ভাঙ্গা গড়া,পর্ব_২
Hiya Chowdhury
ইফাজ সম্পর্কে আদ্রাজের ছোট ভাই। আদ্রাজের থেকে বয়সে ৩ বছরের ছোট ইফাজ। বড় ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে খুব আনন্দে আছে সে। ভেবেছিলো আজ সন্ধ্যায় সবাই এক সাথে বসে আদ্রাজ কে বিয়ের জন্য রাজি করাবে। সবাই এক জোড়ে না ধরলে আদ্রাজ প্রতি বারের মতোই বিয়ের জন্য না করে দিবে এটা সবাই বুঝে গেছে তাই এই পরিকল্পনা। ইফাজের মুখ বাংলা পাঁচের মতো হয়ে গেছে। আদ্রাজ ভারী অবাক হয়ে গেলো সে বুঝতে পারছে না কি এমন করলো যে সবাই এমন করছে। আদ্রাজ বললো,
–“ইফাজ তুই যেমন করছিস মনে হচ্ছে ২ ঘন্টা আগে এখানে ৩য় বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয়েছিলো আমি তাতে অংশগ্রহণ করতে পারিনি বলে তোরা মুক্তিযোদ্ধা আমি রোহিঙ্গা?”
আদ্রাজের কথা শুনে ইফাজ হাসবে না কি করবে বুঝতে পারছে না। এখন আর একটাই কাজ আছে এই পরিকল্পনা সফল করতে হলে তাই কোনো ঝামেলা ছাড়াই ইফাজ মা বাবা কে ইশারায় কিছু না বলতে নিষেধ করে দেয়। আর আদ্রাজ কে বলে,
–“যাও ভাইয়া তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও!”
–“কি হয়েছে বলবি তো?”
–“না কিছু না!”
–“আম্মু আপনারা বলবেন তো কি হয়েছে?”
–“কিছু হয়নি যা ফ্রেশ হয়ে নে!”
এখন আর কেউ ই কিছু বলছে না তাই আদ্রাজ চলে যায়।
বেল চাপতেই অহমির সৎ মা ভাবলো এই অসময়ে আবার কে এসেছে। ভাবতে ভাবতে দরজা খুলে দিয়ে দেখলো অহমি। স্বাভাবিক লাগছে না তাকে। তিনি চমকে উঠে অহমির কাছে গিয়ে বলেন,
–“অহমি মা কি হয়েছে তোর?”
–“আপনি আমায় স্পর্শ করবেন না!”
অহমির এই অবহেলা আজ নতুন নয়। মেয়ের ভালোর জন্য দ্বিতীয় বিয়ে আলতাফ মাহমুদ করেছেন ঠিকই কিন্তু মেয়ের থেকে মা ডাক রেহানা (সৎ মা) কে কখনোই শোনাতে পারেন নি। তার পেছনে প্রধান দোষী আলফাত এর নিজের ই বোন অহমির ফুপি। সবার হয়তো একটাই ধারণা সৎ মা মানেই খারাপ। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। দুনিয়াতে সকল মানুষ যেমন এক হয় না তেমন ই সকল সৎ মা ও খারাপ না। অহমির ফুপি কি সব বুঝিয়েই যেনো সৎ মায়ের উপর বিষিয়ে দিয়েছিলেন সেই ছোট বেলা থেকেই। রেহানা অহমির জন্য আর কোনো সন্তান নেন নি। উনার মতে অহমি ই তার নিজের সন্তান। সব ত্যাগ যার জন্য করছে সে-ই যদি এভাবে অবহেলা করতে থাকে তাহলে কিভাবে সহ্য হবে? অহমির ফুপি বুঝিয়েছিলো রেহানা শুধু আলতাফ কে সম্পত্তির লোভেই বিয়ে করেছে আর কিছু না। এটা মাথায় গেঁথে গেছে অহমির। রেহানা অহমির কথা শুনে থমকে গেলো। মায়ের মমতা দিয়ে আগলে রাখতে গিয়ে ও যেনো পারলেন না। অহমি পাশ কাটিয়ে উপরে চলে গেলো। অহমি বিকেলে যাওয়ার আগে বলে ও যায় নি কোথায় গিয়েছে। তাই রেহানা কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না। অহমি মোবাইল বন্ধ করে দিয়ে ঘুমের ঔষধ খেয়ে নেয়। দরজা ও বন্ধ। নিশ্চিন্তে একটু ঘুমোনোর দরকার কিন্তু কিভাবে ঘুমাবে? আয়ানের সাথে ৩ টা বছরের অনেক গুলো স্মৃতি চোখের সামনে ভাসছে। ফুপির কথা গুলো ও কানে বাজছে। একটা মানুষ এতো টা বদলে যেতে কিভাবে পারে সেটা অহমি ভাবছে! আর আয়ান ই বা কোথায়? আর যাইফ কোত্থেকে এলো? ঘুমের ঔষধ খাওয়ার ফলে কত শত ভাবতে ভাবতেই চোখ টা লেগে আসে অহমির। রেহানা আর আলতাফ খাবার খাওয়ার জন্য কয়েক বার ডেকে ও যান কিন্তু লাভ হয় নি কোনো!
রাতে আয়ান বাড়িতে ঢুকেই বুঝতে পারে যে অহমি এসেছিলো। দ্রুত নিজের রুমে গিয়ে খোঁজা শুরু করে আর ভাবছে অহমি আসবে আমাকে বললো না? সব খুঁজেও যখন পেলো না তখন নিচে এসে তার মা কে ডাকতে শুরু করে। তিনি এসে বলেন,
–“কি হয়েছে এতো চেঁচামেচি কিসের?”
–“অহমি কোথায়?”
–“জাহান্নামে!”
–“মা!!!”
–“গলা উঁচু করে কথা বলবি না!”
–“আমার কথার উত্তর দাও। আমি জানি অহমি এসেছিলো ও কোথায় সেটা বলো!”
–“হ্যাঁ এসেছিলো চলে ও গেছে!”
মা ছেলের কথা কাটাকাটি হয়ে যায়। এক পর্যায়ে আয়ানের বাবা এসে এসব দেখে বলেন,
–“কি শুরু করেছো তোমার দুজন?”
–“আমি কিছুই করিনি এখনো পর্যন্ত। যা করেছে ঐ অসভ্য মেয়েটা!”
–“মা তুমি একটা মেয়ে হয়ে আরেক টা মেয়ে কে অসভ্য বলছো তাহলে তুমি কতটা সভ্য?”
–“তুই কিন্তু বার বার আমাকে ছোট করছিস আয়ান!”
–“তোমার কাজের জন্য তুমি ছোট হচ্ছো! তুমি নিজেই দায়ী এর জন্য। আমি বুঝলাম না অহমি তোমার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছে যে ওকে একদমি সহ্য ই করতে পারো না? সেই ছোট বেলা থেকে দেখছি কতো আদর যত্নে মানুষ করেছো আর এখন? আজকে তুমি আমাকে বলো তো অহমি তোমার কি ক্ষতি করেছে!”
–“আদর যত্নে মানুষ করেছি বলেই মাথায় উঠেছে।”
মা ছেলের বিরোধ মেটাতে পারছেন না আয়ানের বাবা। আচমকা আয়ানের মা আয়ানের এক হাত তার মাথায় রেখে বললেন,
–“আমি তোকে আমার কসম দিলাম তুই অহমি কে বিয়ে করলে আমার মরা মুখ দেখবি! নিজের মায়ের ভালো চাস তো আমি যা বলি তা করবি। কালকেই তোর জন্য মেয়ে দেখতে যাবো আমি তোকে অহমির থেকে হাজার গুন সুন্দরী মেয়ে কে বিয়ে করাবো। দেখিস বাবা তুই অনেক সুখে থাকবি!”
হুট করে আয়ানের মা তাকে এতো বড় একটা কথা বলে দেবে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না আয়ান। মাথার উপর হাত টা শক্ত করে চেপে ধরায় আয়ান হাত ছাড়িয়ে নিতে ও পারছে না। তিনি হাত ছেড়ে দিলে আয়ান কিছু না বলে নিজের রুমে চলে যায়। অহমি কে কল দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু কল যাচ্ছে না। বার বার একটাই কথা ফোন বন্ধ। রেগে ফোন টা আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেটের আগুন ধরায়। এই অসময়ের এটাই সঠিক সঙ্গী। সিগারেটের ধোঁয়ায় নিজের রাগ দুঃখ উড়িয়ে দিচ্ছে যেনো। সুখ টান দিয়ে ভাবছে একটু আগে মায়ের বলা কথাটা। এখন কি করবে সে! শেষমেশ মায়ের দেওয়া কসমেই যেনো আটকে পড়ে গেছে। না সামনে এগোতে পারছে না পেছনে। আরো কি যেনো বললো বিয়ে, সুখ আর সুন্দরী মেয়ে? হাহ এসবে ভালোবাসা থাকবে না। আয়ান বিয়ে করলে অহমি কেই করবে আর কাউকে না। মায়ের এই কসমের জন্য তিন তিন টা জীবন নষ্ট হয়ে যাবে এটা হয়তো তিনি বুঝতে পারছেন না। অহমি কে ছাড়া আয়ান সুখী হবে না কখনোই। স্ত্রীর অধিকার অহমি ছাড়া কেউ পাবে না! প্রচন্ড সীদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছে আয়ান। সিগারেটে ও কিছু হচ্ছে না। মন কেমন করছে! অহমির সাথে তার মা খারাপ কিছু করে নি তো? কিছু অদ্ভুত চিন্তা হতে থাকলো তার উপর ফোন ও বন্ধ। তাই আয়ান এই রাতের মধ্যেই অহমি কে দেখতে চলে যায়।
রাতে আয়ানের এসেও আর কোনো লাভ হলো না। অহমি ঘুমে বিভোর থাকায় কিছু বুঝতে পারে নি। আয়ান কে উদ্বিগ্ন দেখে রেহেনা বলেন,
–“কি হয়েছে আয়ান কোনো সমস্যা?”
আয়ান সব খুলে বলে তার মায়ের কর্মকাণ্ড। রেহেনা শুনে হতাশ মনে বললেন,
–“আয়ান আমার মেয়েটা খুব কষ্ট পাবে! তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করো এটা ও সহ্য করতে পারবে না। খুব বেশি ই ভালোবাসে তোমাকে!”
–“মামনি আমি জানি আমার কথা ভাবছো না একবারো? আমি কিভাবে পারবো আরেক টা মেয়ে কে বিয়ে করতে? ভালো তো আমি ও বাসি তাই না?”
আলতাফ আর রেহানা কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। আয়ান কে বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠাতে চান। আয়ান বলে দেয় সে ঐ বাড়িতে যাবে না। উনারা ও বুঝলো জোড় করে লাভ হবে না। আয়ানের চোখ মুখ ও মলিন হয়ে আছে। রেহানা বললেন,
–“আয়ান খেয়েছো তুমি?”
–“না!”
–“আসো আমি খাবার দিচ্ছি। কেমন মুখ টা শুকিয়ে গেছে খেয়ে নাও!”
–“অহমি খেয়েছে?”
রেহানা চুপ। আয়ান তার উত্তর পেয়ে গেছে। বললো,
–“আমার ক্ষুধা নেই!”
অহমি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। আয়ানের রাত টা নির্ঘুম কেটে যায়। রেহানা আর আলতাফ ভেবে নিলেন সকাল হলেই আয়ানের মা বাবার সাথে শেষ বারের মতো কথা বলে নিবেন। এভাবে ছেলে মেয়েদের কষ্ট তারা দেখতে পারছেন না। এবং এটাও বলবেন যে আয়ানের মা যা করতে চাচ্ছে সেটা ভুল। মতে কেউ ই ভালো থাকবে না। উল্টা দুর্বিষহ করে দিবে সব কিছু!
(আয়ানের মা কি মেনে নিবেন? নাকি সব এলোমেলো হয়ে যাবে?)
চলবে……………..
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন!