প্রেমের_অগ্নি #পর্ব_০৫

#প্রেমের_অগ্নি
#পর্ব_০৫
#অধির_রায়

প্রীতি কিছু বুঝতে পারছে না৷ সে কিভাবে মোকাবেলা করবে? আর প্রেমই বা কেন তাদের হয়ে কাজ করছে? প্রেম তো আমাকে পরিচয় দিয়েছিল সে অনাথ৷ আবার কিছুদিন আগে পরিচয় দিয়েছে সে তার মা বাবাকে খুঁজে পেয়েছে। আমাকে এই যুদ্ধে জয় লাভ করতে হলে প্রেমকে গুটি বানাতে হবে৷
.
প্রীতি সোফায় বসে ভাবতে থাকে৷ তাকে সবার আগে এই বাড়ি থেকে বের হতে হবে৷ বাড়িতে কিছু করলে লোকটা জেনে যেতে পারে৷ প্রীতি আর ভাবতে পারছে না। মাথায় হাত পড়ে গেছে। প্রীতি সারা রুমে ক্যামেরার খুঁজ করে৷ কিন্তু কোথাও ক্যামেরা খুঁজে পাচ্ছে না৷ একে একে সব ফুটো অ্যালবাম নিচে নামায়৷ হঠাৎ চোখ পড়ে ছোট একটা ছিদ্রে। যা সাধারণ কারো চোখে পড়বে না৷ প্রীতি হাতুড়ি দিয়ে সেই ছোট ছিদ্রটি বড় করে৷ আর বের করে সেই ক্যামারা৷ প্রীতি সেই ক্যামারা ডিসকানেক্ট করে দেয়৷ প্রীতি তার বাড়ির বাহিরের সব জায়গায় ক্যামারা লাগানোর অর্ডার দেয়৷ তার বাড়ির আশেপাশে একটা ইঁদুর আসলেও যেন ধরা পড়ে৷

প্রীতি সারা বাড়ি খুঁজে খুঁজে কয়েকটা সিসি ক্যামেরা উদ্ধার করে৷ প্রীতি শেষ ক্যামারা নষ্ট করার আগে ক্যামারার সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠে,
“আমি প্রীতি রায় চৌধুরী। তোদের মতো ভিতু প্রীতি নয়৷ কাপুরুষের মতো পিছন থেকে কাউকে ছুরি মারা আমার স্বভাব না৷ তবে তোদের সাথে খেলতে আমার ভালোই লাগবে৷ তোরা আমাকে কোনদিন হারাতে পারিস নি৷ আর কোনদিন হারাতে পারবিও না। আমার সব প্রোপার্টি হাইকোর্টে তুলেছি৷ যার জন্য তোদের এই ভুয়া দলিল মিথ্যা। আমাকে কোনো দিক থেকে আর আটাকাতে পারবি না৷”
.
প্রীতি ক্যামেরাগুলো একে একে সব ভেঙে ফেলে। সে তাদের থেকে তিন ডাবল করে ক্যামারা লাগিয়ে রাখে বাড়িতে। এক একটা ক্যামেরার সাথে অন্যটার যুগ আছে। যেন একটা নষ্ট করতে নিলে অন্যটায় ধরা পড়ে।
_______

“তোমার কোনো সাহায্য লাগলে আমাকে বলতে পারো৷ আমি যতটুকু পারি তোমাকে সাহায্য করবো৷”
প্রেম রুমে প্রবেশ করতে করতে বলে উঠে।
.
প্রীতি মুচকি হেঁসে,
“আপনার কোনো সাহায্য লাগবে না৷ আমি একাই সবকিছু ঠিক করবো৷ আমিও দেখি কে আমার শত্রু? আপনি নিজেকে নির্দোষ ভাববেন না৷ আপনার জন্য শাস্তি আছে৷ তবে মাস্টার মাইনকে খুঁজে বের করি আগে৷”
.
প্রেম আনন্দের সাথে বলল,
“আমি আমার শাস্তি নিয়ে কিছু ভাবি না৷ আমাকে যা শাস্তি দিবে আমি তাই মাথা পেতে নিব৷ আমিও চাই তুমি এই শত্রুর মুখোমুখি হয়ে লড়াই করো ৷ আর সব জানার পর তুমি আমাকে সব থেকে কাছের মানুষ ভাববে৷”
.
প্রীতি প্রেমকে রাউন্ড করে,
“বাহ্ প্রেম নিশাঙ্ক। আপনি একটা দুমুখো সাপ৷ দল পাল্টাতে পটু৷ বাই দ্যা ওয়ে শুকনো কথায় চিঁড়া ভিজবে না৷ আমি কাউকে আর বিশ্বাস করি না৷”
.
চোখের দেখা সব সময় সত্য নাও হতে পারে৷ আমরা চোখ দিয়ে যা দেখি তার পিছনে অনেক কারণ, অনেক রহস্য থাকতে পারে। আর আমাদের দেখার পিছনেও অনেক ভুল থাকতে পারে৷
.
তো আমাকে একটা কথা বলেন তো? আপনি তো এতিম৷ আপনার কোন মা, বাবা, ভাই, বোন। ইভেন প্রেমিকাও নেই৷ তাহলে কেন আপনি তাদের হাতের খেলার পুতুল হয়ে নাচতেছেন? সবকিছু লোভের জন্য করছেন৷ আপনি আমার এ বিশাল প্রোপার্টি গ্রাস করতে চান৷ কিন্তু আমি তা কিছুতেই হতে দিব না৷
.
আমার কেউ না থাকলেও আমি তাদের হাতের পুতুল৷ আমার জীবনের থেকেও মূলবান সম্পত্তি তাদের কাছে আওতাধীন।
.
প্রীতি উপহাস করে বলে উঠে,
“তাহলে কি এমন জিনিস? আপনার লিভার নাকি কিউনি!”
.
প্রেম কিছু বলতে নিবে ঠিক তখনই ফোন বেজে উঠে। ফোনের নাম্বার দেখে ফোন ভেঙে ফেলতে মন চাইছে৷ নিজের মনকে শান্ত করে ফোন নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়৷ প্রীতি পিছন পিছন যায়। তবে কিছু শুনতে পাইনা৷ অপর পাশের কথা কিছুই প্রীতির কর্ণধার অব্ধি আসলো না৷ শুধু প্রেমের কথা প্রীতির কর্ণধারে এসেছে৷ প্রেম ফোন কানে রেখে বলল,
“আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আসছি৷”
.
প্রেম যেন বুঝতে না পারে সেজন্য প্রীতি সেখান থেকে দৌড়ে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ প্রেম হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বেরিয়ে যায়৷ প্রীতি প্রেমের পিছু পিছু বেরিয়ে যায়।
_______

প্রেম বিরক্তের সাথে বলে উঠে,
“এত রাতে এখানে ডেকে নিয়ে আসার মানে কি? যা বলার ফোনেই তো বলতে পারতেন৷”
.
অজানা লোকটির মুখে কালো কাপড় বাঁধা। ঝাপসা আলোয় লোকটির চোখ দু’টো দেখা যাচ্ছে লোকটি হুংকার দিয়ে বলে উঠে,
“তোকে এখানে ডেকে আনার জন্য আমাকে টিকেট কাটতে হবে৷”
.
প্রেম ভেজা বিড়ালের মতো বলে উঠে,
“আসলে আমি এভাবে বলতে চাইনি৷ আমি শুধু এটাই বলতে চেয়েছি এভাবে হুটহাট করে বাহিরে চলে আসলে প্রীতি সন্দেহ করতে পারে।”
.
“জানিস প্রীতি আজ কি বলেছে? প্রীতি আমাকে আজ চ্যালেজ্ঞ করেছে। আমি তো ওই প্রীতিকে দেখে নিব৷ আই উইল সি হার৷”
রাগে গজগজ করতে করতে কারে ঘুশি মারে।
.
প্রেম ভয়ে ভয়ে বলে উঠে,
“প্রীতি আপনার খুঁজ কিভাবে পেল? আপনার সামনে তো প্রীতি কখনো আসতে পারবে না৷”
.
প্রেমের কলার ধরে,
“প্রীতি কিভাবে জানল সমস্ত বাড়ি সিসি ক্যামেরায় আওতাধীন? তুই নিশ্চয় বলেছিস৷ তুই তাহলে ভুলে গেছিস, আমি কি করতে পারি?”
.
প্রেম হাতজোড় করে,
“প্লিজ বিলিভ মি। আমি প্রীতিকে কিছু বলিনি৷ আমি আপনার কথা মতো প্রীতিকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করায়৷ বাড়ি থেকে সকল সার্ভেন্টকে তাড়িয়ে দিয়েছে দুই মাসের বেতন দিয়ে।”
.
প্রেমের কাঁধে হাত রেখে,
“গ্রেট কিন্তু প্রীতি কিভাবে জানলো আমি তার উপর নজর রাখতাম? প্রীতিকে বাড়িতে কিছুই করা যাবে না৷ বাড়ির আশেপাশে একটা পিঁপড়া প্রবেশ করলেও প্রীতির অক্ষিচূত্য হবে না৷”
.
প্রেম অবাক হয়ে,
“মানে কি বলতে চান! প্রীতি আপনার প্ল্যান সম্পর্কে সব কিছু জেনে গেছে।”
.
অট্টহাসি দিয়ে,
“প্রীতি আমার দ্বারের কাছেও আসতে পারবে না৷ একটা তুচ্ছ মেয়ে আমাকে চ্যালেজ্ঞ করে৷ বাই দ্যা ওয়ে, তোকে রায় চৌধুরী বাড়িতে বুঝে শুনে পা ফেলতে হবে৷ প্রীতি ততটাও সহজ মেয়ে না৷ প্রীতি গোড়া অব্ধি পৌঁছানোর চেষ্টা করবে৷”
.
প্রেম মুচকি হেঁসে মনে মনে বলে উঠে ,
“তুই প্রীতিকে চিনিস না৷ তুই প্রীতিকে আর আটকে রাখতে পারবি না৷ তোর মাথার উপর চড়ে প্রীতি লাটাই ঘুরাবে।প্রীতি এখানেও চলে এসেছে৷ তোর মুখ দেখার কাজটা আমাকেই করতে হবে৷ যেন প্রীতি শত্রুকে চিনতে পারে এবং পরের ধাপ এগিয়ে যেতে পারে।”
.
অজানা লোকটি গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে,
“কি ভাবছিস? প্রীতির কাছ থেকে তোকে সব খবর নিতে হবে৷ প্রীতির প্রতিটি স্টেপ আমি জানতে চাই৷ আর হ্যাঁ আমার কথার নড়চড় হলে তাঁদের ডেড বড়ি যমুনার তীরে পাবি৷”
.
প্রেম শুকনো কন্ঠে বলে উঠে,
“না এমন ভুল কখনও করবো না৷ আমি প্রীতির সব খবর আপনাকে দিব৷ তাঁদের কোন ক্ষতি করবেন না৷ আমি অক্ষরে অক্ষরে সব দায়িত্ব পালন করবো।”
.
এবার যেতে পারিস৷
.
প্রেম চলে যেতে নিলেও দাঁড়িয়ে পিছনে ফিরে বলে উঠে,
“আমার একটা কথা শুনবেন৷ না মানে আমার খুব ইচ্ছা ছিল একটা কথা জানার!”
.
বল! তোর ইচ্ছাটা জেনে নেওয়া যাক৷
.
আসলে আপনকে দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। আপনি তো আমার সামনে সব সময় মুখ আড়াল করে আমার সামনে আসেন৷

অজানা লোকটি ক্ষেপে প্রেমের মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে,
“তোর এই ইচ্ছা স্বর্গে পাঠাবে। স্বর্গে পূরণ হবে৷ সময় হলে অবশ্যই মুখ দেখতে পারবি৷ যা ফুট এখান থেকে।”

প্রীতি ঝোপের ভেতর লুকিয়ে সব কথা শুনার চেষ্টা করছিল। কিন্তু প্রীতি সব কথা শুনতে না পারলেও অনেক কথা শুনে নিয়েছে৷ যা প্রীতিকে তার সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে৷ যেভাবেই হোক প্রীতিকে বাড়িতে আগে পৌঁছতে হবে৷
________

প্রীতি গাড়ি পার্ক করে দেখে প্রেম বাহু ভাজ করে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ প্রেমকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রীতি ভয় পেয়ে যায়৷ প্রীতি ভয়ে ভয়ে বলে উঠে,
“আপনি এখানে কি করছেন? আপনি তো কোথায় গিয়েছিলেন!”
.
প্রীতির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে,
“হ্যাঁ আমি বাহিরে গিয়েছিলাম৷ কিন্তু তুমি বাহিরে কেন গিয়েছিলে।”
.
প্রীতি আমতা আমতা করে,
“আসলে বাহিরে আমার একটা কাজ ছিল৷ মানে কাজটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”
.
প্রেম চেঁচিয়ে বলে উঠে,
“তোমাকে আমি বাড়ির বাহিরে যেতে মানা করেছিলাম৷ আমার কথে কানে যায় না৷ নাকি হাত দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে।”
.
প্রীতি অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“হাত তুলে দেখেন৷ হাত ভেঙে রেখে দিব৷ আমি কোথায় যাব না যাব সেই কৈফিয়ত আপনাকে দিব৷ হাউ ফানি৷”
.
প্রীতির বাহু চেপে ধরে,
“হ্যা আমাকে জবাবদিহি করতে হবে৷ কারণ আইনত তুমি আমার রক্ষিতা৷ আমি যা বলবো তোমাকে তাই করতে হবে৷”
.
প্রেম প্রীতির বাহু খুব জোরে চেপে ধরে৷ যার জন্য প্রীতি বাহুতে ব্যথা পাচ্ছে৷ প্রীতি হাই হিল দিয়ে প্রেমের পায়ে চাপ দেয়৷ প্রেম “আউচ” বলে প্রীতিকে ছেড়ে দেয়৷
.
প্রীতি অগ্নিমূর্তি ধারণ করে,
“আমার কাছেও আসার চেষ্টা করবেন না৷ খারাপ কিছু হয়ে যাবে৷ আর প্রীতিকে শিকল পড়িয়ে আটকিয়ে রাখতে পারবেন না৷”
.
প্রীতি রাগে গজগজ করতে করতে রুমে চলে আসে৷ প্রীতির পিছু পিছু প্রেমও রুমে চলে আসে৷ প্রীতি দরজা লাগাতে নিলেই প্রেম দরজায় পা দেয়৷ আর শক্তি খাঁটিয়ে রুমে প্রবেশ করে৷
.
প্রেম অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“তোমাকে আমার পিছু পিছু কে যেতে বলেছিল।”
.
প্রীতি না জানার ভান করে,
“হোয়াট! আমি আপনার পিছু পিছু কেন যাব৷ আমি সার্ভেন্টদের ডাকতে গিয়েছিলাম। কাল থেকে তারা কাজে আসবে৷”
.
আমাকে বোকা বানাতে চাও প্রীতি রায় চৌধুরী। আমি সব জানি এবং দেখেছি তুমি কিভাবে আমাকে ফলো করে আমার পিছু পিছু গিয়েছিলে?
..
সবই জানেন তাহলে নাটক করার কি হলো? ইউ আর অ্যা ড্রামাবাজ৷
.
হাহা ড্রামা কুইন৷ আমাকে ড্রামাবাজ বলছে। সোজাসুজি উত্তর দিতে পারো না৷
.
না আমি সোজাজাপ্টা উত্তর দিতে পারিনা৷
.
প্রীতি চলে যেতে নিয়ে নিলেই প্রীতির হাত টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷ প্রীতি তাল সামলাতে না পেরে প্রেমের বুকের মাঝে এসে পড়ে৷ প্রীতি সরে আসতে নিলেই প্রীতির কোমরে হাত দিয়ে আরও নিজের কাছে নিয়ে আসে।
.
প্রেম নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠে,
“এত ছটফট করে লাভ নেই৷ আমার কাছ থেকে দূরে যেতে পারবে না৷ তুমি আমার পিছু পিছু কেন সেখানে গিয়েছিলে?’
.
কেন ভয় পাচ্ছেন আমায়? ভয় পাওয়ার কথা। আমি আর কাউকে ছেড়ে দিব না৷ এক এক করে সবাইকে শাস্তি দিব৷
.
শাস্তি দাও মাথা পেতে নিব৷ তুমি জানো সেখানে তোমার চিন্তায় আমি অর্ধেক মরে গিয়েছিলাম।
.
প্রীতি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে,
” আমার চিন্তায় মানে!
.
হ্যাঁ তোমার চিন্তায়৷ যদি তারা দেখে ফেলতো। যদিও দেখেনি কিন্তু ঝোপের মাঝে তো সাপ থাকতপ পারতো। তোমার যদি কিছু হয়ে যেতে।
.
আমার জন্য এত চিন্তা। কি হয় আমি আপনার?
.
না মানে..

প্রেম মাথা চুলকাতে চুলকাতে ওয়াসরুমে চলে যায়৷

চলবে….

ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here