পুনম,পর্বঃ২০
আয়েশা_সিদ্দিকা
রাতের শেষভাগ,পুরো পৃথিবী ঘুমিয়ে আছে । সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর শহরবাসীর কাছে রাত হলো স্বস্তির সময়! শায়লা হক যেন আজ একটু বেশিই আনন্দের সহিত নিদ্রায়মাণ! ঘুমন্ত মুখে লেপ্টে রয়েছে মমতাপূর্ণ মৃদু হাসি। দরজাটা ক্যাচ করে খুলে যায়।ধীর পায় হায়দার হোসেন এসে বসে বিছানার পাশে!অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে স্ত্রীর মুখের দিকে। আপনমনে বলে উঠে, —-আজ অনেক বড় ভুল করলে শায়লা। তোমাকে ভালোবাসতে পারিনি কখনো তাই বলে তোমাকে আঘাত করতেও ভালো লাগে না আমার।কিন্তু তুমি সবসময় আমায় বাধ্য করো…….আমি নিরুপায় শালু….বড্ড নিরুপায়! মনোক্তির সাথে মুখে ফুটে ওঠে কুৎসিত হাসি!সে হাসি দেখতে বড় বিশ্রী!
ঘুমে বিভোর শায়লা অনুভব করে তার পায়ের কাছটা জ্বলে যাচ্ছে!মনে হচ্ছে তার দুপায়ে আগুন জ্বলছে।ভীষণ যন্ত্রনা হচ্ছে!মাংস পোড়া গন্ধ এসে নাকে লাগছে।দু চোখের ঘুম চলে গিয়ে সেখানে অশ্রুরা এসে ভীর করে।এ আঘাত বড্ড পরিচিত তার!ভুলবার তো নয়। অসহ্য যন্ত্রণায় চিৎকার করতে যেয়ে অনুভব করে কন্ঠনালী থেকে শব্দ আসছে কিন্তু তা মুখে এসে গোঙানির মত আওয়াজ হচ্ছে। শায়লা উঠে বসে, চোখ দিয়ে মিনতি করে , যেন তাকে আর আঘাত করা না হয়।চোখ ফেটে পানি পড়ছে।মুখে কসটেপ দেয়া,হাত শাড়ির আঁচল দিয়ে বাঁধা! আর হায়দার হোসেন মুখে ক্রুর হাসি রেখে গরম লোহার রড দিয়ে শায়লার পায়ে আঘাত করছে।শাস্তি পাচ্ছে শায়লা।সন্তানকে ভালোবাসার শাস্তি,সন্তানের কাছে সত্য উন্মোচনের শাস্তি!ফর্সা পায়ে দগদগে ক্ষত ফুটে উঠেছে!
অনেকক্ষণ পর আঘাত দেয়া থামিয়ে হায়দার এগিয়ে আসে বিধ্বস্ত শায়লার কাছে!ততক্ষণে শায়লা আঘাতে আঘাতে অচেতন প্রায়।শায়লার বুকের কাছে শাড়ির আঁচল নেই,ব্লাউজ ঘামে ভিজে জবজব। হায়দার খুব কাছ এসে শায়লার ঘর্মাক্ত গলার কাছে মুখ ডুবিয়ে বলে,
—–বড্ড ভুল করলে শায়লা।বেশ তো ছিলে! ছেলেমেয়েদের কাছে তোমার মুখ খোলা একদম উচিত হয়নি।এত সহজে তো তোমার নায়লার পরিণতির কথা ভুলে যাওয়া উচিত না। আজকের আঘাতের কথা মনে রেখ শালু, তারুণ যদি জানে তবে আমায় প্রতিরোধ করার আর কোন পথ তুমি পাবে না। তানভীর কে বলে দিও, আমার বিপরীতে যাওয়ার পরিণাম খুব ভয়াবহ! খুব!
শায়লার কর্ণকুহরে তখন একটা নামেই বারবার আঘাত করছে, নায়লা! নায়লা!
একেতো শরীরে আঘাত, সাথে নায়লার মুখটি যখন ভেসে উঠলো শায়লার মানসপটে তখন আর পারলো না স্বাভাবিক থাকতে।হায়দার হোসেনের বুকের উপর ঢলে পড়লো।অজ্ঞান শায়লাকে দেখে হায়দার হোসেন বিড়বিড় করে বললো,—–তুমি বড় দুর্বল মহিলা শায়লা!বড় ভীতু!
*************************************
তপ্ত দুপুরের রোদে চারিপাশ খা খা করছে।কোথা থেকে একটা কাক এসে বসে জামিলার ফ্লাটের বারান্দায়।কা কা শব্দে জানান দেয় তার উপস্থিতি।কাকের কর্কশ আওয়াজে জামিলার আর তার প্রণয় পুরুষটির অন্তরঙ্গ মুহূর্তে ব্যঘাত টানে।জামিলা বিরক্ত নিয়ে তাকায় কাকটির দিকে।তা সহ্য হয় না তার প্রণয়ের মানুষটির।জামিলার সমস্ত মনোযোগ তার চাই।এ নারীটি তার কাছে গুপ্ত পাজল।যা কখনোই সমাধান করতে পারে না সে! আর চায়ও না সমাধান করতে।প্রণয়ের মানুষটির কঠিন আক্রমণে জামিলার আর কাকের দিকে তাকানোর সময় হয়না।সে ডুব দেয় আদিম উন্মাদনায়!জামিলার মোহনীয় দৃষ্টি আরো ঘায়েল করে দেয় সামনের মানুষটিকে!
ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের পর লেপ্টে রয়েছে জামিলা তার প্রেমিক পুরুষটির বুকে।তখনই পুরুষটির মোবাইলে রিং বেজে ওঠে। স্ক্রিনে ভেসে ওঠে “রুমা “লেখা নামটি আর তার ছবি! জামিলা কপাল কুঁচকে তাকায়। পুরুষটি কল রিসিব করে, ওপাশ থেকে বলে ওঠে,
—আব্বু তুমি আসছো না কেন এখনো?
—-এই তো আসছি।
—-আমায় মিষ্টি মেরেছে।
—ইষ্টিমণি আমি এসে ওকে বকে দেবো।
—লাভ ইউ আব্বু!তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো। আম্মু বলেছে আজ শেষ রোজা তাই আমরা সবাই একসাথে ইফতার করবো।
—আচ্ছা!…. বলে কল কেটে দেয় হারুন। জামিলার প্রেমিক পুরুষ টি আর কেউ নয় পুনমের বড় দুলাভাই হারুন!
*******************
আজ পুনম রান্না করছে। কলেজ নেই,টিউশনি নেই,কোচিং নেই।তাই সে রান্না করছে পরিবারের সকলের জন্য! মরিচা সাহায্য করছে আর পুনম পাকা রাঁধুনির মত কোমরে ওরনা পেচিয়ে রান্না করছে।
বাবা একটু পর পর এসে রান্না ঘরে এসে দেখে যাচ্ছে পুনমকে।বারবার সাবধান করছে।নিয়াজ উদ্দিনের ভয়,যদি মেয়েটা হাত টাত পুড়িয়ে ফেলে।পুনম বাবার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।কাল থেকে কম কথা বলতেছে পুনম বাবার সাথে। এটা হচ্ছে শাস্তি বাবার।কেন তাকে না বলে ট্যুরের টাকা দিয়েছে তাই?বাবা অবশ্য চেষ্টা চালাচ্ছে মেয়ের রাগ ভাঙানোর।
ঝুমা এসে একটা গরম পিঁয়াজু মুখে দেয়।তা দেখে মরিচা বিরক্তির সাথে বলে,
—–মাইজা আফা কাল না আমনে এত বমি করলেন তারফরও আবার ভাজা পোড়া ক্যান খাইতাছেন?
ঝুমা মরিচার কথা ভ্রুক্ষেপ করেনা।সে একটা বাটিতে আরো কিছু পিয়াজু নিয়ে রুমের দিকে হাঁটা দেয়। জামাল আর সে এখন আয়েশ করে পিঁয়াজু খাবে।গোল্লায় যাক ওসব বমি টমি!হুহ!
পাবনী এসে মরিচাকে বলে,
—-যা লাবন্য তোকে ডাকছে।হাতে মেহেদী দিয়ে দিবে।
—কাজ তো শেষ হইলো না সাইজা আফা।
—-ইষ্টি মিষ্টির হাতে মেহেদী দেয়া শেষ এখন তোর হাতে দিবে।সন্ধ্যার পর সে নিজে দিবে না তোদের দিবে।তাই যা। আমি পুনমকে হেল্প করতেছি।
মরিচা খুশি মনে দৌড় দেয়। তা দেখে বড় আপা মুখ ভেঙচায়।মাকে বলে,
—-মা তোমার মেয়েদের এত আদিখ্যেতা আসে কোথা থেকে।কাজের মানুষ থাকবে কাজের মানুষের মত।তা না….তাকে তোমরা মাথায় চড়াও!
পুনম রান্নাঘর থেকে বলে ওঠে, —–মা তোমার মেয়েকে বলো,এসবের মর্মতা সে বুঝবে না।
বড় আপা বলে,
—–তা আমার বুঝারো দরকার নেই।কতকিছু বুঝেও তো মুখবুজে দেখি তার বেলা….কি?
পুনম চোখ বড় বড় করে বলে,
—-ওমা তাই নাকি। তা তুমি মুখ বুজেও থাকতে পারো।বাব্বা!
মা ধমকে ওঠে,
—-কি শুরু করলি তোরা।এই রুমা থামতো তুই…..
—আমি উচিত কথা বললেই থামতে বলো তোমরা।এই যে আমরা আসছি পর থেকে বাবা সবসময় বলতেছে টাকা নেই এখন পুনমকে ঘুরতে পাঠানোর সময় সে টাকা পায় কোথায় বলতো?
এই বিষয় টা সালেহারও ভালো লাগে নি।কত কষ্ট করে তাদের চলতে হয় তারপর আবার এসব ফালতু ঘোরাঘুরি করে টাকা খরচ!আর সবচেয়ে বড় কথা সেখানে কত ছেলেরা থাকবে?তা যদি পুনমের বাবা বুঝতো!
নিয়াজ উদ্দিন বলে, —-তোমাকে কৈফিয়ত আমি দিবো না রুমা।আমার বড় ভয় হয় রুমা!তোমার এই ব্যবহার তোমাকে তোমার আপনজনদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে না দেয়!
********************
সন্ধ্যার পর ভ্যাপসা গরম পরিবেশে।ছাদে মাদুর পেতে বসে আছে লাবণ্য, বাবা, সুমন ভাই,মরিচা আর জামাল ভাই।পাবনী আর পুনমও ছিল তারা একটু আগে নেমে গেছে।আজ চাঁদ রাত।সবাই একসাথে বসে চাঁদ দেখেছে।লাবণ্য ফটাফট কতগুলো ছবিও তুলেছে। পাবনীর দু হাত ভর্তি করে মেহেদী দিয়ে দিয়েছে লাবণ্য তারপর ছবি তুলে ফেসবুকে ছেড়েছে।অলরেডি তার মোবাইলে ফেসবুক, ইন্সট্রা,টিকটক এ্যাপে একাউন্ট করা হয়েগেছে।যার হাতে মেহেদী দিচ্ছে তার হাতের ছবি নেটে ছাড়ছে।লাবণ্যের পাগলামীতে অতিষ্ট হয়ে পুনম নিচে নেমে গেছে।পুনম রান্না করে ক্লান্ত! তাকেও মেহেদী দিতে চাইলে বলেছে একটু পর দিবে।
লাবণ্য এখন সুমন ভাইয়ের হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে। সে অবশ্য রাজি ছিল না কিন্তু লাবণ্য সাথে পারা দুষ্কর! লাবণ্য খুব সুন্দর করে একটা ফুল একে তার মাঝে লিখে দিয়েছে “দাদাভাই”! তা দেখে সুমনের চোখ ছলছল করে ওঠে।একটু আগে খারাপ লাগলেও এখন তার ভালো লাগছে।এই মানুষগুলো তার কাছের মানুষ না হয়েও খুব আপনে পরিনত হয়েছে।
আর জামালের হাতে মেহেদী দিয়ে লিখে দিয়েছে লাবণ্য,
“বউ বড় না শালী বড়?”‘
“” দুলাভাইয়ের কান বড়!””
লিখেছে আর হাসিতে লুটোপুটি খেয়েছে লাবণ্য! আর জামাল চিন্তায় পড়ে গেছে,তার কি আসলেই কান বড়?
সুমন বলে ওঠে,
—-আংকেল আপনি পুনমকে এত ভালোবাসেন কেন?
প্রশ্নটি শুনে সবাই নড়েচড়ে বসে।লাবণ্যও জানতে চায়…তাই সেও আগ্রহ ভরা চোখে তাকায় বাবার দিকে।
বাবা বলে,
—–সুমন, ভালোবাসার ব্যাখ্যা করা যায় না। তবে যখন জানতে চাইছো তোমাকে একটা ঘটনা বলি।তা শুনলে তুমি বুঝতে পারবে পুনমকে কেন ভরসা করি? তখন পুনমের ছোটমামার বিয়ে।লাবণ্য ছোট তিন কি চার হবে হয়তো বয়স।আমার দিকের কোন আত্মীয় আমার ছিলনা। তাই পুনমের নানা বাড়িই ওরা বেড়াতে যেতো।পুনম একটু বড় হতেই বুঝতে পারলো ওর বাবাকে সবাই নিচু চোখে দেখে যা সালেহাও কখনো খেয়াল করনি! তো আমার ছোট শ্যালকের হবু শশুর বাড়ি থেকে লোকজন আসলো কথা পাকা করতে। তখন কি যেন একটা কথোপকথনে আমি কিছু বলতে চাইলাম। কিন্তু আমাকে পুনমের বড় মামা থামিয়ে দিলো।পরোক্ষভাবে আমাকে অগ্রাহ্য করা হলো।সে সভায় যে আমি অবান্তর তা বুঝতে পারলাম।সালেহার বাবার বাড়ির আত্মীয় স্বজনের মধ্যে আমারই অর্থ কম ছিল তাই কদরও কম ছিল।শুধু আমার শাশুড়ী ব্যতিক্রম ছিল। তার উপর আমার পাঁচজন মেয়ে সহ আমরা সাত জন সদস্য। তাই আমরা তাদের কাছে ছিলাম বাড়তি ঝামেলা।আমাদের তাদের বাড়ির যে কোন দাওয়াতে বলা হত কেবল সমাজ রক্ষার্থে। কিন্তু সালেহা সেসব বুঝতো না।আমি বললে, কান্নাকাটি করতো। তো যা বলছিলাম,পুনমের ছোট মামার বিয়ে হয়ে গেল।পরদিন তার শশুড় বাড়ি থেকে বিশ পঁচিশ জন লোক আসলো তাদের মেয়ে দেখতে।খাবারের বিশাল আয়োজন! লাবণ্য ছোট তো ক্ষুদায় কান্নাকাটি করতেছে।সালেহা খাবার আনতে গেলে তাকে বলা হলো আগে মেহমান খাবে তারপর সবাই কে দিবে।অথচ আমার ছোট বাচ্চাটা চিৎকার করে কান্না করছে।লাবণ্যের কান্নায় অস্থির হয়ে ঝুমা গেলো খাবার আনতে তখন ওকে বলা হলো —-খাওয়ার জন্য এত ছোটলোকি করছিস কেন? গুষ্টি শুদ্ধ এসে শুধু গান্ডে পান্ডে গিলছিস।সময় হলে ডাক দিবো।
এই কথা পুনম শুনে সেই নতুন মেহমানের সামনে আমার শাশুড়ীকে বলেছিল—–নানু মনি খাবার চাইলে যদি আমরা ছোটলোক হয়ে যাই তবে তোমরা আসতে কেন বলো? তোমরা আমার বাবাকে অপমান না করে বলে দিতে পারো না,তোমাদের পরিবারে লোকজন বেশি তাই আর আসবে না।লোকদেখানো কাজ কেন করো?
সেদিন পুনমকে বলা হলো বেয়াদব!সালেহার পেটে বেয়াদব হয়েছে।এরপর আর কখনো পুনমকে নিতে পারেনি কোন অনুষ্ঠানে আর না আমি গিয়েছি। এর জন্য অনেক মার খেয়েছে সালেহার হাতে কিন্তু কখনো পুনমকে টলাতে পারে নি।সালেহার মতে তার বাপের বাড়ি থেকে তাকে দূর করেছে পুনম। পুনম বলতো তোমরা যাও কিন্তু যেখানে আত্মসম্মান নেই সেখানে আমি যাই না।
তারপর একবার আমাকে খবর দেয়া হলো কি ব্যাপারে যেন আলোচনা আছে কিন্তু পুনম তাদের বলে দিলো, যেখানে আমার বাবার মতামতের গুরুত্ব নেই সেখানে আমার বাবা যাবে না!
সুমন তুমি বলে,যেখানে পুনম সকল কিছু ছাপিয়ে তার বাবাকে আগে রাখে সেখানে তার বাবা কেন তাকে পিছিয়ে রাখবে?
লাবণ্য হুট করে কেঁদে দিলো। তার নয়াপুর মত কেউ কখনো হতে পারবে না।কেউ না!
*****************—
নিয়াজ উদ্দিন ছাদে এখন একা বসে আছে।তার ভালো লাগছে না।বুকটা ভার ভার লাগে।বাতাসে অস্থিরতা! সে একমনে একটি দোয়াই করে, তার মেয়েরা ভালো থাকুক সবসময়।
পুনম হাত ভর্তি মেহেদী নিয়ে বাবার কাছে এসে বসে,
—-বাবা নিচে যাবে না?
—-যাবো তো মা।তা কারো রাগ কমেছে?
পুনম হেসে দেয়।সে হাসি বাবার বুকের অস্থিরতা কমাতে সক্ষম হয়! পুনম বাবার কোলে মাথা রাখে।
—–ভাবলাম রাগ করে কি হবে?আমি আবার বুড়ো দের সাথে রাগ করি না
—-বুড়ো তোমার বাবা!
—-তা ঠিক বলেছো।
এ কথায় বাবা মেয়ে দুজনেই হেসে দেয়…..
—-পুনম?
—জ্বি বাবা।
—- আমি জানি তুমি বুদ্ধিমতী মেয়ে।তারপরও বলছি,অনুভুতিকে কখনো চেপে রাখা যায় না মা।ভালোবাসা দোষের না।জীবনে সবসময় তুমি নিজের মত চলতে পারবে না। কখনো সময় অনুযায়ী তোমাকে চলতে হবে।ছেড়ে দাও ভিতরের অনুভূতিকে! সময়ের উপর সবটা নির্ভর করবে….তুমি কি চাও তা সময়ই তোমাকে বলে দিবে তার জন্য তোমার সময়কে সুযোগ দিতে হবে।
—-বাবা অসম সব কিছুতেই আমার ভয়!আমি চাই না আমার দিকে কেউ আঙুল তুলে বলুক, যা তুমি পেয়েছো তার তুমি যোগ্য নও!
—-সম্পর্কে যখন যোগ্যতা শব্দটা আসে তখন সম্পর্কটা আর সম্পর্ক থাকে না সেটা প্রতিযোগিতা হয়ে যায়! ভালোবাসায় যোগ্যতা শব্দটা কাঁটার মত!এমন ভাবে বিঁধবে যে তুমি তাকে ছেড়ে আসতে বাধ্য হবে।
একটা কথা মনে রেখো মা, যখন সম্পর্কে দুইজনই পার্ফেক্ট হয় তখন তাদের মাঝে ভালোবাসার থেকে বেশি থাকে ইগো শব্দ টা।তাই পার্ফেক্টের থেকে অসম সম্পর্ক গুলো টিকে থাকে!
পুনম এক দৃষ্টি তে বাবার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, বাবা তুমি এত সুন্দর কথা কিভাবে বলো?
বাবা হাসে উত্তর দেয়না….বলে, তোমার হাতের মেহেদী সুন্দর হয়েছে।
—-লাবণ্যের কারসাজি এখানে তোমার পুনমের ভূমিকা কিছুই নেই।বললাম দিবো না।তারপরও…..
নিয়াজ উদ্দিন পুনেমর মাথায় হাত বুলাতে থাকেন।
—-বাবা তেলে জলে কি কখনো মিশ খায়?
—-তার থেকে বড় কথা তেল আর জলের দ্বারা খুব সুস্বাদু রান্না হয়!তাই সবসময় মিলাতে হয় না পাশাপাশি থাকা যায় কি না সেটা মুখ্য বিষয়!
—তুমি কি করে জানলে বাবা?
—জানবো না, যে কায়দায় তোমার পিছনে ঘুরে তাতেই বুঝতে পেরেছি।আর তাছাড়া রাত বিড়াতে যেভাবে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে তাতে কে না জানে?
—-তুমি রাগ করনি?
—-শোনো মা,ভালোবাসায় দোষ নেই যদি মানুষটা ঠিক হয় তবে।
—-কিভাবে বুঝবো?
—-তা সময়ের হাতে ছেড়ে দাও।নিজেকে এতটা গুটিয়ে রেখো না।
—-তোমার স্থানে অন্য বাবারা হলে ছেলেটাকে ধরে পিটাতো তাদের মেয়েকে লাইন মারার জন্য!
—আমার বরং মায়া হয় ছেলেটার প্রতি। সে তো আর জানে না কার পিছনে সময় নষ্ট করছে।তাছাড়া ছেলের ধৈর্য্য আছে!দেখো গিয়ে এখনো বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কিনা?
পুনম চুপ হয়ে থাকে কিছু বলে না। বাবা কেন ওকে এত বুঝতে পারে? পুনমের সকল সমস্যার সমাধান বাবার কাছে থাকে।
কিছুক্ষণ পর বাবা নিচে চলে যায়।পুনম আর কিছুক্ষণ পর আসবে বলে থেকে যায় ছাদে।
আস্তে আস্তে হেঁটে রেলিংএর কাছে দাঁড়ায় পুনম। আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে থাকে রাস্তার দিকে।সোডিয়ামের নিয়ন আলোতে দেখতে পায়, কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। লম্বা গড়ন, দাঁড়ানোর ভঙ্গি, ঢোলা শার্ট দেখে চিনতে ভুল হয় না,তানভীরকে!
একহাত কোমরে রেখে আর এক হাতে চুল পিছনে ঠেলে ধরে তাকিয়ে আছে তানভীর বাড়িটির দিকে। তানভীর উপরে তাকাতেই দেখতে পায় একটা নারী মুর্তি।আধো অন্ধকারেও তানভীরের চিনতে অসুবিধা হয়না।সে হাত নাড়ে।ইশারায় বুঝায় তার অস্থিরতা! পুনম নড়েচড়ে ওঠে, এতদুর থেকেও বুঝতে পারে পুনম তানভীর শীতল চোখে তাকিয়ে আছে। সে দৃষ্টি বড় ভয়ংকর!
পুনম ধীরপায়ে ছাদ থেকে নেমে আসে।পুনম জানে না তার কি করা উচিত?ভালোবাসায় বড় ভয়! মানুষ কেন ভালোবাসে?আর কেনই বা ছেড়ে যায়?
তানভীর আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে, যদি পুনম আসে। কিন্তু পুনম আসে না।ক্লান্ত পায়ে গাড়িতে উঠে বসে তানভীর ।রাজু দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি স্টার্ট করে।এই দুজন মানুষের সঠিক গন্তব্য রাজুর খুব জানার ইচ্ছা! বরাবরের মত একই অভিযোগে তানভীরের বুক ক্ষত বিক্ষত হয়, পুনমি তুমি এত নিষ্ঠুর কেন?
চলবে,