পুনম,পর্বঃ০৬,০৭
আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ০৬
—-তোমাকে আসতে বললেই তুমি চলে আসবে।তোমার নিজের ওয়েট নেই নাকি?
সুমন কাচুমাচু হয়ে তার ভাইজানের কথা শুনছে, নিজের ওয়েটের সাথে কোথাও আসার কি সম্পর্ক তা সুমন বুঝতে পারছেনা।ওর ওয়েট ৬৭ কেজি, এখন কেউ ৬৭ বার বলার পর কোথাও গেলে কি নিজের ওয়েট বজায় থাকবে?বুঝতে পারছে না। একবার কি ভাইজানকে জিজ্ঞেস করবে? না থাক। এমনিতেই কথা বলছে চিবিয়ে চিবিয়ে। এরপর যদি কামড়িয়ে কথা বলে তাহলে সর্বনাশ!
ঘটনা হলো গতকাল রাতে পুনম ফোন দিয়ে সুমনকে বাসায় আসতে বলেছে, আর সুমনও সকালে চলে এসেছে কুমিল্লা থেকে।এতে পুনমের বড় দুলাভাই হারুন আর তার স্ত্রী রুমা বেশ অসন্তুষ্ট।
—–রুমা তোমার দেবরকে বলে দাও সে একজন নিম্নবর্গের আহাম্মক। আমাদের তালুকদার বংশে আমরা কখনো কারো মর্জিতে চলি না,বিশেষ করে মেয়েদের।মেয়েদের কথায় উঠা বসা করা হলো বাদর স্বভাব!
সুমন এসব কথা চুপটি করে শুনছে ঠিকই কিন্তু তার চোখ ও মস্তিষ্ক পুনমদের বসার ঘর দেখায় ব্যস্ত।ছয়টি কাঠের সোফা যা ওল্ড মডেলের।অনেক আগে বানানো বুঝা যাচ্ছে। দেয়ালে শোভা পাচ্ছে এই পরিবারের সবার ছবি।একটি টি টেবিল আর দু কর্ণারে দুটো ফুলদানি, ছোট সাইজের একটি টেলিভিশন। যাতে এখন রান্নার অনুষ্ঠান দেখাচ্ছে। সম্ভবত থাই স্যান্ডউইচ বানানো শিখাচ্ছে। কিন্তু সুমন সব থেকে আশ্চর্য হচ্ছে মহিলা খুব সেজেগুজে রান্না করছে, টকটকে লাল লিপস্টিক দেয়ায় মহিলাকে লিপষ্টিক ব্রান্ডের মডেল মনে হচ্ছে। মহিলার এই সজ্জা সুমনের কাছে বিশ্রী লাগছে!
সুমন খুব শান্ত গলায় বললো, ভাইজান আপনাদের না বলে আমার আসা উচিত হয় নি কিন্তু পুনমের ডাক আমি উপেক্ষা করতে পারি না।চেষ্টা করেও পারি না। ভাবি আপনার বোন এমন ভাবে বলে যে না এসে আমি পারি না।
এখন আমি দেখে আসি পুনম কেন ডেকেছে।উঠি ভাইজান?উঠি ভাবি?
সুমন চলে যাওয়ার পর হারুনের কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠে।পুনমরে মত বুদ্ধিমতী মেয়ের কি এমন কাজ সুমনের কাছে?সুমন আজ তার কথা অগ্রাহ্য করেছে কাল যদি সোচ্চার হয় তখন?
****************************
—–ক্লাস নেওয়া শেষ ? এবারো কি মিনমিন করে কথা বলেছেন সুমন ভাই? ফোনের অপর পাস থেকে মৃদু হেসে জানতে চায় পুনম।
সুমনের অসস্তি হয়।এই মেয়েটা এত ঠোঁটকাটা।
—–কেন আসতে বলেছো পুনম?তুমি তো বাসায়ও নেই।তবে এত জরুরী তলবে কেন ডাকা?
—–শুনুন সুমন ভাই আমি আপনার মত ঘরকুনো ব্যাঙ নই। আমার এই সময়ে কোচিং-এ ক্লাস নিতে হয় জানেন না। আচ্ছা সেজো আপা আপনার আশেপাশে ?
—-আমি তারে দেখিনি পুনম।
—-শুনুন সুমন ভাই আপনার বড় ভাইজান তো আসার পর থেকে পায়ের উপর পা তুলে শুধু অর্ডার করছে।আপনি তার হয়ে না হয় আমাদের একটু সাহায্য করুন। কিছু কেনাকাটা করার দরকার, আপনি একটু সেজো আপার সাথে বাজারে যাবেন।
সুমনের মাথা ঝিমঝিম করে।গলা শুকিয়ে আসে। ক্ষীণ কন্ঠে জানতে চায়, —কার সাথে?
—–আহা আপনার তো দেখছি মেরুদন্ডের সাথে শ্রবণশক্তিতেও সমস্যা।আপনি তো বিয়ের জন্য মেয়েই পাবেন না সুমন ভাই….বলে হাসতে হাসতে কল কেটে দেয় পুনম।সে এখন নিশ্চিন্তে কাজ করবে।
******************
—-আপনার কি হাঁপানির সমস্যা আছে সুমন ভাই?পাবনী চিন্তিত কন্ঠে বলে ওঠে।
সুমন কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।একে তো সে কোন মেয়ের সাথে এভাবে ঘনিষ্ঠ হয়ে কখনো রিকশায় বসেনি।সুমনের মনে হচ্ছে রিকশাটা ছোট,সে পুনরায় জরোসরো হয়ে বসলো।তার নিঃশ্বাস ঘনঘন ওঠানামা করছে,ঘাম হচ্ছে প্রচুর। পিঠের কাছে শার্টটা ভিজে জবজব করছে।পাবনী ঘামের গন্ধ না পেলেই হয়।
—-হাঁপানির সমস্যা নেই কিন্তু কেমন যেন লাগছে।
বলে সুমন
—-ইজি হয়ে বসুন সুমন ভাই।আসলে পুনম মাঝে মাঝে বড্ড খামখেয়ালি করে।এই যে এতদূর থেকে এনে আপনাকে বাজারে পাঠালো,আপনি তো একটুও রেষ্ট পেলেন না।
—– না না ঠিক আছি আমি।
—-জানেন তো পড়ালেখা টাও আমার হলো না।বিয়ে হচ্ছে না।আমার মত লেংরা মেয়েকে কে বিয়ে করবে বলুন? সারাদিন বাসায় থাকি তাই আমাকে বাহিরে বের করার জন্য পুনমের এই কাজ।মাঝে মাঝে এমন কাজ দিয়ে বাহিরে পাঠায় ও আমায় কিন্তু বাসার সবাই চিন্তিত থাকে আমাকে নিয়ে তাই এবার মনে হয় আপনাকে সাথে পাঠালো।
—-আমি এতটা অসহায় কেন হলাম সুমন ভাই? সবাই কেন করুণার চোখে দেখে আমায়?… বলে আকুতি ভরা চোখে সুমনের দিকে তাকায় পাবনী।
সুমন তখনই খেয়াল করে পাবনী চোখে কাজল দিয়েছে,অসম্ভব মায়ায় ঘিরে থাকা কাজল চোখে পদ্মদীঘির মত জল থৈ থৈ করছে কিন্তু বহমান নয় এ দীঘি খুবই ধীর! কি সর্বনাশ!এতটা কাছ থেকে কাজল চোখের মালিকের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে নিজেকে এলোমেলো লাগছে
সুমনের সত্যি নিজেকে আহাম্মক মনে হচ্ছে, ওর এখন পাবনীকে কিছু বলে সান্ত্বনা দেয়া উচিত।কিন্তু সে তা পারছেনা। অক্সিজেনের অভাব বোধ করছে।আবহাওয়া উত্তপ্ত লাগছে এই সন্ধ্যা বেলাতেও।বাতাস প্রয়োজন এখন ওর। বিশুদ্ধ বাতাস যাকে বলে।সুমন টের পায় ওর আবার ঘাম হচ্ছে, মাথা ঝিমঝিম করছে।
—-আপনার কি বেশি খারাপ লাগছে সুমন ভাই?আপনি এরকম অস্থির কেন হচ্ছেন? আমরা না হয় বাসায় ফিরে যাই।
—–না বাসায় যাবো না।পুনম বাজার করে যেতে বলেছে। আমার সাথে কি হচ্ছে আমি বুঝতে পারছিনা কেন পাবনী?
কিছুক্ষণ পর সুমন টের পায় পাবনী ওর হাত শক্ত করে ধরে রেখে বলছে, আপনার কাছে টিস্যু বা রুমাল নেই সুমন ভাই? তাহলে ঘাম মুছে নিন।
সুমনের ছোট্ট জবাব, নেই।
পাবনী ওর ওরনার এক প্রান্ত এগিয়ে দেয় মুখের ঘাম মুছার জন্য। কি রকম যেন ঘ্রাণ পায় সুমন ওর ওরনা থেকে। সুমন বিড়বিড় করে বলে,এবার ঘ্রাণ শক্তিও লোপ পেয়েছে।
সুমন আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকে,এ যাত্রায় ওকে বাঁচিয়ে দেও,ওর মাথা চরকির মত ঘুরছে। এখন অজ্ঞান হলে কেলেংকারী হয়ে যাবে। পুনম চিরকাল খেপাবে আর পাবনী কি করবে?
সুমন রিকশা জোরে ছুটাতে বলে।এ রিকশা না থামা পর্যন্ত ও স্থির হবে না। সুমন চোখ বন্ধ করে বড় বড় শ্বাস নেয়, আলগোছে নিজ অজান্তে পাবনীর হাত আরো শক্ত করে ধরে রাখে সুমন। যেন ছেড়ে দিলেই পড়ে যাবে।
**************
তারিন খুব মনোযোগ দিয়ে তার ভাইয়ের খাওয়া দেখছে। শুধু বেগুন শুটকি দিয়ে এত তৃপ্তি করে তার ভাই ভাত খাচ্ছে দেখে চোখে পানি চলে আসে।
—একটু মাংস দেই ভাই?শুধু বেগুন শুটকি দিয়ে ভাত খাবি বোনের বাসায়।
—-বুবু তুমিতে জানো আমার বেগুন দিয়ে শুটকি রান্না কতটা পছন্দ কিন্তু বাসায় কেউ রান্না করে না……খেতে খেতে জবাব দেয় তানভীর।
—–একটা বিয়ে করলেই তো পারিস?বউ রোজ রেধে দিবে।
তানভীর খেতে থাকে কোন জবাব দেয়না।
—-তুই ভালো আছিস তো ভাই?
তানভীর চোখ তুলে বোনের দিকে তাকায়, সে চোখে যে অজস্র কষ্টের পাহাড় দেখতে পাচ্ছে তারিন। তারিনের বুক কেঁপে ওঠে, তার ভাইয়ের কি হয়েছে?
——আমি ভালো নেই বুবু। একদম ভালো নেই। ওই লাখ লাখ টাকার অট্টালিকায় আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।নিজের মাকে রোজ একটু একটু করে মরতে দেখলে কে ভালো থাকে বল বুবু।ও বাড়িটাকে আমার মৃত্যুকূপ মনে হয়।তুমি পালিয়ে এসে ভালো করেছো বুবু।আমারও পালাতে মন চায়। অনেক দূরে চলে যেতে মন চায় যেখানে হায়দার হোসেনর মত কেউ থাকবেনা, সেখানে যেত মন চায় বুবু।
তারিন কাঁদতে থাকে মুখে আঁচল চেপে।তানভীর আবার চুপচাপ খাবার খেতে শুরু করে।তারিনের একটা প্রশ্ন বার বার করে নিজেকে, কেন তারা একটা স্বাভাবিক জীবন পেলনা।কেন?
চলবে….
#পুনম
#আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ০৭
নিয়াজ উদ্দিন খবুই আরামের সাথে সোফায় বসে চা পান করছে।শুক্রবার দিনটা তার জন্য শান্তির। এই দিনটি তার কাছে ঈদের দিনের মত, কেননা পুনম বাসায় থাকে। মেয়েটা চোখের সামনে ঘুরলেই নিজেকে খুবই সুখী মনে হয়।এই যে ড্রয়িং রুমে বসেও পুনমের গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।মেয়েটা পড়ছে,পুনম ছোটবেলা থেকেই খুবই উচ্চ স্বরে পড়ে।এখন অবশ্য একটু আওয়াজ কম করে পড়ে তাতেই তার বই পড়ার শব্দ ড্রয়িং রুমে বসে শোনা যায়।
সন্তানের জন্য পিতার দোয়া খুবই কার্যকারী,তাই নিয়াজ উদ্দিন বিড়বিড় করে বলতে থাকে,ইয়া আল্লাহ আমার মেয়েটা বড্ড খাটছে,তুমি ওর মনোবাসনা পূরণ করে দাও।
সালেহা বেগমের তাড়ায় নিয়াজ সাহেবের আরামে বসা হলো না,তাকে বাজারে যেতে হবে।আজ পাবনীকে দেখতে আসবে পাত্রপক্ষ।কিছু কেনা কেটা করতে হবে।নিজ অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে নিয়াজ উদ্দিন।তার এই মেয়েটা এত দুঃখী কেন?
বসা থেকে উঠে নিয়াজ উদ্দিন রান্না ঘরের দিকে হাঁটা ধরেন,এখন সে একটা চমৎকার চা করবেন পুনমের জন্য।তারপর বাজারে যাবেন।সালেহাকে অবশ্য বলা যেত কিন্তু সে এখন মহাব্যস্ত পাত্রপক্ষের আপ্যায়নের সামগ্রী তৈরিতে।যতক্ষন পর্যন্ত পুনম চা পান করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি পুনমের সামনে বসে থাকবেন,এক পাও নড়বেন না।তার মেয়েটা কোন সকাল থেকে পড়ছে, নিশ্চয়ই তার মাথা ব্যাথা করছে।তাই এক কাপ চা তার প্রাপ্য। এছাড়া আর একটা কারণ হলো, পুনম চা পান করে বিড়াল ছানাদের মত।খুবই আয়েস করে চোখ দুটি বুজে চুক চুক করে চা পান করে তার পুনম।দেখলেই মনে হয় একটি ছোট্ট বিড়াল ছানা চা পান করছে।তার মনে হয় এত সুন্দর দৃশ্য তার জীবনে সে খুবই কম দেখেছে!
**********************
পুনমের বিরক্তিতে মাথা ধরছে, কপাল কুঁচকে সে বই হাতে নিয়ে ছাদের দিকে রওনা দেয়।কদিন পরপর পাত্রপক্ষের সেজ আপাকে দেখতে আসা তার অসহ্য লাগে।কাজের কাজ কিছু হয় না,কতগুলো টাকার স্রাধ্য হয় আর সেজ আপাকে মানসিক ভাবে দূর্বল করে দিয়ে যায়।কি সুন্দর করে পাত্র পক্ষ আপাকে তার দূর্বলতা নিয়ে বিশ্রী প্রশ্ন গুলো করে।আপা নিচু হয়ে সেগুলো শুনে যায়,তার চোখের টলমলে অশ্রু কেউ দেখে না।তখন বাবার অসহায় চাহনির কথা মনে হলে পুনমের অসহ্য লাগে।আর সবশেষে ইনিয়ে বিনিয়ে কতগুলো যৌতুকের দাবী,যাকে আধুনিক ভাবে বলা হয় উপহার!
পুনমের সবচেয়ে কষ্ট হয় তখনই যখন পাত্রপক্ষ আসে তখন মা পুনমকে আড়ালে রাখে আর লাবণ্যকে বান্ধবীর বাসায় পাঠিয়ে দেয়।নিজেকে আপার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে হয় তখন। এতে যে সেজ আপার অপমান হয় তা মা কেন বুঝে না?তার আপা কি ফেলনা?
প্রথম প্রথম প্রতিবাদ করতো পুনম।তার আপাকে যে গ্রহণ করবে সে আপাকে দেখেই গ্রহণ করবে।কোন হুরপরী তার সামনে থাকলেও কিচ্ছু আসবে যাবে না। কিন্তু মা তা বুঝে না।চেচামেচি করবে ফিঁচফিচ করে কাঁদবে তার কথা না মানা পর্যন্ত।তার উপর তো সোনায় সোহাগা তার দুই দুলাভাই বাড়িতে। তারা সস্তা রসিকতায় বলবে, পুনমের মত সুন্দরী থাকতে মা, কেউ কি পাবনীকে বাছাই করবে? আর মা তা শুনেই হায় হায় করবে। এটা কি গরুর বাজার যে বাছাইয়ের প্রশ্ন আসছে।
তাছাড়া পুনম বুঝতে পারছেনা দুপুর বেলা কি কেউ মেয়ে দেখতে আসে?
পুনম ঠিক করেছে বিকালের আগে সে আর নিচে নামবে না।গোল্লায় যাক সব!
ছাদে এসে দেখে আর এক উজবুক ছাদের রেলিং-এ বসে আছে।পুনম মনে মনে গালি দেয়,সবথেকে বিশ্রী গালি!
—–এখানে কি করছেন সুমন ভাই?
সুমন চমকে ওঠে ফিরে তাকায়। পুনম দেখতে পায় সুমনের শান্ত চোখদুটি আজ আরো বেশি শান্ত দেখাচ্ছে। পুনমের মায়া লাগে।
—–তোমাদের গাছের ফুল গুলি খুবই সুন্দর পুনম।আমার খুবই পছন্দ।
—–তাই বুঝি।শুধুই ফুল পছন্দ হলো,আর ফুলের মালীকে বুঝি অপছন্দ আপনার?
সুমনরে দৃষ্টি এলোমেলো হয়ে আসে।এই মেয়েটার সামনে সুমনের নিজেকে অসহায় মনে হয়।এত তীক্ষ্ণদৃষ্টি! সুমনের ভয় লাগে কখন না যেন তার ভিতরটা পড়ে ফেলে পুনম।
—–নিচে কেন যাচ্ছেন না সুমন ভাই।সেজ আপাকে দেখতে আসবে।আপনার সেখানে থাকা উচিত।
সুমন উত্তর দেয় না।ফুল গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে।
—–সুমন ভাই আমরা সকল মানুষই কিছুনা কিছু অপূর্ণতা নিয়ে পৃথিবীতে বসবাস করছি।কোন মানুষই সবকিছু পায়না।তাই বলে কি কেউ চায় না?এই অপূর্নতা গুলো যদি না থাকতো মানুষের, তবে মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে যেত!
—–বাবা মার মৃত্যুর পর পুনম আমি সব থেকে অসহায় হয়ে গিয়েছি,তোমার ভাষায় যাকে বলে মেরুদণ্ডহীন মানুষ।খুব কাছ থেকে আপনজনদের বিশ্বাসঘাতকতা দেখেছি।আমার সব থেকে পছন্দের জিনিস অন্যের হতে দেখেছি।আমি বড় ভীতু মানুষ পুনম।আমি চাইতে পারি না।আমার আবদারের স্থান যেদিন শূন্য হলো সেদিন থেকে আমিই নিজেই শূন্যে পরিনত হয়েছি।আমার মত মানুষের কোন চাওয়া-পাওয়া থাকতে নেই।অবজ্ঞা, অবহেলা যেখানে আমার জন্য বরাদ্দ সেখানে স্থান দিয়ে অন্য কাউকে ছোট করতে চাইনা।
পুনম মনে মনে বলতে থাকে,খুব শিগ্রয়ই আপনার শূন্য স্থান পূর্ণ হবে সুমন ভাই।একজন চমৎকার মানবী আপনার জীবনে আসবে যে আপনাকে আগলে রাখবে। তারপর খুব মিষ্টি করে হেসে পুনম বলে ওঠে,
—–সুমন ভাই আপনি কি আমাকে গাধী ভাবছেন? মনে মনে যে প্রতিদিন আপনি অন্তত শত বার এই ফুলগাছের মালিনীকে চান তা বুঝি আমি জানি না।
সুমন খুকখুক করে কাশতে শুরু করে।
—-সুমন ভাই বলেন তো এই ফুল গাছগুলো কে লাগিয়েছে?
সুমন প্রচন্ড হতাশ হয়,এই মেয়েটা এত বিচ্ছু! এর কাছে কোন বিষয় লুকানো অসম্ভব!
—–আমি জানি না,জানি নাহ!
—-আপনি কি জানেন সুমন ভাই সেজ আপার কখনোই ভালো থাকা হয়নি?সবাই তাকে অবজ্ঞার চোখে দেখে।একমাত্র আমিই আপনার চোখে আপার জন্য এক ঝাঁক মুগ্ধতা দেখেছি!তার কষ্টে আপনাকে কষ্ট পেতে দেখেছি।তার প্রতি আপনার ভালোবাসার দৃষ্টি দেখেছি।
আপনাদের দুজনের প্রতি সকলের অবজ্ঞাকে সৃষ্টিকর্তা কাটাকাটি করে দিয়েছে অংকের মত।এখন থেকে শুধুই আপনারা ভালো থাকবেন সুমন ভাই।শুধু আপনি একটু শক্ত হোন।আমার আপার ভালো থাকা আজ থেকে আপনার উপর সুমন ভাই। আপনাকে পারতে হবে,আমি তো সাথে আছি আপনার।
সুমন কিছু বলতে নেয় পুনমকে কিন্তু বলতে পারেনা।তার চোখ থেকে পানির ফোয়ারা নামতে শুরু করেছে। তার মনের গোপন কথা এই মেয়েটা কিভাবে বুঝলো?সামনে দাঁড়ানো মেয়েটিকে সুমনের মায়ারাজ্যের জাদুর কাঠি মনে হয়।যে ছুঁয়ে দিলেই সব পবিত্র আর সুন্দর হয়ে যায়!
পুনম কপট বিরক্তি নিয়ে বলে ওঠে,
—–একদম মেয়েদের মত কাঁদবেন না তো সুমন ভাই।আপনি কি মেয়ে? এরকম কাঁদলে কিন্তু আমি আপনার আধি ঘরওয়ালী হবো না। বলে দিলাম।
তাতে সুমনের কান্না বন্ধ হয়না।বরং বাড়তে থাকে……
বিকেল বেলা পুনম ছাদের সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে উপলব্ধি করে তার মনটা খুব ভালো হয়ে গিয়েছে। সকালের সেই অশান্তিটা আর নেই। পুনম বিশ্বাস করে আস্তে আস্তে সব ভালো হবে তাদের জীবনে।সবাই ভালো থাকবে,সবাই….
পুনম মোবাইলটা হাতে নিয়ে ছোট্ট একটা টেক্সট করে একজনের কাছে,
“নবাবপুত্র আপনার মুখদর্শন করতে চাই। আজ,এখুনি।”
কারণ আজ পুনমের মনটা বড্ড ভালো!একদল রঙিন প্রজাপতির উড়ার মত তার মনটা আজ ফুড় ফুঁড়ে!
প্রজাপতির মত তারও উড়তে মন চাচ্ছে।
আচ্ছা, উড়ে উড়ে কোথায় যাবে ও? নবাবপুরে?
চলবে,