ভালোবাসি_তাই❤,পর্ব:০৬,০৭
মাহিয়া_মেরিন
পর্ব:০৬
অধরা আর ধ্রুব গল্প করতে করতে কলেজের গেটের বাহিরে চলে আসে।। এদিকে আশ্বিন মারিয়াকে নিয়ে ভার্সিটি ঘুরে দেখানোর নাম করে দূর থেকে অধরা আর ধ্রুবকে ফলো করছে।।
— ধ্রুব অধরার পাশে হাঁটতে হাঁটতে বললো,,,””ও আল্লাহ!! দুদিনের জন্য একটু ঘুরতে কি গেলাম আর এর মাঝেই দুষ্টু পরীটা রকির বারোটা বাজিয়ে দিলো।। যাক ভালোই হয়েছে।। চলো এই খুশিতে আজকে আমার পক্ষ থেকে তোমাকে ট্রিট দেওয়া হবে।।””
— অধরা ধ্রুবর গাল টেনে ধরে,,,””ভাইয়া তুমি কতো সুইট!! আমি কিন্তু হাওয়াই মিঠাই খাবো।। ওই যে দেখো দাঁড়িয়ে আছে।। চলো যাই চলো।।””
ধ্রুব অধরার ইশারা করা জায়গায় তাকিয়ে হালকা হেসে অধরার হাত ধরে খুব সাবধানে রাস্তা পার হয়ে আসলো।। তারপর দুজনের জন্য দুইটা হাওয়াই মিঠাই নিয়ে আবার কলেজে ফিরে আসলো।
এদিকে আশ্বিন মারিয়ার পাশে থাকলেও সে আশেপাশে তাকিয়ে শুধু অধরাকেই খুঁজে যাচ্ছে।।
— মনে মনে,,,”””কোথায় গেলো ফাজিল মেয়েটা?? ছেলেদের সাথে কোন সাহসে ঢংঢং করে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে??আবার হেসে হেসে কথাও বলেছে।। অধরার বাচ্চা!!! আজকে তোকে একবার সামনে পেয়ে নেই,,,,,থাপ্পড় মেরে তোর সামনের সব দাঁত ফেলে দিবো,,,কখনো আর দাঁত দেখিয়ে হাসতে পারবি না।।””
— মারিয়া আশ্বিনে পাশে বসে বকবক করতে করতে হঠাত গেটের দিকে তাকিয়ে,,,”””হোয়াট ইজ দিস?? আমি কি ভুল দেখছি?? ওহি,,,মানে আমাদের অধরা…!!! মনে তো হচ্ছে তারা রিলেশনে আছে।””
আশ্বিন এতোক্ষণ মারিয়ার কথার কোন পাত্তা না দিলেও অধরার নাম শুনে সাথে সাথে গেটের দিকে তাকিয়ে প্রথমে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলেও পর মুহূর্তেই চোখ মুখ লাল হয়ে যায় তার।। অধরা আর ধ্রুব হাত ধরে কলেজে প্রবেশ করছে।।
অধরা কলেজ ড্রেস পরে আছে,,,কাধ পর্যন্ত ছোট চুলগুলো বাতাসে উড়ে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।। আপনমনে কথা বলতে বলতে হঠাত হেসে উঠছে। ডান গালে পড়া টোলে তাকে আরো বেশি মায়াবী লাগছে।।
— মারিয়া দূর থেকে অধরার দিকে তাকিয়ে,,,””দেখো কিভাবে একটা ছেলের হাত ধরে রেখেছে।। এইসব মেয়েরাও না…আসলেই!! আমি তো ভেবেছিলাম অধরা অন্যরকম।। কিন্তু এখন তো দেখছি….।।””
— শ্রাবণ হালকা হেসে বললো,,,”” ঠিকই বলেছো মারিয়া।। ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন,,,তুমি নিজেই কিন্তু প্রথম থেকে আশ্বিনের হাত ধরে বসে আছো।। আর হ্যা,,,আমার বোনকে নিয়ে তুমি এতো ভেবোনা।। পরে দেখা যাবে অধরাকে বুঝতে যেয়ে তুমি নিজের পরিচয়ই ভুলে গিয়েছো।।””
শ্রবণের কথা শুনে মারিয়া চুপ হয়ে যায়।। সে অবশ্য কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু আশ্বিন সামনে থাকায় বলতে পারেনি।। এদিকে আশ্বিন দাঁতে দাঁত চেপে এক ধ্যানে অধরার সব কার্যকলাপ দেখছে।। কোন সাহসে সে ছেলেটার হাত ধরে হাঁটছে??
অধরা গল্পের মধ্যে একটাই হারিয়ে গিয়েছে যে,,,সে যে ধ্রুবর হাত ধরে আছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই তার।। আচমকা আশ্বিন এসে অধরার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে।। হঠাত করে সামনে চলে আসায় অধরা একটু ভয় পেয়ে যায়।।
— “”আহ! আশ্বিন ভাইয়া,,,এভাবে কেউ সামনে চলে আসে?? এখন যদি আমি ভয় পেয়ে হার্ট এটাক করতাম,,,তখন তো…..??””
অধরাকে বাকি কথা বলতে না দিয়ে আশ্বিন তার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলে যায়।। ধ্রুব এক দৃষ্টিতে তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।। “”কি হলো এটা??””
অধরাকে একটা রুমে নিয়ে এসে তাকে দেয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে চিৎকার করে,,,,
— “”তুই কার অনুমতি নিয়ে ওই ছেলের সাথে কলেজ গেটের বাইরে গিয়েছিস?? এতো সাহস কোথায় পেয়েছিস তুই। এন্সার মি,,ড্যাম ইট!!””
— আশ্বিনের এতো রাগী কণ্ঠ শুনেও অধরা ভয় না পেয়ে শান্ত ভাবে বললো,,,””ভাইয়া শুনো।। আমি এখন আর ছোট নেই। বড় হয়ে গিয়েছি আমি,,,সো কলেজ গেটের বাইরে যেতে আমার কারো অনুমতি লাগবে না।।হুহহ।।”” একটা ভাব নিয়ে বললো।
আশ্বিন অবাক হয়ে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে।। এ কাকে দেখছে সে?? এটা কি তার সেই অবুঝ ছোট্ট অধরা?? যে কিনা তার ভয়ে ঠিকমতো কথাই বলতে চাইতো না!!
আশ্বিন নিজেকে স্বাভাবিক করে বলো….
— “”অনুমতি নিতে হবে।। তুই এখনও এতটাও বড় হয়ে যাসনি অধরা।। কোন দরকারে গেটের বাইরে যেতে হলে হয় আমাকে বলবি নাহয় অর্ণবকে।। আর একটা কথা শুনে রাখ,,,ওই ছেলে….ধ্রুব না কি যেনো নাম। যাই হোক,,,তাকে যেনো তোর আশেপাশেও আর না দেখি।। মনে থাকবে??””
— অধরা কোনমতে নিজেকে আশ্বিনের থেকে ছাড়িয়ে একটু দূরে সরে এসে বললো,,,””ধ্রুব ভাইয়া আমার বন্ধু।। ভাইয়ার অনুমতি পেয়েই আমি ধ্রুব ভাইয়ার সাথে বন্ধুত্ব করেছি।। তাই তোমার এই কথা আমি মানতে পারবো না।। সরি।””
কথাটা বলেই অধরা এক দৌড়ে রুম থেকে চলে যায়।। আশ্বিন অধরাকে কয়েকবার ডাক দিলেও অধরা সাড়া দেয় না।। আশ্বিন রেগে….
— “”কতো বড় সাহস,,আমার কথা অমান্য করে।। অধরার বাচ্চা,,,তোকে সামনে একবার পেয়ে নেই।। তোকে বুঝিয়ে দিবো এই আশ্বিন কি জিনিস।।””
রেগে কথাটা বলে দেয়ালে একটা ঘুষি মারে আশ্বিন।।
🍁বিকেলে….
আশ্বিন রাগী রাগী একটা ভাব নিয়ে অধরাদের বাসায় প্রবেশ করে,,,উদ্দেশ্য অধরাকে একটু উত্তম মাধ্যম দেওয়া।। হলরুমে দাদা দাদি,,ছোট আব্বু,,ছোট মা,,শ্রাবণ,,অর্ণব বসে গল্প করছে।। আশ্বিন রাগের বশে থাকায় তাদের খেয়াল না করেই অধরার রুমের দিকে যাচ্ছিলো।।
— আশ্বিনকে দেখে ছোট আব্বু বললো,,,””আরে আশ্বিন।। কোথায় যাচ্ছিস তুই?? এখানে আয়,,,আমাদের সাথে গল্প করো।।””
ছোট আব্বুর কথায় আশ্বিন আর উপরে না গিয়ে সবার সাথে বসে পড়ে।।
— অধরার দাদি আশ্বিনকে একটু দুষ্টুমি করে বললো,,,””কি ব্যাপার দাদু ভাই?? এখন তো দেখি বাসায় আসলেই অর্ণব শ্রাবণ নাহয় অধরার খোঁজে আসো।। আমাদের কথা কি মনে পড়ে না??””
— আশ্বিন দাদিকে জড়িয়ে ধরে দুষ্টুমি করে,,,””আরে আমার ফুল বাণু।। আমি তো তোমাকে অনেক মিস করি।।””
সবাই মিলে হলরুমে গল্প করছে।। আশ্বিন অর্ণবকে জিজ্ঞেস করে…
— “”অর্ণব,,অধরা কোথায়?? আজকে পড়তেও আসলো না।।””
— “”অধরা ঘুমাচ্ছে।। অনেকবার ডেকেছি। কিন্তু ওঠার নামই নেই।। তাই আমিও আর জোর দেইনি।””
সবাই টুকটাক বিষয়ে কথা বলছে হঠাত অধরার রুম থেকে জোরে চিৎকার করার শব্দ ভেসে আসে।।
— “”অধরা!!!””
সবাই দৌড়ে অধরার রুমে ছুটে এসে দেখে অধরা মেঝেতে পড়ে আছে।। তার সারা শরীর প্রচন্ড মাত্রায় খিঁচুনি দিয়ে উঠছে।। আশ্বিন দৌড়ে গিয়ে অধরাকে কোলে তুলে খাটে শুইয়ে দিলো।।
— “”অর্ণব তাড়াতাড়ি ডাক্তারকে খবর দাও।। জলদি।””
বোনকে এমন অবস্থায় দেখে অর্ণব এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল ।। আশ্বিনের কথায় হুশ ফিরতেই সে তড়িঘড়ি করে ডাক্তারকে খবর দেয়।।
এদিকে,,,দাদি আর ছোট মা মিলে অধরার হাত পা মালিশ করছে কিন্তু কিছুতেই অধরার খিঁচুনি বন্ধ হচ্ছে না।। অধরার উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রঙটা মুহূর্তেই লালচে বর্ণ ধারণ করেছে।।
কিছুক্ষণের মধ্যে ডাক্তার এসে অধরাকে একটা ইঞ্জেকশন দেওয়ায় ধীরে ধীরে অধরা স্বাভাবিক হতে শুরু করে।। অধরাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ডাক্তার রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
— অধরার দাদা ভাই ডাক্তারের কাছে এসে,,,””ডাক্তার সাহেব আমার অধরা…??””
— “”শান্ত হোন। এখন আর ভয়ের কারণ নেই। আমি ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি।। অধরার এখন বিশ্রাম প্রয়োজন।।””
ডাক্তার একটা বড় নিশ্বাস ফেলে বললো,,,
“”আমি বলছিলাম কি,,,এভাবে আর কতদিন?? অধরা এখন অনেক বড় হয়েছে। আমার মতে এখন তাকে সত্যিটা জানিয়ে দেওয়া উচিত।””
— ছোট আব্বু অধরার দাদাকে বললো,,,””বাবা,,,আমার মনে হয়না অধরাকে সত্যিটা জানানো উচিত হবে। সে কখনোই এটা সহ্য করতে পারবে না।। আর তাছাড়া আমরা অধরাকে নিয়ে কোন রিক্স-ও নিতে পারবো না।।””
— “”তুমি ঠিক বলেছো শাহেদ।। অধরা এখনও অবুঝ।। আমি অধরাকে সত্যিটা বলে দিলে পরে যদি উল্টো পাল্টা কিছু….না না।। ডাক্তার সাহেব,,,আমরা এভাবেই তার ট্রিটমেন্ট করবো।””
— ডাক্তার সাহেব মাথা নেড়ে বললো,,,””আমার যেটা ভালো মনে হয়েছিলো আমি বলেছি।। বাকিটা আপনাদের ইচ্ছা।।””
ডাক্তার সাহেব কথাগুলো বলে চলে গেলেন।। ছোট মা চোখের পানি মুছে অধরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।। সবাই মুখটা মলিন করে ঘুমন্ত অধরার দিকে তাকিয়ে আছে।।
🍁রাতে….
আশ্বিন নিজের রুমে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে খাটের উপর আধ শোয়া অবস্থায় বসে এক ধ্যানে রুমে থাকে আলমারির দিকে তাকিয়ে আছে।।
তারপর ধীর পায়ে হেঁটে এসে আলমারি খুলে সেখানে থেকে একটা বড় বক্স বের করে।। বক্সটা হাতে নিয়ে সে আলমারি ঘেঁষেই বসে পড়ে।।
বক্স খুলতেই ভেতরে অধরার হাসি মাখা একটা ছবি দেখতে পায়।। আশ্বিন ছবিটা হাতে নিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়।। পুরো বক্স জুরে অধরার ছবি।। ছোট থেকে বেড়ে ওঠা অধরার প্রতিটি ছবি যেন আশ্বিন খুব যত্ন সহকারে আগলে রেখেছে।। অধরার ছোটবেলার প্রিয় কিছু খেলনাও আছে বক্সে।। হঠাত আশ্বিনের চোখ পড়ে যায় একটা চশমার দিকে।। চশমাটা হাতে তুলে অতিতের এক স্মৃতির মাঝে ডুব দেয়…..
অতীতে….
— পিচ্চি অধরা মাথা নিচু করে আশ্বিনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।। আশ্বিন রেগে গিয়ে বললো,,,””তোকে বলেছিলাম না,,,আমার সানগ্লাস দিয়ে না খেলতে?? তুই আমার কোন কথাই শুনিস না।। দিলি তো আমার নতুন সানগ্লাসটা ভেঙে।। জানিস কতো শখ করে কিনেছিলাম???””
অধরা বকা খেয়ে এক দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।। আশ্বিন রেগে গিয়ে তাকে আরো কিছু কথা শুনিয়ে ধপ করে সোফায় বসে পড়ে।। কিছুক্ষণ পর অধরা গুটি গুটি পায়ে আশ্বিনের সামনে এসে…
— “”ভাইয়া।। আমি ইচ্ছে করে তোমার ওই সূর্যমামা-গ্লাসটা ভেঙে ফেলিনি।। আমি ছরি।।। দেখো তোমার জন্য আমি নতুন সূর্য মামা চশমা এনেছি।। এটা তোমার জন্য।।””
অধরা একটা ছোট্ট চশমা আশ্বিনের দিকে এগিয়ে দেয়।। আশ্বিন তাকিয়ে দেখে অধরা তার নিজের চশমার কাঁচ কালো রঙ করে নিয়ে এসেছে।। আশ্বিন অধরার এমন দুষ্টুমি দেখে তাকে একটা বকা দেওয়ার জন্য মুখ তুলে দেখে,,,,
অধরা খুব মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।। আশ্বিন যেন স্তব্ধ হয়ে যায়।। এই হাসির মাঝে কোন দুষ্টুমি ভাব নেই আছে একটা অবুঝ মনের ভালোবাসা।। অধরা হয়তো বুঝতে পারেনি সে বোকার মতো একটা কাজ করেছে,,,,সে শুধু বুঝেছিলো আশ্বিন তার দেওয়া চশমা পেয়ে খুশি হয়ে যাবে।। সেদিন অধরার দিকে তাকিয়ে চশমাটা নিজের কাছে রেখে দেয় আশ্বিন।।
বর্তমান…..
অধরার সব বোকামির কথা মনে হতেই আনমনে হেসে ওঠে আশ্বিন।। সাথে সাথে চোখ পড়ে বক্সের একপাশে রাখা ছোট্ট সাদা পার্টি ফ্রগটার উপর।। কাপা কাপা হাতে ড্রেসটা তুলে নেয় আশ্বিন।। ড্রেসের অর্ধেকটায় এখনও শুকনো রক্ত লেগে আছে।। মনে পড়ে গেলো ১৫ বছর আগের সেই ভয়াবহ স্মৃতি।।
ড্রেসটা বুকে জড়িয়ে ধরে,,,অজান্তেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে আশ্বিনের।।
—চলবে
#ভালোবাসি_তাই❤
#মাহিয়া_মেরিন
পর্ব::::০৭
সকালে ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় আশ্বিনের।। রাতে অধরার স্মৃতি বিচরণ করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলো মনে নেই।। কোনমতে উঠে বসে ফোন হাতে নিয়ে দেখে অর্ণবের ফোন…
— “”হ্যা অর্ণব,,বলো।।””
— “”অধরার জ্ঞান ফিরেছে একটু আগে।। দাদু ভাই সবাইকে ডেকেছেন,,,কি যেন বলবেন।। তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়।।””
— “”ঠিক আছে।। আমি আসছি।।””
🍁এদিকে…..
অধরা চুপচাপ খাটের উপর বসে আছে।। তার পাশে বসে দাদু ভাই সবাইকে এটা সেটা বলে যাচ্ছে।। এর মধ্যে আশ্বিনও চলে আসে।।
— দাদু ভাই সবাইকে সামনে বসতে বলে বললেন,,,””আমার ছোট্ট মেয়েটা দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে শুধু মাত্র এই বন্দি জীবনের জন্য।। কতোদিন হলো সে কোথাও ঘুরতে যায় না।। অর্ণব,,আশ্বিন তোরাও অধরাকে পড়ার জন্য বেশি চাপ দিচ্ছিস,,,তোদের জন্যই এখন মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।।””
— অর্ণব একবার আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে দাদুকে বললো,,,””দাদু ভাই আমরা তো…””
— অর্ণবকে থামিয়ে দিয়ে,,,””কোন কথা শুনতে চাই না আমি।। তোমরা তিনজন,,অর্ণব শ্রাবণ আর আশ্বিন…কালই অধরাকে নিয়ে কিছুদিন আমাদের বাগান বাড়ি থেকে ঘুরে আসবে।। কথা শেষ।।””
অধরা এতক্ষণ চুপ করে থাকলেও ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনেই খুশিতে গজগজ করে ওঠে।।
— “”দাদু ভাই,,,সত্যিই কালকে ঘুরতে যাবো??””
— দাদু অধরার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে,,,””অবশ্যই যাবে আমার ছোট্ট বুড়িটা।। ভাইদের নিয়ে কিছুদিন ঘুরে আয়।।””
— অধরা খুশি হয়ে দাদুকে জড়িয়ে ধরে।। তারপর আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বললো,,,””দাদু ভাই,,,আমি আমার ফ্রেন্ডদের ও সাথে নিয়ে যেতে চাই।।””
— “”ঠিক আছে।। তোর যেমন ইচ্ছা তেমনই হবে।।””
কথাটা বলেই দাদু ভাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। এদিকে অধরার তো খুশিতে নাচতে ইচ্ছা হচ্ছে,,,খুশি খুশি মুখ নিয়ে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে দেখে আশ্বিন চোখ ছোট ছোট করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।। অধরাও আশ্বিনের দিকে চোখ ছোট করে তাকিয়ে একটা ভেংচি কাঁটে।
— ছোট আব্বু দাদার কাছে এসে বললেন,,,””বাবা!! তাদের এখন ঘুরতে যাওয়া কি ঠিক হবে?? যদি সেখানে গিয়ে অধরা আবারও এমন অসুস্থ হয়ে পড়ে..তখন কি হবে??””
— দাদু ভাই চেয়ারে বসতে বসতে বললেন,,,””এতো চিন্তা করো না শাহেদ।। সেখানে খোলামেলা পরিবেশে গেলে অধরাও একটু সুস্থ বোধ করবে।। তাছাড়া,,,অধরা কাল হঠাত অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় অর্ণব শ্রাবণ আশ্বিনও অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।। একটু ঘুরে আসলে সবার জন্যই ভালো হবে।।””
— ছোট আব্বু একটু ভেবে,,,””ঠিক আছে বাবা।। আমি দারোয়ানকে ফোন করে বাড়িটা গুছিয়ে রাখতে বলছি।।””
কথাটা বলেই তিনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।।
🍁🍁
অধরা খাটের উপর আধশোয়া অবস্থায় বসে আছে আর অর্ণব তাকে খাইয়ে দিচ্ছে।।
— “”ভাইয়া!! নিধি আর তিশাকেও কিন্তু সাথে নিয়ে যাবো।।
আচ্ছা ভাইয়া,,,আশ্বিন ভাইয়া কি ওই শাকচুন্নি মারিয়াকেও নিয়ে যাবে?? তাহলে কিন্তু আমি যাবো না। হুহহ।”” গাল ফুলিয়ে কথাগুলো বললো অধরা।
— অর্ণব অধরার দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বললো,,,””অধরা,,এমন করিস না।। মারিয়া আশ্বিনের একমাত্র মামাতো বোন।। আমরা তাকে কিভাবে রেখে যেতে পারি?? ভেবে দেখ,,,তাকে রেখে গেলে মামুনি কষ্ট পাবে।।””
— অধরা কিছুক্ষণ চুপ থেকে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বললো,,,””ঠিক আছে। নিয়ে যাবো ওই শাকচুন্নিকে।। তবে তোমাকেও আমার একটা কথা মানতে হবে।।””
— অর্ণব অধরার দিকে প্রশ্ন বিদ্ধ চোখে তাকিয়ে বললো,,,””কি কথা?? এই তোর মাথায় আবার কি চলছে বলো তো।।””
অধরা অর্ণবের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দেয়।।
🍁রাতে……
অধরা খুশি খুশি একটা ভাব নিয়ে তার ব্যাগ গুছিয়ে রাখছে।। আর মনে মনে অনেক বড় ধরনের প্ল্যান করে রেখেছে।।
— “”আশ্বিন ভাইয়া!! কি ভেবে রেখেছো তুমি?? সেখানে গিয়ে শাকচুন্নিটাকে নিজের গলায় ঝুলিয়ে নাচবে?? মারিয়ার হাত ধরে ঘুরবে,,সেল্ফি তুলবে!! জি ন্যাহহ।। আমি অধরা থাকতে তোমাদের শান্তিতে থাকতে দিবো না।। আমাকে পিচ্চি বলা তাই না?? দেখো আমি এবার কি করি।। মু..হাহাহা মু..হাহাহা।।””
মনে মনে কথাগুলো ভেবে একটা ডেভিল হাসি দেয় অধরা।। ঠিক তখনই কেউ একজন পিছন থেকে তার মাথায় টোকা দেয়।। ডায়গলে ডিস্টার্ব করায় অধরা বিরক্তি লুক নিয়ে পিছনে ফিরে দেখে শ্রাবণ বত্রিশ দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে।।
— অধরা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বললো,,,””কি হলো ভাইয়া?? কয়লা দিয়ে দাঁত ব্রাশ করে আমাকে দেখাতে এসেছো নাকি??””
— অধরার কথায় শ্রাবণ একটু রাগী লুক নিয়ে তাকালেও আবার মুচকি হেসে অধরার গাল টেনে ধরে,,,””অধরা!! আমার লক্ষি বোন,,,মিষ্টি বোন।। মাঝে মাঝে আমি ভেবে অবাক হই,,,আমার কপালেই তোর মতো একজন বোন জুটল?? কি কপাল রে আমার!! নিজেকে আজ ধন্য মনে হচ্ছে,,,খুশিতে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে….।।””
— অধরা ভ্রু কুঁচকে বললো,,,””এতো কথা না বলে আসল কথায় আসো।। বলো আমাকে কি করতে হবে??””
— শ্রাবণ অধরার কাধের উপর এক হাত রেখে কাশি দিয়ে গলা ঝেড়ে বললো,,,””আসলে বলছিলাম কি….কাল তো আমাদের সাথে তোর বান্ধবীরাও যাবে।। তাহলে তুই ইশমিকেও তোর বান্ধবী বানিয়ে সাথে নিয়ে চল।। হবু ভাবি তো বান্ধবীর মতোই,,,তাই না??
— অধরা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বললো,,,””আরে এটা কোন ব্যাপারই না।। ভাইয়া,,মনে করো তোমার কাজ হয়েই গিয়েছে।। কিন্তু,,,,,আমাদের ডিলের কথা মনে রেখো কিন্তু।””
— শ্রাবণ অধরার দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো,,,””হ্যা!! মনে থাকবে।।””
অর্ণব অধরার রুমে প্রবেশ করে দেখে অধরা আর শ্রাবণ দুজন দুজনের দিকে জোর পূর্বক হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। এমন একটা ভাব যেন দুজনেই চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে।।
— “”তোরা দুজন এভাবে বোকার মতো হাসছিস কেনো??””
— শ্রাবণ আমতা আমতা করে,,,””শুনেছি হাসলে নাকি হার্ট ভালো থাকে। তাই ভাই বোন মিলে একটু হাসছিলাম আরকি।। যাই হোক আমি এখন যাই।।””
কথাটা বলেই কোনমতে রুম থেকে বেরিয়ে যায় শ্রাবণ।
— অর্ণব বোকার মতো শ্রাবণের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে,,,””এর আবার কি হলো??
যাই হোক,,,অধরা তোর কাজ হয়ে গিয়েছে।।””
— অর্ণবের কথা শুনে অধরা খুশিতে নাচতে নাচতে,,,””ইয়েস!! ভাইয়া তোমাকে এতোগুলো ধন্যবাদ।। হি হি,,,এখন খেলা জমবে।।””
— “”হুম জমবে😒।। আশ্বিন জানতে পারলে তোর সাথে আমাকেও খুন করে ফেলবে।।””
— “”আরে নিকুচি হোক আশ্বিন ভাইয়ার।। ভয় পাই নাকি আমি?? এহহহ,,,কি আমার মানুষটা যে আমি তাকে ভয় পাবো।। তোমারও ভয় নেই,,,যাস্ট চিললল!!!””
অর্ণব ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোট করে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে। আর অধরার ঠোঁটে বিশ্ব জয়ের হাসি।।
🍁এদিকে……
শাহিন হাসাদ তার ম্যানেজারের সাথে মিটিং নিয়ে আলোচনা করছে তখনই সাহিল রুমে প্রবেশ করে।। সাহিলকে দেখে শাহিন ম্যানেজারকে বাইরে পাঠিয়ে দেয়।।
— “”নতুন কোন খবর জানতে পেরেছো নাকি??””
— “”ইয়েস ড্যাড।। কাল বিকেলে হঠাত করেই অধরা অসুস্থ হয়ে যায়।। ডাক্তার বাসায় গিয়ে তার চিকিৎসা করে।। শুনেছি উনি নাকি অধরার স্পেশাল ডাক্তার।।
আবার কাল সকালে তারা বাগান বাড়ি ঘুরতে যাচ্ছে।।””
— “”হুম।। এক কাজ করো আমাদের কিছু লোককে পাঠিয়ে দাও আশ্বিন অর্ণবদের পিছু পিছু।। তারা কি করে,,কোথায় যায় সব তথ্য আমার চাই।।
আর কিছু লোককে পাঠিয়ে দাও অধরার ডাক্তারকে তুলে আনতে।। কি এমন অসুস্থতা অধরার আমাদেরও তো জানা দরকার।।””
— বাঁকা হেসে,,,””ওকে ড্যাড।।””
💕পরদিন সকালে…..
সবাই যাওয়ার জন্য একদম রেডি।। অর্ণব বড় গাড়ি নিয়ে এসেছে যেন সবাই একসাথে যেতে পারে।। ইতিমধ্যে তিশা আর ইশমি চলে এসেছে।। অধরাকে আজকে অনেক বেশি কিউট লাগছে।। সাদা একটা টপস পড়েছে সে।।
— তিশা অধরার কাছে এসে,,,””নিধি ফোন দিয়ে বললো সে নাকি যেতে পারবে না।। কি যেন সমস্যা তার।।””
— অধরা মুখটা মলিন করে বললো,,,””নিধি সাথে থাকলে আরো ভালো হতো।।””
কারো হাসির শব্দ শুনে পিছনে ফিরে অধরা অবাক হয়ে যায়।। আশ্বিন একটা সাদা শার্ট আর ব্লেক জিন্স পরে আছে,,,বাম হাতে একটা দামি ঘড়ি।। এই সাধারণ লুকেই অসাধারণ লাগছে আশ্বিনকে।। যা দেখে অধরা চোখ ফিরিয়ে নিতে ভুলে গিয়েছে।।
হঠাত পাশে চোখ পড়তেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায় অধরার।। টাইট ফিট ছোট একটা ড্রেস পরে মারিয়া আশ্বিনের হাত ধরে আসছে।। মারিয়াকে এতো ঢং করতে দেখে অধরার ইচ্ছে করছে তাকে গাড়ির চাকার নিচে ফেলে দিতে।। রাগে দুঃখে চোখ সরিয়ে নেয় অধরা।।
— আশ্বিন সবাইকে উদ্দেশ্য করে,,,””সবাই যেহেতু চলে এসেছে তাহলে যাওয়া যাক।।””
— অধরা ভারি কণ্ঠে বললো,,,”” আর একজনের আসা বাকি আছে।। এখনি চলে আসবে সে।।””
— আশ্বিন ভ্রু কুঁচকে অধরার দিকে তাকিয়ে,,,””আর কে আসবে??””
— অধরা কোন উত্তর না দিয়ে পিছনে তাকিয়ে খুশি হয়ে বললো,,,”” ওই তো চলে এসেছে!!””
অধরার কথা শুনে আশ্বিন পিছনে ফিরে অবাক হয়ে যায়।। ড্যাবড্যাব করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে আশ্বিন।। এটা কি ভুল দেখছে সে??
অধরা এক নজর অর্ণবের দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপ দিলো। তারপর খুশি খুশি ভাব নিয়ে বললো….
— “”ধ্রুব ভাইয়া!!””
কথাটা বলেই ধ্রুবর দিকে ছুটে গেলো অধরা।। এদিকে আশ্বিন রাগী চোখে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে আছে।।
–চলবে❤