বর্ষার এক রাতে,পর্ব-২,৩
সাদিয়া
২
সকালের আলো চারদিক আলোকিত করে তুলেছে। কিন্তু তার অন্ধকার জীবনে এই দিনের আলো আলোকিত করতে পারবে না। হেটে হেটেই তূবা ওখান থেকে এসেছে। ভেতরের মাঝে কি যে চলছে। নিজের উপর ঘৃণা হলেও তাচ্ছিল্য হেসে তা উড়িয়ে দিল। ব্যাগ থেকে খাম টা বের করে তূবা টাকা গুলি হাতে নিল। গুনে দেখল ৩০ হাজার টাকা। খুব অবাক হয় সে। এত টাকা? এক রাতের বিনিময়ে ৩০ হাজার টাকা কি করে দিল ভাবছে তূবা। “ঠিকি মনে করেছিলাম এই লোক সুস্থ নয়।” টাকার দিকে তাকিয়ে বুক ভরা কষ্ট নিয়েও খুশিতে তূবা হেসে উঠল। লোকটা কে নিয়ে ভাবছে সে। আহ কি দুনিয়া আর দুনিয়ার লোক। তূবা আবারও হেটে চলে বাড়ির দিকে।
লিলা কল ধরছে না। আহফিন রাগে ফোন টা বিছানার উপর ছুড়ে ফেলল।
“ডেমিট কাল বেশি ড্রিংক হয়ে গিয়েছিল। মেয়েটার নাম পরিচয় কিছুই জানা হলো না। আর এই লিলা পিলা কেন কল ধরছে না।”
নিজের অস্থিরতা দেখে আহফিন নিজেকেই প্রশ্ন করল
“ওয়েট আমি মেয়েটার জন্যে এমন করছি কেন? ওর কাজ করেছে টাকা নিয়ে গেছে ব্যস। কিন্তু..”
থেমে গেল আহফিন। আবার বিড়বিড় করতে লাগল।
“দেখে তো ভদ্রই মনে হয়েছে। ওমন মেয়ে এসব কেন করব? প্রথমই বোধহয় আমার কাছে নিজেকে তুলে দিয়েছে। ঘটনা এমনটাই সাক্ষী দিচ্ছে। কিন্তু মেয়েটার মুখ বিষণ্ণ ছিল। কৌতূহলও ছিল। সবচেয়ে বড় কথা সে মায়াবী ছিল।”
তূবা সকালের খাবার নিয়ে যায়। সাথে বাড়িতে যা যা ছিল না সব। যেটা জরুরি তা হলো বোনের ঔষধ। বাড়ি ঢুকতেই শিরিন বলে উঠলেন।
“এত বাজার কই থেইকা আনছোস?”
“দেখে নাও যা যা লাগবে সব আছে কি না।”
“আমি তোরে কি জিগাইলাম?”
ব্যাগ থেকে তূবা ১০ হাজার টাকা বের করে শিরিনের হাতে তুলে দিল। আর বলল
“এই টাকা টা রাখো। যা দরকার খরচ করো আর বাকিটা তুসির চিৎকার জন্যে রেখে দাও।”
এত টাকা পেয়ে শিরিন অবাক।
“ওত টাকা কই পাইছোস তুই? হ্যাঁ রে তূবা হাছা কইরা কো তো আমারে।”
“টাকার দরকার এনে দিয়েছি। কোথা থেকে আনছি তা দেখার বা জানার দরকার নেই। নাস্তা এনেছি দেখো ওখানে।”
তূবা সুরসুর করে চলে গেল সোজা বাথরুমে। শাওয়ারের নিচে বসে ভিজতে লাগল। নিঃশব্দে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পরতে লাগল মুখ বেয়ে। দেখার শুনার বুঝার কেউ নেই। তার জীবন টা খুব অসহায়।
এটাই তার ভাগ্য।
লিলা কে কল করেই যাচ্ছে আহফিন কিন্তু তুলার নাম নেই। অবশেষে ঘুম জড়ানো কন্ঠে সে বলে উঠল
“আব্বে কে রে শালা ঘুমটাই নষ্ট করে দিলি।”
“আমি আহফিন চৌধুরী বলছি।”
লাফ দিয়ে লিলা বিছানা ছেড়ে উঠে বসল।
“আপনি? বলুন স্যার কি বলবেন?”
“কাল যে মেয়েটাকে আপনি পাঠিয়েছিলেন আমি তার নাম ঠিকানা জানতে চাই।”
“…
“কি হলো?”
“আমি আপনাকে ম্যাসেজ করে বলে দিচ্ছি সব।”
“তাড়াতাড়ি করবেন।”
“হুম।”
লিলা ফোন রেখে দুম মেরে বসে ছিল কিছুক্ষণ।
তূবা অনেক সময় পাড় করে বাথরুম থেকে ফিরে এলো। তার বোন তুসি এখনো ঘুমাচ্ছে। তূবা তার দিকে তাকিয়ে রইল অনেকক্ষণ। ফোনে কল আসতেই ব্যাগ থেকে বের করে রিসিভ করল।
“হ্যালো লিলা আপু বলো। আমি তোমাকে কল করতাম।”
“তূবা তুই কপিশপে আয় দেখা করব।”
“আচ্ছা।”
বলতেই লাইন কেটে গেল। তূবা ফোন রেখে বিছানায় বসে পরল। শরীর টা বড্ডা ক্লান্ত লাগছে, সারা শরীরে ব্যথা। শিরিন এসে বললেন
“খাইতি না?”
“না খিদে নেই তেমন।”
“তাইলে ডাব্বামারা খাওন আনছোস কেরে?”
“তোমরা খাও।”
“তূবা সত্য কইরা কো তো তুই কি কাম পাইছোস এহন?”
“তোমায় বলছি তো এত কিছু জানতে হবে না তোমার। আমি এখন থেকে নাইট ডিউটির একটা চাকরি পেয়েছি। বাঁচতে হলে সেটাই করতে হবে।”
শিরিন রাগে তূবা কে বাজে ভাবে কিছু কথা বলে চলে গেলেন। এতে তূবা কষ্ট পেল না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দিল। নিজের মা হলে বোধ হয় আরো বেশি বলতো জেরা করত।
শিরিন তূবার সৎ মা। শিরিনের মেয়েই তুসি। কিন্তু তূবা নিজের বোনই মনে করে তাকে খুব আদর করে। তুসিও তূবা বলতে প্রাণ। তূবার বাবা এক বছর হয় মারা গেছেন। দুঃখের ভয়াবহ সময় তখন থেকেই শুরু।
তূবার দিকে তাকিয়ে লিলা বলে উঠল।
“কিছু খেয়েছিস?”
“না খিদে নেই।”
“আরে কোনো পিল খেয়েছিস?”
“…
লিলা ব্যাগ থেকে একটা ইমার্জেন্সি পিল এগিয়ে দিল।
“এটা খেয়ে নেয়।”
তূবা বিনাবাক্যে তা খেয়ে নিল।
“লোকটা আমায় কল দিয়েছিল।”
“….
“তোর নাম ঠিকানা চেয়েছে।”
তূবা ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে রইল লিলার দিকে।
“আমি একটু আগেই তোর নাম্বার দিলাম।”
“…
তূবা তখনো চুপ।
“উনি হয়তো তোকে আবার ডাকতে পারেন।”
তূবা এবার তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে হাসল।
“লিলা আপু উনি এক রাতে আমাকে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন।”
“দিবেই বড়লোক উনি। টাকার অভাব তেমন নেই।”
“এই টাকা টা তুমি রাখো।”
“ওটা তোর কাছেই রেখে নে। দরকারে কাজে লাগবে। আর আমাকে এখন উঠতে হবে। বিষয়টা সুন্দর করে সামলে নিস। রাহান কল দিচ্ছে বারবার।”
“আচ্ছা।”
তূবা কপিশপ থেকে বের হবে তার আগেই ফোনে কল এলো।
“হ্যালো।”
“তূবা বলছো?”
“….
“হ্যালো।”
“বলুন।”
“রাতে গাড়ি পাঠিয়ে দিব তোমার বাসার সামনে চলে এসো।”
তূবা কিছুক্ষণ থম মেরে থেকে বলল
“বাসার সামনে গাড়ি পাঠাতে হবে না। আমি চলে যেতে পারব।”
আহফিন কিছু না বলে কল কেটে দেয়। তূবা ফোনের দিকে তাকিয়ে সেটা ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে রওনা দিল। গিয়ে একটা ঘুম দিবে। রাত দিন না ঘুমিয়ে তো আর মানুষ বাঁচে না।
তূবা হাটছে। তার মনে প্রশ্ন ঘুরছে। লোকটা কেন বলল সে ভার্জিন? ধর্ষিতা কি ভার্জিন হয়? তূবা কিছু মেলাতে পারছে না। মাথা ব্যথা উঠে গেছে তার এত চিন্তায়।
বিকাল বেলা তূবা ঘুম থেকে উঠল। তুসি তখন হুইল চেয়ারে বসে ছিল।
“আপা তোমার ঘুম হয়ে গেছে?”
“হ্যাঁ বোন।”
“আমি এখনো খাই নি। উঠো একসাথে খাবো।”
“সে কি তুই এখনো খাস নি? এতক্ষণ না খেয়ে ছিলি কেন?”
শিরিন এসে বললেন,
“কত কইরা কইছি ভাত খাইয়া ঔষধ খা খাইলোই না তোর লাইগা। কইছি ডাক দেই এইডাতেওও হে না করছে।”
“তুসি না কখনো এমন করবি না।”
“আম্মা যাও আমার আর আপার জন্যে ভাত নিয়া আসো।”
শিরিন চলে গেলেন খাবার আনতে।
ঘড়ির কাটা যখন সাতটায় তখন আহফিনের নাম্বার থেকে কল এলো। বাটন ফোনের ছোট্ট স্কিনে অন্ধকার নাম ভাসল। তূবা কল ধরেই বলল “আসছি।” তারপরই কল কেটে দিল। বের হওয়ার সময় তুসি বলল,
“আপা কই যাও?”
“কাজে।”
“রাতে কিসের কাজ আপা?”
তূবার বলতে ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে। নিজেকে সামলে কোনো রকম বলল,
“নাইট ডিউটি। তুই বুঝবি না। আর আমার ফিরতে সকাল হবে খেয়ে ঔষধ খেয়ে ঘুমাবি কিন্তু।”
“আপা”
“বল। তোর কিছু লাগবে?”
“তোমার অনেক কষ্ট হয় না সারারাত কাজ করতে?”
বুক ফেটে আসছিল তূবার। শুকনো হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে তূবা বলল “না তুসি। আমি আমার বোনের জন্যে সব করতে পারি। আসছি। আমার লক্ষ্মী বোন।”
তূবা তুসির কপালে চুমু দিয়ে উঠে দাঁড়াল। কান্না সব গলায় এসে দলা পাকিয়ে গেছে কষ্ট হচ্ছে খুব। কিন্তু দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলে দিয়ে নিজের গন্তব্যের দিকে চলল। কুচকুচে অন্ধকার এক গন্তব্য।
চলবে♥
#বর্ষার_এক_রাতে
#সাদিয়া
৩
আমার এখন সমস্তটাই স্মৃতিসৌধ,
হৃৎপিন্ডে পিন ফোটানো
কালো ব্যাজের মৌন বিষাদ,
একুশে ভোর, নগ্ন পায়ে শহীদ মিনার,
আমার এখন সমস্তটুক্ এক মিনিটের নীরবতা।
দু’চোখ বেয়ে রাত্রি ঝরে, পাংশুটে রাত,
রক্তমাখা চাঁদের দেহে জোৎস্না উধাও,
উল্টে পড়ে রোদের বাটি,
আমার এখন আকাশ জুড়ে দুঃস্বপ্নের দালানকোঠা।
উঠোনে সাপ
অবিশ্বাসের ভীষণ কালো রক্তজবা,
লকলকে জিভ,
এখন আমার সমস্তটাই লখিন্দরের লোহার বাসর।
আঙুলগুলো ঝ’রে পড়ছে হাত থেকে ফুল,
ঘরের পাশে লক্ষ্মীপ্যাঁচার ধাতব গলা,
আমার এখন শঙ্খচিলের কান্নাভেজা দুপুরবেলা,
শূন্য খা-খা একাকী মাঠ,
ঘাসের ডগায় নীল ফড়িং-এর নিমগ্নতা।
আমার এখন হৃদয় শুধু হৃদয় বোলে
দু’হাত মেলে চাতক পাখি…
আমার এখন বুকের ভেতর
কবর শুধু কবর খোঁড়ার ভারি শব্দ।
দু’চোখ বেয়ে সকাল ঝরে, উল্টে পড়ে স্বপ্নবাটি।
আমার এখন নিজের মধ্যে নিজের কফিন,
সমস্ত রাত করাতকলের কষ্টধ্বনি-
এখন আমার সমস্তটাই পিরামিডের মগ্ন মমি
রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর এই কবিতাটা তূবার মনে পড়ছে খুব। আজ জীবিত থেকেও সে মৃত। ভাবতে ভাবতে তূবা আনমনে হেটে চলছিল। তখন একজন লোক বলে উঠলেন, “গাড়িতে উঠে বসুন। আপনাকে স্যার নিয়ে যেতে বলেছেন।”
তূবা লোকটা কে ২ সেকেন্ড সময় নিয়ে দেখল। আর কিছু না বলে সে গাড়িতে উঠে পড়ল। আরেকটা কালো রাত চলে এলো জীবনে। আবার আঁধার। ঘুটঘুটে অন্ধকার। না জানি এই রাতের ভিড়ে কবে সে বিলুপ্ত হয়ে যায়!
আহফিন ড্রয়িংরুমে বসে ড্রিংক করছে। চোখের পাতা গুলি পড়ছে না তার। ফেলে আসা দিন গুলি নিয়ে সে চিন্তা করল। রাগে শরীর টা কেমন করছে। এক টানে গ্লাসের ড্রিংক শেষ করে জোরে নিশ্বাস ফেলল কয়েকটা। সোফার মাথায় এক হাত ছড়িয়ে দিয়ে হেলান দিল। আজকাল ভেতরটা বড্ড জ্বলে। রাগে না কষ্টে তা বুঝতে পারে না।
তূবা কলিংবেল বাজালে আহফিন এসে দরজা খুলে দিল। একনজর দেখল তাকে। পথ ছেড়ে দাঁড়ালে তূবা ধীরগতিতে ভেতরে ঢুকল। আহফিন দরজা লাগিয়ে দিয়ে তূবা কে সোফায় বসতে বলল। তারপর কিচেনে গিয়ে কিসব করতে লাগল। তূবা আড়চোখে কয়েকবার দেখলও। অল্প সময় যাওয়ার পর আহফিন দুইটা মগ নিয়ে এলো। একটা নিজের হাতে রেখে অপর টা তূবার দিকে এগিয়ে দিল। মাথা খানিক নিচু করে তূবা বড়বড় চোখ নিয়ে মানুষটা কে দেখে নিল। আহফিন মগে দুই চুমুক দিয়েও তূবাকে ওভাবেই বসে থাকতে দেখে বলল
“কফিটা নিশ্চয় আমি তোমাকে ঠান্ডা করতে দেই নি। খাও।”
“….
“কি হলো?”
“আমার লাগবে না।”
“তূবা মুখের উপর কথা আমার ভালো লাগে না। তাই যা বললাম করে নাও।”
এতবার না করতেও তূবার কেমন লাগছে। তাই টেবিল থেকে মগটা তুলে নিল সে। কিন্তু মুখে দিতেও ইতস্তত বোধ করছে। কারণ যতবার সে চা কফি খায় প্রথমবারই ঠোঁট বা জিহ্বা পুড়ে ফেলে। পরে দেখা যায় ভাত খেলে জ্বলে। তাই তূবা কফির মগে দুই তিনবার ফু দিয়ে চুমুক দিল। আহফিনের এই বিষয়টা বড্ড হাস্যকর লাগল। আনমনেই সে হেসে উঠল মুখ ঘুরিয়ে।
“তূবা। নাম টা বেশ সুন্দর।”
“….
“তো তূবা তুমি এমন পথ কেনো বাছলে?”
তূবা বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। সাফসাফ বলল
“আমি এখানে যে কারণে এসেছি সেটার বিনিময়ে আপনি শুধু আমায় টাকা দিতে পারেন। এর বেশি কিছুই না।”
আহফিন তখনো শান্ত ছিল। একটু পর তূবার উদ্দেশ্যে বলল,
“বসো।”
“….
হঠাৎ সে ধমক সুরে বলে উঠল “বসতে বলছি।” তূবা ভয়ে কেঁপে উঠল। এমন করে ধমক তার বাবা দিতে পারতেন। ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে তূবা বসে পড়ল।
“তোমার সাথে আমার নতুন পরিচয় তাই আবারও বলছি। এক কথা বারবার বলতে আমার মুটেও ভালো লাগে না। মুখের উপর না শব্দ টা শুনতে একদমি রাজি নই। আর এমন করবেও না। হ্যাঁ তোমাকে যেটা বলা দরকার, এখন থেকে আমি যখন তোমাকে আসতে বলব তখনি তুমি আসবে। আর লিলা নামের মেয়েটা কে আমি বলে দিয়েছি ও তোমাকে আর কারো কাছে যেতে বলবে না। কারো খুঁজ তোমার কাছে আসবে না। তুমি আমার জন্যে পার্মানেন্ট। বুঝাতে পেরেছি?”
“….
তূবা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইল লোকটার দিকে। লোকটার কথা গুলি অস্বাভাবিক লাগলেও নীরব রইল সে।
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে তূবা বিছানার উপর বসল। হাল্কা গোল্ডেন কালারের একটা নাইট ড্রেস পরনে তার। গায়ে কিছু আছে কি না বুঝারই কায়দা নেই। লোকটা তাকে একটা শপিংব্যাগ দিয়ে বলল চেঞ্জ হয়ে নিতে। সেও তাই করল। নিজেকে লোকটার হাতের পুতুল মনে হয় তূবার।
আহফিন হাল্কা ড্রিংক করে এসেছে। তূবার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখল।
“তূবা তুমি দেখতে খুব আকর্ষণীয়।”
তূবা পিছন ফিরে তাকাল। আহফিন এসে তূবার গালে চুমু দিল। তূবা দাঁত খিঁচে আনল তখনি।
আহফিন তূবার ঠোঁটের কাছে যেতে তূবা বলেই ফেলল
“আমি মদের বাজে গন্ধ নিতে পারি না। বমি আসে আমার।”
আহফিন কোনো উত্তর দিল না। তূবার ঠোঁটে খানিক স্পর্শ করল মাত্র। তারপর তার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিল। তূবা পাথরের মতো বসে রইল। “আহ রে আঁধার রাত!”
আহফিন তূবা কে চাদর সহ মুড়িয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে গেল। বাথটাবে কিছুক্ষণ বসে রইল একসাথে। আজ আহফিন তূবার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগল। মনের কৌতূহলের বাসাটা আরো বড় হয়ে গেল তার। মেয়েটা যেমন আকর্ষণীয় তেমনি কৌতূহল উদ্দীপনায় ভরপুর।
তূবা একটা সুতির থ্রীপিজ পরে বাহিরে এলো। লোকটা ঘরে নেই। তূবা ভিজে চুল নিয়ে ব্যালকুনিতে চলে যায়। আকাশে ধ্বনি হচ্ছে। ঠান্ডা বাতাস বইছে। বর্ষার সময় টা তূবা মন্দ লাগে না। তার শরীরটা ঠান্ডা হয়ে গেল। কিন্তু গরম উত্তপ্ত মনটা এই বাতাসে ঠান্ডা হওয়ার নয়।
“ভেজা চুলে তুমি,
অপরূপা নারী।
মনের পিঞ্জরে রাখিব বাঁধি,
কবু উড়িতে দিবো নাহি।
টুপটুপে চুলের পানি
যেন গভীর সমুদ্রের মুক্তমনি।
ভেজা চুলের সুভাসে
মরিব আমি বারেবারে।
নিজেকে খুঁজে চলিব তোমার ওই ভেজা চুলে।”
কয়েক মিনিট হয়েছে আহফিন তূবার পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মেয়েটা হয়তো কিছু নিয়ে ভাবছে তাই তার উপস্থিতি টের পায় নি। আহফিন তূবার এক বাহুতে হাত ধরে টেনে বিছানায় নিয়ে গেল। কালকের মতো আজও তূবা কে কোলবালিশের ন্যায় জড়িয়ে ধরে চোখ বুজল। তূবা মুখ ফিরে নিয়ে চুপচাপ শুয়ে রইল। আহফিন কি যেন মনে করে তূবার গালে একটা চুমু দিয়ে আবার মুখ গুঁজে শুয়ে পরল। তূবা তখনো চুপ। টাকা তাকে চুপ করিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এই লোকটার এমন স্বাভাবিক ব্যবহার তার একদম ভালো লাগছে না। তূবার ভেতরে নিবুনিবু একটা রাগ জন্মায় লোকটার প্রতি। এক ব্যর্থ রাগ!
চলবে♥