বৃত্তের_অন্তরালে পর্ব-১

বৃত্তের_অন্তরালে পর্ব-১
#পলি_আনান

একটি অর্ধ খাওয়া লাশ পড়ে আছে ওজিহার সামনে।লাশ টাকে দেখে মনে হচ্ছে কোন ছেলের লাশ।লাশ টার মূখটা বড্ড বিভৎস। চারিদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে মানুষ পচাঁর একটি বাজে গন্ধ।ধীরে ধীরে গন্ধটা বেড়েই চলছে।ওজিহার মনে এই বিশ্রি গন্ধে এখনী বুমি করে দেবে।ওজিহা হঠাৎ খেয়াল করে লাশটি যেন তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।ঠিক সেই মূহুর্তে ওহিজা একটি গগনবিহিন চিৎকার দিয়ে উঠলো।ওহিজার চিৎকারে জেগে গেলো হোস্টেলের সবাই।সে খাটের উপর বসে দরদর করে কাপছে।কপাল ও কানের নিচে বেয়ে ঘাম দরদর করে পড়ছে।ইতিমধ্যে ওহিজার রুমে সবাই এসে পরে সবাই দেখে ওজিহা কাপঁছে।দুই চারটা মেয়ে এসে ওজিহার পাশে বসে এবং তাকে পানি পান করালো।ওজিহার চোখে যেন এখনো স্পষ্ট ভাসছে সেই মরা লাশ টার চিহ্ন।এই হোস্টেলে ওজিহা এসেছে প্রায় দুই সাপ্তাহ হতে চললো আসার পর থেকেই প্রতিরাতে তার গগনবিহিন চিৎকারে জেগে যায় পুরো হোস্টেল সবাই।তার নিত্যদিনের এমন ঘটনায় কেউ সামনে থেকে ক্ষোভ প্রকাশ না করলেও মনে মনে সবাই বিরক্ত হয়।

চাতক পাখির মতো প্রায় আধা ঘন্টা থেকে ভার্সিটির গেটের দিকে তাকিয়ে আছে নাহিয়ান।ভার্সিটি জুড়ে নাহিয়ানের বেশ নাম ডাক।তার সরলতা, ভদ্রতা, বিচক্ষণতা আর পড়া লেখার ভালোর জন্য তাকে সবাই ভালোবাসে।আজ নবীন বরন অনুষ্ঠানের বেশির ভাগ দায়িত্ব নাহিয়ান এবং তার বন্ধুদের। সে অপেক্ষায় আছে তার চিরচেনা মুখটি দেখার জন্য।
_ওই তুই এখানে দাড়াই কি করস। আমরা কাজ করতে করতে শেষ আর উনি কিনা গেটের দিকে তাকাইয়া মাইয়া মানুষ দেখে।
ফাহাদের কথায় চোখ গরম করে তাকায় নাহিয়ান।নাহিয়ান যতটা মিশুন ঠান্ডা স্বভাবের ততটাই রাগি আর একরেখার।
_এই তোকে কে বলছে আমি গেটে দাঁড়িয়ে মেয়ে মানুষ দেখি।আমি গেট সাজানো দেখছি ঠিক ঠাক আছে কিনা।
_হুম, বুঝি বুঝি সব বুঝি আমি।
_কচু বুঝস তুই সর সামনে থেকে।
নাহিয়ার পড়নের পাঞ্জাবি ঠিক করতে করতে স্টেজের দিকে যায়।
ফাহাদ, রওনক,রাকিব, সাবিহা আর মিতু এরা নাহিয়ানের ফ্রেন্ড। স্কুল লাইফ থেকে তারা একসাথে আছে এক দলেই আছে।

_আপনি কি আমার হাত টা ছাড়বেন নাকি থু থু দেবো আপনার মুখে।
সামনে দাঁড়ানো একটি ছেলের উদ্দেশ্য বলে উঠলো ওজিহা। কিছুক্ষন আগে ওজিহা আর তার বিশ্বস্ত ফেন্ড জারা ভার্সিটিতে প্রবেশ করে।হঠাৎ পেছন থেকে একটি ছেলে ওজিহার শাড়ির আচঁল ধরে টান দেয়। আর তখনি ছেলেটার গালে কসে একটা থাপ্পড় মারে সে।তা দেখে পুরো ভার্সিটি নিস্তব্দ হয়ে যায়।
_এই মেয়ে তোমার এতো বড় সাহস আমার গায়ে তুমি হাত তুলেছো।ভার্সিটিতে আসতে না আসতেই সিনিয়রদের অসম্মান করা শুরু করেছো।এই ভার্সিটি তোমার জন্য হারাম করে ছেড়ে দেবো।মনে রেখো।
_সময় আসলেই দেখা যাবে। আর নির্লজ্জের মতো মেয়েদের গায়ে হাত দিতে বিবেকে লাগে না।আগে মানুষের মতো মানুষ হোন। অসম্মান কাকে বলে যানেন আপনি। কিছুক্ষণ আগেই তো আমার শাড়িতে হাত দিয়েছেন অসম্মান করার জন্য এখন আবার আমাকে শিখাচ্ছে আপনি সিনিয়র হয়ে আপনাকে অসম্মান করছি।
ওজিহার সামনে থাকা ছেলেটি ওজিহার গালে চড় দিতে গেলেই খপ করে হাতটি ধরে ফেলে নাহিয়ান।
_এই তুই ভার্সিটির সব মেয়েদের সাথেই এমন করিস এখন আবার নতুন দের সাথেও একই কাজ শুরু করেছিস। সমস্যা কি তোর আমি কিছু বলি না তাই ভাবিস না সব সময় পার পেয়ে যাবি তুই।যা ওকে সরি বল..
নাহিয়ানের কথায় একটি বিশ্রি হাসি হাসলো ছেলেটি।
_আমি বলবো সরি, হ্যা আমি বলবো সরি, এই আবির সরি বলবে হাসালি তুই।
আবিরের পেছনে থাকা তার দলের ছেলে গুলো একসাথে হেসে উঠলো আর তা দেখে রেগে যায় নাহিয়ান।সাবিহা ফাহাদের কানের সামনে মুখ নিয়ে বলে,
_নাহিয়ান একবার ক্ষেপে গেলে কি হয় যানিস তো।
_হুম।ধুমধাম ফাইট শুরু।
নাহিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।আবির আবার গিয়ে ওজিহার সামনে দাঁড়ায় আর তার খোলা চুলে হাত দেয়।তা দেখে নাহিয়ানের চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে।নাহিয়ান আবিরের কলার টেনে মারতে শুরু করেও,আবিরকে মারতে দেখে নাহিয়ানের উপর আঘাত শুরু করে আবিরের দলের লোক। তা দেখে ঘবড়ে যায় ওজিহা।আবার আবিরের দলকে মারতে শুরু করে নাহিয়ানের লোক। চারিদিকে সবাই নিরব দর্শক হয়ে দেখছে।ওজিহা কোন উপায় না পেয়ে জোরে একটা চিৎকার দেয় আর ওজিহার চিৎকারে সবাই থেমে যায়।সবাই ওজিহার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।ইতিমধ্যে প্রফেসরা সবাই এসে হাজির হয়।
_এই কি হচ্ছে এখানে,
_স্যার দুই দল মিলে মারামারি শুরু করেছে।
ভিড়ের মাঝ থেকে একটি ছেলে।
_আজকের এই দিনে তোমরা মারা মারি শুরু করেছো।যারা নতুন আসতে শুরু করেছে তাদের মাঝে আমাদের মানসম্মান কোথায় থাকবে বলতো।আমাদের কলেজের একটা রেপুটেশন আছে।
প্রফেসর কিছুক্ষণ পরিবেশ টা পরখ করে বলে উঠলো “এখানে সমস্যা কি। কি নিয়ে এতো গন্ডোগল।”
_আমি বলছি স্যার।
ওজিহার কথায় ভ্রু কুচকে যায় প্রফেসরের।ওজিহাকে ভালো করে পরখ করে বলে
“হ্যা বলো কি সমস্যা”
“আসলে স্যার আমি ভার্সিটি গেইটে ঢোকার সময় ইনি আমার শাড়ির আচঁল ধরে টান দেন(আবির কে উদ্দেশ্য করে)কিন্তু বিষয়টি আমি হেন্ডেল করছিলাম তার মধ্যে এই ছেলেটি এসে(নাহিয়ানকে উদ্দেশ্য করে)পুরো কেস টাই উল্টো করে দিলেন।”
ওজিহার কথা শুনে চমকে যায় জারা সহ উপস্থিত থাকা সবাই।কেননা সবাই যানে নাহিয়ান সবচেয়ে দায়িত্বশীল ছেলে আজকের দিনে কোন সিরিয়াস কারন ছাড়া সে এমন ঝগড়া করবে না।পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে দুই দলের বিস্তার একটি নাহিয়ানের দল এবং অন্যটি আবিরের দল।আবিরের দল সবসময় মেয়েদের উত্যক্ত করে,ব এবং বিভিন্ন নতুন দের বিভিন্ন র‍্যাগ দিয়ে হেনস্তা করে।কিন্তু নাহিয়ানের সবচেয়ে সাহায্য কারী একটি দল সবার বিপদে এগিয়ে আসা তাদের দলের মূল লক্ষ্য।তাই ওজিহার মুখে এমন একটি কথা শুনে হোচট খায় প্রফেসর সহ বাকি সবাই।জারা ওজিহাকে আলতো করে একটা ধাক্কা দেয়।
“ওই তুই কাকে কি বলছিস, উনি তো তোর উপকার করেছে আর তুই কিনা ওনাকেই ফাঁসিয়ে দিলি।”
জারার কথা শুনেও তার কোন হেলদোল নেই, সে এক দৃষ্টিতে নাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ কেন যেন মনে হচ্ছে নাহিয়ান তার চেনা। কত শত বছরের চেনা যানা।কিন্তু এই ভার্সিটিতে আসার পর থেকে নাহিয়ানকে আজ প্রথম দেখছে সে।চারিদিকে সবার কানাকানি চলছে,নাহিয়ানের বন্ধুরা অবাক হয়ে ওজিহাকে দেখছে। তাদের সবার রাগে শরীর থরথর করে কাপঁছে।যে নাহিয়ান ওই মেয়ের জন্য আজ এমন একটা দিনে গন্ডগোল করলো আর সেই মেয়ে কিনা নাহিয়ানকে দোষারোপ করছে।
“ছিহ দেখলি মেয়েটা কি সার্থপর যে নাহিয়ান তার জন্য এতো ফাইট করলো দেখ বাম হাত থেকে রক্ত পর্যন্ত গড়িয়ে পড়ছে(নাহিয়ানের হাতকে উদ্দেশ্য করে)সেই মেয়ে কিনা নাহিয়ানকে দোষারোপ করছেপ,ডাফার একটা।”
রওনক পাশে দাঁড়িয়ে এতোক্ষণ হাত শক্ত করে মুঠ করে দাঁড়িয়ে ছিল।কিছুতেই তারা বন্ধুর অপমান সহ্য করবেনা।রাকিবের কথা শুনে চকিতে একবার তাকায় সে।
“হুম তুই ঠিক বলেছিস,দাড়া বিষয়টা আমি বুঝেনিচ্ছি”
রাকিব এগিয়ে এসে ওজিহাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“এই মেয়ে তোমার কি বুদ্ধি- সুদ্ধি লোপ পেয়েছে এখানে উপস্থিত সবাই যানে দোষটা আবিরের কিন্তু তুমি না…….”
রাকিব আর সম্পূর্ণ কথাটি শেষ করতে পারলো না তার আগেই নাহিয়ান তার ডান হাত তুলে রাকিবকে চুপ করতে ইশারা করে।নাহিয়ান ওজিহাকে একবার পরখ করে নেই। হাফ সিল্কের একটি ডার্ক ব্লু শাড়িতে তাকে বেশ ফুটে উঠেছে। কোমর পর্যন্ত লম্বা চুল,কানে ঝুমকো নিষ্পাপ চোখের চাহনি।চোখের পল্লবে পল্লবে এক মোহের ছাপ।
গোলাপের পাপড়ির মতো ফুটন্ত ঠোঁট, তাকে পুরো হুরের থেকেও কম লাগছেনা।নাহিয়ানের সবচেয়ে বেশি অবাক লাগে ওজিহার শরীরের ঘ্রাণ। আচ্ছা চন্দনের ঘ্রাণ নাকি তাজা কোন ফুলের ঘ্রাণ ভেবে পায় না নাহিয়ান।এই ঘ্রাণ তাকে বার বার অন্য জগৎতে নিয়ে যায়।এমন ঘ্রাণ নাহিয়ান আর কখনো পায় নি যতবার এই মেয়ের সামনে আসে ঠিক ততবার এই ঘ্রাণ নাহিয়ান কে মোহে ফেলে।
নাহিয়ান মুচকি হেসে তার দৃষ্টি সরিয়ে সবার মাঝ থেকে ক্যান্টিনের উদ্দেশ্য চলে আসে।ক্যান্টিন থেকে একটি কোল্ডড্রিংক নিয়ে এক চুমুকে পুরোটি সাবাড় করে নেয়।পাঞ্জাবির কলার কিছুটা উপর করে হাত পা ছড়িয়ে একটি চেয়ারে বসে পরে।পেছনে এসে হাজির হয় তার বন্ধুরা।রওনক,রাকিব,ফাহাদ,সাবিহা ও মিতু সবাই রেগে বোম হয়ে আছে।
“ওই তুই কি এটা কাজ করলি,ঐ মেয়েরে ছেড়ে দিলি কেন?
সে চুপ চাপ বাইরের দিকে দৃষ্টি আবব্ধ হয়ে বসে আছে।উওর না পেয়ে রওনক ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে থাকে।সাবিহা নাহিয়ানের সামনে বসে বলে,
” তোর কি হইছে বলতো,অন্যায় দেখলেই তুই ঝাপিয়ে পড়স তা আমরা জানি কিন্তু শেষ মূহুর্তে যে মেয়েটা অন্যায় করলো তুই একটু প্রতিবাদ ও করলিনা আমাদেরো করতে দিলি না।সহযেই ছেড়ে দিলি”
“ভালোবাসার মানুষের একশটি ভুল ও খুব সহযে মেনে নেওয়া যায়।”
নাহিয়ানের মুখে এমন নির্লিপ্ত ভাবে ভালোবাসার কথা বলতে শুনে সবাই চমকে উঠে।সবাই সবার দিকে অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে তাদের দৃষ্টিতে বোঝাতে চাইছে নাহিয়ানের কথাটা কি কেউ ভুল শুনেছে,! নাকি সবাই একই কথা শুনেছে।চমকের জগৎত থেকে বেরিয়ে এসে ফাহাদ বলে,
“ওই তুই কি বলস।ভালোবাসার মানুষ মানে কে ভালোবাসার মানুষ”
সে এখনো চুপ করে আছে তার দৃষ্টি এখনো বাইরের দিকে আবব্ধ।নাহিয়ানের কাছ থেকে কোন উওর না পেয়ে মিতু আবারো বলে,
“ওই কিসের ভালোবাসা কার ভালোবাসা, কি বলস তুই।ওই মেয়েরে আমরা দেখছি আজ আর তুই বলস ভালোবাসার মানুষ”
নাহিয়ান মুচকি হেসে সবার দিকে তাকায়।
“তোদের কোথাও ভুল হচ্ছে, আমি ওকে আজ দেখিনি আগেই দেখেছিলাম”
“কি!কখন দেখলি আর তুই ওই মেয়ের প্রেমের পড়লি কখন”
রওনকের কথায় আবারো হাসে নাহিয়ান।এই মূহুর্তে নাহিয়ানের হাসি সবার শরীরে কাটার মতো লাগছে।তার নির্লিপ্ত হাসির কোন ব্যাখ্যা খুজে পাচ্ছেনা কেউ।নাহিয়ান এমন একটি মানুষ তার মাঝে কোন লুকুচুরি নেই,নেই কোন হিংসা বিদ্বেষ। সবার মাঝে ভালোবাসা মন প্রাণ উজার করে ঢেলে দেওয়া, সবার সাথে হাসি খুশি সরল ভাবে কথা বলা তার বৈশিষ্ট।তবে মাঝে মাঝে রেগে গেলে সব কিছু বিপরীত দিকে মোড় নেয়।নাহিয়ান সহযে রাগে না সে যথা সম্ভব দৈর্য্য ধারণ করা ছেলে।তবে একবার রেগে তান্ডব শুরু হয়ে যায় চারিদিক।তার তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দ্বারা সহযে মানুষ চিনে ফেলার মতো গুন তার আছে।
“নাহিয়ান তুই কি বলবি নাকি আমি ভার্সিটি থেকেই চলে যাবো”
মিতুর কথা শুনে আবার মুচকি হাসে সে।তার এতো হাসির কারন খুজে পায় না বাকিরা।সে কফিতে এক চুমুক দিয়ে বলে,”
“এতো দৈর্য্য হারা হচ্ছিস কেন বলছি।মনে আছে দুই দিন আগে ভার্সিটিতে তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস ছিল না তাই তোরা কেউ আর আসলি না।আমার সেইদিন লাইব্রেরি থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই সংগ্রহ করার ছিল। তাই একাই চলে এসেছিলাম ভার্সিটিতে।
“হুম মনে আছে”
“সেইদিন……..
ফ্লাশব্যাক_____
লাইব্রেরিতে বসে বই দেখছিল নাহিয়ান। পুরো লাইব্রেরিতে শুধুমাএ নাহিয়ান আর দুইটি মেয়ে ছিল।তখনি আগমণ ঘটে ওজিহা আর জারার।নাহিয়ানের নাকে হঠাৎ একটি মিষ্টি ঘ্রাণ ভেসে আসে।সে চোখ তুলে তাকালেই ওজিহাকে দেখে চমকে যায়। এই মেয়ে যেন তার কতো চেনা,জানা,ওজিহাকে দেখে তার একটুও অপরিচিত বা নতুন মুখ লাগছেনা বরং বড্ড চেনা মুখ লাগছে।নাহিয়ানের আখি পল্লব জুড়ে ছড়িয়ে যায় মুগ্ধতায়।এই মেয়ে দেখতে হুরের থেকেও কম নয়,মেয়েটির গায়ের রং ঠিক যেন কিছুটা চন্দন কাঠের মতো,যেন চন্দন তার শরীর জুড়ে লেপ্টে আছে,আর তার ঘ্রাণ তাকে মোহিনীত করছে, ঠোঁট গুলো গোলাপের পাপাড়ির মতো ফুটন্ত,নয়ন জুড়ে লেগে আছে একরাশ মায়া,মেয়েটিকে দেখে মনে হচ্ছে সদ্য জন্মানো নিস্পাপ বাচ্চা যেন কোন অন্যায় তাকে গ্রাস করতে পারেনি পুরটি জুড়েই তার পবিত্রতা।ওজিহা যত নাহিয়ানের সামনে এগিয়ে আসলো তত যেন ঘ্রাণ টা বেড়েই গেলো।ওজিহা নাহিয়ানের সামনের একটি টেবিলে বসে পরে।জারা আর ওজিহা কোন একটা বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করছে।কি নিয়ে হাসাহাসি করছে সেই দিকে খেয়াল নেই নাহিয়ানের সে মুগ্ধ হয়ে ওজিহার হাসি দেখছে।এই হাসিতে তো মায়া,আর মুক্ত ঝরছে।
উত্তপ্ত রোদের ঝলমলে দিনে হঠাৎ কয়েক খন্ড মেঘ এসে জমা হয়। পরিবেশটা দেখে বোঝা যাচ্ছে এখনি বৃষ্টি নামবে।তবে পরিবেশটা স্বাভাবিক লাগলো না জারার কাছে। কেমন যেন গুমুট হয়ে গেছে কালো মেঘে ঢেকে গেছে চারিদিক কিছুক্ষন আগের পুরো সাদা আকাশটা এখন আর আগের রুপে নেই। বিষয়টা স্বাভাবিক লাগলো না ওজিহার। তার কেমন যেন শরীর ভার ভার লাগছে,পরিবেশটা অসস্থি লাগছে। জারা আর ওজিহা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে কি যেন ইশারা ইঙ্গিত করছে।তখনি ঝপ করে আকাশ বেয়ে নেমে আসে ঝুম বৃষ্টি। ওজিহা আচমকা চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে ওজিহার দাঁড়ানো দেখে দাঁড়িয়ে যায় জারা।
“আমি যাচ্ছি জারা,খবরদার আমায় পিছু ডাকবিনা।”
জারা মাথা বার বার নাড়িয়ে বারণ করছে ওজিহা যেন না যায় কিন্তু অবাদ্ধ ওজিহা এক মুহূর্ত আর না দাঁড়িয়ে একটি দোড় লাগায়।ওজিহার পেছন পেছন দোড় লাগায় জারাও। পুরো ব্যাপারটা কিছুই বুঝলনা নাহিয়ান সেও তাদের পিছু পিছু ছুটে চলে।
ভার্সিটির সকল ক্লাস প্রায় শেষ।এই মূহূর্তে তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না।ওজিহা দৌড়ে গিয়ে মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে পরে।সে বৃষ্টিতে ভিজছে, এক একটি বৃষ্টির ফোটা তাকে আবার শুদ্ধ করে দিচ্ছে।বৃষ্টির সচ্ছ ফোটারা ওজিহার চুল ভিজিয়ে দিচ্ছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে প্রতিটি ফোটা সে অনুভব করছে।আজ বৃষ্টির ফোটা গুলোর প্রতি নাহিয়ানে রো হিংসা হচ্ছে। তারা কত সুন্দর ওজিহাকে ছুয়েঁ যেতে পারছে অথচ সে একটু কথা বলার মতো সুযোগ ও পেলোনা।আড়ালে দাঁড়িয়ে ওজিহার বৃষ্টি ভেজাটা উপভোগ করছে সে।চারিদিকে আবারো ছড়িয়ে যাচ্ছে সেই মিষ্টি সুভাস।আজ বর্ষন যেন নাহিয়ানের হৃদয়ে হচ্ছে নতুন করে তার মনে ভালোবাসারা জানান দিচ্ছে আগমনের। ওজিহা আজ ভীষন খুশি কেননা তার সাথে যখনি অপ্রীতি কোন ঘটনা ঘটবে ঠিক তখনি আচমকা কালো মেঘে ভেসে যায়, আকাশ চারিদিকে বইতে থাকে দমকা হাওয়া।শরীর হয়ে আসে অবশ। ছোট থেকেই তার সাথে ঘটে আসছে এইসব অস্বাভাবিক ঘটনা। তবে আজ কেন যেন বিপদ আসতেও আসলোনা বিপদের নিশানা পাওয়া মাত্রই তার বিপদ কেটে গেছে।ছোট থেকেই বৃষ্টি তার ভালো লাগে বৃষ্টি দেখলেই লোভ সামলাতে পারে না সে ভিজবে মনের অনন্দে ভিজবে কেউ বারন করলেও সে তা কানে নেবে না অবশ্য এই এক জিবনে তাকে বারন করার মতো একজনি আছে আর সে হলো তার বিশ্বস্ত বন্ধু জারা।ক্লাস নাইন থেকে দুজনের মাঝে এক গাঢ় বন্ধুত্ব।এখন আর বন্ধু লাগে বরং বোনের মতই লাগে তাকে।বৃষ্টির ঝির ঝির শব্দের মাঝে পাওয়া যাচ্ছে জারার চিৎকার।
“প্লিজ, ওজিহা আর ভিজিস না। ঠান্ডা লেগে যাবে তো। চলে আয় এবার ”
ওজিহা মাঠে জমে যাওয়া পানিতে ধপ ধপ করে লাফাচ্ছে আর পানি চারিদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে তার কোন চিন্তা নেই,আজ কোন বারন শোনার তাড়া নেই আজ সে মন মতো ভিজবে।
“ওজি, প্লিজ কাম ব্যাক।ঠান্ডা লেগে যাবে তো।”
এবারো হেলদোল নেই ওজিহার সে ভিজছে লম্বা শ্বাস টেনে কিছুক্ষন পর জারার সামনে ফিরে আসে।
“এই কি সমস্যা তোর আমাকে ভিজতে দিচ্ছিস না কেন”
“তোর ঠান্ডা লেগে যাবে, তোর সেই দিকে কোন খেয়াল আছে চল বাড়ি ফিরে যাই।”
“হুম চল”ভেজা জামা ঠিক করতে করতে।
__বর্তমান__
” তারপর কি হলো”?
রাকিবের কথায় ঘাড় ঘুরিয়ে নাহিয়ান আফসোসের সুরে বলে,
“তারপর আর কি আমি বৃষ্টির মাঝে বের হতে বের হতে ওরা কোন দিকে গেলো খুজে পেলাম না”
“ওওঅঅঅঅ”
সবাই একসঙ্গে সবাই আফসোস সুরে।
“যখন বৃষ্টিতে ভিজছিলো তখন ওই ঘ্রাণ টা যেন আরো জোরালো হলো।আর মাঠে সেই একই ঘ্রাণ আমাকে আবার দূর্বল করে দিয়েছিলো।
এবার কিছুটা নড়ে চড়ে বসে ফাহাদ।সামনের চুল গুলোকে হাতদিতে পেছন দিয়ে বুলাতে বুলাতে বলে,
” দোস্ত মাইয়া মনে হয় কোন দামি ব্রেন্ডের পারফিউম ইউস করে।মাইয়াটারে জিজ্ঞেস করে নাম জেনে তোরে একটা কিনে দিবো চিন্তা করিস না। ”
ফাহাদের কথায় সবাই হেসে উঠে। হাসলো নাহিয়ান ও।মিতু কিছুটা চিন্তিত মুখ করে বলে,
“দোস্ত আমি মেয়েটার সাথেই দাড়ানো ছিলাম। কই আমি তো কোন ঘ্রাণ পাই নাই!
মিতুর কথায় তাল মেলায় সাবিহা,
” হুম ঠিক আমিও ছিলাম বাট আমিও পাইনাই তুই দূর থেকে কেমনে পাস আজব তো!
“জানিনা”
একটি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো নাহিয়ান।

ভার্সিটির নবীন বরণ অনুষ্ঠান প্রায় শেষ পর্যায়ে।ভার্সিটির পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে নাহিয়ানের দায়িত্ব ও জনপ্রিয়তা দেখে ওজিহা বুঝে যায় তখন কেন সবাই তার কথা শুনে অবাক হয়েছে।পুরো ভার্সিটি ঘুরের দেখছে ওজিহা আর জারা।ওজিহার মুখ টা বেশ শুকিয়ে গেছে তাকে দেখে বেশ বুঝা যাচ্ছে কাল রাতে তার ঘুম হয়নি।
“কিরে ওজিহা তোর মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেন।চোখ জুড়ে ক্লান্তির ছাপ।কাল রাতে ঘুমাস নি তুই।”
কাল রাতের ঘটনা ওজিহার মস্তিষ্কে আরেকবার নাড়া দিয়ে উঠে।
“জ..জারা তুই তো জানিস আমার কি সমস্যা, কিন্তু এই কয়দিন আমার সমস্যা বেড়েই চলেছে।রাতে সব উদ্ভব সপ্ন দেখছি,মাঝে মাঝে সপ্নে কেউ আমাকে ডাকছে ”
“দেখ এই ভাবে আর কতো দিন তোকে বলেছি তুই আমার সাথে আমার বাড়িতে চল। আমরা একসাথে থাকবো,কিন্তু তুই তো আমার কথাই শুনিস না।”
“না আমি তোদের বাড়ি কিছুতেই থাকবো না।আমি যানি আমার সাথে হয়তো খারাপ কিছু একটা আছে না হলে বছরের পর বছর আমার সাথে এমন কিছু ঘটতো না………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here