ভালোবাসার টান
part:59,60
writer:Tanzidaa Jannat
59
ইফতি রাগে মিসকার দিকে একবার তাকিয়ে উপরে চলে যায়,,,,,
মিসেস নিলুফা ঃ দেখেছিস নীলা এবাড়িতে পা দিতেই কি অবস্থা হয়েছে,,,,,,
( বলেই দুজন চলে যায়)
মিসকা অপরাধীর মতো দাড়িয়ে আছে,,,,,,,,কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলো না,,,,,,
রুমাঃ বউমনি তুমি মোন খারাপ করো না সব ঠিক হয়ে যাবে
মিসকাঃ আমি জানি রুমা সব ঠিক হয়ে যাবে হিয়া ওর বাবাইয়ের কাছে??,,,,,এক কাজ করো সবার জন্য প্লেটে খাবার বাড়,,,
রুমাঃ হ্যা,,,,ছোট সাহেবের কাছে কিন্তু বউমনি খাবার,,,
মিসকা ঃ কোনো কিন্তু নয়,,,,,, তুমি বাড়তে থাকো আমি এই খাবারটা বাবা মাকে খাইয়ে দিয়ে আসি,,,,,,
রুমাঃ তুমি সত্যি খুব ভালো বউমনি,,,,,আল্লাহ তোমায় সবসময় ভালো রাখবেন তুমি খুব সুখি হবে( মনে মনে)
মিসকা দরজার সামনে গিয়ে দরজা নক করে
মিসকাঃ বাবা আসবো??
মুফতিউর রহমানঃ হ্যারে মা আয়,,,,
মিসকা খাবারটা নিয়ে রুমে ঢুকে খাবারের ট্রেটা বিছানার উপরে রাখে,,,
মিসকাঃ বাবা মা তোমাদের যদি মনে হয় আমি ভুল করেছি তাহলে আমাকে যে শাস্তি দিবে মাথা পেতে নিব তবুও খাবারের উপর রাগ করো না প্লিজ,,,,,,,
মিসেস নিলুফা ঃ আমি জানি মা তুই যা করেছিস কিছু একটা ভেবেই করেছিস কিন্তু দেখলি না এখনই অশান্তি শুরু হয়ে গেলো,,,,
মিসকাঃ মা আমার উপর একটু ভরসা রাখুন,,,
মুফতিউর রহমানঃ হ্যা মা তোর উপর আমাদের পুরো ভরসা আছে,,,,,,তুই যা ইফতির রাগ ভাঙা আমরা খেয়ে নেব,,,,,,
মিসকাঃ থ্যাংক ইউ বাবা,,,তুমি সত্যিই গ্রেট,,,,( মুখে একটু হাসি তুলে মুফতিউর রহমানকে জড়িয়ে ধরে বললো)
মুফতিউর রহমান ঃ আচ্ছা ঠিকাছে পাগলি
মিসকা রুম থেকে বের হয়ে,,,,,
রুমাঃ এই নেন বউমনি,,,,
মিসকা প্লেটে খাবার বেরে নীলার রুমের দরোজার সামনে দাড়িয়ে নক করে,,,,
নীলাঃ কে??
মিসকাঃ আমি আপু দরোজা টা একটু খুল
নীলাঃ তুমি যাও আমার ভালো লাগছে না
মিসকাঃ প্লিজ আপু একটাবার খুল
নীলা দরজা খুলে ভিতরে চলে যায়,,,,,,,
মিসকা রুমের ভিতর ঢুকে দেখে নীলা পুরো চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে
মিসকাঃ ন্যাও খাবারটা খেয়ে নাও,,,,,,
নীলাঃ আমি খাবো না
মিসকাঃ দেখ আপু তোমার শরীর ভালো না মেডিসিন নিতে হবে তো
নীলার মুখের সামনে মিসকা খাবার তুলে নেয়,,,,,
নীলাঃ খাবারটা মুখে নিয়ে বলে তুমি এতো ভালো মানুষি কেন দেখাচ্ছ
মিসকাঃ, আমি যা করি সব মোন থেকে,,,,,,তোমাকে আমি আমার বাড়িতে এনেছি,,,, তুমি আমার গেস্ট,,,, আর তোমার খেয়াল রাখা আমার কর্তব্য,,,,, আমি শুধু আমার কর্তব্যগুলো পালন করছি,,,,,,,,,
নীলাঃ মিসকার হাতে থেকে খাচ্ছে চুপচাপ শুনছে
মিসকাঃ ,আর হ্যা তোমাকো আমি তখনই হিংসা করতাম যখন আমার হারানোর ভয় থাকতো,,,,,,,যখন পুরোটাই আমার হারানোর ভয় করি না,,,,এজন্য তোমাকে আমার একটু ভয় হয় না,,,,,তুমি জানো তোমার কারনে আমি উপলব্ধি করতে পারছি ইফতি আমায় কতটা ভালোবাসে,,,,,,
নীলাঃ চোখ দিয়ে পানি পরছে,,,,,
মিসকাঃ আপু আমি একটা কথা বলি যে ভুলটা তুমি করেছ তা ঠিক হবার নয়,,,,,তুমি তোমার জীবনটা নতুন করে সাজিয়ে নেও,,,,,দেখবে তুমিও ভালো থাকবে
নীলাঃ কোনো কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে মেডিসিন খেয়ে নেয়,,,,,
মিসকাঃ তুমি একটু রেস্ট নাও,,,,
মিসকা চলে আসে ইফতির জন্য খাবার নিয়ে রুমে ঢুকে দেখে ইফতি বারান্দায় দাড়িয়ে আছে,,,,
মিসকাঃ খাবারটা রেখে ইফতির পাশে দাড়ায়,,,,
ইফতি চুপ করে দাড়িয়ে আছে মিসকার সাথে কথা বলছে না,,,,,,
মিসকাঃ আমি জানি না আমি যা করেছি ভুল করেছি কি না তবুও তোমার যদি মোনে হয় আমি ভুল তাহলে আমি ক্ষমা চাচ্ছি,,,,,,,,
ইফতি কোনো কিছু না বলে পাশ থেকে চলে যেতে নিলে মিসকা হাতটা ধরে,,,
ইফতি দাড়িয়ে যায়,,,,,মিসকা ইফতির সামনে গিয়ে দাড়ায় ইফতি মিসকার দিকে না তাকিয়ে অন্যদিক তাকিয়ে আছে
মিসকাঃ এই দেখ দু’কান ধরে আছি তুমি বললে উঠ বস ও করবো,,,,কিন্তু প্লিজ রাগ করো না,,,,( কিছুটা কান্নার স্বরে)
ইফতি মিসকার পাশ কাটিয়ে চলে যায়,,,,
মিসকা ইফতির পিছনে পিছনে হাটছে,,,,
মিসকাঃ বললাম তো ছড়ি
মিসকা হঠাৎ মাথা ঘুরে পরে যায়,,,,,
ইফতি কিছু পড়ার শব্দ পেয়ে পিছনে তাকাতেই দেখে মিসকা পরে আছে,,,,,
ইফতিঃ মিসকা,,,,,বলে দৌড়ে ওর কাছে গেলো
মিসকা কি হলো তোমার এই মিসকা,,,,
মিসকার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে কোলে তুলে নেয়,,,,,
মিসকা এই ফাকে ইফতির গলা জড়িয়ে ধরে,,,,,
ইফতি বেশ অবাক হয়ে মিসকার দিকে তাকায়,,,,,,মিসকা একটু হাসি দিয়ে চোখ মারে,,,,
ইফতিঃ তাহলে এই ব্যাপার,,,,,গলা ছাড়,,,
মিসকাঃ উমহু ছাড়বো না,,,,
ইফতিঃ মিসকা দেখ ভালো হচ্ছে না,,,,
মিসকাঃ ইফতির গলা ছেড়ে খাটে বসে,,,,,ইফতি চলে যেতে নিলে,,,ইফতিকে টান দিয়ে পাশে বসায়,,,,,
মিসকাঃ ছড়ি বললাম তো,,,,,আচ্ছা বুঝলাম না এতো রাগ করে আছ কেন আমার উপর,,,,,,,
ইফতি ঃ তুমি এতো স্বাভাবিক কেমনে থাকো,,,,,তোমার কি রাগ হয় না
মিসকাঃ রাগ কেনো হবো??
ইফতিঃ সেই তোমার বোধ থাকলে তো,,,,
মিসকাঃ নীলা আপু ওভাবে আমার সাথে বিহেব করেছে বলে,,,,,দেখ ইফতি আপু এখনও তোমায় ভালোবাসে,,,,,,তাই হয়তো,,,
ইফতিঃ ভালোবাসা নয় ওর হিংসা,,,তুমি ওকে চিন না আমি চিনি,,,,,,,,
মিসকাঃ আচ্ছা বুঝলাম কিন্তু তুমি বললা না আমি এত স্বাভাবিক কেন?? তার কারন আমি নীলা আপুর উপর কৃতজ্ঞ,,,,
ইফতিঃ স্রিয়াসলি??
মিসকাঃ হুম কেন জানো?? কারন নীলা আপু আসার পর আমি রিয়েলাইজ করলাম তোমার জীবনে আমার জায়গাটা কতখানি,,,,,,বিশ্বাস করো ঠিক এই কারনে আমি নীলা আপুর উপর চেয়েও রাগ করতে পারছি না,,,,,,
ইফতিঃ তোমার ভয় হয় না,,,,??
মিসকাঃ ভয়,,,, হাহা কেন?? ইফতির বুকের বা পাশে হাত রেখে বললো,,,,,,এই জায়গাটা জুরে আমি আছি,,,আর এই পুরো মানুষ টা আমার,,,,,,তাহলে আমি কেন মিছিমিছি ভয় পাবো,,,
ইফতিঃ মিসকার কথা শুনে ওকে জড়িয়ে ধরে,,,,,
মিসকাঃ ইফতির দু’ চোখে চুমু একে দেয়,,,,
ইফতিঃ মিসকার কপালে ভালোবাসার পরশ একে দেয়,,,,,,
মিসকাঃ উফফ শুধু কিসে পেট ভরবে না আমার প্রচন্ড ক্ষুধা পাইছে,,,,,,( বলেই মিসকা প্লেট হাতে নিয়ে মিসকা ইফতির মুখে খাবার তুলে নেয়,,,,,)
ইফতিঃ মিসকার হাত থেকে খাবারটা নিয়ে মিসকার মুখে পুরে দিল,,,
মিসকাঃ একি তুমি খাবে না,,,,
ইফতিঃ হুম
মিসকাঃ ইফতিকে খাবার খাইয়ে দিল,,,,,,,
আপুতো খুব ভালো খাবার বানায়,,,,খুব টেষ্টি হয়েছে
ইফতিঃ হুম মমের কাছ থেকে এসব শিখেছিল
মিসকাঃ তুমি যে এই খাবারগুলো পছন্দ কর আগে তো বল নি??
ইফতিঃ নিজেকেই ভুলে গেছিলাম আর খাবার কি করে মনে থাকবে?
মিসকাঃ হুম বুঝি বুঝি
ইফতিঃ কি বুঝ??
মিসকাঃ কিছুনা
ইফতিঃ আমি আর খাবো না তুমি খেয়ে নাও
মিসকাঃ আমারও পেট ভরে গেছে,,,,,
হিয়াঃ মাম্মাম,,,
মিসকাঃ কোথায় ছিলে এতক্ষণ??
হিয়াঃ রুমা আন্টি আমাকে নিয়ে গেছিলো,,,,,
মিসকাঃ ও আচ্ছা চলো আমার সাথে,,,,,
হিয়াঃ কোথায়??
মিসকাঃ গেলেই দেখতে পাবে,,,হিয়াকে কোলে নিয়ে মিসকা ইফতির দিকে একটু তাকিয়ে বের হয়ে যায়,,,,,,
মিসকা দরজা নক করে
নীলাঃ কে??//
মিসকাঃ আমি আসবো??
নীলাঃ হ্যা এসো,,,,
মিসকা রুমে ঢুকতেই হিয়া মিসকার গলা জোরে জড়িয়ে ধরে
মিসকাঃ নীলার পাশে বসে,,,,,
হিয়া দেখ ভয়ের কিছু নেই তোমার মাম্মাম আছে না দেখ
হিয়াঃ আস্তে আস্তে মাথা উঠিয়ে নীলার দিকে তাকায়,,,,,
নীলাঃ আমার কোলে একটু আসবে??
হিয়াঃ মিসকার দিকে তাকায়,,,
মিসকাঃ চোখ দিয়ে ইশারা করে যেতে বলে,,,,,
হিয়াঃ নীলার কোলে গিয়ে বসে,,,,,
নীলা ঃ হিয়াকে কোলে নিয়ে কেঁদে ফেলে,,,,
হিয়া বাবু আমাকে ক্ষমা করে দিস,,,,আমি জানি আমি পাপী,,,,
হিয়াঃ আন্টি তুমি কাদছো কেন?? তোমার কি কষ্ট হচ্ছে??
নীলাঃ হ্যা ভীষন কষ্ট বাবু,,,,বলেই হিয়াকে জড়িয়ে ধরে
নীলাঃ থ্যাংক ইউ
মিসকাঃ থ্যাংকস তো আমি তোমায় দিবো,,,,,আমাকে একটা পরী গিফ্ট দেওয়ার জন্য,,,
নীলাঃ হিয়াকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে দেয়
হিয়াঃ নীলার চোখের পানি মুছে দেয়,,,,তুমি কেদো না আন্টি,,,বলেই একটা চুমু দেয়
নীলাঃ অবাক হয়ে তাকায়।
হিয়াঃ কি হলো দেখলে তোমার কষ্ট দূর করে দিলাম,,,,,মাম্মাম বলে আমি চুমু দিলে নাকি কষ্ট দূর হয়ে যায়,,,,,,,
নীলাঃ তোমার মাম্মাম একদম ঠিক বলেছে,,,,,,
মিসকাঃ হিয়া তুমি আন্টির সাথে থাকো কেমন ,,,,,,
হিয়াঃ আচ্ছা
মিসকা চলে যেতে নিলে নীলা ডাক দেয়,,,,,
নীলাঃ মিসকা থ্যাংকস,,,,,,
মিসকাঃ হিয়ার মাম্মাম আমি হলেও তুমি ওর গর্ভধারিণী মা,,,,,এতটা খারাপ আমি নই আপু একজন মায়ের কাছ থেকে তার মেয়েকে দূর করে দিবো,,,,তবে সত্যি বলতে খারাপ লাগছে কিন্তু আমার এই একটু খারাপ লাগায় কারো মুখে হাসি ফোটে আমার সেখানেই স্বার্থকতা,,,,,,,
নীলাঃ আজ প্রথমবার আমার মাতৃত্বের অনুভুতি হলো,,,,,আমি বুঝাতে পারবো না,,,,,
মিসকা একটু হেসে চলে গেলো,,,,
নীলাঃ মিসকার দিকে তাকিয়েই থাকলো,,,,,,,
ব সবার লাঞ্চ শেষে মিসকা বিকেলে একটু ছাদে যায়,,,,
ছাদ থেকে ফিরে রুমে এসে স্তব্ধ হয়ে যায়,,,,,,দুচোখ যেন পাথর হয়ে যায়,,,,,,মিসকা এমন কিছু দেখবে আসা করে নি,,,,,,,,ওর ওই মুহুর্তে কি করা উচিত ও ভেবে পাচ্ছে না,,,,,,,
#চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
#ভালোবাসার__টান😍👸😍
#part::::::::::::(60)
#writer::::::::Tanzidaa Jannat
ইফতির হাত শার্টের এক হাতায় ঢুকানো আর ২য় হাতায় নীলার হাত ঢুকানো,,,,,নীলা ইফতির বুকে মাথা রেখে জরিয়ে ধরে আছে,,,,,
মিসকা এই দৃশ্য দেখার পর কিছুক্ষণ স্তব্ধ একমিনিটও দাড়িয়ে না থেকে দৌড়ে ছাদে চলে আসে,,,,,,,,শুধু ভাবছে কি দেখলো সে,,,,,,দুচোখ যেন মানছে না,,,,,,
মিসকাঃ নানা আমি কেনো কাঁদছি,,,,,আমি ইফতিকে বিশ্বাস করি,,,,,,,আর চোখে দেখা জিনিস সবসময় সত্যি হয় না,,, আমার ইফতি মোটেও এরকম না,,,,,,,কিন্তু আমার তো কষ্ট হচ্ছে ভীষন কষ্ট,,,,,,+হাটু ভাজ করে বসে মাথা গুজে কাঁদতে থাকে)
ইফতি রাগে পুরো লাল হয়ে আছে,,,,,একহাত দিয়ে নীলাকে বুকের ওপর থেকে সরিয়ে দেয়
নীলাঃ তাল সামলাতে না পেরে ফ্লরে পরে যায়,,,,,,( করুন দৃষ্টিতে ইফতির দিকে তাকায়)
ইফতিঃ একটা মেয়ে কতটা নির্লজ্জ হতে পারে তোমায় না দেখলে বুঝা যায় না
(শার্টটা পরে নেয়)
নীলাঃ উঠে দাড়ায় ইফতির কলার ধরে বলতে থাকে,,,,,,আমি তোমার জন্য নির্লজ্জ ইফতি তুমি কেনো বোঝনা,,,,,,,,, আমি তোমায় ভালোবাসি
ইফতিঃ মিসকার হাত কলার থেকে ছুটিয়ে নেয়,,,,,,,আমি শুধু মিসকাকে ভালোবাসি,,,,,,শুনতে পেলে
নীলাঃ মিসকা মিসকা মিসকা এই নামটা শুনে আমি বোর হয়ে গেছি,,,,,কি আছে ওর মাঝে যা আমার নেই??
ইফতিঃ এখনও পার্থক্য টা বুঝ নাই,,,,,,একটু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে চলে যায়,,,,,,
নীলাঃ আমি চাই তুমি আমায় আরো বকো আর রাগ দেখাও ছড়ি ইফতি ( মনে মনে বলে)
মিসকা এখনও কেঁদে যাচ্ছে হঠাৎ কারো স্পর্শে মিসকা কেঁপে ওঠে,,,,,, তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে দাড়িয়ে হতভম্ব হয়ে যায়
মিসকাঃ নীলা তুমি এখানে??
নীলাঃ হুম কতক্ষণ ধরে কাঁদছো??
মিসকাঃ মাথা নিচু করে আছে,,,,,,
নীলাঃ একদম চোখ ফুলিয়ে লাল করে ফেলেছ?? ( চোখের পানি মুছে দিয়ে)
মিসকাঃ নীলার হঠাৎ এমন আচরনে মিসকা অবাকই না অনেক অবাক হয়,,,,,,,
নীলাঃঅবাক হওয়ার কিছু নেই,,,,,,,তুমি আমাকে আপু বলে ডেকেছ আর তার মর্যাদা আমি কখনও হারাবো না,,,,,,,,এই ছোট্ট জীবনে আমি অনেক মর্যাদা হারিয়ে ফেলেছি আজ নিজের অস্তিত্ব টুকুও হারিয়ে ফেলছি,,,,
মিসকাঃ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে
নীলা চোখের পানি মুছে এক চিলতি মুখে হাসি ফুটিয়ে মিসকাকে হাত ধরে টেনে পুরো ছাদটা ঘুরছে
নীলাঃ বাহ খুব সুন্দর করে সাজিয়ে তো ছাদটাকে,,,,,,,
মিসকাঃ নীলাকে বড্ড অচেনা লাগছে,,,,,,,,ওর মধ্যে গম্ভীর ভাবটা নেই,,,,,,কেমন জানি ওকে দেখে একদম সাধারণ একটা মেয়ে মনে হচ্ছে,,,,,,,
নীলা মিসকাকে হাত ধরে দোলনাটায় বসে,,,,,নীলা দোলানাটাকে হাত দিয়ে ছুয়ে দেখছে,,,,,, নীলার চোখে যে পানি ছলছল করছে তা মিসকা ভালোই বুঝতে পারছে
মিসকা কিছু বলবে এমন ভাবার সাথে সাথে নীলা বলে ওঠে,,,,
নীলাঃ, তোমার বরকে ওভাবে জড়িয়ে ধরেছি বলে কষ্ট পেয়েছ??
মিসকাঃ নীলার দিক তাকিয়ে কি বলবে বুঝতে পারে না
নীলা আকাশের দিক তাকিয়ে আছে,,,,,,,
নীলাঃ ভাবছো কিভাবে দেখলাম,,, একটু হাসি দিয়ে আমি যখন ইফতিকে জড়িয়ে ধরি ঠিক তখনই তুমি দরজার সামনে দাড়িয়ে ছিলে,,,,,,তোমাকে আমি আয়নায় দেখতে পাই,,,,,
মিসকাঃ মাথা নিচু করে,,, চুপ করে আছে,,,,,,,
নীলাঃ তুমি ইফতিকে ভুল বুঝ না,,,, ওর কোনো দোষ নেই,,,,বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে আবার বলা শুরু করে,,,,আসলে আমি হিয়াকে ঘুম পাড়িয়ে তোমাদের রুমে যাই একা বোর হচ্ছিলাম বলে,,,,,
গিয়ে দেখি রুমে কেউ নেই যখন বের হওয়ার জন্য পা বাড়াই তখন দেখি ইফতি ফ্রেস হয়ে শার্টের ভিতর এক হাতা ঢুকিয়ে বের হয়,,,,,,আমি ওকে ঐ অবস্থায় দেখে জানি না কি হলো ওর কাছে গিয়ে আরেক হাতায় আমার হাত ঢুকিয়ে জড়িয়ে ধরি,,,,,,,আমি জানি এটা অন্যায় কিন্তু মিসকা আমি তো ওকে ভালোবেসেছি,,,,,,
ও আমার সামনে এলে আমার মাথা কাজ করে না,,,,,কথায় আছে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝে না আমার বেলাতেই তাই হলো,,,,
মিসকাঃ আমি জানি আপু ইফতি আমার বিশ্বাস কখনও ভাঙবে না,,,,,কিন্তু আপু তোমাদের ঐ অবস্থায় দেখে আমার মনে হচ্ছিল পা থেকে সব মাটি সরে যাচ্ছে,,,,,,,বিশ্বাস করো বুকের পা পাশটায় খুব বেশি যন্ত্রণা হচ্ছিল,,,,,
নীলাঃ সেটা আমারকে বলতে হবে না,,,,,,,আমি রিয়লাইজ করতে পারি,,,,,,
যাই হোক দুজনে গল্প করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে এলো,,,,,,চলো এখন চলে যাই
মিসকাঃ আরেকটু বসো না,,,, ভালো লাগছে
নীলাঃ মিসকার মুখ দুহাতে আবদ্ধ করে বললো তোমায় খুব মিস করবো,,,,,,
মিসকাঃ এভাবে কেনো বলছো?? তুমি চলে যাবে??
নীলাঃ হুম আমাকে আমার জায়গায়তো ফিরে যেতে হবে,,,,,,,,তবে আরেকটা কাজ বাকি তার পরে,,,,,
মিসকাঃ কি কাজ/?
নীলাঃ ঐটা না হয় সারপ্রাইজ ই থাক,,,,,,,,,,
এবার চলো সন্ধ্যা হয়ে গেছে,,,,,
মিসকা নীলা দুজনে নেমে দুজনের রুমে চলে যেতে নেয়,,,,,,,,
নীলাঃ মিসকা//
মিসকাঃ হুম
নীলাঃ হিয়াকে আজকে আর কালকের রাতটা আমার কাছে রাখতে চাই,,,,,,,, দিবে রাখতে
মিসকাঃ একটু হেসে হুম😊
মিসকাঃ রুমে গিয়ে সবকিছু গুছিয়ে নেয়,,,,,
ইফতি ১ ঘন্টার মধ্যে রুমে আসে,,,,
মিসকা তখন একটা বই পড়ে সময় কাটাচ্ছেিল,,,,হিয়া আর নীলাকে একটু আলাদা থাকতে দেয়,,,,,
ইফতি এসে দেখে ও বই পড়ছে
ইফতিঃ তোমাকে কতবার ফোন দিয়েছি??
মিসকাঃ ও আমার ফোনটা হয়তো সাইলেন্ট করা ছিলো,,,,,
মিসকা ফোনটা হাতে দিয়ে দেখে ১১ টা মিসকল
মিসকাঃ ও ছড়ি আমি খেয়াল করি নি,,,,কিছু বলবে??
ইফতিঃ মিসকা তোমার শরীর খারাপ??
মিসকাঃ নাতো
ইফতিঃ কেমন যেন কথা বলছ,,,,,কথায় তো হাসি নেই কেমন রুক্ষ রুক্ষ
মিসকাঃ সবসময় কি আর সবকিছু একরকম হয়
রুমাঃ বউনি আসবো
মিসকাঃ হ্যা এসো,,,,
রুমাঃ খালাম্মা রাতে খাওয়ার জন্য ডাকছে,,,,
মিসকাঃ তুমি যাও আসছি,,,,
রুমা চলে গেলে মিসকাও রুম থেকে বের হয়ে যায়
ইফতিঃ মিসকা আমাকে এমন এভয়েড করছে কেন?? নীলা কি কিছু বলেছে,,,,,,এই নীলাটা যে কি চায় বুঝি না,,,,,,( একটু রাগি মুডে)
ইফতি গিয়ে দেখে সবাই ডায়নিং টেবিলে,,,,, ইফতি গিয়ে মিসকার পাশের সিটে বসে,,,,,,মিসকার যেন আজ কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই,,,,,,
হিয়াঃ মাম্মাম আমাকে খাইয়ে দাও
মিসকাঃ না মাম্মাম আজ তোমাকে তোমার আন্টি খাইয়ে দিবে
হিয়াঃ আন্টি খাইয়ে দিবে( নীলার দিকে ফিরে)
নীলাঃ হ্যা শোনা,,,,, আমি খাইয়ে দেব,,,,
ইফতিঃ ওদের কান্ড দেখে মনে মনে একটু রাগ হয়েছে আর সেটা মিসকার উপর। কোনো রকম খেয়েই ইফতি উপরে চলে যায়
মিসেস নিলুফা ঃ কিরে চলে যাচ্ছিস যে কি খেলি??
ইফতিঃ পেট ভরে গেছে,,,,,,বলেই চলে যায়।।
মিসকা আর নিলা দুজননে দুজনের দিক তাকিয়ে খাওয়া শুরু করে,,,
খাওয়ার পর্ব শেষ করে সবাই সবার রুমে চলে যায়,,,,,
মিসকা রুমে ঢুকতেই দেখে ইফতি মাথায় হাত দিয়ে সুয়ে আছে,,,,,
মিসকা একবার জিগ্যেস করতে চেয়েছিল কিন্তু করলো না মিসকা পাশে এসে অপর দিক ঘুরে শুয়ে রইল
ইফতিঃ আমি জানি মিসকা তোমার কিছু হয়েছে। তা না হলে তুমি এমন অভিমান করতে না,,,,,,তোমার সব রাগ অভিমান আমি কাল ভেঙে দিবো,,,,,,,শুধু একটু সময়ের অপেক্ষা
দুজনে ঘুমিয়ে যায়,,,,,সকালেও তেমন ওদের মধ্যে কথা হয় না,,,,,ইফতি অফিসে চলে যায়,,,,,
বিকেলের দিকে মিসকা নীলা আর হিয়া মিলে গল্প করছিলো এর মধ্যেই মিসকার ফোনে টুং করে মেসেজ আসলো।মিসকা অপেন করতেই লেখা আজ রাতে ছাদে তোমার জন্য অপেক্ষায় থাকবো,,,,, আমি জানি তুমি আসবে। এটা আমার বিশ্বাস,,,,
মিসকা মেসেজ সিন করে রেখে দিল,,,,,,,
সন্ধ্যা হতে মিসকা দ্বিধায় পরে গেলো যাবে কি না,,,,,,সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত ৮.৩০ বেজে গেছে মিসকা পায়চারি করছে,,,,,,,
মিসকা কিছু না ভেবে ছাদে যায়,,,,,ছাদের দরজা খুলতেই দেখে নীলা ইফতির সাথে কথা বলছে মিসকা চুপ করে রুমে চলে আসে,,,,,,,,
ইফতি সেই সন্ধ্যা থেকে মিসকার জন্য অপেক্ষায় আছে,,,,,,,, ওর বিশ্বাস মিসকা আসবেই,,,,,,আর ও ওর মনের কথা মিসকাকে বলবে,,,,যে কথা মিসকাকে এখনও বলতে পারে নি ও আজ বলবে,,,,,,,
হঠাৎ কারো পিছন থেকে জড়িয়ে ধরায় ইফতি খুশি হয়,,,,,
ইফতিঃ আমি জানতাম তুমি আসবে,,,,,,,আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি আসবেই বলেই পিছনে ঘুরে দেখে নীলা,,,,,,,
নীলা তুমি?? তোমার কি চাই এখানে( রাগান্বিত হয়ে)
নীলাঃ ওয়াও ইফতি এতো সুন্দর করে সাজিয়েছ?? (এমন ভাবে বলল যেন ইফতির কথা ও শুনতেই পায় নি)
ইফতি নীলার হাতের বাহু শক্ত করে ধরে বললো কি চাই তোমার কেন এসেছ এখানে??
নীলাঃ কেন তুমি জানো না??
ইফতিঃ না জানি না আর জানতে চাইও তো
নীলাঃ কিন্তু আমি যে চাই,,,,
ইফতিঃ তোমার মতো মেয়েকে আমি কোনোদিন ভালোবেসেছিলাম ভাবতেই ঘৃনা হয়,,,,,,,
নীলাঃ ভালোবেসেছিলে কেন বলছো এখনও তো বাস,,,,,,আমি তো তোমার এই হৃদয়ে আছি,,,,,,তা না হলে কি এই ডায়েরী, ছবি এখনও আমার স্মৃতি বহন করে রাখতে বলো
ইফতিঃ ডায়রী আর ছবীর এ্যালবাম গুলো নিয়ে মোমের আগুন দিয়ে পুরিয়ে ফেললো,,,,,নেও প্রুভ দিয়ে দিলাম,,,,,,, যে মেয়ে নিজের স্বাধীনতার জন্য লাইফ ইনজয় করার জন্য নিজের ভালোবাসাকে কোরবানী দিতে পারে তার জন্য আমার হৃদয়ে শুধু ঘৃনা আছে,,,,, অনেক আগেই ভালোবাসা মরে গেছে,,,,,,,আমি তোমাকে ভালোবাসি না,,,, ঘৃনা করি তোমাকে ঘৃনা,,,,শুনতে পেলে তুমি,,,,,?? এই হৃদয়ে শুধু মিসকার নাম লেখা আর কারো নয়,,,,,,,
আর কখনও তোমার মুখটা আমাকে দেখাবে না,,,,,,তোমাকে দেখলে আমার নিজেকেই ঘৃনা লাগে,,,,,,আমি মিসকাকে ভালোবাসি ইয়েস আই লাভ হার তুমি শুনতে পেলে?? আর আমাদের মাঝে কখনও আসবে না,,,,, কখনও না,,,,
ইফতি রাগে গজ গজ করে চলে যায়,,,,,,
নীলাঃ চোখের অশ্রু ছেড়ে দিয়ে থ্যাংকস ইফতি,,,,,এই কথাগুলোই আমি শোনার জন্য আজ অপেক্ষায় ছিলাম,,,,,,,,,,
চলবে,,,,,,