পুনম,পর্বঃ০৮,০৯

পুনম,পর্বঃ০৮,০৯
আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ০৮

পুনম ছাদ থেকে নেমে দেখে তার মায়ের মুখ থমথমে। নিশ্চিত পাত্রপক্ষ আপাকে পছন্দ করেনি বা হাই লেভেল যৌতুক চেয়েছে।এ ঘটনা নিয়ে মায়ের দুই তিনদিন মন খারাপ থাকবে,সবার সাথে খিটখিট আচরণ করবে সাথে একটু বিরতিসহ কান্না তো আছেই!
পুনম সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো এবং দুকাপ চায়ের পানি চুলায় দিলো।পুনমের মাঝে মাঝে আশ্চর্য লাগে এই যে মায়ের মন খারাপ বা বাবার দুশ্চিন্তা এ নিয়ে বড় আপা বা মেজ আপার কোন হেলদোল হবে না।তারা খুবই স্বাভাবিক থাকবে।সবসময়ের মত একজন স্বামীর অর্থবিত্ত নিয়ে অহম করবে আর একজন স্বামীর আহ্লাদীপনা ভালোবাসার অহম করবে।নিজ আপনজনের সাথে অহংকার করে আদোও কি সুখ পাওয়া যায়?
ইষ্টি মিষ্টি একসাথে দৌড়ে রান্নাঘরে প্রবেশ করলো। এবং একইসাথে তারা খালামণিকে প্রশ্ন করলো,
——খালামণি, খালামণি হাড় হাভাতে কাকে বলে?
পুনম অবাক হলো না ইষ্টি মিষ্টির প্রশ্নে। তার বড় দুলাভাই যে তাদের হাড় হাভাতে বলে আড়ালে সম্বোধন করে তা তার অজানা নয়!

শোন সেজ আপা এরা দু’ভাই কি আমাদের বাড়িটাকে হোটেল মনে করেছে,যার যখন তা অর্ডার করবে আর আমরা তা জি হুজুর বলে পালন করবো…..মুখ ভেচকি দিয়ে বলে ওঠে পুনম।
পাবনী বারান্দায় বেতের মোড়ায় বসে ছিল।পাত্রপক্ষের সামনে যে সাজসজ্জা নিয়ে গেছিল তা এখনো বহাল আছে পাবনীর শরীরে।হালকা আকাশী রঙের শাড়ি, চুল হাতখোপা করা ঠোঁটে লিপস্টিক দেয়া আর কপালে নিল রঙের টিপ।পাবনীকে অপরুপ লাগছে।পুনম মনে মনে মাশাল্লাহ বলে।পুনমের মনে হচ্ছে কোন বিখ্যাত উপন্যাসের নায়িকা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
পাবনী মৃদু হেসে জানতে চায়,
—–কে তোর মত বিচ্ছুকে অর্ডার করলো?
—–কে আবার? সুমন ভাই। বলে কিনা খুব চা খেতে মন চাচ্ছে। চা কি খায়? উজবুকের নানা কোথাকার।
—–এভাবে বলে না পুনম।বড় আপাও তার সাথে বাজে ব্যবহার করে এখন যদি আমরাও করি তবে সুমন ভাই কষ্ট পাবে।
—–তোমার যখন এত দরদ তবে তুমি নিয়েই যাও।আমার বেরোতে হবে এখন।

পুনম বাবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।তার বাবা চোখ বুজে শুয়ে আছে, এ অবেলায় বাবাকে ঘুমাতে দেখে পুনমের মন খারাপ হলো।সে ভাবলো বের হবে না আর। তখনই নিয়াজ উদ্দিন চোখ না খুলেই বলে উঠলো,
—মেয়েটা এত দরদ নিয়ে গান কিভাবে করে রে? ওর কন্ঠে যেন কষ্টের সুর বাজছে….
বাবার এই রুমটা থেকে পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে তার সেজ আপা গান গাচ্ছে,
“যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই তটে……..
পুনম বাবার কথার জবাব না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে,
—-না দেখেই কিভাবে বুঝলে আমি দাঁড়িয়ে আছি।
নিয়াজ উদ্দিন চোখ মেলে তাকান এবং একই সঙ্গে খুবই চমকে যান।তার সামনে দাঁড়ানো তার মেয়েটাকে কোন সাধারণ মানবী মনে হচ্ছে না,যেন পাতালপুরীর রাজকন্যা!
তার মনটা ভালো হয়ে যায়।
—-তুই তো আমার মা, আর মায়ের ঘ্রাণ সব সন্তানেরা বুঝতে পারে।
পুনম বাবার হাতে হাত রাখে,খুবই মৃদুস্বরে কিন্তু দৃঢ়তার সহিত বলে, —বাবা সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো।একসময় আমরা খুবই ভালো থাকবো।

পুনম বাসা থেকে বের হওয়ার সময় শুনতে পায় তার বড় আপা মাকে বলছে,
—-যার বিয়ে ভেঙে গেছে সে নির্লজ্জের মত গলা ভেঙে গান গাচ্ছে আর একজন বাসার এরকম পরিস্থিতিতে সঙ সেজে বাহিরে যাচ্ছে। ছি ছি!
অন্যদিকে পুনম দেখলো তার মেজ দুলাভাই মেজ আপার চুলে তেল দিয়ে দিচ্ছে আর মেজ আপা খিলখিলিয়ে হাসছে।
পুনমের ভয় হয়,এই ভালোবাসা লোক দেখানো ভালোবাসা নয়তো?

পুনম রেডি হয়ে বাসার সামনে খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায়,তার সেজ আপা গান গাচ্ছে একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আর তার পাশে সুমন ভাই দাঁড়িয়ে চায়ের কাপে চুমক দিচ্ছে আর ফ্যাঁচফ্যাঁচিয়ে কাঁদছে।পুনমের ঠোঁটে হাসি রেখা ফুটে ওঠে, সুমন ভাইয়ের চা পুনম লবন দিয়ে বানিয়েছে আর সেই চা এই উজবুক পান করতেছে সেজ আপা বানিয়েছে তাই ভেবে! ভালোবাসা কি সত্যিই মানুষকে এতটা অবুঝ আর পাগল বানিয়ে দেয়?

তানভীর হন্তদন্ত হয়ে পার্কের গেটে রিকশা থেকে নামে ,অনেক দেরি করে ফেলেছে এখন বাজে সাড়ে পাঁচটা।পুনম টেক্সট পাঠিয়েছে সারে তিনটায়। পুনমকে পাবে তো? টেনশনে তানভীরের মাথা হ্যাং হয়ে রয়েছে। সেদিন বুবুর বাসায় যাওয়ার কারণে তানভীর এই দুদিন ঘরবন্দী ছিল।হিসেব মত আরো একদিন থাকার কথা। পুনম যখন টেক্সট করেছে তখন তানভীর ঘুমে ছিল।ঘুম থেকে উঠে এই মেসেজ দেখে তানভীর খুব অবাক হয়, দেড় বছর ধরে একে অপরের সাথে পরিচয় কখনোই পুনম ওর সাথে সরাসরি এভাবে দেখা করতে চায়নি।কোন রকম রেডি হয়ে, বারান্দা থেকে দড়ি বেয়ে ও নিচে নেমেছে।রাজু বা ওর বাবার কথা তখন ওর মাথায় আসেনি।ওর শুধু মনে হয়েছে যে করে হোক ওকে পৌঁছাতে হবে পুনমের কাছে। কেন এত জরুরী তলব? ওর মুখদর্শন কেনই করতে চায় ওই নিষ্ঠুর মেয়েটা? কই কতবার তো সামনে গেছে ও পুনমের তখন তো মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে রাখতো না হয় কপাল কুঁচকে থাকতো।তবে আজ কেন?

পুনম পার্কের বেন্ঞ্চে বসে বাদাম চিবোচ্ছে,ওর অপেক্ষা করতে খারাপ লাগছে না বরং ভালোই লাগছে।অপেক্ষায় থাকার মধ্যেও একটা ইতিবাচক আনন্দ আছে, কোন কিছু ঘটার বা না ঘটার সমান সম্ভাবনা থাকে অপেক্ষা শব্দটিতে।
পুনমের মুখে নষ্ট বাদাম পড়ায় মুডটা নষ্ট হযে যায়,মুখের স্বাদ যেমন এখন তিতকুটে লাগছে তেমন সামনে থেকে আসতে থাকা আগুন্তক মানুষটাকেও ওর তিতকুটে মনে হচ্ছে।
ক্যাটক্যাটে লাল একটা শার্ট পড়ে হন্তদন্ত হয়ে হেটে আসছে।পুনমের মনে হচ্ছে যে কোন সময় এই ব্যাক্তি উষ্ঠা খেয়ে পড়ে যেতে পারে। তারউপর শার্টটা পড়েছে উল্টো, বোতাম গুলো এলোমেলো ভাবে লাগানোর কারণে ডানপাশ থেকে কোমড় ও পেটের এককোণা দেখা যাচ্ছে।
নাকি ইচ্ছা করে পড়েছে?ভেবেছে পুনম আহ্লাদে গদগদ হয়ে শার্টের বোতাম ঠিক করে দিবে।হুহ! কখনোই না।
তানভীর যখন কাছে এসে দাঁড়ালো তখন পুনমের সত্যি মনে হলো এই ব্যক্তি আসলেই বিরক্তিকর! ঘুমথেকে উঠে মনে হয় মুখ ধোয়নি।কেমন আহাম্মকের মত লাগছে, চুলগুলোও অপরিপাটি। পুনম বিরক্তে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকলো তানভীরের দিকে।
কেমন হা করে তাকিয়ে আছে মনে হয় আগে ওকে দেখেনি।
সদ্য ঘুম থেকে ওঠা ফোলা ফোলা চোখ দুটি দিয়ে তানভীর তাকিয়ে আছে পুনমের দিকে।আর বিড় বিড় করে বলছে,
ওহ গড! আই’ম ফিনিশ! আই’ম ডায়িং!

চলবে

#পুনম
#আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ০৯

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাশেদ সময় পায় পরিবারের সাথে সময় কাটানোর।এছাড়া তার বাকি দিনগুলি কাটে কোর্টের চেম্বারে মক্কেলের ফাইলে মুখ ডুবিয়ে। সততা, নমনীয়তা ও ন্যায়বিচারে একনিষ্ঠ হওয়ায় অল্পতেই আইনজীবী হিসেবে বেশ সুনাম কুড়িয়াছে রাশেদ।
রাশেদ এ কদিন থেকেই লক্ষ্য করছে তার স্ত্রী তারিন কেমন অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। সে রুমে বসেই দেখতে পায় বারান্দায় তারিন এলোমেলো দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে ব্যস্ত রাস্তার দিকে। ছয় বছরের মিতু বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে বায়না করে ঘুরতে যাওয়ার,সে এখন কিছুতেই ঘুমাবেনা। রাশেদ হাসে! তার শান্তি লাগে খুব যখন তার মেয়ে তার কাছে বায়না করে,তাকে জেরা করে, আবার শাস্তি দেয়ও কথা না শুনলে।তার পরিবার তার কাছে জান!তারিন, মিতু এই দুই নারী তার অসম্পূর্ণ জীবনকে পরিপূর্ণ করেছে।ছোট্ট মিতু বাবার বুকেই ঘুমিয়ে পড়ে,রাশেদ আলতো করে বিছানাতে শুইয়ে দিয়ে ঘুমন্ত মেয়ের কপালে চুমু খায়।বিড়বিড় করে বলে ওঠে, কিছুতেই আমি নিষ্ঠুর বাবা হবো না তোমার। আই প্রমিস ইউ!
তারিন মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ফিরে তাকায়।এত ভরসা নিয়ে তার মাথায় হাত বুলানোর মানুষ একজনই আছে।রাশেদ খেয়াল করে তার স্ত্রীর চোখ জুরে দলছুট কষ্টরা ছুটে বেড়াচ্ছে, শান্ত চোখ জোরায় জলে থই থই করছে। রাশেদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলে,
—-তারু ইদানিং তুমি আমার দিকে মোটেও খেয়াল করো না। আমি এবার সত্যিই চিন্তিত বোধ করছি,বুড়ো হয়ে গেলাম কিনা?
—-বুড়ো ধুড়ো যাই হও তবুও আমার তুমি……বলে তারিন রাশেদের বুকে মাথা রাখে।এখানে এত শান্তি কেন ভেবে পায় না তারিন।
—–এত অস্থির কেন হয়ে আছো তুমি তারু?
রাশেদকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে হু হু করে কাঁদতে শুরু করে।রাশেদ থামায় না।কাঁদুক! তারিন বলতে শুরু করে,
—-রাশেদ,তানভীর মোটেও ভালো নেই।মা দিনদিন আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে।ওই বাড়িটাই অসুস্থ একটা বাড়ি। আমি পালিয়ে বেঁচেছি,ওরা কি করে বাঁচবে বলতে পারো? একটা মানুষ কি করে এতগুলো মানুষকে কষ্ট দেয় আমি ভেবে পাই না। বাবা কি এমন হয় কারো? আমার ওই জঘন্য মানুষটাকে বাবা বলতেও লজ্জা করে।ছোটবেলা থেকে এই মানুষটা আমাদের এত পরিমাণ মানসিক টর্চার করেছে।একসময় আমার মনে হয়েছে আমি পাগল হয়ে যাবো।ছোট বেলা থেকে দেখেছি ওই জঘন্য মানুষটা আমার মাকে অকথ্য গালিগালাজ করতো,মারতো। ওই মানুষটার কাছে টাকাই সব….আমরা কিচ্ছু না।
—-তারু এদিকে তাকাও আমার দিকে দেখো।দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।তানভীর তো আগের মত নেই অনেক বদলে গেছে।আমি বলছি, তানভীরের এই বদলে যাওয়া সব ঠিক করে দেবে।অসুস্থ প্রকৃতি স্বাভাবিক করতে মাঝে মাঝে ঝড়ের প্রয়োজন আছে।উদ্দেশ্য ছাড়া কিছুই ঘটেনা জীবনে জানতো?দোয়া করো তোমার ভাইয়ের জীবনে যে ঝড় হয়ে এসেছে সে যেন সব বদলে দিতে পারে!
—–রাশেদ আমার বোকা ভাইটা বুঝতে পারছেনা সে ওই মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছে।সেদিন আমায় কি বলে জানো?বুবু মেয়েটা এত নিষ্ঠুর!আমি সামনে গেলে আমার দিকে ফিরেও তাকায় না।আমায় সে কোন গোনায় ধরে না। সে তো মহা ব্যস্ত!আমি তার সামনে আর যাবো না।অথচ আমি ওর চোখ দেখেই বুঝতে পারছিলাম,ওর চোখে মেয়েটাকে দেখার কত তৃষ্ণা?
—-এই রাশেদ, আমার তানভীর তো ছোটবেলা থেকেই কষ্ট পেয়ে এসেছে,এবার এই মেয়েটা ওকে কষ্ট দিবেনা তো? মেয়েটা কি বুঝতে পারছেনা আমার ভাই তাকে ভালোবাসে? বল না রাশেদ, মেয়েটা আমার ভাইয়ের জন্য ঠিক মানুষ হবে কিনা?
রাশেদ অবাক হয়, এই মেয়েটা তানভীরকে এতটা ভালোবাসে।
—–লিসেন তারু, “ভালোবাসা হলো অদৃশ্য মানসিক বন্ধন।এই বন্ধন কারো জন্য সুখের তো কারো জন্য বিরহের।তাই ভালোবাসার অপর নাম মন্দবাসা।কারো জীবনে ভালোবাসা দূর্বলতা হয়ে আসে আবার কারো জীবনে ভালোবাসা আসে শক্তি হয়ে, একরাশ আর্শিবাদ নিয়ে।” তাই আমরা এতটুকু চাইতে পারি, যে আমাদের তানভীরের জীবনে আসবে সে যেন ওর দূর্বলতা না হয়ে শক্তি হয়।

তারিন মনে মনে বলতে থাকে,আমার ভাইয়ের সুখ হয়ে তুমি এসো……

********-****************

রাজু গাড়ি থেকে নেমে বিড়বিড় করে বলছে, ওহ গড! তার স্যার এখন এই সস্তা হোটেলে খাবার খাবে।না কিছুতেই এ হতে পারে না।রাজু যখন জানতে পেরেছে তার স্যার বাসা থেকে বের হয়ে গেছে তখনই সে গাড়ি নিয়ে পার্কে চলে এসেছে।রাজু অনুমান করেছিল হয় তার স্যার তারিন ম্যাডামের বাড়ি যাবে নয়তো এই পার্কে। রাজুর সব থেকে খারাপ লাগছে তার ধারনা হয়েছিল তার স্যার হয়তো পাগল হয়ে গেছে। এখন তো দেখছে তা সত্যি। নাহলে কেউ উল্টো শার্ট পড়ে, এলোমেলো বোতাম লাগায়?রাজু তার স্যারকে টেক্সট করে যেহুতো কল ধরছেনা…….

তানভীরের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। ওর হাঁসফাঁস লাগছে, কি একটা বিশ্রী ব্যপার? সেই তখন থেকে ওর দ্বারা একএকটা গোলমাল বাঁধছে। পার্ক থেকে এই খাবার হোটেলে আসা পর্যন্ত ও তিনবার হোঁচট খেয়ে পড়তে পড়তে বেঁচেছে। শেষের বার তো পুনম বলেই ফেললো,
–আপনার কি অপুষ্টি জনিত কোন রোগ আছে? এই সোজা রাস্তায় এতবার হোঁচট কেন খাচ্ছেন? আজ থেকে বেশি বেশি সবুজ শাকসবজি খাবেন….

এরপর এই খুপড়ির মত হোটেলে ঢুকতে গিয়ে মাথায় একটা বাড়ি খেয়েছে।কপালের এক কোণা ফুলে গোলআলুতে পরিণত হয়েছে।কোথায় ও ব্যথা পেয়েছে ভেবে মেয়েটা কষ্ট পাবে তা না উল্টো মিটমিটিয়ে হাসছে।নিষ্ঠুর মহিলা! এরপর তো খেতে গিয়ে এক গ্লাস পানি টেবিল পড়ে গেলো হাত থেকে। কি বিব্রত পরিস্থিতি! আর ওর এই পরিস্থিতি দেখে তখন থেকে পুনম মৃদু হেসে যাচ্ছে। উফ একে তো আশেপাশে এত শাউট তার উপর পুনমের গা জ্বালানো হাসি…..অসহ্য!
তানভীররে এই বেহাল দশার কারণ যে এই পুনম নামের মেয়েটা তা কি কখনো পুনমি বুঝবে?
তানভীরের এখন হৃদয় খানের ওই গানটা গাইতে মন চাচ্ছে…. এতকিছু বোঝো আর মন বোঝো না……
কতকিছু তুমি খুঁজো, আমায় তো খোঁজ না……

তানভীর সবসময় পুনমকে দেখেছে সালওয়ার কামিজে নতুবা কুর্তি জিন্স।আজ সে পুনমকে শাড়ি পরিহিত অবস্থায় দেখে একদম শক্ড হয়ে গেছে। সুতির কালো জমিনের উপর গোলাপি ছোটদানার মত ফুল করা একটা শাড়ি পড়েছে পুনম।ম্যাচিং গোলাপি ব্লাউজ।চুলগুলো এলিয়ে আধা খোপা করে নিয়েছে।গালের দুপাশে অবাধ্য ছোট চুলগুলো উড়ছে। ঠোঁটে হালকা রঙের ছোঁয়া।আর সবসময়ের মত কপালে টিপের মত দেখতে জন্মতিল। যেন স্বর্গের এক টুকরো আকাশ! যা যেকোন পুরুষকে এলোমেলো করে দিতে সক্ষম।

তারভীরের মনে হচ্ছে আজ পুনম ওকে জ্বালিয়ে মারবে। কি দুষ্টু করে তেহারি খাচ্ছে।এক লহমা তেহেরি মুখে দিয়ে কাঁচামরিচে কামড় বসাচ্ছে সাথে লেবু এক পিস মুখে দিয়ে টক ঝালে চোখ মুখ কুঁচকে ঠোঁট কামড়ে ধরছে। আজ থেকে এই মেয়ের তেহারি খাওয়া নিষেধ হয়ে যাক!

রাজুর মেসেজ এসেছে, স্যার উল্টো শার্ট পড়েছেন ভালো কথা, বোতাম গুলো তো ঠিক করে লাগান।
নিজের দিকে তাকিয়ে তানভীর হতাশ হলো। ও যে এভাবে এসেছে তা কি পুনম দেখেনি? মন খারাপ হলো, পুনম তো ওর দিকে ঠিকমত তাকায়ও না।আজ যতবার কথা বলেছে ডিরেক্ট পুনম ওর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলেছে! অথচ তানভীর আজ নিজের দিকে তাকানোর সময় পায়নি একটুও, সবসময় ওর দৃষ্টি পুনমের দিকে ছিল। বার বার মনে হচ্ছিল শাড়ি পড়ে মেয়েটার কষ্ট হচ্ছে না তো? এই যে ঝাল খাচ্ছে সমস্যা হবে না তো? কত কি ভাবনা?

পুনম আর তানভীর রিকশায় বসে আছে।পুনম রিকশাওয়ালকে বলেছে আধাঘন্টা এলোমেলো ঘুরে তারপর মোহাম্মদপুরের দিকে যেতে।পুনম নিজের কথা ঘুছিয়ে নিচ্ছে। আজ কিছু কথা বলতে চায় ও পাশে বসা মানুষটাকে।
তানভীর আজ রীতিমত অবাক হয়েছে, এই যে পাশে বসা শান্ত মেয়েটিকে দেখা যায় এ মোটেও শান্ত নয়।আজ তানভীর কে অনেক ভুগিয়েছে। কিছুক্ষণ আগে এই মেয়ে একজোড়া স্লিপার কিনেছে।তার জন্য মোটামুটি দশ দোকান ঘুরেছে পুনম।ছয় শত টাকার জুতো বার্গেডিং করে দুইশত টাকায় নিয়েছে।তারপর ফুটপাতে বসা দোকান থেকে একটা কুর্তি কিনেছে আড়াইশো টাকায়। কি বার্গেডিং করলো।শেষপর্যন্ত দোকানী পর্যন্ত হার মেনে অসহায় চোখে তানভীরের দিকে তাকিয়ে ছিল। ওর অবস্থাই তখন আরো শোচনীয়। অনবরত ধাক্কা দিচ্ছিলো আশেপাশের মানুষগুলো।তার উপর অনবরত সবার চিৎকার চেচামেচি। বিশ্রী ঘামের গন্ধ, ইয়াক….
এরপর কিছু বাজার করলো এবং সবার শেষে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দুটো কুলফি খেয়ে তবে রিকশায় উঠলো।
তানভীর বুঝতে পেরেছে ততক্ষণে, কেন পুনম আজ দেখা করতে বলেছে? পুনমদের জীবনযাত্রার সাথে তানভীরদের জীবনযাত্রা কখনোই মিলবে না।স্টাটাসের বিস্তর ব্যবধান।যা এই মেয়েটা বলে নয় সাথে রেখে দেখিয়েছে।এত বুদ্ধিমতী কেন তুমি পুনম? মনে মনে বলে তানভীর।
পুনম ওকে এখন কিছু বলতে যা ওর হাবভাবে বুঝা যাচ্ছে ।তানভীরও অপেক্ষায় আছে,ও আজ শুনবে।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here