#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না #সাদিয়া_জাহান_উম্মি #পর্বঃ৩৭

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৭
মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাইশা।ওর শরীরটা ভালো নেই।দুদিন যাবত জ্বর,ঠান্ডায় ভুগছে।গতকাল ভার্সিটিতে আসেনি।কিন্তু আজ না এসেও উপায় নেই।ইম্পোর্ট্যান্ট ক্লাস আছে আজ।সেটা একদমই মিস দেওয়া যাচ্ছিলো না।তাই তো কোনোরকম শরীরটাকে টেনেটুনে ভার্সিটিতে এসেছিলো।কিন্তু এখন যে আর শরীর একদমই চলছে না।জ্বরটা বোধহয় আবার আসবে।ঘরে প্যারাসিটামল ছিলো সকালে সেটা খেয়ে এসেছিলো তাইতো কষ্ট হলেও ভার্সিটি আসতে পেরেছিলো।কিন্তু এখন যাবে কিভাবে?মাথাটা ভাড় হয়ে আছে।দুপায়ে দাঁড়ানোর শক্তিটুকুও পাচ্ছে না।তাই পাশে একটা পিলার ছিলো সেটার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেই হঠাৎ একটা পরিচিত কণ্ঠস্বর কর্ণে এসে প্রবেশ করতেই পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায় মাইশা।ওর সামনে আহিদ চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে।মাইশা আহিদকে দেখে কষ্ট হলেও সোজা হয়ে দাঁড়ালো।জড়ানো কণ্ঠে বলে উঠল,’ আরেহ আপনি?আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।ভালো আছেন?’

আহিদ সালামের জবাব নিয়ে বলে,’ আমি কেমন আছি আপাততো এটা বাদ দেও।বাট তুমি যে ভালো নেই। সেটা বোঝাই যাচ্ছে।’

আহিদের কথায় মাইশা অবাক হলো।একমাত্র আহিদই ওর এই অসুস্থতা সে মুখে বলার আগেই বুঝে ফেলল অনায়াসে।অথচ ওর ক্লোসফ্রেন্ডটাও ওকে বুঝল না।একবার জিজ্ঞেসও করল না ‘ মাইশা তোর কি হয়েছে?এমন দেখাচ্ছে কেন তোকে?’ অথচ লোকটা ওর কিছু না। শুধু হাতেগোমা কয়েকবার দেখা হয়েছে আর একটু আধটু কথা হয়েছে।সে ওকে দেখেই ও অসুস্থ সেটা বুঝে ফেলল।মাইশা মলিন হেসে বলে,’ ওই গতকাল থেকে একটু জ্বর আর ঠান্ডা লেগেছে।’

আহিদ ভ্রু-কুচকে তাকালো।জ্বর এসেছে।অথচ মেয়েটা এই জ্বর শরীর নিয়েই ভার্সিটিতে এসেছে।কেন এসেছে?কি এমন দরকার যে এতো অসুস্থ শরীর নিয়েও এখানে আসা লাগবে।আহিদের রাগ লাগলো। ও ধমকে উঠে,’ জ্বর এসেছে বাড়িতে বিশ্রাম করবে।এখানে কি?কেন এসেছ?দাঁড়াতেও তো পারছ না ঠিকঠাক।কি এমন জরুরিতলব পরেছে যে তুমি আজ ভার্সিটি আসলে?’

আহিদের হঠাৎ ধমকে মাইশা চমকে গেলো। ওর মা ছাড়া ওকে এইভাবে আর কেউ কখনও শাষন করেনি।মায়ের কথা বলতেই তাকে মাইশার ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করল।কতোদিন হয়ে গেছে মায়ের মুখটা সে দেখেনা।কিন্তু কি আর করার মায়ের কাছে তো চাইলেও আর সে যেতে পারবে না।সে যে আর এই পৃথিবীতে নেই।মাইশার বিষন্নতা ভড়পুর মুখশ্রী দেখে আহিদ দমে গেলো।একটু বেশিই করে ফেললো কি ও?এইভাবে ধমক দেওয়াটা বোধহয় ভালো হয়নি।কি অধিকারে সে ধমকাবে মাইশাকে।এমন কোনো সম্পর্ক তো ওদের মাঝে নেই।আহিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,’ সরি একটু অভার রিয়েক্ট করে ফেলেছি।’

আহিদের সরি বলার ব্যাপারটা মাইশার ভালো লাগলো না।তার কেনো জানি আহিদের এই অল্প একটু শাষন করা অনেক ভালো লেগেছে।যেটাকে মাইশা বলে মিষ্টি শাষন।মাইশা দুপাশে মাথা দুলিয়ে বলে,’ আরেহ না।সরি বলছেন কেন?ইটস ওকে।আপনি আমার জন্যে চিন্তা করছেন।তার জন্যেই ওমন কথা বলেছেন।আমি কিছু মনে করিনি।’

এইটুকু কথা বলেই যেন মাইশা হাপিয়ে উঠেছে।তার আর কথা বলতে ভালো লাগছে না।গলাটাও ব্যথা করছে।মাইশা খুকখুক করে কেশে উঠল।মাইশার এহেন অসুস্থতায় আহিদ অস্থির হয়ে যাচ্ছে।কি করবে মেয়েটার জন্যে?ওর তো মাইশার জন্যে কিছু অধিকার নেই।কিছু করতে গেলেও যদি মেয়েটা উল্টাপাল্টা ভেবে বসে।মাইশা আবার চোখ বন্ধ করে পিলারের গা ঘেষে দাঁড়ালো।আহিদের চিন্তা আরও বেড়ে গেলো।মেয়েটার এমন অবস্থা দেখে ওর বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে।এভাবে দেখতে পারছে না ও মাইশাকে।আহিদ হঠাৎ মাইশার কপালে আলতো হাতে স্পর্শ করল।আচমকা কারো স্পর্শে মাইশা কেঁপে উঠে।মনের মাঝে আলাদা শিহরণ বয়ে গেলো।চমকে চোখ খুলে মাইশা তাকিয়ে দেখে আহিদ ওর কপালে স্পর্শ করেছে।এতে যেন মাইশার হৃৎস্পন্দনের গতি কয়েকশগুন বেড়ে গেলো।ধরাস ধরাস করছে বুকটা।এই প্রথম কোনো পুরুষ ওর এতোটা কাছে এসেছে।মাইশা কাঁপা গলায় বলে,’ ক..কি করছেন?’

আহিদ মাইশার কপাল থেকে হাত সরিয়ে নিলো।পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে বলে,’ অনেক জ্বর তোমার গায়ে।১০০ ডিগ্রির উপরে তো হবেই।দাঁড়ানোর শক্তিও পাচ্ছো না।বাড়ি যাবে কিভাবে ভেবেছ?’

মাইশা এখনও ঘোরের মাঝে আছে।আহিদের ওই একটুখানি স্পর্শে মনের মধ্যে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে।মাইশার কোনো রেস্পন্স না পেয়ে আহিদ আবারও বলে,’ মাইশা?তুমি শুনছ আমার কথা?বলছি বাড়ি যাবে কিভাবে?’

একটু জোড়েই বলল আহিদ।এতে ধ্যাণভঙ্গ হয়ে যায় মাইশার।ও ইতস্ততভাবে বলল,’ আই উইল ম্যানেস।আপনি চিন্তা করবেন নাহ।’

আহিদ কিছু বলার জন্যে উশখুশ করছে।কিন্তু কথাটা কিভাবে বলবে ভেবে পাচ্ছে না।ও শুধু এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।কিন্তু অবশেষে মনের কাছে হার মেনে বলেই ফেলল,’ মাইশা শোনো?’
‘ জি বলুন?’
‘ তুমি যদি কিছু মনে না করো।তাহলে কি আমি তোমাকে তোমার বাসায় পৌছে দিতে পারি?’

মাইশা অবাক হয়ে তাকালো।আহিদ এতে অপ্রস্তুত হয়ে পরল।
‘ আমি জাস্ট বললাম।বাট তোমার প্রব….’

আহিদের কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে মাইশা নম্র কণ্ঠে বলে,’ হুম যাবো আমি আপনার সাথে।’

মাইশা আহিদের সাথে যেতে রাজি হয়ে গেলো।উপায় নেই না গিয়ে?তার গায়ে আর শক্তি নেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রিকশার জন্যে অপেক্ষা করা।বা গলা উচিঁয়ে রিকশা ডাকা।তাছাড়া রিকশা পেলেও সেটা রিস্কি হয়ে যাবে।একা একা রিকশায় বসবে।যেই হারে মাথা ঘুরাচ্ছে।রিকশা থেকে পরেও যেতে পারে।তখন আরও বিরাট সমস্যায় পরতে হবে ওকে।আর আহিদ লোকটা খারাপ না।সেদিন ওকে কিভাবে হ্যাল্প করল।বিশ্বাস করা যায় লোকটাকে।মাইশা টলতে টলতে করিডোর থেকে নামতে যেতেই নিজের ভারসাম্য হারিয়ে পরে যেতে নিলো।কিন্তু তার আগেই ওকে সামলে নিলো আহিদ।মাইশার উদরে আড়াআড়িভাবে হাত রেখে ওকে সামলে নিয়েছে পরা থেকে।মাইশার যেন নিশ্বাস আটকে গেলো আহিদের ছোঁয়ায়।কাঁপতে লাগল শরীর।দ্রুত আহিদের কাছ থেকে সরে দাঁড়ালো।আহিদ চিন্তিত কণ্ঠে বলে,’ আর ইউ ওকে?’

মাইশা ছোট্টো কণ্ঠে বলে, ‘ হুম ঠিক আছি।’

আহিদ বলল,’ যদি কিছু মনে না করো।তবে বলছি।তুমি আমার হাত ধরে হাটতে পারো।যেভাবে টলছ তুমি।পরে গিয়ে ব্যথা পাবে।’

মাইশা ফ্যালফ্যাল চোখে তাকালো আহিদের দিকে।তারপর আবার তাকালো নিজের হাতের দিকে।আহিদের হাত ধরবে ও?ভাবতেই বুক কাঁপছে মাইশার।এদিকে মাইশার থেকে কোনো জবাব না পেয়ে হতাশ হলো আহিদ।কিন্তু তার হতাশা দূর করে মাইশা ওকে অবাক করে দিয়ে নিজের হাত বাড়িয়ে দিলো।আহিদ যেন না চাইতেও আকাশের চাঁদ পেয়ে বসেছে এমন মনে হচ্ছে ওর।খুশিতে কি করবে বুঝতে পারছে না।মাইশা যে ওকে এতোটা বিশ্বাস করে নিজের হাত ধরার অনুমতি দিবে ভাবতেই পারেনি।আহিদ কম্পনরত বুক নিয়েই মাইশার নরম তুলতুলে হাতটা ওর হাতের ভাঁজে নিয়ে নিলো।আবেশে মনপ্রাণ ভরে গেলো।আহিদ বিরবির করল,’ এইযে বিশ্বাস করে একটুখানি সময়ের জন্যে নিজেরটা হাতটা ধরাতে দিলে।ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই গোটা এই তুমিটাকে আমি এই হাতের মতোই খুব যত্নে আগলে রাখব।তুমি শুধু বিশ্বাস আর ভড়সা করো আমায়।’

মাইশা বুঝতে পারল না আহিদের কথা।তাই প্রশ্ন করল,’ কি বলছেন?শুনতে পায়নি আমি।’

আহিদ জোড়পূর্বক হেসে বলে,’ না কিছু না। ওই আসলে বলছিলাম রিকশায় যাবে না-কি সিএনজিতে?’

মাইশা ভাবলো।আহিদের সাথে এক রিকশায় যাবে বিষয়টা ভীষণ অসস্থিকর লাগবে ওর কাছে।সিএনজিতেই ভালো হবে।সিএনজিতে দুজন মানুষ বসেও অনেকখানি জায়গা ফাঁকা থাকবে।তাই মাইশা বলল,’ সিএনজিই ভালো হবে।’

আহিদ জানতো মাইশা সিএনজির কথাই বলবে।কারন রিকশায় দুজন একসাথে বসল গা ঘেষাঘেষি করে বসতে হবে।আর মাইশা সেভাবে আহিদের সাথে যাবে না।আহিদ আর কোনো কিছু বলল না। মাইশার হাত আগলে নিয়ে সাবধানে হেটে ভার্সিটির বাহিরে আসলো।তারপর একটা সিএনজি ডেকে মাইশাকে আগে বসিয়ে ও নিজে উঠে বসল।যেতে যেতে প্রিয়ানের ফোনে মেসেজ করে দিলো।
‘ প্রিয়ান বাসায় জরুরিতলব পরেছে আমার।বাবা ডেকেছেন। তাই আমি চলে যাচ্ছি।তোরা কি প্লানিং করলি তা রাতে ফোনে কথা বলে জেনে নিবো।’

মাইশার বাসার সামনে সিএনজি থামতেই আহিদ মাইশাকে নামতে সাহায্য করল।মাইশা সৌজন্যমূলক হেসে বলে,’ ধন্যবাদ ভাইয়া।অনেক সাহায্য করলেন আমায়। এই উপকার আমি কোনোদিন ভুলব নাহ।যদি কখনও আপনার কোনো কাজে হ্যাল্প করতে পারি এমন মনে হলে নির্দ্বিধায় আমায় বলবেন।’

আহিদ মুচঁকি হেসে বলে,’ ইটস ওকে।এটা আমার দায়িত্ব’র মধ্যে পরে।একটা অসুস্থ মানুষকে সাহায্য করেছি।মানুষ হয়ে মানুষকে সাহায্য করব এটাই স্বাভাবিক।’

‘ ধন্যবাদ ভাইয়া।এখন আসি তাহলে?’

আহিদ আমতা আমতা করে বলে,’ একা একা যেতে পারবে?নিজের ফ্লাটে।’
‘ হ্যা আমি আমার রুমমেটকে মেসেজ করেছি।আমায় যেনো একটু এসে বাসায় নিয়ে যায়।’

আহিদ যেন সস্থি পেলো।ওর মন চাইলো মাইশা বাসায় না পৌঁছানো পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে।কিন্তু বিষয়টা দৃষ্টিকটু দেখায়।মাইশা বলল ওর রুমমেট আসবে ওকে এগিয়ে নিতে।যদি এসে দেখে মাইশার সাথে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।তাহলে বিষয়টা অন্যভাবে নিতে পারে।খারাপ ভাববে মাইশাকে।তাই আহিদ চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিলো।আহিদ বলল,’ তবে আসি?নিজের খেয়াল রেখো।আর মেডিসিন নিও ঠিকঠাক।’
‘ আচ্ছা।আল্লাহ্ হাফেজ।’

আহিদ সিএনজিতে উঠে বসল।চোখের পলকেই আহিদ চলে গেলো মাইশার সামনে দিয়ে।মাইশা সেদিকে একধ্যানে তাকিয়ে রইলো।ওর কেমন যেন লাগছে।অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে।যেই অনুভুতির নাম কি সে নিজেও জানে না।এর মধ্যে মাইশার রুমমেট এসে পরেছে।এসেই জিজ্ঞেস করে,’ কি হয়েছে মাইশা?শরীর বেশি খারাপ লাগছে?আমি বলেছিলাম আজ ভার্সিটিতে যেও না।’

মাইশা মৃদ্যু হেসে বলে,’ আমি ঠিক আছি আপু।আমার একফ্রেন্ড আমায় বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেলো।তুমি একটুখানি হেল্প করো আমায় রুমে যেতে।’
‘ আচ্ছা চলো।’

অতঃপর মাইশা তার রুমমেটের সাহায্যে নিজের ফ্লাটে চলে গেলো।
————
এদিকে প্রিয়ান ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে মোবাইলের দিকে।ওকে এমন দেখে পিহু বলে উঠে,’ কিরে?তোর আবার কি হলো?এমন করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?’

প্রিয়ান মোবাইলটা পকেটে ঢুকিয়ে নিলো।বলল,’ আহিদ মেসেজ করেছে ও নাকি বাসায় চলে গিয়েছে।আংকেল নাকি জরুরি কাজে ওকে ডেকেছে।’

অথৈ বলল,’ হ্যা,যেতেই পারে এখানে এইভাবে রিয়েক্ট করার কি আছে?’

প্রিয়ান মুখ দিয়ে ‘চ’ শব্দ করে বিরক্তি প্রকাশ করে বলে,’ আরেহ এতে আমার কি সমস্যা হবে?সমস্যা তো অন্যকিছু।’

পিহু ভাবুক গলায় বলল,’ আব্বু আহিদকে জরুরি কাজে ডেকেছে।কিন্তু আব্বু তো বাড়িতে নেই।সে এখন ইন্ডিয়াতে আছে কাজের সূত্রে।গতকালকেই তো গেলো।’

রিধি পিহুর মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে বলে,’ আংকেল আউট ওফ কান্ট্রি থাকলে ও তাহলে মিথ্যে বলল কেন আমাদের কাছে?’

প্রিয়ান শান্ত কণ্ঠে বলে,’ আমার কিন্তু সন্দেহ হচ্ছে।’

অথৈ প্রশ্ন করল,’ কি সন্দেহ হচ্ছে?’
‘ এই আহিদ আমাদের পিঠপিছে কোনো মেয়ের সাথে প্রেম করছে।’

সবার চোখ কপালে উঠে গেলো।কেউ যেন বিশ্বাস করতে পারছে না।রিধি চেচিঁয়ে উঠল,’ অসম্ভব! এ হতে পারে না।এমন হলে আহিদ আমাদের আগে জানাতো।’
‘ এক্সেক্টলি আমারও বিলিভ হচ্ছিলো না।বাট আমি নিজ চোখে দেখেছি।’

পিহু বলল,’ কি দেখেছিস?’
‘ একটু আগে আহিদ একটা মেয়ের হাত ধরে ভার্সিটি থেকে বারিয়ে গিয়েছে।’

আহিদের এহেন কথায় যেন আরও চমকে গেলো তারা।সবাই একসাথে চেচাঁলো,’ কিহহহহহ?’

প্রিয়ান সাথে সাথে কানে হাত দিলো।নাক মুখ কুচকে বলে,’ বেত্তমিজের দল।আস্তে চিল্লা।অকালে আমাকে বয়রা করার মিশনে নেমেছিস না কি তোরা?’

ওদের যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না আহিদ এমন কিছু করবে।তাও আবার ওদের না জানিয়ে।মানে আহিদ ভালোবাসতে পারে কাউকে।কিন্তু ওদেরকে না জানিয়ে কোনো রিলেশনে যাবে না আহিদ।এইটুকু ওরা জানতো।কিন্তু প্রিয়ান যা বলছে তাও ফেলে দেবার মতো কথা নয়।প্রিয়ান তো আর মিথ্যে বলবে না।হচ্ছে টা কি ওদের সাথে?পিহু দাঁত দিয়ে নখ কাটছে ভয়ে।ওকে এমন অস্থির আচরণ করতে দেখে প্রিয়ান ধমকে উঠল,’ এমন প্রতিবন্ধিদের মতো করছিস কেন?আর খচ্চরের মতো দাঁত দিয়ে নখ কাটছিস কেন?’

পিহু আহিদের কথায় ক্ষ্যাপে গিয়ে বলে,’ দেখ মাথা খারাপ করিস না।এমনিতেই টেন্সন লাগছে।’

রিধি বলে,’ কিসের টেন্সন?’

পিহু কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,’ আহিদ্দা যে প্রেম করতেছে।এইটা বাবা জানলে ওকে তো গুলি করে মারবেই সাথে আমাকেও মারবে।বলবে,
তোর ভাই প্রেম করে বেড়াচ্ছে।তুই কোথায় ছিলি?এসব দেখিসনি?দেখেও আমাকে কেনো জানাসনি?তোদের দুটোকেই আজ গুলি করে দিবো।
এখন আমার কি হবে দোস্ত?ভয়ে এখনই আমি বেহুশ হয়ে যাবো মনে হচ্ছে।’

পিহুর কথায় প্রিয়ানের গলা শুকিয়ে আসলো।ও নিজেও তো পিহুকে পছন্দ করে।পছন্দ করে বললে ভুল হবে।ভালোবাসে ও পিহুকে।এতোদিনে বেশ বুঝতে পেরেছে সেটা।তবে কি এই কথা পিহুর আব্বু শুনলে ওকেও গুলি করে দিবে? নাহ নাহ প্রিয়ান এসব কি ভাবছে।ভয় পেলে চলবে না।ভালোবাসলে মনে কোনো ভয় রাখতে নেই।ভয়কে জয় করতে হবে।আহিদ বিরবির করল,’ শশুড়আব্বাকে তো পরে দেখে নিবো।আগে তার মেয়েকেই ঠিকঠাক পটিয়ে নেই।’

পিহু প্রিয়ানকে বিরবির করতে দেখে বলে,’ কিছু বলছিস?’
‘ হ্যা না কিছু না।’

অথৈ নিজেকে শান্ত করল।স্বাভাবিকস্বরে বলে,’ আপাততো এই টপিক বাদ দে।আমরা আহিদকে কিছুদিন সময় দেই।আমার মনে হয় ও কোনো কারন বশতই আমাদের কাছ থেকে বিষয়টা লুকিয়েছে।তাই ওকে আমরা না ঘাটাই।দেখি কয়েকদিন অপেক্ষা করে যে ও নিজ থেকেই আমাদের কাছে এসে এই ব্যাপারে বলে কি না।যদি দেখিস অনেকদিন হয়ে যাওয়ার পরেও আহিদ কিছু বলছে না।তাহলে আমরা সবাই কি আহিদকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করব ঠিক আছে?আপাততো ট্যুরের বিষয়ে ভাব।ভাইয়া তো রাজি হয়ে গিয়েছে।বাকিদেরও কোনো সমস্যা নেই।আমরা সবাই একসাথে ট্যুরে যাবো।ভাবলেই আমার মনের মাঝে অনেক উত্তেজনা কাজ করছে!’

রিধি দুষ্টু হেসে বলে,’ কি ব্যাপার রিধি আগে তো আমরা একসাথে ট্যুরে গেলে তুই এতোটা খুশি হতিস না।এখন তোকে যেতোটা খুশি দেখাচ্ছে।’

অথৈ আনন্দিত গলায় বলে,’ আরেহ আগে তো মাত্র আমরা পাঁচজন যেতাম।এখন দেখ কতোগুলো মানুষ।যতো বেশি মানুষ একসাথে যাবো ততোই হইহুল্লোড়,আর মজা বেশি হবে।’

পিহু ভ্রু নাচিয়ে বলে,’ হুম হুম! আমরা জানি তো কেনো তুই এতো খুশি।রুদ্রিক ভাইয়ার সাথে ঘুরতে যাবি।একা একা কতো সময় কাটাবি।স্পেশাল মোমেন্ট ইউ নো নাহ?’

রিধির এহেন কথায় অথৈ থতমত খেয়ে যায়।পরক্ষণে কিছু একটা ভাবতেই লজ্জায় ওর গাল দুটো লাল হয়ে যায়।
প্রিয়ান হেসে ওকে দেখিয়ে বলে,’ আরেহ দেখ দেখ।আমাদের অথৈ কিভাবে ব্লাশ করছে রুদ্রিক ভাইয়ের কথা বলতেই।’

অথৈ লজ্জামিশ্রিত হেসে বলে,’ যাহ,কি শুরু করলি তোরা?আমি কি তার সাথে একান্তে হানিমুনে যাচ্ছি না-কি?এমনভাবে বলছিস।’

‘ হুম, হুম,।বুঝি,বুঝি।’

ওরা সবাই নানানভাবে অথৈকে ক্ষ্যাপাতে লাগল।তবে অথৈ আসলেই অনেক বেশি খুশি।ও আর রুদ্রিক ঘুরতে যাবে।সেখানে গেলে একান্তে কিছু সময় কাটাবে।কিছু মিষ্টি মধুর স্মৃতি নিয়ে ফিরে আসবে তারা।এসব ভাবতেই অথৈ আরেকদফা লজ্জা পেলো।হ্যা,ওরা গিয়ে আবার রুদ্রিক আর ইহানের সাথে কথা বলেছে।ইহান এইবার বোনের এককথাতেই রাজি হয়ে গিয়েছে।আর দ্বিমত করেনি।কারন গতকাল থেকেই অথৈ ইহানের সাথে কথা বলছিলো না।এখন যদি আবার দ্বিমত করে তবে দেখা যাবে রেগে ওর দিকে তাকানও বন্ধ করে দিবে।তাই একবাক্যেই রাজি হয়ে যায়।ইহান রাজি মানে বাকিদেরও সমস্যা নেই।সবাই ঘুরতে যাবার জায়গাও নির্ধারণ করে ফেলল।তারা যাবে ভারতের মেঘালয়ে।অথৈয়ের অনেকদিনের স্বপ্ন সে মেঘালয় যাবে।মূলত সাজেক যাবার পর থেকেই তার মেঘালয় যাবার ইচ্ছেপোষণ হয় মনে।আর এখন তা অতিদ্রুত বাস্তবায়ন হবে।সবারই পাসপোর্ট আছে তাই সমস্যা হবে না।রুদ্রিক, ইহান,সাফাত,নীল আর অনিক বলেছে আরও অনেক কাজ আছে মেঘালয় যাওয়ার আগে।সেগুলোর দায়িত্ব তারা নিবে।বেশি না এইতো আর চার-পাঁচদিন পরেই ওরা রওনা হবে।মেঘালয় যাওয়ার সিদ্ধান্তে সবাই বেশ খুশি।কারন বাংলাদেশের প্রায় অনেক জায়গায় তাদের ঘুরাঘুরি শেষ।এবার নাহয় দেশের বাহিরে যাওয়া যাক।অথৈ আরও বলেছে তারা ট্রেনে করে যাবে।মানে ঢাকা থেকে আগে সিলেটে তো যেতে হবে।তাই তারা ট্রেন জার্ণি করেই যাবে।সবাই একসাথে আনন্দ করতে করতে যাবে।ভাবতেই কেমন যেন অতি অতি সুখ সুখ লাগছে অথৈয়ের।

#চলবে_________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here