পাগল_প্রেমিকা,৩৮,৩৯

#পাগল_প্রেমিকা,৩৮,৩৯
#পর্ব_38
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
__________
ঝিরিঝিরি বৃষ্টির পরছে আর এই বৃষ্টি তে কাক ভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাইকের সাথে হেলান দিয়ে এক পায়ের উপর আরেক পা ভোড় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

অধরা বলে উঠে, ‘ কি হ্যান্ডসাম মাইরি! কি কিউট দেখ দোস্ত কিভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এই স্টাইলের উপর আমি তো ফিদা। পুরাই ক্রাশ উফফ চুলগুলো দেখ. ‘

আর কিছু বলার আগে বৃষ্টি অধরাকে চুপ করিয়ে দিয়ে নিজে বলল, ‘ পুরাই কাকের বাসা ‘

অধরার মুড অফ হয়ে গেলো সে বলল, ‘ দেখ লাইফে ফাস্ট কাউকে দেখে ক্রাশ খাইলাম আর তুই এইসব বলছিস নোট ফেয়ার! ‘

বৃষ্টি মৃদুস্বরে বলল, ‘ প্রথম বার বলেছিস তাই কিছু বললাম না। আর হ্যাঁ ক্রাশকে দুলাভাই বলতে শিখ। ‘
অধরা চোখ ফেলফেল করে তাকিয়ে থেকে ইতস্ততভাবে বলল, ‘ ও তোর জামাই? ‘

বৃষ্টি মৃদু হাসি দিয়ে বলল, ‘ হুম হুম। ‘

বলে হাঁটতে শুরু করে রিমন সামনে এসে দাঁড়িয়ে এক ভ্রু কুঞ্চিত করে অপর ভ্রু উঁচু করল প্রশ্ন ছুঁড়ে, ‘ কি ব্যাপার আজ আমার ভার্সিটির সামনে উদয় হলেন? ‘

ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রিমন বলে উঠে, ‘ এই দিক দিয়েই যাচ্ছিলাম ভাবলাম তোমায় সাথে নিয়েই যাই। ‘

‘ আচ্ছা? ‘

‘ এত প্রশ্ন করছো কেনো? আমার স্থানে এখন যদি ডাক্তার নীল থাকতো তাহলে কি তাকেও এইভাবে প্রশ্ন করতে? করতে না বিন্দাস চলে যেতে ‘ রিমন বলল।

‘ সে আমার ফ্রেন্ড ‘
‘ আমি তোমার বর, এখন বকবক না করে, পেছনে উঠে বসো আর ছাতা মেলে ধরো। বৃষ্টি পুরোপুরি আসার আগে আমরা বাড়ি পৌঁছে যেতে পারবো। ‘

বৃষ্টি আর তর্ক না করে হেলমেট পরে নেয়। বাইকের পেছনে উঠে বসলে রিমন বাইক স্টার্ট দেয়। এখনও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরছে, কিছুদূর আসতে বৃষ্টি জোরে পরতে শুরু করল৷ বাসস্ট্যান্ডের সামনে বাইক থামিয়ে দু’জনে নেমে যায়। স্ট্যানের নিচে দাঁড়িয়ে আছে, বৃষ্টির খুব ইচ্ছে করছে ভিজতে কিন্তু রিমন বৃষ্টির হাত নিজের হাতের মধ্যে মুঠি বন্ধ করে রেখেছে। রিমনের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ বাইক টা ওখানে ভিজছে তো? ‘

বিরক্তিকর মনোভাব নিয়ে তেজি কন্ঠে বলল, ‘ তাহলে কি বাইক টা কে কোলে করে এখানে নিয়ে আসবো? ‘

‘ আমি কি তা বলছি নাকি? ‘
‘ তো আপনি কি বলছেন? ‘
‘ বলছি, বাইকটার সাথে আমরাও গিয়ে চলো ভিজি ‘
‘ পাগল নাকি? এই বৃষ্টি তে ভিজলে জ্বর আসবে!’
‘ জ্বর আসবে না তুমি চলো তো আমার সাথে! ‘

হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো খোলা আকাশের নিচে ঝুম ধারায় বৃষ্টি পরছে, দুই হাত দুই দিকে ছড়িয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটায় এক অন্য রকম শিহরণ জাগছে হুট করেই আকাশ চমকালো ভাজ পরলো। বৃষ্টি ভয়ে রিমনকে জরিয়ে ধরলো। বেশকিছু ক্ষণ সেইভাবেই দু’জনে দাঁড়িয়ে রইল।
এখন কি আর এখানে দাড়িয়ে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করে লাভ আছে? নেই কারণ মানব বৃষ্টির জন্য প্রকৃতির বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে। তাই জোর করেই বাইকে উঠালো, বাইক স্টার্ট দিয়ে বৃষ্টিতেই দু’জনে বাড়ি ফিরে এলো। কলিংবেল চাপতে রিমি দরজা খুলে দেয়। দুজনকে ভেজা দেখে শত প্রশ্ন জুড়ে দিয়েছে। রিমন বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে, ‘ সব ওর জন্য ওকেই জিজ্ঞেস কর ‘ বৃষ্টি কে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে চলে যায়।
বৃষ্টি ও ভেজা তাই পেছন পেছন ছুটে চলে আসে। আসার আগে বলে আসে ‘ পরে বলবো সব ‘ রুমে এসেই দেখে রিমন টাওয়াল হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকছে। পেছন পেছন বৃষ্টি ও ঢুকে পরল, #লে-ছক্কা

‘ এই তুই ভেতরে আসছিস কেন? ‘
‘ দু’জনে এক সাথে গোসল করবো তাই ‘
‘ এএ কিছুতেই না আমার লজ্জা করে তুমি বাহিরে যাও পরে আইসো প্লিজ যাও। ‘
‘ কিছুতেই না, আমি এখনই করবো আর তোমার সাথেই করবো ‘
‘ তোর লজ্জা করে না একটা ছেলের সাথে গোসল শেয়ার করতে চাচ্ছিস? ‘
‘ ছেলেটা আমার জামাই তাই লজ্জা করছে না বুঝেছো ‘
‘ কিন্তু আমি তোর সাথে গোসল করবো না। তুই আগে কর আমি পরে করে নেবো। ‘
‘ তুই করতে বাধ্য ‘

বলে হাত ধরে টেনে ঝর্ণার নিচে দাঁড় করিয়ে দিলো।

দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়েছে রিমন।
রিমি বৃষ্টি কে নিজের রুমে ডেকে নিয়ে গেছে, কিছু দরকারী কথা বলার জন্য, কথা শেষ হলে রুমে এসে দেখে রিমন কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। রুমের দরজা ধীরে সুস্থে চাপিয়ে দিয়ে। চুপিচুপি আলতো পায়ে বিছানার উপর উঠে বসে, রিমনের মাথার পাশটায় বসে সে তার খোলা চুলগুলো মুঠি তে নিয়ে রিমনের মুখের উপরে দিয়ে খেলা করছে। চুলের খোঁচা খেয়ে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে বৃষ্টি দুই হাত দিয়ে বৃষ্টি কে জরিয়ে ধরে টান মেরে বিছানার উপর শুয়ে দিয়ে নিজে উপরে উঠে বসে। তার দুই হাত দিয়ে বৃষ্টির দুই হাত বালিশের সাথে চেপে ধরে বলে উঠে, ‘ এই চুল দিয়ে আমার ঘুমের ডিস্টার্ব করিয়েছো আর এই চুল দিয়েই শোধ তুলবো। ‘ বলে বৃষ্টির ঘন কালো চুলে মুখ গুঁজে দেয়।

রাত্রি বেলা রাত প্রায় ১২টা বাজতে চলল, বারান্দায় আনমনে একা একা দাঁড়িয়ে সে কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করছে। ঘুমের মধ্যে বিছানার এক পাশে হাত রাখে। কাউকে হাতে লাগ না পেয়ে চোখ মেলে তাকালো। বিছানার উপর বই পড়তে পড়তে কখন যে চোখ লেগে গিয়েছিল জানা নেই। রুম টাও অন্ধকার গায়ে কাঁথা জুড়ানো নিশ্চিত রিমন করেছে। তবে সে গেলো কোথায়? ভাবতেই চোখ গেলো বেলকনিতে, বেড থেকে নেমে হেঁটে যেতে লাগল।

বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে তাকে তাই কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। পাঁচ মিনিট পর ফিরে এসে দেখল এখনও সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। এক হাত দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। অপর হাত সামনে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘ কফি! ‘

কফির মগটা হাত থেকে নিয়ে পাশে রেখে দেয়। বৃষ্টির দুইহাত ধরে বুকের সাথে চেপে বলল, ‘ ঘুমাওনি এখনো? ‘

বৃষ্টি প্রত্যত্তরে বলল, ‘ ঘুমিয়েছিলাম তবে তোমার অনুপস্থিতি আমাকে জাগিয়ে তুলেছে। কি ভাবছো এতো ‘

‘ কোই না তো, আমি কিছু ভাবছি না ‘ রিমন মৃদুস্বরে বলল।

‘ আমার থেকে লুকানোর বৃথা চেষ্টা করে লাভ নেই বলো কি নিয়ে চিন্তা করছো? ‘

রিমন বৃষ্টির হাত ধরে টেনে সামনে নিয়ে আসল, দুই গালে হাত ছুঁইয়ে দিয়ে বলল, ‘ তোমার জানতে হবে না। চলো রাত অনেক হয়ে গেছে ঘুমাতে হবে। ‘

‘ এড়িয়ে যাচ্ছো? ‘ বৃষ্টি প্রশ্ন ছুঁড়ল, রিমন কোনো প্রতিত্তোর করল না।

রান্না করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে, এতদিন রহিমা বা রিমি যেকোনো একজন সব কাজে হেল্প করতো কিন্তু আজ সব কিছু বৃষ্টি কে একা হাতে করতে হচ্ছে। সব কিছুই জেনো উলট পালট করে ফেলছে। এত জনের রান্না একা কি করা যায়। কিছু গেস্ট এসেছে বাড়িতে কিছু বলতে দুই তিনজন নয়। ১০/১২ জন সবার জন্য মন মতো রান্না করলে পোষানো যেতো কিন্তু নাহ একেক জনের আর্যি বউমার হাতে এটা খাবে তো আরেকজন আরেকটা খাবে এই হচ্ছে জ্বালা। একটা করলে অন্য টা বিগড়ে যাচ্ছে। দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে বৃষ্টির এমন নাজুক অবস্থা। হালকা গলা ঝেড়ে নেওয়ার জন্য কাশি দিলো নিজের উপস্থিতি বোঝানোর জন্য পেছন থেকে এসে বৃষ্টি কে জড়িয়ে ধরল আর বলে উঠল, ‘ আমি কি কিছু হেল্প করবো? ‘

হাতে খুন্তি নিয়ে পেছনে ঘুরে তাকালো। হাতে খুন্তি রিমনের দিকে তাক করে অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ তুমি আর রান্না? ‘

রিমন মুচকি হেঁসে বলল, ‘ ইয়েস ম্যাম, এখন দেখো এই রিমনের চামাক্ষা ‘ বলে চোখ টিপ মারল। ভোলা ভালা বৃষ্টি হতভম্ব হয়ে চাহিয়া রইল। ওইদিকে রিমন একটার পর একটা কাজ করেই চলেছে। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি ঠিক সামনে এসে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত রেখে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসে বলল, ‘ শুধু কি দাঁড়িয়ে দেখবে নাকি আমার হেল্পও করবে? ‘

বৃষ্টি ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে বলল, ‘ কি কেনো শার্ট খুলতে? ‘

চলবে?

#পাগল_প্রেমিকা
#পর্ব_৩৯
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
__________
‘রুমের মধ্যে কি কেউ আছো? ‘ (বৃষ্টি)

‘ হ্যাঁ আছি কেনো কি চাই তোর? ‘ (রিমন)

‘ আমি ব্লাউজ নিতে ভুলে গেছি! ‘ ওয়াশরুমের দরজা কিছু খুলে চেচিয়ে বলল।

‘ কোথায় রাখা আছে বল আমি দিচ্ছি। ‘ রিমন বলল।

‘ বিছানার উপরে! ‘

‘ বিছানার উপরে নেই? ‘ এক নজর চোখ বুলিয়ে বলল।

‘ তো সোফার উপরে? ‘

‘ সেখানেও নেই! ‘

‘ তুমি দেখো ভালো করে! ‘

‘ দেখছি পাচ্ছি না! ‘

‘ উফফ ‘

একরাশ বিরক্ত নিয়ে শুধু একটা টাওয়াল পেচিয়ে বের হয়ে আসল। পুরো রুমে চোখ বুলাতে দেখতে পেলো খাটের উপর থেকে নিচে পরে গেছে। ব্লাউজ আর পেটিকোট হাতে নিয়ে পেছনে ঘুরতেই ধাক্কা খেলো রিমনের লোমহীন সাদা বুকের সাথে। রিমন অনেক লম্বা বৃষ্টি রিমনের বুক পর্যন্ত লম্বায় আর সেথায় ধাক্কা খেলো। দুই হাত পেছনে নিয়ে কিছুটা ঝুকে বলল। ‘ সমস্যা কি আমাকে জ্বালাতে কি তোর খুব ভালো লাগে? ‘

বৃষ্টি না বোঝার মতো করে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ মানে আমি কখন জ্বালালাম?’

‘ এই যে শুধু টাওয়াল পরে বের হয়ে আসছিস জানিস আমার মনের মধ্যে এখন শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। ‘ দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল।

‘ ইশশ আমি আমার ব্লাউজ নিতে আসছি আপনাকে জ্বালাতে নয়। সরো সামনে থেকে? ‘

‘ যদি না সরি? ‘

‘ ধাক্কা দিয়ে চলে যাবো! ‘

‘ পারলে যাও ‘

বৃষ্টি নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিয়েও রিমনকে একচুল ও নড়াতে পারে না। বৃষ্টির একহাত ধরে টান দিয়ে নিজের অস্তিত্বের সাথে মিশিয়ে নেয়। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। রিমন আলতো হাতে চোখের অশ্রু মুছে দেয়। বৃষ্টি তার দুই পা রিমনের দুই পায়ের উপর রেখে দাঁড়ায়। তাতে একটু লাগল পায়। মাথার উপরে বাধা চুলগুলো নিজ হাতে খুলে দিলো। ভেজা চুলের মধ্যে এক হাত গুঁজে দেয় অন্য হাত দিয়ে তার কোমড় চেপে ধরে বৃষ্টির অধর জড়োতে ডুব দিলো।
________

কিচেনে.

‘ তোর নজর সব সময় আমার শার্টের দিকে যায় কেনো রে? ‘ ক্ষিপ্ত হয়ে রিমন বলল।

‘ আমার নজর তো তোর উপরেই থাকে শুধু তুইই দেখিস না নষ্টা ‘ মুখ ভাড়ি করে বলল।

দু’জনে মিলে খুব সুন্দর করেই রান্না করল। আর বাড়ির কেউ জানতেই পারল না। কিচেন থেকে বের হয়ে সোজা রুমে চলে গেলো। বৃষ্টি ও এ্যটো জিনিসপত্র ধুয়েমুছে গুছিয়ে রেখে রুমে চলে যায়। রুমে এসেই আগে তড়িঘড়ি বেধে ওয়াশরুমে চলে যায়। রুমে প্রবেশ করার আগে রিমি বৃষ্টি কে বলেছিল আজ শাড়ি পরতে আর সেজন্যই শাড়ি পরা। তবে এত কিছুই মাঝখানে শাড়ি বাথরুমে নিতেই ভুলে যায়। আলমারি থেকে বের করে বিছানার উপর রাখে। বিছানার উপর আরামে আধশোয়া হয়ে ফোন স্ক্রল করছিল রিমন। তার দিকে একনজর তাকিয়ে বাথরুমে চলে যায় কাপড় ছাড়াই। শাওয়ার শেষে উপলব্ধি করল ব্লাউজ পেটিকোট কিছুই আনেনি। রিমনের দিকে তাকিয়েই সব ভুলে গেছে। সে থেকেই ডাকাডাকি শুরু করেছিল কিন্তু রিমন যে দিন কানা সেটা বৃষ্টি জানতো না। যেখানে বলেছে সেখানেই খুঁজেছে একটু এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলেই পেয়ে যেতো আর বৃষ্টি কে বেরও হতে হত না আর এখন রিমনের কাছে. কিছু না জাস্ট ইতিহাস ।
______
সন্ধ্যার পর সকলে মিলে শপিংমলে আসে। কিছু শপিং করার জন্য, এখন মহিলা মানুষের কিছু শপিং-ই অনেক এই দোকান তো ওই দোকান, এটা সেটা দেখে পছন্দ না হলে অন্য দোকান এভাবে ঘুরাঘুরি চলে। দুই হাতে শপিং ব্যাগে ফুল হয়ে রয়েছে হাত, সাথে কপাল ভেয়ে ঘাম ঝড়ছে, হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে রিমনের দিকে তাকিয়ে শীতলকন্ঠে বলে উঠে, ‘ আমি আর হাঁটতে পারছি না! ‘

রিমন তার বা হাতের ব্যাগ গুলো সহ হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপাল বেয়ে পরা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছতে ছিলো তখনই বৃষ্টির এমন কথা শুনে বিরক্ত হয়ে বলল, ‘ তো কি এখন কোলে নেবো? ‘

ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বৃষ্টি বলল, ‘ নিলে তো ভালোই হয়। ‘

বলে ফিক করে হেঁসে ফেলে, কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে আবারও হাঁটতে শুরু করে। বলেছিল কিছু শপিং অথচ সম্পূর্ণ শপিং শেষ করে বাড়ি ফিরতে প্রায় রাত দশটা লাগাত বেজে যায়। রাতে বাড়ি ফিরে অনেকটা ক্লান্ত বোধ করে, রুমে গিয়ে আগে হ
গোসল করে ফ্রেশ হওয়ার জন্য বাথরুমে চলে যায় রিমন। অপর দিকে হল রুমে সোফা ও সোফার মাঝখানে বড় কাঁচের টেবিলের উপর সবগুলো শপিং ব্যাগ গুলো রেখে মেলে চেক করছে। এইসব করতেই আরও এক ঘন্টার মতো লাগে। সব কিছু গুছিয়ে বৃষ্টি রুমে চলে আসে, এ
বেডের উপর ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিয়ে শুয়ে রয়েছে রিমন।এখন আর জ্বালাতে ইচ্ছে করছে না। তারও শরীর আজ ভীষণ ক্লান্ত, শরীর থেকে ওড়না টা রুমে সিঙ্গেল সোফার উপর রেখে বাথরুমে চলে গেলো। চোখে মুখে পানি ছিটকে দিয়ে রুমে চলে আসে। এখন শরীর শুধু আরাম চাইছে বিছানার উপর শুতে পারলেই শান্তি, এতটাই ক্লান্ত লাগছে যে জামার বদলে নাইটি পরতেও ইচ্ছে করছে না। বিছানার উপর ঠিক রিমনের বা পাশটায় গিয়ে শুয়ে পরল। বালিশের উপর মাথা রাখতেই ঘুমের তলদেশে হারিয়ে যায়। রিমন ঘুমায়নি তার অতিরিক্ত মাথা যন্ত্রণা করছে তাই মাথা ব্যাথার একটা ক্যাপসুল খেয়ে কপালের উপর অন্য হাত রেখে চোখ বন্ধ করে রেখেছে কিছু একটা বিষয় রিমনকে খুব ভাবাচ্ছে যা নিয়ে অতি চিন্তা করছে সে।

রাত তখন গভীর, আশে পাশে ছেয়ে গেছে নিস্তব্ধতা ও অন্ধকার। হঠাৎ করেই ‘ রিমন ‘ বলে চিৎকার দিয়ে উঠে বসে পরল বৃষ্টি, পাশে রিমন লাফ দিয়ে উঠে বসে বৃষ্টির হাতে হাত রেখে বলে, ‘ কি হয়েছে এমন ভাবে চিৎকার কেনো দিয়েছো? ‘

উত্তেজিত হয়ে পরেছে বুকের হার্টবিট স্পিডেবিট করছে রিমন বৃষ্টির হার্টবিট স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। বৃষ্টি কোনো কথার উত্তর দিচ্ছে না, বসে বসে কাঁপছে রিমন বৃষ্টিকে টেনে নিজের মুখের সাথে মিশিয়ে নেয়। দুই হাত দিয়ে শক্ত করে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে। হয়তো স্বপ্ন দেখেছে অথবা স্বপ্নে এমন কিছু দেখেছে যার জন্য বৃষ্টি এইভাবে এতটা রিয়েক্ট করছে। বৃষ্টি কে শান্ত্বনা দেওয়ার জন্য অনেক কিছু বলে দেখল সে থামছে না উল্টে আরও কাঁদছে, সেটা দেখে বৃষ্টি কে নিজের থেকে আমাদা করতে চাইলে বৃষ্টি আরও শক্ত করে রিমনকে জড়িয়ে ধরে।

ভয়ে ভীতু হয়ে আছে, রিমন বৃষ্টির দুই বাহু চেপে ধরে নিজের সামনে বসিয়ে চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করল, ‘ কি হয়েছে বলো আমাকে? ‘

চোখ বড়সড় করে দীর্ঘ শ্বার নিচ্ছে। বিছানার পাশ থেকে এক গ্লাস পানি বৃষ্টির দিকে বাড়িয়ে দেয়। পুরো গ্লাসের পানি পান করে কিছুটা শান্ত হয়ে বলে উঠে, ‘ আ, আমি দেখেছি।’

‘ কি দেখেছো? ‘রিমন বৃষ্টির এক গালে হাত রেখে বলল।

‘ আমি দেখেছি ওই বুড়িমা কে, সে আমাকে এসে বলল। ‘

‘ কি বলল? ‘ ভ্রু কুঞ্চিত করে প্রশ্ন করল।

‘ বলল যে আসতে চলেছে তার নাম জেনো উনার নামেই রাখা হয়, নয়তো নদীর দুই কুলের এক কুল ভেঙে ভেসে যাবে। শেষে খুবই ভয়ানক চেহারার সাথে ভয়ানক হাসি দিয়ে উধাও হয়ে যায়। ‘

‘ আর তুমি স্বপ্ন কে সত্যি মনে করে ভয় পেয়ে লাফিয়ে উঠো, বৃষ্টি স্বপ্ন স্বপ্নই হয় সত্য হয় না। তুমি সারাদিন হয়তো ওইসব নিয়েই চিন্তা করো তাই এমনটা কল্পনা করে স্বপ্ন দেখেছো। তুমি আসো আমার সাথে। ‘

বলে হাত ধরে বেলকনিতে চলে গেলো। এমনিতেই ভয় পেয়ে আছে এর মধ্যে ঘুমাতে বলা কি উচিত হবে? হবে না তাই আগে বৃষ্টির মুড ঠিক করতে হবে তারপর ঘুমানোর কথা বলবে। ভেবে বেলকনিতে চলে আসল। দু’জন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। রিমন তার এক হাত বৃষ্টির কাঁধের উপর রেখেছে। দূর আসমানের চাঁদ দেখিয়ে বলল, ‘ দেখো তো চাঁদ টা কত একলা, সে কি ভয় পায়? পায় না অথচ তোমার সাথে তোমার বডিবিল্ডার স্বামী থাকতে তুমি ভয় পাও, দেখো চাঁদের আশেপাশে তারাগুলো কেমন চিকচিক করছে। ‘

বৃষ্টি দুহাত দিয়ে রিমনকে জড়িয়ে ধরে। কপালে আলতো চুমি একে দিয়ে রিমন ও তাকে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষণ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকার পর বৃষ্টি বলল, ‘ আমার ঘুম পাচ্ছো। ‘

প্রত্যত্তরে রিমন বলল, ‘ এখন ভয় করছে না! ‘

বৃষ্টি দুই দিকে দুইবার মাথা নাড়ালো৷
‘ আচ্ছা চলো আমারও সকালে অফিসে তারাতাড়ি যেতে হবে! ‘

বেডের উপর, রিমন অপর দিকে কাত হয়ে শুয়ে আছে। পেছন থেকে হাতের উপর চিমটি কেটে বলল, ‘ আমি তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো। ‘
রিমন মুচকি হেঁসে পেছনে ঘুরে আর বলে উঠে, ‘ আমার হাত ব্যথা করে তো ‘

বৃষ্টি প্রতিত্তোরে কিছু না বলে, অন্য দিকে ঘুরে শুয়ে পরে। বুঝতে পারল সে অভিমান করেছে তাই রিমন বলল, ‘ আচ্ছা ঠিক আছে যতক্ষণ না ঘুমাবে ততক্ষণ বুকের উপরেই রাখবো ঘুমিয়ে গেলে বালিশে শুইয়ে দেবো রাজি? ‘

বৃষ্টি পেছনে তাকিয়ে হড়বড়িয়ে বলে, ‘ ওকে, একবার ঘুমিয়ে গেলে বিছানা থেকে ফেলে দিলেও সমস্যা নেই ‘

বলে রিমনের বুক জুড়ে মাথা রেখে শুয়ে পরল, রিমন শুকনো হাতে বৃষ্টির চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। এতে বৃষ্টির আখি জোড়ায় ঘুম চলে আসে। বৃষ্টি চোখ জোড়া বন্ধ করতে ঘুমের দেশে পারি দেয়। বৃষ্টি ঘুমিয়ে গেছে বুঝেও বুকের উপর থেকে সরিয়ে বালিশের উপর শুইয়ে দেয়নি। কেনো জানি না বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে বলে রিমনের বুকের মধ্যে শান্তি অনুভব করছে। সে এই অনুভব টাকে দূরে সরাতে চায় না। তাই সারারাত বুকের উপর নিয়েই কাটিয়ে দেয়। বা হাতটা অবশ্য ব্যথা হচ্ছিল কিন্তু সেটায় পাত্তা দেয়নি।

আজও বৃষ্টি কে ঘুমের মধ্যে রেখে রিমন চলে যায়। ঘুম থেকে উঠে দেখে, রুম একদম পরিপাটি গুছানো অবস্থায় আছে। বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেলো। দাঁত ব্রাশ করার জন্য যেই ব্রাশ টা নিতে যাবে তখন বাথরুমের আয়নাতে চোখ পরল৷ একটা কসটিপ দিয়ে একটা চিরকুট লাগানো। চিরকুট টা খুলে হাতে নিয়ে দেখল তাতে লিখা, ‘ শুভ সকাল আমার প্রিয় দর্শিনী ‘
চিরকুটের লেখাটা পড়ে বৃষ্টির ঠোঁটে স্মিত হাসি ফুটে উঠে। ব্রাশ করা বাধ দিয়ে, ওয়াশরুমের মধ্যেই দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল হাতে চিরকুট, সেটা দেখছে আর মৃদু হাসছে।

সকালের নাস্তা কমপ্লিট করে, হল রুমে বসে টিভি দেখছিল, তখনই বৃষ্টির ফোনে একটা কল আসে আর সে কল রিসিভ করে ‘ হ্যালো ‘ বলতে অপরপাশ থেকে এক কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। কান্না শুনে বিস্মিত স্বরে বলে উঠে, ‘ মরা কান্না বাধ দিয়ে কি হয়েছে সেটা বল। ‘
ফোনের অপরপাশ থেকে, কান্না থামিয়ে নাক টেনে টেনে বলল,

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here