মনের_উঠোন_জুড়ে #পর্ব_১০

#মনের_উঠোন_জুড়ে

#পর্ব_১০

#লেখনীতে_নূন_মাহবুব

-” শিক্ষা আবৃত্তির দেওয়া রয়েল ব্লু কালারের শাড়ি টা পরেছে। চোখে দিয়েছে হালকা কাজল, ঠোঁটে খয়েরী লিপস্টিক, লম্বা চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে। মোটামুটি শিক্ষা সাজ কম্পিলিট করেছে তখনি শিক্ষা আয়নাতে দেখে তার কানের দুল পরা হয় নি। শিক্ষা কোন দুল জোড়া পরবে ভাবতে ভাবতে তার চোখ যায় রাতে সাহিত্যের দেওয়া সেই গিফট বক্সের দিকে। গতরাতে সাহিত্যের খাওয়া শেষ হলে শিক্ষা যখন তার রুম থেকে বেরোতে যাবে ,তখন সাহিত্য শিক্ষার হাতে গিফট বক্স দিয়ে বলে, এটা তোর জন্য শিক্ষা।তোকে তো কখনো কিছু দিতে পারি নি।তাই আমার পক্ষ থেকে তোর জন্য এই ছোট্ট উপহার।”

-” কি আছে এর মধ্যে?”

-” এয়ারিং ।আমি নিজে পছন্দ করে তোর জন্য কিনেছি।তোর কাছে একটা অনুরোধ এই এয়ারিং জোড়া সবসময় কানে পরে থাকবি। আমার ভালো লাগবে।”

-” ঠিক আছে। শিক্ষা কি মনে করে সাহিত্যের দেওয়া এয়ারিং জোড়া পরে।বেশ সুন্দর লাগছে তাকে দেখতে।হয়তো এয়ারিং জোড়া তার সাজ পরিপূর্ণ করে দিয়েছে। শিক্ষা সবে রুম থেকে বের হতে যাবে তখনি দেখে আবৃত্তি ভিডিও কল করেছে। শিক্ষা খুশি মনে কল রিসিভ করে চমকে উঠে।শিক্ষার সামনে ভেসে ওঠে পরিচিত একটা মুখ। শিক্ষা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে আবৃত্তি আপুর ফোন তোর কাছে কেন দিগন্ত আগারবা’ল? আবৃত্তি আপুর সাথে কি করেছিস তুই? উত্তর দিচ্ছিস না কেন?”( লেখিকা নূন মাহবুব )

-” তোমাকে যা লাগছে না সুন্দরী?শাড়িতে দারুন হট লাগছে তোমাকে। নিজেকে কন্ট্রোল করা দায় হয়ে যাচ্ছে আমার। তোমার রুপের আগুনে ঝলসে যাচ্ছি আমি।”

-” তোর ননস্টপ বকবক যদি বন্ধ না করিস ট্রাস মি আমি তোর জিভ টেনে ছিঁড়ে দিবো।তোকে আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি। আবৃত্তি আপুর ফোন তোর কাছে কেন? আবৃত্তি আপুর সাথে নিশ্চয় খারাপ কিছু করেছিস তাই না?”

-“খারাপ কিছু করি নি।তবে করতে কতোক্ষণ? দেখতে চাও আবৃত্তি ডার্লিং কোথায় ? দিগন্ত পেছনের ক্যামেরা অন করে দিয়ে বললো, ঐ যে দেখ ।”

-” শিক্ষা দেখতে পেল আবৃত্তি কে কোনো একটা পরিত্যাক্ত রুমে চেয়ারে বসিয়ে হাত পা বেঁধে মুখের মধ্যে কাপড়ের দলা পাকিয়ে দেওয়া হয়েছে ।যাতে চিৎকার করতে না পারে। আবৃত্তির চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গিয়েছে, চোখের কাজল লেপ্টে গিয়েছে। অনেক সময় কান্নার ফলে চোখ ফুলে উঠেছে।যা দেখে শিক্ষার কলিজা মোচড় দিয়ে উঠলো। শিক্ষা চিৎকার করে বললো, তুই কি আদৌ কোনো মানুষ? আমার মনে হয় না তুই কোনো মানুষ। তুই একটা জা’নো’য়া’রে’র থেকে ও নিকৃষ্ট। ”

-” কিপ ইউর ভয়েস ডাউন বেবি। জা’নো’য়া’রে’র মতো এখনো কিছু করি নি ।তবে করবো।”

-” ভুলেও আবৃত্তি আপুর দিকে হাত বাড়ানোর চেষ্টা করবি না।আমি এক্ষুনি সিআইডি কে জানাচ্ছি।আই হ্যাভ টু ইনফর্ম সিআইডি।”

-” হা হা হা। সিআইডি কে জানানোর মতো ভুল করো না বেবি।এর ফল ভালো হবে না।জানো তো আমি আবৃত্তি বেবি কে কিডন্যাপ করতে চাই নি। ইনফ্যাক্ট তোমাকে দেখার পর ওর প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট কাজ করছে না আমার। আমার শিকার তো তুমি।আই নিড ইউ ব্যাডলি‌ বেবি। কিন্তু আমি জানতাম এতো সহজে আমি তোমার নাগাল পাবো না।তাই তো আবৃত্তি বেবি কে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করেছি।আমি জানতাম আবৃত্তির ডাকে তুমি ঠিক ছুটে আসবে।এখন তুমি যদি আমার খাঁচায় ধরা দাও ,আমি নিজেই আবৃত্তি বেবি কে ছেড়ে দিবো, অন্যথায় কি হবে নিশ্চয় বুঝতে পারছো? আবৃত্তির মুখে হাত দিয়ে স্লাইড করতে করতে বললো দিগন্ত।”

-” আবৃত্তির গোঙানি শুনে দিগন্ত বললো, তুমি কিছু বলতে চাও বেবি? ওকে বলো বলে আবৃত্তির মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে দিলো দিগন্ত। মুখের মধ্যে থেকে কাপড় সরিয়ে দিলে আবৃত্তি জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বললো, তুই আসবি না শিক্ষা।এই ব’দ’মা’শ তোকে আস্ত রাখবে না।তোকে খুবলে খুবলে খাবে।আমি নিজের জন্য তোকে বিপদে ফেলতে পারি না শিক্ষা। আমার যা হয় হোক তুই এই জা’নো’য়া’রে’র কথা শুনবি না।আসবি না তুই এইখানে।”

-” আমি থাকতে আপনার কিচ্ছু হবে না আবৃত্তি ম্যাম। ডোন্ট টেক এ টেনশন।আ’ম কামিং বলে ফোন কেটে দেয় শিক্ষা। শিক্ষা রুম থেকে বেরিয়ে দেখে সাদ্দাম শিকদার,অন্তরা , জাকিয়া জেসমিন সবাই ড্রয়িং রুমে বসে রয়েছে। শিক্ষা মনে মনে বললো, আমি তো কাউকে এই বিষয়ে জানাতে পারবো না।যা করার আমার একার করতে হবে। কিন্তু আমি বাড়ির বাইরে যাবো কি করে? শিক্ষাকে নিচে নামতে দেখে সাদ্দাম শিকদার এগিয়ে এসে বললো, তুই তো রেডি হয়ে গেছিস। আবৃত্তি বলেছিলো আমাকে কল করলে আমি যেন তোকে ভার্সিটির সামনে ড্রপ করে দিয়ে আসি‌। কিন্তু মেয়েটা এখনো কল করে নি। মাত্রই আমি কল করেছিলাম ‌। ফোন বন্ধ বলছে।”

-“আসলে বড় আব্বু আমার প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে। আমার যেতে ইচ্ছে করছে না। আমি উপরে গিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছি। তুমি তোমার কাজে চলে যাও।”

-” ঠিক আছে। তাহলে উপরে গিয়ে চেন্জ করে মাথা ব্যথার ঔষধ খেয়ে নে।”

-” ঠিক আছে বলে শিক্ষা উপরে এসে শাড়ি পাল্টে আলমারি থেকে একটা জিন্স আর কামিজ পরে নিলো।সাথে কামিজের উপরের একটা কটি পরে গলায় ওড়না ঝুলিয়ে বেলকনির দরজা খুলে উপর থেকে সতর্কতার সাথে পাইপ বেয়ে নিচে নেমে দিগন্তের দেওয়া লোকেশনে ছুটতে লাগলো।
___________________________________

-” বর্ণ সাহিত্যের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো , এনি প্রবলেম স্যার।”

-” নো ডেয়ার। এভরিথিং ইজ ওকে।বাট নাউ আই হ্যাভ টু লিভ।ইনজয় ইউরসেল্ফ।”

-” কিন্তু কেন স্যার? এখনো পার্টি শুরু হলো না।আর আপনি এভাবে চলে যাবেন?”

-” আমার একটা জরুরী কাজ পড়ে গিয়েছে।আমাকে যেতে হবে। তুমি প্লীজ কিছু মনে করো না বর্ণ । সাহিত্যের চলে যাওয়া দেখে নির্জন এগিয়ে এসে বললো, কিরে শা’লা কি হয়েছে? কোথায় যাচ্ছিস তুই?”

-” আবৃত্তি কে পাওয়া যাচ্ছে না।কেউ আবৃত্তি কে কিডন্যাপ করেছে।”

-“হোয়াট?”

-” তুই এই ব্যাপারে কাউকে কিছু বলিস না। আবৃত্তির মানসম্মানের ব্যাপার।”

-” ডোন্ট ওয়ারি ।এই চিনেছিস তুই আমাকে? তোর বোন মানে আমারো বোন। চল আমি ও যাচ্ছি তোর সাথে।”

-” না ,না। তুই এইখানে থাক। আমি দেখছি ব্যাপার টা। প্রয়োজনে তোকে কল করবো।”

-” ওকে।”

-” সাহিত্য মন্ত্রীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা নিজের বাসায় এসে কাজের মেয়ে সাথী কে দেখে জিজ্ঞেস করে, শিক্ষা কোথায় জানিস কিছু?”

-” হ জানি। শিক্ষা আফা আবৃত্তি আফার লগে কনে জানি যাতি চায়ছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে আফার নাকি মাথা ঘুরে পেছনে চলে গেছিল আই মিন মাথা ঘুরছিলো ।তাই আর শিক্ষা আফায় কোথাও যায় নি।তবে আবৃত্তি আফায় দশটা নাগাদ বাড়িরতে বাহির হয়ে গেছে।আপনি দুই মিনিট খাঁড়ান আমি পাঁচ মিনিটে শিক্ষা আফারে নিচে ল‌ইয়া আইতেছি।”

-” থাক! তোর দুই মিনিটে গিয়ে পাঁচ মিনিটে আসার কোনো প্রয়োজন নেই।আমি নিজে গিয়ে দেখছি মহারানী কোথায় আছে। সাহিত্য শিক্ষার রুমে এসে দেখে বিছানার উপর চাদর মুড়ি দিয়ে কেউ শুয়ে রয়েছে। সাহিত্য চাদর উঠিয়ে দেখে কোলবালিশের গায়ে চাদর দিয়ে রাখা রয়েছে।সবাই কে বোকা বানানোর জন্য।সবাই যাতে এটায় মনে করে সে অসুস্থ তাই চাদর গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে। সাহিত্যে সব জায়গায় শিক্ষা খোঁজে কিন্তু শিক্ষা কোথাও নেই। পরক্ষণেই সাহিত্যের চোখ যায় বেলকনির দরজার দিকে। বেলকনির দরজা খোলা রয়েছে। সাহিত্য ভাবে , তারমানে শিক্ষা বেলকনির দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেছে। কিন্তু শিক্ষা এতো উঁচু থেকে নামলো কিভাবে? সাহিত্য মাথা ধরে বিছানায় বসে পড়ে। হঠাৎ তার মনে পড়ে গত রাতে শিক্ষা কে দেওয়া এয়ারিং এর কথা।যার মধ্যে সে একটা চিপ লাগিয়ে দিয়েছিলো।যাতে খুব সহজে শিক্ষা কোথায় কোথায় যায় সেটা জানতে পারে। সাহিত্য আর দেরি না করে শিক্ষার লোকেশন ট্রাক করে দেখে তাদের বাড়ির পেছনে শিক্ষার লোকেশন দেখাচ্ছে। সাহিত্য দরজায় লাথি দিয়ে বললো ওহ্ শিট !তার মানে শিক্ষা হয়তো জেনে গিয়েছে আমি এয়ারিং এর মধ্যে চিপ লাগিয়ে দিয়েছি।আর শিক্ষা ইচ্ছা করে চিপ লাগানো এয়ারিং বাড়ির পেছনে ফেলে রেখে গেছে। কিন্তু কেন? কি করতে চায়ছে শিক্ষা??

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here