প্রতিশোধ__2
পার্ট_4
জামিয়া_পারভীন
__” ওহহহহহহহহ! তাইনা, সে পছন্দ করে তুমি কিভাবে বুঝলে। ” একটু শয়তানি করে বলে নুহাশ। আর গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে তিথির দিকে।
__ “করতেই পারে! বুঝাই যাচ্ছে, কিন্তু আপনি এদিকে আসছেন কেনো? ” ভয়ার্ত কণ্ঠে বলে তিথি।
__ ” ভয় কেনো পাচ্ছো তুমি! আমি ই তো , কিন্তু তোমার ওই বাঁকা দুটি ঠোঁট শুধু আমায় কাছে টানে। ” দুষ্টুমি করতে করতে কাছে আসে নুহাশ। তিথি কে কাছে টেনে নিয়ে প্রায়ই ১০ মিনিট লিপ কিস করে নুহাশ। প্রথমে তিথি ছাড়িয়ে নিতে চাইলেও পরে আর কিছুই বলে না।
মনিকা এসে হাত তালি দেয়াতে দুইজন একে অপরের থেকে সরে আসে।
__ ” কনগ্রেচুলেশন স্যার! বিয়ের দাওয়াত নিশ্চিত পাচ্ছি। “নুহাশের দিকে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে মনিকা।
__ ” মা মা মা নে কি? একসাথে থাকলে ই বিয়ের কথা আসছে কেনো। কেবল তো চেনাজানা হলো। প্রেম করতে হবেনা। তাছাড়া বিয়ে করেই কি লাভ, যদি আগেই মিষ্টি পাওয়া যায়। ” বলেই তিথির দিকে শয়তানি হাসি দেয় নুহাশ। আর তিথিও বাড়িময় নুহাশ কে মারার জন্য তেড়ে নিয়ে বেড়াতে শুরু করে।
,
,
পরদিন তিথি নুহাশের অফিসে জয়েন করে। সারাদিন কাজ শেষ এ একসাথেই মনিকার ফ্লাটে ফিরে আসে। এসে দু’জনে ই অবাক হয়ে যায়। তিথির বাবা, মা, ফুপি আর অভি এসে বসে আছে। ওদেরকে দেখে তিথি নুহাশকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে। আর নুহাশ অবাক হয় তিথির মা কে নিজের মা নিরা ভেবে। নুহাশ ভাবে নিরা অন্যের সাথে কি করছে?
তিথি কিছু বলার আগেই নুহাশ বলে
__ ” আম্মি! তুমি এখানে? ” খুব বিস্ময় নুহাশের কথাতে। বলে তৃণাকে জড়িয়ে ধরে নুহাশ।
__ বাবা! তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে? আমার তো কোন ছেলে নাই। তিথি আমার একমাত্র মেয়ে। তিথি কি তোমার ওয়াইফ নাকি। বিয়ের কথাতো আগে বলেনি তিথি। ” এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে তৃণা।
নুহাশকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই
__ “হ্যাঁ আম্মু, বলাই হয়নি, আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। গতকাল ই বিয়ে করেছি। ” নুহাশ কে চিমটি দিয়ে বলে প্লিজ না বলবেন না।
__তিথির কথাতে অভি চিৎকার করে বলে “এ বিয়ে আমি মানি না, পারলে ডিভোর্স করিয়ে বিয়ে করবো আমি “।
__মনিকাও সুযোগ বুঝে বলে ফেলে
” ওরা তো হাজবেন্ড ওয়াইফ নয়। জাস্ট বস আর অফিস সহকারী। ”
__ এবার তৃণা জোর গলায় বলে ” আমি নুহাশ কে বিয়ে করেছি ” আমরা একে অপরকে ভালোবাসি। আমাদের অনেক দিনের প্রেম বলেই বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি। ” আর নুহাশের কানেকানে বলে ” প্লিজ বাঁচান আমাকে? ”
__ নুহাশ একের পর এক সারপ্রাইজ এ দিশেহারা। আর নতুন কিছু না ভেবেই তিথিকে টানতে টানতে নিজের ফ্লাটে নিয়ে তোলে। তিথির মা বাবা ও তিথির সাথে নুহাশের ফ্লাটে যায়। অভি আর অনন্যা থেকে যায় মনিকার ফ্লাটে।
__ ফ্লাটে এসে নুহাশ তিথিকে বলে ” হচ্ছে টা কি? আমার মাথা তো হ্যাং হয়ে যাচ্ছে। ” এরপর তৃণাকে বলে ” আপনি আমার মায়ের মতো দেখতে কিভাবে? দুইটা মানুষ এর এতো মিল হয় কিভাবে? বলুন প্লিজ! ”
__ তৃণা নুহাশ কে জিজ্ঞেস করে “তোমার নাম কি আগে নিশান ছিলো? ”
__ নুহাশ অবাক হয়ে জবাব দেয় ” হ্যাঁ ”
__ তৃণা নুহাশ কে এবার জড়িয়ে ধরে বলে ” তোমার মায়ের নাম কি নিরা? আর বাবা কি আবির?
__” আপনি কিভাবে জানলেন এসব ” বিস্ময় নুহাশের চোখে।
__ ” বাবা নিরা আমার জমজ বোন! আমার ভুলে আমি আমার বোন কে হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমি জানি তোমাকে তোমার মা আমাদের ব্যাপারে কিছুই বলেনি। না জানা চাপা অভিমান এ আমাদের পর করে দিয়েছে। আমাদের ই দোষ ছিলো অবশ্য। সেটা ভুল বুঝাবুঝি ই বেশি ছিলো। বোন তোমাকে আর দুলাভাই কে নিয়ে কোথায় হারিয়ে যায় জানতাম না। ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ টাও পাইনি ” কান্নায় ভেঙে পড়ে তৃণা।
__ ” আন্টি আপনি কাঁদবেন না প্লিজ। আম্মির আসার কথা আছে এখানে। আপনারা এখন খাওয়া দাওয়াকরে রেস্ট নিন। অনেক দূর থেকে এসেছেন। কাল সকালে কথা হবে। ”
__ নুহাশ সবার জন্য ডিনারের অর্ডার দেয়। সবাই মিলে একসাথে খাওয়া দাওয়া করে গল্প করে তিথির মা বাবা কে একটা ঘর দেখিয়ে দিয়ে নুহাশ নিজের ঘরে আসে।
__তিথিও পিছনে পিছনে আসে নুহাশের ঘরে। ” আমি এখন কোথায় থাকবো? ” অভিমানের সুরে বলে তিথি।
__ “কোথায় আবার থাকবে? আমার বউ আমার বেডে ই থাকবে ” মুচকি হেসে বলে নুহাশ।
__ “আমার বয়েই গেছে আপনার বউ হতে । এখন যে কোথায় যাবো? ধুর কিছুই ভালো লাগে না। ” তিথি রাগ করে বলে কথাগুলো
__ ” আরে বাবা! সবাইকে চিল্লিয়ে বললে আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। আর এখন কেনো পালাচ্ছো? ” নুহাশের কথায় তিথি বলে ” অভির হাত থেকে বাঁচতে। আমি ওকে ঘৃণা করি কিন্তু ও আমার জীবন টা নষ্ট করে দিচ্ছে তাই পালিয়ে এসেছিলাম অস্ট্রেলিয়া থেকে লন্ডন। ”
__ ” তোমার তো দেখছি শত্রুর অভাব নেই। আচ্ছা যাই হোক তোমার ড্রেস মে বি মনিকার ফ্লাটে আছে। সেখানে যাবার আর দরকার নাই আজকের মতো আমার ড্রেস পড়েই থাকো।” ( তিথির হাতে একটা নাইট ড্রেস ধরিয়ে দেয় নুহাশ। )
__ তিথি চেঞ্জ করার জন্য ওয়াশরুমে গেলে নুহাশ বলে ” আমার সামনেই চেঞ্জ করলেও বা কি! সবিই তো দেখেছি। ” বলেই হাসি দেয় নুহাশ।
__ তিথিও রাগ করে তেড়ে আসে নুহাশের দিকে। নুহাশ পিছনের দিকে ঘুরতে গিয়ে পায়ে বাধা পেয়ে পড়ে যায় পাশে থাকা আলমিরা তে লেগে কপালে কিছুটা কেটে যায়। তিথি এবার ভয় পেয়ে যায়, এমন তো চায়নি সে তাহলে এখন কি করবে। তাড়াতাড়ি করে নুহাশের কপাল হাত দিয়ে চেপে ধরে। নুহাশের ঘরে থাকা কটন এ এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে নুহাশের কপালে বেধে দেয় তিথি। নুহাশ ব্যথায় উঁহু উঁহু করছে। তিথি নুহাশ কে কথা বলতে নিষেধ করে। বিছানায় শুইয়ে দেয় আর একটা পেইনকিলার খাইয়ে দেয় নুহাশ কে। তিথি ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে এসে নুহাশের ঘরে থাকা সোফা তে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকাল সকাল নুহাশের মা, বাবা আর বোন চলে আসে নুহাশের ফ্লাটে। নুহাশ ঘুমিয়ে আছে আর তিথিও ঘুমে তাই দরজা খুলে দেয় তৃণা। অনেকদিন পর বোন কে দেখে নিরা কে জড়িয়ে ধরে তৃণা।
__ ” প্লিজ ক্ষমা করে দে বোন ” আর কিছু বলতে পারেনা। তৃণা কেঁদেই চলেছে।
অনেকদিন পর বোন আর বোনের ফ্যামিলি এক সাথে হয়েছে। সাইফ ও আবিরের কাছে গিয়ে ক্ষমা চায়। আবির, নিরা সবাইকে ছেলে আর মেয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। তৃণাও তিথির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সবাই মিলে সব মান অভিমান ভুলে ব্রেকফাস্ট করে গল্পের আসরে বসে। তিথি নেহা আর নুহাশ এক ঘরে আর গল্পে মেতে উঠেছে। নেহা আর তিথি প্রায়ই সমবয়সী। নেহা দুই তিন মাসের ছোট তিথির চেয়ে। তাও বুঝে ফেলেছে তিথি আর নুহাশের মাঝে কিছু চলছে দেখে কারণ তিথি নুহাশের একটা শার্ট আর জিন্স কোন রকমে পড়ে আছে। নেহাকে তিথি সব খুলে বলে তখন নেহা নিজের একটা ড্রেস তিথি কে পড়তে দেয়।
,
,
এদিকে অভি আর অনন্যা মনিকার ফ্লাট থেকে সব কিছু দেখতে পায়। আবির আর নিরা এসেছে । আর অভির এবার নজর পড়েছে আবিরের মেয়ে নেহার উপর।
__অভি ওর মা কে বলে ” দেখছো মম! কতো সুন্দরী ওই মেয়েটা। তিথি ওর তুলনায় কিছুই না। ”
__ অনন্যা বলে, হুম দেখেছি! ওকেই তোর সাথে বিয়ে দিয়ে আমার না পাওয়া অধিকার ফিরে পেতে চাই। ”
__ অভি খুশি হয়ে বলে ” কি অধিকার মম? ”
__অনন্যা রেগে বলে ” সময় হলেই বুঝতে পারবে। ”
,
,
নেহার ড্রেস সালোয়ার কামিজ তিথি এই প্রথম পড়ে। তিথি সব সময় মডার্ণ হয়ে বড় হয়েছে কিন্তু কখনো সালোয়ার কামিজ পড়েনি তাই একটু আনইজি ফিল করছে তিথি।
__ নুহাশ এসে তিথিকে এই অবস্থায় দেখে বলে ” ওয়াও! জাস্ট অসাধারণ লাগছে। তোমার মতো সুন্দরী কে তো চোখ বন্ধ করে বিয়ে করা যায়। আগে এতো সুন্দর না লাগলেও এখন তো চোখ ফিরানো দায়। ”
__ তিথি লজ্জা পেয়ে যায় ” কি যে বলেন আপনি? ”
__ তিথির লজ্জা পাবার ভঙ্গী টা নুহাশের কাছে মারাত্মক লাগে। তিথিকে কাছে টেনে নেয় নুহাশ। দুজনের নিঃশ্বাস একে অপরের উপর পড়ছে। দু’জনে চুপচাপ, একে অপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই সময় নেহা এসে সবাইকে ডেকে বলে দু’জনের বিয়ে দিয়ে দিতে। দু’জনে লজ্জা পেয়ে সরে আসে।
সবার ই তিথি আর নুহাশ কে ভালো লেগেছে আবার অভির অত্যাচার থেকে বাঁচতে নুহাশ কে তৃণা বলে ” দেখো বাবা! অনন্যা এর জন্য আমরা দুই বোন আলাদা হয়ে গেছিলাম। আজ আবার মিলিতো হয়েছি। এবার অনন্যার ছেলের হাত থেকে তুমি বাঁচাও আমার মেয়েটাকে। তিথিকে বিয়ে করো, নইলে অভি ওর ক্ষতি করে দিবে। ” কথা গুলো বলে তৃণার চোখে পানি চলে আসে।
নুহাশ বলে
__ ” দেখুন আন্টি! আমি জানিনা তিথিকে ভালোবাসি কিনা, যেদিন প্রথম দেখেছিলাম তখনই বুঝে গিয়েছি তিথিকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। আপনারা রাজি থাকলে অবশ্যই বিয়ে করবো তিথিকে খুব শীঘ্রই। ”
সবার সম্মতি তে নুহাশ আর তিথির বিয়ের আয়োজন করে দুই ফ্যামিলি মিলে। খুব ছোট করে অনুষ্ঠান করে লুকিয়ে বিয়ে করে নেয় নুহাশ আর তিথি। আর এর পরই নেমে আসে দুর্যোগ।
চলবে…..