মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥️,Part_08+09
Labiba_Islam_Roja
Part_08
.
🍁
খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই।মুগ্ধতা পাশেই দাঁড়িয়ে আছে খাবার সার্ভ করছে।সবাইকে দেওয়া হলে খেতে বসবে।আফিফের বাবা খেতে খেতে বললেন……
.
_____পরশু আফিফের জন্য সমন্ধ দেখতে যাবো।আফিফের মা তুমি যাবে কি…?
.
বাবার কথায় বিস্মিত হলো আফিফ।খাবার মুখে তুলতে গিয়েও আটকে গেলো।তাকে না জানিয়ে মেয়ে দেখার ডেইট ফিক্সড করে ফেললো ভাবতে পারছে না। এতদিন মুখে বললেও আফিফ না করায় কখনও বিয়ে নিয়ে আগান নি উনি কিন্তু আজ ডিরেক্ট মেয়ে দেখার ডেইট ঠিক।আফিফের মা হাসোজ্জল মুখ নিয়ে বললেন……
.
____অবশ্যই যাবো!আমার বড় ছেলের বউ দেখতে আমি যাবো না তাই কি হয়।অন্যান্য আপু এক্সাইটেড হয়ে বললো…..
.
______ওয়াও ভাইয়ার বিয়ে আমিও যাবো।ওদের কথার মাঝেই বললো আফিফ…..
.
______বাবা তুমি আমাকে না জানিয়ে কনে দেখার তারিখ ঠিক করে ফেললে।আমাকে একবারও জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না….?
.
ছেলের কথায় বিরক্তি প্রকাশ করলেন উনি।কারণ এই ছ’মাসে হাজার বার বিয়ের কথা বলেছেন।আফিফ এখন না!এখন না বলে এড়িয়ে গেছে।তাই বাধ্য হয়ে এবার ওর মতামত না নিয়েই পাএী দেখার জন্য যাচ্ছেন উনি।ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললেন…….
.
_____না করলাম না!কারণ তুমি এখন বিয়ে করতে চাও না।কিন্তু আমি পুএবধূর মুখ দেখতে চাই।ক’দিন বাঁচব নাতি নাতনির মুখ দেখতে চাই।পরশু কনে দেখতে যাচ্ছি ইচ্ছে হলে যেতে পারো।
.
বাবার এমন সাফ সাফ কথায় অবাক আফিফ।কিন্তু বিয়ে এখন কি করে করবে।সে তো মনে মনে কাউকে চায়।যাকে নিয়ে বাকীটা জীবন কাটাতে চায়।কিন্তু এটা কি করে বাবাকে বলবে ভেবে পাচ্ছে না।হালকা খাবার খেয়ে উঠে দাঁড়ালো আফিফ।পাশ থেকে মুগ্ধতা বললো…..
.
_____ভাইয়া আপনি না খেয়ে চলে যাচ্ছ কেন…?খেয়ে যাও।
.
মুগ্ধতার কথা শোনে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন আফিফের বাবা।কড়া কন্ঠে বললেন…..
.
____তেজ দেখানো হচ্ছে আমায়।যতই তেজ দেখাও না কেন এবার তোমার বিয়ে দিয়েই ছাড়বো আমি।বাবার কথার পিঠে কিছু বললো না আফিফ।রাগ দেখিয়ে হনহন করে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো।
.
.
♥️
সেদিনের পর থেকে মুগ্ধর সাথে কথা বলে না মুগ্ধতা।এই পর্যন্ত অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করেছে মুগ্ধ কিন্তু মুগ্ধতা সবসময় এড়িয়ে গেছে।তাঁর ব্যবহার পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছে সে কথা বলতে চায় না মুগ্ধর সাথে।মুগ্ধ হতাশ হয়ে বারবার ফিরে গেছে।একটা ভুল অনেকটা দূরে পাঠিয়ে দিলো মুগ্ধ কে।
.
মুগ্ধতার সামনে কান ধরে মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে স্নেহা,হৃদয় আর রিদি।রিদিকে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চরম অবাক মুগ্ধতা।ম্যাম এভাবে কান ধরে আছে কেন বুঝতে পারছে না মুগ্ধতা।তাও আবার মুগ্ধর ফ্রেন্ডদের সাথে।চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা।অন্যদিকে এদের এই অবস্থা দেখে মুখ চেপে হাসছে তিথি।রিদিকে উদ্দেশ্য করে বললো মুগ্ধতা……
.
______ম্যাম আপনি এখানে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন…?
.
মুগ্ধতার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো তিথি।ম্যাম সম্বোধন টা মাথায় ঢুকছে না তাঁর।তাই মুগ্ধতা কে উদ্দেশ্য বললো…..
.
_____এই তুই ম্যাম কাকে বলছিস….?
.
তিথির কথায় বিরক্তি প্রকশ করলো মুগ্ধতা।বিরক্তি নিয়ে বললো…..
.
______আরে চিনিস না উনি আমাদের নিউ ম্যাম।ওই যে আদিবা ম্যাম উনি।
.
মুগ্ধতার কথায় চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো তিথির।মুহূর্তে অট্রহাসিতে ফেটে পড়লো সে।নিজেকে সামলে হেসে বললো…..
.
___তোর মাথায় নিজ্ঞাত প্রবলেম আছে।ইনি আদিবা ম্যাম বলে আবারও হাসতে লাগলো তিথি।
.
তিথির কথায় চোখ ছোট ছোট করে তাকালো মুগ্ধতা।আদিবা ম্যামকে নিয়ে এভাবে হাসছে কেন আর আমাকেই বা পাগল বলছে কেন…?সন্দেহ নিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো মুগ্ধতা…..
.
______হুম!ইনিই আদিবা ম্যাম।কেন এতে তোর কোনো সন্দেহ আছে….?
.
হাসি থামিয়ে বললো তিথি….
.
______অবশ্যই আছে।ও হলো মুগ্ধ ভাইয়ার ফ্রেন্ড রিদি আপু।এখন তুই বল ভাইয়ার ফ্রেন্ড কি করে ম্যাম হয়।
.
তিথির কথায় অবাক মুগ্ধতা।উনি ম্যাম নন।তাহলে সেদিন যে উনি আমাকে বললেন মুগ্ধ আমার নামে কমপ্লেন করেছে।আমার ভাবনার মাঝেই পেছন থেকে বলে উঠলো মুগ্ধ….মুগ্ধর গলা পেয়ে পেছন ফিরে তাকালাম আমি।বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছি তার দিকে……
.
______কি মুগ্ধতা এটাই ভাবছো তো…?ও যদি ম্যাম না হয় তাহলে সেদিন তোমাকে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে বললো কেন…?আর শাস্তির ভয়ই বা দেখালো কেন…?
.
মুগ্ধর কথায় বেশ কিছুটা চমকে উঠলাম আমি।মুগ্ধ কি করে বুঝলো এই কথাগুলো ঘোরপাক খাচ্ছে আমার মাথায়।এসব কি হচ্ছে তার কিছুই মাথায় ঢুকছে না আমার।হতবিহ্বল চোখে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে আছি আমি।তখনই বলে উঠলো তিথি…..
.
______তার মানে রিদি আপু আদিবা ম্যাম সেজে তোকে মুগ্ধ ভাইয়ার কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছিলো।মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো মুগ্ধতা।এতক্ষণে বুঝতে পারলো তিথি এসবের কিছুতেই মুগ্ধর দোষ নেই।ওরা মুগ্ধতার দুর্বলতা জানতে পেরে ওকে বাকি সবার মতো মুরগী বানিয়েছে।তখন মুগ্ধ বললো……
.
______ মুগ্ধতা তুমি যা জানো তার কিছুই আমি করিনি।ওরা সবাই আমার ফ্রেন্ড।আমি কারো কাছে কোনো কমপ্লেনও করিনি।ওরা জাস্ট তোমাকে মজা করে এসব বলেছে।আর তুমিও ভেবেছো এই সবকিছু আমি করেছি।যদিও আমার কোনো দোষ নেই তবুও ওরা আমার ফ্রেন্ড।সেদিন সবকিছু আমার চোখের সামনে ঘটেছিলো তবুও চুপ ছিলাম আমি।তখন চুপ থাকা উচিৎ হয়নি আমার। ওদের থামানো উচিৎ ছিলো।এটা না করে অন্যায় করেছি আমি আর তার জন্য ক্ষমা প্রার্থী।এই ক’দিন তোমাকে সবকিছু খুলে বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু তুমি আমার কোনো কথাই শোন নি।তাই যা হয়েছে সব ভুলে যাও।আমি ওদের হয়ে তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি।সরি মুগ্ধতা।
.
মুগ্ধর সাথে সাথে বাকি সবাই বলে উঠলো সরি মুগ্ধতা।আমরা না বুঝে মজার ছলে অন্যায় করে ফেলেছি।প্লিজ আমাদের ক্ষমা করে দাও।
.
সকলের এমন বিহেভে অবাক মুগ্ধতা।কি বলবে বুঝতে পারছে না।শুধু শুধু মুগ্ধ কে ভুল বুঝে যা তা বলেছে।সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো…..
.
______ইটস’ ওকে!আপনাদের এভাবে ক্ষমা চাইতে হবে না।তবে এটাই বলবো এভাবে কাউকে অপদস্ত করা ঠিক নয়।এরকম আর কারো সাথে করবেন না।আর মুগ্ধ এতে আপনার কোনো দোষ নেই তাই ক্ষমা চাওয়ারও প্রশ্ন উঠে না।
.
মুগ্ধতার কথা শোনে হাফ ছেড়ে বাঁচলো সবাই।কান ছেড়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।এখানে সবার জড়ো হওয়ার একটাই কারণ মুগ্ধ কে খুশি করা।মুগ্ধর গোমড়া মুখ বন্ধুদের মধ্যে কেউ দেখতে পারছিলো না।তাই বন্ধুর মুখে হাসি ফুটানোর জন্য মুগ্ধতার কাছে সরি চাইছে।বন্ধুর জন্য যেমন মুগ্ধতা কে শাস্তি দিয়েছিলে আজ আবার সেই বন্ধুর জন্য মুগ্ধতার কাছে ক্ষমা চাইতেও পিছ পা হয় নি।
.
মুগ্ধতার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিজেকে হালকা লাগছে খুব।মনে হচ্ছে বুকের উপর থেকে ভারী বোঝা সরে গেছে।এই ক’দিন ঠিক মতো ঘুমাতে পারেনি,খেতে পারে নি মুগ্ধ।শুধুই চোখের সামনে মুগ্ধতার মায়াবী মুখ ভেসে উঠতো।এখন সব ঠিক হয়ে গেছে।মুগ্ধতা সত্যি টা জানতে পেরেছে।একে একে সকলে চলে গেলো।মুগ্ধ এখনও ওখানে দাঁড়িয়ে মুগ্ধতা কে দেখে চলেছে।লাল খয়েরী ড্রেসে খুব মানিয়েছে মেয়েটাকে।মুগ্ধ, মুগ্ধ হয়ে দেখে চলেছে মুগ্ধতা কে।পাশ থেকে রাতুল বললো…..
.
______দোস্ত আর কত দেখবি!এবার একটু চোখ সরা।এভাবে হ্যাবলার মতো তাকাতে থাকলে ও তোকে পাগল ভাববে।
.
রাতুলের কথায় মুচকি হাসলো মুগ্ধ।চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো…..
.
______কই দেখছি না তো!আমি এমনি তাকিয়ে আছি।ওদের কথার মাঝেই তিথি বললো…..
.
মুগ্ধতা চল আমাদের ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।তিথির কথায় মুগ্ধতা মাথা নাড়ালো।মুগ্ধর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দুজনে ক্লাসের উদ্দেশ্যে চলে গেলো।মুগ্ধতা আর তিথির যাওয়ার দিকে মুগ্ধ আর রাতুল দুজনে চেয়ে রইলো।
.
.
আফিফের জন্য পাএী দেখার জন্য রেডি হচ্ছে সবাই।অন্যন্যা ও যাবে।এদিকে গাল ফুলিয়ে নিজের রুমে পায়চারি করছে আফিফ।সে মিতুলকে ভালোবাসে সেটা কি করে সবাইকে বলবে সেই চিন্তায় বিভোর ।তাছাড়া সেই বা কি এখন বিয়ে করতে রাজি হবে।মিতুল যেই মেয়েটাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছে আফিফ।এখন তাঁকে ছাড়া কাউকে জীবনে জড়ানো একেবারে ইম্পসিবল তার জন্য।এদিকে তাঁর জন্য পাএীও দেখছে কি করবে আফিফ ভেবে পাচ্ছে না।তাছাড়া এখন যদি বাসায় বলে কাউকে ভালবাসে পরে যদি দেখা যায় সেই মেয়েটির জীবনে অন্য কেউ আছে তাহলে।এভাবে মেয়েটির সাথে কথা না বলে বাসায় তার কথা জানাতে পারে না।মিতুলের সাথে কথা বলা এখন খুব জরুরি।কিন্তু বিয়ে আটকাতে কিছু একটা করতে হবে তাকে।তাই সিদ্ধান্ত নিলো বাবার সাথে পাএী দেখতে যাবে…..!!
.
.
চলবে……
মুগ্ধতায়_মুগ্ধ♥️
Labiba_Islam_Roja
Part_09
.
🍁
ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষারত মুগ্ধতা।আফিফের জন্য পাএী দেখতে গেছে অধরা আর মুগ্ধতা বাদে সবাই।যদিও মুগ্ধতার যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো আঙ্কেলও বলেছিলো কিন্তু আন্টি বারণ করায় যায় নি মুগ্ধতা।আজ রিকশা কোথাও দেখা যাচ্ছে না।এই গরমে দাঁড়িয়ে থাকতেও আর ইচ্ছে করছে না মুগ্ধতার।দাঁড়াতে দাঁড়াতে বিরক্ত হয়ে হাত ঘড়ির দিকে তাকালো ক্লাস শুরু হতে আর বিশ মিনিট বাকি।ফার্স্ট ক্লাস আবিদ স্যারের যার ক্লাসে লেইট হলে কান ধরিয়ে রাখেন উনি।বিরক্তি নিয়ে রিকশার আশায় তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা।হঠাৎ সামনে এসে একটা বাইক থামলো।বাইকের ছেলেটার হেলমেট পরিহিত।এভাবে ছেলেটাকে দাঁড়াতে দেখে ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেলো মুগ্ধতার।বিস্ময় চোখে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে।তড়িঘড়ি করে হেলমেট খুলে মুগ্ধতার সামনে দাঁড়ালো ছেলেটা….!!
.
______ছেলেটাকে দেখে অবাক মুগ্ধতা।কারণ সামনে থাকা ছেলেটা আর কেউ নয় মুগ্ধ…..
.
______প্লিজ প্লিজ!আমি মুগ্ধ!তুমি তো আবার ডেঞ্জারাস মেয়ে কখন আক্রমন করো বলা যায় না।এখন ছিনতাইকারী ভেবে আবার আঘাত করা শুরু করো না।
.
মুগ্ধর কথায় বেশ লজ্জা পেলো মুগ্ধতা।সত্যি সেদিন সাত পাঁচ না ভেবে অকারণে আঘাত করেছিলো।এটা নিছক বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।সেদিনের কথা মনে হলে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করে তাঁর।মুগ্ধতা কে লজ্জা পেতে দেখে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ।লজ্জা পেলে মেয়েটাকে ভারী মিষ্টি দেখায় তো।গাল দুটোয় হালকা লাল আভা দেখা যাচ্ছে।লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বললো…..
.
______দেখুন সেদিনের ব্যাপার আর আজকের ব্যাপার একেবারে আলাদা।আর এটা বার বার বলে লজ্জায় ফেলার কি আছে বুঝি না আমি।
.
মুগ্ধতার কথায় স্মিথ হাসলো মুগ্ধ!প্রসঙ্গ পাল্টে বললো…..
.
______এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে রিকশার অপেক্ষা করছো বুঝি…?
.
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো মুগ্ধতা।হ্যাঁ সে রিকশার জন্যই অপেক্ষা করছে।মুগ্ধতাকে উদ্দেশ্য করে বললো…..
.
______এই রাস্তায় এখন রিকশা পাবে বলে মনে হয় না আমার। চলো আমিও ভার্সিটি যাচ্ছি তোমাকেও নামিয়ে দেবো।
.
না ভাইয়া লাগবে না আমি যেতে পারবো।
.
আরে এত হেজিটেইট করছো কেন…?এই কাক ফাঁটা রোদে সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকলেও রিকশা পাবে না।তার চেয়ে আমার সাথে চলো।মুচকি হেসে আর হ্যাঁ আমি তোমাকে কিডন্যাপ করবো না বিশ্বাস রাখতে পারো।
.
উনার সাথে যেতে একটুও ইচ্ছে ছিলো না আমার।কিন্তু ক্লাসের লেইট হয়ে যাচ্ছে তার উপর এত রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে বিরক্ত লাগছে।কিন্তু উনার সাথে যাওয়াটাও উচিৎ হবে বলে মনে হচ্ছে না আমার।আবার না গিয়েও উপায় নেই এতক্ষণে মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে তাই বাধ্য হয়ে উনার জোরাজোরিতে উনার সাথে যেতে হলো আমায়।বাইক চলছে উনার আর ওর মাঝে কিছুটা ফাঁক রেখেছে মুগ্ধতা।যাতে মুগ্ধর সাথে ওর শরীর না লাগে।এদিকে মুগ্ধতাকে এভাবে বসতে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে মুগ্ধ।মুগ্ধতার মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছে।যা দেখে আরো বেশি হাসি পাচ্ছে তাঁর।হঠাৎ কিছুটা শব্দ করেই হেসে উঠলো মুগ্ধ।মুগ্ধ কে আচমকা হাসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো মুগ্ধতার।কপাল ভাঁজ করে বলে উঠলো….
.
_____এভাবে আচমকা অকারণে পাগলের মতো হাসছেন কেন আপনি…?
.
মুগ্ধতার কথায় আরো বেশি হুংকার দিয়ে শব্দ করে হেসে উঠলো মুগ্ধ।বাইক চালাতে চালাতে বললো…..
.
______কিডন্যাপার,ছিনতাইকারী এখন পাগল!ওয়াও নামগুলো যশ।যদিও একটা নামও আমার সাথে যায় না তবুও নামগুলো দারুণ।
.
মুগ্ধর শীতল কন্ঠ শোনে বেশ অবাক হলো মুগ্ধতা।যেখানে এই উপাধি গুলো পেয়ে মন খারাপ করার কথা সেখানে মুগ্ধ হাসছে স্ট্রেঞ্জ!কোনো কথা না বলে চুপ করে রইলো।হঠাৎ খুব জোরে হোটচ খেলো মুগ্ধতা।হোচটের তাল সামলাতে না পেরে মুগ্ধকে দুহাতে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।মাঝের ফাঁকা জায়গা গুলো পূরণ করে মুগ্ধর ঘা ঘেঁষে বসেছে।ওর এই অবস্থা দেখে মুখ চেপে হাসছে মুগ্ধ।এতটা দূরে বসাটা মানতে পারছিলো না মুগ্ধ।তাই খুব স্পিডে বাইক চালাচ্ছিলো আর রাস্তায় কিছু একটার উপর দিয়ে খুব স্পিডে যাওয়ায় হোচট খায়।কিছুক্ষণ পর নিজেকে সামলে মুগ্ধ কে ছেড়ে বলে উঠলো…..
.
____সরি! আমি নিজের ব্যালেন্স রাখতে পারিনি।আবার নিজের জায়গায় যাবে তখনই মুগ্ধ বললো…..
.
_____এভাবে আধ মাইল ফাঁকা রেখে বসলে এক্সিডেন্ট হতে পারে।যেখানে আছো সেখানেই থাকো এতে তোমারই ভালো।দেখলে না এক্ষুনি পরে যাচ্ছিলো।মুগ্ধর ভুল বলে নি।কথাটা ঠিকই তাই সরতে যেয়েও সরলো না মুগ্ধতা।বাধ্য মেয়ের মতো মুগ্ধতা কথা শুনেছে দেখে হাসলো মুগ্ধ।
.
.
♥️
পাএীর বাসা থেকে বাসায় এসে সেই লেভেলের রাগ নিয়ে বসে আছেন আফিফের বাবা।এত সুন্দর একটা মেয়েকে রিজেক্ট করে এলো ভাবতে পারছেন না উনি। উনার হিসাব মতে এই মেয়ের উপযুক্ত উনার ছেলে নয়।সেখানে উনার ছেলে মেয়েটা কে অপছন্দ করলো।অথচ রূপে গুণে কোনো অংশে কম নয়।আচার ব্যবহারও বেশ মার্জিত।এখন নিজের ছেলেকে বলদ ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না উনার।বলদই তো! বলদ না হলে আজকালকার দিনে কেউ এমন মেয়ে হাত ছাড়া করে নাকি।মেয়েটা উনার পুএবধূ হচ্ছে না ভাবলেই মন খারাপ হয়ে গেলো উনার।বাবার এমন অবস্থা দেখে বেশ হাসি পাচ্ছে অধরা আর অন্যন্যার।আফিফ গম্ভীর মুখে বসে আছে।তার একটাই কারণ তার বাবা।এখন যদি আফিফ কিছু বলে তাহলে ক্ষেপে যা তা বলবেন উনি তাই চুপ থাকাই শ্রেয়।বিয়ে আটকানোটা জরুরি ছিলো এটা করতে পেরেছে এতেই খুশী আফিফ।আফিফের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে উনি বললেন……
.
____তুমি মেয়েটাকে রিজেক্ট করলে কেন…?আমার জানা মতে ওর মতো লক্ষ্মী হতেই পারে না।তাহলে তুমি ওকে অপছন্দ করলে কেন….?
.
বাবার কথার জবাবে কি বলবে আফিফ ভেবে পাচ্ছে না।এই পর্যন্ত অনেকবার একই প্রশ্ন করেছেন উনি কিন্তু তার জবাব দিতে পারে নি।আমতা আমতা করে বললো…..
.
_____দেখ বাবা মেয়েটার নাক বোঁচা।আর অতিরিক্ত ফর্সা হওয়ায় কেমন যেন সাদা ভূত লাগছিলো।এত সুন্দর ভূত বিয়ে করতে নারাজ আমি তাই একে অপছন্দ আমার।
.
ছেলের কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেললেন উনি।যেখানে সবাই সাদা চামড়ার পেছনে দৌড়ায় সেখানে উনার ছেলে মেয়েটাকে সাদা ভূত বললো।তাছাড়া সবাই এই সাদা চামড়ায় মায়ায় পড়ে সেখানে উনার ছেলে দৌড়ে পালালো।উনার ছেলে আর দশটা ছেলের মতো সাদা চামড়ার পেছনে দৌড়াচ্ছে না দেখে গর্ব অনুভব করলেন উনি আর বললেন…….
.
____এই প্রথম তোমার কোনো ডিসিশনে গর্ব অনুভব করছি আমি।তুৃমি প্রমাণ করেছো শুধু সাদা দেখে জীবন সঙ্গী নির্বাচন করা বোকামি।বাইরের চাকচিক্য দেখে আকৃষ্ট হওয়ার চেয়ে ভিতরের সৌন্দর্যের প্রতি মুগ্ধ হওয়া শতগুণ ভালো।এবার তোমার জন্য দেখতে অতটা সুন্দর না হলেও সুন্দর মনের মানুষ খোঁজে বার করবো আমি।
.
বাবার কথায় কিছুটা হেসে রুমে চলে গেলো আফিফ।পরের বার মেয়ে দেখার আগে মিতুলের ডিসিশন জেনে নেওয়া যাবে।ও রাজি হলে বাবাকে বলে ওর বাসায় প্রস্তাব পাঠাবে।
.
.
মুগ্ধতাকে মুগ্ধর সাথে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সবাই।বিশেষ করে অবাক তিথি।বাইকে করে মুগ্ধতা কে নিয়ে একেবারে ভার্সিটির ভিতরে ঢুকলো মুগ্ধ।সিনিয়র বিধায় ভার্সিটির কম বেশি সবাই চিনে মুগ্ধ কে।অনেকে ক্রাশড ওর উপর।মুগ্ধতার সাথে ওকে দেখে অনেকের মন ভেঙ্গে গেছে ইতিমধ্যে।সবাই ধারণা করে নিয়েছে এটা মুগ্ধর গার্লফ্রেন্ড।মুগ্ধর ফ্রেন্ড সার্কেল অবশ্য ওর হাবভাবে ধরে নিয়েছে ও মুগ্ধতা কে ভালোবাসে।সেজন্যই মুগ্ধতা যখন কথা বলছিলো না তখন উদাস উদাস লাগতো ওকে।মন খারাপ করে বসে থাকতো।বাইক থেকে নামতেই স্নেহা আর রিদি ঘিরে ধরলো ওদের।রিদি বললো…..
.
তোরা দুজন একসাথে…?আমি ভুল দেখছি না তো বলে চোখ ডলে আবারও তাকালো রিদি।স্নেহা কে উদ্দেশ্য করে বললো…..
.
____এই স্নেহা আমি স্বপ্ন দেখছি না তো.!! আমাকে একটা চিমটি কাট তো…?
.
____আরে নাহ! এটা সত্যি।মুগ্ধ কে উদ্দেশ্য করে বললো স্নেহা……
.
______তোরা একসাথে….?মুগ্ধতা কে কোথায় পাইলি তুই…?
.
মুগ্ধর ফ্রেন্ডদের কথায় চরম বিরক্ত মুগ্ধতা।এতগুলো কথা ফেইস করতে হবে জানলে কিছুতেই মুগ্ধর সাথে আসতে না সে।এখন সবাইকে হাজার খানেক প্রশ্নের জবাব দিতে হবে!উফ অসহ্য।পাশ থেকে দৌড়ে এলো তিথি।প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে।ওদের উদ্দেশ্য বললো মুগ্ধ….
.
____মুগ্ধতা রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলো কোথাও রিকশা পাচ্ছিলো না তাই আমি ওকে ড্রপ দেওয়ার কথা বলি।কিন্তু উনি আসতে চান নি পরে আমি জোর করেই নিয়ে এসেছি এই যা আর কিছু নয় বলেই হন হন করে চলে গেলো মুগ্ধ…!!
.
.
চলবে…..