ভালোবাসার_রং_মিছিল💚 #লেখিকা:ইশা_আহমেদ #পর্ব_১৫

#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৫

ইরহামের গান গাওয়া শেষ হতেই সবাই প্রশংসা করে। অর্ষা চোখ বন্ধ করে গান শুনছিলো। চোখ খুলে নড়েচড়ে বসে।ইরহাম চোখ বন্ধ করেই গাইছিলো।চোখের সামনে অর্ষার মুখটা ভেসে উঠছিলো।উশা বলে উঠে,,

—“স্যার আপনি তো দারুন গানের গলা।অনেক সুন্দর হয়েছে”

ইরহাম অর্ষার কথা শুনে মৃদু হাসে।রুশান উশার মাথায় থাপ্পড় মেরে বলে,,,

—“স্যার কি রে দুলাভাই বল দুলাভাই।আর হা দদদদদদদদদুলাভাই আপনার গানের গলা বেশ।আমার বিয়েতে আপনি গান গাইবেন কিন্তু”

ইরহাম কটমট দৃষ্টিতে তাকায় রুশানের দিকে।ইলমা তো হাসতে হাসতে শেষ।আরিশারও সেম অবস্থা।উশা মুহিব,অর্ষা মুখ টিপে হাসছে।ইরহাম দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,

—“তোমাদের দুই ভাই বোনের সমস্যাটা কোথায় বলো তো।সব সময় আমার পিছে লাগো।এতো সমস্যা কেনো?”

—“আরে দুলাভাই কি যে বলেন আমার তো কোনো সমস্যা নেই একে বারে ফিট আছি।একেবারে একজন ত্রুটি পূর্ণ পুরুষ মানুষ”

রুশান দাঁত কেলিয়ে কথাটা বলে।ইরহাম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রুশানের দিকে তাকালো।রুশান বোকা বোকা হাসি দিয়ে অন্য দিকে তাকালো।ইলমা বলে ওঠে,,

—“তোমরা থামো তো।এই রুশান ভাইয়া আপনি যখন এতো কথা বলছেন তাহলে একটা গান শুনান”

রুশান পরে যায় বিপাকে।সে তো গান গাইতে পারে না।গিটার বাজায় শখে আরো একটা কারণ হলো অর্ষা।অর্ষার গানের গলা ভীষণ ভালো।রুশান অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়।ইরহাম বাঁকা হাসে রুশানের অবস্থা দেখে।

—“আমার না গলা ব্যাথা আজকে।অন্য একদিন শোনাবো ঠিক আছে।”

ইলমা শুনতে না চাইলেও রুশান ভুলভাল বুঝিয়ে দেয়।অর্ষা তো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা।সবাই টুকটাক আড্ডা দিয়ে যায় যার রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্য রওনা হয়।ইয়াদ গেস্টরুমে থাকবে আর ইলমা উশা আরিশার সাথে তার রুমে।অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।আরিশা ইলমা ঘুমে ঢুলছে।

—“ইয়াদ ইলমাকে একটু দিয়ে আয় ভাই।আমিই দিয়ে আসতাম কিন্তু অর্ষাকে তো দেখছিসও ঘুমিয়ে পরেছে অলরেডি”

ইয়াদ মাথা নাড়িয়ে ইলমাকে নিয়ে যায়।রুশান আরিশাকে রুমে দিয়ে আসে।অর্ষা তো গল্প করার মাঝেই ইরহামের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরেছে।ইরহাম মুচকি হেসে অর্ষাকে কোলে তুলে নেয়।অর্ষাকে রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে দরজা আটকে পাশে বসে অর্ষার।

—“আমি তোমার শরীর ছোয়ার আগে তোমার মন ছুঁতে চাই প্রেয়সী।”

ইরহাম অর্ষার কপালে পরে থাকা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দেয় ইরহাম।বাইরে বাতাস হচ্ছে হয়তো মাঝরাতে বৃষ্টি হতে পারে।ইরহাম অর্ষার শরীরে চাদর টেনে নিজে অর্ষার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে দেখতে থাকে অর্ষাকে।

৩২.

সকালে ঘুম থেকে উঠতেই অর্ষার চোখ কপালে।ইরহাম অনেকটা কাছে সে।তাড়াহুড়ো করে ইরহামের কাছ থেকে সরে আসে।ইশ কি লজ্জা।সে ইরহামের এতো কাছে গেলো কিভাবে।পায়ের ব্যাথা টা কালকে থেকে একটু কমেছে।অর্ষা খুড়িয়ে খুড়িয়ে ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে।

ইরহামের ঘুম ভেঙে যায়।চশমা পরে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে অর্ষা নেই।তখনই অর্ষা ভেজা মুখে বের হয়।হয়তো মাত্র মুখ ধুয়ে এসেছে।মুখ থেকে পানি গরিয়ে পরছে।ইরহাম গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অর্ষাকে দেখে তার মাথায় একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে “সিগ্ধময়ী”।হ্যা অর্ষা একমাত্র তার সিগ্ধময়ী,ব্যক্তিগত সিগ্ধময়ী।

অর্ষা মুখ মুছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আছড়াতে থাকে।ইরহামকে খেয়াল করেনি এখনো।আয়নার ভেতর দিয়ে ইরহামের দিকে চোখ যেতেই দেখে ইরহাম তার দিকে তাকিয়ে আছে।ইরহামের দৃষ্টিতে কিছু একটা ছিলো।অর্ষা চোখ নামিয়ে নেয়।

—” এই যে বজ্জাত পুরুষ আপনি এমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো হ্যা”

অর্ষার বোকা বোকা কথা শুনে ভীষণ হাসি পায় ইরহামের।ইরহাম ভ্রু কুচকে বলে,,

—“আমি তো তোমার দিকে তাকায়নি আমি তো আয়নায় নিজেকেই দেখছিলাম”

ইরহাম থেমে আবার অর্ষার চোখে চোখ রেখে ভ্রু নাচিয়ে বলে,,,
—“ওয়েট আমি তোমাকে দেখছিলাম তোমার ভষ্যমতে তাহলে তো তুমিও আমাকেই দেখছিলো।”

অর্ষা থতমত খেয়ে যায়।ইরহাম যে তাকেই তার জালে ফাসিয়ে দিলো।ইরহাম মৃদু হাসে অর্ষার আড়ালে।অর্ষা নিজের মতো চুল আছড়াতে থাকে।ইরহাম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৮:৩০ টা বাজে।
ভার্সিটিতে ১০ টা থেকে ক্লাস আজ তার।দ্রুত ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে অর্ষা রুমে নেই।রেডি হয়ে নিচে নামে।

আসিফ আহমেদ আহিন আহমেদ দাদু সবাই বসে আছে।অর্ষা আসিফ আর আহিন আহমেদের মাঝে বসে আছে।অর্ষাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে আছে আসিফ আহমেদ।ইরহাম নিচে এসে সবাইকে সালাম দিয়ে বলল,,,

—“শুভ সকাল আব্বু এন্ড সবাইকে”

ছোটরা চিল্লিয়ে বলল,,,”শুভ সকাল”

ইরহাম বিরক্ত হয়।আসিফ আহমেদ বুঝতে পারেন ইরহামের বিরক্তির বিষয়টা।সবাইকে থামতে বলেন তিনি।ইরহাম মোটেও কোলাহল পছন্দ করে নাহ।তবুও ভদ্রতার খাতিরে এই ক’দিন সয্য করছে।ইয়াদ চোরা চোখে দেখছে অর্ষাকে।

সবাই একসাথে সকালের নাস্তা করতে বসে।অর্ষার পা আগের থেকে অনেকটা ভালো।আজকে ভার্সিটি না যেতে পারলেও আগামী কালকে যেতে পারবে।ইরহাম ইয়াদ ইলমা সবাইকে বিদায় দিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা হয়।ইরহাম নিজের গাড়িতে করে ভার্সিটিতে যাবে আর ইয়াদ ইলমা আরেকটায় যাবে।

৩৩.

আজকে অর্ষা ভার্সিটিতে যাচ্ছে।ইরহামের সাথে বিয়ে হওয়ার পর সে জেনো কেমন কেমন হয়ে গিয়েছে।আগে ইরহাম সামনে থাকলে কিছু হতো না এখন সামনে থাকলে অস্বস্তিরা সব ঘিরে ধরে তাকে।রুশানের বাইকে করে দুজন যাচ্ছে।যাওয়ার আগে অবশ্য ইরিনা বেগম একশোটা উপদেশ দিয়ে দিয়েছে তাকে।

রুশান দাঁত কেলাচ্ছিল দাঁড়িয়ে।বাইকে উঠে বসিয়ে দিয়েছে কয়েক ঘা রুশানকে।রুশান বেচারা মুখ বুঝে সয্য করেছে।ভার্সিটি যেতেও অস্বস্তি হচ্ছে সবাই কি বলবে স্টুডেন্ট হয়ে কিভাবে প্রফেসরকে বিয়ে করলো সে।অর্ষা আজেবাজে চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করলো।

ভার্সিটির সামনে আসতেই অর্ষা দেখলো মুহিব,অর্না,নাইম উশা দাঁড়িয়ে আছে।অর্ষা ওদের দেখে বাইক থেকে লাফিয়ে নেমে দৌড়ে ওদের কাছে যায়।
আচমকা অর্ষাকে দৌড়ে আসতে দেখে সবাই চমকে লাফিয়ে উঠলো।অর্ষা ওদের সামনে এসে হাপাতে হাপাতে বলল,,,

—“কিরে ভুলেই গিয়েছিস আমাকে”

অর্না মিষ্টি করে হেসে বলল,,,

—“আপু শুভেচ্ছা তোমার নতুন জীবনের জন্য।তুমি জীবনে অনেক সুখী হও।স্যার তোমাকে ভীষণ ভালোবাসুক”

অর্ষার শেষের কথাটা শুনে লজ্জা পেলো।ইরহাম নাকি তাকে ভালোবাসবে এটাও মানতে হবে তাকে।ইরহাম যেদিন তাকে ভালোবাসবে সেদিন হয়তো অর্ষাকে পৃথিবীতে পাওয়া যাবে না।নিশ্চিত মঙ্গলগ্রহ থেকে ঘুরে আসবে অর্ষা একবার।

—“দুঃখিত আপু তোমার বিয়েতে না থাকতে পারার জন্য।”

অর্ষা মুচকি হেসে বলে,,,,”সমস্যা নেই কিউটি”

রুশান আসতেই সবাই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে।ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতেই অর্ষার চোখ পরে ইরহামের দিকে।করিডোর দিয়ে হেঁটে নিজের কেভিনে যাচ্ছে।পরনে কালো জিন্স আর নীলরঙা শার্ট।দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম লাগছে।আশেপাশে দেখে চোখ নামিয়ে ফেলে অর্ষা।

অর্ষাকে দেখে অথৈ দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে।অর্ষা মৃদু হাসে।রুশানসহ বাকি সবাই বিরক্ত হয়।অথৈ নেকা কন্ঠে বলে,,,

—“দোস্ত কেমন আছিস রে।আর সরি আমি বিয়েতে যেতে পারিনি রে তার জন্য।”

অর্ষা সরল মনে বলে,,,
—“আরে সমস্যা নেই।তোর প্রবলেম ছিলো বলেই হয়তো যেতে পারিস নি।এতে সমস্যা নেই”

অথৈ অর্ষার সরল মনে বলা কথা শুনে সয়তানি হাসি দেয়।যা কারো চোখে না পরলেও দূর থেকে একজন লক্ষ্য করেছে।অথৈ এগিয়ে আসে রুশানের দিকে।রুশান এমন ভাব করে যেনো সে কাউকে চেনে না।
নিজের মতো ফোন দেখতে থাকে।আসলে সে ইলমার ফেসবুক আইডি খোঁজার চেষ্টা করছিলো।ইলমাকে প্রথম দেখেই যে রুশান তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।

—“কিরে রুশান কথা বলবি না আমার সাথে”

রুশান ফোন পকেটে পুরে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,,,
—“ওহ তুই!খেয়াল করিনি বল কি বলবি”

—“এতো দিন করে দেখা তুই তবুও এভাবে কথা বলবি”

রুশান বিরক্ত হয় প্রচুর।মানুষ কিভাবে এতো বেহায়া হয় এই মেয়েকে না দেখলে সে জানতে পারতো না।বিরক্তিরা সব ঘিরে ধরেছে তাকে।রুশান অথৈকে পাশ কাটিয়ে বাকি সবার কাছে যেতে থাকে।অথৈ রাগে ক্ষোভে ফোসফোস করতে থাকে।

—“আমি তোকে ছাড়ব না অর্ষা তোর জন্যই রুশান আমাকে পাত্তা দেয় না।বিয়ে হলেও ঝামেলা গেলো নাহ।”

#চলবে~

আসসালামু আলাইকুম।নেক্সট নাইস না দিখে প্লিজ গন্তব্য মূলক কিছু লিখুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here