ফাইন্ড_নোরা #পর্ব_7

#ফাইন্ড_নোরা
#পর্ব_7
#দোলনা_বড়ুয়া_তৃষা

9.
রাত তিনটা, শিমু তার মেয়েকে নিয়ে শুয়ে আছে। ওর আজ ভীষণ মেজাজ খারাপ। মেয়ের কিছু সাইকোলজিকাল প্রব্লেমের জন্য সারাক্ষন ওকে নিয়ে টেনশনে থাকে। আজ ইন্দুর কথায় ধুম করে মেয়েটাকে রেখে দিয়ে পরে টেনশনে পড়েছে।
তাই ক্যামেরা অন করে দেখছিল। মেয়েটা কি করে। ইন্দু দেখলো মেয়েটা সোফায় পা তুলে ঘুমিয়ে পড়েছে। হাবভাব দেখে মনে হচ্ছি সে এইভাবেই ঘুমায়।
খুব মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। মেয়েটা যেন কোন কিছুই করছে না। ওর মেয়ে পানি চাইলে ওকে পানি দিলো তারপর সে গ্লাস এমন ভাবে ধরল যেন কোন ময়লা। মেয়ের সাথে কোন রকম খারাপ আচরণ না করলেও, মেয়েকে ভাত দিয়ে সে নিজেও কাচের প্লেট নিয়ে ওর পাশে বসে গেল টেবিলে খেতে। বড় মাংসের টুকরো নিয়ে৷

কাজের মেয়েরা ঘরের মালিক না থাকলে কিছুটা খবরদারী করে কিন্তু কিছু লিমিট রেখে। এই মেয়ে বোধহয় জানেই না কাজের লোক কেমন করে থাকে৷ ইচ্ছে হচ্ছিলো তখনিই গিয়ে দুইটা থাপ্পড় লাগাতে।

শিমু ফিরে এসে দেখলো খাওয়ার পরের প্লেট বাটি গুলো সব বেসিনেই রেখে দিলো।

ঘরে ঢুকেই ইচ্ছেমতো ঝাড়লো মেয়েটাকে। কিন্তু সে কোন রিয়েক্টেই করল না। যেন সে বুঝতেই পারছে না শিমু কি বলছে?

শিমু তখন দাঁড়িয়ে মেয়েটাকে সব ধুতে বলল, ও এত বাধ্য মেয়ের মতো সব করলো আর কিছু বলতেই পারলো না।

শিমু ভাবল মেয়েটার হয়ত ব্রেইনে কোন সমস্যা আছে। এইটা মনে হতেই নিজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেল।

শেষে বলল, চা দাও।
মেয়েটা আবার তাকিয়ে রইলো। ও শান্ত থাকতে পারল না। চেঁচিয়ে উঠলো,
– কিছু পারো না তুমি?
এমন হুংকার শুনে মেয়েটা কান্নায় করে দিলো৷ এইবার মায়ার হওয়ার বদলে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।

রাতে রান্না করার সময় যখন ওকে পেয়াজ কাটতে বলল, সে তাড়াতাড়ি করতে নিলো কিন্তু কি করবে বুঝতে পারছে না মনে হচ্ছে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে।
শিমু যেন বিরক্তই হচ্ছে। এখন বুঝতে পারল কেন ইন্দু এত দ্রুত পালিয়ে গেল। মেয়েটার হয়ত কোন সমস্যা আছে। এমন একটা মেয়েকে ওকে গছিয়ে দিয়ে পালিয়ে গেল।

রাতে মেয়েটাকে কাজের মেয়েদের থালে ভাত দিলো এবং বলল-
-এই থালে খেতে হবে।
রান্নাঘরে ফ্লোরে দিলো৷
ও অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। শিমুর বিরক্তির সীমা পার হচ্ছিলো। তাই এখন মাথা ধরে আছে রাগারাগি করার জন্য৷ নিজের লাইফ নিয়েও বিরক্ত সে। ঘুম আসছে না।
মিজানের সাথেই সে থাকতে চেয়েছিলো। কিন্তু ও ডিউটি ডিউটি করে এত ব্যস্ত থাকে। যেন শিমু আর ওর মেয়ে লাইফেই নেই। প্রতি মাসে, মাঝেমধ্যে সপ্তাহেও মেয়েটা কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে ছুটতে হয়।

খুব একটা কথা বলে না। বললেও রেসপন্স করে না। পড়তে চায় না। শুধু রং তুলি নিয়ে পড়ে থাকে। সবার চেহেরা আঁকতে পারে।
কিন্তু তাও কিছু এবনরমাল বিহেবের জন্য সেশনের জন্য নিয়ে যেতে হয়। সব একা করতে করতে একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
বিরক্ত, তিতক্তা সব যেন ঘিরে ধরেছে একজন আরেক জন কে কাদা ছোড়াছুড়ি, সন্দেহ।
এক সময় বিরক্ত হয়ে ডির্ভোস ফাইল করেছে৷ এতেও মিজানের কোন পরিবর্তন নেই।

এখন এর মধ্যে আজ মেয়েটার কান্ড দেখে অসহ্য লাগছিল।

ঘুম হচ্ছিলো না। বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছিলো। হঠাৎ পাশের রুম থেকে চিৎকার আসতেই ধড়ফড়িয়ে উঠলো শিমু।

উঠে দ্রুত ছুটে গেল পাশের রুমে। দেখলো
মেয়েটা চিৎকার করছে আর কিসে যেন ভয় পাচ্ছে।
শিমু দরজায় দাঁড়িয়ে ডাক দিলো, মোহনা?

অন্ধকার রুমে শিমুকে দেখে যেন আরো জোরে চিৎকার করে উঠলো। শিমু তাড়াতাড়ি লাইট দিতেই মেয়ে গুটিসুটি মেরে হাটু ভাজ করে দুই হাতে ধরে মাথাটা লুকিয়ে ফেলতে চাইলো৷

শিমু প্রথমে দাঁড়িয়ে রইলো। ওকে সময় দিলো৷ খুব কাঁপুনি দিচ্ছে ওর শরীর তখনো। শিমু আস্তে করে পাশে গিয়ে বসতেই ভয়ার্ত চোখে তাকালো।

এই চোখ শিমু চেনে। কারণ এদের নিয়েই শিমুর এন জি ও।

10.

রাত এখন কয় টা, সেটা কারো খেয়াল নেই । পুরো টিম এখন জেগে উঠেছে। ভিডিও টা আফসান হুইসেন কেও পাঠানো হয়েছে। ভোর রাতে তিনিও ছুটে এলেন গাড়ি নিয়ে। এখন অভির সামনে বসে আছে কফি হাতে।

অভির চোখমুখ স্থির। কারণ কোন স্টাফরের সাথে সে চেহেরাটার একপাশ মেলাতে পারছে না। আর ছবিটাও স্পষ্ট নয়। আশেপাশে রাস্তার ক্যামেরা পর্যন্ত হ্যাক করা হয়েছে। অভির সন্দেহ করছে এইটা ভেতরের কেউ করেছে।
তাই অভি বার বার বলে যাচ্ছে, পুরো কাজের ডিটেইল টা যেন অভিকে দেওয়া হয়। আফসান হুইসেন কিছুতেই বলছেন না। অন্য কি কাজ ছিলো।

পারভীন জানালো এমন সহেন্দ জনক কাউকে তারা খুঁজে পাচ্ছে না।
তখন অভি বলল- এই মাসে যারা কাজ ছেড়েছে তাদের ও যেন চেক করা হয়।

অভি অফিসের মাঝে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলো। সবার ছবি একের পর এক টানা হচ্ছিলো। হঠাৎ একজনে ছবিতে থামতে বলল। অভি নিজে গিয়ে সে ছবিতে জুম করতেই, পেয়েছি বলে চিৎকার করে উঠলো, বলল-
-এর ঠিকানা দাও।

ঠিকানা বের করতেই অভি আর এক মূহুর্তেও দাঁড়ালো না।

মিজান কে ফোন দিল মিজান ধরল না। মিজান কে মেসেজ করে দিলো যাতে সে আসে। ড্রাইভার কে ঠিকানা টা বলল সেখানে নিয়ে যেতে।

ড্রাইভার বলল, এইটা কাছের ঠিকানা দুই মিনিটের রাস্তা। তবে এইখানে বাসার নাম্বার নেই তাই কোথায় খুঁজবে? ওখানে অনেক ঘর। আর কেউ কাউকে চেনে না।

অভি উচ্চ স্বরেই বলল- আগে নিয়ে চল।

অভি দেখল ড্রাইভারের কথা ঠিক। একটা লম্বা করিডোরের মতো কলোনী। যত দূর দেখা যাচ্ছে সব যেন এক। কয়েক শ ঘর হবে এইখানে৷ খুব একটা বস্তিও বলা না। কারণ বাড়ি গুলো সেমি পাকা। অনেক স্টুডেন্ট ও বের হচ্ছে সেখান। কিংবা পরিপাটি ড্রেসে অফিসে যাওয়া লোকজন। সবার বাসা চেক করা সম্ভব না। অভি পুলিশ নয়। মিজান ওর ফোর্স নিয়ে এলে করা যেত।

মিজান মেসেজ করল সে আধাঘন্টায় আসবে। কিন্তু অভি এতক্ষন বসে থাকার কোন কারণ দেখছে না। সে কয়েক জন কে সে ছেলেটার ছবি দেখালো৷ কেউ বলতে পারলো না। তখন দোকান থেকে কয়েক টা বিস্কুটের প্যাকেট কিনে বড় একটা প্যাকেটে ভরে ডেলিভারি ম্যান দের মতো সেজে সব ঘরে গিয়ে টোকা দিচ্ছিলো,
– দীপক?
কেউ ঝাড়ি দিচ্ছে, কেউ ‘না’ বলে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে। দশ বারোটা ঘর টোকা দেওয়া পর একজন অফিস যাওয়ার জন্য ফরমাল ড্রেস পরছে বেল্টের হুক লাগাতে লাগাতে বলল-

– দীপক তুই আবার অনলাইন অর্ডার করেছিস? তোকে না বলেছি-

আর কিছু বলার সুযোগ না দিলে অভি ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ল। ছবিটার সাথে মিলিয়ে দেখল। হ্যাঁ সে ছেলেটা।
সাদা সেন্ডু গেঞ্জি আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে শুয়ে মোবাইল টিপছে।
অভিকে দেখে বলল-
-আজ আমি কোন অর্ডার করে নি। শালা টাকা সব শেষ। আজ তোর ঢেড়স ভর্তায় খেতে হবে।

অভি প্যাকেট টা ফেলে ছেলেটার গেঞ্জি ধরে টেনে তুলে বলল-
– কেন সব টাকা উড়িয়ে ফেলেছিস যা মেরেছিলি দুই সাপ্তাহ আগে?

ছেলেটা প্রথমে থম মেরে গেলেও পরে চিৎকার করে উঠলো।
– কে? কে আপনি?

অভি কোন কথা ছাড়া ছেলেটার পেটে হাটু দিয়ে একটা লাথি বসিয়ে দিলো। পেছনে থাকা বন্ধু টা চেঁচিয়ে উঠলো,
– কে আপনি? আমি পুলিশ ডাকব।

অভি কোমর থেকে ওর পিস্তল টা বের করে ওর দিকে তাক করে বলল,
– তোর ডাকতে হবে না। পুলিশ আসছে।

অভি পেছন ফিরে কথা বলছিলো এই সুযোগে ছেলেটা অভিকে ধাক্কা মেরে বের হয়ে গেল।
অভিও পেছনে ছুটল।

একটার সাথে একটা ঘর লাগানো। সরু গলি দিয়ে ছেলেটা দ্রুত ছুটে যাচ্ছে। অভিও ছুটছে। ছোট ছোট বাচ্চারা খেলছে। কয়েক মুরগিও বেড়িয়ে আসছে। পায়ের নিচে আসছে শুয়ে থাকা কুকুর ও। মেয়েদের শুকাতে দেওয়া কাপড় লেগে যাচ্ছে মাথায়। ছেলেটা প্রাণপণ ছুটছে। অভির কোন দিকে নজর নেই। সেও ছুটছে এই গলি থেকে ও গলি।

অভি ফাঁকা জায়গায় পেয়ে একটা ফাঁকা গুলিও ছুড়লো।

শেষের দিকে বড় একটা ডাস্টবিন ছিলো। ওপাশে একটা বড় রাস্তা। দেওয়াল টপকে ছেলেটা ওপারে পার হতেই ওপাশ থেকে মিজান এসে ধরে ফেলল ছেলেটাকে।
ছেলেটাকে কোন কথা ছাড়া কয়েক টা থাপ্পড় লাগিয়ে দিলো মিজান। ছেলেটা ছিটকে রাস্তায় পরে গেল। মিজানের পরে থাকা সানগ্লাস টাও পরে গেল৷

মিজান গালি আওরে সানগ্লাস টা তুলে নিয়ে ছেলেটার মাথাটা জুতা দিয়ে চেপে ধরল। অভি ততক্ষনে কাছে এসে হাঁফাতে লাগলো।

মিজান ওকে থানায় নিয়ে গেল। ছেলেটা সমানেই বলে যাচ্ছে,
-আমি কিছু করি নি। আমি কিছু করি নি স্যার।

-তাহলে পালাচ্ছিলি কেন?

ছেলেটা চুপ হয়ে গেল। অভি সেদিনে ঘটনা বলতে বলল, নোরার ছবি দেখিয়ে বলল-
-নোরা কোথায়?
ছেলেটা বলল, আমি উনাকে চিনি না। আমি কোন দিন দেখি নি উনাকে।

কোন কথা ছাড়া আবার পেটে ঘুসি বসিয়ে দিলো। ছেলেটা ব্যাথায় খেকিয়ে উঠলো। ছেলেটার ঠোঁট ছিড়ে রক্ত পড়ছে। সে সমানে বলে যাচ্ছে৷ সে কিছু জানে না।

মিজান আবার থাপ্পড় দিতে যাচ্ছিলো, অভি থামতে বলল-
– কাজ ছেড়েছিস কেন? রুম নাম্বার 415 তে কি করছিলি?

ছেলেটা চুপ হয়ে গেল, অভি আবার আবার এগিয়ে আসতেই৷ সে কান্না করতে করতে বলল-
– স্যার আমি কিছু করি নি। সে রুমে কে ছিলো আমি তাও জানি না। আমি শুধু করিডোরের ফ্লোর মুছি লাঠি দিয়ে। সেদিন আমার ডিউটি অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু সেদিন আমি স্টোর রুমে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

অভি এইবার জোরে থাপ্পড় দিলো,
– ওখানে স্টোর রুম নেই।

ছেলেটার মুখে পড়া রক্ত আরো জোরে পড়তে লাগল৷ ছেলেটক কাচুমাচু হয়ে বলল,
-একটা রুম আছে স্যার, টয়লেটের পাশে।

মিজান হুংকার ছেড়ে বলল- কি করছিলি?

ছেলেটা আবার থেমে গেল, মাথা নিচু করে বলল, ওখানে একটা আয়ার কাজ করা মেয়ের সাথে-

মিজান শব্দ করে হাসতেই, অভিও মাথা নেড়ে হাসার চেষ্টা করল,
– তারপর?

-আমি যখন ফিরছিলাম দেখলাম সে রুম টা খোলা ছিল। সব এলোমেলো ছিলো । ফ্লোরে মোবাইল দামী মোবাইল পরে ছিলো ওটা তুলে দেখি ভিডিও চলছে। আমি বন্ধ করার চেষ্টা করলাম৷ যখন বন্ধ করলাম এরপর মোবাইল টা আর অন করতে পারছিলাম না। লক হয়ে গিয়েছে৷ ভাবলাম মোবাইল নেওয়া ঝামেলা। তাই মোবাইল ওখানে রেখে। ওখানে একটা ব্যাগ ছিলো বিছানার উপর হাজার দশেক টাকা ছিলো। সেগুলো নিয়ে বের হয়ে গেলাম।

আমি সত্যি বলছি স্যার। আমি কাউকে দেখি নি৷ জানি না। কি হয়েছিলো সে রুমে। ওখানে অনেক কম্পিউটার ছিল। সব তখনো চলছিল তাই আমি ভয় পেয়ে গেলাম।

– কাউকে দেখিস নি?
ছেলেটা মাথা নাড়ল।
– কাউকে বলিস নি?
– ওখানে সব অফিসার কাজ করে স্যার। আমাদের সাথে কেউ কথা বলে না। তখন কেউ ছিলো ও না। আমি বের হয়ে গার্ড দের রুমে গিয়ে আরো ভয় পেয়ে যায়, সবাই মাটিতে পড়ে ছিলো।

আমি চুপচাপ বের হয়ে গিয়েছিলাম। পরের দিন অফিসে সবার ব্যস্ততা দেখে আমাদের ম্যানেজার কে বলেছিলাম। সে বলেছিলো, কিছু বললে আমাকেও পুলিশে ধরবে। কিন্তু সেদিন বিকালে চুরি করেছি বলে আমাকে বের করে দিলো।

মিজান আর অভি একে অপরের দিকে তাকাল।

মিজান বলল- ম্যানেজারের নাম কি?

-চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here