ভাবী_যখন_বউ পর্ব_০৩

ভাবী_যখন_বউ
পর্ব_০৩
Syed_Redwan

বিয়ের দুইদিন আগের রাতে,
সময় রাত ১১টা ৩০। ডিনার শেষে আমি আমার রুমে বসে আমার প্রিয় বই পাওলো কোয়েলহো’র লেখা ‘দি অ্যাল কেমিস্ট’ পড়ছিলাম। রুমের দরজা খোলাই রেখেছিলাম। বই পড়ার মাঝেই খেলাম করলাম যে রাইফা ভাবী আমার রুমে প্রবেশ করল। এত রাতে সাধারণত ভাবী কখনো আমার রুমে আসে না। কেন এসেছে সে? আবার কোন অঘটন ঘটাতে না তো? রুমে ঢুকেই সে দরজা আটকে দিল। না! ব্যাপারটা তো মোটেই সুবিধার নয়। তবে কি সে আমাকে কোনভাবে ফাঁসাতে চাচ্ছে?

খেয়াল করলাম যে সে আমার চেয়ারের পিছনে এসে দাঁড়াল। আমি তবুও বইয়ের দিকে নিজের দৃষ্টি স্থির রেখেছি যদিও বইয়ের থেকে আমার মন সে রুমে আসার পরপরই উঠে গিয়েছে।

সে হুট করেই আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। আমি সঙ্গে সঙ্গেই ওকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। ওর দিকে ঘুরলাম।
“এটা কোন ধরনের অসভ্যতা? দু’দিন বাদে তোমার বিয়ের অনুষ্ঠান আর তুমি এখন আমার সাথে অসভ্যতামী করছ?” প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললাম।

আমার কথায় কোনপ্রকারের ভ্রুক্ষেপ না করে ভাবী হুট করেই আমার দু’হাত নিজের দু’হাতের মুঠোয় নিয়ে দেয়ালের সাথে আমাকে শক্ত করে চেপে ধরল। আমার কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকাল। তার মুখ থেকে নির্গত গরম নিশ্বাস আমার মুখের উপর পড়ছে। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি এতটাই হতবাক হয়ে গিয়েছি যে আমি আর নিজের মধ্যে ছিলাম না। আমার শরীরের নিচের অংশটুকু যেন অবশ হয়ে গিয়েছিল, নাড়াতে পারছিলাম না। এমনকি আমার মস্তিষ্কও স্বাভাবিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন শুধু মাথায় আসছিল যে এটা কী হলো? কেন হলো? কেমনে হলো? সত্যিই কি এমনটা ঘটছে নাকি আমি দুঃস্বপ্ন দেখছি?

রাইফা ভাবী আমার হাত দু’টো নিজের হাত দিয়ে দেয়ালের সাথে আরো শক্তভাবে চেপে ধরে আস্তে করে নিজের সিক্ত গোলাপি ঠোঁটজোড়া আমার ঠোঁটে গুঁজে দিল। তৃপ্তি সহকারে আমার ঠোঁটজোড়া নিজের মতো করে চুষতে লাগলো। আমার ঘোর তখনও কাটেনি। কোনকিছুই যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না আমার। মনে হচ্ছিল যেন সবকিছুই নিছক একটা স্বপ্ন, মিথ্যে!

কিন্তু প্রায় ৩০ সেকেন্ড পর আমি নিজের সম্বিত ফিরে পাই। বুঝতে পারি যে ভাবী আমাকে বেশ কিছুটা সময় ধরে লিপকিস করেই চলেছে। এটা বোঝার সাথে সাথেই আমি নিজেকে তার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিতে উদ্যত হই। ভাবী আমাকে খুব শক্ত করেই দেয়ালের সাথে চেপে ধরে রেখেছিল, তাই শরীরের বেশ অনেকটা জোরই খাটাতে হয় আমার নিজেকে তার কবল থেকে মুক্ত করার জন্য।

নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার সাথে সাথে আমি কোনকিছুর তোয়াক্কা না করেই সজোরে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেই রাইফা ভাবীর গালে। বললাম,”সবকিছুর একটা সীমা আছে। কিন্তু তুমি এবার সেই সীমাটা ভয়ংকরভাবে ছাড়িয়ে গিয়েছ। আমি ভেবেছিলাম যে ভাইয়ার বিয়ের অনুষ্ঠানের পর বাসা ছাড়ব। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যে এখন এই মুহূর্তেই আমাকে বাসা ছাড়তে হবে আমাদের সংসারে আগুন ধরা প্রতিরোধ করার জন্য। আর শোন, আমি চলে যাচ্ছি, যাওয়ার পর অন্তত ভাইয়ার সাথে ভালোভাবে সংসার করবে। আসছি।” বলেই আমি টেবিলের উপর রাখা আমার মানিব্যাগটা নিয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলাম। বলে রাখা ভালো যে আমার মানিব্যাগে সবসময় এটিএম কার্ড থাকে।

আমি যেই রুম থেকে বের হতে নিব, ঠিক তখনই রাইফা ভাবী আমার বাম হাত পিছন থেকে টেনে ধরে।
“আমি চাইলেই তোমাকে জোরে জোরে চিল্লিয়ে বাড়ির সকলের কাছে মিথ্যা অপবাদে ফাঁসিয়ে দিতে পারতাম এখন, বলতে পারতাম যে তুমি আমার সাথে অসভ্যতামী করতে চেয়েছ। তাছাড়া রুমের দরজা বন্ধ, আমি বলতেই পারি যে তুমি আমাকে এই মধ্যরাতে ডেকে এনেছ তোমার অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য। আমার নিজের এই পাতলা শাড়ি ছিঁড়তে এবং শরীরের কয়েকটা জায়গা আঘাতপ্রাপ্ত করতে মোটেই বেগ পেতে হতো না, সাথে তোমার শরীরেও আমি আমার সাথে ধস্তাধস্তির মিছামিছি ছাপ রেখে দিয়েছি। আয়নায় দেখ।” বলেই একটা অসহ্যকর হাসি হাসল রাইফা ভাবী।

আমি ভাবীর হাত থেকে নিজের হাত না ছাড়িয়েই পাশে থাকা বড় আয়নার দিকে তাকালাম। হায় হায়! এ কি!? আমার মুখ এবং ঠোঁটে এত লিপস্টিক এলো কোত্থেকে? পরমুহূর্তেই মনে পড়লো যে এতক্ষণ ধরে আমার চৈতন্যহীন অবস্থার সুযোগ নিয়ে বেশ অনেকটা সময় নিয়েই আমাকে লিপকিস করেছে রাইফা ভাবী, সেকারণেই তার কড়া লাল লিপস্টিকের অর্ধেকেরও বেশি আমার ঠোঁট এবং মুখে এসে লেগেছে। কথাটা মনে পড়তেই আমার সারা শরীর রাগে রি রি করে উঠল। আমি প্রচন্ড রাগী দৃষ্টিতে রাইফা ভাবীর দিকে তাকালাম কিন্তু সে মোটেও ভয় পেল না। বুঝলাম, কুকুরের লেজ সোজা হবে না কখনো। আমি তাড়াহুড়ো করে একটা টিস্যু খুঁজতে নিব ঠিক তখনই রাইফা ভাবী আরেক হাত দিয়ে আমার দিকে একটা টিস্যু বাড়িয়ে দিল।

“আমি তোমার বিরুদ্ধে যথেষ্ট সুযোগ থাকার পরও যেহেতু কোন মিথ্যে অভিযোগ দেইনি, সুতরাং এটা নিশ্চয়ই এটা ধরে নিতে পারো যে ভবিষ্যতেও দিব না। কারণ কী জানো? আমি তোমাকে ভালোবাসি তাই। এজন্য তোমার কোন ক্ষতিই আমি হতে দিতে পারি না, সেখানে আমি নিজে কীভাবে তোমার এতবড় ক্ষতি করি বলো তো? খুব অল্প সময়ের ব্যবধানেই আমি তোমাকে নিজের করে পেতে চলেছি। It’s our destiny to be together. নাও এবার, টিস্যু দিয়ে নিজের মুখটা পরিস্কার করে নাও। আমাদের রোমান্সের কথা বাইরে প্রকাশ না করাটা ভালো।” বলেই আবার সেই মাথা নষ্ট করা হাসি দিল সে।

আমি টিস্যুটা নিয়েই নিজের মুখ যতটা সম্ভব পরিস্কার করে নিলাম। এবার ঠিক আছে, যদিও হালকা হালকা লাল আভা রয়েই গিয়েছিল আমার ঠোঁটে, তবে সেটা বড় কোন ব্যাপার না। এমন সময়ই আমি লক্ষ্য করলাম যে ভাবী আমার বাম হাতটা এখনো ধরেই রেখেছেন। আমি তাৎক্ষণিক নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলাম তার কাছ থেকে। কিন্তু এতে ভাবীর তেমন কোন ভাবান্তর হলো না। সে নিজের মতো আমার দিকে তাকিয়ে আনমনে হেসেই চলেছে। বুঝলাম যে এই মেয়েটার সাথে কথা বাড়িয়ে কোন লাভ নেই। আমি রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে গেলাম।

আজ রাত ২টার দিকে কক্সবাজারগামী একটা বাস ছাড়বে আমাদের বাসার কাছের একটা স্টেশন থেকে। আমাদের কয়েকজন বন্ধু যাচ্ছে সেখানে। আমাকেও বলেছিল যেতে। কিন্তু ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে আমি যােতে না করে দিয়েছিলাম। তবে এখন মনে হচ্ছে নিজের বাসা থেকে, বস্তুত রাইফা ভাবী থেকে দূরে থাকতে আমার সেখানে যেতেই হবে। আমার প্রতি যতটুকু ভালোবাসা দেখায় সেটার কিঞ্চিৎও যদি ভাইয়াকে ভালোবাসে সে, তাহলে ভাইয়ার খুব সুখের সংসার হবে এবং আমি সেটার ব্যবস্থাই করব তাদের থেকে দূরে চলে গিয়ে।

আমি আমার বন্ধুদের কাছে ফোন দিয়ে বললাম যে আমি যাব এবং আমার জন্য একটা টিকেটের ব্যবস্থাও করতে বললাম। তারা টিকেটের ব্যবস্থা করল আমি আমি সেখানে দু’দিন থাকার উদ্দেশ্যে কয়েকটা জামাকাপড় কিনলাম। এটিএম কার্ড থাকায় সুবিধা হলো। আমি বাড়ি যেতে চাই না এখন, একেবারে বিয়ের দিন হাজিরা দিয়ে বাসা বদলে ফেলব- এমনটাই নিয়ত আমার।

রাত দুটোর দিকের বাসে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। পৌছলাম পরেরদিন সকালে। বাসা থেকে সবাই কল দিচ্ছে ভোরবেলা থেকেই। আমি সকলকে মিথ্যা বললাম যে হঠাৎ করেই এই ঘুরাঘুরির প্ল্যান করে ফেলেছি আমরা তাই মধ্যরাতেই আমাকে আসতে হলো। জানি না তারা আমার কথা কতটুকু বিশ্বাস করেছে, বিশ্বাস করার মতো কথা না এটা যে মাঝরাতে হুট করেই কেউ কাউকে না জানিয়ে কক্সবাজার ভ্রমণের প্ল্যান করবে। তবুও সকলকে আমি আশ্বস্ত করলাম যে আমি বিয়ের দিন এসে উপস্থিত হবো। এটা বলার পর সকলে শান্ত হলো। বিয়েতে ইতিমধ্যে দুই পরিবারের সকলকে দাওয়ার দেওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু শর্ত একটাই, বিয়ের আগে পাত্র কিংবা পাত্রীর বাড়িতে কেউ উঠতে পারবে না। এমনটা করার কারণ যাতে কেউ আগেভাগে বুঝে না ফেলে যে তারা পালিয়ে বিয়ে করেছে।

সকলে কথা বলার পর ভাইয়া আমাকে বিশেষভাবে বলল,”রেদওয়ান ভাই আমার, তুই না আসলে কিন্তু আমি বিয়েই করব না বলে দিলাম। তাই বিয়ের আগেই এসে পড়বি।”
আমি বললাম,”ঠিক আছে ভাইয়া, চিন্তা করো না। আমি সময়মতো গিয়েই পৌঁছাবো।”

আজ ভাইয়া ভাবীর গায়ে হলুদের রাত। তাদের হলুদের ছবিও পাঠিয়েছে আমাকে আমার বোন মেঘা। ভাইয়াকে খুশি দেখালেও রাইফা ভাবীকে অনেকটা বিষণ্ণই লাগলো ছবিতে আমার। সেটার কারণও হয়তো আমি জানি, আমার অনুপস্থিতি। কিন্তু তাদের ভালোর জন্যই আমি তাদের থেকে দূরে আছি।

তবে অবাক করার ব্যাপার যে ভাইয়া নাকি তার গায়ে হলুদ শেষ করে দুই ঘন্টার জন্য কাউকে কিছু না বলেই বাসা থেকে বের হয়ে কোথায় জানি গিয়েছিল। কেউ জানে না সে কোথায় গিয়েছিল। তাকে ফোনেও পাওয়া যায়নি সেই সময়টাতে। কিন্তু বাসায় সে হাসিমুখেই দু’ঘন্টা পর এসে পড়েছিল। তাকে জিজ্ঞেস করলেও কোন উত্তর দেয়নি সে। তাকে আর তেমনভাবে কেউ জেরাও করেনি।

একদিন কেটে গেল কক্সবাজারে। বন্ধুরা সকলে মজা করলেও আমি পারিনি করতে, আমার মন খালি হা হা করছিল ভাইয়ার বিয়েতে আনন্দ করার জন্য। কিন্তু কী করব, আমি বাধ্য ছিলাম যে। নাহলে ছোট থেকেই আমার কত ইচ্ছে ছিল যে ভাইয়ার বিয়েতে কত আনন্দ করব! কিন্তু কিছুই হলো না তার। এসবকিছুর জন্য রাইফা দায়ী।

গতকাল ছিল ভাইয়া-ভাবীর গায়ে হলুদ। আজকের রাতটা পেরুলেই আগামীকাল বিয়ে। আজ রাতের বাস ধরে আমরা চলে যাব। রাতের আগেই, বিকেলের দিকে একটা ভয়াবহ সংবাদ পাই আমি, যেটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

আমার ভাই রোড অ্যাকসিডেন্ট করেছে। স্পট ডেট! বিশ্রীভাবে তার দেহ নাকি থেঁতলে গিয়েছে। এই খবর পাওয়ার পর আমি আর নিজের মধ্যে ছিলাম না। আমার প্রাণপ্রিয় ভাই আর দুনিয়াতে নেই, এটা আমি মানতে পারছিলাম না।

আমি পাগলের মতো ব্যবহার শুরু করি এটা শোনার পর। আমাকে আমার বন্ধুরা অনেক কষ্টে শান্ত করে। সেদিন রাতের গাড়িতেই বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই, দেয়ার কথা আগে থেকেই ছিল। সারাটা রাত আমার নির্ঘুম কেটেছিল আর কতটা যন্ত্রণা নিয়ে যে রাতটা আমি পার করেছি, সেটা কাউকে বোঝানোর ক্ষমতা আমার নেই।

বাসায় পৌঁছাতে প্রায় দুপুর হয়ে গিয়েছিল। সেখানে আরেক হুলস্থুল কান্ড। আমাদের বাসায় রাইফা ভাবীর বাবা তার পরিবার নিয়ে বসে আছে। আমি বাসায় ঢুকার সাথে সাথেই আম্মু আমার হাত ধরে আমার রুমে নিয়ে যায়।

আম্মু বলল,”বাবা, আমি জানি যে আমরা কীসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু যা হয়ে গিয়েছে, সেটা তো আর বদলানো যাবে না।” বলেই কেঁদে দিল।
বাবা আবার শক্ত মনের মানুষ। সে বলল,”কিন্তু আমাদের সব পরিস্থিতি মেনেই কিন্তু চলতে হবে। আমি মানছি যে এখন আমরা যে কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, সেটা অসহ্যকর। কিন্তু তা বলে কিন্তু আমরা বর্তমানকে ফেলে দিতে পারি না। আমাদের বর্তমানকে কেন্দ্র এবং ফোকাস করেই কিন্তু এগুতে হবে।”
আমি বললাম,”আমাকে কী করতে হবে বলো”
আব্বু বলল,”রাইফাকে বিয়ে করতে হবে তোর।”

এই কথাটা শুনে আমার যতটা অবাক হওয়ার কথা ছিল, ততটা অবাক হইনি কেন জানি। একটা প্রশ্ন, যেটা করা না করা একই কথা, উত্তরটা আমি জানি, সেটা জিজ্ঞেস করলাম আব্বুকে।
“রাইফা ভাবী কি আমাকে বিয়ে করতে রাজি? সে না সদ্য বিধবা হলো? ভাইয়ার শোকে কি এতটুকুও কাতর হয়নি সে?”
আব্বু বলল,”স্বামী মারা গেলে কে না কষ্ট পায় বল? কিন্তু বাস্তবতার সাথে যত দ্রুত মানিয়ে নেওয়া যায় ততই ভালো। আর রাইফা মা সেটা পেরেছে। তাছাড়া রাইফাকে আমি আর তোর মা নিজের বাড়ির বউ করেই রাখতে চাই। মেয়েটা খুবই ভালো রে। না করিস না বাবা। নিজের বাবা-মায়ের জন্য এতটুকু করতে পারবি না তুই? বিশ্বাস কর, ওকে নিয়ে তুই অনেক সুখী হবি জীবনে।”

আমি আর ‘না’ করতে পারিনি, করতে পারতামও না কোনকালে। বাবা-মায়ের কথার উপর কথা বলার স্পর্ধা আমি কোনদিন দেখাইনি, না পারব কোনদিন দেখাতে। আমার বিয়ে হয়ে যায় রাইফার সাথে।

বিয়ের পুরোটা সময়জুড়েই আমি অনুভূতিশূন্য ছিলাম। বারবার খালি ভাইয়ার কথাই মাথায় আসছিল। কীভাবে সে আমাদের ছেড়ে চলে গেল? এক সেকেন্ড! রাইফা ভাইয়াকে মেরে ফেলেনি তো?

নাহ! এই সন্দেহটা একদমই ফেলে দেওয়া যায় না। রাইফা তো বলতো যে ও আমাকে ভালোবাসে, বিয়ে করবে। তার মানে কি ও-ই ভাইয়ার রোড অ্যাকসিডেন্টের জন্য দায়ী?

নিজের মনের সাথে অনেকক্ষণ যুদ্ধ করে শেষমেশ যেটাতে মন সায় দিল সেটা হচ্ছে, রাইফাই ভাইয়ার খুনী। ওর আগের কাজের হিসাব মিলালে এক নিশ্বাসে এই কথা বলে দেওয়া যায় যে, ও-ই ভাইয়ার খুনী। আমাকে পাওয়ার জন্য ভাইয়াকে ও-ই নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমার আর রাইফার বিয়ের পর বাসরঘরে কী হলো সেটা কারো অজানা নয়।

“আর কতক্ষণ থাকবে বাথরুমে হুম? বেশিক্ষণ থাকলে জ্বর আসবে তোমার। তাড়াতাড়ি বের হও!”
দরজায় টোকা দিয়ে কথাগুলো রাইফা আমার উদ্দেশ্যে বলল। ওর কথায় বাস্তবে ফিরলাম।

আসলেই তো! কমপক্ষে আধঘন্টা হবে আমি শাওয়ারের নিচে বসে আছি। বেশিক্ষণ এভাবে থাকলে জ্বর আসার সম্ভাবনা আছে। তাই দ্রুত গোসল সেরে কাপড় গায়ে দিয়ে করে দশ মিনিটের মাথায়ই বাথরুম থেকে বের হলাম।

বের হয়েই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।
“এসব করে কোন লাভ নেই!”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here