#পাগল_প্রেমিকা,৩০,৩১
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা (লেখনীতে)
#পর্ব_৩০
সন্ধ্যার পর হল রুমে সবাই একসাথে বসে আছে। এই সময় মনটা কেমন জেনো চা চা করে। সবার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো রিমি আর বলল, ‘ আচ্ছা বাবা আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসছি ‘ এই সময়ে রহিমা সারাদিনের কাজ কাম শেষ করে শান্তি মতো মেঝেতে বসে টিভি দেখে এই সময়ে ওকে বিরক্ত করা যাবে না। এখানে কাজে আসার আগেই রহিমার শর্ত ছিলো, ‘ খালাম্মা আমারে এক বেলা খাওন না দিলেও চলবো কিন্তু সন্ধ্যার পর আমারে নাটক দেখতে দিতেই হইবো ‘। হুম কথাটা তখন সবাই মেনে নেয় কিন্তু এখন তার ফল পাচ্ছে এ মেয়ে টিভি দেখার জন্য যে এত পাগল তা বলার বাহিরে। আর এখন যদি বলে চা খেতে ইচ্ছে করছে রহিমা বিরক্ত হয়ে বলবে। ‘ খালাম্মা গো আর একটু আর একটু বিরতি দিয়া নেক! আর এক পর্বের পর শেষ হইয়া যাইবো তারপর কইরা দিমু একটু ধৈর্য্য ধরেন। ‘ হুম এইসবই বলবে। ওর এইসব কথা শোনার থেকে বাঁচার জন্যই রিমি নিজেই চা বানাবে বলে কিচেনে গেলো। মা, বৃষ্টি রিমন আর সোহানকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কথা জিজ্ঞেস করছে। রিমন মোবাইলের উপর নজর রেখেই তাদের কথা শুনছে সাথে হু হা উত্তর দিচ্ছে। এতে মিসেস আহেলা খানিক বিরক্তবোধ হচ্ছে। রিমি চা বানিয়ে নিয়ে আসে এবং সবাইকে দেয় আমাদের রিমনের আবার চা দিয়ে চলে না। তার কফি খাওয়ার স্বভাব তো তার জন্য আলাদা করে এক মগ হট কফি নিয়ে আসে। চা ও কফি খেতে খেতে কথা বলছেন মিসেস আহেলা রহিমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘ রহিমা টিভির সাউন্ড টা একটু কমা আমরা এখন জরুরি কথা বলবো। ‘
রহিমা প্রতিত্তোরে বলল, ‘ জি আজ্ঞে খালাম্মা ‘ টিভির সাউন্ড কমিয়ে সে আবারও টিভি দেখায় মন দেয়। মিসেস আহেলা গলা জেড়ে একটু কেশে নিলেন আর বললেন।
‘ আমার জরুরী কথা হচ্ছে বৃষ্টির তো আর পড়াশোনা বন্ধ রাখা যাবে না। ওকে আমাদের এখানে কোন এক ভালো ভার্সিটিতে এডমিশন দেওয়ার ব্যবস্থা কর। ‘
ফোন স্ক্রল করছে গরম কফির মগে চুমুক দিতে গিয়েও থেমে যায় মিসেস আহেলার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ ভার্সিটি তে এডমিশন দেওয়া হওয়া এত সহজ নয় মা যত সহজে তুমি বলছো ‘ মিসেস আহেলা আবারও বললেন, ‘ বিয়ে হয়েছে বলে কি মেয়ে টা বাড়িতে বসে থাকবে পড়াশোনা বাদ দিয়ে? ‘
রিমন আবারও বলল, ‘ চাইলে থাকতেই পারে! ‘
মিসেস আহেলা, ‘ তোর কথা আমার পছন্দ হচ্ছে না রিমন! আমি যখন বলেছি বউমা ভার্সিটি যাবে তো যাবেই আর সব ব্যবস্থা তুই নিজে করবি এটা তোর মায়ের আদেশ! ‘ কথাগুলো বলে চায়ের কাপ সামনে ডেস্কের উপর রেখে হল রুম ত্যাগ করেন। কোনো উপায় নেই আদেশ দিয়েছে পালন তো করতেই হবে।
মোটামুটি বৃষ্টি এখন সুস্থ তবে ওর সুস্থ হতে প্রায় তিন দিন লেগেছে। এই তিন দিনে রিমন ভার্সিটিতে এডমিশন দেওয়া থেকে সব কিছু ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আজই বৃষ্টির ভার্সিটিতে প্রথম দিন। তা এই শহরে এই ভার্সিটিতে তেমন কাউকেই চিনে না আগের ভার্সিটি যেখানে পড়তো সেখানে কত ফ্রেন্ড হয়েছিল আজ আবারও নতুন করে পথ চলা নতুন বন্ধু খোঁজা এমন সময় ভার্সিটির সিনিয়র ভাইয়েরা পেছন বৃষ্টির মাথার উপর এক বোতল ঠান্ডা জল ডেলে দেয়। পেছন ঘুরে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ও কঠোর গলায় বলল..
‘ এই সবের মানে কি? ‘
‘ ভার্সিটিতে প্রথম জয়েন্ট হলে আমরা তাকে উদ্ভোদন করি। একেক জনকে একেক ভাবে। ‘
‘এটাকে রেগিং বলে? ‘ বৃষ্টি বলল।
‘ সো হোয়াইট! ‘
আর কিছু বলতে যাবে তখনই পেছন থেকে বৃষ্টিী ঘাড়ের উপর কেউ হাত রাখল, কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে প্রথমে হাতের উপর লক্ষ্য করল তারপরে পেছনে মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। ডাক্তার নীল ভার্সিটিতে কি করছে হাসপাতালে রোগী না দেখে ভার্সিটির ক্লাস নিতে আসছে নাকি? অবাক করা বিষয়, বৃষ্টি কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বৃষ্টির দিকে কিছুটা ঝুকে প্রশ্ন ছুঁড়ল…
‘ এভাবে কি দেখছেন ম্যাডাম? ‘
বৃষ্টি পরে গেলো বিপাকে আনএক্সপেক্ট জায়গায় আনএক্সপেক্ট মানুষকে দেখে কিভাবে রিয়েক্ট করবে বুঝতে পারছে না। বিস্মিত স্বরে বলে উঠে..
‘ নীল তুই এখানে? ‘
উপস্থিত সকল ছাত্র ছাত্রী অবাক হয়ে তাকালো বৃষ্টির দিকে। ডাক্তার নীল এর নাম ধরে ডাকছে তাও আবার তুই তুকারি করছে সবাই বৃষ্টির অবস্থা কি হবে একটু ভয় পাচ্ছে। সবাই কম বেশিডাক্তার নীল এর গম্ভীরতা ও রাগের সাথে পরিচিত সচরাচর মাঝেমধ্যেই ভার্সিটিতে আসা হয় তার নিজের জন্য নয় অন্য৷ একজনের প্যাড়ায়। ভার্সিটির প্রিন্সিপাল স্যার নীল এর বাবা পুরো ভার্সিটির ওনার উনি নিজেই তার একমাত্র ছেলে নীল। মাঝেমধ্যে ভার্সিটিতে আসে নীল তার বাবার জন্যই হুটহাট কল দিয়ে বলে উনার কাছে এসে কিছুক্ষণ সময় দিতে আর মিস্টার রাজ্জাক উনার ও বয়স হয়েছে তাই বাবার আবদার ভেবেই হাসপাতাল থেকে সময় বের করে চলে আসে। আজও এজন্যই এসেছিল কল দিয়ে বলেছিল ‘ পেসার লো হয়ে গেছে মাথা ঘুরছে ‘ এমনটাই বলেছিল নীল বুঝতে পারে তার বাবা মিথ্যে বলছে তবুও সে আসে কারণ বুড়ো বয়সে বাবা মা তার সবটা সময় তাদের ছেলে মেয়েদের সাথেই কাটাতে ইচ্ছা রাখেন শুধু সেটা প্রকাশ করতে পারেন না। (বুড়ো বলছি মানে কিন্তু আপনারা আবার ভাববেন না একদম বয়স্ক ওকে?)
সে সুত্রেই আসা গেইট দিয়ে গাড়ি ঢুকে পার্কিং স্পটে গাড়ি পার্ক করে এদিকেই আসছিল তখন দেখল বৃষ্টি কে ভার্সিটির কয়েকটা ছেলে-মেয়ের রেগিং এর শিকার হতে তীক্ষ্ণ রাগ নিয়েই এদিকে আসে ম্যাজাজ পুরো চটে রয়েছে। সবগুলো ছেলে মেয়ে একসাথে ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে বলে উঠল..
‘ স্যার আপনি! ‘
নীলকে স্যার সম্মোধন করেছে বলে বৃষ্টি সবার দিকে তাকালো। প্রতি উত্তরে নীল বলল…
‘ তোমাদের সাথে আমার পার্সোনাল কথা আছে পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমার সাথে প্রিন্সিপাল স্যারের অফিস রুমে দেখা করো। ‘
বৃষ্টির দিকে না তাকিয়েই সেখান থেকে চলে গেলেন ডাক্তার নীল৷ পেছন পেছন ওরাও গেলো বৃষ্টি অপলকভাবে তাকিয়ে রইল পাশ থেকে একটি মেয়ে এসে বৃষ্টিকে উদ্দেশ্য করে বলল…
‘ হাই! আমি অধরা! তোমার সাথে পরিচিত হতে পারি? ‘
‘ সিইওর, আমি বৃষ্টি ভার্সিটিতে নিউ নাইচ টূ মিট ইউ ‘
‘ চলো যেতে যেতে কথা বলা যাক। তুমি নীল স্যারকে তুই বললে অথচ উনি তোমাকে কিছু বললো না। ‘
‘ ওর কিছু বলার সাহস আছে আমাকে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবো.. ‘
‘ কিহহহ.. ‘ অধরা মুখ অর্ধেক হা করে দাঁড়িয়ে পরল বেচারি হেবি অবাক হইছে। বৃষ্টি মুচকি হাসল, দু’জনে ক্লাসে একই বেঞ্চে বসেছে। অধরা অনেক আগ্রহী নীল এর সাথে বৃষ্টির কি সম্পর্ক জানার জন্য তবে অধরা মনে মনে ভেবেই নিয়েছে বৃষ্টি ডাক্তার নীল এর গার্লফ্রেন্ড জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তবে বৃষ্টির বলা কথা শুনে ধারণায় এক বালতি জল উপছে পরল।
‘ নীল আমার থেকে ৬/৭ বছরের বড় আমরা ছোটো বেলায় খুব ভালো বন্ধু ছিলাম আমি ওর থেকে অনেক ছোট ছিলাম তাই সবাই আমাদের দেখলে মজা নিতো আমাদের দেখলেই বলতো দেখ দেঝ জিরাফের সাথে তেলাপোকা যাইতাছে। ‘
এটা শোনার পর কে দেখে অধরার হাসি। হাসি যে থামার নামই নেই তবে স্যার তা লক্ষ্য করে অধরাকপ চুপচাপ বসতে বলে আর একবার এভাবে হাসলে ক্লাস থেকে বের করে দিবে। হাসি থামিয়ে বৃষ্টি’র দিকে তাকালো.!
ঠোঁট বাঁকা করে ভ্রু কুঞ্চিত করে অধরার ভেটকানি দেখছিল একটু রাগ হলো হাসার কি আছে এখানে আজব মাইয়া। অধরা বলল!
‘ তারপর বলো?’
‘ তারপর আর কি প্রথম প্রথম রাগ হতো ইচ্ছে করে তাদের সাথে ঝগড়া করতে যেতাম তবে নীল একদিন বুঝালো তাদের সাথে ঝগড়া করে লাভ নেই তাদের মুখ আছে তারা শত কথা বলবেই তাদের মতো তাদের কে বলতে দে আর তাদের বলা কথা তাদের মুখেই থাকবে আমাদের গায়ে তো এসে লাগছে না তাই তাদের সাথে ঝগড়া করে নিজের মুড খারাপ করিস না। হুহ তারপর আমি আর তাদের কথায় কান দেইনি। আমাদের বন্ধুত্ব অনেক গভীর ছিল আমরা একে অপরকে ছাড়া কিছুই বুঝতাম না। শুধুই বন্ধু ছিলাম আমরা ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলাম আমাদের বন্ধুত্ব টাকে লোকে রা অন্য নজরে দেখতে লাগল। আমি তখন এসএসসি পাস করি। সেদিন নীল এর সাথে আমার শেষ দেখা হয় বাড়িতে ফিরতে দেখি আব্বু বাড়ি জায়গা জমি বিক্রি করে শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার ডিসিশন নিয়েছেন শুধু মাত্র সমাজের লোকের কথা বলা বন্ধ করানোর জন্য তারপর থেকে আমার আর নীল এর কোনো যোগাযোগ ছিল না। ওইদিন হাসপাতালে দেখা হয়েছে আর আজ কলেজে…
‘ ধ্যাত আমি আরও ভাবছিলাম তুমি উনার গার্লফ্রেন্ড..! ‘ অধরা বলল।
‘ কিহ, পাগল আমি বিবাহিত! ‘
আরও একবার শকট খেলো এই বিবাহিত বাণী শুনে। ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে ঢকঢক করে এক বোতল পানি খেয়ে ফেলল। ক্লাস শেষ হলে দু’জন এক সাথেই বের হয়। এতক্ষণে অধরার আর বৃষ্টির খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ভার্সিটির গেইটের কাছাকাছি যেতেই দেখল নীল পার্কিং স্পটের দিকে যাচ্ছে। বৃষ্টি দৌঁড়ে নীলের দিকেই যাচ্ছে নীল গাড়ির ডোরের উপর হাত রাখে খোলার জন্য সে হাতের উপর বৃষ্টি হাত রাখে। মাত্রারিক্ত রাগ ক্ষোপ নিয়ে পাশে তাকায় তাকিয়ে দেখে বৃষ্টি..
বৃষ্টি কে দেখে চোখ দু’টো নামিয়ে নেয়। দরজা কিছুটা টান মেরে খুলে ছিল সেটা বৃষ্টি ঠাস করে লাগিয়ে দিয়ে নীল এর উদ্দেশ্যে বলে..
‘ বড় ডাক্তার হয়ে গেছিস বলে আমাকে ইগনোর করছিস? ‘
প্রতি উত্তরে হালকা মুচকি হাসল। যা দেখে বৃষ্টির রক্ত মাথায় উঠে গেলো আর বলল..
‘আমি তোর সাথে যাবো যেকোনো ক্যাফে তে চল। ‘
বলে গাড়ির বিপরিত পাশে চলে গেলো। গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসল ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে পরল। গাড়ি চালিয়ে পাশেই একটা ক্যাফের সামনে এসে গাড়ি থামালো।
ওয়েটারকে ডেকে দুইটা কোল্ড কফি দিতে বলল। ওয়েটার এসে অর্ডার সেই কখন দিয়ে গেছে বিশ মিনিট ধরে নিরবতা পালন করছে দু’জন। নিরবতা ভেঙে বৃষ্টি বলল…
‘ আজও ভালোবাসিস আমাকে? ‘
প্রতিত্তোরে নীল বলল…
চলবে?
#পাগল_প্রেমিকা
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা (লেখনীতে)
#পর্ব_৩১
‘ কি মনে হয়? ‘ নীল পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো বৃষ্টির উদ্দেশ্যে বৃষ্টি হতভম্ব হয়ে গেলো বিস্মিত স্বরে বলে উঠল!
‘ আমার তো ওইটাই মনে হয় যা তুই ৪বছর আগে বলেছিলি! ‘
‘ তাহলে তাই! ‘
‘ মানে কি সত্যি তুই এখনো আমাকে ভলোবাসিস? ‘
ডাক্তার নীল তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, ‘ সেইসব পুরানো কথা এখন বলে কি লাভ? তাছাড়া তোর তো বিয়ে হয়ে গেছে তাহলে কেনো অতীতের তলহীন কথা টানছিস? ‘
‘ কারণ আমি জানতে চাই তাই! তুই কি এখনো আমাকে ভালোবাসিস? ‘
‘ হ্যাঁ বাসি এটাই তো শুনতে চাচ্ছিস? হ্যাঁ বাসি তোর মতো করে আর অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারিনি, তোকে যাতে ভুলে না যাই সেজন্য দ্বিতীয় কোনো মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করিনি। যেইদিন তোকে ভালোবাসি বলেছিলাম সেদিনের পর থেকে তোকে আর খুঁজে পাইনি জানিস কতটা অপরাধ বোধ কাজ করছিল অন্তরে? প্রতিক্ষণে মনে হয়েছে ভালোবাসি বলে ছিলাম বলেই বুঝি হারিয়ে গেছিস। ‘ নীল বলল।
অতীত, এসএসসি পরীক্ষার পর বাড়ি ফেরার পথে বৃষ্টি নীল এর সাথে দেখা করতে গিয়েছিল নদীর ধারে সেখানেই নীল বৃষ্টি কে প্রপোজ করেছিল কিন্তু নীলকে শুধু বন্ধুই ভাবতো বেস্ট ফ্রেন্ড যাকে বলে, ভালোবাসে তবে সেটা বন্ধু রূপেই অন্য ভাবে নয়। সেদিন বৃষ্টি নিশ্চুপ ছিল নীল এর কথার একটা উত্তর ও সে দেয়নি বরং উল্টো পিঠ দেখিয়ে চলে আসছিল। নীল পেছন থেকে বৃষ্টি কে ঢেকে আরও বলেছিল,
‘ তুই আমাকে ভালো না বাসলে না বাসবি তবে এতে আমাদের বন্ধুত্বের মধ্যে ফাটল ধরিয়ে দিসনা। এই মূহুর্তে আমি যা বলেছি সব ভুলে যা তবুও বন্ধুত্ব নষ্ট করবি না। কথা দিয়ে যা বৃষ্টি ‘
কিন্তু বৃষ্টি পেছনে ঘুরে তাকালো না। বাড়ি ফেরার পর দেখে তার বাবা শহর ছাড়ার সব প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছে শুধু অপেক্ষা করছিল বৃষ্টির ফেরার। বৃষ্টি স্কুল থেকে বাড়ি আসার পরই সকলে শহর ছেড়ে তাদের গ্রামে ফিরে যায়। লাস্ট বারের মতো সে নীল এর সাথে দেখাও করতে পারেনি আর নীল ভেবে নিয়েছিল বৃষ্টি বন্ধুত্ব ভঙ্গ করে চলে গেছে। তারপর থেকেই মেয়েদের এড়িয়ে চলা শুরু করে মেয়ে দেখলেই নিজেকে গুটিয়ে নেয় তাদের সামনে সকলের সামনে নিজেকে ইন্ট্রোভার্ট পরিচালিত করে। তাতে ডাক্তার নীল পুরোপুরি সক্ষম হয়েছে। সবার সামনে নিজেকে কঠোর প্রমাণিত করতে গিয়ে হাসতে ভুলে গেছে। বৃষ্টি বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আর কিছু বলার আগে কেউ একজন হুট করে এসেই বৃষ্টির হাত ধরে টেনে দাঁড় করালো। বৃষ্টির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল।
‘ ভার্সিটি ছুটির পর বাড়ি না গিয়ে অপরিচিত লোকের সাথে ক্যাফে তে বসে আড্ডা দিচ্ছো? ‘
পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নীল বলল, ‘ আপনি ভুল বুঝছেন আমরা আসলে কথা বলছিলাম ‘
রাগী গলায় ধমক দিয়ে বলল!
‘ একদম চুপ আমি কোনো সাফাই শুনতে চাইনি অন্তত তোর কাছে! ‘
‘ ঠিক ভাবে ভদ্র ভাষায় কথা বলো রিমন এটা পাবলিক প্লেস ‘ বৃষ্টি বলল।
‘ পাবলিক প্লেস বলে কি যা তা করবি আর আমি চুপ চাপ দেখবো? আমার সাথে সম্পর্ক থাকার পর আমি অন্য কারো সাথে তোর রিলেশন মেনে নেবো না। ‘
‘ আপনি শান্ত হয়ে বসুন প্লিজ আপনি রাগের মাথায় উল্টো পাল্টা বুঝেছেন তাই এইসব কথা বলছেন। ‘ নীল বলল।
‘ কি বললি তুই আমি উল্টা পাল্টা বলছি তোর এত সাহস তুই আমাকে এ কথা বলিস। ‘
রিমন ক্ষোপ করে নীল এর শার্টের কলার ধরে নিয়েছে আর এইসব বলছে পাশ থেকে বৃষ্টি রিমনের হাত ধরে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু রিমনের শক্তির কাছে পেরে উঠছে না। এভাবে অভার রিয়েক্ট কেনো করল কারণ কি? যাইহোক এত ভাবার সময় নেই বিপর্যায়ে রিমন নীল এর মুখের এক সাইডে ঘুসি মারে যা দেখে বৃষ্টি স্বস্ত হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে আরও একটা মারতে নিলে বৃষ্টি রিমনকে হিচকা টান মেরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ঠাসস করে গালে এক চড় মারে। চড়টা খেয়ে জেনো তার মাথা থেকে সব বেরিয়ে গেলো। দুই মিনিট পর বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রাগে অন্ধ হয়ে গজগজ করতে করতে বলল।
‘ তুমি এই ছেলেটার জন্য আমাকে মারলে? ‘
‘ প্রয়োজন ছিলো তাই মেরেছি। এখন আর যা তা বাজে কথা না বলে চলে যান আমার সামনে থেকে। ‘ কাঁদো কাঁদো গলায় বলে মেঝে তে বসে পরল। চোখ দিয়ে পানি পরছে পাবলিক প্লেসে এই রকম বিছড়ি একটা তামাশা করার জন্য নিজের উপর ওর এখন ভিষণ রাগ জন্মাচ্ছে কেনো নীলকে এখানে আসতে হলো কেনো আসতে বলল অন্য কোথাও তো যেতে পারতো এই শহরে কি কফিশপ একটাই?
রিমন আর এক মূহুর্ত ও এখানে দাঁড়িয়ে থেকে সময় ব্যয় করল না সে কফিশপ বের হয়ে গেলো। বৃষ্টি কাঁদছে বলে নীল তাকে শান্ত্বনা দিলো। বিকেলে বাড়ি ফিরার পর রিমির কাছে জানতে পারল রিমন সকালে বের হয়েছে পরে আর বাড়ি ফিরেনি। হয়তো কিছুক্ষণ পরে ফিরে আসবে ভেবেই বৃষ্টি রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
সন্ধ্যার পর পরিবারের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে রিমি আর বৃষ্টি একসাথে কিচেনে চলে গেলো রাতের রান্না সেরে নিতে দু’জনেই দু’জনকে হেল্প করায় রান্না তারাতাড়িই সম্পূর্ণ হয়। রাত তো অনেক হল সোহান বাড়ি ফিরে এসেছে কিন্তু রিমন এখনো ফিরে আসেনি কল ও ঢুকছে না ফোন বন্ধ গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে পরলেন। মা’য়ের মন তো একটু তেই বিচলিত হয়ে পরে। রাতে খাবারের সময় হয়ে যায় তবুও রিমন ফিরে আসে না। তা ভেবে অজ্ঞ। সোহান কে বললে বলে, ‘ ওর লাস্ট লোকেশন আমাদের ফার্ম হাউজের দিকে দেখাচ্ছে। ‘
রিমি বলল, ‘ ও আবার একা একা ওইখানে চলে যায়নি তো? ভাই তুই গিয়ে দেখ ওর আবার কোনো বিপদ হলো না তো। আমরা তো সবাই জানি ও অতিরিক্ত কষ্ট না পেলে ওই বাড়িতে যায় না।
মা: সোহান কিভাবে যাবে সারাদিন কাজকাম করে মাত্র এসেছে অফিসে কত কাজ করতে হয় শরীর হয়তো অনেক ক্লান্ত কিভাবে এখন আবার ওইখানে যাবে? যেতে হবে না তোরা বরং কল কর কখনও না কখনও তো ধরবে। তখন পাশ থেকে বৃষ্টি বলে উঠল।
‘ তোমরা বললে আমি যেতে পারি! ‘
‘ তুমি বাড়ির বউ তোমাকে এত রাতে একা কি করে যেতে দিতে পারি? ‘মা বলল।
‘ চিন্তা করবেন না মা আমি পারবো যেতে শুধু এড্রেস টা দিন। ‘
এড্রেস দেওয়ার পর রুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে রেডি হলো। বাড়ি থেকে বের হতে যাবে তখন পিছু ডাকল, ‘ আমিও কি যাবো তোমার সাথে? তুমি চাইলে যেতে আমার কোনো সমস্যা নেই ‘
বৃষ্টি পেছনে তাকিয়ে ভ্রু উঁচু করে প্রতিত্তোরে বলল।
‘ তার কোনো প্রয়োজন হবে না মিমিয়া। আমি একাই যেতে পারবো। ‘
‘ ওকে যাও যাও সাবধানে যেও। ‘ মুখ ভেংচি কেটে বলে চলে গেলো।
বৃষ্টি কোনো উত্তরের আশা না করেই বের হয়ে গেলো।
_______
বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামল… চারপাশে বড় বড় গাছ তার মধ্যে একটা বাড়ি রাত বলে তেমন আন্দাজ করা যাচ্ছে না। বৃষ্টি গাড়ি লক করে ভেতরে যাওয়ার জন্য বের হল। বাড়িটার সামনে গিয়ে অবাক হলো আর বলল!
‘ আজব ব্যাপার দরজা খোলা কেনো? ‘
বলে দরজা ঠেলে ভেতরে যাবে তখনই একটা মেয়ে বের হচ্ছে। মেয়েটাকে দেখে বৃষ্টির কাছে কেমন কেমন জেনো লাগছিল, সে বৃষ্টি কে দেখল তারপর বৃষ্টি কে উদ্দেশ্য করে বলল।
‘ তোমার আসতে এত দেরি হয়েছে কেনো? যাও স্যারের ওয়াইফ আসার আগে রুম ক্লিন করো। ‘
আর কিছুই বললো না সোজা বেরিয়ে চলে গেলো। বৃষ্টি অবাক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইল মেয়েটার যাওয়ার দিকে কি সব বলে গেলো কোনো কিছুই বুঝতে পারল না। সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। রুমের মধ্যে প্রবেশ করে পুরো রুমে চোখ বুলালো রুমের সব কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে। খাবার এনেছিলো সেগুলো কিছু টি-টেবিলের উপর তো কিছু মেঝের উপর বেডের উপর সোজা হয়ে শুয়ে আছে রিমন পরনে সাদা শার্ট। শার্টের উপর লিপস্টিকের দাগ চুলগুলো এলোমেলো। বিছানার উপর চাদর ও এলোমেলো অগোছালো। বেডে মাথার দিকটায় একটা গ্লাস রাখা আছে সেটা তেও লাল লিপস্টিকের দাগ স্পষ্ট, রিমনের জুতা দুইটা দুই পাশে পরে আছে। তার গায়ের লেদার জ্যাকেট ফ্লোরে পরে আছে। কিছু ফলের টুকরো টেবিলে ও মেঝেতে পরে আছে৷ কলা অর্ধেক ছোলা ও খাওয়া অবস্থায় রাখা আছে। বৃষ্টির বুকচিরে ভারী দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। সে আশেপাশে তাকিয়ে পুরো রুমটা দেখে। মেয়েটার যাওয়ার সময় বলা কথাগুলোর মানে বৃষ্টি এখন খুব ভালো ভাবেই উপলব্ধি করতে পারছে।নিজেকে সামলাতে পারছে না। এই রুমে কি হয়েছে সেটাও ভাবতে পারছে না। ভাবতে নিলেই মনে হচ্ছে মস্তিষ্ক ব্যাথায় ফেটে যাবে। দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে মেঝের উপর বসে পরে। করুণ দৃষ্টি রিমনের উপরেই যে স্থির ও নিবদ্ধ। পুরো রাত মেঝেতে বসেই কাটিয়ে দিলো।
সকালে সূর্য্যের উজ্জ্বল জ্যোতি বেলকনির গ্রিল ভেদ করে রুমে উবছে পরছে। ঘুমের রেশ কাটিয়ে চোখ ঢলে নড়েচড়ে উঠে বসল। বিছানায় বসে থেকেই সামনে ফ্লোরের দিকে তাকালো বৃষ্টি দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। বেড থেকে নেমে বৃষ্টির সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল।
‘ বৃষ্টি তুমি কখন আসছো? ‘
চোখ পাকিয়ে রিমনের দিকে তাকালো। রিমনের বাড়িয়ে দেওয়া হাত টা এক জাটকা দিয়ে সরিয়ে দিলো। সে তাল সামলাতে না পেরে পেছনে পরে গেলো। আচমকা উঠে দাঁড়িয়ে চেচিয়ে বলল।
‘ একদম আমার কাছে আসবি না আর আমাকে ছোঁয়ার দুঃসাহস ও দেখাবি না আজকের পর থেকে তো আরও না ছিহ তুই এটা আমার সাথে কিভাবে করতে পারলি? ‘
বলে পেছনে ঘুরে ওয়ারড্রবের উপর থেকে ফুলদানি নিয়ে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারল। মাটির তৈরি ফুলদানি ভেঙে গুঁড়িয়ে গেলো। চিৎকার দিয়ে ফ্লোরে বসে পরল, বৃষ্টি ঠোঁট ভেঙে কান্না করে দেয়। রিমন পলকহীনভাবে তাকিয়ে রয়েছে বৃষ্টির এমন অদ্ভুত আচরণের পেছনে কারণটি বুঝতে পারছে না সবটাই তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। বারবার অশ্রুপূর্ণ হচ্ছে বৃষ্টির আঁখিদ্বয়। কয়েক ফোটা জল তার গাল বেয়ে চিবুকে এসে পরছে। রিমন উঠে দাঁড়ানোর আগেই বৃষ্টি উঠে দাঁড়ায় সে আর এক মিনিটও ব্যয় করল না বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। রাস্তায় হাঁটছে আর চোখের পানি মুছতে, একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে বাড়িতে চলে আসে বৃষ্টির এমতাবস্থা দেখে তিনজনেই প্রশ্ন ছুঁড়ে কিন্তু তাদের উপেক্ষা করে বৃষ্টি রুমে চলে আসে। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে খাটের ওপর মাথ ঠেকিয়ে কাঁদছে। রিমন দৌঁড়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে। রিমন কেও এমন দেখে তাকেও জিজ্ঞেস করে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে কি না। কিন্তু রিমন কোনো উত্তর দেয়নি সেও চলে যায়। রুমের দরজা ভেতর থেকে লক বারবার ডাকা সত্ত্বেও বৃষ্টি দরজা খুলছে না।
হঠাৎ ফোনে কয়েকটা এসএমএস আসলো। মেসেজ রিংটোন শুনে প্যকেট থেকে ফোনটা বের করল। লক খুলে মেসেজ চেক করল৷ কয়েকটা পিকচার দেখার সাথে সাথেই সোহানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। ফোন প্যকেটে রেখে রিমন আর বৃষ্টির রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বলল,’বৃষ্টি আমি তোমার বড় ভাই এর মতো আমি বলছি দরজা খোলো! হল রুমে আসো! আমার সবার সাথে কিছু কথা আছে খুবই জরুরী’
আকস্মিক সোহানের কণ্ঠ শুনে বৃষ্টি চমকে যায়। রুমের দরজা খুলে চুপ করে দাঁড়িয়ে পরল দরজার পাশে চোখ তুলে তাকাতে পারছে না। চোখের নিচে কালো দাগ পরে গেছে কাঁদতে কাঁদতে কি অবস্থা করেছে। বৃষ্টির এক হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে পেছনে রিমনকেও আসতে বলেছে। হল রুমে সবাই সোফায় বসে আছে সোহানের মুখে গম্ভীরতা দেখে, সবাই নিরবতা পালন করছে। নিরবতা দূর করে সোহান বলতে শুরু করল…
‘ বৃষ্টির এই বাড়ির বউ হয়ে আসার কোনো কথাই ছিল না। হয়ে আসছে শুধু আমার জন্য আমিই ওর বড় ফুপার হাত জোড়া ধরে মিনতি করে বলেছিলাম তনিমা বিয়ে করবে না যখন তাহলে বৃষ্টি কেই আমার ভাইয়ের বউ করে দিন। আমার ভাইয়ের উপর আমার এতটা বিশ্বাস ছিল যে সে বৃষ্টি কে খুশি রাখবে কিন্তু আজ সে আমার বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে। বৃষ্টি রিমনকে ভালোবাসতো তাই চেয়েছিলাম ওর ভালোবাসা পূর্ণ পাক কিন্তু আমার চাওয়ায় ভুল ছিল। আজ আমি সোহান বলছি বৃষ্টি তুমি যদি চাও এ বিয়ে ভেঙে চলে যেতে পারো তোমাকে কেউ আটকাবে না। ‘
ফট করে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বিমর্ষ হয়ে রিমন বলল,’ তুমি কি বলছো ভাইয়া বিয়ে ভেঙে চলে যাবে মানে? ‘
সোহান রিমনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল, ‘তুই এখনও কথা বলছিস এই টুকু লজ্জা নেই তোর ভেতরে? ‘ কথাটা বলে প্যকেট থেকে ফোন আবারও বের করল। স্কিনে পিকচার গুলো এনে রিমনের দিকে বাড়িয়ে দিলো। পিকচার গুলো দেখার পর রিমন জেনো আকাশ থেকে পরল এমন একটা ইমপ্রেশন দিলো। বৃষ্টি এবার আর সবার সামনে নিজেকে শক্ত প্রমাণিত করতে পারল না। চোখের জল আটকে রাখতে পারেনি কেঁদে ফেলল। রিমন সবার দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে বলল, ‘ এইসব আমাকে কেউ ফাসানোর জন্য করছে। আমি জানিই না এইসবের কোনো কিছু। ‘
বলা মাত্রই সোহান এসে রিমনের গালে চড় বসিয়ে দেয়। হাত থেকে ফোন ছিটকে গিয়ে পরে মা’র পায়ের কাছে, ফোনটা হাতে তুলে নেয়। ফোনের স্কিনের পিকচার গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠল, ছেলের এরূপ দেখে তিনি তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। সোহান রিমনের শার্টের কলার চেপে ধরে বলল, ‘ এইসবের কিছুই জানিস না। তাহলে তোর শার্টে লিপস্টিকের দাগ কেনো? ‘
অবাক হয়ে শার্টের দিকে তাকালো। আবারও মুখ খুলল, ‘ বিশ্বাস করো আমি কিছু জানি না আমাকে কেউ ফাঁসাচ্ছে! ‘
বৃষ্টি ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। সোহানের সামনে থেকে সরে গিয়ে বৃষ্টির সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসল। বৃষ্টির হাত নিজের হাতের মধ্যে মুঠি বন্ধ করে নিয়ে বলল, ‘ বিশ্বাস করো বৃষ্টি আমি এই সবের কিছুই জানি না আমি এইসবের কিছুই করিনি আমাকে কেউ ফাসানোর চেষ্টা করছে প্লিজ বিশ্বাস করো। ‘
পেছন থেকে সোহান বলল, ‘ বৃষ্টি ওর সামনে থেকে সরে যাও আর তুমি চাইলে আমি তোমাকে তোমার বাবার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসছি। ‘
হাত দিয়ে চোখের অশ্রু মুছে নিয়ে বলল, ‘ তার আর প্রয়োজন হবে না ভাইয়া। আমি একাই যেতে পারবো৷ ‘
বৃষ্টির কথা শুনে পলকহীন চোখে বৃষ্টির মুখ পানে তাকিয়ে রইল রিমন। অসহায় লাগছে তার আজকে নিজেকে নিজের কাছেই কেউ যে তাকে বিশ্বাস করছে না।
কেনো জানি না বৃষ্টির মন বলছিলো রিমনের কথাগুলোকে বিশ্বাস করতে কিন্তু মস্তিষ্ক বাধা দিচ্ছিল তার কারণ রিমন নিজেই সে অতীতে এত মিথ্যা কথা বলেছে যে এখন তার বলা সত্য কথাও মিথ্যা মনে হবে। তবে বৃষ্টি জানে না এই ঘটনা সত্য না মিথ্যা। রিমনের কথা বিশ্বাস করবে কিভাবে সব কিছু তো ও নিজের চোখে দেখেছে তারপরও কিভাবে বিশ্বাস করবে? এক হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো। সবার সামনে থেকে উঠে ভেতরের দিকে চলে গেলো। রুমে এসে আলমারি থেকে নিজের সমস্ত জামা কাপড় লাগেজে প্যাক করল। বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় রিমন বৃষ্টির হাতে ধরে বলল৷
‘ প্লিজ বিশ্বাস করো এইসব মিথ্যে! ‘
নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় কারো সাথে কোনো কথা না বলেই বাড়ি থেকে বের হয়। গন্তব্য ঠিক জানা নেই, রাস্তার পাশ দিয়ে চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে পরে। একটু পানির খুব প্রয়োজন গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। পা জেনো অসাড় হয়ে গেছে হাঁটতে পারছে না। পাশেই রাস্তার মোড়ে একটা টুটাফাটা বেঞ্চে বসল। মাথা ঝিম ধরে আছে মনে হচ্ছে এখনই মাথা ঘুরে পরে যাবে। হুহ বলতে দেরি তার পরতে দেরি হলো না। তবে তাকে পরতে দেয়নি পরার আগেই ধরে ফেলল। নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়। রাস্তার পাশে মাতালদের মতো হাঁটছে সাথে লাগেজ দেখে পেছন পেছন গাড়ি দিয়ে ফলো করছিল। এখানে বসতে দেখে গাড়ি থেকে নেমে আসে। কারন ওকে দেখে স্বাভাবিক লাগছিল না আর যা ভেবেছিল তাই হলো। পাশে এসে দাঁড়াতেই মাথা ঘুরে পরে যাচ্ছিল অবশেষে পরতে দেয়নি। সে তার জানপাখি টাকে। পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে গাড়ির দিকে পা ফেলে হাঁটছে তবে রাস্তায় জনগন ঘুরে ঘুরে আঁড়চোখে দেখছে তাতে অবশ্য উনার কিছুই যায় আসে না। গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে সিট বেল্ট বেঁধে দেয়। নিজে ঘুরে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। পরবর্তী…
এক আলিশান বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো। আবারও পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে বাড়ির গেইটের সামনে এসে কোনোমতে কলিংবেলটা বাজালো। কোলে নিয়ে বেলটা চাপতে কিছুটা পরিশ্রম করতে হয়েছে। দরজা খুলতে একটু দেরি হলেই ঝাড়ি খেতে হবে। এঁটো হাত নিয়েই দরজা খুলতে ছুটে আসছে সাবিনা। সকালের নাস্তা খেয়েই বের হয়েছে বাড়ির বড়সাহেব ও ছোটসাহেব তাহলে এখন আবার কে আসলো? দরজা খুলতেই অবাক রয়ে গেলো মুখ ফসকে সাবিনা বলে ফেলল, ‘ ছোট সাহেব আপনে কোলে এই মাইয়া কেডা? ‘
ভ্রুকুটি কুঞ্চন করে তাকালে সাবিনা চুপ হয়ে যায়। দরজার সামনে থেকে সরে এক পাশ হয়ে দাঁড়ায়। হল রুমের সোফায় বসে কফি খাচ্ছিলেন ছেলেকে এমন অবস্থায় দেখে চোখ কপালে উঠে গেলো মিসেস রাহেলা বেগমের। কফির মগ সামনের ডেস্কের উপর রেখে ছেলের উদ্দেশ্য বললেন, ‘ মেয়ে টা কে? তোকে তো কখনো কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতেও দেখিনি আর আজ কোলে করে সোজা বাড়ি নিয়ে চলে আসছিস? এমনি এমনি নিয়ে আসছিস নাকি বিয়ে টিয়ে করে একেবারে আসছিস? ‘
প্রতিত্তোরে চোখে মুখে বিরক্তিকর ভাব প্রকাশ করল। কোনো কিছু না বলেই সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে যাচ্ছে। পেছন পেছন রাহেলা বেগমও উঠে গেলেন। রুমের মধ্যে ঢুকে বিছানার উপর শুইয়ে দিল। রাহেলা বেগম দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আগের কথাগুলো পূনরায় আবৃত্তি করলেন। কিছুটা বিরক্ত হলেও কথাগুলোর উত্তর তাকে দিতেই হবে না হলে তার নিশতার নেই। যতক্ষণ প্রশ্নের উত্তর দিবে না ততক্ষণ প্রশ্ন করেই যাবে। তাই বাধ্য হয়ে সব বলতে হলো। বৃষ্টির পরিচয় জানার পর তার সমস্ত দায়িত্ব নিজের উপর নিলেন বেগম রাহেলা। ঘুমন্ত বৃষ্টির কপালের এলোমেলো চুলগুলো সরিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে আলতো করে কপালে চুমু দিয়ে রুম ত্যাগ করেন।
২ঘন্টা পর হুশশ ফিরলে চিৎকার দিয়ে উঠে বসে পাশেই সিঙ্গেল সোফায় বসে ল্যাপটপ স্ক্রল করছিল। বৃষ্টির আচমকা চিৎকার শুনে উঠে এসে বেডের এক পাশে বসল। উনাকে পাশে বসতে দেখে আবারও কান্নায় ভেঙে পরল। কাঁদতে কাঁদতে ‘ নীল ‘ বলে ডেকে গলা জরিয়ে ধরলো।
ডাক্তার নীল, বৃষ্টি কে শান্ত্বনা দেওয়ার জন্য অনেক কিছুই বললো কিন্তু তাতে কোনো কাজ হলো না। কান্না জেনো থামার নামই নিচ্ছে না। অবশেষে কান্নাকাটির ইতি ঘটল। ডাক্তার নীল এর নীল শার্টে বৃষ্টি তার নাকের হিঙ্গিল মুছল। তা দেখে ডাক্তার নীল এর অবস্থা, ‘ ছিহ এটা তুই কি করলি শাঁকচুন্নি ছিহহ ব্যাঁ ইয়াক থু থু থু,, বৃষ্টির বাচ্চার গিদরনি খাচ্চরনি আমার শার্ট টা কে টিস্যু মনে কইরা কি করছিস তুই? ”
বৃষ্টি বেকুবের মতো তাকিয়ে থেকে বলে উঠল, ‘ চলি থুক্কু সরি খেয়াল করিনি!”
নীল বলল, ‘ বৃষ্টির বাচ্চা ‘।
বৃষ্টি রুমের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকানোর বান করে বলল, ‘ বিয়ে হইলো ১মাসও হয় নাই বাচ্চা কোথা থেইকা আসলো? ‘
‘ তোর মন্ডু মাথা মোটা! ‘ বলেই ডাক্তার নীল বৃষ্টির কপালে টোকা দিলো।
‘ তোরা আবারও আগের মতো শুরু করেছিস? এত বড় হয়ে গেছিস কিন্তু দুজনের বাচ্চামো এখনও যায়নি! ‘ দরজার সামনে থেকে বলল।
চলবে