ভালোবাসার_রং_মিছিল💚 #লেখিকা_ইশা_আহমেদ #পর্ব_২৯

#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা_ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২৯

৬২.
রুশান ইলমা ছাদে এসেছে।ইলমা রুশানের দেওয়া গিফটা যত্ন করে রেখে দিয়েছে।রুশান তাকে একটা নীল জামদানী শাড়ি দিয়েছে সাথে কানের ঝুমকো আর চুড়ি।ইলমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে জিনিসগুলো।রুশান ঠিক করেছে আজকেই সে নিজের মনের কথা জানাবে ইলমাকে।আবহাওয়া বেশি ভালো না।যখন তখন বৃষ্টি নামতে পারে।

—“ইলমা তোমাকে কিছু বলতে চাই আমি”

রুশান অনেক সাহস করে কথাটা বলল।ভীষণ ভয় করছে।যদিও ইলমা অনেক ছোট।কিন্তু বর্তমান যুগে এর আগেই মেয়েরা প্রেম করে বসে আছে।ইলমা মিষ্টি হেসে বলে,,,

—“হ্যাঁ বলুন রুশান ভাইয়া”

—“তুমি কি কালকে বিকালে আমার সাথে দেখা করতে পারবে ইলমা।”

—“কেনো ভাইয়া”

রুশান মাথা চুলকে হেসে বলে,,,

—“একটু প্রয়োজন আছে”

—“কি প্রয়োজন ভাইয়া”

—“সেইটা এখন বলা যাবে না।কালকে বলবো।শোন পারলে আমার দেওয়া শাড়িটা পরে এসো।নদীর পাড়ে থাকবো আমি”

কথাটা বলেই রুশান দ্রুত পায়ে স্থান ত্যাগ করে।ইলমা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।রুশান কি বলে গেলো সব তার মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে।ইলমা এই কয়েকদিনে রুশানকে নিজের মনে জায়গা দিয়ে ফেলেছে।রুশান এমনিতেই সুদর্শন আরো ইলমার সাথে করা ভালো ব্যবহার সব মিলিয়ে রুশানকে ইলমার কাছে একজন অমায়িক মানুষ মনে হয়।

৬৩.

রুশান সকাল থেকে অস্থির হয়ে আছে।অর্ষা কয়েকবার জিজ্ঞেস করলেও রুশান কিছু বলেনি।ভয় হচ্ছে প্রচুর রুশানের।বলে তো দিলো আজকে আসতে ইলমাকে আদেও বলতে পারবে ভালোবাসার কথা।অর্ষা বিষয়টা কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে।ও রুশানকে চেপে ধরে বলে,,,,

—“তুই কি ইলমা আজকে নিজের মনের কথা বলতে চাইছিস?”

রুশান চোখ বড়বড় করে তাকালো অর্ষার দিকে।অর্ষা যে বুঝে ফেলবে ভাবতে পারিনি রুশান।ভয়ে কাচুমাচু হয়ে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় রুশান অর্ষার দিকে।অর্ষা কিছুটা রেগে বলল,,,

—“আমি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি রুশান উত্তর দে”

—“বিশ্বাস কর অর্ষা আমি ইলমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি।আমি অভিনয় করছি না।তুই তো জানিস আমি কেমন।কখনো কষ্ট পেতে দেবো নাহ ইলমাকে।”

অর্ষা রুশানের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বলে ওঠে,,,,

—“আমি জানি ভালোবাসিস তুই ইলমাকে কিন্তু ইরহাম জানলে যদি ভুল বুঝে আমাকে।এই ভয় হচ্ছে আমার”

রুশান কিছুক্ষণ ভেবে মলিন হেসে বলে,,,

—“ঠিকই বলেছিস ইরহাম ভাইয়া না মানলে।আরো ইলমা এখনো বেশ ছোট।আরেকটু বড় হলে বলবো তাকে নিজের মনের কথা।”

অর্ষা হাসে।যাক ভাইয়া বুঝলো তবে।অর্ষা চাইছে না রুশানকে ইরহামের কাছে খারাপ বানাতে।ইলমাও ছোট অনেক।এখন চাইছে না অর্ষা এই সব কিছু।সময় আসলে নিজেই ইলমাকে রুশানের হাতে তুলে দিবে।যা আসতে দেরি আছে।রুশানকে নিয়ে কোনো টেনশন নেই অর্ষার।রুশান যদি কাউকে ভালোবাসে তাহলে তাকে কিভাবে আজীবন আগলে রাখতে হয় জানে সে।

—“মন খারাপ হয়েছে তো?”

রুশান উদাস হয়ে বলে,,,

—“সত্যি বলতে হয়েছে কারণ ভালোবাসার মানুষকে পেতে হলে এখনো অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে।কিন্তু আমি চাই না আমার জন্য ইলমার ক্ষতি হোক।তার জন্য আমি অপেক্ষা করতেও রাজি”

—“এই তো আমার ভাই।বুঝেছিস বিষয়টা”

৬৪.

ইরহাম সুস্থ হয়েছে সাতদিন হলো।এই কয়েকদিনে অর্ষার প্রতি তার ভালোবাসা কয়েক গুন বেড়েছে।ইরহাম মোট কথা অর্ষাকে ছাড়া থাকতে পারছে না।তাই তো বেহায়ার মতো অর্ষাকে এখনই বাড়ি নিয়ে আসার কথা বলতে এসেছে আয়রাকে।আয়রার রুমের সামনে এসে দরজায় নক করে ভেতরে ঢোকার অনুমতি নেয় ইরহাম।আয়রা ভেতরে আসতে বলে ইরহামকে।ইরহাম রুমে ঢুকে সোফা বসে পরে।

—“মামনি তোমাকে কিছু বলতে চাই আমি”

—“হ্যাঁ বাবা বল”

—“আমি অর্ষাকে এখনই নিজের কাছে নিয়ে আসতে চাই”

আয়রা মুচকি হাসেন ইরহামের আড়ালে।আয়রা জানতো খুব তাড়াতাড়িই ছেলে এমন কথা বলবে।রেডিও ছিলেন ইরহামের মুখ থেকে এই কথা শোনার জন্য।ছেলে যে বউকে পাগলের মতো ভালোবাসে তা বুঝতে বেগ পেতে হয়নি।আয়রা মুখটা গম্ভীর করে ফেলে।এরপর শক্ত চোখে ইরহামের দিকে তাকিয়ে বলেন,,,

—“কেনো তুমি না অর্ষাকে পছন্দ করো না তাহলে তাকে নিজের কাছে আনতে চাইছো কেনো।থাক সে দূরে যখন সময় আসবে নিয়ে আসবো।তুমি চাইলে ডিভোর্স ও দিতে পারো”

ইরহাম রেগে যায় শেষের কথা শুনে।আয়রা ছেলের রাগ ভালো ভাবেই বুঝতে পারে।ইরহামকে জ্বালাতেই মূলত ডিভোর্সের কথাটা বলা।ইরহাম জ্বলছেও বটে।ইরহাম নিজেকে শান্ত রেখে শান্ত সুরে বললল,,,,

—“আমি ভালোবাসি মামনি অর্ষাকে।ডিভোর্স তো দূরে থাক ওকে ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতে পারছি না আমি”

আয়রা ছেলের কথা শুনে ফিক করে হেসে দেয়।ইশফাক সেদওন ঠিকই বলেছিলো।ইরহাম ভালোবাসবে অর্ষাকে পাগলের মতো।হলোও তাই।ছেলেটা পাগলের মতোই ভালোবাসে অর্ষাকে।আয়রা ছেলেকে খোঁচাতে বলে,,,

—“ইরহাম বাপ আমার আপনি যে অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসতেন তার কি হবে এখন”

ইরহাম বুঝে ফেলে মায়ের মজা।সে এবার ঠোঁট প্রশস্ত করে হেসে বলে,,,

—“আমি তার প্রেমেই পরেছিলাম মামনি,তাকে চিনতে ব্যর্থ হয়েছিলাম।তবে এখন জানি সে আমার।আল্লাহ অজান্তেই তাকে আমার করে দিয়েছে।”

৬৫.

সকাল সকাল চৌধুরী পরিবার হাজির আহমেদ বাড়িতে।ইরিনা বেগম ও মৌ রহমান তোড়জোড় করছে সব কিছুর।এক প্রকার হুট করেই আসা ইরহামদের এই বাড়িতে।আয়রা না পেরে সকাল সকালই চলে এসেছে সবাইকে নিয়ে।আসিফ আহমেদ আর আহিন আহমেদ কুশল বিনিময় করে কথা বলছে ইসরাক আর আয়রার সাথে।ইরহামের চোখ দুটো তার প্রেয়সীকে খুঁজে চলেছে।ইলমাও খুঁজে চলেছে রুশান নামক সুর্দশন পুরুষটাকে।

আরিশা রুহান নিচে এসে হাজির।কালকে সারা রাত প্রায়ই ইরহাম অর্ষার সাথে কথা বলেছে কিন্তু বলেনি আজকে তারা আসবে।অর্ষা জানেও না এ বিষয়ে।আয়রা ছেলের মনোভাব বুঝতে পেরে আরিশাকে দিয়ে ইরহামকে অর্ষার রুমে পাঠিয়ে দেয়।

ইরহাম রুমে ঢুকে দরজা চাপিয়ে দেয়।অর্ষার দিকে চোখ পরতেই অজান্তেই হাসি চলে আসে ইরহামের ঠোঁটের কোনে।মেয়েটা বাচ্চাদের মতো টেডি জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে।ইরহাম অর্ষার কাছে এসে ওর পাশে বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে থাকে।

—❝তুমি আমার বুকের বাম পাশের স্পন্দন!তীলে তীলে গড়ে উঠা মায়াবি বন্ধন।❞

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here