পাগল_প্রেমিকা,২৪,২৫

#পাগল_প্রেমিকা,২৪,২৫
#sharmin_akter_borsha
#পর্ব_২৪
_________
রিমন চোখ খুলে পুরো অবাক হয়ে রইল। বৃষ্টি রিমনের বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে ঘুমাচ্ছে। বৃষ্টির চুলগুলো রিমনের চোখে মুখে এসে পরছে হাত দিয়ে আলতো হাতে চুল সরিয়ে দিলো। কপালে ঠোঁট জোড়া লাগিয়ে চুলু একে দিয়ে বৃষ্টি কে শক্ত হাতে জরিয়ে ধরল।

পরেরদিন সকালে।

ফোনের এলার্ম বেজে উঠল। পিটপিট করে চোখ খুলল।
রিমনকে এত কাছে মানে এমন ভাবে জরিয়ে ধরেছে দেখে বৃষ্টি এক ঝাকড়া দিয়ে রিমন হাত সরিয়ে দিলো উঠে বসে পরল। এমন ভাবে হাত সরিয়ে দিয়েছে রিমনও ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসল।

বৃষ্টি রিমনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। রিমন বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে রইল বেশকিছু ক্ষণ পর প্রশ্ন ছুড়ে মারল।

” সমস্যা কি এইভাবে হাত ঝাড়া দিছো কেন হাতটা যদি ভেঙে যেতো? ”
” গেলে যেতো তা তে আমার কি?”
” কথার মানে কি তোর?”
” তুই আমাকে এভাবে জরিয়ে ধরে রাখছিলি কেন নষ্টা”

“ওই তুই নষ্টা বলবি না বললাম”
” ওই তুই নষ্টা তোকে নষ্টা বলবো না তো কি বলবো?”
“বৃষ্টি”
“তুই আমাকে ধরলি কেন কুত্তা? ”
“আমি তোকে ধরি নাই কুত্তী”
” তো কেডা ধরছিল লুচ্চা ঘুমের মধ্যে ফায়দা উঠাইতে চাইছিলি?”
” কি বললি আমি তোর ফায়দা উঠাইতে চাই”

বৃষ্টিকে হাত দুটো ধরে পেছনে ঘুরিয়ে শক্ত করে চেপে ধরল। কানের কাছে কন্ঠ কঠোর করে বলল…

” তোর ফায়দা উঠাতে চাইলে আমি এখনই উঠাতে পারি ফলে তুই কিচ্ছু করতে পারবি না। কিন্তু আমি ওতটাও জগন্য না যে একটা মেয়ে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তার ফায়দা উঠাবো আর তোর টমাটোর মতো বড়বড় চোখ দু’টো বের করে দেখ আমি তোর জায়গায় যাই নি তুই ঘুমের মধ্যে আমার দিকে এসে আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমাই ছিলি আমিও তোকে দূরে সরাই দিতে পারি নাই তাই ”

” কি তাই হা কেন পারিস নাই আগে যেমন সরাই দিছিলি ওই ভাবেই সরাই দিতি কেন দেছ নাই হার্টলেস ”

“বৃষ্টি”

“সর কোনো কথা বলবি না আমার সাথে তুই ”

বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে ঢুকে পরল। ২০মিনিট পর বের হলো নীল রঙের একটা গোল জামা পরে। চুলগুলো টাওয়ালের সাথে পেচিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকচ্ছে। এক মনে ফোন স্ক্রল করছে মাঝেমধ্যে আড় চোখে তাকাচ্ছে আয়নার দিকে সাথে দাঁত চেপে চোখ সরিয়ে নিচ্ছে।
কারন সে ভালোই বুঝতে পারছে এসব কিছু ইচ্ছে করে করছে ওকে জ্বালানোর জন্য এটা ভেবেই আরও রাগ হচ্ছে চোখে হালকা কাজল দিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে আর বলছে…

” নিজেই নিজের উপর এত ক্রাশ খাই অন্য দের কথা তো বাধই দিলাম। ”

আয়নার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে একটা ফ্লাইং কিস ছুড়ল নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে সেটা আবার দেখল খাটে পায়ের উপর পা তুলে বসে থাকা হার্টলেস টায়। চুলগুলো নাড়তে নাড়তে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। বৃষ্টি চলে যাওয়ার পর রিমন উঠে অন্য একটা টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকল।

খানিকক্ষণ বাধ……

খুশিতে পাগল হয়ে ঘুরতে ঘুরতে হুট করেই দরজা ধাক্কা দিয়ে ঢুকে পরলাম রুমের মধ্যে একি দেখলাম।

দিলাম হুট করেই এক চিৎকার ” আহহহহ ”

আমার চিৎকার শুনে পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দৌঁড়ে এসে আমাকে রুমের মধ্যে ঢুকিয়ে দরজা চাপিয়ে দিলো। রাগী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমি কিছু বলতেও পারছি না শুধু তাকিয়ে আছি। কিভাবে বলবো একহাত দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরেছে অন্য হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরেছে।

কন্ঠ কঠোর করে শক্ত ভাবেই প্রশ্ন ছুড়ল।

” লজ্জা করে না তোর নক না করেই একটা ছেলের রুমে চলে আসিস। এখন চুপ আছিস কেন কিছু বল ”

কি ভাবে বলবো ইচ্ছা করছে ওর চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে জানালা দিয়ে বাহিরে ফেলে দেই। চোখে কি কম দেখে নাকি অসহ্য হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে আছে আর বলছে কিছু বলছি না কেনো আজব নয় কি একেই বুঝি বলে চোখ থাকিতে অন্ধ।
মনে মনেই বললাম।

আরও দুইবার বলল “কিছু বলছিস না কেন?
এবার আমার রাগ উঠল অন্য হাত দিয়ে ওর হাত সরিয়ে দিলাম ঝাড়া দিয়ে ধাক্কা দিলাম। আমার থেকে একটু দূরে সরে গেলো। ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে রইল আমিও দাঁতে দাঁত চেপে বলতে শুরু করলাম।

” চোখে কি কম দেখেন হা মুখে হাত চেপে ধরে রাখছেন আর বলছেন কিছু বলছি না কেন? ”
“ও সরি খেয়াল করিনি”
“খেয়াল করবেন কিভাবে চোখ থাকলে তো করবেন”
” তুমি কিন্তু অপমান করছো আমাকে”
“আপনার অপমান বোধ হলে আমার কিছু করার নেই। আর রুম টা আপনার একার নয় আমার ও তাই যখন তখন যেখানে সেখানে শুধু টাওয়াল পরে দাঁড়িয়ে থাকবেন না।”
” কেন তোর কি জরিয়ে ধরতে ইচ্ছে করে নাকি?”
“নাহহহ টাওয়াল টা টান দিয়ে খুলে দিতে ইচ্ছা করে যতসব নষ্টার কারবার। ”

কথাটা বলে সামনে থেকে সরে গেলো হাঁটতে হাঁটতে আবারও পেছনে ঘুরে তাকালো আর বলল..

” রেডি হন তাড়াতাড়ি আমাদের নিতে আসছে আমার আব্বু, ফুপা , চাচ্চু তো তারাতাড়ি রেডি হন! ”

কথাটা বলে আবারও রুম থেকে এক প্রকার দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলো।

রিমন ও বৃষ্টি দু’জনেই পরিপাটি হয়ে নিচে চলে আসল। বৃষ্টি মা বলে ওর শাশুড়ী কে জরিয়ে ধরল আর বলল।

” চিন্তা করো না আমি কালকেই চলে আসবো তোমাকে কাছে ”

উনি বৃষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন!

” পাগলী মেয়ে দুই তিন দিন থেকে আসিস পরে আবার কবে না কবে যেতে পারবি এই টুকু তো পথ নয় সাবধানে থাকিস আর আমার ছেলেটার উপর নজর রাখিস ”
“ঠিক আছে মা”

বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
দু’জনে গাড়ির সাইডে বসেছে মধ্য খানে এতো জায়গা ফাঁকা রিমন মোবাইল স্ক্রল করছে। বৃষ্টি জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে আজ ওর অপেক্ষার অবশন ঘটবে বাড়ি গিয়েই তাপ্পি কে জিজ্ঞেস করবে কেনো সে নাটক করেছিল পালিয়ে না গিয়েও কেনো পালানোর অভিনয় করে ছিল সব কিছু জানতে চাইবে আজই এই সব ভাবচে মনে মনে।

সন্ধ্যার পর…
সবাই বাড়ির গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে কখন ওরা আসবে। তার ঠিক ১০মিনিট পর বাড়ির সামনে এক এক করে গাড়ি ঢুকল।

গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির সামনে এসেই বৃষ্টি সবাইকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল!

” তাপ্পি কোথায়? ”

সবাই বৃষ্টির কথায় রীতিমতো অবাক হলো। দুইদিন পর এসেছে কোই ওকে সবাই ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করবে উল্টো এসেই তনি’র কথা জিজ্ঞেস করছে।

বর্ষা হাত বাড়িয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতে নিলেই বৃষ্টি ওকে থামিয়ে দিয়ে আবারও একই প্রশ্ন ছুড়ল..

” তাপ্পি কোথায়? ”

রিমা বৃষ্টির চোখ দেখলে এমনি ভয় পায় সে ভয়েই গড়গড়িয়ে বলে দিল।

” তাপ্পি তাপ্পির রুমে ”

আর একমিনিট ও দাঁড়ালো না সবাইকে ঢেলে ভেতরে ঢুকে পরল পেছন থেকে সবাই ডাকল অন্তত বরন তো করতে দিয়ে যা। কিন্তু শুনল না সিঁড়ি দিয়ে দৌঁড়ে চলে গেলো। গেইটের সামনে একা জামাই সাথে এত শশুড় বাড়ির লোক আনইজি ফিল করছে। বর্ষা রিমনের দিকে এক নজর তাকালো চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠল। সেখান থেকে চলে আসতে নিলেই রিমা বর্ষা’র হাত ধরে নিলো আর বলল…

” জান ওই দিকে তাকা….”

রিমা’র কথা শুনে বর্ষা ভ্রু কুঁচকে পেছনে তাকালো দেখে তো চোখ কপালে উঠে গেলো। বর্ষা’র পাশ দিয়ে মুন্নী বলে উঠল…

“OMG.. ”

বর্ষা, রিমা ও মুন্নীর দিকে ঘুরে তাকালো আর দাঁতে দাঁত চেপে কন্ঠ কঠোর করে বলল!

” মনে হচ্ছে জীবনে….

চলবে?

#পাগল_প্রেমিকা
#Sharmin_Akter_Borsha (লেখনীতে)
#পর্ব_২৫

বার বার দরজা নক করছে কোনো কথা বলছে না। বিরক্ত হয়ে ঠাস করে দরজা খুলল.
দরজা খুলে দরজার সামনে বৃষ্টি কে দেখে “বোন আমার” বলে জরিয়ে ধরতে নিলো তনিমা। তনির এক হাত শক্ত করে ধরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কন্ঠ কঠোর করে বলল!
“রুমের ভেতরে চলো কথা আছে ”
“কিন্তু বৃষ্টি ”
কিছু বলতে দিলো না টেনে রুমের মধ্যে নিয়ে গেলো। দরজা ভেতর থেকে আটকে দিলো তনিমা কে বিছানার উপর বসিয়ে বৃষ্টি কোমড়ে দুই হাত রেখে তনিমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। তনিমা বৃষ্টির চোখের দিকে তাকিয়ে শান্ত ও ধীর কন্ঠে প্রশ্ন করল।
” কি হয়েছে এত রেগে আছিস কেন? ‘
চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ খুলে তাকিয়ে তনিমার উদ্দেশ্যে বলল।
” আমি যা জিজ্ঞেস করবো তাপ্পি তার উত্তর আমার চাই সব সত্য বলবা আর যদি আমাকে এড়িয়ে যাও আমি সব লন্ডভন্ড করে দেবো। ”
“আচ্ছা তুই শান্ত হো আর বল কি হয়েছে আমি সব সত্যি কথাই বলবো তুই বল”
“তুমি বিয়ের দিন কোথায় ছিলে? কেন পালিয়ে ছিলে?”
বৃষ্টির করা প্রশ্ন শুনে জেনো নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে তনিমার এখন কি উত্তর দিবে তনি চোখ নামিয়ে নিলো বিছানার উপর নড়েচড়ে বসল। কিছু একটা ভেবে বানিয়ে মিথ্যা কথা বলতে যাবে তার আগেই বৃষ্টি তনিকে থামিয়ে দিয়ে বলল।
” আমার কাছে মিথ্যে বলো না তাপ্পি কোনো লাভ হবে না। ”
“আমি মিথ্যে কেনো বলতে যাবো বল তুই আমার ছোটো বোন শত আদরের তোকে তো সত্য কথাই বলব তোর কেনো মনে হচ্ছে আমি মিথ্যে বলব?”
“কারন তুমি ঘামছো আর একটা মিথ্যে কথা বানিয়ে বলতে গেলেই তুমি নার্ভাস হয়ে পড় ফলে তোমার কপালে জড় হয় ঘামের বিন্দু বিন্দু কণা তুমি এই বাড়িতেই ছিলে কোথাও পালিয়ে যাওনি। তুমি ফুপার রুমে পায়চারি করতে ছিলে আমি দেখেছি তোমাকে মিথ্যে কেনো রটিয়েছিলে তুমি পালিয়ে গেছো বল তাপ্পি”
“কেনো জানতে চাস তাহলে শোন”
ওইদিকে বর্ষা ওদের দিকে তাকিয়ে বলল।
“জীবনে ছেলে দেখিসনি মনে হচ্ছে? ”
“দেখেছি রে দোস্ত কি এমন কিউট হ্যান্ডসাম দেখিনি উফফ কি জোস মনের মধ্যে কুছ কুছ হোতা হে ইয়ার” (মুন্নী)
“লাভ নাই” (রিমা)
“কেন?” (মুন্নী)
“তোর চুপ করবি আর চল এখান থেকে! ”
কথাটা বলে বর্ষা এক পা বাড়ালে পাশ থেকে বলে উঠল।
” কি বেয়াইন ভয় পেলেন নাকি? ”
“এক্সকিউজ মি! আপনি কি আমাদের কে বলছেন! ”
“হুম মিস এখানে তো আপনাকে ছাড়া অন্য কোনো বেয়াইন কে দেখছি না।”
” কেন আমাদের কি আপনার চোখে পরে না ” (মিম)
“নাহহ চোখে তো একজনই পরেছে আর সে আমার সামনেই আছে তাই অন্য কাউকে পরছে না”
বর্ষার দিকে তাকিয়ে বলল।
বর্ষার কিছু বলতে নিলে পেছন থেকে রিমা বলল।
“ছাড় না বর্ষা Lc দুলাভাই এর বন্ধু গুলাও তো Lc -ই হবে তাই না তাদের সাথে তর্ক করতে যাস না প্লিজ চল। ”
বৃষ্টির আম্মু রিমার কথাগুলো শুনে বলল।
“রিমা দাঁড়া ”
“বলো বড় আম্মু”
“lc মানে কি?”
“ওইটা তুমি বুঝবা না বড় আম্মু ওটা আমাদের ছোটদের ব্যক্তিগত ব্যাপার ওই সবের মধ্যে তোমরা বড়রা নাক গলিও না।
কথাটা বলে সবগুলো এক এক করে চলে গেলো।
অভ্র রিমনের কানের কাছে বিড়বিড় করে বলল।
” তোর শালী গুলোকে টাইট দিতে হবে ”
“টাইট তো দিতেই হবে খুব বেড়েছে লুচ্চা বলে গেলো ”
” সে নিয়ে তুই ভাবিস না আছি তো আমি একটা কে টাইট দেওয়ার জন্য ওটার দায়িত্ব তুই আমার উপর ছেড়ে দে ”
” যা দিয়ে দিলাম ”
বরন করে রিমন সহ সবাইকে বাড়ির ভেতরে ঢুকানো হলো। সব গুলো কে একটা রুমে বসানো হলো। আজও কিছু মানুষ এসে রিমনকে দেখে গেলো। ওদের সামনে হরেক রকমের স্ন্যাকস ও ফ্রুটস সাজিয়ে রাখা হয়েছে যার যেটা ভালো লাগছে সে সেটা চামচ দিয়ে তুলে খাচ্ছে।
ওই দিকে ক্ষোভ প্রকাশ করে চেচিয়ে বলল..
” যা বলার বলো আমি শোনার জন্যই অপেক্ষা করছি” (বৃষ্টি)
“ছোট্ট থেকে তোকে সব থেকে বেশি আদর করেছি আমি তুই আমার কাছে আমার থেকেও বেশি প্রিয় তোর জন্মের পর সবার আগে আমি তোকে কোলে নিয়েছি তোর নামকরণ ও আমি করেছি সারাদিন তুই আমার কোলেই থাকতি বড় হওয়ার পরও ঠিক তেমনটাই ছিল শুধু পড়াশোনার জন্য তোকে ছেড়ে বিদেশ যেতে হয়েছিল আমি যেতে চাইনি শুধু আব্বুর স্বপ্ন পূরণ করার জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে গিয়েও তোকে ছাড়া থাকতে পারতাম না। সবার থেকে বেশি তোর খোঁজ নিতাম তোকে ফোনে না পেলে কাব্য নাহিদ অপূর্ব বর্ষা রিমা মামনি মামুকে কল দিতাম।
তুই তো জানিস বর্ষা রিমা বাকিদের থেকে তোকে বেশি ভালোবাসি আর তোর সম্পর্কে সব কথা বর্ষা রিমা আমাকে দিতো তুই যে তোর রাইটার বাবুকে ভালোবাসতি শুরু থেকে সবই আমি জানতাম তোর কটা পাগলামোর কথা গুলোও আমাকে জানাতো। আমি অনেকবার চেয়েছিলাম সব ছেড়ে চলে আসি কিন্তু পারিনি আমি শুনেই উপলব্ধি করেছি তুই তোর রাইটার বাবু কে কত ভালোবাসিস।”

” তাপ্পি তুমি আমার অতীত নিয়ে কথা কেনো বলছো তোমাকে বলতে বলছি তুমি কেনো পালানোর নাটক করেছে? ”
” কারণ তুই আর জুম্মা ওইদিন ছাঁদে একা ছিলি না তোরা দু’জন ছাড়াও আরও দু’জন ছিল। ”
তনিমা ‘র কথায় বৃষ্টি থমকে গেলো জিব দিয়ে ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে তোতলিয়ে বলল।
” মানে? ”
” ওইদিন হলুদের রাতে তুই যখম ছুটে গেছিলি তোর পেছনে জুম্মা গেছিলো আর বাকিদের যেতে বারণ করেছিল বর্ষা জুম্মার পেছনে যেতে নিলে আমি ওকে আঁটকে দিয়ে জুম্মার পেছনে ছুটি ছাঁদের সামনে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে তোর বুকফাটা চিৎকার করে করা কান্না আমি শুনেছি আমার কলিজা ফেটে যাচ্ছিল তখন ইচ্ছে করছিলো দৌঁড়ে যাই তোর কাছে গিয়ে তোকে জরিয়ে ধরি। কিন্তু পারছিলাম না ভেঙে পরেছিলাম ভাবতেও নিজের উপর রাগ হচ্ছিল আমি ভাবতেও পারছিলাম না তখন পুরো পৃথিবী জেনো থেমে গিয়েছিল কোনো ভাবেই মানতে পারছিলাম। আমার কলিজার বোন তুই যে ছেলেকে পাগলের মতো ভালোবাসিস সে ছেলেকে আমি কি ভাবে বিয়ে করবো কিভাবে তার দিকে তাকাবো তার মুখের দিকে তাকালেই আমার তোর চিৎকার করে কান্না আমার চোখের সামনে ভেসে উঠবে তুই ওকে এত ভালোবাসিস সেটা জেনেও আমি কি করে তোর ভালোবাসার মানুষ কে বিয়ে করতাম।
ছলছল নয়নে তাকিয়ে কান্না ভেজা কন্ঠে বলল।
“তাপ্পি”
ফ্লোরের উপর থেকে চোখ সরিয়ে বৃষ্টির দিকে তাকালো চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরল সেটা অন্য হাত দিয়ে মুছে নিয়ে আবারও বলতে শুরু করল।
” আমি ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম বিয়েটা যেভাবেই হোক বন্ধ করানোর দরকার ছিল তাই সেখান থেকে সোজা চলে আসি। আব্বুর কাছে রুমে গিয়ে সবটা বলি আব্বু বলে বিয়ে বন্ধ করে রিমনকে জিজ্ঞাসা বাধ করবে সে কেনো তোর সাথে এমন করেছিলি ওর জন্য তুই এত কষ্ট পেয়েছিল পাগলামো করেছিলি সব কিছুর হিসাব চাইবো। দরজা খুলে বের হতে যাবে এমন সময় দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো সোহান। আব্বু সোহানকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল”
“এই বিয়ে হবে না চলো আমার সাথে তোমার ভাইয়ের সাথে আমাদের বোঝাপড়া আছে ”
কথাটা বলে আব্বু এক পা বাড়ালে সোহান আব্বুর হাত ধরে নেয় আর রুমের মধ্যে প্রবেশ করতে ইশারা করল। আব্বু রুমে ঢুকতে চায়নি তখন আমি বলেছিলাম।
“আব্বু ভেতরে আসো সোহান ভাই কি বলতে চায় সেটাও আমাদের শোনা উচিত ”
আমার কথা শুনে আব্বু রুমে ঢুকে দরজা আটকে দেয়। আব্বুর পায়ের সামনে বসে শুরুতে রিমনের বৃষ্টি কে (মানে তোকে) কষ্ট দেওয়ার জন্য ক্ষমা চায় আরও বলে।

” যা হয়ে গেছে তা তো আর ফেরত আনা যাবে না। আমি আজ যা বুজলাম আমার ছোট ভাইকে আমিও বুঝিনি। ও কোনো মেয়ের অনূভুতি নিয়ে মজা করে আমিও জানতাম না। বৃষ্টি কে আমাদের সবার পছন্দ আজ যখন বৃষ্টি ছাঁদে বৃষ্টি কাঁদছিল চিৎকার করে নাম উচ্চারণ করছিল রিমন আর কোনো মেয়ে পায়নি শেষে কি না আমার তাপ্পি কে বিয়ে করতে হবে। আমার তখন ফোনে ইম্পোর্টেন্ট একটা কল আসছিল স্টেজের ওখানে নেট সমস্যা করছিল ফোন নিয়ে ছাঁদে চলে গিয়েছিলাম অন্ধকারে ছিলাম ফোনে কথা বলছিলাম আমার আম্মুর সাথে বিয়ে নিয়েই আম্মু কতশত প্রশ্ন করছিল। ঠিক তখনই কানে ভেসে আসল কারো কান্নার আওয়াজ কান থেকে ফোন নামিয়ে সামনে হাঁটতে নিলাম কে কাঁদছে দেখার জন্য কিছুটা সামনে গিয়ে দেখি একটা মেয়ে অনবরত কেঁদেই চলেছে। আমি এক পা বাড়াতে নিলে সেখানে অন্য একটি মেয়ে চলে আসে সে বার বার বৃষ্টি বৃষ্টি নাম উচ্চারণ করছিল। তখন বুঝতে পারি এই সেই বৃষ্টি যার ভালোবাসা ও পাগলামোর গল্প সন্ধ্যায় বর্ষা বলেছিল। কিন্তু ও কান্না করছে কেন বড় বোনের বিয়ে খুশি হওয়ার কথা কিন্তু উল্টো কাঁদছে ব্যাপার টা বুঝার জন্য আড়ালেই দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টিই কান্নার ফাকে ফাকে হিচকিচিয়ে বলতে শুরু করল। যা শোনার পর আমি বিশ্বাস করতে পারিনি কিন্তু তখন বৃষ্টির অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল না ও মিথ্যে বলছে তাই সবটা নিজের চোখের সামনেই দেখছিলাম। বৃষ্টি কে বর্ষা এসে তনিমার কথা বলে নিয়ে চলে যায় আমিও যাচ্ছিলাম রিমনের কাছে এইসব কথা সত্য কি না জিজ্ঞেস করতে এই দরজার সামনে এসে থেমে গেলাম তনিমার কথা শুনে। সবটা শুনে বুঝলাম আপনারা বিয়েটা ভেঙে দিবেন কিন্তু আঙ্কেল শান্ত হয়ে ভাবেন এতে দুই পরিবারের মান সম্মান নষ্ট হবে বৃষ্টির অবস্থা দেখে মনে হয়েছে ও আজও রিমনকে ভালোবাসে তাই রিমনকে দেখে নিজেকে সামলাতে পারেনি। বুকে চাপা কষ্ট চোখের জলে পরিনত হয়ে বয়ে গেছে। আমরা এখন একটা কাজ করতে পারি আপনারা চাইলে রিমনের সাথে বৃষ্টির বিয়ে সেটা সরাসরি ভাবে নয়। নাটক করা হবে তনিমা বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে তারপর সবাই মিলে রিকুয়েষ্ট করা হবে বৃষ্টি কে পরিবারের মানসম্মানের কথা ভেবে ও না করতে পারবে না। তাছাড়া রিমনকে তো বৃষ্টি ভালো ও বাসে আমরা চাইলে এটা করতে পারি সবার জন্যই ভালো হবে বেশি ভালো হবে বৃষ্টির জন্য কারণ ও যাকে ভালো বাসে তাকেই পেয়ে যাবে৷ এখন আপনি ভেবে বলুন কি করবেন আঙ্কেল আপনি যা বলবেন আমরা সেটাই মেনে নেবো অপমান করে তারিয়ে দিলেও আমাদের কোনো সমস্যা নেই”

সোহানের কথাগুলো আব্বু মন দিয়ে শুনেছিল রুমের মধ্যে তখন বড় মামু ছোট মামু সেজো মামু দাদা পাঁচ জনে মিলে মিটিং করল আর ভাবলো এটাই করবে কারণ আমরা সবাই চেয়েছিলাম তুই তোর রাইটার বাবু কে নিজের করে জেনো পাস। তার জন্য নাটক একটু করতে হয়েছিল রুমের মধ্যে বন্ধি হয়ে ছিলাম আর বলা হয়েছিল পালিয়ে গেছি এই টুকুই সব কিছু করা শুধু তোর মুখের হাসির জন্য তুই জেনো তোর রিমন তোর রাইটার বাবুর সাথে খুশি থাকতে পারিস সারাজীবন।

বৃষ্টি তনিমার কথাগুলো শুনে কেঁদে দিলো। তনিমা বৃষ্টি’র সামনে এসে দাঁড়ালো চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল।
” ধুর পাগলী কাঁদছিস কেন তোর জন্য এতকিছু করেছিমকি তুই কাঁদবি বলে নাকি আমার কলিজা চয় বুকে আয় ”

তনিমাকে জরিয়ে ধরে অজোড়ে কেঁদে যাচ্ছে ও তো ভাবতেই পারেনি ওর তাপ্পি ওকে এত বেশি ভালোবাসে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ লাল করে ফেলেছে বারবার চোখের পানি মুছে দিচ্ছে আর কাঁদতে বারণ করছে।

ওইদিকে হাতে ট্রে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠছে ট্রে তে হরেক রকমের পিঠাপুলি এমন সময় পেছন থেকে কানের কাছে ফিসফিস করে প্রশ্ন ছুড়ে বলল।

” লেহেঙ্গার চলিতে পা লেগে পরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে তুমি বললে আমি তোমাকে কোলে তুলেনি? ”

তখনই বর্ষা হঠাৎ পেছনে ঘুরলে যা হয় বলার মতো না। এটা আবার শুভ দেখে ফেলে সবে মাত্র রুম থেকে বের হয়েছে শুভ হাতে ডাব পাইপ দিয়ে ডাবের পানি খেতে খেতে বের হয়েছে আর এই সিন দেখে হাত থেকে ডাব ফেলে দিলো যা পরল সুজো পায়ের উপর শুভ ” আহহহহহ ” করে চিৎকার দিয়ে উঠল তখন বর্ষা……

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here