পুনম,পর্বঃ৩৯

পুনম,পর্বঃ৩৯
আয়েশা_সিদ্দিকা

আজ পাবনীর মেহেদী অনুষ্ঠান। পাঁচ রুমের ফ্লাটটিতে আত্মীয় স্বজন গিজগিজ করছে।পুনম বিরক্ত নিয়ে বারান্দায় বসে আছে।তার এত কোলাহল ভালো লাগছে না।এত আত্মীয় যে তাদের আছে তা পুনম নিজেও জানতো না।বিয়ে বাড়ি আর মরা বাড়ি আসলে দেখা যায় আত্মীয়র ভীর!এছাড়া তাদের টিকিও মেলে না।খুব ঘরোয়া ভাবে পাবনীর আর সুমনের বিয়ে হচ্ছে। মাঝখানে কেটে গেছে তিনটি বছর।এ তিন বছরে অনেক কিছু বদলেছে।পুনমেরা নিজের বাড়ি বিক্রি করে ভাড়া বাসায় থেকেছে।যখন সব পথ বন্ধ হয়ে গেলো তখন পুনম নিজেদের বাড়ি বিক্রি করে দিলো।কি বিভৎস দিন!বাড়ি বিক্রির দিন বাবা হাউমাউ করে কেঁদেছিলো।পুনম নিজেও কি ঠিক ছিল?ছিল না।যে বাড়িতে শৈশব কৈশোর কেটেছে সে বাড়ি বিক্রি করা সহজ ছিল না।অনেকটা সাহসের সাথে বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছিল পুনম।তবুও কারো সামনে মাথা নত করার কথা একবারও ভাবে নি।মাত্র দশদিনের মধ্যে লুকিয়ে বাড়ি বিক্রি করেছিল।এর জন্য রাশেদ ভাই অনেক সাহায্য করেছে।কোনভাবে হায়দার হোসেন জানতে পারলে তাতেও বাগড়া দিতো।চটজলদি সব কাজ করার জন্য বাড়ি বিক্রির ভালো মূল্য না পেলোও মায়ের চিকিৎসা হয়েছিল।মা ভালো আছে এই পুনমের স্বস্তি!

এরপর তো জামাল ভাইকে জেল থেকে ছাড়ার জন্য অনেক টাকার দরকার ছিল।তাই বাড়ি বিক্রি ছাড়া কোন পথ খোলা ছিল না।মুক্তকে তার বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরেছে এর থেকে শান্তি আর কিসে?উকিল, পুলিশ, সাক্ষী কত জনকে টাকা খায়িয়ে যে জামাল ভাইকে উদ্ধার করেছে তা আল্লাহ জানে?তাতেও জামাল ভাইকে টানা দুই বছর জেলে থাকতে হয়েছে।
পুনমের পরিবার এখন ভালো আছে। পুনম মনে করে।নিজেদের বাড়িতে প্রতিটি মানুষ যখন অশান্তিতে থাকে তখন সে বাড়ি শান্তির নীড় হয় না।এখন বাড়ি নেই তো কি হয়েছে ভালো আছে তো সবাই!

রুমা এখন আর কান্নাকাটি করে না সংসারের জন্য! তার দুনিয়া এখন তার দুই মেয়ে।রুমা একটি স্কুলে চাকরি করে। আর তাতেই তাদের দুই মেয়ে মার হয়ে যায়।রুমা নিজের করা ভুলে শাস্তি পেয়েছে।কিন্তু উঠে দাঁড়িয়েছে।রুমা এখন পুনমকে ছাড়া কিছুই বুঝেনা।ইষ্টি মিষ্টির সকল সিদ্ধান্ত পুনমকে নিতে হয়। ইষ্টি মিষ্টিকে কখনো রুমা পেতো না যদি পুনম সাহায্য না করতো।নারী সমিতির লোক ধরে ইষ্টি মিষ্টিকে নিয়ে এসেছে হারুনের বাসা থেকে।সবসময়ের অহংকারী রুমা এখন অহম মাটি দিয়ে খাটি স্বর্ণে পরিনত হয়েছে। আর হারুন গত সাত মাস ধরে রোজ রুমার স্কুলের সামনে অপেক্ষা করে রুমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার জন্য। জামিলা হারুনের সংসার করেনি।তাদের একটা প্রতিবন্ধী ছেলে হয়েছে।আর জামিলা অসুস্থ ছেলেকে দেখা শোনা করতে পারবেনা বলে অন্য এক পুরুষকে বিয়ে করে নিয়েছে।হারুনের আকুলতা কেন যেন রুমাকে ছুঁতে পারে না।সে এখন কেবল ভালো মা, ভালো সন্তান, ভালো বোন!ভালো বউ হওয়ার কোন দরকার নেই তার!

ঝুমা সবুজ রঙের শাড়ি পড়ে চঞ্চলপায়ে ফ্লাটে ঘোরা ফেরা করছে।মুক্ত বাবার কোলে চেপে বসে আছে।কিছুতেই নামানো যাচ্ছে না।ঝুমা বিরক্তিতে কপাল চাপড়ায়….জামালের সাথে দুটো কাপল ছবি তুলবে তা এই ছেলের জন্য পারা যায় না।ছেলে হয়েছে বাপ অন্ত প্রাণ!আর জামাল দীর্ঘদিন ছেলেকে কাছে পায়নি বলে ছেলে কোল ছাড়া করতে চায় না।
কোথা থেকে মরিচা উড়ে এসে মুক্তকে কোলে নিয়ে চলে যায়।জামাল আহাম্মকের মত সেদিকে বেশিক্ষণ তাকাতে পারলো না।তার আগেই ঝুমা তার হাত পেচিয়ে ছবি তুলতে শুরু করেছে।

মরিচার প্রমোশন হয়েছে। সে এখন এ বাড়ির কাজের লোক নয় বরং লাবণ্যর সহকারী। লাবণ্যর সব কাজ সে করে।মরিচা মুক্তর দু’হাতে মেহেদি দিয়ে দিছে।আর মুক্ত সেই অবস্থায় দৌড়ে নানার কোলে ঝাপিয়ে পড়লো।নিয়াজ উদ্দিনের সারা পাঞ্জাবি মেহেদিতে মেখে একাকার হলো।নানার পাঞ্জাবি মাখিয়ে দিয়ে মুক্ত খিলখিল করে হেসে উঠে আর তাতে নিয়াজ উদ্দিন নিজেও যোগ দেন।মুক্ত এ পরিবারের জান! নিয়াজ উদ্দিন নাতির হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে ভাবে,জীবন মন্দ নয়!জীবনে চড়াই উৎরাই থাকবেই কিন্তু তা পেড়িয়ে সুখের সন্ধান নিজেকে করে নিতে হবে।

পাবনী দু’হাতে মেহেদি দিয়ে বসে আছে।কপালে রজনী গন্ধা আর গোলাপের টিকলি।কানে গলায়ও ফুলের গহনা।মেরুন আর সবুজের মিশ্রণে একটা শাড়ি পড়া।পাবনীকে বৃষ্টি ভেজা প্রকৃতির মত স্নিগ্ধ আর সতেজ লাগছে।সবসময়ের চাপা বৈশিষ্ট্যর পাবনী আজ কিছুতেই নিজের লজ্জা আর অনুভুতি লুকাতে পারছে না।কোন ব্লাস ছাড়াই গাল দুটো ক্ষণে ক্ষণে লাল হয়ে যাচ্ছে, চোখের তারায় সুখেরা লুটোপুটি খাচ্ছে! নিজের মনে লজ্জা পেয়ে নিজেই কুঁকড়ে যাচ্ছে!সুখ সুখ অনুভুতি ঘিরে রাখছে পাবনীকে।

হারুনের সাথে সম্পত্তির কোন্দলে সুমনের জিত হয় আরো আড়াই বছর আগে।নিজের ভাগের সম্পত্তি বুঝে নেয় সুমন।কোন বাড়তি এক আনাও সে গ্রহণ করেনি।কুমিল্লা থেকে সম্পত্তি সব বিক্রি করে ঢাকা এসে ব্যবসা শুরু করেছে সুমন।পাবনী ক্রোকারিজ নামে তিনটে দোকান এখন তার।একমাস আগে এই ফ্লাটটি কিনেছে।সুমন সব গুছিয়ে পাবনীকে নিজের জীবনে আনতে চেয়েছে তা সুমন পেরেছে।হয়তো কিছুটা দেরিতে তবুও পেরেছে। জামাল সুমন মিলে তিনটে দোকান সামলায়।বিয়েটা আরো আগে করতো কিন্তু সুমন চেয়েছিল তার ফ্লাটে পাবনীর পুরো পরিবার নিয়ে থাকতে।আর এ সিদ্ধান্তে পুনমের পরিবারের কেউ রাজি ছিল না।অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সুমন রাজি করিয়েছে সবাইকে।সুমন একটা পরিবার চেয়েছিল সবসময়। আজ তার পরিবার হয়েছে।হোক না পরিবার টা অন্য কারো তবু যখন নিজের মানুষ ভেঙে গুড়িয়ে দেয় তখন পর মানুষই ভাঙা টুকরোগুলো গুছিয়ে দেয়। আর পুনমকে ছাড়া কখনো এতকিছু সম্ভব ছিল না।তাই এই বাসার সবথেকে সুন্দর রুমটি সুমন পুনমকে দিয়েছে।সুমন মনে করে এটা পুনম নামের মেয়েটার প্রাপ্য!

লাবণ্য ফটাফট কয়েকটা সেল্ফি তুলে এফবিতে আপ দেয়।সাথে সাথেই লাইক কমেন্টের বন্যা বয়ে যায়।শ্যামবতী লাবণ্যকে সবুজ লেহেঙ্গায় ফুলের কড়ির মত লাগছে।লাবণ্য নামটা সোশাল মিডিয়ায় এখন পরিচিত একটা নাম।একজন নৃত্যশিল্পী এবং বেষ্ট মেকাপ আর্টিষ্ট হিসেবে ইউটিউবে তার হাজার হাজার ফলোয়ার।দেশের বিভিন্ন জায়গায় লাবণ্য স্টেজ শো করে ফেলেছে।তার আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে নৃত্য সবার মনে জায়গা করে নিয়েছে।ক্লাসিক আর আধুনিক নৃত্য মিলিয়ে সে স্টেজ শো করে।
লাবণ্য যেখানেই যায় সে মরিচাকে সঙ্গে রাখে।মরিচা বু ছাড়া তার কোন কাজ হয় না।লাবণ্য আর তার বান্ধবীরা মিলে পাবনীর মেহেদি অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করে।সবাই মুগ্ধ হয়ে হাত তালি দেয়।

সুমনের প্রচুর খুদা লেগেছে কিন্তু সে খেতে পারছে না।তার দুই হাতে লাবণ্য মেহেদি দিয়ে আটকে ফেলেছে।লাবণ্য এখন জামাল আর মরিচার সাথে ফানি নাচ করতাছে।কি আজব!সবার বিয়ে নিয়ে মাতামাতি অথচ বরের দিকে কারো খেয়াল নেই।পুনমের মাকে এদিকে এগিয়ে আসতে দেখে সুমন হাতের মেহেদি লুকানোর চেষ্টা করে।বিচ্ছু মেয়েটা দু’হাতে উপর লিখে দিয়েছে, “সেজ আপার বর!” আর “পাবনীর মি.উজবুক!”। আর তার চারপাশে লতাপাতা কত ডিজাইন।কি লজ্জাজনক কথা!
সালেহা বেগম এক প্লেট খাবার নিয়ে সুমনের সামনে বসে।নিজে হাতে বিরিয়ানি তুলে দেয় সুমনের মুখে।সুমনের হটাৎ কান্না পায়!চোখ ভিজে উঠে।মায়ের ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়?সুমন এই পরিবারটিকে ভীষন ভালোবাসে! সালেহা বেগম এক লহমা বিরিয়ানির সাথে এক টুকরো শসা ভেঙে সুমনের মুখে তুলে দিয়ে অন্য হাতে সুমনের চোখ মুছে দেন আঁচল দিয়ে!তার ছেলের অভাব ঘুচিয়ে দিয়েছে এই ছেলেটা।তাকে কখনো কাঁদতে দেবেনা সালেহা বেগম!

রাত আটটা। মেহেদি অনুষ্ঠান বিকেলে শুরু হওয়ায় তা এখন শেষ হয়েছে।রুমা ঝুমার মন খারাপ।তারা ভেবেছিল পুনমের জন্য অনুষ্ঠানে আসা কোন ছেলের মধ্যে থেকে একজনকে পছন্দ করবে।কিন্তু কিসের মধ্যে কি?যে কয়টা ছেলেরা এসেছে সব ভাঙাচোরা চেহারা!তাদের এত ফুটফুটে সুন্দর বোনের জন্য কোথায় পাবে ভালো একটা হ্যান্ডসাম বর?

পুনম সেই বিকেল থেকে বারান্দায় বসা।পুনমের যখন মেজাজ ঠিক থাকে না তখন কেউ তাকে ঘাটায় না।তখন পুনম ভীষন চিল্লাপাল্লা করে।এই স্বভাব আগে ছিল না।মায়ের অপারেশনের পর শুরু হয়েছে।নিজেকে যতটা সম্ভব গুটিয়ে রাখে সবার থেকে।অকারণেই মেজাজ খারাপ হয়!পুনমের নিজেকে অচেনা লাগে, কাউকে বলতে পারেনা তানভীরকে সে ভীষণ মিস করে।এই যে এত কোলাহল, আনন্দ কোন কিছুই পুনমকে ছুঁতে পারে না।শুধু একটা মানুষ ওর কাছে কিভাবে প্রাধান্য পায়?পুনম তা জানে না।সেদিনের সেই রাতের পর তানভীর আর তার সাথে যোগাযোগ রাখেনি।তিনটা বছর কেটে গেলো যোগাযোগবিহীন!তানভীর কথা রেখেছে,পুনমকে নির্বিগ্ন জীবন উপহার দিয়ে গেছে অথচ পুনমের প্রতিটা প্রহর কাটে উদ্বিগ্নতায়! পুনম প্রায়ই তানভীরের রেস্টুরেন্টের আশেপাশে থেকে দেখে আসে তানভীরকে।তানভীরকে ইদানীং একটা মেয়ের সাথে বেশি দেখা যায়!আজ সকালে বাড্ডার ওদিকে একটা কাজে গিয়েছিল পুনম তখনই তানভীরকে দেখতে পেলো ঐ মেয়েটির হাত ধরে হাসি হাসি মুখ করে কথা বলছে।কি অসহ্য দৃশ্য!সেখান থেকে আসার পর থেকেই পুনম বারান্দায় গুম হয়ে বসে আছে।তানভীর কি আবার নতুন করে কারো প্রেমে পড়লো?এই প্রশ্নটাই ঘুরে ফিরে সামনে আসে বারবার…….

পুনম সবার আবদার ফেলতে পারলেও মুক্তর কোন আবদার ফেলতে পারে না।এই যে বাসার সবাই পুনমকে মেহেদি দিতে রাজি করাতে পারলো না অথচ ছোট্ট মুক্ত যখন এসে বললো,””পুনুমা আসো, আসো আমরা মেহেদি দিবো।”” তখন পুনম মেহেদি না দিয়ে পারলো না।হোক না অনুষ্ঠান শেষ তবুও লাবণ্য পুনমের দুহাতে মেহেদির রঙে রাঙিয়ে তুললো।

নিয়াজ উদ্দিনের মনে হয়, সবটা সুখ এসেও যেন দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে তাই পূর্ণতা পেল না।তার পুনমকে সে এতটা ভেঙে পড়তে কখনো দেখেনি।তিন বছর আগের সেই বিপদের সময়ও না।মেয়েটার হাসিমুখেই যেন এই পরিবারের পূর্ণতা!

তারুণ লন্ডনে আছে তিনটি বছর ধরে।কারো সাথে যোগাযোগ রাখেনি।মা, ভাই, লাবণ্য কারো সাথে না।তারুণের সবসময় মনে হয়েছে এই মানুষগুলোর সাথে যোগাযোগ করলে তারুণ নিজেকে সামলাতে পারবে না। তারুণ তার অতীত কষ্ট বইতে চায় কারো সাথে ভাগ করতে চায় না।তারুণ ডাক্তারি পড়ছে…পড়াশোনা, ল্যাব,পার্ট টাইম জব এই নিয়ে সারাদিন নিজেকে ব্যস্ত রাখে।তারুণ কেবল কথা বলে পুনমের সাথে! এই মেয়েটাকে কেন যেন তারুণের ভীষণ আপন মনে হয়!কিন্তু আজ বিকেল থেকে তারুণের মন বার বার দেশে ছুটে যাচ্ছে। মায়ের সাথে কথা বলতে মন চাইছে।ভাইকে বলতে ইচ্ছে করছে, ভাই ইউ নো আই অলওয়েস লাভ ইউ! আর বোকা সোকা লাবণ্যকেও ভীষণ মিস করছে তারুণ।লাবণ্যকে ইদানীং তারুণের চাবি দেয়া পুতুল মনে হয়।চাবি ঘুরালেই কি সুন্দর গানের তালে পা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাচে।তারুণের বলতে মনে চায়,”” এই মেয়ে,সবাইকে তোর প্রতিভা দেখালি তবে আমায় কেন বাদ রাখলি?আমার সামনে একটু ঘুরে ঘুরে নাচ তো,আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি!” কিন্তু তারুণের কখনো বলা হয় না।সবার প্রতি এক অজানা অভিমানে নিজেকে আড়াল করে রাখে!

হায়দার মেনশন আজ শূন্য। কেউ থাকে না। কেবল হায়দার হোসেন একা বাস করেন।তানভীর তার মাকে নিয়ে গেছে এতে হায়দার হোসেনের সমস্যা নেই।শায়লার প্রতি তার কখনোই কোন টান ছিল না।কিন্তু তানভীর চলে যাওয়াতে তার খারাপ লাগছে।এত কিছু কার জন্য? তানভীর তা বুঝলো না।বরং মাকে নিয়ে যাওয়ায় সময় শাসিয়ে গেছে,তানভীরের কোন কাজে বাধা দিলে তানভীর নিজেকে নিজে শেষ করবে।হায়দার হোসেন তাই কিছু বলেনি।তার উত্তরাধিকার শেষ হয়ে যাক তা তিনি চান না।এছাড়া তানভীর চলুক তার মত। সেতো এখন আর থার্ডক্লাস পুনমের সাথে যোগাযোগ রাখছে না।বরং মাহি নামে একটা মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করেছে।আর মাহির বাবার স্ট্যাটাস তাদের ধারে কাছে।আর মেয়েটাও সুন্দর!

রাত দশটা তানভীর খেতে বসেছে।আজ রেস্টুরেন্ট তাড়াতাড়ি বন্ধ করে চলে এসেছে।তার রেস্টুরেন্টটা এখন তিন তলা।একেক তলায় বিভিন্ন আইটেমের বিভিন্ন সেকশন। সুন্দর সাজানো গোছানো পরিপাটি হওয়ায় আর খাবারের মান ভালো হওয়ায় বেশ পছন্দের তালিকায় আছে রেস্টুরেন্টটি।তানভীরের শরীর আজ ভালো লাগছিল না তাই বাসায় এসেছে না হলে রাত বারোটা পর্যন্ত খোলা থাকে তানভীরের রেস্টুরেন্ট!
খেতে বসে তানভীর খেয়াল করলো ডালে লবণ হয়নি,মাছ ভাজতে গিয়ে পুড়ে ফেলেছে,সবজিতে হলুদের গন্ধ। রাজুও তার সামনে খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছে অথচ খাচ্ছে না।তানভীর রাগ নিয়ে বলে, “মা এসব কি? এ খাবার মুখে দেয়া যায়?”

শায়লা টেবিলে বসে গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে, ” তো আমি অসুস্থ মানুষ যা রেঁধেছি তাই খেতে হবে।ভালো খেতে চাইলে বউ নিয়ে আসো।”

“বউ লাগবে না,আর না তোমার রান্না করতে হবে।প্লিজ কাল থেকে বুয়া রান্না করবে।”

“বুয়া রান্না করলে আমি খাবো না।”….জেদ নিয়ে বলে শায়লা বেগম।

তানভীরের মেজাজ খারাপ হয়।তার মা তার পিছনে পড়ে আছে বিয়ে দেয়ার জন্য। রোজ রোজ একটা ঝামেলা বাঁধায়।আর এসব আইডিয়া দাতা যে বুবু তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।রাজুর মন মেজাজ এমনেতেই ভালো ছিল না তার উপর মায়ের এই অবুঝপনা! তানভীর নিজেকে শান্ত রেখে বলে, “রাজু নিচে যাও।সামনে কোন রেস্টুরেন্ট পেলে খাবার নিয়ে আসো।এই অখাদ্য আমার রুচবে না।”

রাজু নড়ল না গাঁট হয়ে বসে রইলো।শায়লা ম্যাম বলেছে যতক্ষণ পর্যন্ত তানভীর স্যার বিয়ে না করছে ততক্ষণ পর্যন্ত রাজুকে বিয়ে করাবেন না।অথচ রাজুর বিয়ের বয়স হয়ে গেছে।সেদিন আয়নায় কানের কাছে দুটো পাকা চুল দেখে একটুর জন্য স্ট্রোক করেনি রাজু।তার স্যারের কথা মানবে না সে।রাজু এখন শায়লা ম্যামের পক্ষে।নিজে বিয়ে করবে না আর কাউকে করতেও দেবে না।স্বার্থপর!হুহ!

রাজুকে নড়তে না দেখে তানভীর বুঝে গেলো সবাই জোট বেঁধেছে তাই তানভীর মেজাজ খারাপ করে টেবিল ছেড়ে উঠে গেলো।মেইন গেট ধরাম করে বন্ধ করে নিজের রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।

বল্টু আজ পুনমদের বাসায় থাকবে।পুনম দু হাতে মেহেদি শুকানোর অপেক্ষায় বসে আছে।বল্টু পুনমের পাশে এসে মোবাইলে চোখ রেখে বলে, ” হ্যারে আন্ধার রাইত,এই মাইয়াডা কেডা?তানভীর ভাই মাইয়াডার ছবিতে কমেন্ট করছে।যে “এত সুন্দর চোখ মানুষের কিভাবে হয়?’ কাহিনী কি?”
বল্টু মোবাইলটা পুনমের চোখের সামনে ধরে।মেয়েটার প্রোফাইল নেম মাহি।তানভীর সেখানে বেশ রসিয়ে কমেন্ট করছে।কেন যেন পুনমের বাচ্চাদের মত অদ্ভুত রাগ হলো।অথচ আত্মসম্মানে ভরপুর,ম্যাচিউর পুনমের কাছে থেকে তা আশা করা যায় না। পুনম চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, বল্টু চল।তোর বাইকে আমায় নামিয়ে দে।”
বল্টু আগামাথা না বুঝলেও তার বন্ধু যে ভীষণ খেপেছে তা বুঝতে পারলো।
বল্টু বাইক চালাচ্ছে তার পিছনে হাত ভর্তি মেহেদি নিয়ে পুনম বসে আছে।হাতের মেহেদির কথা পুনম ভুলে বসে আছে।বাতাসে চুল উড়ছে।চোখের কোণে অবুঝ রাগ!ঠোঁটের ভাঁজে একগুচ্ছ অভিমান!তিনটা বছর পর সে তানভীরের মুখোমুখি হতে চলছে। অথচ পুনম ভুলে গেলো সে নিজেই তানভীরকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলো দায়িত্বকে গ্রহণ করে তবে আজ এ কেমন রাগ বা অনুরাগ?

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here