বর্ষার এক রাতে,পর্ব-৪,৫
সাদিয়া
৪
মিষ্টি সকালের রোদ দুনিয়াকে সোনালি আলো ছড়িয়ে দিল। আঁধার শেষে আলো এলো। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে পাখির কিচিরমিচির বাড়ল। নেতিয়ে যাওয়া বাগানের ফুল গুলিও সূর্যের আলোয় চাঙ্গা হয়ে দাঁড়িয়ে উঠল খিলখিল করে হেসে। পাখিরা নীড় থেকে জীবন চলার পথে ছুটল। খাবার সন্ধানে হাজারো মানুষ ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। দুনিয়া থেকে আরেকটা রাতও বিদায় নিল।
আহফিনের চোখ টা খুলে গেল। দেখতে পেল তূবা তার বুকের একপাশে গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে আছে। যেন গাছে ফুটা তরতাজা এক গোলাপ সে। আহফিনের ঠোঁটের কুর্নিশ টা প্রসারিত হলো। হঠাৎ চোখ গেল ঘাড়ে। সাদা গলায় কালো তিলটার পাশেই কামোড়ের দাগ। প্রথমদিন যে কামোড় টা রাগের বসে দিয়েছিল সেই কামোড়ের দাগ। আহফিন আলতো করে দুইটা আঙ্গুল রাখল। তূবা জ্বালায় হয়তো ঘুমের ঘোরে কপাল কুঁচকে এনেছে। তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে নেয় সে। অবাক নয়নে তূবা কে দেখতে লাগল সে। মেয়েটার দিকে তাকালে তার বুকটা কেন যেন শান্ত হয়ে যায়।
“মেয়ে তুমি কি জাদু জানো? নাকি মায়া শক্তি আছে তোমার? কি করে আমার অশান্ত বুকটা কে শীতল করে দিতে পারো?”
আহফিন তূবার কপালের কোণায় লেগে থাকা চুল গুলি উপরে তুলে দিল। নরম গালে নিজের দুই আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে লাগল।
তূবার কপাল কুঁচকে এসেছে দেখে আহফিন ফের তাড়াতাড়ি ঘুমের অভিনয় করে আগের মতো শুয়ে পড়ল। তূবা পিটপিট করে চোখ খুলে দেখতে পায় আহফিন কে। হাল্কা লোমযুক্ত সাদা বুকের এক কিনারে শুয়ে আছে সে। লোকটাও এক হাতে তাকে আঁকড়ে রেখে ওপাশে মুখ করে ঘুমিয়ে আছে। তূবা আহফিনের ভারি হাতটা কোনো রকম সরিয়ে উঠে পরল। আজ দেরি হয়ে গেছে উঠতে। মাঝ রাতে খুব ঘুম পাচ্ছিল তার। তখন হয়তো অতল ঘুমে চলে গিয়েছিল। তূবা তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে গেল।
ফ্রেশ হয়ে এসে টেবিলের উপর চোখ দিল। কিন্তু কালকের মতো আজ আর কোনো খাম নেই। তূবা বুঝতে পারছে না কি করা উচিৎ তার। তাই কিছু না ভেবে ব্যালকুনিতে চলে গেল সে। এখান থেকে নিচের খোলা গাছ যুক্ত জায়গাটা বেশ সুন্দর লাগছে। তূবা স্লান হাসল। নীরবে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে তূবা নিজের নিষ্পল জীবন নিয়ে চিন্তা করতে লাগল।
অনেকক্ষণ পাড় হয়। হঠাৎ নিচ থেকে আসা ঘড়ির শব্দে তূবার ভাবান্তর হয়। সে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখল লোকটা তখনো ঘুমে। তূবা ভাবল ‘আজকেই তো আমার টাকা লাগছে না। দরকার পরলে হাতে যেটা আছে সেটা দিয়ে চলে যাবে। আর আমাকে যেহেতু কালও আসতে হবে টাকাটা একেবারে নিলেই হলো।’ এই ভেবে তূবা ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পরল।
নিচে নেমে এক মহিলা কে দেখে থমকে যায় তূবা। ভূত দেখার মতো চমকে উঠে দুই পা পিছিয়ে নিল। জামা ফাঁক করে বুকে থুথু দিয়ে সেখানে হাত রাখল। ভয়ে ভয়ে বলল “আপনি কে?”
মধ্যবয়স্ক মহিলা জবাব দিলেন না। কিন্তু তিনি তাকে দেখে অবাক হয়েছেন বলে মনে হচ্ছে না।
তূবা চিন্তা করল “একটা লোক কি নিজের মা যেখানে থাকে সেখানে কোনো মেয়ে কে এনে তার সাথে রাত কাটাবে?” তূবা চিন্তা করে পারছে না। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিল মহিলার উপর। গলা পরিষ্কার করে বলল,
“আপনি কি ওই লোকটার মা?”
“না।”
“ও।”
“তোমারই আসার কথা ছিলো বোধ হয়। তাই আহফিন বাবা আমায় দুই জনের রান্না করতে বলেছে। আমি তার একার রান্না ছাড়া আর কারো রান্না করি নি। তাই কাল জিজ্ঞেস করেছিলাম কেউ আসবে কি না সে বলেছিল হ্যাঁ। কিন্তু রান্নাঘরে গিয়ে দেখি যেমন খাবার তেমনি। কেউ খায় নি।”
মহিলার কথায় তূবার কপাল বিস্ময়ে কুঁচকে এলো। লোকটা কি না তার জন্যে খাবার রান্না করতে বলল? কিন্তু কেন? কিন্তু লোকটার নাম টা শুনে ভালো লাগল তূবার। খুব সুন্দর একটা নাম উনার। তবে রান্না করিয়েও খেতে বলেনি কেন?
“তুমি আহফিন বাবার বান্ধবী তাই না?”
তূবা কি বলবে বুঝতে পারছে না। আমতাআমতা করে হ্যাঁ জবাব দিল। মহিলাটা মুচকি হাসলেন। তূবাও হাসি বিনিময় করে বলল “আমি আসি।”
অমত জানিয়ে মহিলাটা বললেন,
“এখনি কোথায় যাবে? বসো খেয়ে তারপর যাও। আমি আহফিন বাবা কে ডাক দেই।”
“উনি তো ঘুমাচ্ছে।”
মহিলার মুখটা কালো হয়ে গেল। তূবার আগ্রহ হলো। মনে হলো মহিলাটা কিছু জানে, বলতে চায়। তূবা জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে আপনার?”
“আহফিন বাবা এমন ছিলো না। নিয়ম মেনে সব করত। কিন্তু এখন আগের মতো নেই। কখন কি করে নিজেও হয়তো জানে না। কোনো নিয়ম নেই যখন যা মন চায় করছে। কিছুই তার ঠিক নেই। কোনো দিন একটা সিগারেট খায়নি পর্যন্ত সে। একা একা ভালো ছিল পড়াশুনা ব্যবসায় নিয়ে। সেই ছোট থেকে দেখে আসছি তাকে। নিজের হাতে পিঠে বড় করেছি। জীবনে বড় ধাক্কা পেয়ে ছেলে টা এখন এমন পথে। মদ খায় কোনো নিয়ম কানুন নেই। খাওয়া দাওয়া নেই, নিজের প্রতি কোনো যত্ন নেই। কেমন যেন অচেনা হয়ে গিয়েছে।”
বলেই তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে দিল। তূবার আগ্রহ জাগল খুব। কেন একজন ভালো মানুষ এমন হয়ে যাবেন? কি এমন ধাক্কা? তূবা জানার জন্যে কিছু বলতে যাবে তখন তার রিংটোন বেজে উঠল। বাসা থেকে কল এসেছে। তূবা ভীত স্বরে বিদায় নিয়ে ওখান থেকে বের হলো। কল টা কেটে দিয়ে সে কল দিল। তুসি ফেন ধরেই বলতে লাগল,
“আপা তুই আসছিস না কেন? কত বেলা হয়ে যাচ্ছে। এখনো কি তোর কাজ শেষ হয়নি?”
“না তুসি আমি চলে আসছি। দেরি হবে না।”
“হুম তাড়াতাড়ি আয়।”
তূবা গেইট থেকে পাড় হয়ে পিছন ফিরে বাড়িটা দেখল। দুই সেকেন্ড তাকিয়ে ব্যাগ ঠিক করে হাটা শুরু করল।
রিকশা চলছে নিজ গতিতে। তূবা বসে বসে ভাবছে। আজকাল ভাবনায় তার সঙ্গী। কিন্তু চোখ দুটি একজন কে খুঁজে চলছে। যাকে তার দরকার। এলাকা দিয়ে যখন যায় কাঙ্ক্ষিত লোকটা কে পায় না। হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে। কিন্তু তাকে যে খুব দরকার ওর।
হাতে থাকা টাকা দিয়ে তুসির জন্যে কিছু খাবার নিয়ে গেল তূবা। যেতেই অভিমানী স্বরে বলল,
“সারারাত আসো না সকালেও কল দিয়ে আনতে হয় তোমাকে কাজ থেকে। কি এমন কাজ তোমার এতক্ষণ।”
পাশ থেকে শিরিন বলে উঠলেন,
“আল্লাহ জানে তোর বইনে কি এমন কাম করে। আল্লাহ জানে কার কাছে যায়। কি অকাম করে।”
তূবা শান্ত থেকে তূসির গালে হাত রেখে বলল,
“আমি তোকে বলেছিলাম না আমার আসতে দেরি হবে। তুই ঠিক মতো খেয়ে নিবি। অপেক্ষা কেন করিস বল তো?”
“তোমাকে ছাড় আমার খেতে ভালো লাগে না আপা।”
“এমন আর করবি না। যখন খাওয়ার দরকার খেয়ে নিবি। আর এই নে এই গুলি তোর।”
বসা থেকে উঠে তূবা মায়ের দিকে তাকাল।
“যাই করি না কেন দুই বেলা ভাত খেতে তো পারি, বোনের ঔষধ কিনতে পারি, সংসারের খরচ চালাতে পারি। আর কি চাই? আর তোমার এই কথা গুলি কবে বন্ধ হবে বলো তো।”
“করবিই তো। যা মন চায় করতি না? এমন খাওনের দরকার নাই আমরার। না খাইয়া মইরা যাইয়াম তোর অকাম করনের দরকার নাই। আল্লাহ নেয় না কেরে আমারে?”
শিরিন কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলেন আঁচলে মুখ দিয়ে। অন্য রুমের দরজার সামনে গিয়ে তিনি কাঁদলেন। তিনি বুঝেছেন তূবার রাতের বেলায় কিসের নাইট ডিউটি। কিন্তু তবুও অসহায়, জীবনের কাছে।
তুসি বলল,
“আপা রাগ করিস না আম্মার কথায়। আম্মা না কাঁদে।”
মেকি হাসির ব্যর্থ চেষ্টায় তূবা বলল
“জানি আমি। আর আম্মার কথায় কিছু মনেও করি না। উনি কঠিন দেখাতে চাইলেও পারেন না। তুসি রে মানুষের এক জীবনে সব চাওয়া পাওয়া পূরণ হয় না। আর এই দুনিয়াটা বড্ড কঠিন। এখানে কঠিন না হলে চলা যায় না রে। নরম হহলে ভাবে দূর্বল। তাই পায়ে দুমড়ে মুচড়ে তারা চলে যেতে চায়। এই কারণে কঠিন হওয়াই ভালো। তবেই এখানে টিকা যায়। তুই এসব বুঝবি না। এখনো অনেক ছোট তুই। বড় হো দেখবি দুনিয়া, সেখানে থাকা নানান রূপী মানুষদের চিনে ফেলেছিস। এবার তুই থাক আমি গোসল সেরে আসি।”
“আচ্ছা আপা।”
বুক ফাটা কষ্ট নিয়ে তূবা বাথরুমে ছুটল।
আহফিন ঘুম থেকে উঠে দেখে ১২ টার উপরে বাজে। আশেপাশে তাকিয়ে তূবা কে সে পেল না। নিচে নেমে ফরিদা আন্টি কে জিজ্ঞেস করল তূবার কথা। তিনি জবাব দিলেন,
“সে তো চলে গেছে।”
“চলে গেছে..”
“হ্যাঁ বাবা। বলেছিলাম বসতে বসে নি।”
“তোমায় কিছু বলে গেছে আন্টি?”
“না তো।”
“আচ্ছা ঠিকাচ্ছে।”
“আহফিন বাবা মেয়েটা দেখতে কিন্তু মিষ্টি।”
আহফিন শুধু একটু হেসে উপরে চলে গেল।
“ডেমিট আজও চলে গেল? খাম রাখিনি ভেবেছি অপেক্ষা করবে। কিন্তু তা না করে আজও চলে গেল? স্টুপিড মেয়ে একটা।”
তূবা বাথরুম থেকে গামছায় চুল পেঁচিয়ে বের হতেই ফোন বেজে উঠল।
চলবে♥
#বর্ষার_এক_রাতে
#সাদিয়া
৫
আহফিন কল দিয়েছে। তূবা তার কল পেয়ে চিন্তিত। ভাবছে এখন কি আবার যেতে হবে নাকি? তূবা ফোন নিয়ে একতলা বাড়ির ছাদে চলে গেল। এত না ভেবে সে কল টা ধরল।
“হ্যালো।”
“তোমাকে কি আমি যেতে বলেছিলাম?”
“…
“কি হলো? টাকা না নিয়েও চলে গেছো।”
“আমি ভেবেছি কাল এক সাথে নিয়ে নিব। আর আপনি ঘুমাচ্ছিলেন।”
“আগেআগে ভাবতে যাও কেন তুমি? এত বেশি বেশি ভাববে না। ডেমিট।”
আহফিন কল কেটে দিল। তূবা কিছু বুঝল না। মনে মনে বিড়বিড় করল “কি অদ্ভুত লোক।” তারপর নিচে গেল।
রাগে কিটিকিট করছে আহফিন।
“এই মেয়ে আমাকে যেমন শীতল করে তেমনি উষ্ণ করে তুলে। কি অদ্ভুত মেয়ে।”
খাবারের জন্যে ফরিদা আন্টি ডাকতে এলেন আহফিন কে।
“নিচ থেকে ডাক দিতে আন্টি আমি চলে যেতাম।”
“তুমি যে কাল রাতে খাও নি। কি মনে করেছো বলো তো। যার জন্যে খাবার বানাতে বললে সেও খায়নি। যা রান্না করে গিয়েছি তাই আছে।”
“আন্টি তুমি জানো না আমার কথা না শুনলে, মুখের উপর কথা বললে রাগ হয়ে যায়। তাই তখন বলি নি আর পরে ভুলে গিয়েছি।”
“আচ্ছা এখন খাবে নিচে চলো।”
“আমি একটু অফিস যাবো।”
“খেয়ে তো যাবে।”
“আচ্ছা। যাও তুমি। তোমার সাথে কি আর পারা যাবে।”
দিনটা তূবার একটু ভালোই কাটে। ও বাড়ি থেকে এসে গোসল করেই লম্বা একটা ঘুম দেয়। দুপুরে উঠে খেয়ে শুয়ে তুসির সাথে গল্প করে। বিকেল বেলায় রান্নায় একটু সাহায্য করতে গেলে শিরিন দেন না করতে। তুসির মাথায় বিলি কাটতে কাটতে নিজের দুঃখে হারিয়ে যায়। তবুও ভালোই লাগে এই সময় টা তার। প্রতিদিনকার মতো আজও তূবা নিজের চাকরির পথে ছুটল। আহফিন আজ তেমন কথা বলে নি। কোথা থেকে এসে যেন বলল,
“খাবার খেয়ে এসেছো?”
“….
“কি হলো?”
“হু।”
“মনে হচ্ছে না।”
“…
“নিচে চলো খাবে।”
“পেট ভরা আছে।”
“তূবা বারবার বলতে ভালো লাগে না। চলো।”
“আপনি যান আমার খিদে নেই।”
বলে তূবা পিছন ফিরে গেল। আহফিন তূবার কাছে গেল। বাহুতে বেশ শক্ত করেই চেঁপে ধরল।
“তুমি যাবে না জোর করে আমায় নিতে হবে?”
“ছাড়ুন হাতটা।”
“….
“যাচ্ছি ছাড়ুন।”
আহফিন হাতটা ছেড়ে দিল। তূবার সাথে সেও নিচে গেল। তূবা চারপাশ দেখছে। তখন আহফিন বলে উঠল,
“সকালে যাকে দেখেছিলে তিনি এখন নেই। তাই না খুঁজে খেয়ে নাও।”
“উনি আপনার কে হয়?”
“….
আহফিন কিছু না বলে তূবার দিকে তাকাল। তূবা চোখ নামিয়ে ফেলল সাথে সাথে। কি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি!
“এসব তোমার জানার কথা না। যে কাজের জন্যে এসেছো তাতে শুধু টাকাই নিতে পারো। এর বেশি কিছু না। চুপচাপ খেয়ে উঠো।”
তূবার রাগ হলো। মনে মনে বলল “আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিল লোকটা? খাডাসের মতো কথাবার্তা।” নাক ফুলে গেল তূবার। ওপর পাশে বসে থাকা আহফিন আড়চোখে কপাল কুঁচকে দেখল তাকে। লাল হয়ে গেছে তূবার মুখ। আহফিন ঠোঁট টিপে হাসল।
লোকটা আসছিল না দেখে তূবা ব্যালকুনিতে ছিল। বাতাসে লম্বা চুল এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল। তূবা কালো একটা শাড়ী পরে আছে। পাতলা একটা শাড়ী। খোলা চুল দমকা হাওয়ার সাথে সাথে নেচে চলছে আপন মনে।
“খুলে দাও তুমি এই চুলের বাঁধন
অবাধ্য হয়ে না হয় সে বাতাসেই উড়ুক।
ইচ্ছে হয় হাড়িয়ে যাই
ওই খোলা চুলের গভীরতায়।
খোলা চুল তুমি বলে দাও
কেনো মুগ্ধ না হবে কেউ তোমার মায়ায়।”
‘লম্বা এক গুচ্ছ কালো কেশ পুরুষের মন কেও প্রভাবিত করতে পারে।’
আহফিন তূবাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। তূবার পেটে টেনে ধরে আহফিন নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। চুলের মাঝে মুখ ডুবাল। তূবার ঘাড়ে নাক ঘষল কয়েকবার। ছোট ছোট কয়েকটা চুমু দিল তার উষ্ণ ঠোঁটে। তূবা বরাবারের মতো বোবা।
আহফিন তার ঘাড়ে গভীর ভাবে একটা কিস করে চলে গেল। সে যেতেই তূবা ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে দিল। চোখ গুলি চিকচিক করে উঠল তার।
সামান্য সময়ের ব্যবধানে আহফিন আবার ফিরে এলো। তূবা তখনো ওখানে আগের মতোই দাঁড়িয়ে ছিল। আহফিন গিয়ে তূবার ঘাড়ের চুল গুলি সরিয়ে এক পাশে রাখল।
তূবা বুঝতে পারে না এই লোকের চলা ফেরা। হঠাৎ ঘাড়ে ঠান্ডা কিছু অনুভব করল। আহফিন আলতো হাতে নিজের দেওয়া কামোড়ের স্থানে মলম লাগিয়ে দিল। তারপর তূবার দুই বাহুতে ধরে নিজের দিকে ফিরায়। দুই গালের পাশে দুই হাত রেখে আহফিন তূবার চিকচিক করা চোখ মুখ দেখতে লাগল। চোখে তার নেশা, মনে মাতাল করা অনুভূতি। সে বুঝে না এত অনুভূতি কোথা থেকে চলে আসে তূবার কাছে থাকলে। আহফিন নেশাভরা চোখ নিয়ে তূবা কে দেখছে। সমান তালে তূবাও আহফিনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের ভাষা বুঝার চেষ্টা করছে। নির্লিপ্ত চাউনি।
নরম কোমল স্বরে আহফিন বলল
“কি আছে তূবা তোমার মাঝে? কেন এত টানে আমাকে তোমার দিকে? দুই দিনে কি এমন করলে আমাকে? কোন তাবিজ মন্ত্র দিয়ে বশীভূত করলে আমায়? বলো তূবা বলো।”
“….
তূবা কিছু না বলে তার চোখের দিকে অগাধ দৃষ্টি দিয়ে অবলোকন করছিল। তার ভেতর অদ্ভুত রকম কিছু একটা হচ্ছে।
আহফিন আস্তেআস্তে তার মুখ এগিয়ে দিল তূবার দিকে। তূবা চোখ বন্ধ করে নিল। তূবার নিবদ্ধ চোখ মুখ দেখে আহফিনের ভেতরে আরো শিহরন বইতে লাগল। আলতো করে সে তূবার নরম ঠোঁট স্পর্শ করল। তার অতল ভূতিতে আস্তেআস্তে উপনীত হলো। তূবার গরম নিশ্বাস আহফিন বুক ভরে নিচ্ছে।
তূবার গলায় লেগে থাকা চুল গুলি সরিয়ে দিয়ে আহফিন সেখানে ঠোঁটের পরশ দিল। তূবা নিজের শাড়ীতেই খামছে ধরল। লোকটার স্পর্শ আজ অন্য রকম। কেমন আলাদা আলাদা।
আহফিন কিছু সময় পর তূবা কে কোলে তুলে নিল। নেশাগ্রস্থের মতো বলল,
“কালো শাড়ী তে আমার তূবা কে এক টুকরো বিষণ্ণ দেখাচ্ছে।”
“..
“তূবাকে তো টকটকে লাল রংয়ে মানায়। সেই প্রথম দিনের টকটকে লাল রংয়ের শাড়ী।”
আহফিন তূবা কে নিয়ে বিছানায় চলে গেল। কালো শাড়ীতে বিষন্ন লাগছে বলে সে তার আঁচল খুলে নিল। তূবার কানের লতির খুব কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল “তূবা মানে আমার নেশা। মাতাল করা এক নেশা।”
আহফিন আজ ৮ টায় উঠে গেছে। তূবা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আহফিন খালি গায়ে সোফায় বসে আছে। পরনে টাউজার টা সুঠাম দেহের নাভির নিচে পড়ে আছে। তূবা চোখ সরিয়ে নিল। নিজেকে ঠিকঠাক করে মাথা নুয়িয়ে চলে গেল পাশ দিয়ে। আহফিন তাকে ডাকল।
“তূবা।”
“…
“এদিকে আসো।”
তূবা চুপচাপ ওখানে যায়।
“খাম টা নাও। আর প্রয়োজন হলে কল দিবে আমায়।”
“ধন্যবাদ।”
“আজ বোধ হয় তোমাকে রাতে আসতে হবে না। আমি আজ থাকব না। আর হ্যাঁ ভুলেও লিলার বলা কোনো ছেলের সাথে দেখা করতে যাবে না।”
কথাটা শেষ করেই আহফিন তার গাল দুটি চেঁপে ধরল। দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“তাহলে আহফিন চৌধুরী কে তুমি খুব ভালো করেই চিনবে। এবার আমি আর কিছু বরখাস্ত করব না। ভুলো টা এটা।”
আহফিন তূবার গাল ছেড়ে দিল। সে তার দিকে ভ্রুকুঞ্চন করে তাকাল গালে হাত দিয়ে। লেগেছে খানিক।
“চলার মতো প্রয়োজনীয় টাকা দিয়েছি ওখানে। তাই আমি যা বললাম তার একটা কথাও যেন নড়চড় না হয় তূবা। সাবধানে থাকবে।”
আহফিন এবার তূবার গালে আলতো হাত রেখে কপাল এগিয়ে আনল। কপালে গভীর কোমল একটা পরশ পরল তূবার। এই প্রথম হয়তো লোকটা তার কপালে চুমু খেলো। তূবার কাছে বিষয়টা কেমন যেন অন্যরকম লাগল। ভেতরে দৌড়ে কিছু একটা ছুটে গেল। তূবা আহফিনের দিকে তাকিয়ে রইল। তার এমন কাজে তূবা খুব অবাক হয়েছে।
আহফিন নীরবে ওয়াশরুমে চলে গেল। তূবা তখনো কেন যেন ঠাই বসে আছে। চোখের পাতা পড়ছে না তার। শূন্যে এখনো তাকিয়ে আছে সে। লোকটা আসলেই অদ্ভুত। অদ্ভুত তার কাজকর্ম। কখন কি করে বুঝা যায় না। ভেতরে কেন যেন লোকটার প্রতি একটা টান অনুভব করছে সে।
চলবে♥