ভাবী_যখন_বউ
পর্ব_০২
Syed_Redwan
ভেবেছিলাম যে সবকিছু ঠিক হয়ে গিয়েছে। এই রাইফা নামক মানুষটার ‘প্যারা’ও শেষ। আমি এবার তার যন্ত্রণা থেকে মুক্ত। কিন্তু কে জানতো যে আমার ভাগ্যে কতবড় অত্যাচার লিখা ছিল যেটা আমাকে প্রতিনিয়ত, প্রতিদিন ভোগ করতে হবে?
আমার ধারণা সম্পূর্ণরূপে ভুল ছিল। আমি তো ভেবেছিলাম যে ও সবকিছু ভুলে নিজেকে আমার ভাবী হিসেবে মানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু তা ছিল আমার একান্তই ভুল ধারণা। ও বাসায় আসার পর থেকেই সকলের মন জয় করে নিয়েছিল। মনে হচ্ছিল যেন সে এই বাড়িরই মেয়ে। হ্যাঁ, সকলের একজন প্রিয়জন হয়ে উঠেছিল সে শুধুমাত্র একজন ব্যতীত। সেই একজন আর কেউ নয় বরং আমি। আমার সাথে তার করা ব্যবহার একদমই পরিবারের বাকি সদস্য কিংবা ভাবী আর দেবরের মাঝে যেমন সম্পর্ক হয় সেরকম ছিল না।
দেবরের সাথে কি কখনো ভাবী ঘনিষ্ঠ হয় বলে শুনেছেন? তাও আবার তার স্বামীর চাইতেও বেশি ঘনিষ্ঠ? যদি হতো ভাবী মায়ের মতো বয়সী বা বয়সের পার্থক্য অনেক বেশি হতো তবে একটা কথা ছিল। কিন্তু ভাবী এবং দেবর সমবয়সী হলে তাদের ঘনিষ্ঠতা সমাজ কোনভাবেই ভালো চোখে দেখবে না। প্রথম কয়দিন আমার রুমে আসতো না সে, সকলের সাথে যেভাবে কথা বলতো, ঠিক তেমনভাবেই আমার সাথেও কথা বলতো। তবে মাঝেমধ্যে খাবার টেবিলে কিংবা অন্যান্য জায়গায় আমাকে সে আড়চোখে দেখতো বা এমন দৃষ্টিতে দেখতো, যে দৃষ্টিতে কোনভাবে একজন বিবাহিত মেয়ের নিজের দেবরকে দেখা উচিত না। উল্লেখ্য যে আমি আর রাইফা ভাবী যে একে অপরের পূর্ব পরিচিত, সেটা আমাদের পরিবারের কেউ জানে না, আমরাও জানাইনি।
প্রথম দশদিন এভাবেই কেটেছিল। আমার প্রথমে অস্বস্তিবোধ হলেও পরে ভেবেছিলাম যে আমার প্রতি তার টানটা এখনো পুরোপুরি যায়নি, হয়তো একটু সময় লাগবে নিজের স্বাভাবিক হতে তারপর সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তাই আমি এসব নিয়ে তেমন একটা উদ্বিগ্ন হইনি। তাছাড়া ইতিমধ্যে আমি আমার ভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে জয়েন করেও ফেলেছিলাম আর নতুন শিক্ষক হওয়ায় ইচ্ছে করেই কিছুদিন অধিক সময় সেখানে দেওয়ার নিয়ত করি। এতে করে আমি কীভাবে যথার্থভাবে নবীন ভার্সিটির শিক্ষার্থীদের পড়াতে হয় সেটাও জানবো তার উপর রাইফা ভাবীর থেকেও দূরে থাকা হবে। আমার বিশ্বাস ছিল কিছুদিন তার থেকে দূরে থাকলে এবং সে ভাইয়ার সাথে একান্তভাবে সময় কাটালে আমার প্রতি তার মায়া সম্পূর্ণভাবেই কেটে যাবে; সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
কিন্তু আমি ভুল ছিলাম! আমি জানতামই না যে মেয়েটার অন্য উদ্দেশ্য ছিল। প্রথম দশদিনের মতো সে আমার সাথে তেমনভাবে ঘনিষ্ঠ না হলেও এরপর থেকে আমার পিছু পিছু লেগে থাকতো সবসময়। সে অত্যন্ত সেয়ানা ছিল। এমনভাবে সে তার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করত যে বাসার কেউ কিচ্ছুটি টের পেত না কিংবা কোন উল্টাপাল্টা কিছু ভাবতো না। তখন থেকেই শুরু হয় আমার রুমে হুটহাট করে আমার অনুমতি না নিয়ে ঢুকে পড়া। এসেই সে তার আগের কথাগুলো বলত।
“আমি বলেছিলাম না যে আমি তোমাকে নিজের করেই নিব একসময়? হা হা দেখলে এখন তোমার কত কাছে এসে পড়েছি? কিছুদিন পরই তোমাকে একেবারে আপন করে নিব।”
“ভাবী কী বলছ এসব তুমি? তুমি আমার ভাবী হও। এসব তুমি আগে বলেছিলে সেসব আমি অনেক আগেই ভুলে গিয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে তুমি এখন আমার ভাইয়ের বউ, আমার বড় ভাবী। কীভাবে হলে সেটা আমি জানতে চাই না বরং আমি এই সত্যিটাই মানি। আমি চাইবো না আমার ভাই কোন রকমের কষ্ট পাক, তাই বলব এসব বন্ধ করো। নিজেকে আমার বড় ভাবী হিসেবে মেনে নাও আর স্বাভাবিক হয়ে যাও। দেখবে, আমরা সকলেই সুখী হবো। তাই বলছি, নিজেকে সংযত করো। আমি একটা ছেলে হয়ে নিজেকে সামলাতে পারলে তুমি একজন মেয়ে হয়ে পারবে না? তার উপর তুমি আমার বড় ভাইয়ের…..” (আমি কথা শেষ করতে পারলাম না)
সাথে সাথেই আমাকে একটা ধমক দিল রাইফা। রক্তচক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওকে কখনো ভয় না পেলেও এই মুহূর্তে ভয় পাচ্ছি ওকে দেখে।
“চুপ! একদম চুপ! কীসের ভাবী আমি তোর হ্যাঁ? আমি তোর কোনকালের ভাবী লাগি না আর না তো তুই আমার দেবর লাগিস। আমাকে সবার সামনে কিছুদিন ‘ভাবী’ ডাকবি খালি, কিন্তু আড়ালে একদম ভাবী ডাকবি না বলে দিলাম! আমার স্বামী একমাত্র তুই আর কেউ না বুঝলি? আর কিছুদিন অপেক্ষা কর খালি, তারপরই তোকে আমি পাচ্ছি নিজের করে হুম!”
রাইফা ভাবীর এমন কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম। কী বলছে সে?! আমার আপন ভাইকে সেদিন বিয়ে করে এনে এখন বলছে তার স্বামী হচ্ছি আমি?
“তোমার মাথা নির্ঘাত খারাপ হয়ে গিয়েছে। কীসব উল্টাপাল্টা কথা বলছ তুমি? ভাইয়াকে বিয়ে করে এসে এখন বলছ যে তুমি আমার বউ? আগামীকালই তোমার ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা করছি আমি।”
আমার কথা শুনে ভাবী হেসে বলল,”আমার মাথা একদম ঠিক আছে। আমি সবকিছুই সুস্থ মস্তিষ্কে বলেছি। তুমি এবার নিজের মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখো আমার বর হওয়ার।”(মুচকি হেসে)
“এক সেকেন্ড, দাঁড়াও। আচ্ছা আমি না হয় একমুহূর্তের জন্য মেনে নিলাম তুমি যা বলছ সবকিছুই সত্য। তাহলে তুমি যে বললে আমার ভাইকে বিয়ে করেও তুমি তার না, আমার স্ত্রী, এটার কী ব্যাখ্যা দিবে তুমি শুনি?”
“সবকিছুই সময় এলে জানতে পারবে। নাহলে তুমি সর্বনাশ করে ফেলবে। আসো একটু আদর করো আমাকে।” বলেই আমার কাছে আসার জন্য অগ্রসর হলো।
“উফফ্ অসহ্য!” বলেই আমি রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। পেছন থেকে রাইফা মুচকি মুচকি হাসছিল।
এভাবেই চলছিল দিনকাল। তবে আমার ইচ্ছা হলো ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করে এটা জানার যে ভাবী যে তাকে ঠকাচ্ছে, আমার সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছে এসব কি সে জানে বা টের পেয়েছে? তার সাথে কথা বলে আমি একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হবো। আমি ভাইয়াকে কষ্ট পেতে দিব না। প্রয়োজন পড়লে আমি নিজেই বাসা থেকে চলে যাব। তাতে রাইফা ভাবীও ঠিক থাকবে আর আমাদের পরিবারে কোন অশান্তি নেমে আসবে না।
আমি ভাইয়ার কাছে গেলাম।
“ভাইয়া!”
“কী হয়েছে রে, কিছু বলবি?”
“আসলে, তুই ভাবীকে কতদিন ধরে চিনিস রে? আগে তো কখনো তার কথা বলিসনি আমাকে?”
“হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?”
“এমনি জানতে ইচ্ছে করছিল। না বললে থাক।”
“অনেক আগে থেকেই। এসব বাদ দে ভাই। পুরোনো কাসুন্দি ঘেঁটে লাভ নেই। দশদিন পর বিয়ে, এটার প্রস্তুতি নে তুই। তোর সকল বন্ধুবান্ধবদের দাওয়াত দিয়ে রাখ অগ্রিমই।”
“হু।”
বুঝতে পারলাম যে রাইফা ভাবীর চরিত্রের এই দিককার কথা সম্পর্কে ভাইয়া একেবারেই অবগত নয়। ভাইয়াকে দেখে অনেক হাসিখুশি মনে হয় আজকাল। মনে হয় যেন এমন কিছু অর্জন করেছে সে জীবনে যেটা আগে কখনো করেনি। এমনকি আমি জীবনে আগে কখনো ভাইয়াকে এতটা হাসিখুশি ও আনন্দে দেখিনি। তার মানে নিশ্চয়ই ভাইয়া রাইফা ভাবীর সাথে অনেক সুখেই আছে, তাই তো এত হাসিখুশি দেখাচ্ছে তাকে। ভাইয়া যখন জানতে পারবে যে ভাবী তার আড়ালে আমাকে চায় তখন তার মনের অবস্থাটা কী হবে? না! এটা আমি কিছুতেই হতে দিতে পারি না।
এভাবেই কাটছিল দিন। সাথে সাথে বাড়ছিল রাইফা ভাবীর অত্যাচার আমার উপর। সুযোগ পেলেই আমার রুমে এসে বসে থাকত, প্রায়ই আমার শরীরের সাথে নিজের শরীর স্পর্শ করাতো এবং এমনকি মাঝেমধ্যে সকলের অগোচরে জড়িয়েও ধরতো। এসবকিছু আমার মুখ বুঁজে সহ্য করা ছাড়া যে আর কোন উপায় ছিল না। আমি পারতাম না ভাইয়ার সুখে আগুন ঢালতে। তাই এসব কখনো কারো কাছেই প্রকাশ করতাম না। বাসার বাইরে ভার্সিটিতেই থাকতাম দিনের অধিকাংশ সময় আর বাসার ভিতরে ভাবীর উপদ্রবে রুমের দরজা আটকিয়ে রাখতাম ভিতর থেকে। অথচ আমি সচরাচর কখনোই রুমের দরজা আটকাই না, ঘুমানোর সময়ও দরজা খুলেই ঘুমাই। তবুও অনেক সময় শেষ রক্ষা হয়না। মায়ের কাজের বাহানা দিয়ে সে আমার রুমে ঢুকে পড়তো। আমার তাকে ‘না’ বলার কোন সাধ্য থাকতো না।
আমি ঠিক করলাম যে ভাইয়ার সাথে রাইফা ভাবীর বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার পরপরই আমি বাসা ছেড়ে দিব। নতুন বাসা নিব নয়তো ভার্সিটির টিচার্স কোয়াটারে থাকবো, তবুও ভাইয়ার সংসারে আগুন লাগতে দিব না। আমিই তো সকল সমস্যার গোড়া, তাই না? আমি নিজেই উধাও হয়ে যাব। তারপর দেখি সমস্যা থাকে কী করে।
আমি সবকিছু মুখ বুঁজে সহ্য করলেও বিয়ের ঠিক দুইদিন আগের ঘটনার পর আর পারিনি নিজেকে ধরে রাখতে। নিজের সমস্ত সহ্যশক্তির বাঁধ সেদিন ভেঙে গিয়েছিল।
বিয়ের দুইদিন আগের রাতে,
সময় রাত ১১টা ৩০। ডিনার শেষে আমি আমার রুমে বসে আমার প্রিয় বই পাওলো কোয়েলহো’র লেখা ‘দি অ্যাল কেমিস্ট’ পড়ছিলাম। রুমের দরজা খোলাই রেখেছিলাম। বই পড়ার মাঝেই খেলাম করলাম যে রাইফা ভাবী আমার রুমে প্রবেশ করল। এত রাতে সাধারণত ভাবী কখনো আমার রুমে আসে না। কেন এসেছে সে? আবার কোন অঘটন ঘটাতে না তো? রুমে ঢুকেই সে দরজা আটকে দিল। না! ব্যাপারটা তো মোটেই সুবিধার মনে হচ্ছে না। তবে কি সে আমাকে কোনভাবে ফাঁসাতে চাচ্ছে?
চলবে
(কী মনে হয় মেয়েটা কি চরিত্রহীন নাকি যে নিজের বরকে বাদ দিয়ে নিজের দেবরকে ধরেছে? সাথে নায়কের ভাইয়ের খুন কীভাবে হতে পারে আর কে-ই বা করেছে? তার উপর মেয়েটা নায়কের সাথে কী করতে পারে এখন? কমেন্ট করে জানাবেন প্লিজ।)