#প্রেমের_অগ্নি
#পর্ব_০৪
#অধির_রায়
প্রীতি বাড়ির পিছনের গোপন দরজা দিয়ে বেরিয়ে প্রেমের পিছু পিছু অফিসে চলে আসে৷ প্রীতিদের বাসায় এমন গোপন দরজা আছে; যা দেখে বুঝা যাবে না৷ দরজার এমনভাবে পেইন্টিং করা দেখে বুঝা যায় দেয়ালে কারুকাজ করে রেখেছে৷
.
প্রীতি অফিসে ঢুকে প্রথমে নিজের কেবিনের দিকে পা বাড়ায়৷ কিন্তু প্রীতির কেবিন বন্ধ। কেবিনের সামনে লেখা এই রুম পরিত্যক্ত। প্রীতি বুঝতে পারে প্রেম তার কথা রেখেছে। প্রীতি খুঁজে বের করে প্রেমের কেবিন৷ প্রেম ফোনে হাত রেখে কান্না করে যাচ্ছে। ফোনে মেবি কারো পিক দেখে যাচ্ছে৷ যা দেখে প্রীতি খুবই অবাক হয়ে যায়। আশ্চর্য ব্যাপার প্রেম কেন কান্না করছে? প্রীতি তো প্রেমের সামনে যেতে পারছে না৷ প্রীতি ছদ্মবেশ নিলেও হুটহাট করে প্রেমের কেবিনে যেতে পারে না৷ তবুও মনের মাঝে সাহস জুগিয়ে কেবিনে প্রবেশ করে৷
.
প্রেম ফোনটা তারাতাড়ি করে নিজেট পকেটে ঢুকিয়ে,
“কে আপনি? এখানে কি চান?”
.
প্রীতি বসতে বসতে বলে,
“বাবু আমি তিনদিন থেকে কিছু খাই না৷ আমাকে আমার ছেলে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। বাবু আমাকে কিছু খাবার দিবে৷”
.
প্রেম চোখের জল মুছে,
“আপনি এখানে বসেন৷ আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসছি৷”
.
প্রেম এক প্লেট খাবার নিয়ে এসে,
“বুড়িমা খাবারটা খেয়ে নেন৷ আপনি পেট পুরে খাবার খাবেন কিন্তু।
.
বাবু আমার হাতে একদম শক্তি পাচ্ছি না৷ তুমি আমাকে একটু খাইয়ে দাও না!
.
প্রীতি মনে মনে বলে উঠে,
“প্রেম তোকে ফাঁসানোর জন্য আমাকে এত নিচে নামতে হচ্ছে। শেষে কিনা শত্রুর হাতে খাবার খেতে হচ্ছে। এর থেকে মরে যাওয়াই ভালো ছিল৷”
.
প্রেম প্রীতিকর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। প্রেম কি করবে। প্রেম কি এই বুড়ো মহিলাকে খাইয়ে দিবে৷ উনি তো কষ্ট পাচ্ছেন ক্ষুধার জ্বালায়।
.
প্রীতি নিবু নিবু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“বাবুজি দাও একটু খাইয়ে৷ আজ যদি তোমার মতো আমার আর একটা ছেলে থাকতো তাহলে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিত না৷”
.
প্রেম কোন উপায় না পেয়ে প্রীতিকে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে লাগল। প্রেম প্রীতিকে খাইয়ে দিছে আর প্রেমের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে।
.
প্রীতি মনে মনে বলে উঠে,
“প্রেম কেন কান্না করছে। আমাকে এত সুন্দর করো খাইয়ে দিচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে বড় কোন সমস্যার মাঝে আছে৷ কি সমস্যার মাঝে আছে? একবার প্রয়োগ করে দেখলে মন্দ হয় না৷”
.
প্রীতি প্রেমের চোখের জল মুছে দিয়ে,
“বাছা তুমি কান্না করছো কোন? তোমার মনে কিসের কষ্ট। তুমি তো ভালোই আছো কান্না করো না৷”
.
বুড়িমা আমার জন্য একটা নিষ্পাপ মেয়ে কষ্ট পাচ্ছে৷ এসব কিছু সব তারই নামে। না পারছি কষ্ট দিতে৷ না পারছি সহ্য করতে।.
তুমি কি সেই মেয়েকে ভালোবাসাে৷ তার জন্য তোমার মন এত কান্না করছে কেন?
.
বুড়িমা ভালোবাসি কিনা তা জানা নেই৷ সে কাছে আসলে মনের মাঝে শীতল হাওয়া বয়ে যায়। তার চোখে মুখে ভালোবাসা মায়া৷ আর আমিই তাকে কষ্ট দিয়ে যাচ্ছি। তার সাথপ প্রতিনিয়ত খারাপ ব্যবহার করে যাচ্ছি৷
.
প্রীতি প্রেমের কথা শুনে খুব রেগে আছে৷ রাগটা বাহিরে প্রকাশ করতে পাচ্ছে না৷ মনের মাঝে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে যাচ্ছে। নিজের মনের অগ্নিকে শান্ত করে৷ মুচকি হেঁসে বলে উঠে,
“তাকে বলে দাও তোমার মনের কথা৷ তুমি তাকে কষ্ট দিতে চাও না৷” এক মিনিট,
“তুমি তাকে কষ্ট দিতে চাও না৷ তাহলে তুমি কি অন্য কারোর জন্য তুমি তাকে কষ্ট দিয়ে যাচ্ছো। তোমাকে কে বাধ্য করছে তাকে কষ্ট দিতে।”
.
প্রেম বলতে নিবে ঠিক তখনই প্রেমের ফোন আসে৷ প্রেম ফোন নিয়ে বাহিরে চলে আসে৷ প্রীতি খুব রেগে যায়৷ ফোনটা আসার আর সময় পেলা। প্রীতি সেখানে দেরি বাসায় দিকে রওনা দেয়। কেননা বেশি লেট করলে সমস্যা হতে পারে৷ গেইটে এসে দেখে দারোয়ান কাকা নেই৷ তার পরিবর্তে অন্য কেউ ডিউটিতে আছে।
.
প্রীতি বলে উঠে,
“আচ্চা দাদা গতকাল এখানে অন্য দারোয়ান ছিল না৷ সেই দারোয়ান কোথায়?”
.
আমি কিছু জানি না৷ আমি আজই প্রথম ডিউটিতে এসেছি৷ আগের দারোয়ান কোন এক মেয়েকে অফিসের খুঁজ দিয়েছিল। সেজন্য তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। প্লিজ আমি আর কিছু বলতে পারবো না৷ আমি অনেক কষ্টে এই চাকরি পেয়েছি৷
.
ধন্যবাদ দাদা। আপনাকে আর কিছু করতে হবে না৷ প্রীতি সেখান থেকে সোজা দারোয়ান কাকার বাড়িতে চলে যায়৷ দারোয়ান কাকাকে জড়িয়ে ধরে,
“কাকা আপনি চলে এসেছেন কেন?”
.
মামুনি তুমি যাকে বিশ্বাস করছো সেই তোমার শত্রু। তাই তুমি কাউকে বিশ্বাস করবে না৷ তোমার এই জীবন যুদ্ধে তোমাকে একাই লড়াই করতে হবে।
.
কাকা আপনি কি বলছেন?
.
মামুনি আমি আর কিছু বলতে চাইনা৷ চারদিকে চোখ রাখবে৷ তুমি বাসায় চলে যাও। তুমি বাহিরে থাকলে তোমার অনেক বিপদ হতে পারে।
.
আমার ক্ষতি আর কি করবে? আমি তো একা এক মানুষ৷ আমার কেউ নেই৷
.
মামুনি তোমার সবকিছুই আছে৷ তোনাকে সবকিছু আদায় করে নিতে হবে। তুমি এভাবে হেরে যেতে পারো না৷ আর ভুলেও কোনদিন আমার বাড়িতে আর আসবে না৷
.
দারোয়ান কাকা প্রীতি আর কিছু না বলে ঘরের দরজা লাগিয়ে দেয়। প্রীতি দারোয়ান কাকাকে ডাকতে চেয়েও ডাক দেয় না৷ প্রীতি বুঝতে পারে দারোয়ান কাকাও বিপদে আছে। তাই সে আর বিরক্ত করতে চাই না৷ প্রীতি বাসায় চলে আসে৷ গোপন দরজা দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে।
______
স্টোর রুমে নিজের পোশাক পাল্টে ডাইনিং রুমে পা রাখতেই প্রীতি অবাক হয়ে যায়। প্রেম পায়ের উপর পা রেখে প্রীতির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে৷ প্রীতি ভয়ে ভয়ে প্রেমের কাছে যায়৷ প্রীতি শুঁকনো ঢুক গিলে মনে মনে, “আমি যে বাহিরে বের হয়েছিলান জেনে ফেলেনি তো৷ এভাবে তাকিয়ে আছে কেন?”
.
বুকের মাঝে সাহস জুগিয়ে,
“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আপনার কিছু লাগবে।”
.
প্রেম কর্কশ কন্ঠে বলল,
“স্টোর রুমে কি করলে? কিসের পরিকল্পনা চলছে?”
.
প্রীতি আমতা আমতা করে,
“কই কিছু না তো? আমি স্টোর রুমে কি করতে যাব?”
.
আমাকে মিথ্যা বলে লাভ নেই৷ আমাকে সব খুলে বলো৷ না হলে তোমার জন্য শাস্তি অপেক্ষা করছে৷
.
আপনি আমাকে হুমকি দেন৷ আপনি মনে হয় ভুলে গেছেন আমি কারো হুমকিতে ভয় পায় না৷
.
সত্যি তাই তুমি কারো হুমকিতে ভয় পাও না৷
.
আপনি আমার কিছু করতে পারবেব না৷ আমাকে কি খেলার পুতুল মনে হয়। আমি আপনার কথায় নৃত্য করবো৷
তুমি মনে হয় ভুলে গেছো। তুমি আমার রক্ষিতা। সো আমার কথামতো তোমাকে কাজ করতে হবে৷
.
প্রীতি আগেও করো কথা মতো কাজ করেনি৷ আজও কারে কথা মতো কাজ করবে না৷ তবে একটা কথা আপনার উল্টো দিন হিসাব করতে থাকেন৷ মনে করেন আপনার এই বাড়িতে আয়ু আছে মাত্র কয়েকদিন৷ প্রীতিকে কেউ হারাতে পারবে না৷ যদি হয় প্রীতির লাইফ স্টাইল।
.
প্রীতি কথা বলে চলে আসতে নিলেই প্রেম প্রীতির হাত টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়৷ প্রেমের প্রতিটি গরম নিঃশ্বাস প্রীতির মুখে পড়ছে৷ প্রীতির মনে অস্বস্থি কাজ করছে। প্রীতি প্রেমের হাত কামড় বসিয়ে দেয়৷ হাতের বাঁধন হালকা হতেই প্রীতি নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়৷
.
প্রীতি অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“আমার কাছে আসা ভুলেও চেষ্টা করবেন না৷ আমার কাছে আসার চেষ্টা করলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না৷”
.
প্রেম বসা থেকে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে প্রীতির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে৷ প্রীতি এক পা দুই পা করে পিছিয়ে যাচ্ছে৷ প্রেম এগিয়ে যাচ্ছে৷
.
প্রীতি আমতা আমতা করে,
“এভাবে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন কেন? দাঁড়িয়ে যাব৷ সামনে আসলে ভালো হবে না কিন্তু৷
.
নেশা ভরা কন্ঠে,
” কি করবে সুইটহার্ট? আমি তোমার প্রেমে হাজারবার মরতে চাই৷”
.
প্রীতি দেয়ালের সাথে লেগে যায়৷ বাঁ দিকে যেতে নিলে প্রেম ডান হাত দেয়ালে রাখে৷ ডান দিকে যেতে নিলে বাঁ হাত দেয়ালে রাখে৷
.
এখন কোথায় পালাবে সুইটহার্ট। তুমি স্টোর রুমে কি করছিলে না বললে তোমাকে এখান থেকে যেতে দিব না৷
.
“আমি আপনাকে কেন বলতে যাব? আর হ্যাঁ আপনি তো আমাকে তালা বন্ধ করে দিয়েছিলেন৷ তাহলে জানতে পারলেন কিভাবে?”
সন্দেহের চোখে তাকিয়ে।
.
আমি কিভাবে জানবো? আমার মন বলেছে। আমার মন কখনো ভুল বলতে পারে না৷
.
আপনার মনও আছে বুঝি৷ আপনার মন থাকলে আপনি আমাকে এভাবে অপমান করতে পারতেন না৷ আর হ্যাঁ আমাকে যেতে দেন৷ আমার অনেক কাজ আছে। আপনাদের কিভাবে রাস্তায় নামিয়ে দেয় তা শুধু দেখে যান৷
.
প্রীতি প্রেমের কাঁধ ধরে প্রেমকে সরাতে নিতে নিলে প্রেম প্রীতির কানে ফিসফিস করে বলে,
“যা করবে এই বাড়ির বাহিরে করবে৷ পুরো বাড়ি সিসি ক্যামেরায় আওতাধীন।”
কানে ফিসফিস করে কথা বলেই নিজের হচ্ছাতেই ফ্লোরে পড়ে যায়। এমন ভাবে ফ্লোরে পড়ে দেখে বুঝা যাচ্ছে প্রীতি প্রেমকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে৷
. প্রীতি প্রেমের কথা শুনে ফ্রীজের মতো দাঁড়িয়ে পড়ে৷ প্রীতি বুঝতে পারে গেমের মাস্টার মাইন অন্য কেউ। কে হতে পারে এই মাস্টার মাইন। প্রীতি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে,
“এই খেলার পিছনে যেই থাকুক না কেন তাকে খুঁজে বের করবই৷ সে যে গর্তে লুকিয়ে থাকুক না কেন, তাকে গর্ত থেকে বের করে শাস্তি দিবে৷ সকল শত্রুকে ধরে ধরে নিজ হাতে শাস্তি দিবে। তবে কাউকে সাথে নিয়ে জীবন যুদ্ধে নামবে না৷ সে একাই জীবন যুদ্ধে নামবে এবং সে বিজয়ী হবে।”
চলবে…