পূর্নিমার_চাঁদ_জানে_তুমি_আমার #লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী Part 2

#পূর্নিমার_চাঁদ_জানে_তুমি_আমার
#লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী
Part 2

ছায়াটা আমার দিকে এগোচ্ছে। আমার ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে।এমনি আমি অনেক ভিতু।চোখ বন্ধ করে দোয়া দরুদ পড়ছি।জানিনা আজ এই ভুতের ডিনার হতে হয় কি না আমার।এসব ভাবছি আর কাপছি হঠাৎই কেউ ফিসফিস করে আমার কানের কাছে এসে বলল,,

“ভয় পেলে আরও সুন্দর লাগে কিছু মানুষকে।মনে হয় বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখি যাতে আমি ছাড়া এই সুন্দর্য কেউ না দেখতে পারে।”

আমি কেপে উঠলাম এমন কথা শুনে।হঠাৎই সেই ভুতটা আমার পায়ের কাছে হাটু গেড়ে বসলো।মনে হয় পা টান দিবে।চোখ বন্ধ করে নিলাম আবার কিন্তু ভুত আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার পা নিজের হাটুর উপর নিলো। তারপর কিছু একটা পড়িয়ে দিলো। আলতো করে আমার পা নামিয়ে উঠে দাড়ালো।এবার আমি সাহস নিয়ে বললাম,,

“কে আপপনি…।”

“আমি কে সেটা জানতে হলে সময়ের অপেক্ষা করতে হবে মিথি পাখি।”

“আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?”

“আমি সব জানি কারন আমার মনে যে তোমার বসবাস।”

বলে ছায়ামুর্তি ধীরে ধীরে গায়েব হয়ে গেলো।কিন্তু আমার মাথায় ঢুকছে না ভুত কি আসলেও এমন হয়?আমি তো শুনেছিলাম ভুত ভয়ংকর হয়।
এসব ভাবতে ভাবতে সামনে তাকিয়ে দেখি রেহান ভাই দাড়িয়ে আছে।

“এতো রাতে এখানে দাড়িয়ে কার সাথে প্রেমালাপ করছিস মিথি?”

“না ভাইয়া প্রেমালাপ না। আমি পানি নিতে এসেছিলাম আর তখনই একটা ভুত…”

আমার কথা শেষ করতে না দিয়েই রেহান ভাই বেশ বিরক্তি নিয়ে বলেন,,

“এতো রাতে এইসব ফাউল কাহীনি শুনতে চাচ্ছি না।যা ঘুমা।”

ধমক দিলেন উনি।মন খারাপ হয়ে গেলো। আমিও চুপচাপ হেঁটে রেহান ভাইয়ের পাশ দিয়ে রুমের দিকে এলাম।নুপুরের ঝুনঝুন শব্দ হচ্ছিলো রেহান ভাই চোখ বন্ধ করে ছিলেন।মনে হচ্ছিলো কিছু অনুভব করছিলেন।আমি আমার রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম। তারপর গিয়ে সুয়ে পড়লাম।

_________________________________

পরেরদিন সকাল সকাল উঠলাম কারো চেচামেচির শব্দে। বেবি পিংক কালারের লেডিস ট্রাউজার আর গেঞ্জি পরে ঘুমিয়েছিলাম। কোনোরকম ওরনাটা গলায় পেচিয়ে রুমের বাহিরে এলাম।এসেই দেখি ফুপির প্রিয় ডিনার সেটটা ভেঙে যা তা অবস্থা। রোহান ভাই ভিডিও করছে। ফুপি কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে।আর যে এটা ভেঙেছে সে হলো নিধি। আমার পাশে অর্পি আপু এসে দাড়ালো। রোহান ভাইয়া এসে বলল,,

“তোরা কি চরম মুহূর্ত মিস করেছিস জানিস না।এই দেখ।”

বলে আমার হাতে উনার ফোনটা ধরিয়ে দিলো।অর্পি আপু চোখ ডোলে আমার পাশে এসে দাড়ালো।আমি ভিডিও প্লে করলাম।তাতে দেখাচ্ছে। নিধি ফুপির প্রিয় ডিনার সেটের অংশগুলো একটা একটা করে ভাঙছে।ফুপি আটকাতে গেলে এক বিশাল ধকম দেয়।ভিডিও দেখে অর্পি আপু হেসে দিলো।

“বাহ সেই জিনিস তো ভাইয়া।আম্মুর প্রিয় ডিনার সেট যেটা আজ পর্যন্ত ধরতেও পারিনি সেটা এভাবে শেষ।”

“হুম হুম এই শোকে আম্মু বিছানা নিবে আজ।”

আমি বললাম,,” কি করণে এসব করল নিধি আপু?”

আমার কথা শুনে রোহান ভাইয়া হেসে রেহান ভাইয়ের দিকে তাকালো।রেহান ভাই ড্রইংরুমের সোফায় মাথায় হাত দিয়ে ফোনে কি যানো করছে।

“আসলে হয়েছে কি মুটকি আমাদের রেহান তার গার্লফেন্ডকে একটা ধমক দিয়েছে।”

অর্পি আপু হেসে বলে,, “বাহ বড় ভাইয়া কি গফ তোমার।এক ধমকে আম্মুর প্রিয় ডিনার সেট শেষ!”

এবার আমারো হাসি পাচ্ছে।ফিক করে হেসে দিলাম আমি।
রেহান ভাই উঠে এসে আমাদের ৩ জনের সামনে দাড়ালেন।

“তোদের ৩ টাকে আমি বাসার বাহিরে রেখে আসবো আরেকবার যদি কেউ হাসিস।”

আমরা মাথা নাড়ালাম।মানে আর হাসবো না। রেহান ভাই চলে যেতেই আমরা ৩ জন অট্টহাসিতে মেতে উঠলাম।

_______________________________
বিকেল ৪:২০,,
বাসায় এলাম।কলেজ থেকে।ভিষন টায়ার্ড লাগছে আমার।তবুও গোসল করে নিলাম।নাহলে সুলেই ঘুমিয়ে পড়বো।
গোসল করে রুমে এসে দেখি নিধি আপু আমার রুমে।আমার প্রিয় নেইলপলিশটা নিয়ে নাড়াচাড়া করছে।

“নিধি আপু তুমি আমার রুমে?এখন এই সময় কি করছো?”

“সেটার জবাব তোমায় দিবো কেনো আমি? বেশি প্রশ্ন করো না।”

“আমার রুমে এসেছো। আমার অনুমতি নাওনি।আমি তো জিজ্ঞেস করবোই।”

“তাই নাকি। আমার মুখে মুখে কথা। দাড়াও দেখাচ্ছি।”

বলে নেইলপলিশটা আছাড় মাড়লো নিচে।তারপর ভ্যা ভ্যা করে কান্না শুরু করল।নিধি আপুর কান্না শুনে রোহান ভাইয়া, অর্পি আপু, রেহান ভাই ছুটে এলেন।
রেহান ভাই এসে নিধি আপুকে জিজ্ঞেস করল,,

“কি হয়েছে নিধি?”

“ওই মেয়েটা আমার ফেভারিট নেইনপলিশ নিয়ে এসে ভেঙে ফেলেছে। কতো এক্সপেন্সিভ ছিলো।”

নিধি আপুর কথায় রেহান ভাই আমার দিকে রেগে তাকালো।

“অন্যের ডিজিস নিয়ে টানাটানি করিস কেনো?জীবনে নেইলপালিশ দেখিস নি?”
আরও অনেক কটু কথা শুনালো।রোহান ভাইয়া বলেন,,

“রেহান থামবি।তুই বেশি বেশি করছিস।একটা বাহিরের মেয়ের জন্য মিথিকে বকছিস।।”

“কে বাহিরের মেয়ে রোহান?মিথি এই বাড়ির গেস্ট আর নিধি এ বাড়ির হবু বউ।”

রোহান ভাই রেগে গেলেন”দেখ রেহান আব্বু কখনো মানবে না এই মেয়েকে এ বাড়ির বউ হিসেবে।তাই এসব চিন্তা বাদ দে।আর মিথির ভাই থাকতে ওকে এসব কথা বার সাহস দেখাবি না আর।”

রোহন ভাই আমাকে নিয়ে রুমের বাহিরে এসে সোফায় বসালো।অর্পি আপু আমাকে পানি দিলো।
রোহান ভাইয়া এখনো রাগে ফুসছে।
আমার ভিষন কান্না পাচ্ছে।তবুও চুপ করে আছি।আটকানোর চেষ্টায় আছি।রোহান ভাই আর অর্পি আপু নানা কথা বলছে আমাকে হাসানোর চেষ্টা করছে।ফুপি বাসায় নেই। আর আঙ্কেল ও বাহিরে।তাই বাসায় আমরা ৫ জন ছিলাম।
একটুপর দেখি নিধি আপু আর রেহান ভাই রেডি হয়ে বাহিরে গেলো।আমার কেনো যেনো রাগ হয় রেহান ভাইয়ের সাথে নিধি আপুকে দেখলে।
ওরা চলে যেতেই আমি রুমে গিয়ে সুয়ে পড়লাম।মন খারাপ সাথে শরীরটাও খারাপ লাগছে। সুতেই ঘুম চলে এলো।

ঘুম ভাঙলো রাতে। রুম অন্ধকার পুরো।বাহিরের পূর্নিমার চাদের আলোতে রুম কিছুটা আলোকিত হয়েছে।
তাতে বোঝা যাচ্ছে আমার সামনে আমার পড়ার টেবিলের চেয়ারে কেউ বসে আছে।আমার দিকে তাকিয়ে।
আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সে আমার কানের কাছে এসে বলল,,

“মিথি পাখির কান্নাতে যে কারে বুকে র/ক্ত ক্ষরণ হয় সেটা কি মিথি পাখি জানে?যার জন্য মিথি পাখির চোখে পাখি তাকে যে আরও কয়েকগুণ বেশি কষ্ট সহ্য করতে হবে।”

বলে আমার কাছে এগিয়ে এলেন। আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম।কারোর নিশ্বাস আমার মুখে পরছে চেয়েও চোখ খুলতে পারছি না আমি।
কিছুক্ষণ পর চোখ পিটপিট করে খুললাম। নাহ কেউ তো নেই!এতোক্ষণ কি তবে সপ্ন দেখলাম!তাই হবে। ঘুমের রেশ কাটেনি।
আমি উঠে লাইট অন করতেই দেখলাম আমার বালিশের পাশে একটা গিফট বক্স।
আমি কৌতুহল নিয়ে বক্সটা খুললাম।খুলে নিজেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।সব কালারের নেইলপালিশ, সব ব্যান্ডেড।

চলবে…!!!
(কেমন লাগলো জানাবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here