মায়াবতীর প্রণয়ে,সূচনা_পর্ব
মম_সাহা
“হেই মিস দেখে চলতে পারেন না?চোখ গুলো কি কপালে উঠিয়ে রেখেছেন?”
অপরিচিত ছেলেটির কথায় রাগে শরীর জ্বলে গেলো মিষ্টির।টিউশন করিয়ে ছাত্রের বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বেশ জোড়ে ধাক্কা খেলো একটা ছেলের সাথে। হাতে ব্যাথাও পেয়েছে।ছেলেটা সরি বলবে দূরের কথা তাকে উল্টাপাল্টা বলছে।
মিষ্টি ঠোঁট ফুলিয়ে চোখটা বড় করে বলল
-“আমি নাহয় চোখটা কপালে নিয়ে হাঁটি কিন্তু আপনি,আপনি কি বাসায় রেখে আসেন?আপনি দেখে হাঁটতে পারলেন না?”
একটা রাগী মিহি কন্ঠ ভেসে আসতেই আদ্র পরিপূর্ণ দৃষ্টি ফেলে তার সামনের মেয়েটির দিকে। কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায় আদ্র।তার সামনে বাচ্চা বাচ্চা ধরনের একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মায়াবী একটা চেহারা।আদ্র আনমনে বলে উঠে “মায়াবতী”।”
মিষ্টি তার সামনের ছেলেটাকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে অস্বস্তিতে পড়ে যায়। মিষ্টি মাথা নিচু করে ফেলে।
আদ্র মিষ্টিকে মাথা নিচু করতে দেখে তার অস্বস্তির কারণটা ধরতে পেরেছে।তাড়াতাড়ি সে নিজের চোখকে সংযত করে।চোখ সংযত হলেও মন কি আর সংযত হয়।মন তো বারবার বলছে এই মায়াবতীকে আবারও দেখতে হবে।তার মন ভরে নি অতটুকু দেখে।
এর মাঝেই আরেকটা ছেলে এসে তড়িঘড়ি করে মিষ্টিকে বলল
-“সরি মেম উনি দেখতে পায় নি।আপনি প্লিজ রুড বিহেভ করবেন না।ইচ্ছাকৃত ভাবে উনি একাজ টি করে নি।”
সামনের ভদ্রলোকটার কথা মিষ্টির বেশ মনে ধরলো। কি সুন্দর ভুল স্বীকার করে ফেলেছে।হ্যাঁ অবশ্য লোকটা ঠিকই বলেছে ধাক্কাটা ইচ্ছাকৃত লাগে নি।কিন্তু সে তো প্রথমে কিছু বলে নি।ঐ ছেলেটাই তো বাঁকা কথা বলল।
মিষ্টি এবার রাগী রাগী মুখটা স্বাভাবিক করলো।বিনয়ী স্বরে বলল
-“আমি জানি এই ধাক্কাটা ইচ্ছাকৃত লাগে নি।কিন্তু এই যে উনিই তো বাঁকা কথা বললেন।তাই আমি বলেছি।”
এবার সরি বলা ছেলেটি আদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল
-“স্যার মেম ইচ্ছাকৃত ধাক্কা দেয়নি।”
আদ্র ভ্রু কুঁচকে তার পিএ নীড়ের দিকে তাকালো।নিজের হাতে থাকা রোদ চশমা টা চোখে পড়ে এটিটিউড নিয়ে বলল
-“হ্যাঁ নীড় আমি দেখেছি।তোমার আর কিছু বলতে হবে না।”
মিষ্টি সামনের দুজন ছেলের কথাবার্তা দেখেই বুঝতে পেরেছে একজন বস আরেকজন তার পিএ।মিষ্টি আর বাক্য ব্যয় না করে হাঁটা ধরলো বাড়ির উদ্দেশ্যে।
আদ্র রোদ চশমার আড়ালে মিষ্টিকে দেখছে।এই মায়াবতী কে তার মনে ধরেছে।এই মায়াবতীর খোঁজ তো তাকে পেতেই হবে।
________
রাবেয়া খাতুন দরজা খুলেই দেখে ওনার মেয়ে মিষ্টি দাঁড়িয়ে আছে। হাতে বাজারের ব্যাগ। রাবেয়া খাতুন তাড়াতাড়ি বাজারের ব্যাগটা হাতে নিয়ে বলল
-“আজ আটটা বেজে গিয়েছে যে আসতে আসতে?তোর বাবা এজন্যই বলে কষ্ট করে টিউশন করার দরকার নেই কিন্তু তুই তো শুনিসই না।”
মিষ্টি নিজের হাতটা দু একবার ঝাড়া দিলো। ভাড়ি ব্যাগ নিয়ে রাখায় হাতটা ঝিম মেরে এসেছিলো।হাত ঝাড়া দিয়েই ঘর্মাক্ত শরীর টা নিয়েই নিজের মাকে জড়িয়ে ধরলো। জড়িয়ে ধরেই বলল
-“বাহ্ রে বললেই হলো।আমার বুঝি ইচ্ছে করে না দু এক টাকা ইনকাম করতে?নিজের টাকায় বাবা মা পরিবারের মানুষকে কিছু দিতে?আমার বাবার তো ছেলে নেই আমিই তো তার ছেলে তাই না?”
নিজের মেয়ের কথায় হেসে ফেলল রাবেয়া। তারা বেশ স্বচ্ছল পরিবারই।মিষ্টি,মিষ্টির ছোট বোন মিঠাই তাদের বাবা মা আর দাদী নিয়েই তাদের সংসার। মিষ্টি নিজের শখের বশে দুটো টিউশন করায়। এটা তার ভালো লাগে। প্রথমে বাবা আপত্তি করলেও মিষ্টির ইচ্ছের বাধাঁ হয়ে দাঁড়ান নি কখনো।
“হ্যাঁ হ্যাঁ সব আদর ঐ মেয়েরেই কর।আমি তো কেউ না।কে আমি হুম।”
মিঠাইয়ের কথায় মিষ্টি ও তার মা ফিক করে হেসে উঠলো। রাবেয়া খাতুন ছোট মেয়ের নাক টেনে দিয়ে বলল
-“এই তুই এত হিংসুটে কেনো রে?একদম মাইর লাগাবো।”
মিষ্টি হাহা করে হেসে দিলো। মিঠাই মুখ ফুলিয়ে বসে পড়লো সোফায়। মিঠাই ধপ করে সোফায় বসার কারণে সোফায় বসে থাকি দাদী বিরক্তিতে পান চিবিয়ে বলল
-“আহ্ এই ছ্যামড়ির জ্বালায় শান্তি নাই।মাইয়া মানুষ হইবো ঠান্ডা নিরিবিলি আর এই মাইয়া খালি ধুমধাম ঠুসঠাস। ”
দাদীর কথায় আরেক দফা হেসে ফেলল সবাই।মিঠাই ও আর চুপ করে থাকতে পারলো না হেসে দিলো।
_______
-“স্যার কি ভাবছেন?”
নীড়ের কথায় ধ্যান ভাঙলো আদ্রের।সে জেনো মায়াবতীর চেহারা ভুলতেই পারছে না।এ এলাকায় তো আরও কত এসেছে কখনোই এই মেয়েকে দেখেনি।কিন্তু আজ দেখে তার হার্টবিট তখনই থমকে গিয়েছিল। শেষমেষ মায়াবতীর প্রণয়েই পড়ে গেলো।
আদ্রকে ভাবতে থেকে নীড় আবারও বলল
-“স্যার আজকে একটু খুলনা যেতে হবে আর্জেন্ট মিটিং পড়েছে।”
আদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকাল।নীড়কে বলল
-“মিটিং তো আরো পাঁচদিন পর ছিলো।”
নীড় আমতাআমতা করে বলল
-“হ্যাঁ স্যার। কিন্তু ওনারা এ মিটিং করে চলে যাবেন তাই পরশু দিন মিটিং ফিক্সড করেছে।”
আদ্র বিরক্ততিতে মাথা চেপে ধরলো।তারপর মায়ের কাছে ফোন করে বলে দিলো সে শহরের বাহিরে যাচ্ছে।
আদ্ররা দুইভাই।তার মা বাবা।এই চারজন নিয়ে সংসার।
__________
রৌদ্রতপ্ত দুপুর। গ্রীষ্মের মাঝারি সময় চলছে এখন। গাছ পালা তেমন সবুজ না।রাস্তা ঘাট কেমন উত্তপ্ত। শরীরের আকাশী রঙের শাড়িটার আঁচল শক্ত করে ধরেই হাঁটছে মিষ্টি।
আজ তার কলেজে অনুষ্ঠান ছিলো।তাই এই শাড়ি পরে আসা।অবশ্য শাড়ি পড়তে তার খারাপ লাগে না।কিন্তু সময়ের অভাবে পড়া হয় না।তাই আজ শাড়ি পড়েছে আবার ইচ্ছে মতন সেজেছেও।
ইচ্ছেমতন সেজেছে মানে অনেক মেকআপ করা না।সে চুল গুলো মাঝে সিঁথি করে ছেড়ে দিয়েছে।বড় বড় চুল গুলো কোমড় ছাড়িয়েছে। কপালে নীল রাঙা টিপ।কানের পিছে একটা কাঠগোলাপ। এইতো তার অনেক সাজ।
ভ্যাপসা গরমে জান বের হয়ে যাচ্ছে আদ্রের।এখন দুপুর সাড়ে তিনটা কিংবা চারটে হবে।সে দাঁড়িয়ে আছে গাড়ি থেকে নেমে।গাড়িটা নষ্ট হওয়ার সময় পেলো না।এই এক সপ্তাহ সে শহরের বাহিরে ছিলো।আজই এসেছে।ভেবেছে মায়াবতীর খোঁজে বের হবে কিন্তু সময় সব রাস্তাতেই শেষ।
“এই যে শুনছেন আপনার মানিব্যাগ মনে হয় এটা। নিচে পড়ে আছে।”
একটা নারীকন্ঠ শুনে বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে পিছে তাকালো আদ্র।বিরক্ত মাখা মুখটা হঠাৎ করেই মুগ্ধতায় ভরে গেছে।কারণ তার সামনে তার মায়াবতী দাঁড়িয়ে আছে।আকাশী রঙের শাড়িটাতে কি অপরূপ লাগছে।সে যদি কবি হতো এ রমনীকে দেখে কমপক্ষে দশেক কবিতা তো বানাতোই।
মিষ্টিও আদ্রকে দেখে বেশ অবাক হলো।শেষমেশ কিনা এ লোকটার সামনে এসে পড়তে হলো।
আদ্র মিষ্টির হাতে নিজের মানিব্যাগ দেখে পকেটে হাত দিয়ে দেখল। না তার মানিব্যাগ পকেটে নেই।তারমানে মোবাইল বের করার সময় পড়ে গিয়েছিল। আদ্র মিষ্টির হাত থেকে মানিব্যাগ টা নিয়ে নিলো।ছোট্ট করে মিষ্টিকে বলল
-“ধন্যবাদ লীলাবতী।”
মিষ্টি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল
-“এই লীলাবতী কাকে বলছেন?আমি লীলাবতী না মিষ্টি। আজব।সাহায্য করলাম আমি আর ধন্যবাদ দিচ্ছেন আরেকজনকে।”
আদ্র মিষ্টির বাচ্চামো কথা শুনে হেসে ফেলল।তারপর কান ধরে বলল
-“সরি মেম আমি তো আপনার নাম জানতাম না তাই লীলাবতী বলেছি।”
মিষ্টি আদ্রের অদ্ভুত কাজে বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।
নীড় সবটা খেয়াল করল।মনে মনে সে অবাক।তার স্যার কিনা পাবলিক প্লেসে একটা অচেনা মেয়ের জন্য কান ধরছে।
মিষ্টি আদ্রকে কিছু না বলে আবারও হাঁটা ধরলো।এতক্ষণ রোদের তেজ থাকলেও এখন আকাশে ঘন কালো মেঘ জমেছে।আর একটু পর প্রবল বেগে ঝড় শুরু হবে নিশ্চয়ই।
মিষ্টির পিছে আদ্রও হাঁটা দিলো।পিছন থেকে নীড় ডেকে বলল
-“স্যার কোথায় যাচ্ছেন?ঝড় হবে মনে হচ্ছে।গাড়িতে উঠুন।”
তীব্র বাতাসের বেগে কথা কেমন শুনাচ্ছে।আদ্র পিছে ঘুরে বলল
-“নীড় তুমি চলে যাও।তোমার স্যার মায়াবতীর প্রনয়ে ঝাপঁ দিতে যাচ্ছে।”
আদ্রের কথা স্পষ্ট শুনতে পায় নি নীড়।তবে বুঝতে পেরেছে।আকাশ ঝমঝম করে বৃষ্টি নেমেছে।তবে কি আদ্রের প্রণয়ের সাক্ষী হলো তারা?
চলবে?