ভালোবাসার_রং_মিছিল💚 #লেখিকা:ইশা_আহমেদ #পর্ব_২৩

#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২৩

৫০.
—“কিরে হলো তোদের”

আহিন আহমেদ অর্ষার রুমে প্রবেশ করতে করতে অর্ষা রুশানকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলেন।রুশান বেচারা ধপ করে শুয়ে পরেছে অর্ষার বিছানায়।ঘুমের জন্য চোখ খুলেও রাখতে পারছে না।অর্ষার অবস্থা ও একই।সে ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে।

—“হ্যা হ্যা ছোট আব্বু হয়েছে আমার। কিন্তু এই রুশাইন্না ফকিন্নি এখন আমার রুমে এসে ঘুমাচ্ছে”

—“এক কাজ করি মা চল তোকে এগিয়ে দিয়ে আসি।ওর যাওয়া লাগবে না”

কথাটা শোনা মাত্রই রুশান ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে।এরপর ঘুম ঘুম চোখে অর্ষা আর আহিন আহমেদের দিকে তাকিয়ে বোকা বোকা হাসি দেয়।এরপর তিনজন মিলে নিচে নামে।অর্ষা তো এতো এতো জামা নিয়েছে জুতো নিয়েছে।রুশান শুধু হা করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলো।

—“রুশান বাপ আমার মাকে দেখে রাখিস।আর ইরহাম বাবা তো সাথে আছেই”

—“চিন্তা করো না বড় আব্বু আমি আমার বোনকে আগলে রাখতে জানি”

আসিফ আহমেদ হাসেন।অর্ষা রুশান রাতেই দাদু দাদিমার কাছে বিদায় নিয়ে রেখেছে।এই সকাল বেলা উঠাতে চাইছিলো না তারা।বৃদ্ধ মানুষদের শুধু শুধু কষ্ট দিয়ে লাভ কি।ইরিনা বেগম অনেক জ্ঞান দিয়ে দিয়েছে।মৌ রহমান তো কেঁদেই ফেলেছে।

সবাই সকাল ৬ টায় চলে এসেছে।এখান থেকে প্রথমে টেকনাফে যাওয়া হবে তারপর সেখান থেকে জাহাজে বা ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়া হবে।রুশান আর অর্ষা ঘুমে ঢুলছে।আহিন আহমেদ এসে পৌছে দিয়ে গিয়েছেন।

৫ টা বাস যাবে টেকনাফ পর্যন্ত।এটা শুধু অনার্স ১ম বর্ষের ট্যুর।যার যার বাসে বসে পরে সবাই।রুশানের পাশে অর্ষা বসেছে।নাইম উশা বসেছে আর বেচারা মুহিব একা বসেছে।ওর পাশে অন্য ডিপার্টমেন্টের একজন ছেলে বসেছে।রুশান অর্ষা বাসে উঠেই ঘুম।অর্ষার ঘুম ভাঙে বেলা ১০ টায়।গাড়ি থামিয়েছে।সকালের নাস্তা করার জন্য।

একটা রেস্তোরাঁয় বসে সবাই।রুশান অর্ষা কথা বলতে বলতে বাস থেকে নামে।বাস থেকে নামতেই অর্ষার ফুরফুরে মেজাজটা বিগড়ে যায়।নিহানা ইরহামের সাথে চিপকে আছে।এটা দেখে রাগে সে ধুপধাপ করে দ্রুত অল্প কিছু খেয়ে চলে আসে।ইরহাম মনে মনে হাসছিলো অর্ষার কাহিনী দেখে।

টেকনাফ পৌঁছে সেখান থেকে জাহাজে করে রওনা দেয় সেন্টমার্টিন দ্বীপের উদ্দেশ্যে।দীর্ঘ সময় জার্নি করার পর সেন্টমার্টিন দ্বীপে পৌছায় অর্ষারা।আসার পথে মিয়ানমার অপরদিকে বাংলাদেশ ছেড়ে নাফনদে,বঙ্গোপসাগরে গাঙচিলের মেলা বসেছিলো।ঝাঁকে ঝাঁকে গাঙছিল দেখা যাচ্ছিলো।ইশ এতো রোমাঞ্চকর দৃশ্য আগে দেখেনি অর্ষা।
রিসোর্টে এসে সবাই যার যার বরাদ্দ রুমে চলে যায়।প্রচুর ক্লান্ত সবাই।নিজেদের রুমে এসে ঘুমিয়ে পরে।উশা আর অর্ষা একটা রুমে।ওরা দুজন এসেই ফ্রেস না হয়ে শুয়ে পরেছে।

৫১.

সকাল সকাল বের হয় সবাই সমুদ্র সৈকত দেখতে।অর্ষা আর রুশান রিসোর্ট থেকে বেরোতেই আশেপাশের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।যেদিকে চোখ যাচ্ছে সেদিকে নীল আর নীল।আকাশ সমুদ্রের নীল মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে।খোলামেলা আকাশ আর বালুকাময় চারপাশ।অগভীর সমুদ্রতট,সামুদ্রিক প্রবাল,সাগরের নীল জলরাশির ঢেউয়ের ছন্দ সব কিছু অর্ষাকে মুগ্ধ করছে।

নারিকেল গাছের সারি যেন চিরলপাতায় দোলা দিয়ে যায়। নারিকেল জিঞ্জিরা বা সেন্ট মার্টিনের সৌন্দর্য অপার্থিব, তীব্র প্রাকৃতিক। সাগর তীরে বাঁধা মাছ ধারার নৌকা-ট্রলার,সৈকত জুড়ে কাঁকড়া,ঝিনুক এই সব কিছুই সেন্টমার্টিন দ্বীপের সৌন্দর্য।যা ছোট এই দ্বীপকে অনিন্দ্য সুন্দর করে তুলেছে।সচ্ছ নীল পানিতে জেলি ফিশ,হরেক রকমের সামুদ্রিক মাছ এবং প্রবাল সেন্টমার্টিন দ্বীপের অন্যতম আকর্ষন।

সমুদ্রের পাথরের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ।সেন্টমার্টিন যেন প্রকৃতির লীলা।দ্বীপের সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় অর্ষার।এই দ্বীপের মানুষের সব থেকে প্রিয় একটি জিনিস ডাব।সবাই এখন এই ডাব খাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে।অর্ষা রুশান ডাবের পানি নেয়।অর্ষা ডাব খেতেই বোঝে এর স্বাদ আর এটি কেনো এখানে এতো জনপ্রিয়।ডাবের পানি যেমন মিষ্টি তেমনি সুস্বাদু।

—“অর্ষা ডাবটা তো সেই আমার তো আরো একটা খেতে ইচ্ছে করছে”

—“আমারও চল দুজন আরেকটা করে খাই”

দুজন আরো একটা ডাব খেলো।সবাই সকালের নাস্তা করতে একটা রেস্তোরাঁয় গেলো সবাই।দ্বীপের সৌন্দর্য দেখে অর্ষার মনটা নিমেষেই ভালো হয়ে গিয়েছে।সবাই টেবিলে বসে পরে।এখানকার মাছভাজাও ভীষণ জনপ্রিয়। অর্ষা বিভিন্ন প্রকারের মাছভাজা খায়।ইরহামের দিকে চোখ পরতেই দেখতে পায় নিহানার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।

ও স্বাভাবিক ভাবে খেতে থাকে।এমন ভাব করে যেন অর্ষা কাউকে দেখেনি।ইরহাম অবাক হয়।অর্ষা মনে মনে হেসে বলে
–“মিস্টার ইরহাম চৌধুরী আমি এখন বুঝেছি আপনি আমায় জ্বালানোর জন্যই নিহানার সাথে চিপকে আছেন তো থাকুন আমার কিছু না তাতে।”

খেয়ে দেয়ে সবাই দুপুরের দিকে সৈকতে নামে গোসল করার জন্য।পানিতে ভেজার ফলে জামা অর্ষার শরীরের সাথে লেপ্টে আছে।একটা ছেলে এসে বলে,,

—“হাই মিস ইউ লুকিং সো হট”

এই একটা কথাই ইরহামের মাথায় আগুন ধরানোর জন্য যথেষ্ট ছিলো।ছেলেটা যখন কথাটা বলেছে তখন ইরহাম পাশেই ছিলো।বিচের একটা ছেলে।অর্ষা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।চেনে না জানে না এসে বাজে কথা বলছে।ইরহাম সোজা এসে ছেলেটাকে মারতে লাগলো।রাগে থরথর করে কাঁপছে।রুশান হা করে তাকিয়ে আছে।ও এখনো কিছু বুঝতে পারিনি।এই সাইডে স্টুডেন্ট বেশি নেই।

—“হাউ ডেয়ার ইউ আমার বউকে এসে বাজে কথা বলছিস।আমার জানের দিকে বাজে নজরে তাকিয়েছিস।আই উইল কিল ইউ।”

ছেলেটাকে আর মারলে হয়তো মরে যাবো।অর্ষা ইরহামের এমন রূপ প্রথমবার দেখছে।রুশান ইরহামকে আটকিয়ে বলে,,,,

—“স্যার আর মারবেন।আর মারলে হয়তো মরে যাবে।”

ছেলেটাকে তার বন্ধুরা এসে নিয়ে যায়।অর্ষা থরথর করে কাঁপছে।ইরহামের রাগ এখনো কমছে না।ইরহাম অর্ষার কাছে এসে ওর বাহু চেপে ধরে বলে,,,

—“ছেলেদের শরীর দেখাতে ভালো লাগে তোর তাই না।তুই কেনো পানিতে নেমেছিস।নামবি যখন তখন মোটা জামা পরে আসতে পারিসনি।”

অর্ষা অতিরিক্ত ভয় পাওয়ায় ইরহামের বুকে ঢলে পরে।ইরহাম চমকে ওঠে।দুইহাতে আগলে নেয় তার প্রেয়সীকে।ইরহাম রাগ পরে যায়।রুশানের রাগ উঠলেও কিছু বলে না।স্যারকে এসব বলা ঠিক না।আরো দুজন স্বামী স্ত্রী।এর ভেতর ররুশানের কথা বলার কোনো অধিকার নেই।এটা ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুশান।

ইরহাম নিজের প্রেয়সীর এমন অবস্থা দেখে অস্থির হয়ে পরে।ইরহাম অর্ষাকে কোলে তুলে নেয়।অর্ষাকে নিয়ে রিসোর্টে চলে যায়।রুশানসহ বাকি তিনজনও হতভম্ব।অর্ষার জন্য চিন্তা হচ্ছে।উশা তো কেঁদেই দিয়েছে।সে অর্ষাকে ভীষণ ভালোবাসে।তার ছোট ছোট দুইটা ভাই আছে বোন নেই।অর্ষাকেই নিজের বোন বানিয়েছে।তার এই অবস্থা।নাইম উশাকে সামলাচ্ছে।
মুহিব রুশান বসে পরে বালুর উপর।সবার মুড নষ্ট হয়ে গিয়েছে।সবাই ভেবেছিলো কতো মজা করবে।কিন্তু ওই ছেলেটার জন্য কিছু হলো না।নাইম উশা মুহিব রুশান ফিরে আসলো।

৫২.

ইরহাম অর্ষাকে তার রুমে দিয়ে এসেছে।নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।বাইরে এসে দাঁড়াতেই নিহানা ইরহামের কাছে আসলো।নিহানা দূর থেকে খুব ভালো করেই সব লক্ষ্য করেছে।ইরহামকে সে পছন্দ করলেও প্রথমে বিয়ে হওয়ার পর এখন সে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়েছে।

—“ইরহাম স্যার আপনাকে কিছু কথা বলি মন দিয়ে শুনুন”

ইরহাম নিহানার দিকে তাকালো।এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকালো।রাশি রাশি ঢেউ আছড়ে পরছে পাড়ে।ইরহাম ধীর কন্ঠে বলল,,,

—“বলুন মিস নিহানা”

—“জানেন তো ইরহাম স্যার মেয়েরা সব সময় ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে নিজের প্রতি কেয়ার যত্ন একটু সময় পেতে পছন্দ করে।আপনি অর্ষাকে ভালোবাসেন কিন্তু বলছেন না।কেনো?অর্ষা আপনায় ভালোবাসে কি না জানেন না তার জন্য।আমি অর্ষা কয়েকদিন ফলো করেছি।আপনার আশেপাশে কাউকে দেখলে সে জেলাস হয় তার ব্যবহারে তা খুব ভালো করেই বোঝা যায় এবং আপনি নিজেও বর্তমানে জানেন অর্ষা আপনায় ভালোবাসে।মেয়েরা কখনোই নিজের মনের কথা আগে বলতে চায় না।সে চায় ভালোবাসার মানুষটা তাকে আগে বলুক।আপনার এখন উচিত অর্ষাকে নিজের মনের কথা জানানো”

ইরহাম খুব মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনলো।এরপর আপনমনে হেসে উঠলো।সে তার প্রেয়সীকে নিজের মনের কথা জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।

—“ধন্যবাদ আপনাকে মিস নিহানা”

নিহানা হাসে।ইরহাম চলে যায়।ইরহামের যাওয়ার পানে চেয়ে থাকে নিহানা।হয়তো তার ভাগ্যে নেই তাই ইরহাম তার না।ভালোবাসার আগেই সে ইরহামের কাছ থেকে সরে এসেছে।এটাই ভালো।অবশ্য আমরা সব সময় নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতই দুর্বল হই।তবে নিহানা দুর্বল হওয়ার আগেই নিজেকে সামলাতে পেরেছে।

#চলবে

Our group link join plz
👇👇
https://www.facebook.com/groups/272194598259955/?ref=share

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here