পাগল_প্রেমিকা #পর্ব_37 (বোনাস_পার্ট)

#পাগল_প্রেমিকা
#পর্ব_37 (বোনাস_পার্ট)
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
__________
গ্রামে সবাই মিলে ঘুরতে এসেছিলো। গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য সন্ধ্যার দিকটায় আবহাওয়া খারাপ হচ্ছে দেখে তড়িঘড়ি বেধে সবাই ছুটে যায় গাড়ির দিকে। ধমকা হাওয়া সব কিছু জেনো উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ঝড় আসবে কাল বৈশাখীর ঝড়। গাড়ির মধ্যে ঠেলাঠেলি করে সবাই উঠে গেলো গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সবাই বাড়ির উদ্দেশ্য চলে যায়। এদিকে দু’জন রয়ে গেছে যারা জঙ্গলে হারিয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর রাস্তা খুঁজে বেরিয়ে আসে। কিন্তু আবহাওয়া এতটাই খারাপ করেছে কোনদিকে যাবে দিশা পাচ্ছে না। রিমন বৃষ্টির হাতের ভাজে ভাজে আঙুল ঠুকিয়ে দিয়ে সোজা হাটতে শুরু করল। এক হাত দিয়ে বৃষ্টির হাত শক্ত করে চেপে ধরে মুঠি বন্ধ করে রেখেছে। তেমনই অন্য হাত চোখের সামনে দিয়ে চোখ আড়াল করে রাখছে উড়ন্ত বাসাতে অনেক ধুলোবালি রাস্তার পলিথিন গুলো উড়ছো। ধুলোবালি জেনো চোখে না যায় তাই চোখের উপর হাত রেখেছে। তৎক্ষনাৎ ঝুম ধারায় বৃষ্টি নামতে শুরু করল। মূহুর্তের মধ্যেই ধুলোবালি উড়া বন্ধ করে দিয়ে মাটির আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেলো। দু’জনেই বৃষ্টি ধারায় ভিজে যাচ্ছে। কিছুদূর সামনেই একটা মাটির ঘর দেখা যাচ্ছে। রিমন বৃষ্টির হাত ধরে টেনে দৌঁড় দেয়। দুজনে ঘরের সামনে এসে এই বলে ডাকতে শুরু করে, ‘ বাড়িতে কেউ আছেন? ‘ কারো ডাক শুনে ভেতর থেকে কেউ একজন থমথমে গলায় বলছে, ‘ কে রে কে আসছিস আমার বাসায়?’ রুম থেকে লাঠি ভোড় দিয়ে ঘরের দরজার সামনে এসে দাড়িয়ে বললেন এক দাদিমা। রিমন দাদিমা কে মিনতি স্বরে বলল, ‘ আমরা এখানে ঘুরতে এসেছিলাম বৃষ্টি হওয়ার তাগিদে আমরা পথভ্রষ্ট হয়েছি। বৃষ্টি শেষ না হওয়া পর্যন্ত যদি আপনার বাড়িতে আমাদের একটু আশ্রয় দেন তাহলে আমরা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। ‘

দাদিমা দু’জনের দিকে চোখ পাকিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো, ‘ তোমরা কি স্বামী স্ত্রী? ‘

বৃষ্টি জবাবে বলল, ‘ জি ‘

দাদিমা, ‘ দু’জনে তো ভিজে গেছো এভাবে ভেজা গায়ে থাকলে তোমাদের ঠান্ডা লেগে যাবে। আমার এই ছোট্ট কুটিরে এসেছো খালি হাতে তোমাদের যেতে দেবো না, ভেতরে চলো আমি তোমাদের পড়ার জন্য কিছু একটা দিচ্ছি। ‘

রিমন ও বৃষ্টি খুশি মনে দাদিমার পেছনে রুমের ভেতরে ঢুকলো কিন্তু খালি হাতে যেতে দিবেন না কেনো বলল এটাই বুঝতে পারল না। এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে গা থেকে টুপটুপ করে বৃষ্টির ফোটা ফোটা পানি পরছে। রিমন ভেজা চুলে হাত ঢুকিয়ে নাড়াচাড়া দিচ্ছে, চুলের পানি ছিটকে বৃষ্টির উপরে পরছে এতে বৃষ্টি রাগী চোখে তাকাচ্ছে রিমনের দিকে তবে তাতে কোনো ফায়দা হচ্ছে না রুমে ঘুটঘুটে অন্ধকার। গ্রামে কারেন্ট ছিল ওই দোকানে টিভি চলছিল তবে এই বাড়িটা এত নিঝুম নিস্তব্ধ কেনো বোঝা মুশকিল। তার উপরে এই বৃষ্টির মধ্যে মাথা গুজার ঠাই পেয়েছে এটাই অনেক এখন আবার আলো চাইতে গেলে একটু বেশি বেশি হয়ে যাবে।
কিছুক্ষণ পর এক হাতে কুপি জ্বালিয়ে নিয়ে আসছে। কুপির আলো তে ঘরটা কিছুটা আলোকিত হয়েছে। দাদিমা বৃষ্টির সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ রুমের ওই দিকটায় যেয়ে ভেজা জামাকাপড় ছেড়ে এই শাড়িটা পরে আসো ‘

বৃষ্টি কাপড়টা নিয়ে চলে গেলো। রিমনের দিকে তাকিয়ে একটা গামছা এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘ এটা দিয়ে আপাতত শরীর মাথা মুছে নাও, এই বাড়িতে আমি বুড়ি মানুষ একাই থাকি তাই পুরুষের কোনো পোশাক নেই। ‘

রিমন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, ‘ সমস্যা নেই দাদিমা আমার এটার প্রয়োজন ছিল না। আপনি আমাদের জন্য এতটা করছেন। এতে আমরা আপনাকে কৃতজ্ঞ থাকবো। ‘

দাদিমা বলল, ‘ আমার ছেলে মেয়ে থাকলে তোমার মতোই একটা নাতি থাকতো। তাই দাদি বলে যখন ডেকেইছো। কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দাদি শব্দ টার অপমান করো না। তোমরা রুমে আরাম করে বসো। কুপির কেরোসিন ফুরিয়ে গেলে আমাকে আওয়াজ দিও আমি পাশের রুমেই আছি। এটা আমি এই ঘরেই রেখে যাচ্ছি, অন্ধকারে তোমরা কিভাবে থাকবে? কুপি টা থাকলে কিছু টা তো আলো থাকবে। ‘

‘ জি আচ্ছা দাদি৷ ‘ রিমন বলল।

বুড়ি দাদি লাঠি ভোড় দিয়েই ঘর থেকে চলে গেলেন। রিমন গামছা দিয়ে ভেজা চুলগুলো মুছতে ছিলো তখনই ঘরে প্রবেশ করল বৃষ্টি কুপির আলোয় অন্ধকার অনেক আগেই কেটে গেছে। দেয়ালে-দেয়ালে হলুদ বর্ণের আলো। খোলা চুলে, পরনে সোনালী রঙের এক উজ্জ্বল শাড়ি যা তে বৃষ্টি কে অনেকটা হুরপরীর মতো লাগছে
শাড়িটা জেনো জ্বলছে শাড়িতে মনে হয় এক অদ্ভুত মায়া আছে যা রিমনের দৃষ্টি শক্তি কেড়ে নিয়েছে। রিমনের দৃষ্টি এখনো স্থির হয়ে বৃষ্টি কে দেখছে। হেঁটে রিমনের পাশ দিয়ে যেতে নিলে রিমন হাত ধরে টান দিয়ে বৃষ্টিকে বাহুডোরে জড়িয়ে ধরলো। সামনে মাটির দেয়ালে দুটো মানুষের ছায়া পরলো, দুটো দেহের সাথে দুটো আলিঙ্গন কালো ছায়ায় ভেসে উঠেছে। দৃশ্যটা কুপির আলোয় আরো সুন্দর দেখা যাচ্ছে। রিমনের বুকের ভেতর ছোট্ট মুখটা জাপটে ধরে চোখ বন্ধ করলো বৃষ্টি । রিমন আশ্লেষে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিচু গলায় বললো,

– আমি কি তোমায় ভালোবাসতে পারি? ‘

বৃষ্টি কোনো প্রত্যত্তর করল না। নির‍্যুত্তর বৃষ্টির ভাবভঙ্গি দেখে তাকে ছেড়ে দিলো। রিমন বুকের কাছ থেকে মুখটা তুলে উন্মত্তের মতো ঠোঁট জোড়ায় চুমু খেলো। ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে চোখ জোড়া খিচে বন্ধ করে নিলো বৃষ্টি।

অতিশয় উষ্ণ অনুভূতিতে গভীর শ্বাস নিলো বৃষ্টি। লজ্জায় চোখজোড়া খুলার সাহস হচ্ছে
না। রিমন চোখদুটো ছেড়ে দিয়ে সরাসরি মুখের দিকে তাকালো, থুতনির নিচে ডানহাতের তর্জনী রেখে মুখ উঁচু করলো। কুপির হলুদ আলোয় পুরো মুখটা নরম চোখে দেখতেই নিঃশব্দে হাসলো রিমন। ফর্সা গালের উপর লজ্জার আবরণটা গাঢ় করে লেগেছে, চোখাচোখী হবার ভয়ে চোখদুটো এখনও বন্ধ করে রেখেছে সে। পূর্ণদৃষ্টিতে তাকাতেই চট করে গলা থেকে একটু নিচে চিবুকে চোখ পরলো। চিবুকের ছোট্ট তিলতুল্য কালো বিন্দুটা সোনালী আলোয় চমৎকার লাগছে। চুম্বকের মতো টানছে বুকের ভেতর আদুরে অনুভূতিটা প্রবল হলো তার, নিজেকে নিয়ন্ত্রণের ডেরায় রাখাটা মুশকিল হয়ে দাঁড়ালো। ভেবেছিলো বৃষ্টি যেদিন নিজে থেকে তাকে কাছে টেনে নিবে সেদিনই সে বৃষ্টির কাছে যাবে, কিন্তু সময়ের পরিধি তাকে অধৈর্য করে ছাড়লো। তখনই হাতটা নির্বিকারে বৃষ্টির থুতনি ছেড়ে পিঠে ব্লাউজটায় হাত রাখলো। নিজের সমস্ত সীমাবদ্ধতা ভেঙ্গেচুড়ে বৃষ্টির গলার কাছটায় ডুবলো রিমন। ক্ষুদ্র লোলিত তিলতুল্য কালো বিন্দুটায় ওষ্ঠদ্বয়ের ভার ঠেকিয়ে গাঢ় চাপ বসিয়ে দিলো। স্পর্শকারীর মোহমন্ত্রে সাথে-সাথে শিউরে উঠলো বৃষ্টি, রিমনের নীল শার্টটা আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে চেপে ধরলো। সৌম্য পুরুষের বলশালী হাতদুটো তাকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। বিমুগ্ধ স্পর্শ, কাঁপা-কাঁপা অনুভূতি, মনের ভেতর উত্থাল ঢেউয়ের ধুকপুকনি সবটাই মেহনূরকে নিস্তেজ করে ফেললো। মূহুর্ত্তের ভেতর অনুভব করলো সে নিজের অস্তিত্বে নেই, রিমনের অশান্ত-অস্থির-অবাধ ছোঁয়ায় বিহ্বল হয়ে শেষ। বিভোর-মোহাচ্ছন্ন বৃষ্টি হঠাৎ চিবুকের উপর ছোট্ট ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো,

বৃষ্টির কুঁকড়ানো শুনে বৃষ্টি কে ছেড়ে দিয়ে এক পা পিছিয়ে যায় সে। অপলক চাহনিতে তাকিয়ে রইলো বৃষ্টি সে জেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।

বৃষ্টির অপলক চাহনিতে চোখ রেখে রুমের অন্যপাশটায় চলে গেলো রিমন। দরজার বাইরে উঁকি দিয়ে দেখল বাহিরে বৃষ্টি কমেছে কি না একবার দেখে নিলো রিমন, বৃষ্টি কমেনি দেখে দরজার পাল্লাদুটো বন্ধ করে দিলো। বন্ধ করার ঠিক আগ মূহুর্তে একবার মুখ ঘুরিয়ে পিছু তাকালো সে, দরজার ছিটকিনিটা তুলতে-তুলতে বৃষ্টির দিকে ফের আপাদমস্তক চোখ বুলালো। ঠোঁটে রহস্যজনক হাসি রেখে কুপিটা নিভিয়ে ফেললো। রুমটা অন্ধকারে ঢেকে গেলে।
রিমন সম্মোহনী কায়দায় দৃষ্টি ছুঁড়ে, সাদা শার্টটার স্লিভ ঠিক করতে করতে আসে তার সামনে, কোনো ভাবনা-চিন্তার সময় না দিয়ে। এক কদম এগিয়ে এসে নির্বিকার চিত্তে শাড়িতে হাত রাখলো। দৃশ্য দেখে কাঠ হয়ে গেলো বৃষ্টি, মুখটা জবানবন্দির মতো চুপ হয়ে গেলো। আঁচলটা ডানহাতে পেঁচিয়ে জোরে টান দিতেই শক্ত বুকের উপর ছিটকে পরলো বৃষ্টি। তার স্পর্শ ইন্দ্রিয় টের পাচ্ছে, রিমন হাসান থেমে নেই, আজ সে একটুও থেমে নেই। আধো অন্ধকারে পেয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো শাড়িমুক্ত করে ফেলেছে। বারবার ঢোক গিলে লজ্জার পরিধিটা সামাল দিচ্ছিলো বৃষ্টি, বুকটা ধুকধুক-ধুকধুক করে কাঁপছে। তার মখমলের ব্লাউজটা যেনো ইচ্ছে করে নাফরমানী করলো। শাড়ির শেষভাগটা রিমনের প্রবল টানে যখন খুলে গেলো, তখন কোমরের চিলতে খানি ফাঁকটা পরিদৃষ্ট হলো। শুষ্ক ঠোঁটে জিভ বুলালো বৃষ্টি, তখনই আবছা মতোন দেখতে পেলো শাদা শার্টটার টপ বাটন খুলে ফেলছে। একটা-একটা করে বোতাম খুলতেই শার্টটাকে অদূরে ছুঁড়ে মারলো। অযত্ন ফ্লোরের উপর পরলো। বৃষ্টির মুখের দিকে একবার তাকিয়ে তার ডানহাতটা ধরলো রিমন, হাতটা টেনে এনে ঘাড়ে রাখতেই বৃষ্টিকে কোলে তুললো সে। বৃষ্টির হসত পা কাঁপা কাঁপির অবস্থা। জানে না বৃষ্টির কি হয়েছে সেও রিমনকে বাধা দিচ্ছে না। বিছানার দিকে ধীরেসুস্থে এগুতে লাগলো রিমন। নিশ্বাস ফেলে হাতদুটোয় সমস্ত ভর দিয়ে বিছানায় নামিয়ে দিলো, বালিশে শুইয়ে দিলো বৃষ্টিকে। পায়ের কাছ থেকে পাতলা কাঁথা নিয়ে নিজেও শয্যা গ্রহণ করলো। বৃষ্টি চুপ করেই রইল,

অনেকক্ষণ নিরব থাকার পর স্বাভাবিক হলে রিমন, বৃষ্টির ঠোঁটের উপর ডানহাতের তর্জনী রেখে শান্ত গলায় বললো, ‘ তোমার এই মিষ্টি ঠোঁটদুটো শুধুই আমার। এর স্বাদ গ্রহণ করার অধিকার ও আমার ‘

বৃষ্টি নির্বিকার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে।
ঠোঁটের উপর থেকে তর্জনী উঠালো রিমন, দেহের সবটুকু ভার ছেড়ে দিয়ে ওষ্ঠকার্যে ডুব দিলো। কিছু সময় পার করে বৃষ্টির অধরজোড়া মুক্ত করলো, ঠোঁটদুটো টকটকে লালবর্ণ ধারণ করলে সেখানে দৃষ্টি রেখে উদাস গলায় রিমন বলল,

– এভাবে আদর করার সুযোগ কি সব সময় পেতে পারি?

বৃষ্টি নির্ভীক ভঙ্গিতে ছোট্ট করে জবাবে বললো,

‘ হুম ‘

রিমন মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলে বৃষ্টির কপালটায় সবটুকু আদর মাখিয়ে চুমু খেলো। বৃষ্টি কে নিজের আষ্টেপৃষ্টের সাথে শক্ত করে চেপে ধরল।

হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি এখনও পরছে। ভোর পর্যন্ত এখানেই থাকতে হবে। কাঁথা টা টেনে কান পযর্ন্ত ঢেকে দিলো। জানালা দিয়ে ঠান্ডা শীতল করা হাওয়া আসছে সেটা তার কপালে চুলগুলো থেমে-থেমে উড়িয়ে দিচ্ছে। কপালে হাত রেখে অবাধ্য চুলগুলোকে পেছনে ঠেলে দেয়, কিন্তু নাফরমানী করে বসলো। আবারও কপালের ধারে এসে পরলো। বৃষ্টির ডানহাতটি এখনো তার মুঠোর ভেতর, অন্য হাতটা বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। বুকের উপর মাথা রেখে উম করা কাথায় গভীর ঘুম দিয়েছে।

সূর্যের তীর্যক রশ্মি মাটির জানালা ভেদ করে বিছানার উপর শুয়ে থাকা মানুষ দুটোর উপর উপছে পরছে। ভোর বেলায় সূর্যের এই সিগ্ধ রশ্মি চোখে মুখে পরতেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে বৃষ্টি। আলতো ভাবে নিজের চোখ দুটো মেলে। মাথা টা বেশ ভারি ভারি লাগছে। মাথার এক পাশে হাত দিয়ে কপাল কুচকে উঠে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করল রিমনের উন্মুক্ত বুকের। সে বুঝতে পারল সে সারারাত তার বুকের উপর মাথা রেখেই ঘুমে মগ্ন ছিল। তার এক হাত বৃষ্টি কে আকড়ে ধরে রেখেছিল। বৃষ্টি রিমনের হাত সরিয়ে দিয়ে বিছানা থেকে উঠতে যাবে তখন রিমন বৃষ্টির শাড়ির আঁচল ধরে টান দিয়ে নিজের বুকের উপর এনে ফেলে। দু’জনেই দু’জনের দিকে নির্বিকারে তাকিয়ে রইল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দরজায় কড়া পরল। দুজনে তড়িঘড়ি করে উঠল। দরজা খুলে দিতে দাদিমা দু’জনের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলো, প্রত্যত্তরে রিমন বৃষ্টি ও মুচকি হাসল। দাদিমা বৃষ্টির দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘ নে এটা খা আর এখন আমার সামনেই খাবি। ‘

বুড়ি মার হাতে একটা লাল টকটকে আপেল। যেটা বৃষ্টি কে খেতেই হবে। স্বাভাবিক ভাবেই বৃষ্টি আপেলে এক কামড় বসায়। তবে আপেল টা দেখতে সুন্দর ছিল ঠিক ততটাই ভেতর দিয়ে পানসে। বৃষ্টির চোখ মুখ কুঁচকে ফেলা দেখেই বুড়ি মা বলল, ‘ তার নাম আমার নামেই নাম করণ করিস। আমি দূর থেকে দোয়া করবো তার জন্য আমার নামেই নাম রাখবি কিন্তু? ‘

বুড়িমার কথার মানে বুঝতে না পেরে রিমনের মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে আবারও বুড়ি মার দিকে তাকালো হতভম্ব হয়ে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ কে আসছে? কার নামই বা তোমার নামে রাখবো? তাছাড়া তোমার নাম তো আমরা জানিই না। ‘

বুড়ি মা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, ‘ সময় হলে ঠিক জানতে পারবি। তোদের দাম্পত্য জীবন জেনো সুখের হয়। মেয়ে তোকে আমার প্রথম দেখায় অনেক ভালো লেগেছিল। তাই আমার দেওয়া শাড়িটা তুই সাথেই নিয়ে যা। তবে শর্ত একটাই তুই ব্যতিত এই শাড়ি টাতে জেনো অন্য কেহ হাত না দেয়। তাহলে ফল অতি খারাপ হবে। মনে রাখিস আমার কথা। শাড়িটা এক মাত্র তোরা দু’জনই ছুঁতে পারবি আর যে আসবে সেই ছুঁতে পারবে। তোদের জামাকাপড় রাতেই শুকিয়ে গিয়েছিল। যা পড়ে এখান থেকে চলে যা সূর্যি মাথার উপরে উঠার আগে। তারাতাড়ি চলে যা এই বুড়ি দাদিমার দোয়া সব সময় তোদের সাথে থাকবে আর যে আসবে তরা নাম আমার নামেই রাখবি। ‘

বলে ঘরের ভেতরে ঢুকে গেলো। রিমন বৃষ্টি অপলকভাবে একে অপরকে দেখছে। দু’জনের একজনও উনার কথার মানে বুঝে নাই।
বাড়ির সামনে দুয়ারে একটা পুকুর ছোটই এখানে দু’জনে শাওয়ার সেড়ে নেয়। নিজেদের আগের পোশাক পরে নিলো। বুড়ি মার কথা অনুযায়ী গোল্ডেন কালার শাড়িটা নিতেই হল।

দু’জনে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। পৌছাতে কিছুটা সময় লেগে যায়। বাড়িতে আসতে সবাই ঘিড়ে ধরে কোথায় গিয়েছিল কোথায় ছিল। প্রশ্নের পাহাড় জুড়ে দিয়েছে। বৃষ্টি ধমক দিয়ে বলল, ‘ চোপ করো সবাই আমরা জঙ্গলে পথ হারিয়ে ফেলছিলাম তাই কাল আসতে পারিনি ওদের সাথে আর ওরাও তো আমাদের খোঁজ করেনি৷ ‘

ফুট করে অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে রিমা বলল, ‘ আমরা তো ভাবছিলাম তোকে আর দুলাভাইকে বাঘ বা সিংহ খেয়ে ফেলছে। এতজন এক সাথে বাঘের পেটে যাওয়ার থেকে দু’জন যাওয়াই ভালো। তাই আমরা চলে আসছি। ‘

বৃষ্টি রেগে মেগে ফায়ার হয়ে গেছে।

মিসেস মনোয়ারা গলা শক্ত ও কঠোর করে জানতে চাইলেন, ‘ সারারাত কোথায় ছিল? ‘

একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলল, ‘ বলছি বাবা বলছি! ‘
তারপর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবটা বিশ্লেষণ করল। জঙ্গলে কাউকে দেখা তার পেছনে যাওয়া রাতে একটা বাড়িতে থাকা আশে পাশে মানুষের চিন্হ ও নাই। গ্রামের মধ্যে একটাই বাড়ি সকালে চলে আসার সময় বলা কথাগুলো সব কিছুই দুশ্চিন্তায় ফেলে দিছে মনোয়ারা বেগম কে।
সে নিজেকে যথাযথ শান্ত রাখার চেষ্টা করে হতভম্ব হয়ে প্রশ্ন ছুড়লেন, ‘ বুড়ি টার পিঠ কি কুঁজো ছিল? ‘

প্রত্যত্তরে বৃষ্টি বলল, ‘ অন্ধকারে আমি ঠিক খেয়াল করিনি। তবে দাদু বুড়ি মা না অনেক ভালো। ‘

চোখ ছোটো ছোটো করে চিন্তাভাবনার ভঙ্গিতে রিমন জানালো, ‘ হ্যাঁ, আমি যখন দেখেছিলাম তখন খেয়াল করেছিলাম। কুজো বুড়ি সাথে লাঠি ভোড় দিয়ে চলতো। ‘

মনোয়ারা বেগম, ‘ চল আমার সাথে আমার রুমে আয় দুজনে আর কেউ ! ‘

রিমন আর বৃষ্টি একে অপরকে অপলক চাহনিতে দেখে দাদির পেছনে গেলো। রুমের মধ্যে দরজা আটকে দিয়ে বিছানার উপর বসে প্রশ্ন করল। ‘ সে তোদের দু’জনের কোনো ক্ষতি করেনি? ‘

দু’জনেই দু’দিকে মাথা নাড়ালো। মানে ‘ না। ‘

গম্ভীর চিন্তায় মগ্ন হলেন তিনি। কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর বললেন, ‘ তোকে যে শাড়িটা দিয়েছে সেটা কোথায়? ‘

‘ আমার রুমে কেনো? ‘
‘ ওটাকে নষ্ট করে ফেলতে হবে। ‘
‘ এত সুন্দর শাড়ি নষ্ট কেনো করবো? ‘
‘ যা বলেছি তাই কর, দেখতে সব সুন্দর জিনিস হিতে বিপরীত হয়। ‘

বাড়ির উঠানে শাড়ি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনোয়ারা বেগম ইশারা করতেই সেটা মাটিতে ফেলে দিলো বৃষ্টি। কাঠির ম্যাচ হাতে দিয়ে বলল, ‘ এতে আগুন জ্বালিয়ে দে। ‘

বৃষ্টি কাঠিতে আগুন জ্বালিয়ে শাড়ি টার উপর ছুড়ে ফেলল। দুইবার কাঠি শাড়ির উপর পড়ার পরপরই নিভে গেলো। তৃতীয় বার ফেলতেই শাড়ি তে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠল, দৃশ্য টা এমন দেখা যাচ্ছে মনে হচ্ছে জীবিত একজন মানুষকে পোড়ানো হচ্ছে।

শাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেলে এক বালতি পানি ঢেলে দেয় তাতে, বাড়ি সদ্য লোক অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মনোয়ারা বেগমের আদেশ ফলো করছিলেন। মনোয়ারা বেগম সবার দিকে তাকিয়ে তেজি কন্ঠে বলল, ‘ ভুলেও তিনদিন তোমাদের মধ্যে কেউই বাড়ির পেছন দিকটায় যাবে না। এটা আমার কড়া নিষেধ। আমার নিষেধ যে ভঙ্গ করে ওইদিকে যাবে তার সাথে যা তা হতে পারে। ‘

বলে বাড়ির ভেতরে চলে আসলেন। হল রুমে সবাই একত্রে বসে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। বৃষ্টি প্রশ্ন ছুঁড়ল, ‘ এইসব কেনো দাদু এত কিছু? ‘

এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে নাতনীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, ‘ শাড়িটা তোকে যে দিয়েছে যে কোনো মানুষ না রে ভু, সে হচ্ছে মায়া আজ থেকে ৪০/৪২ বছর আগে নিজের বাড়িতে ঘর বন্ধি হয়ে আত্মা হত্যা করেছিল। কোনো একজনকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসতো আর সে তাকে ব্যবহার করে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। পেটে তার তখন ৬মাসের বাচ্চা সে লজ্জায় কাউকে মুখ দেখাতে পারেনি অবিবাহিত মেয়ের ঘরে সন্তান যে কতটা যন্ত্রণা দায়ক তা সেটা তোরা বুঝবি না। দুঃখে কষ্টে অপমানে নিজের বাড়িতেই নিজের গলায় দড়ি দিয়েছিল। পরনে শাড়ি ছিল ওই সোনালী শাড়ি। পাশাপাশি গ্রাম হওয়ার সুবিধায় আমি সব কিছু আমার চোখেই দেখি তখন আমার নতুন বিয়ে হয়েছিল এক মাস। এরপর থেকেই ওই বাড়ির আশেপাশে মানুষ থাকতে পারতো না সবার কানে শুধু মায়ার চিৎকারি ভয়ানক কান্নার আওয়াজ ভেসে আসতো, বাড়িটা আসতে আসতে নিষিদ্ধ বাড়িতে পরিনত হয়। তবে সবাই বলাবলি করতে লাগল। মাঝরাতে মায়া এদিকে চলাচল করে পরনে ওর সোনালী শাড়িটা। পুরো গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। ধীরে ধীরে মায়ার চিৎকার বাড়তে থাকে। বিতৃষ্ণা হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে সবাই অনান্য জায়গায় চলে যায়। সেজন্যই মায়ার বাড়ির আশেপাশে তোরা কোনো ঘর দেখতে পাসনি। মায়া খুবই দয়ালু ছিল সবার ভালো চাইতো। ‘

রিমন প্রশ্ন করল, ‘ সে যদি চল্লিশ বছর আগে মারা যায় তবে কাল রাতে তাকে বৃদ্ধ কেনো দেখলাম তার তো ইয়াং থাকার কথা। ‘

বৃষ্টি বলল, ‘ আমি বলেছিলাম না আমি জঙ্গলে কাউকে দেখেছি যে হাত দিয়ে আমাকে ইশারা করে ডাকছিল। সে খুবই সুন্দরী ছিল আর যুবতী ও ছিল৷ ‘

দাদী বলল, ‘ নাত জামাই সব প্রশ্নের উত্তর হয় না। এইসব নিয়ে আর ভেবো না সে তোমাদের কোনো ক্ষতি করেনি এটারই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করো। আর আজকের মধ্যেই এই খান থেকে চলে যাও দু’জনে একমাস পর্যন্ত এদিকে আসবে না। ‘

মাথা উপর নিচ নাড়িয়ে রুমে চলে গেলো। লাগেজ প্যাক করতে, লাগেজের মধ্যে শার্ট প্যান্ট গুঁজতে গুঁজতে রিমন বলল, ‘ কাল পুরো রাত একটা ভূতের বাড়িতে ছিলাম। আর তুমি ভূতের শাড়িতে ‘

বলে হাসতে হাসতে বিছানার উপর বসে পরল। বৃষ্টি মুখ ভেংচি কেটে নিজের কাজে মন দেয়। কিছুক্ষণ পর রিমনের পাশাপাশি বসে বলে উঠে, ‘ বুড়ি মার সাথে যা হয়েছিল তা কিন্তু ঠিক হয়নি। ‘

‘ আমারও তাই মনে হয় জানো? ‘

দু’জনে কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে থাকল। কাল সন্ধ্যার পর থেকে সকালে আসার আগ পর্যন্ত সবটা চোখের সামনে কল্পনা করল।

দুপুরের দিকে খেয়ে দেয়ে রেস্ট নেয়। সূর্যের তাপমাত্রা কিছুটা কমলে সকলে বাড়ি থেকে বের হয়৷ চলে যাওয়ার জন্য সবাইকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নেয়। গাড়িতে উঠতে যাবে তখন মনে হলো কেউ তাকে দেখছে আশপাশ টায় ভালো করে তাকিয়ে তেমন কিছুই চোখে পরেনি বলে গাড়িতে উঠে বসে পরে।

দীর্ঘ জার্নির পর বাড়িতে এসে পৌঁছালো। আসার পর সবাই মনোয়ারা বেগমের কথা জিজ্ঞেস করে। বৃষ্টি ও আপন মনে দাদীর ভালো থাকার কথা জানায়।

দুইদিন বাড়িতে রেস্ট নেওয়ার পর, আজ ভার্সিটিতে আসে। বৃষ্টি কে দেখে অধরা দৌঁড়ে আসল এসেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো, ‘ কেমন আছিস? এতদিন কেনো আসিসনি জানিস কত মিস করেছি? ‘

বৃষ্টি মৃদু হেঁসে বলল, ‘ আসতে আসতে এতগুলো প্রশ্ন একসাথে করলে উত্তর দিবো কিভাবে? ‘

অধরা শান্ত হয়ে একটা একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে মারছে বৃষ্টি বাধ্য মেয়ের মতো উত্তর দিচ্ছে। কথা বলতে বলতে ক্লাসে চলে যায়। ক্লাসের জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাতে লক্ষ্য করল, আকাশ টা আজও মেঘলা মনে হয় বৃষ্টি নামবে! বৃষ্টির কথা মনে করতেই ওই রাতের কথা মনে পরে গেলো। অধরা বৃষ্টিকে অন্য মনস্ক দেখে হাতে চিমটি কেটে বলল, ‘ কিরে কোথায় হারিয়ে গেছিস? ‘

বৃষ্টি শান্ত গলায় বলল, ‘ মনে হচ্ছে বৃষ্টি আসবে। ‘

‘ বাড়ি যাবি কিভাবে এটাই ভাবছিস? ‘

বৃষ্টি প্রতিত্তোর করল না। অধরা আবারও বলল, ‘ দু’জনে ভিজতে ভিজতে চলে যাবো। ‘

ছুটির পর মেইন গেইট পর্যন্ত আসতে পেরেছে ওমনি বৃষ্টি পরতে শুরু হয়ে গেছে৷ সকল ছাত্র ছাত্রী এদিক সেদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। বৃষ্টি ও ছুটে যেতে নিলে অধরা বৃষ্টির হাত ধরে নেয়। আর বলে, ‘ সামনে তাকিয়ে দেখ ‘

‘ এখন সময় নেই চল নয়তো পুরো ভিজে যাবো। ‘

অধরা বৃষ্টির থুতনিতে হাত রেখে গেইটের দিকে মাথা ঘুরিয়ে দিলো। গেইটের সামনে নজর পরতেই বৃষ্টি ইতস্তত হয়ে গেলো। এটা কিভাবে সম্ভব লাইক সিরিয়াসলি স্বপ্ন দেখছে না তো আধোও কি এটা সম্ভব?

বৃষ্টিকে ধাক্কা দিয়ে অধরা বলল, ‘ ইশশ এমন যদি আমার সাথে হতো ‘

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here