা…..

_____নাহ্!মন খারাপ হতে যাবে কেন…?এমনি ভালো লাগছে না তাই।

~~~ভাইয়ার সাথে তোর মান অভিমান চলছে তাই না রে…..?

তিথির স্পষ্ট ভঙ্গিমার কথা শুনে কিছুটা হকচকিয়ে উঠলো মুগ্ধতা।ভ্রু জোড়া কুঁচকে হালকা নিশ্বাস ফেলে বললো……

_____মান অভিমান সেটা আবার কি!আচ্ছা উনার সাথে কি আমার মান অভিমানের সম্পর্ক নাকি….?
.
মুগ্ধতার এমন প্রশ্ন শুনে বিরক্তি প্রকাশ করলো তিথি।বিয়ের প্রায় ছ’মাস হতে চললো।আর এখন কিনা সে বলছে তাদের মধ্যে মান অভিমানের সম্পর্ক নাকি…..আজব!

~~~নয় বলছিস!স্বামী স্ত্রীয়ের মধ্যে মান অভিমানের সম্পর্ক থাকবে না তো কার সাথে থাকবে।এতগুলো মাস সংসার করার পরও এমন গাধী মার্কা কথা কি করে বলছিস তুই।

_____সত্যিই কি গাধী মার্কা কথা বলছি আমি!কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ থাকা সম্পর্ক কে কি আদৌও স্বামী স্ত্রী বলা যায়।যেখানে দু’জনের প্রতি দু’জনের ভালোবাসাই নাই সেখানে….

~~~এবার থাম বইন!এত লেকচার দিস না।হ্যাঁ তোর হয়তো বিয়ের সময় তোর ভাইয়ার প্রতি কোনো ফিলিংস ছিলো না।কিন্তু ভাইয়া সে তো তোকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।তুই যাতে স্বাভাবিক হয়ে উনাকে মেনে নিতে পারিস সেজন্য অনেক সময় দিয়েছে তোকে কিন্তু তুই!তুই কি করছিস মুগ্ধতা।তুই কি ভাইয়াকে ঠকাচ্ছিস না।শুধু কি ভাইয়াকে নিজেকে ঠকাচ্ছিস না।যে ছেলেটা তোকে সকলের সামনে এত ছোট এত অপমান করলো সেই ছেলে টাকে এখনও ভুলতে পারিস নি।আর সেই থার্ড ক্লাস হীন মনের মানুষের জন্য কাকে কষ্ট দিচ্ছিস ভাইয়াকে!ছিঃমুগ্ধতা এটা তোর কাছ থেকে এসপেক্ট করিনি আমি।
.
টুপটাপ পানি পরছে চোখ থেকে।মেয়েটার একটা কথাও ভুল নয়।সত্যি আমাকে অনেক ভালোবাসেন উনি।সেটা আমিও জানি।যেখানে সবাই নিজের স্বার্থে অন্যকে ব্যবহার করে সেখানে একমাএ উনিই নিস্বার্থভাবে ভালোবেসে যাচ্ছেন আমায়।আর আমি কিনা ওই আদনানে আটকে আছি।নাহ!আর কাউকে ঠকাবো না আমি।উনাকে তো নয়ই।চোখের পানি মুছে তিথির দিকে তাকালাম আমি।মেয়েটা উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে……

______আচ্ছা আমি সত্যি কি উনাকে ঠকাচ্ছি….?

মুগ্ধতার কথা শুনে মুখটা চুপসে গেলো তিথির।তবুও স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় বললো……

~~~তোর মনে হয় না!আমি জানি আজকে যেই কথাগুলো বলেছি তাতে তুই খুব কষ্ট পেয়েছিস।কিন্তু মুগ্ধতা তুই কি জানিস ভাইয়ার প্রতি তোর এই অবহেলা গুলো কতটা কষ্ট দিচ্ছে ভাইয়াকে।এই যে ভাইয়া রাতের পর রাত গেস্ট রুমে কাটায় কেন কাটায়….?একবারও ভেবে দেখেছিস?

_____তিথির কথাগুলো যে ভুল নয় সেটা আমিও জানি।কারণ উনার বিহেভিয়ারে আমারও মনে হয় আমার প্রতি কোনো চাপা কষ্টের জন্যই আমার সাথে এমন করেছেন উনি।নইলে কিছুতেই এমন করতেন না।
.
.
বিছানায় পা দুলিয়ে আচার খাচ্ছে মুগ্ধতা।তিথি আর মোহনা পাশে বসেই খিলখিল করে হাসছে।দু’জনকে আচমকা হাসতে দেখে কপাল কুঁচকে তাকালো মুগ্ধতা।মুগ্ধতা কে তাকাতে দেখে ওদের হাসির শব্দ যেন আরো বেড়ে গেলো।কিন্তু এদের হাসির কারণ খুঁজে পাচ্ছে না।তাই প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে…..

~~~কি হলো তোমরা এভাবে পাগলের মতো হাসছো কেন….?

______হাসি থামিয়ে বললো তিথি……হাসবো না।পাশ থেকে মোহনা বললো….এত খুশির খবরে যদি না হাসি তাহলে হাসবো কিসে!

দুজনের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো মুগ্ধতা।আরেক চামচ আচার খেতে খেতে বললো……

~~~কি সেই সুখবর আমাকেও বলো!আমিও শুনি আর তোমার হাসিতে নিজেকে সামিল করি।

______মোহনা হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খেতে খেতে বললো…..কাহিনীটা এমন “যার বিয়া তার খবর নাই।পাড়া পড়শীর ঘুম নাই”! মানে বাচ্চার হবে অথচ বাচ্চার মা’য়ের হুশ নাই।এদিকে আমরা হেদিয়ে মরি বলে দুজনে উচ্চ সুরে হাসতে লাগলো।দুজনের কথা বোধগম্য হলো না মুগ্ধতার তাই বললো…

~~~~আচ্ছা এত হেয়ালি না করে একটু বুঝিয়ে তো বলা যায় নাকি।পাশ থেকে তিথি বললো…..

_____একচুয়েলি মুগ্ধতা খুব তাড়াতাড়ি আমরা ফুফু হচ্ছি।এখন আবার এটা বলিস না তুই জানিস না।

~\~~তার মানে আমি জানি বলছিস….?

_____হুম!কারণ তোরই তো বাচ্চা হবে।

দুজনের কথা শুনে হা হয়ে গেলাম আমি।এই দুজন বলে কি!আমার বাচ্চা!কথাটা শুনে হাত আপনাআপনি চলে গেলো পেটে।কি যা তা বলছিস… ..?

~~~~আরে বাবা এখনই হবে বলছি না।তুই এখন ভাইয়াকে ভালোবাসিস আর ভাইয়া তো তোকে আগে থেকেই ভালোবাসতো।তাহলে এখন তো আর তোদের মধ্যে কোনো প্রবলেম নেই।খুব তাড়াতাড়ি সব ঠিক হয়ে যাবে।এরপর আমাদের ফুপ্পি হতে আর ক’দিন লাগবে তুইই বল।

_____আমি উনাকে ভালোবাসি….?কথাটা শুনেই চমকে উঠলাম আমি!কই আমি তো জানিনা।

~~~মামা!এত ভাব নিও না।তলে তলে ট্যাম্পু ঠিকই চালাও খালি আমাগো কও না।ভালো না বাসলে ভাইয়া বাসায় না থাকলে এত মনমরা থাকো ক্যারে।পরীক্ষার ঠ্যালায় ভাইয়ার সাথে ঠিকমতো কথা বলতে পারো না বলে দুঃখোর অন্ত নাই।কথা বলার লাইগ্গা আশপাশ করো।বুঝি না বুঝছো।বুঝি বুঝি সবই বুঝি।ওই মোহনা চল তো যাই আমার আবার এইসব ভালো লাগে না।
.
.
ঘড়ির কাঁটা প্রায় তিনটা ছুঁইছুঁই।পুরো বাসা জুড়ে নিস্তব্ধ নীরবতা।।মুগ্ধ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আধঘন্টা মতন আগে হবে ওই রুম থেকে ফিরেছে।এসেই ক্লান্ত শরীরে শুয়ে পড়েছে বিছানায়। কিছুক্ষণেই ঘুমিয়েও পরেছে ।মুগ্ধতার চোখে আজ ঘুম নেই।তিথির বলা কথাগুলো কানে বাজছে বার বার।মুগ্ধ কে ভালোবাসে মুগ্ধতা।সত্যিই কি তাই।হুম হতেই পারে।কারণ মুগ্ধ কে ঘিরে অদ্ভুত সব ফিলিংস হয় ওর।যেটা আগে কখনও কারো প্রতি কাজ করে নি।এমনকি আদনানের প্রতিও না।মুগ্ধ কে কিছুক্ষণ না দেখলে কেমন অস্থির লাগে।ওকে দেখলে শুধু চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।ইচ্ছে করে ওর দিকে তাকিয়ে কতগুলো বছর কাটিয়ে দিতে।আচ্ছা তবে কি আদনানের প্রতি ভালোবাসা ছিলো না।জাস্ট ভালো লাগা।আর মুগ্ধর প্রতি যেটা সেটাই কি তবে ভালোবাসা….!!
.
.
মুগ্ধর ঘুমন্ত মুখের দিকে পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা!পলকই ফেলছে না।খুব কাছ থেকে দেখছে মুগ্ধ কে।মুগ্ধ যতটা না কিউট ঘুমের মধ্যে তার চেয়েও হাজারগুণ কিউট লাগছে।এক অদ্ভুত মায়া গ্রাস করেছে তাঁকে। মায়াবী মুখ দেখে থমকে গেছে।নেশায় মও হয়েছে ওই দুটো চোখ।কপাল থাকা চুলগুলো হাওয়ায় নড়েচড়ে উঠছে।সেই চুলগুলোকে নিয়ে অদ্ভুত খেলায় মেতেছে মুগ্ধতা।মুগ্ধর চুলগুলো বারবার এলোমেলো করে আবারও নিজ হাতে ঠিক করে দিয়ে চলেছে।কারো স্পর্শ পেয়ে বারবার নড়েচড়ে উঠছে।সেটা দেখে খিলখিল করে হাসছে মুগ্ধতা।
.
.
সকাল ন’টা।আজ ফ্রাইডে।মুগ্ধর পরীক্ষা নাই।তাই কেউ ডাকছে না ওকে।যাক একটু রেস্ট নিক।অন্যদিন হলে ভোরেই উঠে পরতো মুগ্ধতা।কিন্তু আজ ভোরের দিকে ঘুমানোও এখনও উঠেনি।জানালার পর্দা ভেদ করে সকালে কড়া সোনালি আলোগুলো চোখে বার বার ঝিলিক দিচ্ছে মুগ্ধর।ঘুমের ঘোরে হাত দ্বারা বারবার আলোগুলোকে প্রতিহত করার চেষ্টায় আছে কিন্তু সরাতে ব্যর্থ সে।তাই বাধ্য হয়ে ঘুমু ঘুমু চোখে তাকালো।একরাশ বিরক্তি নিয়ে বিছানা থেকে উঠতে যাবে তখনই বুকে ভারী কিছু অনুভব হওয়ায় বুকের দিকে তাকালো।মুগ্ধতা দুহাতে ওকে জড়িয়ে বাচ্চা দের মতো গুটি-শুটি মেরে শুয়ে আছে।ওকে এভাবে দেখে কিছুটা হাসলো মুগ্ধ। ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো…..

~~~এই যে মুটকি এইবার এই শুটকি টাকে রেহাই দাও।সারারাতে তো চ্যাপ্টা বানিয়ে ফেলছো।এইবার এই অধমকে ক্ষমা করো।

মুগ্ধর ডাকে কিছুটা নড়েচড়ে আবারও ওকে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো মুগ্ধতা।ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বললো…..

______মুটকি হন বা শুটকি!এই অধমের কোনো ক্ষমা নেই।সারাজীবন এই সাজা ভোগ করতে হবে তাঁকে।তাতে আপনি চ্যাপ্টা হন আর যাই হোন না কেন….?এই মুটকির অত্যাচার সইতেই হবে।

মুগ্ধতার কথায় ক্ষীণ হাসলো সে।মেয়েটা কেমন করে যেন কথা বলছে আজ।কই আগে তো কখনও এভাবে কথা বলে নি।বিরবির করে বললো…..

~~~এই শাস্তি তো সারাজীবন পেতে চাই আমি।আমি তো চাই সারাজীবন এই শাস্তি টা আমার থাক কিন্তু তুমি!তুমি কি তা চাও….?

_____আহ্!এভাবে বিরবির করে কথা বলবেন না তো!কানে বড্ড লাগে।একটু ঘুমাতে দিন না।সারারাত ঘুমাই নি।ঘুমোতে চাই।
.
মুগ্ধতার করুন কন্ঠ শুনে ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকালো মুগ্ধ।আহ্!কি আকুল কন্ঠ তাঁর।আচ্ছা সারারাত ঘুমোয় নি কেন…?

~~~এত কথা বলতে পারবো না।আমায় ডিস্টার্ব করবেন না।আমি এখন ঘুমাবো।

ঠিক আছে বলে মুগ্ধতা কে বিছামায় শুইয়ে দিতে যাবে তখনই ওকে ঝাপটে ধরে রাগী গলায় বললো……

_____আরেহ!আমাকে বিছানায় রাখছেন কেন….?আমাকে শান্তিতে ঘুমোতে দেখলে আপনার ভালো লাগে না তাই না।

মুগ্ধতার কথায় চোখ চড়কগাছ হয়ে গেলো মুগ্ধর।এই মেয়ে কি বলে!

~~~তুমি যাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারো সেই ব্যবস্থাই করছি।বিছানায় কমফোর্টেবল ফিল করবে।

_____চুপ একদম চুপ!আমি বলেছি আমি বিছানায় কমফোর্টেবল ফিল করবো।খবরদার আমাকে বিছানায় রাখতে যাবেন না।আমি এই বুকেই সব থেকে বেশি কমফোর্টেবল ফিল করি।এটাই আমার কমফোর্ট জোন।আরেকবার যদি আমাকে নামাতে যান তাহলে বলেই শক্ত করে মুগ্ধ কে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

মুগ্ধতার কথা শুনে থম মেরে শুয়ে আছে মুগ্ধ।কি বললো!ও আমার বুকেই বেশি কমফোর্টেবল।তাহলে কি আমার মুগ্ধতা এবার মেনে নিলো আমায়।নাকি এটা কোনো স্বপ্ন যেটা ঘুম ভাঙ্গলেই ভেঙ্গে যাবে।আবার এটাও হতে পারে ঘুমের ঘোরে আদনান ভেবে।কথাটা ভেবেই ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো তাঁর।সত্যি ভালোবাসার মানুষ গুলো বড় অদ্ভুত যাকে তাঁরা চায়।তাঁকে পায় না।আর যে চায় না তাঁকে ঘিরেই বাঁচতে চায়।কথাগুলো ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো মুগ্ধ।কিছুক্ষণেই ঘুমিয়ে পড়েছে মুগ্ধতা।নিশ্বাস ভারী হয়ে এসেছে ওর।ভালোবাসার মানুষগুলোর ভালোবাসা না পাওয়ার কি জ্বালা সেটা একমাএ তাঁরাই বুঝে যাঁরা ভালোবাসা পায় নি…..!!
.
.
চলবে…….

মুগ্ধতায়_মুগ্ধ❤️
Labiba_Islam_Roja
Part_22
.
🍁
সকালে ঘুম থেকে উঠে মুগ্ধর জন্য কফি হাতে নিয়ে এলো মুগ্ধতা।মুগ্ধর জামা কাপড় বের করে বিছানায় দিয়ে গেছে।ওয়াশরুম থেকে এখনও বের হয়নি মুগ্ধ।সেন্টার টেবিলে কফির কাপ রেখে বিছানায় বসে মুগ্ধর জামা কাপড় নাড়াচাড়া করতে লাগলো।হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ পেয়ে মুগ্ধর দিকে তাকালো।শাওয়ার নিয়ে টাওয়াল জড়িয়ে বেড়িয়ে এলো মুগ্ধ।মুগ্ধতা কে বিছানায় দেখে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করতে লাগলো মুগ্ধ।মুগ্ধতার সেদিকে কোনো হেলদোলই নেই।তাই অস্বস্তি নিয়েই বললো……

~~~তুমি এই অসময়ে এখানে কি করছো…?

মুখ ভেংচি কেটে বললো……

_______নিজের রুমে থাকার জন্য আবার সময় অসময়ের কি আছে।আমার রুমে আমার যখন ইচ্ছে ঢুকবো যখন ইচ্ছে বের হবো।

এক নাগারে কথাগুলো বলে গেলো মুগ্ধতা।ওর কথা শুনে খানিকটা বিরক্তি প্রকাশ করলো মুগ্ধ……

~~~আজকাল বড্ড বেশি কথা বলো তুমি।আচ্ছা একটা কথার জবাবে দশটা কথা না বললে কি হয় না।

________না হয় না!যদি দশটা কথা না বলি তাহলে ঘটনাটা বুঝবেন কি করে।আমিও বলতে চাই না কিন্তু আপনাকে ভালোভাবে বুঝানোর জন্য বলতে বাধ্য হই।

~~~উফফ!এবার থামবে। তখন থেকে ফটরফটর করেই যাচ্ছ।চুপ করো তো।

______ওকে!আর ফটরফটর করবো না।ওই যে বিছানায় ইশারা করে….ওখানে আপনার জামা কাপড় রাখা আছে যান ওয়াশরুম থেকে পরে আসেন।

মুগ্ধতার কথা শুনে চোখ বড় বড় তাকালো মুগ্ধ।আজ মেয়েটার হলোটা কি!কই আগে তো কখনও এমন করে নি।তাহলে আজকে কি হলো।কৌতূহল ভরা চোখে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতার দিকে।

~~~তোমার শরীর ঠিক আছে মুগ্ধতা।না মানে জ্বর টর আসে নি তো।

মুগ্ধর কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালো মুগ্ধতা।দু কদম এগিয়ে মুগ্ধর মুখ বরাবর দাঁড়ালো।মাথা এগিয়ে দিয়ে বললো……

______আমার কথা আপনার বিশ্বাস হবে কি না জানিনা।তাই আপনিই দেখে নিন।

মুগ্ধতার কপোলে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর নেই ওর।তাহলে এমন ভাবে কথা বলছে কেন…?আচ্ছা নেশা জাতীয় কিছু সেবন করে নি তো।ওর ভাবনার মাঝেই বলে উঠলো……

~~~~এত ভেবে লাভ নাই!না তো আমি অসুস্থ আর না তো ভুলভাল কিছু খেয়েছি।এইবার ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে আসেন।

মুগ্ধতার কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো মুগ্ধ।বাংলার পাঁচের মতো মুখ করে সাতপাঁচ না ভেবে জামা কাপড় নিয়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে।মুগ্ধতা ওর অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।মুখটা দেখার মতো হয়েছে উনার।
.
.
ড্রয়িংরুমে বসে ফোন ঘাঁটছে তিথি।তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো।আশেপাশে কেউ নেই।সবাই যে যার রুমে আছে।তাই বাধ্য হয়ে বিরক্তি নিয়ে উঠে দরজা খুলে দিলো।দরজা খুলে কিছুটা অবাক হলো তিথি।কারণ দরজায় দাঁড়িয়ে আছে রাতুল।তিথিকে দেখেই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।হয়তো এই সময়ে তিথিকে আশা করে নি।তিথি দরজা খুলে ভিতরে চলে আসলো।রাতুলও পেছন পেছন ভিতরে ঢুকলো।তখনই তিথি বললো….

______ভাইয়া তুমি বসো।আমি মুগ্ধ ভাইয়াকে ডেকে দিচ্ছি।

~~~নাহ্ থাক!ওদের ডিস্টার্ব করো না!একটু পর নিজেই আসবে।কারণ জানে আমি এইসময়ে আসবো।তার চেয়ে তুমি এখানে বসো।তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

রাতুলের হাবভাব কিছুদিন যাবত ভালো টেকছে না তিথির।কেমন একটা করে যেন কথা বলে ছেলেটা।ওর কথাবার্তা কেমন রহস্যময় মনে হয়।কোনোকথা না বলে চুপচাপ বসে পরলো তিথি।রাতুলের কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে।আজ তিথিকে মনের কথাটা বলার জন্যই এই বাড়িতে আসা।কারণ এক্সামের পরপরই লন্ডন পাড়ি জমাবে ও।দুইবছর সেখানে থেকে তবেই ফিরবে।তাই যদি তিথি রাজি থাকে তাহলে ওকে বিয়ে করে সাথে নিয়ে যাবে নইলে অপেক্ষা করতে পারলে এনগেজমেন্ট করে চলে যাবে।কারণ দুইবছর পর যদি ফিরে এসে আর না পায়।সেই আশংকায় ভুগছে সে।শুকনো কয়েকটা ডুক গিলে আমতা আমতা করে বললো রাতুল…..

_______তোমাকে আমি কিছু কথা বলতে চাই তিথি।অনেকদিন ধরে বলবো বলবো বলে আর বলা হয়ে উঠে নি।কিন্তু আজ বুঝতে পারছি যেভাবেই হোক কথাগুলো তোমাকে বলতেই হবে আমায়।খুব আর্জেন্ট!

রাতুলের কথায় কপাল কুঁচকে তাকালো তিথি।কি বলতে চাইছে রাতুল ভাইয়া।আর আজই বলা জরুরি।

~~~~জ্বী ভাইয়া বলো কি কথা!তাছাড়া আমার সাথে তোমার কিই বা জরুরি কথা থাকতে পারে।

কিছুটা ইতস্ততবোধ করে বললো রাতুল…..

____আছে তিথি অনেক কথা বলার আছে আমার।কিন্তু কিভাবে বলবো বা শুরু করবো ঠিক বুঝতে পারছি না।তুমিই বা কথাগুলো কিভাবে নেবে সেটাও বুঝতে পারছি না।

কি এমন কথা যার জন্য এতটা ভাবছে রাতুল ভাইয়া।কই কখনও তো আমার সাথে এতটা সিরিয়াসলি কথা বলে নি তাহলে আজ কি হলো।

~~~আরে ভাইয়া এত হেজিটেইট না করে বলেই ফেলুন না কি বলতে চান।

_______আসলে তিথি আমি দুই বছরের জন্য লন্ডন চলে যাচ্ছি।আগামী দুই বছর আমি ওখানেই থাকবো।

রাতুলের কথা শুনে মৃদু হাসলো তিথি।ভাইয়া লন্ডন যাবে।সেটা তো খুবই ভালো।

~~~তা তো ভালো কথা ভাইয়া।তা এটা আমাকে এভাবে বলার কি আছে সেটাই বুঝতে পারছি না আমি।

______দরকার আছে তিথি!আচ্ছা তিথি তুমি কি সত্যি কিছু বুঝতে পারছো না।আমি তোমাকে কিসের জন্য কেন এসব বলছি।

ভাইয়ার কথা শুনে চোখ পিটপিট করে তাকালাম আমি।আরে আমি কি করে বুঝবো কি জন্য আমায় বলছেন।

~~~কি জন্য মানে!এটা তে ভালো কথা।তা এমনিতেই বলতে পারেন এখানে সত্যি মিথ্যা কারণ অকারণের কি আছে।

এই মেয়ে এত বোকা দেখে তো মনে হয় না।সকলের ব্যাপারে পাক্কা।খালি আমার ব্যাপারেই এত উদাসীন কেন…?চব্বিশ গজ দূরে দাঁড়িয়ে ও বলতে পারে কার প্রতি কার কি নজর আর আমার থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে বসে বুঝতে পারছে না স্ট্রেঞ্জ!ঘেমে একাকার রাতুল।খুব নার্ভাস হয়ে পরেছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না।

_____আরে ভাইয়া আপনি ঘামছেন কেন….?আর এতটা নার্ভাসই বা হচ্ছেন কেন….?

~~~আআসলে তিথি আমি……

_____আপনি……

~~~~আমি ততোমাকে…..ভা….

আসলে তিথি রাতুল তোকে ভালোবাসে।আর সেটা বিগত তিন মাস ধরে তোকে বুঝাতে গিয়েও বুঝাতে অক্ষম।আর তুই এমনই এক গাধী যে এতদিন ধরে এই কথাটাও বুঝতে পারছিস না।আর এই গাধাটাও এতদিন ধরে বলতে পারছে না।আধঘন্টা ধরে আমি আর মুগ্ধতা ওখানে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু আআমি ততো….আর বের হচ্ছে না।তাই বাধ্য হয়ে এখন আমাকেই বলতে হলো।

মুগ্ধর কথা শুনে হা হয়ে বসে আছে দুজনে।কারো মুখে কোনোকথা নেই।রাতুলের মাথায় একটাই কথা ঘুরছে মুগ্ধ কি করে জানলো।এই ব্যাপারে একমাএ স্নেহা জানে তাও সিওর হয়ে কিছু বলতে পারবে না।তবে কি স্নেহা।রাতুল তিথিকে ভালোবাসে এটা ভাবনারও বাহিরে ছিলো মুগ্ধতার।মুগ্ধর মুখে কথাটা শুনে থম মেরে আছে।কিছুক্ষণ পরই মাথা নিচু করে কিছু না বলে চুপচাপ রুমে চলে গেলো তিথি।অন্যদিকে হতাশ হয়ে বসে রইলো রাতুল।তবে কি তিথি একসেপ্ট করলো তাঁকে।দূরে চলে গেলো।
.
.
রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা।সকলের রাতের খাবার খাওয়া শেষ।মুগ্ধ খেয়েই ও ঘরে চলে গেছে।মুগ্ধতা অনেক্ক্ষণ ওয়েট করে ও ঘরে ছুটলো।আজ খুব করে কথা শুনাবে মুগ্ধ কে।এতদিন কিছু বলেনি বলে সাপের পাঁচ-পা দেখেছে।আজ বুঝবে বউ কি…?বউ কাকে বলে….?তাকে অবহেলা করার শাস্তি কি….?
.
মুগ্ধর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।মুগ্ধর সেদিকে কোনো হুশই নেই।সে বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে বসে আছে।অনেক্ক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও তাঁর নজরে আসতে পারলো না।তাই রেগে মেগে বললো……

~~~এই যে কি এত বই নিয়ে পরে আছেন।আধ ঘন্টা ধরে আপনার কফি হাতে দাঁড়িয়ে আছি সেই হুশ কি আছে আপনার….?

মুগ্ধতার চিৎকার শুনে বই থেকে চোখ তুলে ওর দিকে তাকালো।মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো…..

______কিছু কি হয়েছে…?আর তুমি এত রাতে না ঘুমিয়ে এখানে কফি নিয়ে এসেছো কেন…?

~~~আপনি রাত জেগে পড়াশোনা করছেন তাই ভাবলাম এক কাপ কফি হলে মন্দ হবে না।তাই খাওয়ার জন্য নিয়ে এসেছি বুঝেছেন।
.
______হুম বুঝালাম!তা এত রেগে যাচ্ছ কেন….?

~~~~রাগছি কি আর সাধে।আচ্ছা আপনি এই রুমে এসে পড়াশোনা করেন কেন….?ওই রুমে থাকলে কি সমস্যা।

মুগ্ধতার কথায় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মুগ্ধ।

_____তোমাকে ডিস্টার্ব দিতে চাই না তাই।আমি ওখানে থাকলে তোমার ঘুম হবে না।তাই ভাবলাম দূরে থাকাই বেটার।তাছাড়া আমার থাকা না থাকা কোনোটাই তোমার উপর এফেক্ট ফেলে না।না থাকলে বরং ভালোই হয়।নিজের মতো থাকতে পারো।

মুগ্ধর কথায় ভেতরে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হলো মুগ্ধতার।মুগ্ধতার কথা ভেবেই ও ঘর ছেড়েছে মুগ্ধ।নিজের অজান্তেই কত কষ্ট দিয়ে ফেলেছে ওকে।আর কোনো কষ্ট দেবে না।এবার সব ঠিক হয়ে যাবে।সব ঠিক করে দেবে মুগ্ধতা।নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বললো……

~~~আমার কোনো সমস্যা হবে না।আপনি চলুন আজ থেকে ওখানেই থাকবেন।

_____নাহ্ থাক!তুমি আমার কথা ভেবে এমন বলছো।আমার কোনো সমস্যা হয় না।আর মাএ তো দুইটা এক্সাম ঠিক চলে যাবে।

আর কিছু না বলে মুগ্ধর পাশের চেয়ার টেনে ধুম করে বসে পরলো মুগ্ধতা।যদি ঘুমিয়ে পরে তাহলে যেন যাওয়ার সময় তাঁকে এখান থেকে নিয়ে যায়। বলেই টেবিলে মাথা রেখে চোখ বুজে রইলো।মুগ্ধতার এহেন আচরণে হতবাক মুগ্ধ।মেয়েটা পাগল হয়ে গেলো নাকি!আজ ক’দিন ধরে কি করছে নিজেই বোধহয় বুঝতে পারছে না।ওর আচরণে আমূল-পরিবর্তন এসেছে।ওর প্রতি কেয়ার,চিন্তা ভাবনা কেমন সন্দেহজনক।আচ্ছা ও কেন এমন করছে।মনের টানে নাকি দায়িত্ববোধ থেকে….!!
.
.
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here