#প্রাণেশ্বরী
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
#পর্ব-৪১
[আজকের পর্বটি বিশাল বড়। তাই এফবি লাইটে শো না করলে মেইন ফেসবুক ব্যবহার করবেন।]
“আমার মোবাইল দেখেছেন কোথাও? পাচ্ছি না আমি।”
প্রাণের কথায় পিলে চমকে উঠলো ছন্দ। তটস্থ দৃষ্টিতে তাকালো, “ক..কোথায় যাবে? হবে এখানে কোথাও।”
ছন্দের সন্দিগ্ধ কন্ঠ শুনে প্রাণ আয়নার মধ্য দিয়ে তার প্রতিবিম্বের দিকে তাকালো। ছন্দের দৃষ্টির সাথে দৃষ্টি মিলতেই হেয়ার ড্রায়ারটা অফ করে পাশে রেখে ঘুরে বসলো সে। শা*নিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কি কিছু লুকাচ্ছেন ছন্দ?”
ছন্দ জিহ্বা দিয়ে অধর জোড়া ভিজিয়ে কাঠ হয়ে আসা গলায় ঢোক গিললো একবার। স্তিমিত কন্ঠে উত্তর দিল, “ন..না মানে হ্যাঁ।”
ছন্দ চেয়েও পারলো না মিথ্যা বলতে। প্রাণের চোখের দৃঢ়তা,প্রখরতা বাধ্য করলো তাকে সত্যটা স্বীকার করতে। এভাবেও সত্য বেশিক্ষণ লুকিয়ে থাকে না, আগে বা পরে বেরিয়েই আসে। তাহলে এখন ভণিতা করে কি লাভ? ছন্দের স্বীকারোক্তির বিপরীতে ছোট একটি প্রশ্ন করলো, “কি?”
ছন্দ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। এগিয়ে গেল কাবার্ডের সামনে, ভিতর থেকে প্রাণের ফোনটা বের করে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “ফোন খুলে ডাটা অন করুন। আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।”
প্রাণ কৌতূহল দৃষ্টিতে কিয়ৎক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফোনটা নিয়ে অন করলো। তার সম্মুখেই বসলো ছন্দ, নির্লিপ্ত ভঙ্গি তার। ডাটা অন করার সাথে সাথে হাজারো নোটিফিকেশনের শব্দে স্তব্ধ হয়ে গেল সে। বার কয়েক পলক ফেলে স্থির ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলো স্ক্রিনের দিকে। কিঞ্চিৎ সময়ের পর শব্দটি বিরতি নিল। প্রাণ সংকোচিত হাতে ঢুকলো নিজের সোশ্যাল একাউন্টে। যৎসামান্য সময় নিউজফিড, নোটিফিকেশন ঘাটাঘাটি করার পর বুঝতে পারলো আসল ঘটনা। নম দৃষ্টিতে তাকালো ছন্দের দিকে। ছন্দ তখন ম্লান নয়নে তার পানেই তাকিয়ে ছিল। দৃষ্টি বিনিময় হলো কয়েক পলকের জন্য। প্রাণ দৃষ্টি সরিয়ে নত করলো, পুনরায় দেখতে থাকলো নিউজপোর্টাল ও হেডলাইনগুলো।
সম্পূর্ণ সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে হট টপিক ও ট্রেন্ডিং নিউজ হিসাবে ছড়িয়ে আছে দুটি ঘটনা। প্রথম ঘটনা হচ্ছে নয়নের অস্বাভাবিক মৃ*ত্যু নিয়ে। সপ্তাহখানেক আগে নয়নের লা*শ উদ্ধার করা হয়েছে গাজীপুরের কোন এক আবর্জনা স্তুপের মধ্য থেকে। উদ্ধারকৃত লা*শের অবস্থা ছিল নি*র্ম*ম৷ বিবরণ যতটা না নৃ*শং*স তার চেয়েও লোমহর্ষক ছবিগুলো। তবে নয়নের এমন করুণ মৃ*ত্যুর রহস্য উদঘাটন হয়নি এখনো। তদন্ত চলছে ঠিক কিন্তু কোন প্রমাণ খুঁজে পাওআ যায়নি এখন পর্যন্ত। নয়নের নিরুদ্দেশ হওয়া থেকে তার মৃ*ত্যু পর্যন্ত সবই ধোঁয়াশায় ঘেরা। কারো মাথায় আসছে না একসময়ের সুপারস্টার নয়ন মেহরাবের এমন বীভ*ৎস, রহস্যজনক মৃ*ত্যুর পিছনের কারণ। যদিও ঘুরে ফিরে অনেকেই সন্দেহের সূঁচ প্রাণের দিকেই তাক করছে কিন্তু প্রমাণ না থাকায় সব অ*সাড় হয়ে পড়ছে। কোন এক বিশেষ কারণে তদন্ত কমিটিও প্রাণকে নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। কেন? তা জানা নেই। তার উপর, উপযুক্ত প্রমাণ না থাকায় এবং নয়নের বাবা-মার অবস্থা শোচনীয় হওয়ায় নয়নের ক্যাসটাও ঝিমিয়ে পড়েছে। জনসাধারণ ধরেই নিয়েছে হয়তো সময়ের আবর্তনে ক্যাসটা শার্টডাউনও হয়ে যাবে। মানুষের মস্তিষ্ক হতে বিলুপ্ত হয়ে যাবে নয়ন নামক মানুষটির নাম,কর্ম সব।
আর দ্বিতীয় ঘটনাটি হচ্ছে, নিহাল ও মেহরিমা শিকদারের ডিভোর্স। তেইশ বছরের সংসার আচমকা এভাবে ভেঙ্গে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারছে না জনসাধারণ। তার উপর, দুইপক্ষের কেউই খোলাসা করছে না কিছু। শেষ বয়সে এসে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানে কি? অনেকের কাছেই নিহাল ও মেহরিমা শিকদারের জুটি ছিল অনুপ্রেরণামূলক। সুখী দম্পতির উদাহরণ ছিলেন তারা। আইড কাপল হিসাবেও অনেকেই মান্য করতেন। যার দরুণ, তাদের সম্পর্ক ভাঙ্গনের কথা শুনে আফসোস করেছে সবাই। যদিও সেই আফসোস বেশিদিন থাকলো না যখন মেহরিমা দ্বিতীয় বিয়ে করে ফেললো। তখন অনেকই অনুমান করে নিল মেহরিমা বোধহয় নিহালকে ধোঁ*কাই দিয়েছিল। যার জন্য নিহাল তাকে ডিভোর্স দেন। তবে কিছুদিনের মাঝেই বেরিয়ে আসে নতুন খবর। কিভাবে যেন ফাঁস হয়ে যায় হুমায়রা শেখ ছিলেন তার প্রথম স্ত্রী এবং প্রাণ হচ্ছে তার প্রথম ঘরের সন্তান। হুমায়রার মৃ*ত্যুর পরই মেহরিমার সাথে দ্বিতীয় বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি এবং প্রাণকে দূরে সরিয়ে দেন নিজের থেকে। হুমায়রা ও প্রাণের সত্য লুকায়িত রাখার জন্য তোপের মুখে পড়তে হয় নিহাল শিকদারকে। সামনে বেরিয়ে আসলো তার আরও কয়েকটি মিথ্যে। যদিও তিনি কোনবারই মুখ খুলেননি কোন বিষয় নিয়ে কিন্তু নেটিজেনরা ক্রিটিসাইজ করতে পিছপা হলো না। প্রাণ এখন গায়েব আছে বলেও অনেক কথাই বানালো তারা। নয়নের ঘটনার সাথেও তাকে জর্জরিত করলো প্রতিক্ষণে। কটুকথা বলতে কার্পণ্য করছে না। তবে এর মাঝে প্রাণের সাপোর্টাররাও তার পক্ষ নিতে ভুলছে না। এখানে প্রাণও ভুক্তভোগী বলে দাবী করছে অনেকেই। সব মিলিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চলছে তুমুল বিদ্বেষ। সাথে আলোচনা-সমালোচনা তো আছেই। বি*ষা*ক্ত এক পরিবেশ ছড়িয়ে আছে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে।
প্রাণ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। তার বুঝতে বাকি রইলো না ছন্দ কেন তাকে এসব থেকে অজ্ঞাত রেখেছে। তাই সে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি এসব জেনেছেন কবে?”
ছন্দ মাথা নুয়ে বলল, “কয়েকদিন আগেই।”
প্রাণ আর প্রশ্ন করলো না। হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকলো মেসেজ চেক দিতে। সেখানে দেখা মিললো চৈতির মেসেজের, নিহাল শিকদার তার সাথে যোগাযোগ করতে চাইছেন তাই নাম্বার চাচ্ছেন তার কাছে। সে এখন তাকে কোন ইনফরমেশন দিবে কি-না জানতে চাইছে। প্রাণ লম্বা নিঃশ্বাস ফেললো। চৈতিকে না বোধক উত্তর জানিয়ে ফোনটা অফ করে পাশে রেখে দিন। স্মিথ হেসে ছন্দযে জিজ্ঞেস করলো, “লুকালেন কেন এসব আমার থেকে?”
“আপনার মেন্টাল কন্ডিশনে ইফেক্ট পড়বে বলে। ভয়ে ছিলাম যদি আবার ডিপ্রেশনে চলে যান। আপনাকে পুনরায় কষ্ট পেতে দেখতে পারতাম না আমি।”
প্রাণের ভাবান্তরহীন চাহনি, “কষ্ট পাচ্ছি না আমি।”
প্রাণের নিষ্প্রভ কন্ঠ জানান দিচ্ছে কিছুটা হলেও ইফেক্টেড হয়েছে সে। অথচ অভিব্যক্তিতে তা প্রকাশ করতে নারাজ সে। ছন্দ কিছু বলার আগেই প্রাণ জিজ্ঞেস করলো, “নয়নের ক্যাস থেকে আমাকে সরালেন কিভাবে?”
ছন্দ নিস্পৃহ দৃষ্টিতে তাকালো, “আপনার থেকে সব লুকানো এত দুষ্কর কেন? বুঝে কিভাবে যান সবকিছু?”
প্রাণ প্রত্যুত্তরে স্বল্প পরিসরে হাসলো, “ঘটনা এখানে পরিষ্কার, নয়নের মৃ*ত্যুতে সন্দেহের আঙ্গুল সর্বপ্রথম আমার উপরই উঠার কথা। কেন না, তার সাথে ঝামেলা একমাত্র আমার চলছিল। কম-বেশি সবাই জানতো আমার সাথে প্রতারণা করার জন্যই ওর ক্যারিয়ার নষ্ট হয়েছে। উপরন্তু, আমি দেশেও নেই। অথচ আমাকে নিয়ে পুলিশের মাথাব্যথা পর্যন্ত নেই। বিষয়টা দৃষ্টিকটু না? আর আপনি এসব জানার পর হাতের উপর হাত রেখে বসবেন তা লাগে না আমার।”
ছন্দ জানে প্রাণের মন-মস্তিক প্রচন্ড বিচক্ষণ। সামান্যটুকু ফাঁকই যথেষ্ট কারো চালাকি ধরে ফেলার। ছন্দ রসিক কন্ঠে বলল, “আপনি নায়িকা কেন হলেন বলুন তো? আপনার তো ‘সি আই ডি’-তে যোগদান করা উচিৎ ছিল।”
“উত্তর কিন্তু পায়নি আমি।”
“আমি বেশি কিছু করিনি। শুধু আপনার রিপোর্ট আর কিছু ডকুমেন্টস জিসানকে দিয়ে পুলিশের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলাম। যাতে তারা আপনার নাম আগেই ক্লিয়ার হয়ে যায়।”
প্রাণ অসন্তোষজনক দৃষ্টিতে তাকালো। কিন্তু ছন্দের চাহনিতে সত্যতা খুঁজে পেয়ে বলল না কিছু। হিসাব মিলালো অন্যভাবে। এখানে যে নিহাল শিকদারের হাত ছিল তা স্পষ্ট। কেন না, বিষয়টা এতটুকুতেই ক্ষান্ত হওয়ার কথা ছিল না। যদিও সে জানে, নিহাল কোন কিছু নিঃস্বার্থভাবে করেনি, এর পিছনে নিজ স্বার্থই লুকায়িত ছিল তার। প্রাণের ঘৃণায় গা রি রি করলেও অধরের কার্নিশে ঝুললো শ্লেষের হাসি। ছন্দ তা লক্ষ করেই জিজ্ঞেস করলো, “আপনি ঠিক আছেন?”
প্রাণ মন্থর কন্ঠে বলল, “আ’ম ফাইন।”
ছন্দ তা দেখে প্রাণের দিকে সামান্য ঝুঁকলো। তার দুই গালে নিজের শীতল হাত দু’টো ছুঁয়ে দিয়ে বলল, “মিথ্যের খোলস আমার সামনে ধারণ করবেন না। আমি আপনার স্বচ্ছতা দেখতে চাই, কপটতা না।”
প্রাণ মৌন রইলো। আলগোছে মাথা রাখলো ছন্দের বক্ষের মধ্যখানে। ছন্দও তাকে আগলে নিয়ে মাথায় বুলিয়ে দিল ভরসার হাত। নিভৃতে বুঝালো, সে আছে তার পাশে। সবসময়!
______
সময় বহমান স্রোতের ন্যায়। যে কি-না কখনো স্থির হতে জানে না৷ সর্বদা গতিশীল থাকাই তার একমাত্র ধর্ম। এক মাস আগে বিসিবি থেকে ডাক পড়ায় ছন্দের ফিরে যেতে হলো বাংলাদেশে। টিম ক্যাপ্টেন হওয়ায় আসন্ন ম্যাচের প্রস্তুতি তার তত্ত্বাবধানে হওয়া আবশ্যক। যদিও সে চাচ্ছিল না ভিনদেশে প্রাণকে একা রেখে যেতে তবে প্রাণের বেশ কয়েকটা সেশন বাকি থাকায় একপ্রকার বাধ্য হয়েই রেখে আসতে হলো তাকে। দায়িত্ব সব বুঝে নিল আরশাদ,নাফিসা ও ফারিনাজ। সে জানে প্রাণ এখানে ভালো থাকবে তাই দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করলো। কিন্তু যার প্রাণ ভিনদেশে সে স্বদেশে ভালো থাকে কি করে?
রাতে সোফায় বসে ফারিনাজ ইউটিউবে সাম্প্রতিক ছন্দের একটা ইন্টারভিউ দেখছিল। পাশেই নাফিসা বসে প্রাণের মাথায় তেল দিয়ে মালিশ করে দিচ্ছিলেন। কয়েকদিন ধরে নাকি তার মাথা ভার ভার লাগছিল, নাফিসা কথাটা জানামাত্র তেল নিয়ে আসলেন মালিশ করে দেওয়ার জন্য৷ এতে ঈষৎ পরিমাণ হলেও স্বস্তি পাবে বলে। নাফিসা নিজ কর্মে মগ্ন থাকলেও প্রাণের সম্পূর্ণ মনোনিবেশ ফারিনাজের ফোনের দিকে। টক শো এর পরিচালিকা মারিয়া নূর বেশ হাসি-ঠাট্টা করেই কথা বলছে ছন্দের সাথে। মাঝে মধ্যে সুযোগ বুঝে ফ্লার্টও করছে, যা কি-না প্রাণের মনে ঈর্ষান্বিত অনুভূতির আবির্ভাব ঘটাচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে তি*র্য*ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে মারিয়ার দিকে। কথাবার্তার একপর্যায়ে মারিয়া জিজ্ঞেস করলো, ছন্দের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনজন ব্যক্তি কে কে? বা তার কাছে সবকিছুর উর্ধ্বে কারা?
ছন্দ তখন স্নিগ্ধ হাসি উপহার দিয়ে উত্তর দিল, “আমার পরিবার,বন্ধুবান্ধব আর….”
মারিয়া কৌতূহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, “আর?”
ছন্দ ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি!”
ছন্দের আকস্মিক উত্তরে প্রাণ চোখ বড় বড় তাকালো। পরমুহূর্তেই মসৃণ গালে দেখা দিল লাজ। এদিকে স্ক্রিনে, মারিয়াও ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ছন্দের দিকে। ছন্দ তার দিকে তাকিয়ে ফিচেল হাসি দিতেই মারিয়া হেসে বলল, “ফ্লার্ট করছেন?”
ছন্দ প্রত্যুত্তরে বলল, “হয়তো! কেন লজ্জা পেলেন বুঝি?”
মারিয়া সম্পূর্ণ বিষয় মজা হিসাবে নিয়ে অন্যপ্রশ্নে হিসাবে চলে গেল। অথচ কেউ বুঝলোও না ছন্দ কাকে সম্বোধন করে কথাটা বলল। ফারিনাজও বুঝতে না পেরে প্রাণকে দেখিয়ে বলল, “দেখেছ! ভাই কত খারাপ। ঘরে বউ থাকতে বাহিরে অন্য এক মেয়ের উপর লাইন মারছে।”
প্রাণ কিছু না বলে ঠোঁট কাঁ*মড়ে নিজের লজ্জালু হাসিটুকু আড়াল করার চেষ্টা করলো। নাফিসা মেয়ের কথা শুনে গরম চোখে তাকিয়ে বললেন, “নিজের ভাইয়ের সম্পর্কে একদম আজেবাজে কথা বলবি না।”
ক্ষণেই ফারিনাজ চুপসে গেল। মায়ের রাগ খুব ভয় পায় সে। নাফিসা মালিশ করা শেষে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন, “তোর না সামনে এক্সাম? মোবাইল রাখ, যা পড়তে বোস।”
ফারিনাজ মুখ আঁধার করে বলল, “যাচ্ছি।”
নাফিসা,ফারিনাজ চলে যেতেই প্রাণ উঠে নিজের রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ইউটিউবে পুনরায় ছন্দের সেই টক শো-এর টেলিকাস্টটা দেখতে থাকলো। সম্পূর্ণটা না, শুধু সেই ‘আপনি’ বলা অংশটুকু। যতবারই দেখছে ততবারই শত প্রজাপতি ডানা মেলছে মনের অন্দরমহলে। এর মাঝে কখন যে রাত এগারোটা বেজে গেল তার হদিস পেল না প্রাণ। হঠাৎ ছন্দের ভিডিও কল আসায় সে উঠে বসলো। নিজেকে একবার আয়নায় পরোক্ষ করে নিয়ে কল রিসিভ করলো। পরক্ষণেই ছন্দের হাস্যজ্বল চেহেরা প্রদর্শিত হলো স্ক্রিনে, “কেমন আছেন?”
প্রাণ মিনমিনে কন্ঠে বলল, “এইতো! আপনি?”
ছন্দ বিছানায় উপর হয়ে শুয়ে স্তিমিত কন্ঠে বলল, “প্রাণকে ছাড়া ছন্দ ভালো থাকে কিভাবে বলুন?”
কথাটা শুনে প্রাণের মুখশ্রী হলো লাজরাঙা। সে অন্যদিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে বলল, “ফ্লার্ট করার মানুষের অভাব পড়েছে কি?”
ছন্দ প্রাণের কথা বুঝতে না পেরে আগ্রহান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো কিয়ৎক্ষণ। পরক্ষণে ভাবলো প্রাণ মজা করছে তাই দুরন্তপনার হাসি অধরের কোণে ঝুলিয়ে বলল, “অভাব তো পড়েছেই বটে। বিবাহিত ট্যাগ না পড়া সত্ত্বেও সুন্দরী রমণীরা আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। ফিরেও তাকাচ্ছে না। কেমনটা লাগে!”
ছন্দ কথাটা দুঃখের সাথে বলার চেষ্টা করলেও পারলো না। তার এক্টিং স্কিল খুবই বাজে। তবে প্রাণ ভিতরে ভিতরে ফুঁসে উঠলো ঠিক। ছন্দের দিক তাকিয়ে ক্রোধোদ্দীপক কন্ঠে বলল, “ফারিনাজ ঠিকই বলে, আপনি জঘন্যতম খারাপ।”
প্রাণের কন্ঠ শুনে ছন্দ বিস্তৃত হাসলো, “আমি কখন বললাম আমি ভালো?”
প্রাণ কথা বলল না। তু*খো*ড় দৃষ্টিতে তাকালো শুধু। ছন্দ তা দেখে কন্ঠস্বর কয়েক ধাপ নামিয়ে বলল, “মন,দৃষ্টি যার আপনি নামক মা*দকতায় ঘেরা, তার আবার অন্য কারো সান্নিধ্যের দরকার কি?”
কথার অর্থ বুঝতে পেরে প্রাণ মুখ ঘুরিয়ে বলল, “জানি না আমি।”
ছন্দ কথা ঘুরানোর জন্য বলল, “রাতে মেডিসিন নিয়েছেন?”
“হু!”
ছন্দ সন্দিহান কন্ঠে বলল, “কই দেখি ঔষধের পাতা দেখান তো।”
প্রাণ হতাশাজনক নিঃশ্বাস ফেলে ঔষধের পাতা বের করে দেখালো। ছন্দের অভ্যাস এটা, প্রতিবেলা ফোন করে তার ঔষধের পাতা চেক করবে আবার পরে নাফিসাকে ফোন করেও সিউর হবে প্রাণ ঔষধ খেয়েছে কি-না। কোনবেলা না খেলে ভিডিও কলে বসিয়ে তাকে ঔষধ সেবন করাবে সে। প্রাণের ঔষধ খাওয়া নিয়ে কাহিনী আছে বলেই ছন্দ তাকে এসব বিষয়ে সামান্যটুকু বিশ্বাস করে না। পাতা সব গুছিয়ে রেখে প্রাণ ছন্দের দিকে পূর্ণ নয়নে তাকালো, “ফিরবেন কবে?”
ছন্দ ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কেন? প্রাণপাখি কি আমাকে মিস করছে? নাকি বর স্বদেশ বলে বিদেশে মন টিকছে না, কোনটা?”
“এমন কিছুই না।”
ছন্দ প্রাণের দিকে তাকিয়ে বলল, “খুব দ্রুত ফিরবো। আপনাকে ছাড়া আর থাকতে পারছি না। চুম…”
প্রাণ খট করে ফোনটা কেটে দিল। বিরবির করে বলল, “অ*সভ্য!”
_____
ভরদুপুরে কলিংবেল বেজে চলেছে অনাবরত।ফারিনাজ গিয়েছে কলেজে, নাফিসাও গিয়েছেন সামনের কনভিনিয়েন্স স্টোরে টুকটাক জিনিসপত্র কিনতে। বাসায় তখন প্রাণ একা। এতবার ডোরবেল বাজতে দেখে প্রায় হন্তদন্ত হয়েই দরজার কাছে আসলো সে। ভাবলো হয়তো ফারিনাজ বা নাফিসা এসেছে তাই না দেখেই দরজা খুললো সে। পরক্ষণেই ছন্দকে সম্মুখে দেখে ভড়কে উঠলো, গোল গাল চোখে তাকিয়ে থাকলো মানুষটার দিকে। ছন্দ প্রাণের মার্বেল মার্বেল চাহনি দেখে কিঞ্চিৎ হাসলো। আগাম বার্তা ছাড়াই নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরলো তাকে। কর্ণরন্ধ্রে অধর ছুঁয়ে দিয়ে বলল, “আই মিসড ইয়্যু প্রাণপাখি।”
ছন্দের কথায় প্রাণ শিমুল ফুলের ন্যায় নুইয়ে গেল৷ আলতো করে মুঠো করে ধরলো ছন্দের ইস্ত্রি করা শার্টের শেষ অংশ৷ ভাঁজ ভাঙালো মুহূর্তে। ছন্দের মনে একচমক কাঁপন ধরাতে প্রাণ বলে উঠলো, “মি টু।”
_____
ড্রয়িংরুমে সকলে গোল করে বসে আছে। নাফিসা তো ইচ্ছে মত খাওয়াচ্ছেন ছন্দকে৷ একের পর এক তার পছন্দের খাবার হাজির করছেন টেবিলে। ছন্দের হাজারবার বারণ করা সত্ত্বেও শুনেননি তিনি। একমাস পর ছেলে পুনরায় ফিরেছে, ভালো-মন্দ রাঁধবেন না তিনি? ছন্দ খাচ্ছে আর ফাঁকে ফাঁকে আরশাদের সাথে কথা বলছে৷ পাশেই বসে ফারিনাজ কথা বলছে ফারহাজ আর তারিনের সাথে। একটু আগে প্রাণও যুক্ত হয়েছে সে দলে। দুইজনের কথা শেষে ফারিনাজ ছন্দের দিকে তাকিয়ে বলল, “ভাই! রাতে কিন্তু তুমি আমার প্রোজেক্টে হ্যাল্প করবে।”
ছন্দ মুখে খাবার পুরে বলল, “সম্ভব না। একটু পর-ই বেরিয়ে যাব আমি।”
ফারিনাজ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “বেরিয়ে যাবে মানে?”
ছন্দ জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে একটা চুমুক দিয়ে বলল, “এবারের ম্যাচ লন্ডন স্টেডিয়ামে হবে। দলের সকলেই হোটেলে উঠেছে, ম্যাচ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাকেও ওদের সাথেই থাকতে হবে।”
নাফিসা ড্রয়িংরুমে আসতে আসতে জিজ্ঞেস করলেন, “ম্যাচ কবে তোর?”
ছন্দ বলল, “তিনদিন পর।”
প্রাণ শ্লথ দৃষ্টিতে তাকালো ছন্দের দিকে৷ কেন যেন তার যাওয়ার কথা শুনেই মনটা বিষিয়ে গেল৷ তবে অভিব্যক্তিতে তা প্রকাশ হতে দিল না। ছন্দ আরও ঘন্টা খানেক থাকলো। মাঝে প্রাণের সাথে সময়ও কাটালো কতক্ষণ। অতঃপর সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল হোটেলে।
______
আজ বাংলাদেশ সাথে শ্রীলঙ্কার টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। বিকেলের কোমল আলো চারদিকে পড়তেই ধারাভাষ্যকারদের আহ্বানে সকল খেলোয়াড় নেমে পড়লো মাঠে। ছন্দ মাঠে প্রবেশ করা মাত্র চারদিকে একবার চোখ বুলালো। সামনে সারির দিকে চোখ যেতেই ফারিনাজকে চোখে পড়লো তার। সে হাত নাড়িয়ে যাচ্ছে। ছন্দ তাকে খেয়াল করতেই ইশারায় অল দ্যা বেস্ট বলল। ছন্দ হেসে পাশে তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে গেল। ফারিনাজের একপাশে আরশাদ ও নাফিসা বসে, অন্যপাশে প্রাণ। আরশাদ ও নাফিসাকে দেখে এতটা না ভরকালেও প্রাণকে দেখে সে বেশ ভড়কেছে। প্রাণ সর্বদাই কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ এড়িয়ে চলে। সোশ্যাল গ্যাদারিং তার মোটেও পছন্দ না। আর না ক্রিকেট। আজ সেখানে প্রাণ ভরা স্টেডিয়ামে এসেছে তার ম্যাচ দেখতে? এ আদৌ বিশ্বাসযোগ্য? এ যেন মস্তিষ্কের কোন মিষ্টি, সুখকর ভ্রম। যৎসামান্য সময় লাগলো তার প্রাণের উপস্থিতি বিশ্বাস করতে। ক্ষণেই ঠোঁটের কোণে ঝুললো চওড়া হাসি৷ মনে মনে ঠিক করলো যত যাই হোই, আজকের ম্যাচে সে জিতেই ছাড়বে। তার প্রেয়সীকে সে নিরাশ হতে দিবে না কোনক্রমেই।
দেখতেই দেখতে ম্যাচ শুরু হয়ে গেল। টস জিতলো ছন্দরা। যার দরুণ প্রথমে ব্যাটিং করলো তারা। ব্যাটিংয়ে নিজের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখালো সে। প্রত্যেক বলে ছক্কা ও চারের বর্ষণ ঝরলো যেন। ফিল্ডিং,বোলিংয়েও ছিল দুর্দমনীয়। বাকি খেলোয়াড়ও আজ প্রচন্ড এক্টিভ ছিল। যার দরুণ আড়াই ঘন্টার পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই ম্যাচ জিতে গেল ছন্দের দল। উচ্ছাসের স্রোত বয়ে গেল সকলের মাঝে। ফারিনাজ তো খুশিতে লাফাচ্ছে রীতিমতো। নাফিসা ও আরশাদের চোখে-মুখে খেলা করছে প্রশান্তি এবং গর্বের গভীর ছাপ। প্রাণও প্রফুল্লচিত্তে দাঁড়িয়ে করতালিতে মেতে উঠেছে। ঠিক সময় ছন্দ ঘুরে ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে দিল প্রাণের দিকে৷ প্রথমদিকে প্রাণ হতবিহ্বল হলেও পড়ের দিকে হেসে ফেললো৷ মানুষটা বড্ড পাগলাটে ধরনের।
পরিশিষ্টঃ
লন্ডন স্টেডিয়ামে আজকের ম্যাচের লাইভ টেলিকাস্টের জন্য বাংলাদেশি রিপোর্টাররা উপস্থিত থাকায় প্রাণের উপস্থিতি এবং ছন্দের তার দিকে তাকিয়ে ফ্লায়িং কিস দেওয়ার ঘটনাটি ঘন্টাখানেকের মাঝে ছড়িয়ে পড়লো সম্পূর্ণ ইন্টারনেটে। হাজারটা নিউজ পোর্টাল ছাঁপানো তাদের নিয়ে। ধারণা করা হলো, তারা দুইজন আবদ্ধ কোন গভীর প্রণয়ের সম্পর্কে। নেটিজেনরাও তুলকালাম কান্ড বাঁধালো যেন। দুইজনকে নিয়ে ভালো-মন্দ মন্তব্য ছুঁড়লো লক্ষেরও কাছাকাছি। এর কোনটাই প্রাণ ও ছন্দের নজর এড়ালো না। তবে বর্তমানে দুইজনই চুপ থাকাটা শ্রেয় মনে করলো বলে তাদের সম্পর্ক নিয়ে অফিশিয়ালি কোন স্টেটমেন্ট পাবলিশ করলো না। যদিও ছন্দের বাধ্যবাধকতা ছিল বিধায়, সে শুধু তার টিম মেম্বার এবং কোচকে জানালো বিয়ের ব্যাপারে। তারাও উপচে পড়লো অভি*নন্দন জানাতে আর ট্রিট নিতে।
আঁধার ছেঁয়ে আছে ধরণীর বুকে। অন্তরিক্ষে অজস্র নক্ষত্রের মধ্যখানে পূর্ণ চাঁদটি ছড়াচ্ছে চন্দনরাঙ্গা দ্যুতি। মাঝে-সাঝে আবার আবছায়া মেঘের আনাগোনায় লুকোচুরি খেলছে। ঠান্ডা, শান্ত ঝিরিঝিরি বাতাসে থমাস নদীর তীব্র স্রোত ছলাৎ ছলাৎ শব্দ তুলছে মূর্ছনা। জনমানবশূন্য ছোট রিভার ক্রুজের ছাদের উপর বসে প্রাণ ও ছন্দ উপভোগ করছে রাতের লন্ডন শহর। ক্রুজের চারপাশে লাগানো ঝিকিমিকি আলো প্রতিচ্ছবি হয়ে ভাসছে স্রোতস্বিনীর বক্ষে৷ প্রাণকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ছন্দ গল্প করছে হাজার খানেক। সবটাই আজকের ঘটনা নিয়ে৷ প্রাণ নীরব শ্রোতা হয়ে শুনছে সব মনোযোগ সহিত। ছন্দ বলছে, “আমি কখনো ভাবিনি আপনি কখনো আমার ম্যাচ দেখতে আসবেন। আমি ঠিক বুঝাতে পারবো না।”
কথাটা বলে প্রাণের এক হাতের উল্টো পিঠে আলতো করে অধর ছুঁয়ে দিল সে, “থ্যাংকস ফর কামিং প্রাণ। থ্যাংকস আ লট।”
প্রাণ ধীর কন্ঠে বলল, “আপনজনদের থ্যাংকস বলতে নেই।”
প্রাণ তাকে আপনজন ভাবে জেনে ছন্দ প্রাণবন্ত হাসলো। বলল, “পরবর্তীতে খেয়াল থাকবে। তবে একটা প্রশ্ন।”
“কি?”
ছন্দ প্রাণের কাঁধে থুতনি রাখলো। একটু সময় নিয়ে বলল, “আপনি কি পরবর্তীতে এক্টিং করতে চান?”
প্রাণের নিঃসংকোচ উত্তর, “নাহ! সাধারণ একটা জীবন চাই। যা কি-না আড়ম্বরপূর্ণ না হলেও শান্তিপূর্ণ হবে। তবে….”
“তবে কি?”
প্রাণ সন্তর্পনে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “আমি চাই যে কাজগুলোর সাথে আমি এখন অব্দি চুক্তিবদ্ধ সেসব কাজ শেষ করতে। অতঃপর চিরতরের জন্য ছাড়তে এই বি*ষা*ক্ত জগৎটি।”
ছন্দ ম্রিয়মাণ হেসে জিজ্ঞেস করলো, “তাহলে আমি যদি আমাদের সম্পর্কটা পাবলিক করতে চাই তাহলে আপনার কি কোন সমস্যা হবে? বা আপনার ক্যারিয়ারে কোন ইফেক্ট পড়বে?”
প্রাণ ছন্দের প্রশ্নের গভীরতা বুঝতে পারলো। গলার স্বর গাঢ়,বিবশ শুনালো তার, “আপনার সাথে জড়িত কোন কিছুই আমার সমস্যার কারণ হতে পারে না ছন্দ।”
প্রাণের উত্তর শুনে মনে হলো নির্ঝরিণী আজ উলটো দিকে প্রবাহমান। প্রণয়িনীর পাথর বুকে তবে কি সত্যি প্রণয়ের ফুল ফুটেছে? প্রমত্তচিত্তের যে উথাল-পাতাল ঢেউয়ে ডু*বেছে সে বহু পূর্বে আজ সেথায় ডু*বেছে তার প্রেয়সীও? ছন্দের শ্যাম মুখশ্রী জুড়ে খেলা করলো প্রশান্ত ভাব। হাতের বাঁধন দৃঢ় করে প্রাণের কানের নিচে আলতো করে নাক ঘেঁষে দিল সে। মুহূর্তেই বিপরীতমুখী স্বভাবের রমণীর মাঝে দেখা দিল স্বভাবসুলভ নারী লজ্জা। নিজের ভর ছেড়ে দিল সে ছন্দের বুকে৷ উপভোগ করলো মিঠে পরিবেশটি৷ ছন্দ প্রাণের মাঝে আচ্ছন্ন হয়ে বিভোর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, “আই লাভ ইয়্যু টু দি মুন এন্ড ব্যাক প্রাণপাখি।”
প্রাণ মুখে না বললেও আনমনে কাঙ্ক্ষিত বুলিটি আওড়ালো কয়েকবার। অতঃপর অবশেষে জবানে এনেই ফেললো কথাটি, “আই লাভ ইয়্যু টু ছন্দ।”
তৎক্ষনাৎ ছন্দ মাথা তুললো৷ বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকালো প্রাণের দিকে। আদৌ এ প্রাণ তো? নাকি তার মতোই দেখতে কোন ছদ্মবেশী? নাকি আজ শুধু তার ভড়কে যাওয়ার দিন? একসাথে এত চমক কি নিতে পারবে তার দূর্বল হৃদয়? অবিশ্বাসের চোটে যদি এখনই মাইন স্ট্রোক করে বসে সে? এই সুখানুভূতি যে সহ্য করার মত না। প্রাণ পাশ ফিরে তাকিয়ে ছন্দের বিবশ অভিব্যক্তি দেখে হেসে ফেললো। হাসির রিনিঝিনি শব্দ ছন্দের কর্ণকুহরে ঝংকার তুলতেই মোহাবিষ্ট নয়নে তাকালো সে। কন্ঠস্বর নামিয়ে স্তিমিতভাবে বলল, “আপনার শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার কি জানেন? আপনার হাসি প্রাণ। কখনো হারিয়ে যেতে দিবেন না একে,প্লিজ।”
কথাটি প্রাণের কর্ণগোচর হলো কি-না কে জানে? তবে সে হাসি থামালো না। প্রাণোচ্ছল হাসিটা বুঝিয়ে রাখলো সরু ঠোঁটের শেষপ্রান্তে।
______
এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে প্রাণ ও ছন্দ। কিছুক্ষণ আগেই বাংলাদেশে এসে ল্যান্ড করেছে তারা। প্রায় পাঁচমাস পর নিজের মাটিতে পা রেখে প্রাণ বুকভড়ে নিঃশ্বাস নিল। ঠোঁটের কোণে স্থান পেল তৃপ্তির হাসি। পাশেই ছন্দ তার একটি হাত শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে। আশেপাশে আছে কয়েকজন দেহরক্ষী। যার দরুণ তাদের দু’জনের মুখে চশমা,মাস্ক থাকা সত্ত্বেও আম জনগন তাকাচ্ছে ঘুরে ঘুরে৷ মার্বেল মার্বেল চাহনিতে চেনার চেষ্টা করছে দুইজন ব্যক্তিকে। এদিকে, ভিতর থেকেই দেখা যাচ্ছে বাহিরে উপচে পড়া রিপোর্টারদের ভিড়। ছন্দ সেদিক তাকিয়ে প্রাণকে জিজ্ঞেস করলো, “আজ তাহলে সকলে জেনেই যাক আমাদের সম্পর্কটা কি? লুকোচুরি খেলা এবার নাহয় শেষ হোক? আপনার নামের সাথে জুড়ে যাক আমার নাম চিরতরে?”
প্রাণ ছন্দের চোখের দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে বলল, “তাই হোক।”
ছন্দ প্রাণের হাতের মুঠো শক্ত করে ধরে এগিয়ে গেল সামনের দিকে। হয়তো এখান থেকেই ঘটবে তাদের নব্য সূচনার এক মিষ্টি অধ্যায়। যেখানে প্রাণের সকল গ্লানি,দুঃখ,আর্তনাদ মিইয়ে যাবে প্রিয়জনের ভালোবাসার দুর্বার বানের তোড়ে। পাবে এক স্বাভাবিক, ভালোবাসায় মাতোয়ারা জীবন। আর পাগলাটে প্রাণেশ্বরও সুযোগ পাবে তার প্রাণেশ্বরীর নাম গোটা অক্ষরে ব্যক্তিগত দলিলে লেখার। একান্তভাবে, আজীবনের তোড়ে।
~~~সমাপ্ত~~~
[অবশেষে বিদায় নিল প্রাণেশ্বরী। এতদিন তাকে অসীমাহীন ভালোবাসা দেওয়ার জন্য পাঠকদের নিকট কৃতজ্ঞতা,ভালোবাসা দুটোই জানাচ্ছি। তবে আজ শেষবারের মত ‘প্রাণেশ্বরী’ থেকে সকলের ভালোবাসা কুড়িয়ে নিতে চাচ্ছি। ভালো-মন্দ যাই লাগুক আজ প্লিজ সকলে মন্তব্য করে জানাবেন💙]