মনের_উঠোন_জুড়ে পর্ব:০৩ #লেখনীতে_নূন_মাহবুব

#মনের_উঠোন_জুড়ে

পর্ব:০৩

#লেখনীতে_নূন_মাহবুব

-” লিসেন শিক্ষা! আমি মোটেও মেয়েদের জড়িয়ে ধরে কথা আদায় করি না। তাদের জন্য মেয়ে অফিসার আছে। বাই দ্যা ওয়ে,আমি মেয়েদের কাছাকাছি গেলে তোর এতে সমস্যা কোথায়? তোর কি জ্বলে? কোথাও মনে হচ্ছে পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি।ভালো টালো বাসিস নাকি আমাকে?আর বাসলে ও তাড়াতাড়ি বলে দে।বিকজ সাহিত্য শিকদার কিন্তু এক পিস ই আছে। সাহিত্য শিকদার কে হারালে , কাঁদতে হবে আড়ালে মনে রাখিস।”

-” আপনি মেয়েদের কাছাকাছি যান, মেয়েদের হাগ করেন, কিস করেন বা তাদের সাথে ইন্টিমেন্ট হন , আপনার যা ইচ্ছা হয় করুন ‌‌।বাট আই ডোন্ট কেয়ার।এতে আমার জ্বলার কি আছে?আর র‌ইলো ভালোবাসার কথা। আমি আপনাকে ভালোবাসবো এইটা আপনি ভাবলেন কি করে? প্রয়োজনে হিরো আলম কে ভালোবাসবো, তবু ও আপনার মতো মানুষ কে কখনো ভালোবাসতে যাবো না। তাছাড়া আমি আগে ও আপনাকে বলেছি আর এখন ও বলছি আপনার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।”

-” হু যেই না চেহারা নাম রাখছে তার পেয়ারা। এমন ভাব করছে যেন তার প্রতি আমার ইন্টারেস্ট বেয়ে বেয়ে পড়ছে। আয়না তে কখনো নিজের ‌চেহারা দেখেছিস? শুধু ফার্মের পোল্ট্রি মুরগির মতো সাদা হলেই হয় না। চেহারার মধ্যে মায়া থাকা লাগে। যার দিকে তাকিয়ে এক যুগ পার করে দেওয়া যাবে।আর তোর দিকে তাকালে মনে হয় কোনো র’ক্ত চোষা ডা’ই’নী আমার দিকে তাকিয়ে আছে।যে কোনো সময় ঘাড় মটকে র’ক্ত চু’ষে খেয়ে র’ক্তশূন্য করে দিবে। তাছাড়া তুই ও খুব ভালো করে জানিস এই সাহিত্য শিকদারের জন্য কতো মেয়েরা পাগল। শুধু মাত্র একটা সেলফি তোলার জন্য কতো মেয়েরা ক্রাইম সিনের আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকে সে সম্পর্কে তোর কোনো ধারণা নেই।আর কোথাকার কোন ফার্মের সাদা মুরগি আসছে আমাকে ইন্টারেস্ট দেখাতে।তোর ইন্টারেস্ট ধুয়ে তুই পানি খা।”

-” পঁচা জিনিসের উপর বেশি মাছি ভনভন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কিছু লোক এটা বোঝে না।তারা নিজেকে বলিউডের সুপারস্টার মনে করে। শুনুন মিস্টার আমি যদি ফার্মের সাদা পোল্ট্রি মুরগী হয়,তাহলে আপনি ও ধলা মুলো।আর মুলো আমি ঘেন্না করি ঘেন্না। বুঝেছেন আপনি?”

-” এইসব আলতু ফালতু ল্যাঙ্গুয়েজ নিশ্চয় ঐ বুড়ির থেকে শিখেছিস তাই না? ঐ বুড়ি না জানি আর কি কি শিখিয়েছে তোকে ?যায় হোক আমি কিন্তু এখনো আমার প্রশ্নের উত্তর পাই নি। তুই একথা সেকথা বলে আমার সময় নষ্ট করছিস।এখন ঝটপট আমার প্রশ্নের উত্তর দে।”

-” শিক্ষা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাদ্দাম শিকদারের গলা শুনতে পেলো। তিনি প্লেটে খাবার নিয়ে এসেছেন শিক্ষার জন্য। সাদ্দাম শিকদারের সাড়া পেয়ে সাহিত্য শিক্ষা কে ছেড়ে দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। সাদ্দাম শিকদার শিক্ষার কাছে এসে বললো, আবৃত্তির কথায় খুব কষ্ট পেয়েছিস তাই না মনি?

-” না না বড় আব্বু। আবৃত্তি আপু আমাকে বোন হিসেবে না মানলেও আমি আবৃত্তি আপু কে ঠিক আমার বড় বোনের মতো দেখি।আর বড় বোন হিসেবে এটুকু কথা বলার রাইট আছে তার। তুমি শুধু শুধু আপু কে এতো গুলো কথা শুনিয়ে দিলে।‌কি দরকার ছিলো এত বড় মেয়ের গায়ে হাত তোলার?আমাকে না হয় দু চার টা কথা শুনিয়েছিলো। তাতে কি এমন হয়েছে শুনি? আমার কি শরীরের এক অংশ খসে‌ পড়েছে?জানি না আমি কি এমন করেছি যার জন্য আপু আমাকে সহ্য করতে পারে না।আমি তো সবসময় আপুর মন ভালো করার চেষ্টা করি।তার সাথে মিশতে চাই।আপু সবার সাথে ভালো ব্যবহার করে। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে আপু আমাকে দেখতে পারে না।আমাকে তার শত্রু মনে করে।”

-” সব‌ই তোর কপাল মনি।আজ যদি ভাই ভাবী বেচে থাকতো ,তাহলে তোর এতো অপমান সহ্য করতে হতো না। আচ্ছা মনি একটা কথা বল তো, তোর কি অতীতের কথা কিছুই মনে পড়ে না? ভাই ,ভাবী আই মিন তোর বাবা মায়ের কথা?”

-” না।ইনফ্যাক্ট আমি মনে করতে ও চাই না।চাই না আমার অতীত সম্পর্কে জানতে।আমি চাই না তুমি ,বড় আম্মু , আবৃত্তি আপু, দাদী এমনকি এই শিকদার ভিলা থেকে দূরে চলে যেতে।”

-” আর সাহিত্য?”

-“সাহিত্যের কথা শুনে শিক্ষা লজ্জা পেয়ে বললো, ধূর তুমি ও না বড় আব্বু!”

-” এতো লজ্জা পেতে হবে না। খাচ্ছিস না কেন ?তাড়াতাড়ি খাবার শেষ কর। এদিকে আয় আমি তোকে নিজে হাতে খাইয়ে দেই।”

-” খাবার গলা দিয়ে নামছে না বড় আব্বু। জানো তো আগামীকাল আমার এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে। খুব টেনশন হচ্ছে।কি যে হবে? আমি যদি তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে না পারি?”

-” তোর প্রতি বিশ্বাস আছে আমার। আমি জানি আমার মনি ঠিক ভালো রেজাল্ট করবে। ঠিকই আমার মুখ উজ্জ্বল করবে। আর ভালো রেজাল্ট করলে আমার পক্ষ থেকে তুই পেয়ে যাবি সারপ্রাইজ গিফট।যা তুই কল্পনাও করতে পারবি না।”

-” ও বড় আব্বু! বলো না কি সারপ্রাইজ?”

-” বোকা মেয়ে কি সারপ্রাইজ দিবো সেটা বলে দিলে কি আর সারপ্রাইজ থাকে? যখন দিবো তখন দেখে নিস। এখন তাড়াতাড়ি খাবার শেষ কর। আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি অফিসে গেলাম।আর হ্যাঁ আম্মার খেয়াল রাখিস।”

-” ঠিক আছে ,সাবধানে যেও।লাভ ইউ।”

-” লাভ ইউ টু বলে সাদ্দাম শিকদার রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। শিক্ষা খাবার শেষ করে নিজের রুমে এসে বিছানার তলা থেকে ‌একটা বাটন ফোন বের করে চুপিচুপি কোথাও ফোন দিলো।অপর পাশের ব্যক্তি ফোন রিসিভ করে বললো,
কি অবস্থা শিক্ষা? সব ঠিকঠাক আছে তো?

-” শিক্ষা বললো, হ্যাঁ সব কিছু আমাদের প্ল্যান মাফিক হয়েছে।”

-” কেউ সন্দেহ করে নি তো?’

-“না না কেউ কিচ্ছু ঠিক পায় নি। সবাই ভেবেছে আমি হয়তো মন্ত্রীর বাড়িতে ছবি চুরি করতে গিয়েছিলাম। আমার আসল উদ্দেশ্য কেউ টের পায় নি।আরে ঐ এসিপি রায়হান মীর না কি জানি নাম যাকে আমি চিনি ও না।কখনো দেখিনি।যার সম্পর্কে কিছু জানি না। তার ছবি কেন চুরি করতে যাবো বলো তো।যায় হোক এই লোকটার ছবি শেষ মুহূর্তে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।না হলে কি‌ যে হতো‌ আমার। মন্ত্রীর বাড়িতে সাংবাদিক ও ছিলো। মন্ত্রী মহোদয় আসলে অনেক দয়ালু। তিনি ব্যাপার টা নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছেন।তা না হলে আজ হয়তো ব্রেকিং নিউজে আমার নাম আগে থাকতো।”

-“একটা করে মনে রাখিস শিক্ষা তুই সিআইডি অফিসারের বাড়িতে অবস্থান করছিস। একবার যদি সাহিত্য তোকে সন্দেহ করে , তুই কিন্তু একদম শেষ হয়ে যাবি। সবসময় চোখ কান খোলা রাখবি।আর সাবধানে থাকবি।”

-“হ্যাঁ হ্যাঁ সাবধানে থাকবো তুমি টেনশন করো না ।”

-” যখন যা হয় আপডেট দিবি।”

-” হুম ডোন্ট ওয়ারি। আমি তোমাকে সবটা জানাবো।

-” ঠিক আছে রাখছি, বাই।”

-” শিক্ষা বাই বলতে যাবে তার আগেই পুরুষালী কণ্ঠে ভেসে আসলো, তুই লুকিয়ে লুকিয়ে কার সাথে কথা বলছিস শিক্ষা?”

-” পুরুষালী কণ্ঠে শিক্ষার হাত থেকে ফোন নিচে পড়ে যায়। শিক্ষা চুপিসারে পা দিয়ে ফোন টা খাটের নিচে লুকিয়ে মনে মনে বলে,লোকটা আমার রুমে কখন এসেছে কে জানে। লোকটা কি সব শুনে নিলো নাকি? ও মাই গড তাহলে কি আমার এতো দিনের পরিশ্রম ব্যর্থ হয়ে যাবে? লোকটা যেনে যাবে আমার ব্যাপারে সবকিছু?”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here