প্রতিশোধ_2,part -1

প্রতিশোধ_2,part -1
লিখাঃ জামিয়া পারভীন তানি

আজ তিথি প্রথম লন্ডনের মাটিতে পা রাখে। লন্ডন একটি চমৎকার শহর। একজন ভ্রমণপিপাসু মানুষের ভ্রমণের তালিকায় লন্ডন শহরের নাম অবশ্যই থাকবে। টেমস নদীর তীরে অবস্থিত লন্ডন ২০০০ বছর পুরাতন একটি শহর। এটি মাইনোরিটি মেজোরিটি শহর নামে পরিচিত। অর্থাৎ এই শহরের বেশিরভাগ মানুষ মাইনোরিটি অর্থাৎ সংখ্যালঘু অবস্থা থেকে উঠে এসেছে। এখন লন্ডন বিশ্বের নেতৃত্বদানকারী অর্থনৈতিক দেশ। চার চারটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান এখানে অবস্থিত। এছাড়াও রয়েছে অনেক আকর্ষণীয় স্থাপনা যার টানে প্রতি বছর হাজারো মানুষ লন্ডন ভ্রমণে আসেন।

______ তিথি এখানে ভ্রমণ করতে আসেনি। তিথির জব হয়েছে লন্ডন এ। তিথি সবসময় মুক্ত বিহঙ্গ এর মতো আকাশে উড়তে চেয়েছে। চেয়েছে ডানা মেলে উড়তে, পৃথিবীর কোথায় একটু সুখের ছোঁয়া পাবে সেটা খুঁজে বেড়িয়েছে। আজ সময় এসেছে তিথির, খুব বড় হতে না পারুক স্বাধীন ভাবে বাঁচাতে তো পারবে ।

________ তিথি একটা লজে উঠে, কারণ প্রথম দিন তো আর কোন ফ্লাট পাবেনা থাকার জন্য। রুম নাম্বার ৭৫৬, ষষ্ঠ ফ্লোরে উঠে ফ্রেশ হয়ে বিকেলে ঘুরতে বের হয়। আশেপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করছে, এই হোটেল টা অনেক সুন্দর করে সাজানো। সামনে বড় লেক আর মাঝে ফোয়ারা। মনের মাঝে আফসোস হচ্ছে, নিজের বাড়িতে ফোয়ারা থাকলেও এর সৌন্দর্য্য কখনোই উপভোগ করতে পারেনি। ফোয়ারা থেকে ঝিরিঝিরি পানি তিথির শরীরে পড়ছে আর সে শিহরিত হতে থাকে।

_______ এই যাহহ! ফ্লাট তো খুঁজতে যাওয়া হলো না। এটা ভেবে নিজের মাথায় হালকা বাড়ি মেরে খুশি মনে বের হয়ে যায়। ফোন টা বের করে এক ফ্রেন্ড মণিকা কে কল দেয়। ফোন রিসিভ করে অপর পাশ থেকে শুনতে পায়

__ হ্যালো, মিস তিথি, হাও আর ইউ।

__ আই এম ফাইন এন্ড ইউ।

__ আই এম ফাইন অলসো। তা কখন এসেছিস তুই সেটা বল। সরি! আমি তোকে রিসিভ করতে যেতে পারিনি। ক্ষমা করে দিস রে। ( মণিকা) [ মণিকা তিথির ফেসবুকে পরিচয় হওয়া ফ্রেন্ড, ওর হেল্প এর জন্যই এই জব টা পেয়েছে তিথি। তিথির দুইটা কারণ এ মণিকা কে ফ্রেন্ড বানিয়েছে, এক. মণিকা বাংলাদেশী, দুই. সে এখন লন্ডনে থাকে। তিথির বরাবর ই লন্ডনে যাওয়ার শখ ছিলো তাই সে পূরন করেছে। ]

__ আরে তুই টেনশন নিস না, আমি এখন ফ্লাট খুঁজতে বের হয়েছি। মে বি পেয়ে যাবো।

__ তুই এতো সেল্ফিস কেনো বলতো?

__ কেনো কি করলাম?

__ তুই লন্ডনে এসে ফ্লাটে থাকবি? আরে শোন আমি একা থাকি, তুই আমার সাথেই থাকবি বুঝলি। আজকের দিন তুই লজেই থাক, কাল গিয়ে তোকে নিয়ে আদবো।

__ কিন্তু…

__ কোন কথা হবে না! তোকে যা বলছি তুই তাই শুনবি।

__ ওকে! থ্যাংকস দোস্ত।

__ আর একবার শুধু বন্ধুত্ব তে থ্যাংকস বলেছিস তো নাক টা ভোতা করে দিবো।

__ ওরেওরে! হয়েছে, এবার তো থাম। আমি তোর সাথেই থাকবো। খুশি এবার তুই।

__ খুশি না হয়ে পারি বল?

আরোও কিছু কথা বলে তিথি ফোন টা রেখে দেয়।

_________ নুহাশ গ্রাজুয়েশন কম্পলিট করে, পিএইচডি ডিগ্রি নেয় ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন থেকে। এখন একটা মাল্টিন্যাশনাল অফিসের বস। নুহাশ এখন লন্ডনে থাকে কিন্তু অফিসের কাজে একটা লজে আসে। সবার সাথে মিটিং শেষ করতে রাত ১০ টা বেজে যায়। এক কলিগের অনুরোধ এ লজের বারে যায়। বারে একসাথে সবাই এনজয় শুরু করে আর বিয়ার খেতে শুরু করে। নুহাশের নেশা করার তেমন অভ্যাস নাই তাই অল্পতেই নেশা উঠে যায়। মাথা টা ঝিম ধরেছে নুহাশের। আজ আর ফ্লাটে না ফিরে লজে রুম বুকিং করে, রুম নং ৭৫৯। ড্রিংকস করে একে তো মাথা হ্যাং এর উপরে আবার ডোর লক হচ্ছিলো না তখন ডোরে কয়েকটা বাড়ি দেয়, ৭৫৯ এর স্ক্রু ঢিলা ছিলো বিধায় এখন নুহাশের রুম নাম্বার ৭৫৬ হয়ে যায়।

________ তিথির ড্রিংকস করার অভ্যাস আছে, সে একা একাই বেশ এনজয় করে। সব দুঃখ যন্ত্রণা দূর হয় ড্রিংকস করলে। কিন্তু নতুন পরিবেশ এ এসে খাওয়া টা একটু বেশি ই হয়ে গেছে। মাথা টা খুব যন্ত্রণা করছে তিথির, ফ্লোরে এসে রুম নাম্বার দেখে রুমে ঢুকে পড়ে। উফফ্ রুম খোলা কেনো? ধ্যাত ভালো লাগেনা বলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ( রুম টা অন্ধকার ছিলো তাই কেউ আছে কিনা সেটা না দেখেই শুয়ে গিয়েছিলো তিথি)

________ নেহা! তার একমাত্র বান্ধবী মোনালিসার বিয়েতে এসেছে। মোনালিসা হিন্দু এতে নেহার কোন মাথাব্যথা নাই। সব সময় দুটিতে পাড়া মাতিয়ে রাখতো। আজ মনু টা নেহা কে ছেড়ে আলাদা হয়ে যাচ্ছে। হিন্দুদের বিয়ে সাধারণত রাতে হয় কিন্তু মনুর বিয়ের লগ্ন একেবারেই রাত্রে। খুব রাগ হচ্ছে নেহার, একমাত্র বান্ধবী তাও বিয়ে কিনা রাত্রে।

______ বান্ধবীর বিয়ে রাত্রে এটা প্রব্লেম না, প্রব্লেম হচ্ছে বরযাত্রী তে আসা একটা ছেলে। শুধুশুধু নেহার পিছু পিছু ঘুরছে। বার বার নেহার গাঁ ঘিষে দাড়াচ্ছে, দুষ্টামী করতে চাচ্ছে। কিন্তু নেহার কোন ছেলেকে ই পছন্দ না তাই এই ছেলেকেও বিরক্ত লাগা শুরু করে।

______ মনু যখন ওর বরের সাথে সাত পাক দেওয়ার জন্য হাটছিলো তখন ছেলেটা নেহা কে বলছে….

__ দেখছেন মেয়েরা ছেলের পিছুপিছু ঘুরছে অথচ আমি সারাদিন আপনার পিছু ঘুরেও আপনার মন পেলাম না। ব্যাপার টা কেমন যেন লাগছে তাই না বলুন। একটা সম্পর্ক আসে দুইজনের দিক থেকে যদি একজন চায় আরেকজন মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে কেমন হলো বলুন তো?

__ আপনার প্রব্লেম টা কি? আমার পিছু নিয়েছেন কেনো? আর কিসের সম্পর্কের কথা বলছেন? ( নেহা)

__ আমি মুরাদ, বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। গ্রাজুয়েশন কম্পলিট করে বাবার অফিসেই জয়েন করেছি।

__ তা দিয়ে আমি কি করতে পারি?

__ আপনার কাজল কালো চোখ,
করেছে আমায় পাগল,
হতে চাই খুব আপন।

__ থাক আর ন্যাকামি করতে হবেনা, ডিসগাস্টিং ( নেহা রাগ করে চলে যায়)

_________ বিয়ে শেষ এ বাসর জাগে সবাই, মোনালিসার ইচ্ছে তেই নেহা কে মনুর সাথেই থাকতে হচ্ছে। আর বর‍যাত্রী থেকে আসা মুরাদ নামের ছেলেটা তো আছেই। বাসর ঘরে সবাই আনন্দ করতে করতে মুরাদ বলে উঠে একটা খেলা শুরু করা যাক। সবার নাম চিরকুট এ লিখা হোক। দুইটা করে চিরকুট একসাথে তোলা হবে, চিরকুট এ যা লিখা থাকবে সেটাই অভিনয় বা করে দেখাতে হবে।

_______ নেহা কিছুতেই নাম দিতে চায় না কিন্তু সবার চাপে পড়ে নাম দিয়ে দেয়। চিরকুট তুলে তুলে দুইজন এর কবিতা আবৃত্তি হয়, গান হয়, অভিনয় হয় এরপর চিরকুট এ উঠে নেহার নাম লিখা আছে ড্যান্স, আর মুরাদ কারচুপি করে নিজের নাম দিয়ে দেয়।

__ নেহা এসব দেখে রাগী গলায় বলে সে খেলবেনা। তখন মুরাদ একটা গান গাইতে শুরু করে আর নেহাকে হাত ধরে টেনে ইচ্ছেমতো নাচায়। নেহা মুরাদের গান শেষ এ মুরাদ কে একটা চড় দিয়ে বলে

__ এ কেমন অসভ্যতা, সেই দুপুর থেকে বিরক্ত করছেন আর এখন?

বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

রুমে একটা গুমট পরিবেশ সৃষ্টি হয়, সবাই মুরাদের দিকে তাকিয়ে মুখ চেপে হাসছিলো। মুরাদের মাথা রাগে গজগজ করছে।

মুরাদ সবার সামনে অপমানিত হয়ে মনেমনে বলে এর প্রতিশোধ আমি নিয়েই ছাড়বো।

মুরাদ লোক লাগিয়ে নেহার সব তথ্য নেয়।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here