#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 12
🍁🍁🍁
রুম জুড়ে পিনপিনে নীরবতা। আদি মাথা নিচু করে বসে আছে চোখে অশ্রু টলমল করছে। মেহেররা এক দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকিয়ে আছে। নীরবতা ভেঙে শাওন আদির দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে।
শাওন : তুই সত্যি সত্যি সিমথিকে এমন একটা পরিস্থিতি তে ফেলে এসেছিলি।
শাওনের কথায় আদি মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।
আদি : আমি চলে আসার সময় আর পেছন ফিরি নি। কিন্তু বাড়ির সামনে এসে ও আবার ফিরে গিয়েছিলাম। কেনো যেনো মন মানছিলো না। কিন্তু যতক্ষণে সেখানে পৌঁছালাম ততক্ষণে ওদের কাউকেই পাইনি তবে
এতোটুকু বলে আদি থেমে যায়।
ইশান : তবে কি।
আদি : ওখানে সিয়ার ভাঙা চশমা আর র/ক্ত ছিলো অনেকটা।
আদির কথায় সবাই চমকায়।
তুহা : ওখানে কি হয়েছিলো জানিস তুই।
মেহের : সি সিমথির সাথে খারাপ কিছু হয়নি তো।
আদি : আমি চলে আসার পর কি হয়েছিলো আমি সত্যিই কিছু জানি না। আমি সিয়াকে অনেক গুলো ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু সিমথি ফোন রিসিভ করেনি।
আয়াশ : তার মানে সেদিন রাতে কি হয়েছিলো এটা সিমথি ব্যতিত কেউ জানে না।
আদি : হয়তো সায়ন বা ওর ফ্রেন্ডরা কেউ জানে।
ইশান : তুই সিমথির সাথে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করিস নি।
আদি : করেছিলাম কিন্তু সেদিনের পর থেকেই সিয়া কেমন একটা হয়ে গিয়েছিলো। আমার থেকে দূরে দূরে থাকতো। ওদের বাড়িতে গেলেও সিয়া দরজা বন্ধ করে বসে থাকতো। এককথায় আমাকে টোটালি ইগনোর করতে শুরু করলো। নাম্বার ব্লক থেকে শুরু করে সব জায়গা থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে দেয়। তারপর ওর রেজাল্ট বের হলে আমি ওদের বাড়িতে গিয়ে জানতে পারি সিমথি লন্ডন চলে গেছে।
কথাগুলো বলে আদি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। চোখে থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ার আগেই নিজেকে সামলে নেয়।
আদিবা : কাজ টা ঠিক করিস নি তুই। একটা মেয়েকে এভাবে বিপদে ফেলে এসেছিলি। ছিহ
তুহা : সেই সিমথিই আমাদের বাঁচালো সেদিন। ওর জায়গায় অন্যকেউ হলে হয়তো রিভেঞ্জ নিতো।
তুহার কথায় আদি স্মিত হেসে উঠে।
আদি : সিয়া তোদের সাথে কিছুই করবে না। ও রিভেঞ্জ নিতে ভালোবাসে। আর সেই রিভেঞ্জ আমার কাছ থেকেই নেবে। ওর চোখে এখন আর আমার জন্য ভালোবাসা নেয়। যা আছে তা শুধুই ঘৃণা।
আদির কথায় সবাই চুপ হয়ে যায়। কি আর বলবে। দোষ টা তো আদিরই। কিন্তু সিমথির সাথে সেদিন রাতে কি হয়েছিলো সেটা জানার জন্য সবার চিন্তা হচ্ছে।
শাওন এসে আদির কাঁধে হাত রাখে।
শাওন : চিন্তা করিস না। সিমথি এখনো তোকেই ভালোবাসে। কারণ যাকে ভালোবাসা যায় তাকে ঘৃণা করা যায় না। ওর মনে তোর জন্য ঘৃণা থাকলে অভিমান টা বেশি।
আচমকা আদি শাওন কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
আদি : সিয়া এখন তন্ময় কে ভালোবাসে। ওরা রিলেশনে আছে। সিয়া আর আমাকে ভালোবাসে না রে ভাইয়া। জানিস আমি ওইদিন শুনেছি সিয়ার মুখে। ও আমাকে ঘৃণা করে ভাইয়া। আমি ওর ঘৃণা, অবহেলা নিতে পারছি না। বুকের বা পাশ টায় ভীষণ কষ্ট হয় রে।
সিমথি আর তন্ময়ের রিলেশনের কথা শুনে সবাই চমকে উঠে। তাহলে কি আদি আর সিমথি ভালোবাসার সমাপ্তি আদি নিজের হাতে করেছে। সবাই একে অপরের দিকে হতাশ দৃষ্টিতে তাকায়। সেদিন রাতের ঘটে যাওয়া সেই নির্মম ঘটনা অজানায় রয়ে গেলো সবার।
_________________
সিমথি ড্রয়িংরুমে পা রাখতেই একজন এসে পেছন থেকে সিমথির চোখ ধরে। সিমথি চমকে লোকটার হাতের উপর হাত রাখে। অতঃপর মুচকি হেসে বলে উঠে
সিমথি : কখন আসলে বড় আব্বু।
সিমথির কথায় নীলয় খান হেসে উঠে। চোখ থেকে হাত সরিয়ে সামনে আসে।
নীলয় খান : দিজ ইজ নট ডান। আজো চিনে ফেললে।
নীলয় খানের কথায় সিমথি হাসে। ওদের কথার মাঝেই ইফাজ ফোড়ন কেটে বলে,,,
ইফাজ : ও আমাদের চিনতে ভুল করলেও তোমাকে চিনতে ভুল করবে না।
ইফাজের কথায় উপস্থিত সবাই হাসে। কেবলমাত্র দুইজন ব্যতিত।
সায়ন : তা আজ আবার কার ব্যান্ড বাজালি বোন।
সায়নের কথায় সিমথি ভ্রু কুঁচকে তাকায়। অতঃপর হাতের দিকে তাকায়। র/ক্ত দেখেই ঠোঁটের কোণায় একটা হাসি ফোটে উঠে। যার পেছনের কারণ সবার অজানা।
সিমথি : একটু বেশিই সাহস দেখাচ্ছিলো তাই বেশি না একটু আর টাইট দিলাম।
সিমথির কথায় সায়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
ইফাজ : কেনো করিস এসব মা’রা’মা’রি। হাতটা কতটা কেটে গেছে দেখেছিস।
ইফাজের কথায় সিমথি স্মিত হাসে।
সিমথি : এটা আমার র/ক্ত নহে ভাই এটা ভিকটিমের।
নীলয় খান : আচ্ছা বাদ দাও ইফাজ। চলো সবাই। সিমথি মা ফ্রেশ হয়ে আয়।
সিমথি মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। সিমথির ফোন আসায় কথা বলতে বলতে উপরে যায়।
সিমথি : হুম বলো
________
সিমথি : জ্ঞান ফিরলে আবার ডোজ দেবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সত্যি টা স্বীকার না আসবে ততক্ষণে একে ডোজ দেবে। আন্ডারস্ট্যান্ড।
___________
ওপাশের উত্তর শুনে সিমথি কল কেটে দেয়। ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠে রহস্যময় হাসি।
প্রতিটা সম্পর্কের মূলভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস। কিন্তু যখন আপণ মানুষ গুলো ভালোবাসার আড়ালে ক্ষতি করে তখন সেটা হয়ে দাঁড়ায় সবচেয়ে বেশি কষ্টদায়ক। বিশ্বাস করে যদি ঠকতে হয় তবে পরবর্তী তে বিশ্বাসী ব্যক্তিকে ও আর বিশ্বাস করা যায় না।
আজকে আদির জন্য একটা বিশেষ দিন। অনেক টা সাহস সঞ্চার করেই আজ আদি সিমথির সামনে দাঁড়াবে। আজকের এই দিনেই সিমথি আদিকে তার মনের সুপ্ত অনুভূতির কথাগুলো ব্যক্ত করেছিলো। সেই একইদিনে আদিও নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে চাই। তারজন্যই আদি রেডি হয়ে সিমথির হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা হয়। কিছুটা ভয়, কিছুটা সংশয়, কিছুটা ভালো লাগা সব মিলিয়ে এক অন্যরকম অনুভূতির সম্মুখীন আদি।
আদি : যদি ও জানি তুই আজ আমাকে তোর করা অপমান গুলো ফেরত দিবি। তবে তোকে আমি ছাড়ছি না। তন্ময়ের সাথে রিলেশনে থাকলে ও তুই শুধু আমার আর না থাকলে ও তুই আমারই। তোকে এতো সহজে ছাড়ছি না।
কথাগুলো মনে মনে বলে আদি গান চালু করে দেয়।
– লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক
আমি তোমার পিছু ছাড়বো না।
বেশ কিছুক্ষণ পর আদির গাড়ি এসে থামে সিমথিদের হসপিটালের সামনে। আদি একটা জোরে শ্বাস ফেলে সিমথির কেবিনের উদ্দেশ্য হাঁটা লাগায়। কেবিনের কাছে পৌঁছে কেবিনে নক করে।
সিমথি : ইয়েস কাম ইন।
আদি এসে ধীর পায়ে সিমথির কাছে দাঁড়ায়। সিমথি একমনে ল্যাপটপে কি যেনো টাইপিং করছে। বেশকিছু ক্ষণ পর সিমথি কারো সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজার দিকে তাকায়। কি আজব দরজা তো লাগানো। তাহলে কে নক করলো। প্রশ্ন টা মাথায় আসতেই সিমথির হঠাৎ কেমন একটা অনুভূতি হতে শুরু করে। চেনা কোনো পারফিউমের ঘ্রাণ নাসারন্ধ্র দিয়ে ঢুকতেই সিমথি হতবাক হয়ে পাশ ফিরে তাকায়। আদিকে নিজের অনেক টা নিকটে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সিমথি চমকায়। তবুও মুখভঙ্গি স্বাভাবিক রেখে উঠে দাঁড়ায়।
সিমথি : এনি প্রবলেম।
আদি : হু
সিমথি : কেউ এডিমট হয়েছে হসপিটালে।
আদি : হু
সিমথি : কে এডমিট হলো আবার।
আদি : হু
সিমথি ভ্রু কুঁচকে আদির দিকে তাকায়। তখন থেকে সব কথার উত্তর কেবল হু হা করছে। আদিকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে সিমথি বিরক্তিতে একটা শ্বাস ফেলে। টেবিল থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে আদির মুখে পানি ছুঁড়ে মারে। মুখে পানি পড়তেই আদির হুশ ফিরে।
আদি : ওয়াট’স ননসেন্সিকেল সিয়া।
সিমথি : এমন হ্যাংলার মতো তাকিয়ে আছেন কেনো। জীবনে মেয়ে দেখেন নি।
আদি থমকায়। কিছু একটা মনে পড়তেই হেসে উঠে। এটা যেনো আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ হলো।
আদি সিমথির দিকে কিছুটা ঝুঁকে পড়ে। সিমথি দূরত্ব বাড়াতে গিয়ে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে। আদি এবার শব্দ করে হেসে দেয়।
সিমথি : এভাবো হাসছেন কেনো। আর আমার কেবিনে আসলেন কেনো হঠাৎ। আমার পারমিশন নিয়েছেন। ( রেগে)
আদি নিজের হাসি আটকে চেয়ারের দু দিকে হাত দিয়ে সিমথি কে আটকে দেয়। সিমথি দম বন্ধ করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকায়।
আদি : এতো রাগ ভালো না মেয়ে মানুষের।
সিমথি : ফাউল কথা বাদ দেন। আর সরুন। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
আদি : এমন কিছুই তো করলাম না। তবু দম বন্ধ হয়ে আসার কি হলো।
সিমথি অগ্নি দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকায়৷
সিমথি : আপনার উদ্দেশ্য টা কি বলবেন।
আদি : আমি তোকে ভালোবাসি সিয়াজান।
আদির কথায় সিমথি থমকায়। আচমকা কেবিন কাঁপিয়ে হেসে উঠে।
সিমথি : আর ইউ জোকিং উইথ মি।
সিমথির কথায় আদি অসহায় দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি হাসি থামিয়ে রক্তবর্ণ দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকায়। আচমকা আদিকে জোরে একটা ধাক্কা দেয়। আদি ঠাল সামলাতে না পেরে মেঝেতে পরে যায়। সিমথি উঠে দাঁড়ায়।
সিমথি : এটা কোনো যাত্রা পালার স্টেজ না। আপনি এসে যাত্রা দেখাবেন আর দর্শক হাত তালি দেবে।
আদি উঠে দাঁড়ায়। সিমথি দিকে এগুতে নিলে সিমথি হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়।
সিমথি : লিভ।
আদি : সিয়া।
সিমথি : আই সে লিভ।
আচমকা আদি এসে সিমথি বাহু ধরে চেঁচিয়ে উঠে।
আদি : সমস্যা কি তোর। এমন করছিস কেনো। আমি তো বলছি আমি ভুল করেছি। ভুলে গিয়ে সব কিছু নতুন করে শুরু করতে চাইছি। তাহলে তুই কেনো এমন করছিস।
সিমথির কাচের ফাক দিয়ে কেবিনের বাইরে তাকায়। অনেকেই এগিয়ে তাকিয়ে আছে। সিমথি আদিকে পুনরায় সরিয়ে দেয়। কেবিনের বাইরে বেরিয়ে রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই সবাই জায়গা ত্যাগ করে। মুহুর্তের মধ্যে জায়গার মধ্যে নীরবতা নেমে আসে। সিমথি কেবিনে এসে জুরে দরজা লাগায়। অতঃপর আদির দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠে,,,
সিমথি : চেঁচাবেন না। এটা আপনার বেডরুম নয়।
আদি : আম সরি। বাট তুই
সিমথি : বেরিয়ে যান প্লিজ। সহ্য হচ্ছে আপনাকে আমার। আর কি যেনো বললেন নতুন করে সব শুরু করার কথা। আমি সব ভুলে গেছি। আর সব ভুলেই নতুন করে সব শুরু করেছি। তবে সেই শুরুর কাছে আপনি নামক বিষাক্ত অধ্যায় নেই।
সিমথির কথায় আদি রেগে যায়। পা দিয়ে চেয়ারটা স্বজোরে লাথি মারে।
আদি : এখন আর আমাকে ভালো লাগবে কেনো। নতুন কাউকে পেয়েছিস তো তাই আমাকে ভালো লাগে না। তুই আসলে সবসময় এমনই ছিলি। আমারই বুঝতে ভুল হয়েছে। তবে শুনে রাখ তোকে আমি এতো সহজে ছাড়ছি। তুই আমার মানে শুধু আমার। যদি ভালোই ভালো আমার না হোস। আমি ও খারাপ সাজতে জানি। মাইন্ড ইট।
সিমথি : খারাপের আরো নমুনা বাকি রেখেছেন নাকি। ফর গড সেক প্লিজ আমাকে আপনার বাকি খারাপ লুক গুলো ও দেখাবেন। আফটার অল আপনার মধ্যে ভালো কিছুই নেই। যা আছে সবই খারাপ। আই জাস্ট হেইট ইউ। আই হেইট ইউ।
আদি পুনরায় সিমথির বাহু চেপে নিজের কাছে টেনে আনে। কাটা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দেয়। রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসে। লাল হয়ে যাওয়া নাকে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়।
আদি : বাট আই লাভ ইউ।
( আপনাদের কি মনে হয় সিমথি আদিকে এতো সহজে মাফ করবে)
চলবে,,,,,,
( ভুলক্রটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।