#প্রাণেশ্বরী #Writer_Asfiya_Islam_Jannat #পর্ব-২৩+২৪

#প্রাণেশ্বরী
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
#পর্ব-২৩+২৪

চৈতি থেমে বলে, “জেসিকা সু’ই’সা’ই’ড করেছে, ম্যাম।”

প্রাণ কম্পিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, “কখন? কিভাবে?”

চৈতি ধাতস্থ কন্ঠে বলে, “কাল রাতে! তার বাসা থেকেই পুলিশ তার লা’শ উদ্ধার করেছে।”

প্রাণ স্তব্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে চৈতির পাণে। বিষয়টা সে কোনভাবেই হজম করতে পারছে না। সর্বাঙ্গে তার বয়ে চলেছে হিম স্রোতের ধারা। শিউরে উঠছে সে ক্ষণে ক্ষণে। হাতের লোম দাঁড়িয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যে। বল হারাচ্ছে মন-মস্তিকের। প্রাণের অবস্থা শোচনীয় হতে দেখে চৈতি দ্রুত এগিয়ে গিয়ে তাকে ধরে বিছানায় এনে বসায়। টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে এগিয়ে দেয় তার দিকে। প্রাণ গ্লাসটা হাতে নিয়ে এক নিঃশ্বাসে সবটুকু পানি খেয়ে ফেললো। তারপর চৈতির দিক তাকিয়ে তার মোবাইলটি দিতে বলে। চৈতি নিজের ফোনটি এগিয়ে দিতেই প্রাণ নিউজফিড চেক করলো। জেসিকার আ’ত্ম’হ’ন’নে’র খবরটি আ’গু’নে ন্যায় ছড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নতুন করে হাজারো হেডলাইন তৈরি হচ্ছে তাকে নিয়ে। কয়েকটা পোস্টে তার মৃ’ত মুখশ্রীর ছবিও দিয়েছে৷ কি বি’ভ’ৎ’স এই না দেখাচ্ছে তাকে। চোখের নিচে জমে আছে গভীর কালি, ফ্যাকাশে মুখখানা শুকিয়ে শী’র্ণ, শরীরের হাড্ডি সব ফুটে উঠেছে, গলদেশের দিক গাঢ় কালচে দাগ। তাকে কোন মু’মূ’র্ষু রোগীর চেয়ে কম লাগছে না। বুঝাই যাচ্ছে, একদিনের সিদ্ধান্তেই এই পদক্ষেপ নেয়নি সে। কিন্তু তবুও কেউ করুণা, দুঃখ বা শোক প্রকাশ করছে না তার প্রতি। তার মৃ’ত্যুর খবরেও বি’ক্ষো’ভ’ই প্রকাশ করেছে সবাই। সকলের একই মন্তব্য, “এক পাপ থেকে বাঁচতে আরেক মহাপাপ করেছে সে। শেম অন হার।”
কেউ কেউ আবার বলছে, “যে কাজের জন্য মানুষের নিকট হতে অবজ্ঞা, লাঞ্ছনা,অপমান সহ্য করতে হয়, এমন কাজ করেছেই বা কেন? আর এখন এসব থেকে মুক্তি পেতে সহজ পথ বেছে নিল?” চারদিকে তাকে নিয়ে এমন হাজারো ঘৃণ্য মন্তব্য।
জেসিকার ছবিটি এপলক দেখার পরই প্রাণ দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে নিল। মোবাইলটা ছুঁড়ে বিছানার আরেকপ্রান্তে ফেলে দিল। মুহূর্তেই প্যানিক করতে শুরু করল। মৃ’ত্যু জিনিসটা সে সহজভাবে নিতে পারে না। তার কাছে মৃ’ত্যু মানে অভিশাপস্বরূপ। সহ্য করতে পারে না একদম এটা। আর যদি সে-টা হয় জানা-পরিচিত কারো তাহলে তো আরও না। ফোবিয়ার মত কাজ করে তার। অথচ মেয়েটা নিজের মৃ’ত্যুকেই ভয় পায় না। অদ্ভুত তাই না?
প্রাণকে প্যানিক করতে দেখে চৈতি দ্রুত তাকে শান্ত করার চেষ্টা করল। কিন্তু ব্যর্থ হলো। সাহাস্যের জন্য কাকে ডেকে আনবে বুঝে উঠতে পারলো না। উপরন্তু, রুম থেকে বের হওয়ার সাহসটা হলো না তার। সে বের হলে যদি প্রাণের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়, এই ভয়ে। সে ক্রমান্বয়ে প্রাণকে স্থির করার চেষ্টা করতে থাকলো। কিন্তু লাভ হলো না। প্রাণ ধীরে ধীরে অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করল। কোনভাবে সে সবকিছুর জন্য নিজেকে দায়ী মানছিল। নিতে পারছিল না সে বিষয়টা।যার ফলে রিয়্যাকশন বেশি দেখা দিচ্ছিল।
চৈতি জানে এখন প্রাণকে সামলাতে পারলে একমাত্র আশা বেগম পারবেন, তাই বিলম্ব না করে তাকেই কল লাগালো সে। কিন্তু আফসোস অপরপ্রান্তে কেউ ফোন রিসিভ করলো না। সে লাগাতার ফোন লাগিয়ে যায়, তবে কাজ হলো না। এমন সময় দরজা করাঘাত পড়ল, চৈতি আশার কিঞ্চিৎ আলো দেখতে পেয়ে দ্রুত ছুটে গেল দরজার নিকট। দরজা খুলতেই ছন্দ বলে উঠল, “আপনার ফো….”

ছন্দ পূর্ণ বাক্য শেষ করার পূর্বেই চৈতি ব্যগ্র কন্ঠে বলে, “ছন্দ স্যার! প্লিজ হ্যাল্প। ম্যামের কন্ডিশন অনেক সিরিয়াস। আপনি প্লিজ ভিতরে আসুন।”

ছন্দ বিহ্বলিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে তার?”

চৈতি তাড়া দিয়ে বলে, “প্রশ্ন পড়ে করবেন, আগে ভিতরে আসুন।”

ছন্দ দ্বিরুক্তি করলো না, ত্বরান্বিত গতিতে ঢুকে পড়লো ভিতরে৷ প্রাণকে অস্বাভাবিক আচরণ করতে দেখে তার মনে পড়ে গেল সেই রাতের কথা। আশঙ্কা দেখা দিল মনের গহীন। সাথে অপ্রিয় এক ভয়। সে ত্বরিত বেগে এগিয়ে প্রাণের পাশে গিয়ে বসলো, প্রাণের গালে এক হাত দিয়ে চাপড় মেরে জিজ্ঞেস করতে থাকে “মিস. ল্যাভেন্ডার কি হয়েছে আপনার? আপনি এমন করছেন কেন?”

প্রাণ আনমনে বিরবির করতে থাকে। তবে প্রাণ কি বলছে তা স্পষ্টভাবে কিছুই বুঝতে পারলো না ছন্দ। তাই বার বার জিজ্ঞেস করতে থাকলো কি হয়েছে৷ অকস্মাৎ চৈতি বলে উঠল, “আপনি একটু ম্যামকে দেখুন স্যার। আমি এখনই আসছি।”

কথাটা বলেই চৈতি দৌড়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। এদিকে ছন্দ ব্যস্ত হয়ে পড়ল প্রাণকে সামলাতে৷ শেষে কোনভাবেই প্রাণকে স্থির করতে না পেরে তাকে নিজের বক্ষঃস্থলের মাঝে চেপে ধরলো ছন্দ৷ কোমল, সন্তর্পণ হাতে প্রাণের মাথায় হাত গলিয়ে দিয়ে তাকে ক্ষান্ত করার প্রয়াস চালালো। এই উপায়টা কাজেও দিল বোধহয়। প্রাণ ধীরে ধীরে অনুদ্ধত হতে শুরু করলো। এর মাঝেই চৈতি ফিরে এলো কিছু মেডিসিন নিয়ে। ছন্দের বক্ষপটে প্রাণকে স্থির হতে দেখে অবাক না হয়ে পারলো না। কেন না, আশা বেগম বাদে প্রাণকে এমতাবস্থায় সামলানো সকলের নিকট দুরূহ বিষয়বস্তু। অথচ এই সুসাধ্যকে সাধ্য করে ছন্দ প্রাণকে সামলাতে সক্ষম হয়েছে। চৈতি কিছুক্ষণ বিস্ময়বিহ্বল হয়ে মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে। অতঃপর তার মস্তিষ্কের টনক নাড়তেই কথাবার্তা বিহীন ঔষধের পাতা থেকে দুটো টেবলেট বের করে জোর করে খায়িয়ে দিল প্রাণকে। কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানেই সে ছন্দের বুকেই নিস্তেজ হয়ে পড়লো। ছন্দ তা দেখে বলল, “কিসের ঔষধ দিলে তুমি তাকে? হঠাৎ তিনি এমন নিস্তেজ হয়ে পড়লেন কেন?”

চৈতি মাথা নিচু করে বলে, “আপনাকে বা কাউকে সে-টা জানানোর অনুমতি নেই আমার, স্যার। শুধু এতটুকু জানাতে পারি, ম্যামের ভালোর জন্যই ঔষধগুলো দেওয়া হয়েছে। আর ওটার ইফেক্টের কারণেই ম্যাম নিস্তেজ হয়ে পড়েছেন।”

ছন্দ তীর্যক দৃষ্টিতে তাকায়, “কিন্তু আমি জানতে চাই কিসের টেবলেট এগুলা। আর কেন দেওয়া হচ্ছে তাকে?”

চৈতি মাথা নিচু করে বলে, “সরি স্যার! বাট আই কান্ট।”

ছন্দ কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু এর আগেই চৈতির ফোন বেজে ওঠলো৷ কল স্ক্রিনে ভাসলো আশা বেগমের নাম। চৈতি দ্রুত ফোন তুলল এবং কথা বলতে শুরু করল। কিয়ৎক্ষণের মাঝেই সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলল আশা বেগমের নিকট। অতঃপর ওপাশ থেকে তিনি কি বললেন শোনা গেল না তবে একটু পর চৈতি ফোনটা ছন্দের দিক এগিয়ে বলল, “আশা ম্যাম কথা বলতেন চান আপনার সাথে। নিন!”

ছন্দ জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকালো। একহাতে প্রাণকে সামলে অন্যহাতে ফোনটি কানে তুলে নিল সে। সালাম দিয়ে কথা বলা শুরু করলো। এরপর তাদের কি কথা হলো তা জানা গেল না, তবে ছন্দের অশান্ত মন শান্ত হলো। প্রশ্নের উত্তরও বোধহয় পেল। কথা শেষে ছন্দ ফোনটা চৈতিকে ফেরত দিয়ে দিল। পাল্টা কোন প্রশ্নই করলো না তাকে৷ সে আর কোনদিক না তাকিয়ে খুব সন্তপর্ণে প্রাণকে বিছানায় শুয়ে দিল। পকেট থেকে তার ফোনটি বের করে পাশে রেখে দিল। কাল রাতে প্রাণই তার কাছে ফোনটা দিয়েছিল রাখতে, কিন্তু হোটেল এসে ফেরত নিতে ভুলে গিয়েছিল বোধহয়। তাই সে ফেরত দিতে এসেছিল, কিন্তু এখানে এসে এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে কে জানতো? ছন্দ প্রাণের দিকে নিষ্পলক,নিরাসক্ত নয়নে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। ঘুমন্ত তাকে কতটা না নিষ্পাপ লাগছে। দুনিয়ার সকল মায়ায় যেন এসে ভড় করেছে তার মুখখানিতে। হুট করেই তার মনের মাঝে সুপ্ত এক ইচ্ছা জায়গা নিল৷ বাস্তবে সেই ইচ্ছেটা পূরণ করার তীব্র আকাঙ্খাও জাগলো তবে নিজেকে সংবরণ করলো। পরমুহূর্তেই সে উঠে দাঁড়ালো। প্রাণের দিক তাকিয়ে দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস ফেলে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।

_______

প্রাণ ঢাকায় ফিরে এসেছে সপ্তাহ খানেক হতে চলল। সেদিন প্রাণের শরীর খারাপ ছিল বলে বিকেলের মধ্যেই রওনা দিয়ে ফেরত চলে আসে তারা। শুটিংয়ের কাজও শেষ হয়ে গিয়েছিল বিধায় কেউ তাদের ফেরা নিয়ে প্রশ্ন করেনি। ছন্দও তাদের সাথেই ফেরত চলে আসে। ফ্লাইট থেকে নামার আগ পর্যন্ত একসাথে থাকে তারা। পুরো পথ ছন্দ প্রাণের দিক খেয়াল রেখেছিল এমনকি চেয়েছিলও প্রাণকে বাসায় পৌঁছে দিতে। কিন্তু প্রাণের অসম্মতির জন্য পারে না। যার ফলে ফ্লাইট থেকে নামার পর দুইজন যে যার পথে চলে।

এদিকে, ‘সুখনীড় ভিলা’-তে ফেরত আসার পর প্রাণ বেশ চুপচাপ হয়ে যায়। কোন এক কারণে নিজের মনের মধ্যে গেঁথে নেয় তার জন্যই জেসিকার এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যার জন্য, সে ডিপ্রেশনে পড়ে যায়। এই সময়টা জুড়ে আশা বেগম খুব যত্নের সহিত প্রাণকে আগলে রাখে। তাকে একমূহুর্তের জন্য একা ছাড়েনি। বুঝায় তাকে জেসিকার মৃ’ত্যুর জন্য সে দায়ী না। মেন্টালি,ফিজিকালি ফুললি সাপোর্ট করে তাকে। হয়তো আশা বেগমের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে প্রাণ দ্রুত রিকোভার করে। ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে আশা বেগমের বলায় আসল ঘটনা বুঝতে পারে।

সেসময় জেসিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত চরমভাবে অপদস্ত হচ্ছিল। তার বাবা-মাও তাকে একা ফেলে দিয়েছিল, ত্যাজ্য উপাধি দিয়ে। হাতে থাকা সব কাজ তার চলে যায়, ব্যান হয়ে যায় ইন্ডাস্ট্রি থেকে। তার নাম-খ্যাতি, ক্যারিয়ার, ফ্যামিলি,ফ্যান-ফলোয়ার সব নিমিষেই হারিয়ে যায়। যা সে মেনে নিতে পারেনি। প্রথম দিকে এসব নিয়ে অবাধ পাগলামি করলেও একসময় নীরব হয়ে যায় সে। নাওয়া-খাওয়া ভুলে গৃহবন্দী করে ফেলে নিজেকে। ফ্রাস্ট্রেশন, ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি নামক ভ’য়ং’ক’র বস্তু বাসা বাঁধতে শুরু করে তার মাঝে। একাকিত্ব হ্রাস করে ফেলে তাকে পুরোপুরি। কথায় আছে, যেমন কর্ম তেমন ফল। জেসিকাও ঠিক তার কর্মের ফল পাচ্ছিল। এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির জৌলুসে নিজের গা এভাবেই ভাসিয়ে ফেলেছিল যে, এখানে নিজের নাম,জোশ স্থাপন করতে বিপথে চলে গিয়েছিল। হাত ডুবিয়েছিল কাঁদায়। কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যেমন সাত-আকাশে উঠাতে জানে ঠিক তেমন করে নামাতেও জানে। সব সত্য প্রকাশ হওয়ার পর চারদিকে তাকে নিয়ে এত এত ট্রোল, উপহাস, সমালোচনা নিতে পারছিল না সে। বিশেষ করে নেটিজেনদের মন্তব্যগুলো। নিজের অবনতি মেনে নিতে না পেতে একসময় মেন্টালি আনস্টেবল হয়ে পড়ে। আর সেই ঘোরের বসেই আ’ত্ম’হ’ন’নে’র পথটি বেছে নেয় সে। ঠিক কি পরিমাণ লাঞ্ছনা,অবজ্ঞা সহ্য করতে হলে মানুষ মুক্তির আশায় এমন একটি পথ বেছে নেয় তা হয়তো কল্পনারও উর্ধ্বে।তবে জেদিকা তার সু’ই’সা’ই’ড নোটে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায়নি। সে সেচ্ছায় জী’ব’ন ত্যা’গ করছে বলেই জানিয়েছিল। সে সাথে, প্রাণের সাথে করা অন্যায়ের জন্য সকলের নিকট ক্ষমাও চেয়েছিল। তো এখানে কোথাও প্রাণের দোষ ছিল না। জেসিকার নিজের কর্মফল থেকে পালাতেই পুনরায় আরেক ভুলপথ অবলম্বন করে।
আশা বেগমের যুক্তিটা প্রাণ মেনে নেয়। অতঃপর ধীরে ধীরে নিজের ব্যস্ত জীবনে ফিরে আসতে শুরু করে।
.
তখন সাঁঝের সময়। অন্তরিক্ষ জুড়ে পাখিদের ছুটাছুটি। ব্যস্ত রাস্তায় হর্ণের বিকট ধ্বনির রে’ষা’রে’ষি। প্রাণ কাওরান বাজারের জ্যামে বিরক্তির সহিত বসে৷ ঘন্টা খানেক হতে নিল কিন্তু জ্যাম ছাড়ার কোন নাম গন্ধ নেই। কি এক অবস্থা! প্রাণ সময় কাটাতে ফোন হাতে নিতেই অপরিচিত এক নাম্বার থেকে মেসেজ আসে৷ সে মেসেজটি ওপেন করতেই দেখতে পায় তাতে লেখা,
“প্রাণ, আমি নয়ন। জানি তুমি আমার সাথে কোনপ্রকার কথাবার্তা বলতে ইচ্ছুক না কিন্তু তাও বলছি সময় করে একটু মিট করতে পারবে? তোমার সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে। প্লিজ না কর না। ইট ইজ মাই লাস্ট রিকুয়েষ্ট টু ইউ।”

#চলবে

[কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।]

#প্রাণেশ্বরী
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
#পর্ব-২৪

প্রাণ সময় কাটাতে ফোন হাতে নিতেই অপরিচিত এক নাম্বার থেকে মেসেজ আসে৷ সে মেসেজটি ওপেন করতেই দেখতে পায় তাতে লেখা, “প্রাণ, আমি নয়ন। জানি তুমি আমার সাথে কোনপ্রকার কথাবার্তা বলতে ইচ্ছুক না কিন্তু তাও বলছি সময় করে একটু মিট করতে পারবে? তোমার সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে। প্লিজ না কর না। ইট ইজ মাই লাস্ট রিকুয়েষ্ট টু ইউ।”

মেসেজটা পড়ে প্রাণ মোবাইলটা পুনরায় সিটে ফেলে দিল। বিতৃষ্ণায় মন বিষিয়ে গেল তার। সাথে প্রশ্ন জাগলো মনে, হঠাৎ নয়ন দেখা করতে বলছে কেন? নতুন করে কি মতলব এঁটেছে সে? তবে যাই হোক, তার কোন প্রকার ইচ্ছে নেই নয়নের সাথে দেখা করার। পাশে বসেই চৈতি প্রাণের আঁধারে ঘনীভূত চেহেরা দেখে জিজ্ঞেস করলো, “কিছু কি হয়েছে ম্যাম?”

প্রাণের দৃষ্টি জানালার কাঁচ ভেদ করে স্থির হলো বড় বড় অট্টালিকার চূড়ায়। মন্থর কন্ঠে বলল, “নয়ন দেখা করার জন্য বলছে।”

‘নয়ন’-এর নাম শুনেই চৈতির কপালে তিনটে ভাঁজ পড়লো। সে কৌতূহল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কি দেখা করবেন ম্যাম?”

প্রাণ উদাসীন কন্ঠে বলল, “ইচ্ছে নেই।”

প্রাণের উত্তরে চৈতি যেন বেশ খুশি হলো। মনে মনে আওড়ালো, “ওই রা’স’কে’ল’টার সাথে দেখা করতে চাইবেই কে? ননসেন্স একটা।”

________

“তুমি কি বলতে চাইছো, প্রাণ সেই রাতে ছন্দের সাথে বাহিরে ছিল?”

চৈতি মাথা নত করে বললো, “জি আশা ম্যাম।”

আশা বেগম তবুও নিজের মনের দ্বিধা দূর করতে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি নিশ্চিত ও ছন্দের সাথেই ছিল?”

“আমি শতভাগ নিশ্চিত। কেন না, ম্যামের ফোন তার কাছে ছিল। আমি সেদিন নিজের চোখে দেখেছি, তিনি যাওয়ার আগে পকেট থেকে বের করে ম্যামের ফোন তার পাশে রেখে গিয়েছিলেন।”

আশা বেগম রূঢ় কন্ঠে বললেন, “আমাকে আগে জানাও নি কেন এই ব্যাপারে?”

চৈতি তটস্থ কন্ঠে বলল, “মাথা থেকে ব্যাপারটা বেরিয়ে গিয়েছিল ম্যাম। তার উপর মাঝ দিয়ে ম্যামের শরীর এত খারাপ ছিল, আপনি তাকে নিয়ে প্রচন্ড ব্যস্ত ছিলেন। তাই সুযোগও হয়ে উঠেনি। সরি ম্যাম!”

আশা বেগম দৃষ্টি সরু করে বললেন, “কাজে এমন হেরফের পছন্দ করি না আমি।”

চৈতি মাথা নত করে পুনরায় বলে উঠল, “সরি ম্যাম! আর এমন হবে না।”

“ওইখানে প্রাণকে টাইম টু টাইম মেডিসিন দিয়েছিলে তুমি?”

“জি দিয়েছি। শুধু ওইদিন রাতে মিস হয়ে গিয়েছিল তার জন্যই হয়তো পরেরদিন জেসিকার মৃ’ত্যু’র খবর শুনে তিনি ওমন রিয়্যাক্ট করে বসেন।”

আশা বেগম দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। অবসন্ন কন্ঠে বললেন, “ছন্দের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখেছ? কেমন ও?”

“খারাপ কিছু খুঁজে পায়নি তার সম্পর্কে। সব রেকর্ড ক্লিয়ার তার। এমনকি কখনো কোন সম্পর্কেও ছিলেন না।”

“ফ্যামিলি সম্পর্কে কিছু জানতে পেরেছ?”

“হ্যাঁ! ছন্দ যখন অফিশিয়ালি বিসিবিতে জয়েন করেন তখন তার বাবা-মা এবং ছোট বোন লন্ডনে শিফট হয়ে যান। তার একটা বড় ভাইও আছে, বাংলাদেশেই থাকেন। তিনি ঢাকার প্রখ্যাত এক হসপিটালে কার্ডিওলজিস্ট হিসাবে আছেন। কিন্তু দুই ভাই একসাথে থাকেন না। বড় ভাই,তার বউ-বাচ্চা নিয়ে আলাদা থাকেন। তবে দুই ভাইয়ের একে অপরের বাসায় যাওয়া-আসা আছে। বলতে, তাদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড বেশ ভালো।”

আশা বেগম সন্তুষ্ট হলেন নাকি অসন্তুষ্ট বুঝা গেল না। শুধু দীর্ঘ নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা গেল। তিনি নিঃস্পন্দ কন্ঠে বললেন, “আচ্ছা ঠিক আছে। সময় মত সব খবর দিতে থাকবে আমায়। আর তোমায় যে যে কাজ দিয়েছি ওইগুলো ঠিক মত করবে। এখন যেত পারো তুমি।”

চৈতি মাথা নাড়িয়ে বেড়িয়ে গেল রুম থেকে। চৈতি যেতেই গভীর ভাবনায় নিমজ্জিত হলেন আশা বেগম।

_____

দুইদিন হলো, নয়ন প্রাণকে দেখার করার জন্য ক্রমান্বয়ে মেসেজ করেই চলেছে। তবে প্রাণ সম্পূর্ণভাবে তাকে উপেক্ষা করে চলেছে, কোনপ্রকার রেসপন্স করছে না তাকে। শেষে নয়ন মাত্রা ছাড়িয়ে যেতেই প্রাণ এক প্রকার বিরক্ত হয়ে তাকে ব্ল’ক করে দেয়৷ সে খুঁজে পায় না, একটা মানুষ এত হ্যাংলা কিভাবে হয়? অসহ্য!

এর মাঝে জিহানের সাথে প্রাণ একটা অ্যাডভারটাইজমেন্টের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। সেই শুটের ডেট পড়েছে আজকে। যার জন্য বনানী আসতে হলো তাকে। জমপেশ ভাবেই শুটিং চলছিল কিন্তু হঠাৎ করেই শুটিং স্পটে নয়নের আগমন ঘটে। তাকে দেখামাত্র সকলে নীরব হয়ে যায়, গোলগোল চোখে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। ইতোমধ্যে ক্রিউ মেম্বারদের মাঝে কানাঘুষাও শুরু হয়ে যায়। সকলেই মূল কৌতূহল এখানেই, “নয়ন কেন প্রাণের সেটে এসেছে? আবার কি চলছে তাদের মাঝে?”

প্রাণের নজর নয়নের উপর পড়তেই তার ভ্রু কুঁচকে আসে। সে তী’র্য’ক দৃষ্টিতে তাকায় নয়নের দিকে। এই ফাঁকেই নয়ন তার সন্নিকটে এসে বলে উঠল, “আমার তোমার সাথে কথা আছে প্রাণ।”

প্রাণ বিরক্ত সহিত কন্ঠে বলল, “কিন্তু তোমার সাথে আমার কোন কথা নেই৷ তুমি যেতে পারো।”

নয়ন নম্র কন্ঠে বলল, “এটাই লাস্ট মিট আমাদের। বেশি সময় নিব আমি তোমার, সত্যি বলছি। ইটস ইমপোর্টেন্ট, ট্রায় টু আন্ডাস্ট্যান্ড।”

প্রাণ তবুও রাজি হলো না। নয়ন তবুও হাল না ছাড়ায় চৈতি মাঝে এলো। কিন্তু লাভ হলো না। জিহান তখন উপস্থিত ছিল বিধায় এগিয়ে এসে নয়নকে বাঁধা দিল৷ মুহূর্তেই দুইজনের মধ্যস্থলে বেঁধে গেল হুলুস্থুল। প্রাণ পরিবেশ ঠান্ডা করতেই রাজি হলো নয়নের সাথে কথা বলতে। জিহান প্রাণের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আর ইউ সিউর?”

প্রাণ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। অতঃপর চৈতিকে সেটে থাকতে বলে ডিরেক্টরের কাছ থেকে অনুমতি প্রাণ বেড়িয়ে গেল। রাস্তার ওপাড়েই একটা ক্যাফে ছিল। প্রাণ ও নয়ন গিয়ে সেখানে বসলো। দুইজনে দুইটা কফি অর্ডার দিয়ে প্রাণ অপ্রসন্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, “এসবের মানে কি নয়ন? ক্যান ইউ প্লিজ এক্সপ্লেইন?”

নয়ন মাথা নত করে বলল, “এসবের জন্য সরি বাট তুমি কোন রেসপন্স করছিলে না, তাই বাধ্য হলাম তোমার সেটে আসতে আমি।”

প্রাণ বিতৃষ্ণায় মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলল, “কি কথা বলার আছে বল, সময় যাচ্ছে তোমার।”

নয়ন থেমে বলল, “কথা ঘুরাতে চাচ্ছি না আমি তাই ডাইরেক্ট পয়েন্টে আসছি। জেসিকা সু’ই’সা’ই’ড করেনি। শি ওয়াস রে’প’ড এন্ড কি’ল’ড।”

কথাটা কর্ণগোচর হওয়ামাত্র প্রাণের অভিব্যক্তি বদলে গেল। সে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকায় নয়নের দিকে। নয়ন স্মিত কন্ঠে বলল, “কি বিশ্বাস হচ্ছে না?”

প্রাণ প্রত্যুত্তর করলো না। নয়ন কয়েকটা ডকুমেন্টস এগিয়ে দিয়ে বলল, “হয়তো এগুলা দেখার পর হবে।”

প্রাণ ডকুমেন্টস গুলো হাতে নিয়ে দেখলো। জেসিকার পোস্ট-মর্টেম রিপোর্ট এটা, তাতে স্পষ্টরূপে লেখা আছে জেসিকাকে গ’ণ’ধ’র্ষ’ণ এবং হ’ত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কোথাও এইসব উল্লেখ করা হয়নি কেন? সোশ্যাল মিডিয়া, নিউজ সবখানেই এই নিউজ দেওয়া হয়েছে জেসিকা সু’ই’সা’ই’ড করেছে। তাহলে সত্য কোনটা? নিউজে যা বলেছে তা, নাকি তার হাতে ধরে থাকা রিপোর্টগুলো? বুঝে উঠতে পারলো না প্রাণ। সে স্থির হলো। নয়নের পাণে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “এটা যদি সত্যি হয় তাহলে নিউজে বলা খবরটা কি? মিথ্যে? এটা বলতে চাচ্ছ তুমি?”

নয়ন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “খবরের নিউজটা সত্য না। আসল সত্যটা মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে প্রাণ। কারণ যারা কাজটা করেছে তারা ভীষণ পাওয়ারফুল। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ডার্ক সিক্রেট তুমিও জানো, আমিও। তাই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো এইগুলা কোন ব্যাপার না। আর আসলে কি ঘটেছে।”

প্রাণ বুঝতে পারলো না কি করবে। প্রমাণ তার হাতে, তবে সামনে বসে থাকা মানুষটাও নয়ন। যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ক’প’ট’তা, ধোঁ’কা’র চলাচল। কিভাবে তার কোন কিছুতে বিশ্বাস করে প্রাণ?
প্রাণকে চুপ দেখে নয়ন নিজ থেকেই বলে, “জানি আমাকে বিশ্বাস করার মত কোন কিছু করিনি আমি৷ তবে আমাকে বিশ্বাস করতে বলছিও না তোমাকে, প্রমাণগুলো দেখাতে চাইছি শুধু। বাকি বিশ্বাস করা বা না করা সম্পূর্ণ তোমার ব্যাপার।”

প্রাণ ক্ষীণ কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, “কারা করেছে এসব?”

এর মাঝে ওয়েটার কফি নিয়ে আসতেই চুপ বনে গেল দুইজন। ওয়েটার কফি সার্ভ করে চলে যেতেই নয়ন নিঃশব্দে বাকি কাগজপত্রও এগিয়ে দিয়ে বলল, “দেখে নাও।”

প্রাণ কাজগপত্র সব হাতে নিল। একেক করে সবগুলো নামই দেখলো, তবে একজনের নাম দেখে ভড়কে উঠলো সে। দৃষ্টি স্থির হয়েই রইলো তাতে৷ যৎসামান্য সময় অতিবাহিত হলো এভাব্দি। প্রাণ নিজেকে ধাতস্থ করে জিজ্ঞেস করলো, “এসব করার মোটিভ কি ছিল তাদের?”

নয়ন বলে, “সঠিক জানি না। তবে মাঝে জেসিকা আমায় একদিন ফোন করে জানিয়েছিল তারা তাকে বিভিন্ন ধরনের কু’প্র’স্তা’ব দিচ্ছে এবং থ্রে’ট দিচ্ছে। আমি বিষয়টা তখন আমলে নেয়নি। ভেবেছিলাম জেসিকা নতুন করে কোন চাল চলছে আমাকে ফেরত পাওয়ার জন্য। আমার ওর সাথে কোন কিছু ঠিক করার ইচ্ছে ছিল না তাই ইগ্নোর করে যাই। কিন্তু এর সপ্তাহে খানিক পর যখন ওর মৃ’ত্যু’র খবর পাই তখন নিজ থেকেই খোঁজ লাগাই৷ আর শেষে এই সত্যটা বেরিয়ে আসে।”

নয়ন একটু থেমে আবার বলে, “জেসিকা এবার কোন মিথ্যে বলেনি আমায়। মেয়েটা আসলেই ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে যাচ্ছিল, নিতে পারছিল না পাপাজিদের ও নেটিজেনদের টক্সিসিটি। মেন্টালি ডিপ্রেসড হয়ে পড়েছিল সে, দিনে দিনে মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তবুও বিশ্বাস করতে পারিনি আমি ওকে।”

নয়নের কথা শুনে প্রাণের সেই ছোটবেলায় পড়া মিথ্যাবাদী রাখালের কাহিনীটি মনে পড়ে গেল৷ সেখানে কিন্তু ঠিক এই একই ঘটনা ঘটেছিল। রাখালটি এতবার মিথ্যে বলে গ্রামবাসীকে বো’কা বানিয়েছিল যে শেষে যখন সত্যি সত্যি বাঘ এসেছিল তখন গ্রামবাসীরা আর তাকে সাহায্য করতে আসেনি৷ রাখাল মিথ্যে বলছে ভেবে বসেছিল তারা। যার ফলে জীবন হারাতে হয়েছিল রাখালটিকে। তাই হয়তো গল্পের শেষে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল, “কখনো মিথ্যা বলবে না।” আজ কথাটির বাস্তবিক প্রমাণ পেল সে। সে সাথে মনে হলো, “ছোটবেলায় শোনা গল্প সব শুধু রূপকথা না, বাস্তবও হয়।”
প্রাণ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। নয়নের দিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “এখন আমার থেকে তুমি কি চাও?”

নয়নের সহজ স্বীকারোক্তি, “সত্যিটা সামনে আনতে তোমার সাহায্য চাইছি। আমি জানি জেসিকা তোমার সাথে অনেক খারাপ করেছে, আমিও করেছি কিন্তু কেউ আমরা কম শাস্তি পায়নি৷ নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি পুরা। বিশ্বাস কর। প্রতিনিয়ত কিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি শুধু আমি জানি। তাই বলতে পারি শেষে ওর সাথে যা হয়েছে অন্যায় হয়েছে। এত করুণ পরিনতির হওয়ার কথা ওর ছিল না। এখন আমার হাতে পাওয়ার,পজিশন কিছু নেই এর জন্য সত্যিটা আমার পক্ষে আনাও সম্ভব না। আমার সব চেষ্টাই বৃথা যাবে।”

“তাই তুমি আমার পাওয়ার আর পজিশনের ইউস করতে চাইছো তাই তো? তা মি. নয়ন মেহরাব আপনার এটা কেন লাগলো আমি আপনার সাহায্য করবো?”

প্রাণের শাণিত কন্ঠে করা প্রশ্ন। তবে নয়ন অপ্রস্তুত হলো না, সে কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিল প্রাণ এমন কোন প্রশ্নই করবে। তাই সে ধাতস্থ কন্ঠে বলে, “আমি যে প্রাণকে চিনে, সে কখনো কাউরো সাহায্য করতে কৃপণতা করে না। হোক সে-টা শত্রু বা মিত্র। তবে তুমি সাহায্য করতে না চাইলে সমস্যা নেই। জোড় করবো না তোমায়।”

প্রাণ প্রত্যুত্তরে বলল, “আমি ভেবে দেখবো।”

নয়ন কন্ঠস্বর নামিয়ে বললো, “আমি অপেক্ষায় থাকবো। আর ধন্যবাদ।”

প্রাণ একবার সময় দেখে নিয়ে বলে, “তোমার কথা শেষ হলে আমি যেতে পারি?”

আকস্মিক নয়ন প্রাণের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না প্রাণ?”

প্রাণ কথাটা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে, “সবাইকে ক্ষমা করা গেলেও খু’নি ও প্র’তা’র’ক’দে’র কখনো ক্ষমা করা যায় না। তাদের ক্ষমার যোগ্যই হয় না। তাই ভুলে যাও।”

কথাটা বলে প্রাণ সেখানে থেকে বেরিয়ে যায়। নয়নও তার যাওয়ার পাণেই তাকিয়ে থাকে শুধু৷

_________

প্রাণের সেট আপে নয়নের আগমন ও পরবর্তীতে তাদের আলাদা সাক্ষাৎ-এর নিউজ খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে। নতুন হেডলাইনের সাথে নতুন গসিপ উঠেছে জনসাধারণের মাঝে। সকলের আশঙ্কা এটাই যে, জেসিকার মৃ’ত্যু’র পর এখন হয়তো নয়ন ও প্রাণ পুনরায় এক হতে চলেছে৷ এর কোন কিছুই এবার ছন্দের নজর এড়ায়নি। সে প্রাণকে নিয়ে উঠা সব নিউজই খুব মন দিয়ে পড়েছে, সাথে জিহানের মুখেও দুপুরের ঘটনা শুনেছে। কিন্তু তবুও নিউজগুলোর হেডলাইনগুলো সে যতবারই পড়ছে ঠিক ততবারই তার অন্তঃকরণে ভিন্ন এক ধরনের জ্ব’ল’ন অনুভব হচ্ছে। র’ক্ত’খ’ন’নের ন্যায় ধাঁ’রা’লো সেই অনুভূতি। ছন্দ দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠে, “এই নয়নের সমস্যা কি? প্রাণের পিছনে পড়ে আছে কেন এভাবে? কি চাই ওর? আর প্রাণেরও কি দরকার ওর সাথে আলাদা কথা বলার?”

জিহান পাশে বসে সবটাই শুনে। সে ভ্রু কুঞ্চিত করে জিজ্ঞেস করে, “প্রাণ ও নয়ন যাই করুক তাতে তোর এত জ্বলছে কেন? তোমার সমস্যাটা কই?”

জিহানের কন্ঠ শুনেই ছন্দ সম্বোধি ফিরে পায়। তখন নিউজগুলো দেখে তার মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিল। যার ফলে ক্রোধের বসে কথাগুলো বলে উঠেছিল। অথচ জিহান যে তার পাশেই বসা তা বেমালুম ভুলে ছিল সে। এখন জিহানের কথার কি উত্তর দিবে সে? কেন এমন রিয়্যাক্ট করছিল? প্রাণ যা ইচ্ছাই করুক তার এত জ্বলে কেন? কিভাবে বুঝাবে সে? কিভাবে?

#চলবে

[কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।]

[ এমন এক মোড়ে এসেও গঠনমূলক মন্তব্য একবারেই পাচ্ছি না, যার জন্য বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে গল্পটা ঠিক কোন দিকে যাচ্ছে। তাই অনুরোধ সকলে কষ্ট করে একটু রেসপন্স করবেন।
ভালোবাসা অসীমান্ত রইলো❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here