ভালোবাসার টান
part:39,40
writer:Tanzidaa Jannat
39
মিতু আর ফাহিমা একে অপরের দিক তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেছে,,,,,আশেপাশের সব মানুষ এখন নীরব হয়ে আছে,,,,,
হিয়া তো খুশি হয়ে রীতিমত নাচছে,,,,মিসেস নিলুফা হিয়াকে নিয়ে মিসকার সামনে যায়,,,,
মিসেস নিলুফা ঃ মিসকা চল আমার সাথে,,,,,,
মিসকাঃ কথা না বলে যেতে থাকে আর চোখ দিয়ে অঝরে পানি পরতে থাকে,,,,,মিতু আর ফাহিমাও গেলো মিসকার সাথে,,,,,
মিসেস নিলুফা নিজের রুমে নিয়ে যায়,,,,,কিছু গহনা আর একটা লাল শাড়ি বের করে দেয়,,,,,
মিসেস নিলুফা ঃ এই নে মা আজ থেকে এগুলি তোর আমানত,,,,, আমার শাশুড়ি এই গহনাগুলো আমায় দিয়ে ছিলেন,,,,আমি এইগুলো ইফতির অর্ধাঙ্গিনীর জন্য রেখেছিলাম,,,,,কিন্তু সে তার মর্যাদা তো রাখে নি,,,,তবে আমার বিশ্বাস তুই কোনো দিনও আমার বিশ্বাসের অমর্যাদা করবি না,,,,,,( মিসকার হাত দুটি ধরে কাঁদছে আর বলছে)
মিসকা মাথা নিচু করে কেঁদেই যাচ্ছে,,,,
মিতুঃ আন্টি আপনি ওদিকটা সামলান আমরা ওকে রেডি করে আনছি,,,,,
মিসেস নিলুফা ঃ আচ্ছা ঠিকাছে,,,তাহলে আমি বরং নিচে যাই,,,,
( মিসেস নিলুফা হিয়াকে নিয়ে নিচে নেমে গেলো,,,,)
মিতু মিসকার পাশে বসলো,,,,ফাহিমা মিসকার সামনে গিয়ে হাটু গিরে বসে,,,,
ফাহিমাঃ মিসকা তুই এভাবে কেনো কাঁদছিস? তোর কি এবিয়েতে আপত্তি আছে??
মিসকা ওর কথা শুনে ওদের দুজনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাদতে লাগলো,,,,
মিতুঃ মিসকাকে ছাড়িতে চোখের পানি মুছে দিল আর বললো তুই রাজি না থাকলে কেউ তোকে জোর করবে না,,,তুই শুধু বল তুই রাজি কি না??
মিসকাঃ হিচকি দিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে,,,
ফহিমা গ্লাসে করে পানি এনে মিসকাকে খাইয়ে দেয়,,,,
মিতুঃ কি হলো বল তুই রাজি তো??
মিসকাঃনা সমস্যা নাই,,,,
ফাহিমা ঃ সমস্যা না থাকলে এভাবে কাঁদছিস কেন??
মিসকা বসা থেকে উঠে জানালার সাইডে গিয়ে দাড়ায়,,,,,
মিসকাঃ কারন আমি এভাবে কারো করুনায় বিয়ে করতে চাই নি কখনও,,,,,আজ বিয়েটা ইফতি মোন থেকে নয় পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে করছে,,,,,এটা আমি কিভাবে মেনে নেই বল,,,,যে মোনটায় ভালোবাসা নয় করুনা দেখতে পাবো তার সাথে সারাজীবন এক ছাদের নিচে কিভাবে থাকবো,,,,,মিসকা বলে যাচ্ছে আর চোখ মুছে নিচ্ছে,,,,
মিতুঃ ও মেডাম তা এই ব্যাপার,,
মিসকাঃ মিতুর দিকে ঘুরে ভ্রু কুচকে তাকালো,,,,,,
মিতুঃ আরে পাগলি এখানে বস,,,
মিসকাকে বসিয়ে মিতু বলা শুরু করে,,
মিতুঃ আচ্ছা দেখ তোর যদি অন্য কারো সাথেও বিয়ে ঠিক হতো তাহলেও তো সেই মানুষ টা তোর অচেনাই থাকতো,,,, আর হচ্ছে করুনা,,,,এখানে করু না আসলো কোথার থিকে,,,, তুই এসব ভাবছিস বলেই এসব চিন্তা মাথায় আসছে,,,,
মিসকাঃ তুই বুঝতে পারছিস না উনি ওনার প্রথম স্ত্রী মানে নীলাকে ভালোবাসে,,,,
মিতুঃ তো কি হইছে,,,,নীলা তার অতীত ছিলো। তুই তার বর্তমান, ভবিষ্যতের ভাগিদার হবি,,,,তোকে তার মোন জয় করে নেওয়ার চেলেঞ্জ নিতে হবে,,,,,
মিসকাঃ বলা যতোটা সহজ করা ততোটা নয়,,,😣।আর মা, বোন আমি মায়ের সামনে দাড়াবো কি ভাবে,,,,
মিতুঃ পরেরটা পরে ভাবা যাবে,,,,,চল এখন তোকে রেডি করতে হবে,,,,,
ওরা দুজন মিলে মিসকাকে রেডি করছে,,,,
এদিকে ইফতি নিজের রুমে এসে পুরো রুম পায়চারী করছে,,,,,আবার বিয়ে নামক জিনিসটা তার সাথে ২য় বার ঘটতে যাচ্ছে,,,, প্রথম বারের ধাক্কাটা এখনও পুরোপুরি সেরে উঠতে পারে নি,,,,,এখন আবার,,,
আর মিসকাকে যে সে মনে মনে পছন্দ করে না সেটাও তো না,,,,,মিসকার পাশে যখন থাকে তখন তার এক অদ্ভুত এক ফিলিংস কাজ করে,,,,
এসব ভাবতে ভাবতে দরজায় কারো টোকা পরে,,,
ইফতি দরজা খুলে দেখে মি. মুফতিউর রহমান,,,দাড়িয়ে আছে
ইফতিঃ বাবা তুমি??
মুফতিউর ভিতরে ঢুকে গম্ভীর ভাবে বলে তুমি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছ ভেবে চিন্তে নিয়েছ তো??
ইফতিঃ হঠাৎ এ কথা কেনো বাবা,,,
মুফতিউর রহমান ঃ এ কথার অনেক ব্যাখাই দেওয়া যায়,,,,,তুমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছো এ সিদ্ধান্তে ৩ টা জীবন এক সুত্রে বাঁধা,,,,,, তুমি কখনও মিসকাকে অস্বীকার করতে পারবে না,,,ওর যোগ্য মর্যাদা তোমায় দিতে হবে,,, আর তাতেই হিয়া ভালো থাকবে,,, আর তুমিও।এখন কথা হচ্ছে তুমি তার প্রাপ্য সম্মান টুকু দিতে পারবে তো??
ইফতিঃ এভাবে কেনো বলছো??( মাথা নিচু করে)
মুফতিউর রহমান ইফতির ঘাড়ে হাত রেখে বললো,,,,তুমি মানো আর না মানো তুমি নিলাকে তোমার জীবন থেকে একেবারেই যে মুছে ফেলতে পারোনি তা আমি বুঝি,,,,
ইফতি বড় বড় চোখ করে অবাক হয়ে মুফতিউর রহমান এর দিকে তাকালো,,,,
মি. মুফতিউর রহমান ঃ দেখো নিলা তোমার অতীত,,,,,আর তোমার উচিত বর্তমান দিয়ে অতীতকে মুছে ফেলা,,, যদিও পুরোপুরি সম্ভব না তবুও,,,,আশা করি তুমি আমার কথা বুঝতে পেরেছ আর তার যথাযথ মুল্যায়নও তুমি করবে বলেই চলে গেলো,,,ইফতি দাড়িয়ে ই রইলো,,,,
এর মধ্যেই হিয়া দৌড়ে এসে ইফতিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো,,,,
ইফতিঃ হিয়া সোনা,,,,( একটু হাসার চেষ্টা করে)ওকে কোলে নিয়ে বিছানায় বসালো,,,,
হিয়াঃ বাবাই তুমি জানো আমি আজ কত্তখুশি,,,,মিসকা আন্টি আমার মাম্মাম হবে😱।আমিতো ভাবতেই খুশি লাগছে,,,,,আন্টি আর আমাদের ছেড়ে যাবে না,,,,
ইফতিঃ হিয়াকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো,,,,,চোখ থেকে দুফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো,,,কারো আসার শব্দ পেয়ে চোখটা মুছে ফেললো,,,,,
মিসেস নিলুফা ঃ ইফতি নিচে আয় কাজীসাহেব এসে পরেছে,,,,
ইফতি হিয়াকে কোলে নিয়ে নিচে নেমে দেখে লাল টকটকে একটা বেনারসি পড়া মাথায় ঘোমটা দেওয়া কেউ একজন বসে আছে,,,,, ইফতির বুঝতে কষ্ট হলো না এটা মিসকা,,,,,
হিয়া কোল থেকে নেমে ইফতির হাত ধরে মিসকার পাশে বসলো আর হিয়া ওদের দুজনের মাঝখানে বসলো,,,,,,,মিসকার পাশে ওর দুই বান্ধবী দাড়িয়ে আছে,,,
কাজী সাহেব তার কাজ শুরু করে দিয়েছে,,,,,মিসকাকে যখন কবুল বলতে বললো মিসকার চোখের বাধ মানছে না,,,, ঠোঁট কাপছে,,,,,,বাবা সেই ছোট থাকতেই মারা গেছে আর মা, বোন আত্মীয় স্বজন আজ এই বিশেষ মুহুর্তে কেউ ওর পাশে নেই,,, এটা যে কতো কস্টের শুধু সেই বোঝে যে এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করে,,,,
কাজি সাহেব আবারও বললো বল মা কবুল,,,,
মিসকা যেন উচ্চারণ করতে পারছে না,,,, মিসেস নিলুফা বুঝতে পেরে ওর পাশে গিয়ে বসলো,,,,
মিসেস নিলুফা ঃ আমি জানি তোর কস্ট হচ্ছে। তুই চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে,,,,,,আর দেখ হিয়াটা তোর হাত কিভাবে ধরে রেখেছে শুধু তুই ওর মাম্মাম হবে বলে,,,,,,
মিসকা হিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে হিয়া এক হাত দিয়ে ওর হাত আরেক হাত দিয়ে ইফতির হাত ধরে রেখেছে,,,,খুশিতে হিয়ার চোখ ঝলমল করছে,,,,
কাজী সাহেব এর কথায় মিসকার ঘোর ভাংলো,,,
কাজী সাহেবঃ বলো মা কবুল,,,,
মিসকা কবুল বললে সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো,,,,
ইফতিকে কবুল বলতে বললে ইফতি ৩ বার একসাথে কবুল বলে ফেলে,,,,,,সবাই হেসে দেয়,,,,,
সবাই তো ভীষন খুশি,,,,,,মিসেস নিলুফা মুফতিউর রহমানের সামনে গিয়ে একটা হাসি দিলো,,,,
মুফতিউর রহমান ঃ কি বলেছিলাম না এ মেয়ে আমাদের সংসারটাকে আবার ভরে দিবে,,,আজ আমাদের সংসারটা পিরো পরিপূর্ণ হলো দেখলে,,,,তুমি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিলে,,,,
মিসেস নিলুফা ভয় কি আমি এমনি এমনি পাচ্ছিলাম,,,, ভাগ্যিস আজ কোনো রকম সামাল দিতে পেরেছি। তা না হলে যা হতে চলেছিলো,,,,, আমার তো এখনও ভয়টা পুরোপুরি কাটে নি,,,,ইফতি কি স্বাভাবিক ভাবে ওকে মেনে নিবে,,,আর মিসকা ওকি পারবে আমার ছেলের অগোছালো জীবন টা আবার গুছিয়ে দিতে??🙁
মি. মুফতিউর রহমান ঃ আরে ধুর তুমি এতো চিন্তা করো না। কি গোছাবে গোছাবে করছো গুছিয়ে ফেলেছে,,,
হিয়াঃ দাদুভাই,দাদিয়া চলো আমরা ছবি তুলো,,,,
হিয়া টেনে নিয়ে গেলো,,,,,
মিসকা আর ইফতি সোফায় বসে আছে হিয়া মাঝখানে আর নিলুফা আর মি. মুফতিউর রহমান সোফার পিছনে দাড়িয়ে আছে,,,,,,সবাই ছবি তুলছে,,,,,
মিতুঃ আরে দুলাভাই উঠে দাড়ান তারপর মিসকাকেও দাড় করিয়ে বললো দুজন দুজনের হাত ধরুন,,,, মিসকা হা করে ইফতির দিকে তাকালো,,,,আর ইফতি একটু মুচকি হেসে মিসকার হাত ধরে,,,,, তারপর ছবি তোলে
মিসেস নিলুফা ঃ তোদের হলে আমি মিসকাকে আমার রুমে নিয়ে যাই,,,,
#চলবে,,,,,,,,,,,,,,
#ভালোবাসার__টান,,,,😍👸😍
#part::::::;;;(40)
#writer:::::;:::::::Tanzidaa Jannat
মিসকাঃ মিসেস নিলুফা চলে আসায় একটু লজ্জা পায়,,,,,
মিসেস নিলুফাঃ রুমা তুই হিয়াকে কিছু খাইয়ে দে তো অনেক রাত হয়েছে,,,,,,
রুমা হিয়া নিয়ে গেলো,,,,,
গেস্টরাও একে একে চলে যাচ্ছে,,,,,
ফাহিমাঃ আন্টি আমরা এখন তাহলে আছি,,,,,,রাত বেশি হলে বাসায় ঢুকতে পারবো না। দারোয়ান আঙ্কেল গেট লক করে দিবে,,,,
মিসেস নিলুফা ঃ আরে সে কি কথা তোমরা চলে কেনো যাবে??😰
মিতুঃ আরেক দিন আসবো আন্টি আমরা এখন যাই,,,
মি. মুফতিউর রহমানঃ কোনো যাওয়া হবে না,,,,,আজ রাত থাকবে কাল রাত থাকবে তারপর যাবে,,,,,,এর উপরে কোনো কথায়ই নেই,,,
মিসকা চুপচাপ দাড়িয়ে আছে,,, যতই হোক ও এখন নতুন বউ,,,,,
ইফতিঃ তোমরা আমার সাথে চলো তো কথা আছে,,,,,
ফাহিমা ঃ কথা বলার জন্য বন্ধবীকে দিয়ে দিলামতো,,,😏
ইফতিঃ আরে শালী আধাঘড় ওয়ালী,,, এটা জানো না😂😂😂
আরে এসোতো,,,
ফাহিমা আর মিতু ইফতির সাথে উপরে চলে গেলো,,,,
মিসেস নিলুফাঃ কি হলো চল,,, ( মিসকাকে বললো)
মিসকাঃ মিসেস নিলুফার পিছন পিছন হাটছে,,,,
মিসেস নিলুফা ঃ তার রুমে গিয়ে দরজাটা লক করে দিলো,,,,,,মিসকার কেমন জানি নার্ভাস লাগছে,,,,
মিসকাঃ কিছু হয়েছে আন্টি??
মিসেস নিলুফাঃ আলমিরা খুলে কিছু গহনার বাক্স বের করলো,,,,
সাথে কিছু শাড়ি,,,,,
এর মধ্যেই দরজায় নক পরলো,,,মিসেস নিলুফা দরজা খুলে দিলে মুফতিউর রহমান ভিতরে প্রবেশ করে,,,,,,
মিসকা কি ঘটছে কিছুই বুঝতে পারছে না,,,,,
মি. মুফতিউর রহমান ঃ গহনার বাক্সগুলো মিসকার হাতে দিয়ে বললো এগুলো আমি খুব শখ করে ইফতির বউয়ের জন্য এনেছি,,,যদিও আমার ছেলের অবস্থা এমন সাভাবিক ছিলো না,,, তবুও মনে আশা রেখেছিলাম,,,, আল্লাহ আমার ইফতির জীবনে আবার কাউকে পাঠাবে যে আমার ইফতিকে আবার আগের মতো বদলে দিবে,,,,(কন্ঠ ভারী হয়ে আসছে মনে হচ্ছে এক্ষুনি কেদে দিবে)
মিসকা ঃ মাথা নিচু করে আছে মনের অজান্তেই দুচোখ ছলছল করছে,,,,
মুফতিউর রহমান ঃ আরে পাগলি মেয়ে কাঁদিস কেন,,,,শোন আমাদের ইফতি এমন ছিলো না ওর জীবনে এমন কিছু ঘটেছে যাতে ও এমন হয়েগেছে।আমরা তো ভেবেছিলাম ওবুঝি বাচবেই না,,,,, তুই পুরোটা না জানলেও তো কিছুটা জানিস,,,,,তুই পারবিনা মা আমাদের আগের ইফতিকে ফিরিয়ে দিতে,,,,তুই পারবিনা ওর জীবন সঙ্গি হয়ে থাকতে,,,,??
মিসকাঃ কাঁপা হাতে মুফতিউর রহমান এর হাতের উপর হাত রেখে বললো আমি চেষ্টা করবো,,,,,
মিসেস নিলুফাঃ চেষ্টা নয় তোকে পারতে হবে,,,,আর নিলা নামটা ওর জীবন থেকে মুছে দিতে হবে,,,,
মিসকাঃ এবার অবাক হয়ে তাকালো,,,,
মিসেস নিলুফাঃ হ্যা মা,,,,ইফতি জীবনে ঐ একজন কেই ভালোবেসেছিল নিজের থেকেও বেশি আমি তো মা আমি জানি ও এখনও ভুলতে পারে নি নীলাকে,,,
মিসকাঃ বুকের ভেতরটা মোচর দিয়ে উঠলো,,,,,নীলা নামটাকে কেনো জানি অসহ্য লাগছে,,,,
মিসকাঃ আমি পারবো আন্টি আমাকে পারতেই হবে এটলিস্ট হিয়ার জন্য পারতে হবে,,,,,
মি. মুফতিউর রহমান ঃমিসকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তুই পারবি আমি জানি,,,,,,বলে চলে গেলো,,,,
মিসেস নিলুফাঃ চল তোকে তোর ঘরে দিয়ে আসি,,,,
মিসকা মিসেস নিলুফার পিছন পিছন হাটছে হঠাৎ থেমে গেলো,,,
মিসেস নিলুফাঃ একি হঠাৎ থেমে গেলি কেনো??
মিসকাঃ এটা তো স্যারের ঘড়।
মিসেস নিলুফাঃ একটু হেসে কি স্যার স্যার করছিস,,, ও এখন তোর বর আর এটা তোর ঘর,,,
মিসকাঃ একটু লজ্জা বোধকরলো,,,কিন্তু কেনো জানি ভয়ও পাচ্ছে,,,,, সারা শরীর কাপছে ,,,,,,
মিসেস নিলুফা ওকে হাত ধরে রুমের ভেতর বসিয়ে দেয়,,,শোন আজ থেকে তুই এবাড়ির বউ তাই তোকে অনেক কিছু অভ্যাস করে নিতে হবে,,,,,এখন থেকে তোকে শাড়ি পরতে হবে,,,
মিসকা কিছু বললো না,,,,
হিয়াঃ ইয়ে মাম্মাম আমরা একসাথে থাকবো,,, 😍
মিসেস নিলুফাঃ না দিদিভাই তুমি আজ আমার কাছে থাকবে,,,
হিয়া মুখ গোমড়া করে দাড়িয়ে গেলো,,,
মিসকা উঠে গিয়ে হিয়াকে কোলে নিয়ে,,,, কে বলেছে হিয়া সোনা তো আমার কাছে থাকবে,,,,
হিয়াঃ সত্যি ☺( গলা জড়িয়ে ধরে,,,)
মিসেস নিলুফাঃ কিন্তু,,,
মিসকাঃ আন্টি আসলে আমি এবিয়েটা হিয়ার জন্য ই করেছি।আর এবাড়িতেও ওর জন্য ই এসেছি,,,,আমি চাইনা ও৷ কোনো কিছুতে কস্ট পাক,,,,,
মিসেস নিলুফাঃ আচ্ছা ঠিকাছে তাহলে তোরা ঘুমিয়ে পর আমি যাই,,,,,
মিসেস নিলুফাঃ চলে গেল,,, যাওয়ার সময় দরজাটা চাপিয়ে গেলো,,,,
হিয়াঃ মাম্মাম,,,,
মিসকাঃ হুম,,
হিয়াঃ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে,,,,(ছোট্ট দুটি হাত দিয়ে মুখ আবদ্ধ করে)
মিসকাঃ ও তাই,,,,আচ্ছা হিয়া তোমাকে মাম্মাম বলতে কে শিখিয়ে দিলো,,,,
হিয়াঃ দাদিয়া😊
মিসকাঃ ও,,,, নাও এখন ঘুমিয়ে পরো,,,
হিয়া গিয়ে মাঝখানে সুয়ে পরলো,,,
হিয়াকে ঘুম পারাচ্ছে,,,,দেখলো হিয়া ঘুমিয়ে গেছে,,,মিসকা উঠে সারারুম ঘুরে ঘুরে দেখছে,,,,,সব কিছু গোছানো,,,,,বেশ পরিপাটি,,,,,বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশের চাঁদ টাকে দেখছে,,,,,,আজ আকাশটা একদম পরিস্কার,,,,, চাদটাকে দেখে মনে হচ্ছে হাসছে,,,,কিন্তু মিসকা অন্য এক ভাবনায় ডুবে আছে,,,আজ তার জীবনটা কেমন পাল্টে গেলো,,,,সবকিছু অন্যরকম,,,,যে গোমড়ামুখো বজ্জাত টাকে ও একদম সহ্য করতে পারতো না সে আজ তার জীবন সঙ্গি,,,,,যে রুমটাতে ঢুকতে ওর পার্মিশন চেয়ে আসতে হতো এই রুমটা আজ তারও সমান অধিকার,,,,,, কিন্তু ইফতি,,,, ওর কি কোনো অধিকার আছে ইফতির উপর,,,ইফতি কি কোনোদিন ওকে মেনে নিতে পারবে মোন থেকে?? ভালবাসতে পারবে ওকে?? হঠাৎ কারো স্পর্শে মিসকা কেঁপে উঠলো,,, পাশে ফিরে দেখে ইফতি,,,
ইফতিঃ কি ভাবছিলে??
মিসকা আবার আকাশের দিক তাকিয়ে বললো কিছু না,,,,
ইফতিঃ আমার সাথে যাবে??
মিসকাঃ হুম চলুন,,,,
ইফতিঃ একবারও যে জিগ্যেস করলে না কোথায় নিয়ে যাবো,,,
মিসকাঃ আমার বিশ্বাস আছে আপনার উপর,,,,আর আমি এই সম্পর্ক টা বিশ্বাসের স্তম্ভ দিয়ে গড়তে চাই,,,যাতে সহজে ভেঙে না যায়,,,,,,
ইফতিঃ ওর দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে বললো যাবে না,,,
মিসকাঃ নিয়ে গেলেই যাবো,,,,,
ইফতি হাটছে মিসকা তার পিছু পিছু হাটছে,,,,
ইফতি ছাদের দরজার তালার দিকে অনেক্ষণ তাকিয়ে থেকে তালাটা খুলে ফেললো,,,
দুজনে ছাদে গেলো,,,,মিসকা তো পুরা অবাক,,,, ছাদটা দেখতে এতো সুন্দর ও কল্পনাও করতে পারে নি,,,,চারোপাশে খোলা মেলা,,,,,এমন কোনো ফুল নেই যা ছাদে নেই,,,তবে মনে হচ্ছে গাছগুলো অনেকদিন ধরে যত্ন না নেওয়ায় কেমন জানি হয়ে গেছে,,,একাপাশে একটু সাওনির মতো করে দেওয়া সেখানে বড় একটা দোলনা,,,,,,,
মিসকাঃ আপনাদের ছাদটা এতো সুন্দর আগে জানতাম নাতো,,,,,,এখানে কেউ আসে না মনে হচ্ছে,,,
ইফতিঃ যারা আসতো তারা হারিয়ে গেছে,,,
মিসকাঃ অবাক হয়ে ইফতির দিকে তাকালো,,,
ইফতি দোলনাটা পরিস্কার করে বসে হাতের ইশারায় মিসকাকে বসতে বললো,,,,
মিসকা গিয়ে পাশে বসলো,,,,, দক্ষিনা বাতাসে হৃদয় ছুয়ে যাচ্ছে,,,,,,,, চুপচাপ দুজনে পাশাপাশি বসে আছে,,,, অনেক্ষণ পর ইফতি নিরাবতা ভেঙলো
ইফতিঃ এই জায়গাটা একজনের খুব প্রিয় ছিলো কতোরাত একসাথে কাটিয়েছি তার হিসেবও নাই,,,,,এখানের এমন কোনো কোনা নেই তার স্মৃতি বিচরন না করে,,,,
মিসকার বুঝতে বাকি রইলো না যে সে কে,,,,,হ্যা সে হচ্ছে নিলা,,,,,ওর মোনটা খারাপ হয়ে গেলো,,কি দরকার ছিলো বলার অন্তত আজ রাতটা নাহয় তাদের দুজনের ই থাকতো,,,খুব হিংসা হচ্ছে আজ নিলার উপর,,,
ইফতিঃ তুমি জানো কতোদিন আমরা একসাথে বৃষ্টিতে ভিজেছি,,,,,এই ফুলগাছ দেখছো এগুলো আমি ভালোবেসে এনেছিলাম,,,,,খুব যত্ন করতাম,,এগুলা আমার ভালোবাসার প্রতিক ছিলো,,,যে ভালোবাসা শুধু আমার দিক থেকে একতরফা ছিলো,,,,,(ইফতি চোখ মুছে আবার বললো) সেটা যেদিন বুঝতে পারলাম এই জায়গা টা আমার কাছে অভিশপ্ত হয়ে গেলো,,,যেখানে ভালোবাসাই নাই সেই জায়গাটাকে বন্ধ করেদিলাম চিরদিনের মতো,,,আমার জীবনটার মতো দেখ এই গাছগুলোর অবস্থা,,,,,,,,, 😂😂( জোরে জোরে হেসে দিলো)
মিসকাঃ ইফতির হাসি দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,,,, আজ এই হাসিটা দেখে মিসকার কেমন যেনো লাগছে,,,,,ভয় হচ্ছে কিন্তু কেনো কে জানে,,,,,,
ইফতিঃ হাসি থামিয়ে তুমি তো চুপচাপ শুনেই যাচ্ছ।কিছু বলবে না,,,,,,
মিসকাঃ কি বলবো??
ইফতিঃ তা অবশ্য ঠিক কি বলবে,,,,,,শোন তোমাকে আমার কিছু বলার কথা আছে,,,,
মিসকাঃ বলতে হবে না আমি জানি,,,,,বলেই দাড়িয়ে ছাদের রেলিং ধরে দাড়ায়,,,,
ইফতিঃ কি??
মিসকাঃ আপনি আমাকে কখনও মোন থেকে ভালোবাসতে পারবেন না,,,,,,আপনি নীলা আপুকেও হয়তো কোনো দিন ভুলতে পারেন নি আর পারবেন ও না,,
ইফতির প্রচন্ড রাগ হলো,,,,মনে হচ্ছে কষে একটা থাপ্পড় মারতে,,,,,সবসময় নিজ থেকে ভেবে নেয়,,,😠
ইফতি ঃ মিসকাকে ওর দিকে ফিরিয়ে,,,,,,,,, ঠিক একদম ঠিক ভেবেছো তুমি,,,,,,,,,,, তারপর ছেড়ে দেয়,,,,
অন্যদিকে ফিরে যায়,,,,
মিসকাঃ পিছন থেকে ইফতিকে জড়িয়ে ধরলো,,,,দুহাত দিয়ে আঁকড়ে ধরলো,,,,,,আপনাকে আমায় ভালোবাসতে হবে না,,,,, আমি কখনও সেই অধিকার চাইবোও না,,,,,তবে আপনার সাথে একটু চলতে দিয়েন,,,,আপনাকে আমার নিজের মতো করে গড়তে দিয়েন,,,,,,আমাকে হিয়ার মা হওয়ার অধিকারটা দিয়েন,,,,এই পরিবারটাকে নিজের করে ভাবার অধিকার টুকু দিয়েন,,,,,,আমি কথা দিচ্ছি এর বেশি কোনো দিন কিছু চাইবো না😭
( মিসকা কথাগুলো বলছে আর কাঁদছে ইফতির পাঞ্জাবি ভিজে গেলো,,,
ইফতি ঃ মিসকাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে কপালে একটা চুমু দিলো,,,,,,এগুলো আমি দেওয়ার কে বলো এসব কিছুই তোমার,,,,,,,কেউ কোনো দিন এগুলো নিবে না তোমার থেকে,,,,( চোখ মুছে দিলো,,,,)
চলবে,,,,,,,