মনের_উঠোন_জুড়ে #পর্ব_১৩

#মনের_উঠোন_জুড়ে

#পর্ব_১৩

#লেখনীতে_নূন_মাহবুব

-“আই লাভ ইউ সাহিত্য স্যার।আপনি সত্যি বাস্তবে এসেছেন? আপনি তো রোজ রাতে আমার স্বপ্নে আসেন। আমার সাথে গল্প করেন।আর আজ বাস্তবে ও এসেছেন? আই কান্ট বিলিভ দিস। সাহিত্য স্যার প্লিজ আপনার সাথে একটা সেলফি তুলি। আমার ফ্রেন্ডদের দেখিয়ে বললো, সাহিত্য স্যার দিলের টানে আমার বাসায় এসে হাজির হয়েছে।”

-” আরে বাবু ! এটা কি করছো তুমি? এইভাবে কেউ কোমর জড়িয়ে ধরে?”

-” আমি বাবু না। আমার নাম পাখি।আর কোমর জড়িয়ে ধরবো না তো কি করবো? আপনি তো অনেক লম্বা। তাছাড়া একটা মেয়ে রয়েছে আপনার কোলে।তাই তো বুদ্ধি করে কোমর জড়িয়ে ধরেছি। পরক্ষণে আবার প্রিয়া মন খারাপ করে বললো, আপনার কোলে ঐ শা’ক’চু’ন্নী টা কে?ওকে কোলে নিয়েছেন কেন আপনি? আপনি শুধু আমাকে কোলে নিবেন,আর কাউকে না। কে হয় ঐ মেয়েটা আপনার?”

-” সাহিত্য আমতা আমতা করে কিছু বলার আগেই আবৃত্তি বললো,ও শিক্ষা। আমার কাজিন।”

-” ও আচ্ছা। কাজিন কথাটা আগে বলবেন তো।পাখি কানে হাত দিয়ে বললো,সরি সাহিত্য স্যার।”

-“সাহিত্য হেসে দিয়ে বললো, তুমি তো দেখছি অনেক…

-” হ্যাঁ হ্যাঁ জানি আমি অনেক কিউট। এজন্য সবাই আমাকে মিষ্টি পাখি বলে ডাকে। জানেন স্কুলে গেলে কতো ছেলে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু আমি কাউকে পাত্তা দেই না। আমার #মনের_উঠোন_জুড়ে শুধু আপনার বসবাস ।এই পাখির কাছে কেউ পাত্তা পাবে না। শুধু মাত্র একজন ছাড়া।আর এই একজন হলেন আপনি।”

-” ও আচ্ছা তাই নাকি? তো তুমি কোন ক্লাসে পড়ো বাবু?”

-” পাখি হাত দিয়ে দেখিয়ে বললো ,অনেক বড়ো ক্লাসে পড়ি স্যার ‌। ক্লাস সিক্সে।”

-” ও মাই গড!”

-“সাহিত্যের কথা শুনে আবৃত্তি বললো, কাম অন ভাইয়া।ডিজিটাল যুগের বাচ্চা বলে কথা। এতটুকু স্মার্ট না হলে কি হয় বলো তো ? অথচ আমার স্পষ্ট মনে আছে পাখির মতো বয়সে মম আমাকে ক্লাসে নিয়ে গিয়ে আমার সাথে বসে থাকতো।মম কে ছাড়া আমি এক মিনিট ও ক্লাসে থাকতাম না। সে কি কান্না জুড়ে দিতাম। সত্যিই সেই দিন গুলো খুব মিস করি।”

-” হুম আমি ও।”

-” আবৃত্তি পাখির গাল টেনে প্রিয়ার কথা জিজ্ঞেস করছে, এর‌ই মধ্যে প্রিয়া কিচেন থেকে বললো, হ্যাঁ রে পাখি কে এসেছে?”

-” তুমি এসে দেখে যাও আপু। আমার স্বপ্নের পুরুষ এসেছে। আমি সাহিত্য স্যার কে পছন্দ করি বলে তুমি সবসময় আমাকে গাল মন্দ করো। কিন্তু দেখো সে আজ নিজে থেকে আমাকে দেখতে চলে এসেছে।”

-” প্রিয়া এসে দরজায় সাহিত্য আর আবৃত্তি কে দেখে প্রিয়ার চুল টেনে দিয়ে বললো, গা’ধা কোথাকার। ওদের কে ভেতরে আসতে না দিয়ে গল্প জুড়ে দিয়েছিস।তোকে কতোবার বলেছি কোনো মেহমান আসলে আগে তাকে ভেতরে নিয়ে বসতে দিতে হয়।”( লেখিকা নূন মাহবুব )

-” আহ্ প্রিয়া! শুধু শুধু বাচ্চা মেয়েটা কে বকছিস কেন?”

-” তুই পাখির হয়ে কথা বলিস না আবৃত্তি। কিন্তু তোদের কি হয়েছে? শিক্ষার এই অবস্থা কেন? তুই না বর্ণের বার্থ ডে পার্টিতে গেছিস? কিন্তু এইখানে এইভাবে? আমি কিছু বুঝতে পারছি না।”

-” ডোন্ট প্যানিক। তেমন কিছু হয় নি আমার। শিক্ষা আর ভাইয়ার একটু আঘাত লেগেছে।আমি পরে তোকে সবটা বুঝিয়ে বলছি।”

-” ঠিক আছে, ভেতরে আয়। আমার পরিচিত ডক্টর আঙ্কেল কে কল করছি। এক্ষুনি চলে আসবে।”

-” কিছুক্ষণ পর ডক্টর এসে শিক্ষার চেক আপ করে বললো, চিন্তার কোনো কারণ নেই। দূর্বলতার জন্য অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো।ওর খাওয়া দাওয়ার প্রতি একটু খেয়াল রাখবেন।আর হ্যাঁ আমি কিছু ঔষধ আর মলম দিয়ে যাচ্ছি। এগুলো ঠিক টাইমে ওকে দিবেন।”

-“ঠিক আছে ডক্টর।”

-” তাহলে আমি এখন আসছি কেমন?”

-” না না আঙ্কেল।একটু চা নাস্তা করে যান।”

-“আকাশের অবস্থা ভালো না প্রিয়া। যেকোনো সময় বৃষ্টি আসতে পারে। আমি অন্য একদিন এসে শুধু চা নাস্তা নয় একদম কব্জি ডুবিয়ে খেয়ে যাবো।”

-” ঠিক আছে। সাবধানে যাবেন আঙ্কেল।”

-” ডক্টর যাওয়ার পর আবৃত্তি পুরো ঘটনা প্রিয়া কে খুলে বললো। সব শুনে প্রিয়া বললো,সরি রে আমার জন্য তোর এই বাজে পরিস্থিতির শিকার হতে হলো।আমি যদি রাতে তোকে আমাদের বাড়ি না আসতে বলতাম,তাহলে হয়তো তোর সাথে এসব কিছু হতো না। নিজেকে আমার অপরাধী মনে হচ্ছে আবৃত্তি। তুই আমাদের বাড়ি আসিস নি দেখে আমি ভেবেছিলাম তুই হয়তো আমাকে রেখে বর্ণদের বাড়ি চলে গেছিস।তাই তোর উপর অভিমান করে আমি নিজেও বর্ণদের বাড়ি যাই নি।আর না তোকে কল করে জানতে চেয়েছি তুই গেছিস কি না।”

-” থাক না প্রিয়া।যা হবার হয়েছে। তুই একটু শিক্ষার কাছে থাক। আমি পাপা কে কল করে আসি। শিক্ষাকে না দেখতে পেয়ে নিশ্চয় টেনশন করবে।আমি ইনিয়ে বিনিয়ে কিছু একটা বলে আসি।”

-” ঠিক আছে যা।”

___________________________________

-” শিক্ষা মোটামুটি সুস্থ্য এখন। যদিও শিক্ষা একটু বেটার ফিল করার পর বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলো। কিন্তু অনেক ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে।যার কারণে তারা বাড়ি ফিরতে পারে নি।প্রিয়াদের বাড়ি রাত্রি যাপন করতে হচ্ছে।রাতে ডিনারের জন্য প্রিয়া আর আবৃত্তি মিলে খিচুড়ি , গরুর গোশত , শুকনো মরিচ ভর্তা, ডিম ভাজি করে রেখে সবাই মিলে গল্প গুজব করছে। তাদের গল্পের মাঝে পাখি এসে বললো,জানেন সাহিত্য স্যার আমি আপনাকে কত্তো ভালোবাসি? অবশ্য আপনার জানার কথা নয়।কারণ আমি তো আপনাকে কখনো আমার ভালোবাসার কথা বলি নি। আপনি আমাকে বিয়ে করবেন সাহিত্য স্যার? আমাদের বিয়ে হবে , অনেক গুলো বাচ্চাকাচ্চা হবে।”

-“এতটুকু বাচ্চা মেয়ের কথা শুনে সাহিত্য ঢোক গিলে ফললো, কিন্তু আমি তো বিবাহিত পাখি। আমার ব‌উ আছে।এখন বাচ্চাকাচ্চা হ‌ওয়াটাই বাকি।সেটাও খুব শ্রীঘ্রই হয়ে যাবে। যদি আমার বউ চায়।”

-” সমস্যা নেই স্যার।আমি সতীনের সংসার করতে পারবো। বিশ্বাস করেন আমরা দুইজন বোনের মতো মিলেমিশে সংসার করবো।একটু ও ঝগড়া করবো না।”

-“সাহিত্য প্রিয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো,আমার ব‌উ কিন্তু অনেক হিংসুটে, গুন্ডি টাইপের। তোমার মাথায় একটা চুল ও অবশিষ্ট থাকবে না দেখো।আর সে কখনো আমাকে দ্বিতীয় বিয়ে করার অনুমতি দিবে না।আমাকে জ্যা’ন্ত পুঁ’তে দেবে।”

-” বাব্বা আপনি এতো বড়ো একজন সিআইডি অফিসার হয়েও ব‌উ কে ভয় পান?”

-” ব‌উকে ভয় পায় না ,এমন পুরুষ হয়তো পৃথিবীতে একটা ও নাই। বেচারা পুরুষেরা বাইরে বাঘ। কিন্তু ঘরে ব‌উয়ের কাছে ভেজা বেড়াল। তুমি সবে মাত্র ক্লাস সিক্সে পড়ো।এখনো সময় আছে ভালো করে পড়াশোনা করো ।দেখবে আমার থেকে বড় কোন রাজপুত্র আসবে তোমার জীবনে।”

-“আমার বড়ো কোন অফিসারের প্রয়োজন নেই। আমার আপনাকে চাই সাহিত্য স্যার।আমি আপনার ব‌উকে ম্যানেজ করে নিবো। দরকার হলে শিক্ষা আপুকে নিয়ে যাবো আপনার ব‌উয়ের কাছে।আপু দেখতে যেমন মিষ্টি,তেমনি তার ব্যবহার ও মিষ্টি।আপু ঠিক আপনার ব‌উ কে বুঝিয়ে বলতে পারবে।পাখি শিক্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,আপু তুমি যাবে তো আমার সাথে স্যারের ব‌উয়ের কাছে?”

-” হ্যাঁ হ্যাঁ যাবো তো পাখি। পাখির কথা শুনে প্রিয়া ফোন নিয়ে বাইরে চলে গেলো। তৎক্ষণাৎ সাহিত্যের ফোনে একটা মেসেজ আসলো, কারো যদি ব‌উয়ের দরকার হয়,আরো তিনটা বিয়ে করতে পারে। আমার তার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই।”

-” সাহিত্য মুচকি হেসে রিপ্লে দিলো, নির্ঘাত বাচ্চা মেয়ে টা মানতে চায়ছে না,তাই তাকে বোঝাতে বলতে হয়েছে। কিন্তু আপনি এমন ভাব করছেন যেন আপনার প্রতি আমার ইন্টারেস্ট বেয়ে বেয়ে পড়ছে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here