মিঠে আলোয়,পর্ব_১

মিঠে আলোয়,পর্ব_১
ফায়জা_করিম

“আজ আমার জন্মদিন। ”

“জানি।”

“তাহলে উইশ করলে না কেন? ”

“মানে?”

“মানে আজ আমার জন্মদিন আর জন্মদিনে এতো কষ্ট করে জন্মানোর মতো কঠিন কাজটা করার জন্য আমার খুচরো অনেকগুলো ধন্যবাদ আর শুভেচ্ছা পাওয়া উচিত।”

“আশ্চর্য! ”

“আশ্চর্য না ম্যাডাম আই অ্যাম সিরিয়াস… আর তুমি চাইলে আমাকে এক্ষুনি উইশ করতে পারো।”

“কেন?”

“কারন আমরা ফ্রেন্ড।”

“তো? ”

“তো উইশ করলে আমি খুশি হবো।”

“আর খুশি হলে কি হবে?”

“খুশি হলে আমরা ফ্রেন্ড থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড হতে পারবো।”

“সরি…. ”

“সরি… সরি কেনো?”

“কারন… কারন অনন্য নামের কারো সাথে আমি ফ্রেন্ড হতে আগ্রহী না,” কঠিন স্বরে বলে উঠে মিঠাই। কি আশ্চর্য এই ছেলের নাম অনন্যই কেন হতে হবে আর অনন্য মানে খুব বিশেষ কেউ, অন্য পাঁচজনের চেয়ে আলাদা… আর এই লোকের মধ্যে অতিরিক্ত গায়ে পড়া ভাব ছাড়া আর বিশেষ কিছুই ওর নজরে আসছে না।

“ওকে তাহলে আমাকে তোমার বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলো… সিম্পল। বেষ্ট ফ্রেন্ড ক্যান বি বয় ফ্রেন্ড অলসো,” অনন্য হাসতে হাসতেই মিঠাইয়ের দিকে তাকিয়ে একবার চোখ টিপলো।

মিঠাইয়ের এবার সত্যি সত্যি রাগ হলো।

এ তো আস্ত বেয়াদব এক লোক, নাছোড়বান্দা টাইপের। দুদিন হয়নি পরিচয়ের আর এক্ষুনি এসেছে বয়ফ্রেন্ড হতে।

“পাঁচ মিনিট শেষ, আমি এখন যাবো,” মিঠাই, অনন্যকে কথা বলার কোন সুযোগ না দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।

মিঠাই উঠে দাঁড়াতেই অনন্যও ওর সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো।

মিঠাইয়ের রীতিমতো বিরক্ত লাগছে এখন কিন্তু খোলা রাস্তায় কাউকে এটা তো বলা যায়না যে আপনি আমার পাশে পাশে কেন হাটছেন। অনন্য পোষা বিড়ালের মতো ওর পায়ে পায়ে চলছে, মহা মুশকিল তো।

শেষ পর্যন্ত মিঠাই ডাইভার্সিটি প্লাজার গেটের সামনের রাস্তার একদম উল্টোদিকে এসে দাঁড়ালো। জ্যাকসন হাইটসের এই জায়গাটা প্রায় সব সময়ই জমজমাট থাকে আর এখন সন্ধ্যা হয়ে আসছে, একটু পরে এখানে পা ফেলার মতো জায়গাও পাওয়া যাবে না। অনন্য নিশ্চই এবার ওর পিছন ছাড়বে।

কিন্তু মিঠাইয়ের কপাল খারাপ। অনন্য ওর চিন্তার আশপাশ দিয়েও গেলোনা।

“আমরা কিন্তু ওখানে খেতে ঢুকতে পারি।”

মিঠাই তাকিয়ে দেখলো অনন্য রাস্তার উল্টো পাশের কাবাব কিং দোকানটাকে ইন্ডিকেট করছে।
মেজাজটা চিরবির করে উঠলো ওর, তারপরও যথাসম্ভব ভদ্র ভাবে বলার চেষ্টা করলো, “একটু পরে আমার বেকিংয়ের ক্লাস শুরু হবে… সরি আমি আর দাঁড়াতে পারছি না। তুমি চাইলে ঢুকতে পারো।”

” না থাক.. আমার জন্মদিন এমন কোন স্পেশাল দিন না যে একা একাও সেটা পালন করতে হবে।”

মিঠাইয়ের কেমন অস্বস্তি হতে লাগলো আর এই অস্বস্তির সাথে নিজের উপর প্রচন্ড একটা রাগ। মিঠাইয়ের একদম উচিত হয়নি এই উটকো ছেলেটার সাথে একবারের জন্যও কথা বলতে রাজি হওয়া, বাপিকে সোজা না করে দিলেই হতো। কিন্তু কেন যেন মিঠাই এতোটা শক্ত হতে পারেনি।

অনন্য মুখটা শুধু অন্ধকার না একদম বল বানিয়ে ফেলতো পারলে। মিঠাই কি করবে বুঝে উঠতে পারেনা।

” আসলে আজকের ক্লাসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, বেকিংয়ের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ টিপস শেয়ার করবে ম্যাম আর পরে এগুলো কালেক্ট করতে গেলে প্রবলেম হয়, এতো ডিটেইলস থাকে যে সবার মনেও থাকেনা,” কথাটা যতোটা সম্ভব নরম গলায় বলে মিঠাই। আশা করলো এবার অনন্য হয়তো ওর সমস্যাটা বুঝবে।

” আরে এটা কোন ইস্যুই না, তোমার ক্লাস কতক্ষণের?”

অনন্যর প্রশ্নে মিঠাই ওকে সঠিক সময়টা বলার সাহসই পেলো না। তাই যতোটা পারল বাড়িয়ে বলল, “মোট সাড়ে তিনঘন্টা।”

” এখন মাত্র ছয়টা বাজে, তুমি ক্লাস শেষ করো তারপর আমরা একসাথে ডিনার করতে পারি।”

” কিন্ত…., ” মিঠাইয়ের মনে হলো একটা জুতার বারি মারে ওর নিজের মুখে ৷ কি দরকার ছিলো এতো এক্সপ্লেইন করার এই উটকো ছেলেটার কাছে, এখন কি করবে ও, কি করে একে এড়াবে?

“মিঠাই, কিছু তো বলো। ”

মিঠাই ঝেড়ে না বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই শুনলো অনন্য বলছে, ” না করতে চাইলে তুমি সেটা করতেই পারো কিন্তু আমি, তুমি বের না হওয়া পর্যন্ত ওয়েট করবো।”

মিঠাইয়ের এই ছেলেটার অতিরিক্ত গায়ে পড়া ভাব যে কি পরিমান বিরক্ত লাগছিলো বলে বোঝাতে পারবেনা, কিন্তু তারপরও আজকে অনন্যর জন্মদিন। আর জন্মদিনে কাউকে জেনেশুনে মনে কষ্ট দেওয়াটা ঠিক না।

“হ্যাঁ, না কিছু একটা তো বলো।”

“আচ্ছা…”

মিঠাই নিজের ক্লাসে ছুটলো।

না বলতে যেয়েও শেষ পর্যন্ত মিঠাই অনন্যর সাথে ডিনার করতে রাজি হয়ে গেল…. মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে হচ্ছে মিঠাইর, এমন চলতে থাকলে তো দেখা যাবে ও শেষে অনন্যকে বিয়ে করতেও রাজি হয়ে যাবে।

ইমপসিবল… এটা কখনোই হতে পারেনা। বাবার পছন্দের ছেলেকে মিঠাই কখনই বিয়ে করতে পারবে না। বাবা ওকে ওর অভ্রর কাছ থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছে, মিঠাই তাই বাবার পছন্দের অনন্যকে একটা বিশাল সাইজের ডস খাওয়াবে… সোজা বাংলায় যাকে বলে ঘোল। পিছু পিছু ঘুরুক কিছুক্ষন তারপর এমন একটা ঝটকা দিব.. বাপ বাপ করতে করতে পালাবে।

বেকিং এর ক্লাসে আজ মিঠাইদের অথেনটিক রেড ভেলভেট কেক শেখান হলো। মিস ক্লারা প্রতিটা স্টেপ এতো চমৎকার করে বুঝিয়ে দেয় যে দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করার কখনো প্রয়োজন পড়ে না মিঠাইর। কিন্তু আজ ওকে তিন তিনবার মিস ক্লারাকে প্রশ্ন করতে হলো। শেষের বারে মিস ক্লারা ওকে জিজ্ঞেস করেই বসেছিলেন,ওর শরীর খারাপ লাগছে কিনা। মিঠাই কোনমতে ঘাড় নেড়ে তাকে না বলেছে।

মিঠাই আশা করেছিল যতোই পটর পটর করুক অনন্য আসলে বিশ মিনিটের বেশি ওর জন্য অপেক্ষা করতে পারবে না। বড়োজোর এমন হতে পারে যে সে মিঠাইয়ের জন্য আবার চলে আসল। আর এমন হলে মিঠাইয়ের সুযোগ আছে অনন্য চলে আসার আগেই চম্পট দেবার… কারন মিঠাই অনেকটা সময় হাতে নিয়ে অনন্যকে সময় দিয়েছে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here