ভালোসার টান
part:43,44
writer:Tanzidaa Jannat
43
রুমা চলে গেলে,,,মিসকা শাড়িটা একটু ঠিক করে নিচে নেমে পড়লো,,,,
মিতু আর ফাহিমা বসে বসে মিসেস নিলুফার সাথে গল্প করছে,,,,,
মিসেস নিলুফাঃ কি হলো তোর কি ক্ষুধা নাই নাকি??
মিসকাঃ আসলে মা একটু গোজগাজ করছিলাম( আল্লাহ মাফ কর মিথ্যে বললাম 😔)
মিতুঃ মিসকা শোন আজ আমরা আসিরে৷,,,,,,,৷৷ পরীক্ষা আছে আজ ভার্সিটিতে যেতেই হবে,,,
মিসকাঃ এখনই চলে যাবি,,,,, 😔
ফাহিমাঃ মোন খারাপ করিস না পরীক্ষা শেষ হলে আমরা আবার আসবো,,,,,
মিসকাঃদুজনকে জরীয়ে ধরে,,, আবার কিন্তু আসবি,,,
মিতু আর ফাহিমা বিদায় নিয়ে চলে গেলো,,,,
মিসেস নিলুফাঃ আচ্ছা এখন খেয়ে নে,,,,ইফতি কখন ফিরবে বলেছে,,,
মিসকাঃ না মা কিছুতো বলে যায় নি,,,,,,,
মিসেস নিলুফাঃ ও আচ্ছা ঠিকাছে,,,
মিসকাঃ তুমি খাবে না মা??
মিসেস নিলুফাঃ আমরা খেয়ে নিয়েছি তোর বাবার সাথে,,,
মিসকাঃ ও
মিসকা খাওয়া শেষ করে মিসেস নিলুফার সাথে গল্প করছে,,,,কিছুক্ষণ গল্প করার পর মিসকা রুমাকে উপরে যেতে বলে,,,
রুমাঃ ঠিকাছে বউমনি আমি আসছি,,,
মিসকা রুমে গিয়ে ইফতির জামা কাপড় আলমিরার থেকে বের করে সব গোছাচ্ছে,,,,, আলমিরার এক সাইডে ইফতির জামা কাপড় দরকারি জিনিস পত্র রাখে,,,,
রুমাঃ বউমনি কিছু লাগবে??
মিসকাঃ হ্যা গো আজ তুমি আমাকে একটু হেল্প করবা,,,,
রুমাঃ কি যে বলেন,,,, আপনি শুধু হুকুম করেন আমি সব কইরা দিতাছি
মিসকাঃ তুমি আমাকে একটুখানি সাহায্য করলেই চলবে,,,
রুমাঃ আচ্ছা বলেন কি করা লাগবে আমি কইরা দিতাছি,,,,
সিফাত( ড্রাইভার) রুমে ঢুকলো,,,
সিফাতঃ বউমনি এই নেন আপনার জিনিসপত্র,,,, আর গাছগুলো ছাদে রাখছি,,,,
রুমাঃ বউমনি এগুলা কহন কিনলেন,,,আপনিতো বাইরেই যান নাই,,,
মিসকাঃ অনলাইনে ওর্ডার দিয়েছি,,,,, দেখছো না তোমার ছোটসাহেবের রুমটা ওর মতই রুক্ষ 😂 এজন্য একটু ডেকরেট করবো,,,,,
রুমাঃ বউমনি আপনি না অনেকভালো,,,,,,, কতোটা ভালোবাসেন ছোট সাহেবকে,,,,আর একজন ভালোবাসা পাইয়াও রাখতে পারলো না,,,
মিসকা কিছু না বলে সবকিছু বের করে রুমাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিলো,,,,,দুজনে মিলে ঘন্টার মধ্যেই রুমটা সাজিয়ে ফেললো,,,
রুমাঃ বাহ বউমনি মানতে হবে আপনি অনেক গুনবতী,,,,,, কি সুন্দর লাগতাছে রুমটারে,,,😍
মিসকাঃ তুমি একটু বেশিই বলছো,,,,তুমিও তো আমার সাথে কাজ করলা,,,,আচ্ছা ঠিকাছে তুমি এখন কিচেনটা সামলাও আমি বাকি কাজগুলো করে নিবো,,,
রুমা ঃ আচ্ছা
মিসকা রুমটাকে দেখে নিলো,,,সবকিছু গোজগাজ হয়েছে শুধু ওর জিনিসপত্র ঐরুম থেকে এইরুমে আনতে হবে,,,,,মিসকা ওর জিনিসপত্র নেওয়ার জন্য আলমিরা খুলে শুধু শাড়িগুলো বের করলো আর কসমেটিকস নিলো,,, আর বাকি জামাকাপড় গুলো ভাজ করে গুছিয়ে রাখতেই একটা কিছু পরে যায়,,,,,মিসকা তাকাতেই দেখে ইফতির সেই ডায়রিটা,,,,মিসকা জামাগুলো রেখে আলমিরা আটকিয়ে ডায়রিটা হাতে নিয়ে,,,,
মিসকাঃ আরে!! আমি তো এই ডায়রিটার কথা ভুলেই গেছিলাম,,,,মিসকা শাড়িগুলো আর ডায়েরী টা নিয়ে ইফতির রুমে গেলো,,,,,,,মিসকা শাড়ী গুছিয়ে রেখে আলমিরার দিক তাকিয়ে ব্লাসিং হচ্ছে,,,, আজ সে ইফতির অর্ধাঙ্গিনী,,,সব কিছুর উপর তার সমান অধিকার,,,,আচ্ছা এই আলমিরার মতো ইফতির উপরও কি আমার অধিকার আছে,,,,,হয়তো আছে হয়তো নেই,,,,,,দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে,,,ডায়রীটা হাতে নিতেই সিফাত দরজা নক করলো,,,
সিফাতঃ আসবো বউমনি,,,
মিসকাঃ সিফাতভাই এসো আর বউমনি কেনো বলছো বলোতো??
সিফাতঃ না আসলে এসব বাদ দেই পরের কাজের কথা ভুলে যাবো,,,,,
মিসকাঃ হ্যা বলো,,,
সিফাতঃ ছাদে একটু যেতে হবে সবকিছু তোমার মন মতো হয়েছে কি না,,,,
মিসকাঃ ও এই ব্যাপার,,, ঠিকাছে চলো,,,
( মিসকা ডায়রীটা বালিসের নিচে রেখে ছাদে যায়,,,,,
মিসকাঃ আরে বাহ সিফাত ভাই আপনি তো সব কাজ পার্ফেক্টলি করেছেন😊 সবকিছু নতুন লাগছে,,,,,,
সিফাতঃ হুম বোন তুমি আমায় আবদার করে কিছু বললে আর আমি রাখবো না,,,,
মিসকাঃ থ্যাংকস 😊
মিসকা ছাদ থেকে এসে বালিশের নিচ থেকে ডায়রীটা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে যায়,,
ডায়রীটা খুলে মিসকা আবার পড়তে শুরু করে,,,,
মা আর প্রলয় রুম থেকে চলে গেলে আমি আর নীলা একসাথে বসে আছি,,,
আমি এক নেশালাগানো চোখে নীলার দিকে তাকিয়ে আছি,,,,,এই কয়দিন ওর সাথে দেখা করিনি এতে হয়তো ভালোবাসাটা আরো বেড়ে গেছে,,,আমি নীলাকে একটা চুমু দিতে নিলেই ও আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে বারান্দায় দাড়ায়,,,,,
আমি আস্তে আস্তে বারান্দায় যেতেই দেখি নীলা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে,,,,, পাগলিটা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে,,,,ইফতি নিলার পাশে দাড়ায়
ইফতিঃ ছড়ি নিলা,,,😑
নিলাঃ ইফতির দিকে তাকিয়ে ওর শার্টের কলার ধরে ঠোঁটের সাথে ঠোট মিশিয়ে দেয়,,,,,
ইফতিঃ সেদিন আমি খুব অবাক হই,,,আবার ভালো লাগাও কাজ করছিলো,,,,,কারন ওই তো আমার প্রথম ভালোবাসা,,,,,
মিসকা এইটুকু পড়ে ডায়রীটা বন্ধ করে মুখ ভার করে রইলো,,,,,ওর কেন জানি হিংসা হচ্ছে,,,,, আবারও ডায়রীটা খুলে পড়তে লাগলো,,,,
সেদিন নিলা আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে একদৌড়ে নিচে চলে গেলো,,,আমি শুধু অবাক দৃষ্টিতে ওর চলে যাওয়া দেখেছিলাম,,,,
এভাবে চলতে থাকে আমাদের প্রেম কাহিনী,,,,আমি যেখানে যাই ওকে সাথে নিয়েই যাই,,,,পার্টি মাস্তি করেই বেশি সময় কাটত। পাগলীটাকে যে বড্ড ভালোবাসি,,,,আমাদের মাঝে ঝগড়া হতো তবে ছড়ি সবসময় ওই বলতো,,,,কারন আমি খুব জেদি,,,, দেখতে দেখতে ছয়টা মাস কেটে গেলো,,,,
বাবা আজ নীলাদের বাসায় গিয়ে ওকে আংটি পড়িয়ে এসেছে,,,একমাস বাদেই আমাদের বিয়ে,,,,,খুব খুশি ছিলাম আমরা,,,, একসাথে শপিং করা,সারা রাত ফোনে কথা বলে সময় কাটিয়ে দেওয়া,,,এসব ছিলো আমাদের নিত্য সংঙ্গী,,,
দেখতে দেখতে আজ সেই দিন এলো যা আমরা এতদিন ধরে দুজনে একটু একটু করে সাজিয়ে ছিলাম। আমাদের বিয়েটাও খুব ধুমধাম করেই হলো,,,,
বিয়ের পর একমাস আমরা ঘুরলাম,,,এমন কোনো যায়গা বাদ নেই ও যেতে চেয়েছে আর আমি ওকে নেইনি,,,,আমার তখন মনে হয়েছিলো আমার মতো সুখি আর কেউ নেই,,,,
কিন্তু বলে না সুখ সবসময় থাকে না,,,,,আমার বেলাতেও ব্যতিক্রম হলো না,,,
১মাস ঘুরাঘুরি করার পর আমরা বাড়িতে ফিরলে বাবা আমাকে বিজনেসের দায়িত্ব টা দিতে চাইলেন,,, আমিও আর আপত্তি করি নি,,,কারন এখন শুধু আমি বাবা- মায়ের ছেলেই নই একজনের স্বামীও,,,,,আর একজন স্বামীর দায়িত্ব তার স্ত্রী এর সবকিছুর দায়িত্ব নেওয়া,,,টাকা পয়সার অভাব ছিল না ঠিকই কিন্তু বিয়ে করেছি এখন বাবার কাছে টাকা চাইতে লজ্জা করে,,,,,আর নিজের বিজনেস যেহেতু আছে,,, সবকিছু ভেবে বাবাকে হ্যা বলেদিলাম,,,,,বাবা খুব খুশি হয়েছিলেন,,,,
কিন্তু নীলাকে বলতে ও রাগ হয়ে গেলো,,,,,সেদিন রাতে একটা কথাও বলে নি,,,আমি ভেবেছিলাম হয়তো নতুন বিয়ে হয়েছে এজন্য ওর মোন খারাপ হয়েছে,,,,,কয়েকদিন পর ঠিক হয়ে যাবে,,,,,কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে আমার ধারনা ভুল প্রমান হলো,,,ও প্রায়ই টুকটাক জিনিস নিয়ে আমার সাথে ঝগড়া করতো,,,,ভাংচুর করতো,,,,সকালে যখন নাস্তা করতে আসতাম তখন বাবা মা জিগ্যাসু দৃষ্টিতে তাকাতো কিন্তু আমি না বুঝার ভান করে খেয়ে চলে যেতাম,,,,,এমন অনেক রাত গেছে আমি দুচোখের পাতা এক করতে পারি নি,,,,নীলার মধ্যে এতো চেঞ্জ আমি কখনও ভাবতেও পারি নি এই নীলাকে আমার বড্ড অচেনা লাগে,,,, ছাদে গিয়ে বসে থাকতাম মনে হতো নিলা বুঝি অভিমান ভুলে ছাদে এসে আমার পাশে বসবে,,, আবার আমরা একসাথে চাদ দেখবো,,,বৃষ্টিতে ভিজবো,,,হারিয়ে যাবো একে অপরের মাঝে,,,কিন্তু না সব কিছু শুধু আমার কপ্লনাই হলো,,,,,,
বাসায় ফিরলে মা মাঝে মাঝে বলে আমাদের কি হয়েছে,,,, আমি এটা সেটা বলে কাটিয়ে নিতাম,,,
আজকাল নীলা প্রতিদিন পার্টিতে যায়,,,,ড্রিংস করে,,,, প্রায়ই ফোন ব্যস্ত থাকে অফিস থেকে ফোন দিলে বেশির ভাগ বিজি না হয় ওয়েটিং এই পেতাম,,,,,
একদিন নীলা রাত ১০ টায় বাসায় ফিরলো একজন ছেলে ফ্রেন্ড ওকে নামিয়ে দিয়ে যায় আবার যাওয়ার আগে হাগও করে,,,,আর বেবী বেবী বলে কথা বলছিলো আমি বারান্দায় দাড়িয়ে সব দেখছিলাম,,,,,,মাথাটা প্রচন্ড গরম হয়ে গেলো,,,,,, নীলা রুমে আসতেই আমি ওকে একটানে বিছানায় ফেলে দরজা আটকে দিলাম
নীলা ঃ এভাবে অসভ্যের মতো করলে কেন??
ইফতিঃ এখন রাত ১০ টা বাজে তোমার কি খেয়াল আছে??
নীলা’ঃ তো??
ইফতিঃ তো মানে😠 এতো রাতে ভদ্র ফেমিলির বউরা বাইরে থাকে না,,,,,
মিসকাঃ তারমানে বলতে চাইছো আমি অভদ্র,,,,, বাহ তোমার কাছে এছাড়া আর কি আশা করবো,,,,
ইফতিঃ ওকে হাত ধরে দাড় করিয়ে,,,, তোমার লজ্জা করে না বাবা মায়ের সামনে এভাবে প্রতিদিন ড্রিংস করে আসো,,,,আবার আমাকে বলছো আমার কাছ থেকে এর বেশি কিছু আশা করো না,,,,
নীলাঃ ও মি. ইফতি তোমার থেকে অনেক বেটার ছেলেকে বিয়ে করতে পারতাম,,,,কিন্তু তুমি এসব বিজনেস নিয়ে নয় মাস্তি,পার্টি,বন্ধু বান্ধব নিয়ে থাকতে,,,যেটা দেখে তোমায় আমি বিয়ে করেছি,,,,কিন্তু তুমি তো বস বিয়ে করে পুরাই চেঞ্জ 😠 আমি ট্রিপিকাল বউদের মতো তোমার সেবা যত্ন করবো এটা যদি ভেবে থাকো খুব ভুল করছো,,,,আমি আমার লাইফটা ইনজয় করতে চাই,,,,,এসব বউ,স্ত্রী সেজে বসে থাকার জন্য তোমায় বিয়ে করে নি,,,,আর এসব তোমার মুখে মানায় না তুমিও এই পার্টি,বন্ধুবান্ধব ড্রিংস নিয়ে পরে থাকতে,,,,,,কিন্তু আমিও তোমার মতো সবকিছু ছেড়ে দিয়ে বউ হয়ে সব কাজ করবো,তোমাদের সেবা যত্ন করবো এসব যদি ভেবে থাকো তাহলে ভুল ভাবছো,,,কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নিও,,, এসব বলে ও ঘুমাতে চলে গেলো,,,,
ইফতিঃ আমি পাথরের মূর্তির মতো দাড়িয়ে রইলাম,,,,,এটা কি সেই নীলা যাকে আমি ভালোবেসেছিলাম,,,,বিয়ে করে সুখি হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম,,,,,,নীলা আজ আমার কাছে তবুও খুব দূরের অচেনা মনে হচ্ছে ,,,, সেদিন সারা রাত আমি কেদেছি,,,,,,অনেকটা কেদেছি
এর পর থেকে প্রায়ই ঝগড়া লেগেই থাকতো,,,আমি চেয়েও ঝগড়া থামাতে পারতাম না,,,,,, নীলার ছেলেদের সাথে মেলামেশা দিন দিন বেড়েই গেছিলো,,,আমি শুধু ভাবতাম কিসের অভাবের কারনে ও এমন করছে,,,,ওর তো কোনো শখ আমি অপূর্ণ রাখি নি,,,,তাহলে,,,
মিসকা পড়ছে আর দুচোখ বেয়ে পানি পরছে,,,,,, মনে হচ্ছে ও সব চোখের সামনে সবকিছু দেখছে ইফতির কষ্ট গুলো ও অনুভব করতে পারছে,,,,,,
#চলবে,,,,,,,
#ভালোবাসার__টান,,,,,,,😍👸😍
#part::::::::(44)
#writer::::::Tanzidaa Jannat
মিসকা ডায়রীটা আজ আর পরতে পারলো না,,,,,ওর মনের মধ্যে একটা চাপা কষ্ট হচ্ছে,,,, ও শুধু ভাবছে ইফতি কতটা কষ্ট পেয়ে ওর কথাগুলো ডায়রীতে লিখেছে,,,,,,এর মধ্যেই কারো আসার শব্দ পেয়ে মিসকা রুমে গিয়ে ডায়রীটা বালিশের নিচে রেখে চোখ মুছে নিলো,,,,,,,
হিয়া রুমে ঢুকেই মাম্মাম তুমি কেনো আজ আমার স্কুলে যাও নি???
মিসকাঃ ওমা আমার মাম্মাম তো আমার উপর রাগ করেছে,,,,ছড়ি মাম্মাম আমি কাল থেকে তোমাকে দিয়ে আসবো আবার নিয়েও আসবো,,,,,,( একটু হেসে হিয়াকে কোলে নিয়ে এই কথাগুলো বললো)
হিয়াঃ প্রমিস,,,,
মিসকাঃ পাক্কাওয়ালা প্রমিস,,,,
দুজনেই হেসে দিল,,,,,মিসকা হিয়ার কাছ থেকে ব্যাগটা নিয়ে স্কুল ড্রেস খুলে দিচ্ছে ,,,
হিয়াঃ মাম্মাম জানো আজ কি হয়েছে,,,😔
মিসকাঃ না বললে কিভাবে জানবো??
হিয়াঃ আমার স্কুলের ফ্রেন্ডসরা বলছিলো তুমি আমার মাম্মাম নও,,,,,আমি যখন বলেছি তুমিই আমার মাম্মাম ওরা বলেছে তুমি আমার স্টেপ মাদার আসল মাম্মাম নও😭
মিসকাঃ কথা গুলো শুনে কেঁদেই ফেললো,,,হিয়াকে বুকের সাথে জরিয়ে বললো,,,,,,মাম্মামকি কখনও স্টেপ হয় বলো,,,,তুমি একদম কষ্ট পেয়ো না আমি কাল তোমার স্কুলে গিয়ে সব্বাই কে বলবো আমি তোমার আসল মাম্মাম,,,,,,আর যেন কেউ কক্খনও আমার মেয়েকে এসব ধরনের কথা না বলে কেমন,,,,,,
হিয়াঃ সত্যি মাম্মাম😊 তুমি সবাইকে বলবে( একটু হাসি দিয়ে)
মিসকাঃ হুম সত্যি,,,,,আচ্ছা টিফিন শেষ করেছো পুরোটা??
হিয়াঃ হুম,,,,
মিসকাঃ ওলে আমার গুড মেয়েটা!!! একটু গাল টেনে আদরের সাথে বললো,,,,,
হিয়াঃ মাম্মাম আজ আমাদের রুমটা কেমন জানি বেশি সুন্দর লাগছে,,,,,গালে এক হাত দিয়ে,,,
মিসকাঃ হুমহু ম্যাজিক😂 তোমার পাপার রুম পাল্টে আমাদের রুম বানিয়ে ফেলেছি😉
হিয়াঃ কি সুন্দর লাগছে😍 বাবাই তো পুরা অবাক হয়ে যাবে,,,
মিসকাঃ এজন্য ই তো এতকিছু করলাম,,,,,আচ্ছা ওনেক বকবক হয়েছে এখন ঘুমাবে চলো,,,,
হিয়াঃ ঘুমুতে ইচ্ছা করছে না😑(একটু ন্যাকা হয়ে বললো)
মিসকাঃ তুমি যদি এখন ঘুমাও তাহলে আমি আরেকটা সারপ্রাইজ দিবো,,,,,
হিয়াঃ কি সেটা??😵
মিসকাঃ বল্লাম না সারপ্রাইজ যখন দিবো তখনই দেখবে😉তবে তোমাকে আগে ঘুমাতে হবে,,,,,
হিয়াঃ তাহলে তুমি আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দাও
মিসকা হিয়াকে সুয়ে দিয়ে পাশে সুয়ে পরলো,,,হিয়া মিসকাকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো,,,,,,কিছুক্ষণের মধ্যে হিয়া ঘুমিয়ে গেলে ওকে ঠিক করে সুয়ে দেয়,,,,,,একটা বালিশ রেখে মিসকা খাটের সাথে হেলান দিয়ে ডায়রীটা বের করে আবার পড়তে থাকে,,,,,
নীলা আমার কোনো কথাই শুনতো না,,,,এমনকি ওর নিজের বাবা মা আমাকে ফোন দিয়ে ক্ষমা চাইতেন,,,,,কিন্ত আমি তবুও ওকে ভালোবাসতাম।ওর এত অবহেলার সত্ত্বেও আমার ভালবাসা একটু কমেনি,,,,,আমি চাইতাম ও ওর ভুল বুঝতে পারবে আর ও আবারও আগের মতো হয়ে যাবে,,,,,,, বাসায় ফিরে মমকে দেখতাম আমার দিকে মায়ার ছলে তাকাতো আমি বুঝতে পারতাম তবে মমকে সান্ত্বনা দিতাম সব ঠিক হয়ে যাবে,,,,,কিন্তু আমি নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে রাখতে পারতাম না,,,,,যতই হোক মানুষের মন এটা তো আর ইট পাথরের গড়া না,,,,,,এমনি এমনি করে মাস যাচ্ছিল আর আমাদের সম্পর্ক টা আরো নরবরে হয়ে যাচ্ছিল,,,,,,,
একদিন আমি রুমে বসে লেপটপে কাজ করছিলাম,,, নীলা আমার সামনে একটা কাগজ রেখে বললো সাইন করে দিতে,,,,,আমি হাতের থিকে পেপারস টা নিয়ে সাইন করতে যাবো এমন সময় চোখ আটকে গেলো,,,,,কারন নীলা এমন কিছু করবে আমি ভাবতেও পারি নি,,,,,,,পেপার্সটা দেওয়ায় আমি একবারও জিগ্যেস করি নি কিসের পেপার,,,,,, কারন আমি ওকে এতোটাই ভালোবাসতাম ওর প্রতি আমার বিশ্বাস ছিলো,,,,, আর যাই হোক ও আমার বিশ্বাস টা কখনও ভাঙবে না,,,,কিন্তু আমি কখনও ভাবিনী ও আমার বিশ্বাস টা এভাবে ভেঙে গুরিয়ে দিবে,,,,,পেপারস টা ছিলো এবশনের,,,,,, আমি ওর দিকে তাকিয়ে চোখের পানি আটকে রাখতে পারলাম না,,,,,,,সেই মুহুর্তে আমি সব ভুলে শুধু বললাম আমি বাবা হতে চলেছি বলে ওকে জড়িয়ে ধরতে গেলাম,,,,,,
কিন্তু ও আমাকে হাত দিয়ে বাধা দিয়ে বললো তোমার ইমোশন শেষ হলে পেপারস টা সাইন করো,,,,,,
আমার মনে হচ্ছিল আমি আর বেঁচে নেই,,,,নিলা কিভাবে এসব বলছে,,,,,আমার চারোপাশ কেমন ঘোলাটে লাগছে,,,,
নীলাঃ কি বললাম তুমি শুনতে পাও নি??
ইফতিঃ তুমি আমাদের বাচ্চা আমাদের ভালোবাসার প্রতিকটাকে এভাবে শেষ করে দিতে চাও??
নীলাঃ এই শোনো তোমার এসব ফালতু কথা রাখ,,,,,,আমি ওর জন্য আমার সবকিছু জলাঞ্জলি দিতে পারবো না,,,,,,আমার এখনও লাইফটাকে ইনজয় করাই হয় নি,,,তার আগেই বাচ্চা সামলাও বুড়ি হয়ে বসে থাক,,,,,এসব ট্রিপিকাল জিনিসের কোনো ইন্টেনশন আমার নাই,,,,,
ইফতিঃ তুমি কি পাগল হয়ে গেছো??একজন মা তার বাচ্চা কে এভাবে মেরে ফেলতে চায় আমি কোথায়ও দেখি নি,,,,,, বরং বাচ্চা কে বাঁচানোর জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করে জানি,,,,তুমি এসব কি ধরনের কথা বলছো,,,,
নীলাঃ দেখ ইফতি এসব বলে তুমি আমার ডিশিসন পাল্টাতে পারবে না,,,,,,
ইফতিঃ ওকে রিলাক্স আমরা একটু সান্ত হয়ে কথা বলি
নীলাঃ আমার যা বলার বলছি আর কিছুর শোনার আমার প্রয়োজন নেই,,,,,
ইফতি ঃ ৫ টা মিনিট তো আমি তোমার কাছে চাইতেই পারি,,,,
নীলাঃ ওকে বলো,,,
ইফতি নীলার হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে ,,,,,দুজনে পাশাপাশি দাড়িয়ে ছিলাম,,,
ইফতি ঃ তুমি এই বাচ্চা টাকে আমায় দিবে তার বিনিময়ে তুমি যা চাইবে তাই পাবে,,,,,তুমি কাল পর্যন্ত ভেবে দেখতে পারো,,,,
এটা বলে আমি চলে আসলাম ছাদে বসে বসে আকাশের চাঁদ দেখছিলাম আর আপন মনে চোখের পানি ঝড়ালাম,,,,,আমার লাইফে ঘটে যাওয়া সব কিছু ভাবছিলাম,,,,,আমার জীবনটা এমন হবে কোনোদিন কি ভেবেছিলাম,,,,ভাববোই বা কেনো আমি তো ওকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসেছিলাম,,,,আমি আজ ওকে যে শর্তটা দিয়েছিলাম তার কারন হচ্ছে নীলা এখন পাগলামী করছে ওর জেদের বসে এসব কিছু ভাবছে,,,,,কিন্তু যদি ওর কোলে সন্তান টা এসে যায় তাহলে সব জেদ চলে যাবে,,,কারন একজন নারী যখন মা হয় তখন তার সবকিছু বদলে যায়,,,,,তখন হয়তো ওর এই জেদ গুলো কাজ করবে না,,,,,,
মিসকার চোখের পানিতে ডায়রীর পাতাগুলো ভিজে যাচ্ছে,,,, তারপরও ডায়রীর পাতা উল্টাচ্ছে আর পড়ছে,,,,
ইফতিঃ সকালে উঠে নিজেকে ছাদের এক কোনায় আবিষ্কার করলাম,,,,,,রাতে এসব ভেবে কখন এখানেই ঘুমিয়ে পরেছি বুঝতেই পারি নি,,,,,রুমে যেতে শরীর কাঁপছে নিলা কি ডিসিশন নিলো কে জানে,,,,,,তবুও ধীর পায়ে রুমে ঢুকে দেখি ও ঘুমাচ্ছে,,,,, আমি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে গেলাম,,,,,মম নিচে ছিলো খুব ইচ্ছে করছিলো মমকে জড়িয়ে ধরে বলি মম তুমি দাদি হতে যাচ্ছ,,,,, কিন্তু না নিজের কষ্ট নিজের কাছে রেখে অফিস চলে গেলাম,,,,,,
বাসায় যখন আসি তখন দেখলাম নীলা বাসায়ই আছে,,,,,মম আমাকে দেখে খুশিতে দৌড়ে এসে আমার মুখে মিষ্টি পুরে দিলো,,,,বললো আমার ছোট্ট ইফতি কতো বড় হয়ে গেছে সে আজ বাবা হতে চলেছে,,,,আমি অবাক হয়ে মমের দিক তাকিয়ে রইলাম,,,,,নীলার দিক তাকিয়ে দেখি ও বাবার সাথে হাসছে,,,,,আমি মমকে জড়িয়ে ধরলাম আর মনে মনে বললাম হয়তো আবারও সব আগের মতো হয়ে যাবে,,,,,,
চলবে,,,,,,,,